পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২)/৩২

৩২
Vishram Kutir
Kurseong
৭-১১-১৫

কবিবরেষু—

 তােমার পত্র পাইয়া দুঃখিত হইলাম কারণ তুমি আমাকে দুষ্টু বলিয়া প্রতিপন্ন করিয়াছ। তুমি ত জানই আমি চিরকালই সেই লক্ষ্মীছেলে—আমার দ্বারা কি কোন প্রকার দুষ্টামি সম্ভবে? অতএব তােমার এ অভিযােগের অর্থ কি? যে চিরকাল লক্ষ্মীছেলে সে কি কোন দিন কোন দুষ্টামি করতে পারে? অতএব আমি দুষ্টু হইতে পারি না— এবং আমার দুষ্টামি অসম্ভব।

 আমি ভাবুকও নহি, কবিও নহি, সুতরাং কাব্যের রস বা কবিতার ভাব কি বুঝিব? তােমার চতুষ্পাদবিশিষ্ট—অনন্ত ভাবময়ী মহতী কবিতার রস গ্রহণে অসমর্থ হইয়া আমি তাহার বহিরাবরণ লইয়া টানাটানি করিয়াছি, যাহারা স্থূলদৃষ্টি ও রসবর্জ্জিত তাহারা দেখে শুধু বাল্মীকির বল্মীক, মধুসূদনের অট্টহাস্যময়ী ভগ্নপদী কবিতা, রবীন্দ্রনাথের “কলকেত্তী” ভাষা ও অবনীন্দ্রনাথের হাড়কণ্ঠা। সুতরাং সাদৃশ পাঠক যে তােমার ভাবময়ী কবিতার ছন্দোদোষ শুধু খুঁজিয়া বেড়াইবে।...

 তবে যদি কোন অপরাধ করিয়া থাকি তাহা হইলে দায়ী আমার স্থূলবুদ্ধি বিচারশক্তি এবং want of appreciative faculty এবং এ মানসিক দৈন্যের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করিতেছি।

 আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র এ ধাম ত্যাগ করেছেন। তাঁহার সঙ্গে কিছু ২ কথা হয়েছে—পরে বলিব।

 প্রবন্ধ লেখা বা নিজের জীবন সম্বন্ধে কাহারও মতামত গ্রাহ্য করিলে ত চলিবে না। নিজেব যাহা বলার আছে—বলে যাবে—তাতে কার কি?

 আমি যে প্রবন্ধ দিয়েছি—তাহা কেন দিয়াছি এবং কি spirit-এ দিয়াছি, তাহা না বুঝিতে পারিলে প্রবন্ধটি অর্থহীন এবং কেহ ২ যে সেইরূপ মনে করিবে তাহাতে আর আশ্চর্য্য কি? কিন্তু তাহাতে কি এসে যায়?

 একজন এইরূপ সমাজে বা organisation-এ হয়ত খুব উচ্চ স্থান অধিকার করিবে কিন্তু অন্য প্রকার—দলে হয়ত তার স্থান সব চেয়ে নীচে—আমি একথা বেশ বুঝিতেছি। যার যে রকম idea এবং মানুষের Estimate তাহার বিচার তদ্রূপ।

 * * *

 সুতরাং কাহারও appreciation or non-appreciation-এ কি আসিয়া যায়—হ্যাঁ আপনার প্রদীপ আপনি হও—ঠিক কথা বলেছ।

ইতি— 

বুদ্ধিহীন দীন 

পাঠক।