পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২)/১৭
শুক্রবার রাত্রি
সবচেয়ে বড় দান হৃদয় দান। এটি দিলে দেবার আর কিছু বাকি থাকে না। যাকে এই দান করা হয় তার কি কম সৌভাগ্য। তার মত সৌভাগ্যবান বা সুখী আর কে আছে? কিন্তু যে ঐ দান ফিরিয়ে দিতে না পারে তার মত—আর কে আছে? ফল কি? ফল—উভয়ের শান্তি।
* * *
মনে পড়ে একটী চিত্র। কালীমন্দির দক্ষিণেশ্বরে। সম্মুখে খড়্গহস্তা মা কালী, আনন্দময়ী—শিবের আসনের উপর অধিষ্ঠিতা— শতদলবাসিনী—তার সম্মুখে একটী বালক—বালক হইতেও বালপ্রকৃতি—আধ ২ স্বরে কাঁদিতেছে এবং কাকে যেন ডেকে ২ বলিতেছে—“মা এই নাও—তােমার ভাল, এই নাও মন্দ। এই তােমার পাপ, এই তােমার পুণ্য।” করালমুখী ভীষণদংষ্ট্রা মা অল্পেতে সন্তুষ্ট নয়—সব গ্রাস করিতে চায়—তাই ভালও চাই মন্দও চাই—পুণ্যও চাই—পাপও চাই। বালককে সবই দিতে হইবে—না দিলে শান্তি নাই—মা-ও ছাড়িবে না।
* * *
বড় কষ্ট—মাকে সবই দিতে হইবে। মা কিছুতেই সন্তুষ্ট না—তাই কাঁদিতেছে এবং বলিতেছে—“এই নাও—এই নাও।” দেখিতে দেখিতে অশ্রুধারা বন্ধ হইল—গণ্ডস্থল ও বক্ষ শুকাইল—হৃদয় জুড়াইল—হৃদয়ে আর কিছু নাই—যেখানে ভীষণ কণ্টকযন্ত্রণা দিতেছিল—তার চিহ্নও নাই—সবই শান্তিময়। হৃদয় মধুতে ভরিয়া গেল—বালক উঠিল—আপনার বলিয়া তার আর কিছু নাই—সব দিয়ে ফেলেছে। বালকটি রামকৃষ্ণ।