পঞ্চক মালা/দেবশিশু
কোলে করি’ মাতৃহীন শিশুটি আদরে,
রাজা শুদ্ধোদন পানে চাহিয়া কাতরে,
অভাগিনী ভগিনীর কথা স্মরি’ মনে,
কহেন গোতমী দেবী, সজল নয়নে,
(মধুর করুণবাণী আধর ম্পন্দনে)——
“মহারাজ, কভু নাহি কহিও নন্দনে
ধরিনি জঠরে ওরে। দুর্ভাগ্য মাতার
শুনিলে ব্যথিত হবে শিশু সুকুমার।
কহিতে কহিতে কথা মুছিয়া বদন,
পূরিলেন শিশু-মুখে ঘন পীন স্তন;
বক্ষের তরল স্নেহ সুধা হ’য়ে ঝরে;
তৃষিত অধর কাচি, কাঁপে পয়োধরে।
যৌবন-বসন্ত-কুঞ্জে প্রেম পুষ্পদল,—
ত্রিদিব দুর্লভ নব এ অমৃত ফল
প্রসবি’ পড়িল ঝরি’ অজানা ছায়ায়!
অভিভূত চিত্ত আজি মায়ার মায়ায়।
মনে মনে দেবতার চরণ বন্দিয়া,
গোতমীর আঁখি ধারা চুম্বনে মন্দিয়া
কপোল-লম্বিত কেশ সরায়ে যতনে,
কহিলেন শুদ্ধোদন, রমণী-রতনে -
“দেবী তুমি হে গোতমী, অনাথ-জননী;
তোমারি কুমার এই নয়নের মণি।”
সুধা-তৃপ্ত-কণ্ঠে শিশু পড়িল ঘুমায়ে।
অতৃপ্ত নয়নে দেবী, বদন নুয়ায়ে,
হেরিতে শিশুর কান্তি জন্মিল বিস্ময়।
দেবতা কি হবে শিশু? মনেতে সংশয়।
হেরিয়া অঙ্গের চিহ্ন ভাবেন আবার,
“মহারাজ-চক্রবর্তী হইবে কুমার।”
“হাতে পায়ে পদ্ম আঁকা সোণার বরণে;
যাচিবে নিখিল বিশ্ব শরণ চরণে।”
অপার্থিব সুখ-রস উগলে অন্তরে;
জাগরণে স্বপ্ন যেন শিরায় সঞ্চরে।
দেবগণ ঢাকি’ তনু দীপ্তি আচ্ছাদনে,
গাহিল যেন রে গীতি বীণার বাদানে।
সুরা যেন সুর-নদী পুণ্যধারা ঢালে;
তরঙ্গে তরঙ্গে বিশ্ব নাচে তালে তালে।
করিছেন দেবগণ দেবের আরতি;
শিশু-কোলে ধ্যান—মগ্না দেবী প্রজাপতি।
“আগত ভাবে সুগত দেব, জগত তারিতে
হবে সুশীত তৃষিত নির করুণা-বারিতে।
ব্যাধি ও জরা- —ব্যথিত ধরা,
বিষাদে আর কাঁদিওনা!
মুক্তি পাবে ক্ষুদ্ধজন বুদ্ধ শ্রীপদে।
দীপ্তপথ ভাতিবে চোখে ভ্রান্তি-বিপদে।
সুখের আশে মরণ-পাশে
জীবন কেহ বাঁধিও না।