পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২)/১

প্রথম নয়খানি পত্র ১৯১২-১৩ সালে প্রভাবতী বসুকে লিখিত

শ্রীশ্রীঈশ্বর সহায়

কটক
শনিবার

পরম পূজনীয়া

শ্রীমতী মাতাঠাকুরাণী

শ্রীচরণ কমলেষু

মা,

 আজ নবমী; সুতরাং আপনি এখন দেশে—দেবীর আরাধনায় নিমগ্ন আছেন।

 এ বৎসর বোধ হয় পূজা বেশী জাঁকজমকে সম্পন্ন হইবে। কিন্তু মা, জাঁকজমকে প্রয়োজন কি? যাঁহাকে আমরা ডাকি—তাঁহাকে যদি প্রাণ খুলিয়া গদ্‌গদ্‌ কণ্ঠে ডাকিতে পারি তাহা হইলে যথেষ্ট হইল; আর অধিক কি প্রয়োজন? যে পূজায় আমরা ভক্তি-চন্দন ও প্রেম-পুষ্প ব্যবহার করিতে পারি তাহাই জগতের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ পূজা। জাঁকজমকের সম্মুখে ভক্তি পলায়ন করে! এবার একথা দুঃখ রহিয়া গেল। সেটা বড় বেশী দুঃখ—সাধারণ দুঃখ নহে। এবার দেশে যাইয়া সেই ত্রৈলোক্যপূজ্যা সর্ব্বদুঃখহারিণী, মহিষাসুরমর্দ্দিনী জগন্মাতা দুর্গাদেবীর সর্ব্বাভরণভূষিতা নানা সাজসজ্জিতা, দেদীপ্যমানা জ্যোতির্ম্ময় মূর্ত্তি দর্শন কবিয়া নয়ন সার্থক করিতে পারিলাম না; এবার পুরোহিত মহাশয়ের সেই মধুর, পবিত্র মন্ত্রোচ্চারণ বা তাঁহার শঙ্খ ও ঘণ্টাধ্বনি কর্ণগোচর করিয়া শ্রবণশক্তি চরিতার্থ করিতে পারিলাম না; এবার কুসুম চন্দন ও ধূপাদির পবিত্র গন্ধের দ্বারা নাসিকাদ্বয়কে পবিত্র করিতে পারিলাম না; এবার একত্র-বসিয়া দেবীর প্রসাদ ভক্ষণ করিয়া রসনেন্দ্রিয়কে পরিতৃপ্ত করিতে পারিলাম না; এবার পুরোহিত প্রদত্ত কুসুমরাশির দ্বারা স্পর্শেন্দ্রিয়কে ধন্য করিতে পারিলাম না এবং সর্ব্বোপরি “শান্তি জলে”র অভাবে শান্তি লাভ করিতে পারিলাম না, সবই নিষ্ফল হইল; পঞ্চেন্দ্রিয় নিষ্ফল হইল। কিন্তু যদি দেবীর সর্ব্বত্র বিরাজমানা, অম্বরব্যাপিনী মূর্ত্তি দেখিতে পাইতাম, তাহা হইলে মা, সে দুঃখ ঘুচিত—কাষ্ঠপুত্তলিকা দেখিবার ইচ্ছা হইত না; কিন্তু সে আনন্দ, সেইরূপ সৌভাগ্য কয়জনের কপালে ঘটিয়া থাকে। কাজে কাজেই আমার এই দুঃখ রহিয়া গেল।

 বিজয়া দশমীর দিন এখানে পড়িয়া থাকিব কিন্তু মন আপনাদের নিকটেই থাকিবে। এরূপ পুণ্য দিবসে এত আনন্দ হইতে বঞ্চিত রহিলাম। আর উপায় নাই—কল্য রাত্রে আমরা এখান হইতে আপনাদিগকে প্রণাম করিব। আপনি ও বাবা সে প্রণাম গ্রহণ করিবেন ও গুরুজনদিগকে দিবেন।

 আমরা সকলে ভাল আছি। আশা করি আপনারা সকলে ভাল আছেন। আপনি আমার প্রণাম জানিবেন ও বাবাকে জানাইবেন।

ইতি—

আপনার সেবক
সুভাষ

পুনঃ—সারদা কেমন আছে?