পাহাড়ে মেয়ে/অষ্টম পরিচ্ছেদ

অষ্টম পরিচ্ছেদ।


ভাঁটার টান।

 “এইরূপে দুই তিন বৎসর অতীত হইয়া গেল। কালীবাবুর উপর আমার এইরূপ ভালবাসা দেখিয়া অপরাপর সকলে আমার বাড়ীতে আসা একবারে প্রায় বন্ধ করিয়া দিলেন। সুতরাং আমার পূর্ব্বসঞ্চিত অর্থের উপর ক্রমে হস্ত পড়িতে লাগিল। কারণ, যদি কোন অপরিচিত ব্যক্তি হঠাৎ আমার বাড়ীতে আসিয়া উপস্থিত হইতেন, তিনি সর্ব্বদা কালীবাবুকে আমার নিকট দেখিয়া আস্তে আস্তে আমার বাড়ী পরিত্যাগ করিয়া চলিয়া যাইতেন, পুনরায় তাঁহাকে আর কখনও দেখিতে পাইতাম না। এদিকে কালীবাবুও আমার উপর এরূপ ভাবে একাধিপত্য স্থাপন করিয়াছিলেন যে, আমি আর কাহারও সহিত কোনরূপ অমোদ-আহ্লাদে প্রবৃত্ত হইলে তিনি আর তাহা সহ্য করিতে পারিতেন না। যে কার্য্য করিলে কালীবাবুর অন্তঃকরণে কষ্ট হয়, সেই সকল কার্য্য করিতে আমারও মনোকষ্ট হইত। সুতরাং সহজেই আমাকে সেই সকল কার্য্য হইতে বিরত হইতে হইত। সম্পূর্ণরূপ আন্তরিক ইচ্ছার সহিতই আমি যে সেই সকল কার্য্য হইতে বিরত হইয়াছিলাম, তাহা নহে। কারণ, এখন আর আমার সে বয়স ছিল না, সে চেহারা ছিল না, সে দিনও ছিল না, সে সমস্তই ক্রমে ক্রমে আমাকে পরিত্যাগ করিয়া চলিয়া গিয়াছিল। যাঁহারা আমাকে প্রণয়ের চক্ষে দেখিতেন, এখন আর তাঁহারা আমাকে সে চক্ষে দেখিতেন না। যাঁহারা আমাকে পূর্ব্বে অন্তরের সহিত যত্ন করিতেন, এখন আর তাঁহারা আমাকে সেরূপ ভাবে যত্ন করিতেন না। আমার নিমিত্ত যাঁহারা জলের মত অর্থ ব্যয় করিয়া আসিয়াছিলেন, এখন তাঁহারা আমার জন্য একটী মাত্র টাকা ব্যয় করিতে কুণ্ঠিত হইতেন। যাঁহারা আমা কর্ত্তৃক অপমানিত এবং তাড়িত হইয়াও রাত্রিদিন আমার গৃহে পড়িয়া থাকিতেন, এখন সাধ্যসাধনা করিলেও, তাঁহারা আর আমার বাটীর নিকট দিয়া গমন করিতেন না। এখন আমার আশা ভরসার মধ্যে কেবলমাত্র কালীবাবু; সম্পদ বিপদের সময়ও তিনি। সুতরাং তিনি যাহাই করুন না কেন, বা যাহাই বলুন না কেন, আমি তাঁহাকে কোন কথা বলিতাম না।

 “বিনা-আয়ে বসিয়া বসিয়া ব্যয় করিলে, কুবেরের ভাণ্ডারও ক্ষয় হইয়া যায়, আমি কোন্‌ ছার! আমার সমস্ত অর্থ যেরূপ জোয়ারের মত আসিয়ছিল, এখন ভাঁটার মত চলিয়া যাইতে লাগিল! আমার এবং কালীবাবুর সেই পূর্ব্বের মত আহারের নিমিত্ত খরচ, সেই পূর্ব্বের মত পরিচ্ছদ, ও সেই পূর্ব্বের মত সুরাপানের কিছুমাত্র হ্রাস না পাইয়া, এখন বরং বৃদ্ধিই হইতে লাগিল। তাহার উপর কালীবাবুর দেশে তাহার পরিবারের খরচ আছে; এখানকার নাচ-থিয়েটার আছে; গাড়িভাড়া আছে; বাবুগিরি আছে। বিনা-আয়ে এই সকল ব্যয় হইতে থাকিলে, সঞ্চিত অর্থ আর কতদিবস থাকিবে? ক্রমেই তাহার হ্রাস হইয়া আসিতে লাগিল।

 “সেই সময়ে কালীবাবুর দেশ হইতে এক পত্র আসিল যে, তাঁহার স্ত্রী ভয়ানক পীড়িতা, মৃতু-শয্যায় শায়িতা, মৃত্যুকালে কালীবাবুকে একবার জন্মশোধ দেখিতে তাঁহার নিতান্ত ইচ্ছা। এইরূপ পত্র পাইয়াও কালীবাবু আমাকে ছাড়িয়া যাইতে চাহিলেন না। তিনি প্রায় চারি বৎসর দেশে যান নাই। তাঁহার একটী পুত্র সন্তানও হইয়াছে, এখন তাহারই বয়ঃক্রম প্রায় সাড়ে তিন বৎসর হইবে। তিনি এ পর্য্যন্ত তাঁহার সেই পুত্রের মুখও দেখেন নাই। আমি কালীবাবুকে অনেক বুঝাইলাম; তাঁহার অনিচ্ছা-সত্ত্বেও তাঁহার মত করাইলাম, এবং কিছু খরচের টাকা দিয়া তাঁহাকে সাতদিবসের জন্য দেশে পাঠাইয়া দিলাম। আমিও তাঁহার সহিত ষ্টেশন পর্য্যন্ত গমন করিয়া তাঁহাকে রেলে উঠাইয়া দিয়া আসিলাম। কিন্তু গাড়ী না ছাড়িতে ছাড়িতেই আমার মন অস্থির হইতে লাগিল, তাঁহাকে দেখিতে ইচ্ছা হইতে লাগিল। তিনি গমন করিলে পর, মনের কষ্টে দিন কাটাইতে লাগিলাম। কিন্তু সাতদিবস আর আমাকে কষ্টভোগ করিতে হইল না, পঞ্চম দিবসে কালীবাবু তাঁহার সেই পুত্রটীর সহিত আসিয়া উপস্থিত হইলেন। তাঁহার নিকট জানিতে পারিলাম, দুই দিবস হইল, তাঁহার স্ত্রীর মৃত্যু হইয়াছে। তাঁহার আর কেহ না থাকায়, তাঁহার যাহা কিছু ছিল, সমস্ত বিক্রয় করিয়া, আপন পুত্রটীর সহিত এখানে আসিয়া উপস্থিত হইলেন।

 “কালীবাবুর সেই পুত্রটীর নাম হরি। হরি দেখিতে তাহার পিতা অপেক্ষাও সুশ্রী, এবং তাহার কথাগুলি অতিশয় মিষ্ট ও সুখশ্রাব্য! আমার সন্তান-সন্ততি জন্মে নাই; সন্তানের যে কি মোহিনী মায়া, তাহা আমি এতদিবস জানিতাম না; এতদিন পু্ত্র-স্নেহ আমার হৃদয়কে অধিকার করিতে পারে নাই। কিন্তু পরের পুত্রের নিমিত্ত এখন আর আমার তাহাও বাকী রহিল না; হরিকে আমি আমার পুত্রের মত দেখিতে লাগিলাম। ক্রমে ক্রমে তাহাকে অতিশয় ভালবাসিতে লাগিলাম, তাহাকে খাওয়াইলে-পরাইলেই আমার মনে সুখবোধ হইত। রাত্রিদিন তাহাকে আমার নিকটেই রাখিতাম, মুহূর্তের নিমিত্ত চক্ষুর অন্তরাল করিতাম না। এইরূপে আরও কিছুদিন কাটিয়া গেল।

 “কিছুদিন কাটিল সত্য, কিন্তু আমার সঞ্চিত অর্থ যাহা কিছু ছিল, সমস্তই নিঃশেষিত হইয়া গেল! দাসদাসীকে জবাব দিলাম, দ্বারবানকে বিদায় করিলাম। ইহাতেও কিন্তু আমার সবিশেষ কিছু সুবিধা হইল না; ক্রমে ক্রমে দুই একখানি করিয়া

গহনাগুলিও বন্ধক পড়িতে লাগিল। এই সময় কালীবাবু পুনরায় তাঁহার পূর্ব্বের সেই দালালী কার্য্যে প্রবৃত্ত হইলেন। কিন্তু সময়ের স্রোত একবার চলিয়া গেলে, সেই স্রোত পুনরায় আর ফিরে না। এতদিবসের পরে কালীবাবু তাঁহার সেই কার্য্যে প্রবৃত্ত হইলেন সত্য, কিন্তু আর কিছুই করিয়া উঠিতে পারিলেন না। তখন তিনি আর কোনরূপ উপায় না দেখিয়া, জুয়াচুরির নানা উপায় বাহির করলেন, এবং সেই উপায় অবলম্বনেই আমাদিগের সমস্ত ব্যয় নির্ব্বাহ হইতে লাগিল। এই কার্য্যের নিমিত্ত তাঁহার একজন সহকারীর প্রয়োজন হইল; তিনি তাহাও পাইলেন। সে আর কেহই নহে, এই দুরাচারিণী, মহাপাপকারিণী, মায়াবিনী রাক্ষসীই তাঁহার সহায় হইল। তাঁহার ইচ্ছামত আমি সকল দুষ্কার্য্যই করিতে প্রবৃত্ত হইলাম।

 “কালীবাবু তখন নব্য ইয়ার-ছোকরার দলে মিশিলেন; তাহাদিগকে জুটাইয়া আমার বাটীতে আনিতে লাগিলেন। আমার বাটীতে সেই সময় একটী ছোটখাট মদ্যালয় স্থাপিত হইল। যিনি পিতামাতাতে লুকাইয়া পাপের প্রথম দ্বারে উঠিতে ইচ্ছা করিতেন, কালীবাবু, তাহাকেই আমার বাড়ীতে লইয়া আসিতেন। অধিক রাত্রিতে যাঁহার মদ্যপানের লালসা বলবতী হইত, তিনিই আমার বাড়ীতে পদার্পণ করিতেন। কিন্তু একদিবস যিনি অসিতেন, পরদিবস আর তাঁহাকে দেখিতে পাইতাম না। তিনি যতদিবস বাঁচিতেন, আমার বাটীর নিকটবর্ত্তী আর হইতেন না; অধিকন্তু, তাঁহার বন্ধুবান্ধবকে আমার চরিত্রের কথা বলিয়া সতর্ক করিয়া দিতেন। কেন যে তাঁহারা আমার বাড়ীতে আসিতেন না, এবং অপরকে আসিতে বারণ করিতেন, তাহার কারণ বলিতেছি, শুনুন।  “যিনি আমার বাড়ীতে মদ্যপান করিতে আসিতেন, তাঁহারই খরচে মদ্য আনীত হইত; ইহাতেও কিছু লাভ করিতাম। যিনি অধিক রাত্রিতে মদ্যপান করিতে আসিতেন, তাঁহাকে আমার ঘরের সঞ্চিত মদ্যই দিতাম! তাহাতে সিকি মদ ও বার আনা জল থাকিত; তিনি তাহাই গ্রহণ করিতেন। কারণ, অধিক রাত্রিতে আর কোন স্থানে মদ্য পাওয়া যাইত না। তখন সকলে একত্র উহা পান করিতাম। কালীবাবুও সেই সঙ্গে মদ্য পান করিতেন, এবং ঘন ঘন চু্রুট টানিতেন। অন্য সময় কালীবাবু অধিক পরিমাণে চুরুট খাইতেন না; কিন্তু মদ্যপানের সময় এত অধিক পরিমাণে চুরুট খাওয়ার সবিশেষ কারণ ছিল। যাঁহারা কখন ঠেকিয়াছেন বা শুনিয়াছেন, তাঁহারাই তাহা বুঝিতে পারিবেন; কিন্তু অন্যে সহজে তাহা বুঝিয়া উঠিতে পারিবেন না বলিয়াই, তাহার কিঞ্চিৎমাত্র আভাস আমি এই স্থানে প্রদান করিতেছি।

 “চুরুটের ছাই অতি অদ্ভুত দ্রব্য। মদ্যের সহিত সেই ছাই মিশ্রিত হইলে যে কিরূপ ভয়ানক নেশা হয়, তাহা বোধ হয়, অনেক মাতালই জানেন। কালীবাবু সেই সুরাপান-অভিলাষী ব্যক্তিগণকে তাঁহাদিগের অজ্ঞাতসারে মদ্যের সহিত সেই ছাই মিশাইয়া খাওয়াইতেন। ইহাতে তাঁহাদিগের অতিশয় নেশা উপস্থিত হইত, তাঁহারা একবারে অজ্ঞান হইয়া পড়িতেন। তখন আমরা উভয়ে তাঁহাদিগের নিকট যাহা কিছু থাকিত, সমস্তই অপহরণ করিয়া তাঁহাদিগকে বাড়ীর বাহির করিয়া দিতাম। তখন তাঁহারা অচেতন অবস্থায় পথে দুই এক পদ অগ্রসর হইলেই পড়িয়া যাইতেন; এবং পরিশেষে পুলিস কর্ত্তৃক থানায় নীত হইয়া আপন আপন পাপের পরিণাম ফল দর্শন করিতেন। ভদ্রলোকের সন্তান বুঝিতে না পারিয়া, পিতামাতাকে লুকাইয়া এক কর্ম্ম করিতে গিয়া, তাহার যথেষ্ট সাজা পাইলেন, এই অপমানে তাঁহারা অতিশয় লজ্জিত হইতেন। তাহার উপর আবার বেশ্যাবাড়ী যাওয়ায় যে তাঁহাদিগের সমস্ত দ্রব্য অপহৃত হইয়াছে, এ কথা আর কাহারও নিকট প্রকাশ করিতে পারিতেন না, মনের যন্ত্রণা মনেই নিবৃত্ত করিতেন। তবে যে সকল ব্যক্তির হিতাহিত জ্ঞান নাই, মান-অপমানের ভয় নাই, ভালমন্দ বিচারের ক্ষমতা নাই, তিনি পাপ কথার কিছুমাত্র লুকাইতেন না; প্রকাশ্যে পুলিসের নিকট নালিস করিতেন যে, তাঁহার সমস্ত দ্রব্য চুরি গিয়াছে; তিনি যে সময় পুলিশ কর্ত্তৃক থানায় আনীত হন, সে সময় তাঁহার কিছুমাত্র হুঁস ছিল না। যখন বেহুঁস অবস্থায় প্রকাশ্য রাস্তায় পড়িয়াছিলেন, তখন কে তাঁহার দ্রব্য চুরি করিল, বা তিনি কোথায় ফেলিয়া দিলেন, ইহার কিছুমাত্র স্থির না হওয়ায়, সে বিষয়ের আর অধিক উচ্চবাচ্য হইত না; সুতরাং আমাদের উপর আর কেহই সবিশেষ সন্দেহ করিতেন না। তবে যদি কেহ আমাদিগকে জিজ্ঞাসা করিতেন, তাহা হইলে অমাদিগের বাড়ীতে তাঁহার আসার বিষয় একবারেই অস্বীকার করিতাম; কখন বা স্বীকার করিয়া বলিতাম, যখন তিনি চলিয়া গিয়াছেন, তখন তিনি সম্পূর্ণরূপ মাতাল ছিলেন না, এবং তাঁহার সমস্ত দ্রব্যই তাঁহার নিকট ছিল।

 “এইরূপে আমি আমার বাড়ীতে আগত লোকদিগকে ঠকাইয়া, তাহাদিগের দ্রব্যাদি চুরি করিয়া, কিছুদিবস অতিবাহিত করিলাম সত্য, কিন্তু পাপের পথ আর কতদিন প্রশস্ত থাকিবে? অতি শীঘ্রই আমার সেই পাপময়ী রাস্তা রুদ্ধ হইল। তখন সকলেই আমার ব্যাপার জানিতে পারিলেন। যে উপায়ে আমি লোকদিগকে প্রতারণা করিতাম, তাহা সকলেই অবগত হইলেন। তখন আর কেহই আমার বাড়ীতে আসেন না; আমাদিগের কথায় আর কেহ প্রত্যয় করেন না। ইহার পর আমাদিগের জীবিকানির্ব্বাহের অতিশয় কষ্ট হইতে লাগিল, গহনাগুলি এক একখানা করিয়া সমস্তই বন্ধক দেওয়া, এবং পরে বিক্রীত হইয়া গেল। অধিক কি, তখন ভরসার মধ্যে রহিল, অমর বাড়ীখানা। কিন্তু তাহাও যে রাখিতে পারিব, এরূপ আশা হৃদয় হইতে দিন দিন অন্তর্হিত হইতে লাগিল। কারণ, আমি পূর্ব্বেই বলিয়াছি যে, তখন আর সে বয়স ছিল না, সে সৌন্দর্য্য ছিল না, সে রূপলাবণ্যও ছিল না। আমাকে দেখিবার নিমিত্ত তখন আর কেহই ব্যগ্র হইতেন না। বারান্দায় একবার বাহির হইলে যাহাকে দেখিবার নিমিত্ত রাস্তায় লোক ধরিত না, সে এখন রাস্তায় রাস্তায় বেড়াইলেও কেহ তাহাকে একবারের নিমিত্ত চাহিয়াও দেখেন না! পূর্ব্বে যাহার সুমধুর গীতধ্বনি সুস্বর বাদ্যযন্ত্রের সহিত মিলিত হইয়া যাহার কর্ণকূহরে একবার প্রবেশ করিত, তিনিই স্পন্দহীন চিত্র-পুত্তলিকার ন্যায় সেই স্থানেই দণ্ডায়মান থাকিতেন—সমস্ত সুখ-দুঃখ, কার্য্য-কলাপ ভুলিয়া দুই দণ্ডকাল একাগ্রমনে তাহা শুনিতেন; কিন্তু এখন সেই লোকের, সেই মুখের সেই গীতধ্বনি যাঁহারই নিকট গীত হইত, তিনিই বিরক্ত হইয়া তৎক্ষণাৎ সেই স্থান পরিত্যাগ করিয়া উঠিয়া যাইতেন। হায়! অপূর্ব্ব জগতের কি অদ্ভুত লীলা!


 “যদি আমি পূর্ব্বে ভাবিতাম যে, রূপ-যৌবন কিছুই চিরস্থায়ী নহে, ধন-সম্পদ, দাসদাসী প্রভৃতি কিছুই চিরকাল থাকিবে না, তাহা হইলে আমি কি আমার সেই ক্ষণস্থায়ী সুখকে অবিনশ্বর সুখ জ্ঞান করিরা আত্মাকে এরূপ কলুষিত করিতাম? না, ধর্ম্মের মস্তকে জলাঞ্জলি দিয়া সেই মহাপাতকী তারাদিদির কুহক-মন্ত্রে ভুলিতাম? না, পাপকে ক্রমে ক্রমে এতদূর প্রশ্রয় দিয়া অসহ্য নরক-যন্ত্রণায় আত্মাকে বিপর্য্যস্ত করিতে অগ্রসর হইতাম? হায়! আমি কি মূর্খ!—কি পাপিষ্ঠা!!

 “যাহা হউক, আমাদিগের যখন এই উপায় বন্ধ হইল, যখন সকলেই আমাদিগের চাতুরী বুঝিতে পারিলেন, তখন কালীবাবু আমার পরামর্শ মত অন্য আর একটী উপায় বাহির করিলেন। সেই উপায় অবলম্বন করাতে প্রথম প্রথম আমাদের অবস্থার একটু পরিবর্ত্তন হইল; সমস্ত খরচপত্র বিনা-ক্লেশে নির্ব্বাহ করিতে লাগিলাম। সে উপায় যে কি, তাহার কতক, বোধ হয়, এখন প্রকাশ করা মন্দ নহে।”