পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২)/১৫১

১৫১
লাহোরের পথে
২৪।১২।২৯

শ্রীচরণেষু—

 মাগো, কিছুকাল যাবৎ—আপনি কলিকাতা ছেড়ে যাবার পর নানা প্রকার অশান্তি ও সংগ্রামের ভিতর দিয়া চলিতেছি। প্রত্যহ ইচ্ছা হয় একবার আপনার কাছে যাই—এবং আপনার স্নেহাশীর্ব্বাদ লইয়া আসি। কিন্তু তাহা বুঝি হইবার নয়। কর্ম্মের বন্ধন ছিন্ন করা কত কঠিন। তবে আপনার স্নেহাশীষ আমাকে ঘিরিয়া আছে—এই অনুভূতি আমাকে বাঁচাইয়া রাখিয়াছে। যখন মনটা খুবই ক্লান্ত হইয়া পড়ে তখন আপনার স্নেহাশীষ আবার আমায় সঞ্জীবিত করিয়া তোলে। সত্যি সত্যি, আমার জীবনে আর অন্য কোনও সম্পদ বা ভরসা নাই। যাহা করিতেছি—তাহা ঠিক করিতেছি কি না জানি না— আপনি আমায় পথ দেখাইয়া সত্যের পথে রাখিবেন। আমার শত দোষ-ত্রুটী ও অযোগ্যতা যেন আপনার আশীর্ব্বাদের বলে আমি ত্যাগ করিতে পারি। আর কি লিখিব—লাহোরের পথে চলিতেছি। সেখানে কি হইবে জানি না।

 বার বার আমায় পরাভূত করিবার জন্য শত্রুপক্ষেরা দল বাঁধিয়াছে—প্রাণপণ চেষ্টা করিয়াছে। অদৃশ্য শক্তির বলে আমিও বার বার তাদের ব্যর্থ করিতে পারিয়াছি। শেষ পর্য্যন্ত কি হইবে তাহা অবশ্য বলিতে পারি না। তবে মনে রাখিবেন, সন্তানের জয় মানে মায়ের জয়; সন্তানের পরাজয় মানে মায়ের পরাজয়।

আপনার অযোগ্য সন্তান
সুভাষ