নূতনের সন্ধান/যশোহর-খুলনা যুব-সম্মেলন

—২—

“সমাজ বা রাষ্ট্রের উন্নতি নির্ভর করে—একদিকে ব্যক্তিত্বের বিকাশের উপর আর অপর দিকে সঙ্ঘবদ্ধ হওয়ার শক্তির উপর। যদি নূতন স্বাধীন ভারত আমাদিগকে গড়িতে হয় তবে একদিকে খাঁটি মানুষ সৃষ্টি করিতে হইবে এবং সঙ্গে সঙ্গে এরূপ উপায় অবলম্বন করিতে হইবে যাহা দ্বারা আমরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে সঙ্ঘবদ্ধভাবে কাজ করিতে শিখি।”

 মি আজ আপনাদেরই একজন হইয়া এই সভায় আসিয়াছি। জ্ঞানের সম্ভার আমার নাই; বয়সের গুণে মানুষ যে অভিজ্ঞতা, দূরদর্শিতা ও সাবধানতা লাভ করে—তাহাও বােধ হয় আমার নাই। সুতরাং উপদেশ দিবার ধৃষ্টতা লইয়া আমি এখানে আসি নাই। তবে আমি বিশ্বাস করি না যে পলিতকেশ না হইলে মানুষ দায়িত্বপূর্ণ কার্য্যভার গ্রহণ করিতে সমর্থ হয় না। হইতে পারে, আজ ইংলণ্ডের প্রধান মন্ত্রী মিঃ র‍্যাম্‌জে ম্যাক্‌ডােনাল্ড্‌ বাছিয়া বাছিয়া এমন লােককে মন্ত্রী করিতেছেন যাঁহাদের বয়স পঞ্চাশের অধিক। কিন্তু এই ইংলণ্ডের ইতিহাসে দেখিতে পাওয়া যায় যে অতি সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় একজন তরুণযুবক রাজ্যের প্রধান মন্ত্রী নিযুক্ত হইয়াছিল। বর্ত্তমান যুগে তুর্কী, ইটালী, চীন প্রভৃতি বহু নবজাগ্রত জাতির মধ্যে যুবকদেরই হস্তে সমাজের ও রাষ্ট্রের কত গুরুভার ন্যস্ত হইয়াছে।

 ধ্বংশের অথবা সৃষ্টির যেখানে প্রয়োজন, সেখানে ইচ্ছায় হউক, অনিচ্ছায় হউক যুবকদের উপর নির্ভর করিতে হইবে, তাহাদিগকে বিশ্বাস করিতে হইবে, তাহাদের হাতে ক্ষমতা ও দায়িত্ব তুলিয়া দিতে হইবে। যেখানে সংরক্ষণেরই বেশী প্রয়োজন—যেখানে নানা কৌশলপূর্ণ সংরক্ষণ-নীতির উদ্ভাবনই প্রধান কাজ—সে ক্ষেত্রে আপনি প্রৌঢ়াবস্থাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে অথবা গলিত দন্ত পলিত-কেশ বৃদ্ধকে সমাজের ও রাষ্ট্রের পুরোভাগে বসাইতে পারেন। আমাদের দেশ, আমাদের জাতি—ধ্বংস ও সৃষ্টির লীলার মধ্য দিয়া চলিয়াছে। আজ তাই তাহাদের ডাক পড়িয়াছে যাহারা সবুজ, যাহারা নবীন, যাহারা কাঁচা, যাহারা আপাতদৃষ্টিতে লক্ষ্মীছাড়া।

 আমি জানি আমাদের সমাজের এখনও অনেক লোক আছেন যাঁহাদের মতে youth is a crime, তাঁহাদের মতে বয়সে তরুণ হওয়ার মত ত্রুটি বা অপরাধ আর কিছু হইতে পারে না। কিন্তু সে মনোভাবের পরিবর্ত্তন হওয়া দরকার। তবে যৌবনের অর্থ যে অসংযম বা অকর্মণ্যতা বা অবিমৃষ্যকারিতা নয়—এ কথা প্রতিপন্ন করিতে হইলে শুধু নিজেদের সেবার দ্বারা, ত্যাগের দ্বারা, কর্ম্মের দ্বারা ও যোগ্যতার দ্বারা তাহা করিতে হইবে।

 আজ বয়োজ্যেষ্ঠগণ তরুণ সমাজকে অকর্ম্মণ্য বা অপদার্থ জ্ঞান করিতে পারেন কিন্তু যুবকেরা যদি এই সঙ্কল্প করে যে তাহারা চরিত্রগুণে এবং সেবা ও কর্ম্মক্ষমতার দ্বারা বয়োজ্যেষ্ঠগণের হৃদয় অধিকার করিবে এবং তাহাদের বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা আকর্ষণ করিবে তাহা হইলে কে বাধা প্রদান করিতে পারে?

 পৃথিবীব্যাপী যে যুব-আন্দোলন বা youth movement এখন চলিতেছে—ইহার স্বরূপ কি, উদ্দেশ্য ও কর্ম্মপদ্ধতি কি—সে বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা সকলের নাই। যুবক ও যুবতীরা সঙ্ঘবদ্ধ হইয়া যে কোনও আন্দোলন শুরু করিলে সে আন্দোলন যে “যুব-আন্দোলন” আখ্যার যোগ্য হইবে—এ কথা বলা যায় না। বর্ত্তমান অবস্থা এবং বাস্তবের কঠিন বন্ধনের প্রতি প্রবল অসন্তোষ হইতেই যুব-আন্দোলনের উৎপত্তি। তরুণ প্রাণ কখনও বর্ত্তমানকে, বাস্তবকে চরম সত্য বলিয়া গ্রহণ করিতে পারে না। বিশেষতঃ যেখানে সে বর্ত্তমানের মধ্যে, বাস্তবের মধ্যে, অত্যাচার, অবিচার বা অনাচার দেখিতে পায় সেখানে তাহার সমস্ত প্রাণ বিদ্রোহী হইয়া উঠে—সে ঐ অবস্থার একটা আমূল পরিবর্ত্তন করিতে সাহসী হয়। যুব-আন্দোলনের উৎপত্তি প্রবল অসন্তোষ হইতে —ইহার উদ্দেশ্য ব্যক্তিকে, সমাজকে, রাষ্ট্রকে নূতন আদর্শে নূতন ভাবে গড়িয়া তোলা। সুতরাং আদর্শবাদই যুব-আন্দোলনের প্রাণ।

 যুবকদের বর্ত্তমান যুগে কি করা উচিত সে বিষয়ে একটা বিস্তৃত তালিকা দিয়া আমি আপনাদের বুদ্ধিবৃত্তির অবমাননা করিতে চাই না। আমি কয়েকটী মূল কথা বলিয়া আমার বক্তব্য শেষ করিব। সমাজ বা রাষ্ট্রের উন্নতি নির্ভর করে—একদিকে, ব্যক্তিত্বের বিকাশের উপর এবং অপরদিকে, সঙ্ঘবদ্ধ হওয়ার শক্তির উপর। যদি নূতন স্বাধীন ভারত আমাদিগকে গড়িয়া তুলিতে হয় তাহা হইলে একদিক দিয়া খাঁটি মানুষ সৃষ্টি করিতে হইবে এবং সঙ্গে সঙ্গে এরূপ উপায় অবলম্বন করিতে হইবে যাহার দ্বারা আমরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে সঙ্ঘবদ্ধভাবে কাজ করিতে শিখি। ব্যক্তিত্বের বিকাশ হইলেই যে সামাজিক বৃত্তির (social qualities) বিকাশ হইবে—এ কথা মনে করা উচিত নয়। ব্যক্তিত্ব ফুটাইবার জন্য যেরূপ গভীর সাধনা আবশ্যক, সামাজিক বৃত্তির বিকাশের জন্যও সেরূপ সাধনা প্রয়োজন। ভারতবাসী যে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পরাস্ত হইয়া স্বাধীনতা হারাইয়াছিল তাহার প্রধান কারণ আমাদের সামাজিক বৃত্তির অভাব। আমাদের সমাজে কতকগুলি anti-social (বা সমাজ-গঠনবিরোধী) বৃত্তি প্রবেশ করিয়াছিল, যাহার ফলে আমরা সঙ্ঘবদ্ধভাবে কাজ করিবার শক্তি ও অভ্যাস হারাইয়াছিলাম। উদাহরণ স্বরূপ আমি বলিতে পারি যে সন্ন্যাসের প্রতি আগ্রহ যে দিন আমাদের মধ্যে দেখা দিল, সে দিন সমাজের ও রাষ্ট্রের বন্ধন শিথিল হইতে আরম্ভ করিল এবং সমাজের বা রাষ্ট্রের উন্নতি অপেক্ষা নিজের মোক্ষ লাভই মানুষের নিকট অধিক শ্রেয়স্কর বলিয়া পরিগণিত হইতে লাগিল।

 আমার নিজের মনে হয় যে স্বার্থপরতা, পরশ্রীকাতরতা ও উচ্ছৃঙ্খলতা প্রভৃতি সমাজ-গঠন-বিরোধী বৃত্তির (anti-social quality) জন্যই আমরা সঙ্ঘবদ্ধভাবে কাজ করিতে পারি না। সঙ্ঘদ্ধভাবে কাজ না করিতে পারার জন্য—কি সামাজিক ক্ষেত্রে, কি ব্যবসায় বাণিজ্যের ক্ষেত্রে, কি রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে—আমরা কোনওদিকে উন্নতি লাভ করিতে পারিতেছি না। আমি চাই না যে আমাদের জাতীয় অধঃপতনের কারণ সম্বন্ধে আপনারা আমার অভিমত বিনা আলোচনায় গ্রহণ করেন। আমি বরং চাই যে আপনারা যেন সমস্ত জাতির ইতিহাস পাশাপাশি রাখিয়া আলোচনা করেন এবং ঐ আলোচনা হইতে আমাদের অধোগতির কারণ অনুসন্ধান করিয়া বাহির করেন। আমাদের চরিত্রের দোষগুলি সর্ব্বদা যদি চোখের সামনে ধরিয়া রাখিতে পারি, তাহা হইলে সমস্ত জাতি সে বিষয়ে সাবধান হইয়া উঠিবে।

 বিশ্বজগতের এবং মনুষ্যজীবনের ঘটনা পরম্পরার অন্তরালে যে একটা অদৃশ্য নিয়ম নিহিত আছে—এ কথা আমরা অনেকে জানি না বা মনে রাখি না। পাশ্চাত্য মনীষীরা কিন্তু কোনও ঘটনাকে সহজে “আকস্মিক” বা “অদৃষ্টসম্ভূত” বা “দুর্দ্দৈব সঙ্ঘটিত” বলিয়া গ্রহণ করিতে চাহেন না। প্রত্যেক জাতির আদর্শের চরণে নিজেকে আত্মসমর্পণ করিতে হইবে—ঐ আদর্শের অনুসরণে নিজেকে নিঃশেষে বিলাইয়া দিতে হইবে। আদর্শের চরণে আত্মবলিদান করিতে পারিলে মানুষের চিন্তাও কথা ও কার্য্য—এক সুরে বাঁধা হইবে; তাহার ভিতর-বাহির এক হইয়া যাইবে; তাহার সমস্ত জীবন এক আদর্শ সূত্রে গ্রথিত হইবে; সে তখন তাহার জীবনে নূতন রস, নূতন আনন্দ, নূতন অর্থ খুঁজিয়া পাইবে, সমগ্র বিশ্বজগৎ তাহার নিকট নূতন আলোকে উদ্ভাসিত হইয়া উঠিবে।

 আমি আজিকার এই অভিভাষণে ব্যক্তিগত সাধনার উপর বেশী জোর দিতেছি না। তার কারণ এই যে ভারতবাসী কোনও দিনই ব্যক্তিগত সাধনা ভুলিয়া যায় নাই। ব্যক্তিত্ব-বিকাশের চেষ্টা আমরা কোনও দিনই ত্যাগ করি নাই। অবশ্য পাশ্চাত্য দেশের বা অন্যান্য দেশের ব্যক্তিত্বের আদর্শ এবং আমাদের দেশের ব্যক্তিত্বের আদর্শ এক নয়। কিন্তু আমাদের বর্ত্তমান পরাধীনতা ও সকল প্রকার দুর্দ্দশার মধ্যে যে আমাদের দেশে কত মহাপুরুষ জন্মাইয়াছেন এবং এখনও জন্মাইতেছেন তাহার একমাত্র কারণ এই যে খাঁটি মানুষ সৃষ্টির প্রচেষ্টা আমাদের জাতি কোনও দিন ভুলে নাই। কিন্তু আমরা ভুলিয়া গিয়াছিলায় Collective Sadhana বা সমষ্টিগত সাধনা; আমরা ভুলিয়া গিয়াছিলাম যে জাতিকে বাদ দিয়া যে সাধনা—সে সাধনার কোনও সার্থকতা নাই। তাই সমাজ-গঠন-বিরোধী বৃত্তি আমাদের মানসক্ষেত্রে জন্মিয়াছে এবং ঐরূপ প্রতিষ্ঠান পরগাছার মত আমাদের জাতীয় জীবনকে ভারগ্রস্ত ও শক্তিহীন করিয়া তুলিয়াছে। আজ বাঙ্গলার তরুণ-সমাজকে রুদ্রের মত বলিতে হইবে— জাতি-সমাজ-গঠন-বিরোধী বৃত্তিনিচয় আমরা কুসংস্কারজ্ঞানে বিষবৎ পরিত্যাগ করিব এবং জাতি-সমাজ-গঠনের প্রতিকূল সমস্ত প্রতিষ্ঠান আমরা একেবারে নির্ম্মূল করিব।

 ব্যক্তিত্ব বিকাশ সম্বন্ধে আমি আজ মাত্র একটী কথা বলিব। “সাধনা” বলিতে অনেকে অনেক রকম বুঝিয়া থাকেন এবং সাধনার বিভিন্ন প্রকার ব্যাখ্যাও শুনিতে পাওয়া যায়। আমার ধারণা এই যে সাধনার উদ্দেশ্য মনুষ্যজীবনের রূপান্তর করা। রূপান্তর-সাধন করিতে হইলে বাহির হইতে চেষ্টা করিলে চলিবে না—মানুষের জীবন নূতন আদর্শের দ্বারা অনুপ্রাণিত করিতে হইবে। আদর্শের চরণে নিজেকে আত্মসমর্পণ করিতে হইবে—ঐ আদর্শের অনুসরণে নিজেকে নিঃশেষে বিলাইয়া দিতে হইবে। আদর্শের চরণে আত্মবলিদান করিতে পারিলে—মানুষের চিন্তা, কথা ও কার্য্য—এক সুরে বাঁধা হইবে; তাহার ভিতর বাহির এক হইয়া যাইবে; তাহার সমস্ত জীবন এক আদর্শ-সূত্রে গ্রথিত হইবে; সে তখন তাহার জীবনে নূতন রস, নুতন আনন্দ, নূতন অর্থ খুঁজিয়া পাইবে। সমগ্র বিশ্বজগৎ তাহার নিকট নুতন অলোকে উদ্ভাসিত হইয়া উঠিবে।

 বর্ত্তমান যুগে যুগোপযোগী সাধনায় যদি প্রবৃত্ত হইতে হয় তাহা হইলে দেশাত্মবোধকেই জাতির আদর্শ বলিয়া গ্রহণ করিতে হইবে। যাহা এই আদর্শের অনুকূল তাহা শ্রেয়স্কর বলিয়া গ্রহণীয়; যাহা এই আদর্শের প্রতিকুল তাহা অনিষ্টকর বলিয়া পরিত্যজ্য।

 নূতন আদর্শের উপর যদি জীবন গঠন করিতে হয় তাহা হইলে গতানুগতিক পন্থা পরিত্যাগ করিতে হইবে। পাশ্চাত্য জাতিরা গতানুগতিক পন্থা বর্জ্জন করিয়া সর্ব্বদা নূতনের সন্ধানে ছুটিতে পারে বলিয়া তাহারা এত উন্নতি করিতে পারিয়াছে। কিন্তু আমরা যেন “অজানার” ভয়ে সর্ব্বদা ভীত; বাহির অপেক্ষা আমরা যেন ঘরকেই ভালবাসি; তাই আমাদের spirit of adventure এত কম। কিন্তু এই Spirit of adventure—যার এত অভাব আমাদের মধ্যে —সকল জাতির উন্নতির একটা প্রধান কারণ। আমি বাঙ্গলার তরুণ সমাজকে তাই বলিতে চাই—বাহিরের জন্য, “অজানার” জন্য পাগল হইতে শিখিতে হইবে। ঘরের কোণে অথবা দেশের কোণে লুকাইয়া থাকিলে চলিবে না। সমস্ত পৃথিবীটা ঘুরিয়া নিজের চোখে দেখিতে হইবে এবং দেশ দেশান্তর হইতে জ্ঞানাহরণ করিয়া আনিতে হইবে।

 আমাদের অসীম শক্তি আছে—নাই আমাদের আত্মবিশ্বাস ও শ্রদ্ধা। নিজের উপর, নিজের জাতির উপর বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা ফিরাইয়া আনিতে হইবে। দেশবাসীকে অন্তরের সঙ্গে ভালবাসিতে হইবে। মানুষ অন্তরের সহিত যাহা আকাঙ্ক্ষা করে তাহা একদিন পাইবেই পাইবে।

 স্বাধীনতা লাভের জন্য আমরা যদি পাগল হইতে পারি তবেই আমাদের অন্তর্নিহিত অসীম শক্তির স্ফুরণ হইবে; আমরা নিজেরাই অবাক্ হইব এত শক্তি এত দিন কোথায় লুকাইয়া ছিল। এই নবজাগ্রত শক্তির বলে আমরা স্বাধীনতা অর্জ্জন করিতে পারি।

 জাতিকে যদি মুক্ত করিতে হয় তাহা হইলে সর্ব্বাগ্রে স্বাধীনতার আস্বাদ নিজের অন্তরে পাইতে হইবে। “আমি মুক্ত, স্বাধীন মানুষ”—এই কথা ধ্যান করিতে করিতে মানুষ সত্য সত্যই নির্ভীক হইয়া উঠে। নির্ভীক হইতে পারিলে মানুষ কোনও বন্ধনে আবদ্ধ হয় না; কোনও বাধাবিঘ্ন তাহার পথরোধ করিতে পারে না।

 ঘশোহর-খুলনার ভ্রাতৃবৃন্দ—এস আমরা একসঙ্গে বলি—“আমরা মানুষ হব; নির্ভীক, মুক্ত খাঁটি মানুষ হব। নূতন স্বাধীন ভারত আমরা ত্যাগ, সাধনা ও প্রচেষ্টার বলে গড়ে তুলব। আমাদের ভারতমাতা আবার রাজ-রাজেশ্বরী হবেন; তাঁর গৌরবে আমরা আবার গৌরবান্বিত হব। কোনও বাধা আমরা মানব না; কোনও ভয়ে আমরা ভীত হব না। আমরা নূতনের সন্ধানে, অজানার পশ্চাতে চল্‌ব। জাতির উদ্ধারের দায়িত্ব আমরা শ্রদ্ধার সঙ্গে, বিনয়ের সঙ্গে গ্রহণ করব। ঐ ব্রত উদ্‌যাপন করে আমরা আমাদের জীবন ধন্য করব; ভারতবর্ষকে আবার বিশ্বের দরবারে সম্মানের আসনে বসাব।” এসো ভাই! আমরা আর ক্ষণমাত্র বিলম্ব না করিয়া শ্রদ্ধাবনত মস্তকে গললগ্নীকৃতবাসে মাতৃচরণে সমবেত হইয়া করজোড়ে বলি—"পূজার সমস্ত আয়োজন সম্পূর্ণ; অতএব জননি! জাগৃহি।”

[গত ২২শে জুন ১৯২৯ যশোহর–খুলনা যুব-সম্মিলনীতে প্রদত্ত সভাপতির অভিভাষণ]