পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২)/৫৮

৫৮
১৬।২।২১

...আমার “বিস্ফোরক” পত্র এতদিনে আপনি বোধ করি পাইয়া থাকিবেন। ঐ পত্রে আমার যে কার্য্যক্রমের উল্লেখ করিয়াছি পরবর্ত্তী চিন্তার দ্বারা তাহাই দৃঢ়তর হইয়াছে ...যদি চিত্তরঞ্জন দাশ এই বয়সে সংসারের সবকিছু ছাড়িয়া জীবনের অনিশ্চয়তার সম্মুখীন হইতে পারেন তবে আমার সাংসারিক সমস্যাবিহীন তরুণ জীবনে এ ক্ষমতা আরও অধিক। চাকুরি ছাড়িলেও আমার কাজের বিন্দুমাত্র অভাব ঘটিবে না। শিক্ষকতা, সমাজ-সেবা, সমবায় প্রতিষ্ঠানাদি, সাংবাদিকতা, গ্রাম-সংগঠন ইত্যাদি বহু কাজ রহিয়াছে— যাহাতে সহস্র সহস্র কর্ম্মঠ তরুণকে ব্যাপৃত রাখিতে পারে। ব্যক্তিগত ভাবে আমি বর্ত্তমানে শিক্ষকতা এবং সাংবাদিকতার দিকেই আকৃষ্ট হইতেছি। ন্যাশানাল কলেজ এবং নূতন সংবাদপত্র “স্বরাজ” লইয়াই আমি এখন কিছুদিন কাটাইতে পারিব। আত্মত্যাগের আদর্শ লইয়াই জীবন আরম্ভ করিতে চাই, আমার কল্পনায় ও প্রবণতায় অনাড়ম্বর জীবন ও উচ্চ চিন্তা এবং দেশের কাজে উৎসর্গীকৃত জীবনের আকর্ষণ প্রবল। তাহা ছাড়া বিদেশী শাসকের অধীনে চাকুরি করা অতি ঘৃণ্য কাজ বলিয়া মনে করি। অরবিন্দ ঘোষের পথই আমার নিকট মহৎ, নিঃস্বার্থ অনুপ্রেরণার পথ, যদিও সে পথ রমেশ দত্তের পথ অপেক্ষা কণ্টকাকীর্ণ।

 দারিদ্র্য ও সেবার ব্রত গ্রহণ করার অধিকার ভিক্ষা করিয়া বাবা ও মার নিকট পত্র দিয়াছি। এই পথে ভবিষ্যতে লাঞ্ছনার ভয় আছে এই চিন্তায় তারা হয়ত আকুল হইবেন। আমি নিজে দুঃখ-ক্লেশের ভয় করি না, সেদিন আসিলে দুঃখ হইতে সরিয়া আসিবার চেষ্টা না করিয়া অগ্রসর হইয়া তাহাকে গ্রহণ করিব।

(ইংরাজী হইতে অনূদিত)