(প্রবাসী-সম্পাদক লিখিয়াছিলেন:—“শ্রীযুত বিজয় চন্দ্র মজুমদার মহাশয়কে জ্যৈষ্ঠের প্রবাসীর সূচীতে ‘প্রৌঢ়’ বলা হইয়াছিল। তিনি তাহার প্রতিবাদ করিতেছেন।)।


(১)


পেঁচিয়া কথা বল্লে রূঢ়  বুঝ্‌তে পারি; নইক মূঢ়!
ঠারে ঠোরে ‘প্রৌঢ়’ শব্দে বুড়ে বলে চোখ্‌ টেপা!
চাপা হাসি পিষে দাঁতে  আঙ্গুল নেড়ে ইসেরাতে,
নেলিয়ে দিয়ে চ্যাংড়া ছেলে দিচ্চ হুকুম,—“খুব্‌ খেপা।”
আমার যে ছাই বয়স্‌ বেশী,  সাক্ষী কি তার পক্ক কেশ-ই?
এত নাচি এত হাসি, সে সব কি গো ফক্কিকা?
প্রাণটা দিচ্চে হামাগুড়ি,  কিম্বা হাওয়ায় উড়্‌ছে ঘুড়ি;
দোষ্‌টা তবু ক’রে বাহির, কচ্চ জাহির মক্ষিকা!

(২)

ভাবে কি গো, চিরজন্ম  ছিল আমার গায়ের চর্ম্ম
এম্নিধারা কালের হাতের লাঙ্গল দিয়ে চাষ করা?
না হয় নাইবা ছিলেম কার্ত্তিক, কিন্তু শোনো ওগো তার্কিক,
সুঠাম ছিল অঙ্গ আমার, কাঠাম ছিল ঠাস্‌-গড়া।
শিরায় ছিল উষ্ণ রক্ত,  (এটা নয়কো প্রত্নতত্ত্ব),
গণ্ড ছিল মাংস ভরা, দন্ত ছিল সার-বাঁধা;
পা ছিল না তিলের ডাঁটা— শিরে তোলা বেজায় ফাটা;
ঘন কালো গোঁপের তলায় ছিল হাসির হার গাঁথা।

(৩)


হায়রে সেকাল! আমায় লোকে বুড়া বলে যাচ্চে বোকে!
দুনিয়াতে দেখ্‌লেম মজা হাজার রকম আজ্‌গুবি!
যম বেটা সে মুদ্দফরাস্‌— স্বয়ং পেলেন্‌ বুদ্ধ তরাস্‌-
আমার অঙ্গ এত ভঙ্গ, সেই বেটারই কারচুপি।
ওরে রে ডোম্‌ ওরে চণ্ডাল, (হার মেনেছে গথ্‌ ভেণ্ডাল!)
ভেঙ্গে দিলি ঝঞ্জাবাতে সাধের কুঞ্জ যৌবনের!
সতেজ শ্যামল আশার তরু,  এত শুক্‌নো, এত সরু?
ধূলায় গড়ায় ঝরা পাতা; এই কি ভাগ্য ঐ বনের?

(৪)


যাকগে কথা মিছে ভাবাই;  কিন্তু কেন তোম্‌রা সবাই
আদর করার ছলে এসে দিচ্চ কোসে কান্‌মোলে?
উড়্‌ল যমের এক্‌ তুড়িতে  সবি আমার! গুড়্‌গুড়িটে
এক্‌লা বারি-সিক্ত-প্রাণে স্নিগ্ধ তাকে গান্‌ তোলে!
মরি লোকের দেমাক্‌ হেরে! (ওরে হরে, তামাক্‌ দেরে!!)
শাঁপ্‌ দিচ্চি অগ্নি ছুঁয়ে,—বল্‌বে যারা “ঐ কথা,”
তাদের যেন নাতির নাতি খেপায়, বলে “বুড়ো হাতি।”
আমিও জানি দাদ্‌ তুল্‌তে! বল্‌বে যে যা, সইব তা?
জ্যৈষ্ঠ ১৩১৬।