পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২)/২

শ্রীশ্রীদুর্গা সহায়
কটক
শনিবার

পরম পূজনীয়া

শ্রীমতী মাতা ঠাকুরাণী

শ্রীচরণকমলেষু

মা,

 আজ সকালে আপনার পত্র পাইয়া বিশেষ অনিন্দিত হইলাম, তাহার সঙ্গে মণিঅর্ডারে ৫০, পাইলাম।

 আমি যে পত্র লিখি তাহার উত্তরের জন্য তাড়াতাড়ি করিবেন না—অবকাশ মত উত্তর করিবেন। আপনার যদি পড়িতে কষ্ট হয় তাহা হইলে অন্য কাহার দ্বারা পড়াইয়া লইবেন।

 কলাইসুটি জোবরা বাগানে লাগান হইতেছে কিংবা শীঘ্রই হইবে। রঘুয়া আমার নিকট হইতে ৫৬ দিন পূর্ব্বে কলাইটি লইয়া গিয়াছিল। জোবরা বাগানে আমি যাই নাই।

 নগেন ঠাকুর এবার পূজা করেন নাই শুনিয়া দুঃখিত হইলাম। তিনি সম্পূর্ণ আরোগ্যলাভ করিয়াছেন? আমি যত পূজা দেখিয়াছি তন্মধ্যে নগেন ঠাকুর এবং শ্রীশ্রীপূজ্যপাদ গুরুদেব মহাশয়ের পূজা সর্বাপেক্ষা ভক্তি আকর্ষণ করে। নগেন ঠাকুরের চণ্ডীপাঠ বড়ই মধুর এবং অভক্তকে ভক্ত করিয়া ফেলে।

 শ্রীশ্রীগুরুদেব মহাশয়ের কোদালিয়া বাটির প্রতিষ্ঠা হইয়াছে শুনিয়া আহ্লাদিত হইলাম। আমরা দেশে গেলেই সেখানে ছুটিব। দেখা হইলে তাঁহাকে আমার ভক্তি প্রণাম জানাইবেন। বড়দিদির শরীর অসুস্থ হইয়াছে শুনিয়া কষ্ট পাইলাম। তিনি কেমন আছেন। আপনার ডেঙ্গু হইয়াছিল শুনিয়া আমরা চিন্তিত হইলাম। এখন কেমন আছেন লিখিয়া চিন্তা দূর করিবেন।

 বসুমতীর আপিসে শঙ্করাচার্য্যের সমুদয় স্তোত্র খুব সস্তায় বিক্রয় হইতেছে। একটি পুস্তকে তাঁহার সব স্তোত্রই আছে এবং মূল্য কেবল ৸৹ কিংবা ১ টাকা। এ সুযোগ ছাড়িবেন না। কঞ্চিমামাকে বলিবেন একটি ক্রয় করিয়া আনিতে। পুস্তকটি আপনার নিকট রাখিবেন এবং কটকে আসিবার সময় লইয়া আসিবেন।

 মা, আমার কিছু বক্তব্য আছে। আপনি বোধ হয় জানেন যে আমার আমিষ ত্যাগ করিবার বড়ই ইচ্ছা। কিন্তু পাছে কেহ কিছু বলেন বা মনে করেন সে আশঙ্কায় আমি সে ইচ্ছা পূরণ করিতে পারিতেছি না। আমি এক মাস পূর্ব্বে মৎস্য ভিন্ন সমুদয় আমিষ ত্যাগ করিয়াছিলাম। কিন্তু আজ নদাদা আমার পাতে জোর করিয়া মাংস দিলেন। কি করি! অগত্যা খাইলাম কিন্তু বড় অনিচ্ছায়। আমি নিরামিষাশী হইতে চাই কারণ “অহিংসা পরমো ধর্ম্মঃ” একথা আমাদের শাস্ত্রকারের বলিয়াছেন। কেবল শাস্ত্রকারেরা বলেন নাই—স্বয়ং ঈশ্বর একথা বলিয়াছেন। আমাদের কি অধিকার আছে যে আমরা ঈশ্বরের সৃষ্টি নষ্ট করিব? তাহাতে কি ঘোর পাপ হয় না? যাঁহারা বলেন যে মৎস্য না খাইলে চক্ষু ক্ষীণদৃষ্টি হয় তাহারা ভুল বুঝিয়াছেন। আমাদের শাস্ত্রকারের এরূপ মূর্খ নন যে লোককে দৃষ্টিহীন করিবার জন্য তাঁহারা মৎস্য খাওয়া বারণ করিবেন। আপনাদের এ বিষয়ে কি মত?

 আপনাদের বিনা অনুমতিতে আমার কিছু করিতে প্রবৃত্তি হয় না। আমরা সকলে ভাল আছি, আপনারা আমার প্রণাম জানিবেন। ইতি—

আপনার সেবক
সুভাষ