পঞ্চনদের তীরে/প্রথম পরিচ্ছেদ
এই লেখায় এই অংশে একটি চিত্র থাকা উচিৎ। যদি আপনি তা দিতে পারেন, তবে, দয়া করে সাহায্য:চিত্র দেখুন। |
প্রথম পরিচ্ছেদ
গোড়ার কথা
“পঞ্চনদের তীরে,
বেণী পাকাইয়া শিরে
দেখিতে দেখিতে গুরুর মন্ত্রে জাগিয়া উঠিল শিখ—
নির্মম, নির্ভীক।”
রবীন্দ্রনাথের অপূর্ব গাথার কথা তোমরা সকলে নিশ্চয়ই জানো।
কিন্তু পঞ্চনদের তীরে শিখরাই কেবল জেগে ওঠেনি, এখানেই সর্বপ্রথমে জাগ্রত হয়েছিল আর্য ভারতবর্ষের বিরাট আত্মা।
পঞ্চনদের তীরেই হয়েছে বারে বারে ভারতবর্ষের উত্থান এবং পতন। কত—কত বার ভারত উঠেছে পড়বার জন্যে এবং পড়েছে ওঠবার জন্যে। আহত হয়েছে, নিহত হয়নি।
এই পঞ্চনদের তীরে কোন্ স্মরণাতীত কালে অনার্য জনপদের উপরে বন্যাপ্রবাহের মতো ভেঙে পড়েছিল আর্য অভিযানের পর অভিযান! এবং তারপর এই পঞ্চনদের তীরেই দেখা গেল যুগে যুগে কত জাতির পর জাতির মিছিল—পার্সী, গ্রীক, শক, হুন, তাতার মোগল ও পাঠান! যে পথে তারা মহাভারতকে সম্ভাষণ করতে বেরিয়েছিল, সেই চিরবিখ্যাত খাইবার গিরিসঙ্কট আজও অটল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তেমনি উদ্ধত ভ্রূকুটিভঙ্গে! কত মহাকাব্য আবৃত্তি করতে পারে ওখানকার প্রতি ধূলিকণা!
কেবল ব্রিটিশ-সিংহের গর্জন ভেসে এসেছে ভারত-সাগরের ওপার হ’তে। কিন্তু মহাসাগরকে সেকালের ভারতবর্ষ এক হিসাবে কখনো খুব বড় ক’রে দেখেনি—কারণ সমুদ্র-পথ ছিল তারই নিজস্ব দিগ্বিজয়ের পথ। ওপথে বেরিয়েছে সে নিজে দেশে দেশে বাণিজ্য করতে, ধর্মপ্রচার করতে, রাজ্যজয় করতে, উপনিবেশ স্থাপন করতে—কাম্বোডিয়ায়, জাভায় এবং মিশরে! এবং মিশরের আলেকজান্দ্রিয়া থেকে গ্রীসে ও রোমে! ও-পথে তাকে জয় করবার জন্যে আর কেউ যে আসতে পারে, প্রাচীন ভারতবর্ষের স্বপ্নে এ কাহিনী ছিল না।
তোমরা কি ভাবছো? আমি গল্প বলছি, না ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি করছি? কিন্তু একটু ধৈর্য ধরো। তোমরা ‘অ্যাড্ভেঞ্চারে’র কথা শুনতে ভালোবাসো। এবারে যে বিচিত্র ‘অ্যাড্ভেঞ্চারে’র কথা বলবো, তা হচ্ছে মহা ভারতের ও মহা গ্রীসের মহা অ্যাড্ভেঞ্চার!
মধ্য-এসিয়া থেকে দক্ষিণ দিকে যখন আর্য অভিযান সুরু হয়, তখন তাদের একদল আসে ভারতবর্ষে, আর একদল যায় পারস্যে। অর্থাৎ ভারতবাসী আর্য আর পারস্যবাসী আর্যরা ছিলেন মূলত একই জাতি। প্রাচীন ভারতের ও প্রাচীন পারস্যের ধর্মের মধ্যেও এই একত্বের যথেষ্ট প্রভাব আবিষ্কার করা যায়। কিন্তু বহু শতাব্দী বিভিন্ন দেশে বাস ক’রে ভারতবাসীরা ও পারসীরা নিজেদের এক-জাতীয়তার কথা সম্পূর্ণরূপে ভুলে গেল।
আর্য হিন্দুরা বাস করতেন উত্তর-ভারতে। এবং ভারতের দক্ষিণ প্রদেশকে তাঁরা অনার্য-ভূমি ব’লে অত্যন্ত ঘৃণা করতেন। এমন-কি অঙ্গ বঙ্গ কলিঙ্গকেও তাঁরা আমোলে আনতেন না, কোনো নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণ এ-অঞ্চলে এলে তাঁকে পতিত ব’লে মনে করা হ’ত।
সেই পুরাণো মনোভাব আজও একেবারে লুপ্ত হয়নি। আজও উত্তরভারতের ব্রাহ্মণরা বাঙালী ব্রাহ্মণদের শ্রদ্ধার চোখে দেখেন না।
কিন্তু এই ঘৃণিত অনার্য-ভূমি বা পূর্ব-ভারতের বর্ণশঙ্কর ক্ষত্রিয়রাই পরে ধর্মে আর বীরত্বে সারা ভারতের মধ্যে অগ্রগণ্য হয়ে উঠলেন-অদৃষ্টের এমনি পরিহাস! বাঙলাদেশের আশেপাশেই মাথা তুলে দাঁড়াল শিশুনাগ-বংশ, নন্দবংশ, মৌর্যবংশ (যে-বংশে জন্মান চন্দ্রগুপ্তও অশোক), ও গুপ্ত-বংশ প্রভৃতি, খাঁটি আর্য না হয়েও এই-সব বংশের বীরবৃন্দ ক্রমে সমগ্র ভারতবর্ষে সাম্রাজ্য বিস্তার ক’রে ফেললেন।
ধর্মেও দেখি এই অঞ্চলে খৃষ্ট-পূর্ব সপ্তম শতাব্দীতে বৌদ্ধমতের আবির্ভাব এবং বুদ্ধদেবও সৎ-ক্ষত্রিয় ছিলেন না।
এই সময়েই ভারতীয় হিন্দুদের করতলগত পঞ্চনদের তীরে প্রথম বিদেশী শত্রু—অর্থাৎ পারস্যের রাজা প্রথম দরায়ূস মুক্ত তরবারি হাতে ক’রে দেখা দেন। প্রাচীন ভারতের ইতিহাস ছিল না। সুতরাং আসল ব্যাপারটা কি হয়েছিল জানা যায় না। কিন্তু পারসীরা বলে, তারা ভারতবর্ষ জয় করেছিল। তবে ঐতিহাসিকদের মত হচ্ছে, পারসীরা সিন্ধুনদের তীরবর্তী দেশগুলি ছাড়িয়ে বেশীদূর এগুতে পারেনি! তার বাইরে গোটা ভারতবর্ষের অধিকাংশ প্রদেশে তখন যে-সব পরাক্রান্ত রাজা-রাজড়া বাস করতেন, তাঁদের স্বাধীনতা ও শক্তি ছিল অক্ষুণ্ণ।
পারসীদের অধীনে যে জনকয়েক করদ ভারতীয় রাজা ছিলেন, এ-বিষয়ে সন্দেহ নেই। কারণ গ্রীসের সঙ্গে যখন পারস্যের শক্তিপরীক্ষা হয় বারংবার, তখন পরবর্তী যুগেও সিন্ধুতটবাসী কয়েকজন ভারতীয় রাজা পারসীদের সাহায্য করবার জন্যে সৈন্য পাঠাতে বাধ্য হয়েছিলেন...
পট-পরিবর্তন করলেই দেখি, এর পরের দৃশ্য হচ্ছে একেবারে খৃষ্ট-পূর্ব চতুর্থ শতাব্দীতে। ভারতবর্ষে তখন বৈদিক হিন্দুধর্মের বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়াবার চেষ্টা করছে বৌদ্ধধর্ম। পাঞ্জাবে তখন বীর ও সৎক্ষত্রিয় ব’লে মহারাজা পুরুর বিশেষ খ্যাতি। পূর্ব-ভারতে অধ-আর্য নন্দবংশ রাজত্ব করছে। চন্দ্রগুপ্ত তখন যুবক, প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের যুদ্ধবিদ্যা শিখে তিনি শক্তি সঞ্চয় করছেন— ভারতবর্ষের সিংহাসনের দিকে তাঁর লোলুপ দৃষ্টি।
প্রতীচ্যের প্রধান নাট্যশালা তখন গ্রীসে। এই গ্রীকরাও ছিলেন উত্তর-ভারতীয় হিন্দু ও পারসীদের মতোন আর্য, তাঁদেরও পূর্বপুরুষরা এসেছিলেন স্মরণাতীত কাল পূর্বে মধ্য-এসিয়ার আদি আর্যস্থান থেকে। অধিকাংশ য়ুরোপে তখন অসভ্য বর্বরদের বাস এবং রোম হচ্ছে শিশু,—মহা গ্রীসের শৌর্য-বীর্য ও সভ্যতার যবনিকা সরিয়ে তার দৃষ্টি ভবিষ্যতের বিরাট অপূর্বতা তখনও দেখতে পায়নি।
গ্রীসে তখন নূতন নাটক রচনার চেষ্টা করছে মাসিডনিয়া— আর্যাবর্তে অর্ধ-আর্য পূর্ব-ভারতের চন্দ্রগুপ্তের মতো। এবং মাসিডনিয়ার বাসিন্দাদেরও কুলীন গ্রীকরা মনে করতেন অধ-গ্রীক ও অর্ধ-বর্বরের মতো।
মাসিডনিয়ার অধিপতি ফিলিপ নিজের বাহুবলে গ্রীকজগতে কৌলীন্য অর্জন করেছিলেন। অকালে শত্রু-কবলে ফিলিপ যখন অপঘাতে মারা পড়লেন, তখন তাঁর পুত্র আলেকজাণ্ডার পেলেন সিংহাসনের সঙ্গে পিতার স্বহস্তে শিক্ষিত দুর্ধর্ষ, বিপুল সৈন্যবাহিনী। তাঁর বয়স তখন বিশ বৎসর মাত্র। কিন্তু এই বয়সেই তিনি লাভ করেছিলেন পিতার রাজনৈতিক বুদ্ধি ও যুদ্ধ প্রতিভা এবং মাতা ওলিম্পিয়াসের ধমোন্মাদ, আবেগ-বিহ্বলতা ও কল্পনা-শক্তি।
কৌলীন্য-গর্বিত গ্রীকরা অর্ধ-সভ্য বালক-রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ প্রকাশ করলে। কিন্তু আলেকজাণ্ডার তখনি খাপ থেকে তরবারি খুলে সৈন্যদের নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন মূর্তিমান ঝড়ের মতো এবং অত্যন্ত অনায়াসে সমস্ত বিদ্রোহ দমন ক’রে দেখিয়ে দিলেন, তিনি বালক বটে, কিন্তু দুর্বলও নন, নির্বোধও নন! যার বাহুবল ও বীরত্ব আছে, পৃথিবীতে তার চেয়ে বড় ক্ষত্রিয় আর কেউ নেই।
খাঁটি হিন্দু সংস্কৃতি আর সভ্যতার অধঃপতনের সময়েই ভারতবর্ষে অর্ধ-আর্য চন্দ্রগুপ্ত ও সম্রাট অশোক প্রভৃতির আবির্ভাব। তাঁদের প্রতিভা ভারতীয় সংস্কৃতি আর সভ্যতাকে আজও ক’রে রেখেছে বিশ্বের বিস্ময়।
এবং আদিম গ্রীক ও সংস্কৃতি ও সভ্যতার অধঃপতনের যুগেই অর্ধ-গ্রীকরূপে গণ্য আলেকজাণ্ডার আত্মপ্রকাশ করেন। গ্রীক সভ্যতার বাণী সারা পৃথিবীতে প্রচার করবার ভার নিলেন তিনিই। কুলীন গ্রীকরা তাঁকে ঘৃণা করতেন বটে, কিন্তু তিনি না থাকলে গ্রীকসভ্যতার মহিমা আজ এমন অতুলনীয় হ’তে পারত না। তাঁর প্রতিভায় গ্রীক সংস্কৃতির খ্যাতি প্রতীচ্যের সীমা পেরিয়ে ভারতের পঞ্চনদের তীরে ও মধ্য-এসিয়ায় বিস্তৃত হয়ে পড়েছিল।
গ্রীসের প্রতিবেশী ছিল তখন প্রাচ্যের সব-চেয়ে পরাক্রান্ত রাজ্য পারস্য। পারসীরা একাধিকবার গ্রীকদের আক্রমণ করেছিল। গ্রীকরা কোনো রকমে আত্মরক্ষা করতে পেরেছিল বটে, কিন্তু তাদের দুর্দশা হয়েছিল যৎপরোনাস্তি। নিজেকে সমগ্র গ্রীসের দলপতিরূপে প্রতিষ্ঠা করবার জন্যে তরুণ বীর আলেকজাণ্ডার বললেন, “গ্রীস আমার স্বদেশ। প্রাচ্যের পারসীরা আমার স্বদেশের উপর যখন অত্যাচার করেছে, আমিও পারস্য সাম্রাজ্য অধিকার ক’রে প্রতিশোধ নেবো।”
পারস্য-সাম্রাজ্য তখন পারস্যেরও বাইরে এসিয়া-মাইনরে, মিশরে, বাবিলনে ও ভারতে সিন্ধুনদের তট পর্যন্ত বিস্তৃত। পারস্যের সিংহাসনে বসেছেন তখন তৃতীয় দরায়ুস কোডোমেন্নাস। তিনি মহা-সম্রাটরূপে পরিচিত বটে, কিন্তু তাঁর যুদ্ধপ্রতিভা ছিল না।
ইস্সাস্ রণক্ষেত্রে প্রথমে প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের শক্তি পরীক্ষা হয় (খৃঃ পূঃ ৩৩২)। ছয় লক্ষ সৈন্য নিয়ে দরায়ুস আক্রমণ করলেন আলেকজাণ্ডারকে। সংখ্যায় গ্রীকরা যথেষ্ট দুর্বল ছিল এবং দরায়ুসের যুদ্ধপ্রতিভা থাকলে সেইদিনই মিলিয়ে যেত আলেকজাণ্ডারের দিগ্বিজয়ের স্বপ্ন। কিন্তু অতিশয় নির্বোধের মতো দরায়ুস একটি সংকীর্ণ ক্ষেত্রের মধ্যে নিজের বিপুল বাহিনী চালনা করলেন। ফলে সংখ্যায় ঢের বেশী হয়েও পারসীরা কিছুই করতে পারলে না। তারা পঙ্গপালের মতো দলে দলে মারা পড়ল, বাদবাকী ইউফ্রেটেস্ নদী পেরিয়ে পালিয়ে গেল।
পরে-পরে আরো অনেকগুলি যুদ্ধে জয়লাভ ক’রে আলেকজাণ্ডার পারস্য সাম্রাজ্যের অধিকাংশ দখল করলেন। পারস্যের রাজধানী বিখ্যাত নগর পার্সিপোলিস্কে অগ্নিশিখায় আহুতি দেওয়া হ’ল এবং এক স্বদেশী বিশ্বাসঘাতকের হস্তে দরায়ুসও মারা পড়লেন।
বিজয়ী আলেকজাণ্ডার তখন সগর্বে পৃথিবীর চতুর্দিকে দৃষ্টিপাত করলেন। কিন্তু য়ুরোপে ও আফ্রিকায় তখনকার সভ্য-জগতে নিজের কোনো যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী দেখতে পেলেন না। রোমের জন্ম হয়েছে, কিন্তু আগেই বলেছি, সে তখন শিশু।
হঠাৎ আলেকজাণ্ডারের মনে পড়ল ভারতবর্ষের কথা। ভারতীয় সভ্যতার খ্যাতি তখন দেশ-দেশান্তর অতিক্রম ক’রে গ্রীসেও গিয়ে উপস্থিত হয়েছে। বাণিজ্য-পথেও ভারতীয় পণ্যদ্রব্যের আদর কম নয়। ভারতে ও পারসীদের সাম্রাজ্যের অংশ আছে। এবং যুদ্ধক্ষেত্রেও পারসীদের পক্ষে উত্তর ভারতীয় দীর্ঘদেহ সবলবাহু আর্য বীরদের পরাক্রম আলেকজাণ্ডার স্বচক্ষে দেখবার সুযোগ পেয়েছিলেন।
আলেকজাণ্ডার বললেন, “আমি ভারত জয় করবো। পারস্যসাম্রাজ্যের শেষ-চিহ্নও আর রাখবো না!”
সেনাপতিরা ভয় পেয়ে বললেন, “বলেন কি সম্রাট! সে যে অনেক দূর! আপনার অবর্তমানে গ্রীসে যে বিদ্রোহ উপস্থিত হবে!”
আলেকজাণ্ডার কোনোদিন প্রতিবাদ সহ্য করতে পারতেন না। অধীর স্বরে বললেন, “স্তব্ধ হও তোমরা! পারসীরা যা পেরেছে, আমার পক্ষে তা অসম্ভব নয়। আমি ভারত জয় করবো!”
যুবক দিগ্বিজয়ীর ক্রুদ্ধ দৃষ্টির সামনে প্রাচীন সেনাপতিরা নীরবে মাথা নত করলেন।
কিন্তু আলেকজাণ্ডার কি সত্যসত্যই ভারত জয় করতে পেরেছিলেন? পঞ্চনদের তীরে কয়েকটি যুদ্ধে জয়লাভ করেছিলেন বটে, কিন্তু মূলতানের যুদ্ধে আহত হয়ে তিনি প্রায় মৃত্যু-মুখে এগিয়ে গিয়েছিলেন। এবং এই ভারতেই তিনি যে প্রথম পরাজয়ের অপমান সহ্য করতে বাধ্য হন, অধিকাংশ ঐতিহাসিকই সে সম্বন্ধে নীরব। ভারত জয় না ক’রেই গ্রীকরা আবার স্বদেশের দিকে ফিরতে—বা পলায়ন করতে বাধ্য হয়েছিল। আলেকজাণ্ডার ভারতের মাত্র এক প্রান্তে পদার্পণ করেছিলেন। এবং স্বদেশে প্রস্থান করবার সময়ে বড় বড় সেনাপতি ও অনেক সৈন্যসামন্ত উত্তরভারতের ঐ অধিকৃত অংশ রক্ষা করবার জন্যে রেখে গিয়েছিলেন। কিন্তু পূর্ব-ভারতের মহাবীরদের কবলে প’ড়ে তাদের যে অভাবিত দুর্দশা হয়, পাশ্চাত্য ঐতিহাসিকরাও সে কাহিনী গোপন রাখতে পারেন নি। এ-সব কথা যথাসময়েই তোমাদের কাছে বলা হবে।
মনে রেখো, আলেকজাণ্ডারের যুগে ভারতে বৈদিক হিন্দুধম প্রচলিত ছিল। হিন্দুরা তখন মূর্তি-পূজাও করতেন না, দেবমন্দিরও গড়তেন না, কোনো কোনো ঐতিহাসিকের মতে, হিন্দু ও বৌদ্ধরা মূর্তি ও মন্দির গড়তে শেখেন গ্রীকদের কাছ থেকেই। এ কথা কতটা সত্য জানিনা, তবে গ্রীকদের ভারতে আসবার আগে বুদ্ধদেবের মূর্তি যে কেউ গড়েনি, সে-বিষয়ে কোনোও সন্দেহ নেই।