পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২)/৭০

৭০
মান্দালয় জেল
২৮।৩।২৫

পরম পূজনীয় মেজদাদা,

 আশা করি আপনি আমার পত্র নিয়মিত পাইতেছেন।

 * * *

 একটি নূতন অভিজ্ঞতা হইয়াছে। চিড়িয়াখানার প্রাণীদের আমি দেখিতে গিয়াছি; কিন্তু ইহা একবারও খেয়াল হয় নাই যে, আমি নিজেও ঐরূপ একটি প্রাণী হইতে পারি। ইহা শুনিয়া আপনি হয়তো অবাক হইতে পারেন, তবু একথা সত্য যে, আমরা চিড়িয়াখানার প্রাণীর মতই এখন দিন কাটাইতেছি। এই জেলের ওয়ার্ডগুলি ইষ্টকনির্ম্মিত নয়; কাঠের খুঁটি পুঁতিয়া বেড়ার আকারে তৈরী। রাত্রিতে যখন আমাদের তালাবন্ধ করিয়া রাখা হয় তখন যে কোনও বাহিরের লোক নিশ্চয়ই আমাদের দেখিয়া মনে করিতে পারে যে, কতকগুলি মনুষ্যাকৃতি প্রাণী আলোকিত খাঁচার মধ্যে শিকারের অন্বেষণে ঘুরিয়া বেড়াইতেছে। ইহা এক অদ্ভুত অনুভূতি জাগায়, উপরন্তু যাহার কিছুমাত্র বসবোধ আছে সে-ই এ অবস্থা উপভোগ না করিয়া পারে না। ঈশ্বর জানেন আমাদের এ রূপান্তর কত দিনে শেষ হইবে। সে যাই হোক, যে লেজ ও থাবা মানুষ একবার বহু পূর্ব্বেই ত্যাগ করিতে পারিয়াছে, অবস্থার এই সাদৃশ্যের ফলে উহা নিশ্চয়ই পুনরায় আমাদের গজাইবে না।

 * * *

 আমি একপ্রকার আছি।

ইতি— 

আপনার স্নেহের 

সুভাষ 

(ইংরাজী হইতে অনূদিত)