পুনশ্চ/অস্থানে
অস্থানে
একই লতাবিতান বেয়ে চামেলি আর মধু-মঞ্জরী
দশটি বছর কাটিয়েচে গায়ে গায়ে,
রোজ সকালে সূর্য্য আলোর ভোজে
পাতাগুলি মেলে বলেচে
এই তো এসেচি।
অধিকারের দ্বন্দ্ব ছিল ডালে ডালে দুই শরিকে,
তবু তাদের প্রাণের আনন্দে
রেশারেশির দাগ পড়েনি কিছু।
কখন যে কোন্ কুলগ্নে ঐ
সংশয়হীন অবোধ চামেলি
কোমল সবুজ ডাল মেলে দিল
বিজুলি বাতির লোহার তারে তারে,
বুঝতে পারেনি যে ওরা জাত আলাদা।—
শ্রাবণ মাসের অবসানে আকাশ কোণে
সাদা মেঘের গুচ্ছগুলি
নেমে নেমে পড়েছিল শালের বনে,
সেই সময়ে সোনায় রাঙা স্বচ্ছ সকালে
চামেলি মেতেছিল অজস্র ফুলের গৌরবে
কোথাও কিছু বিরোধ ছিল না;
মৌমাছিদের আনাগোনায়
উঠত কেঁপে শিউলিতলার ছায়া।
ঘুঘুর ডাকে দুই প্রহরে
বেলা হোত আলস্যে শিথিল।
সেই ভরা শরতের দিনে সূর্য্য-ডোবার সময়
মেঘে মেঘে লাগল যখন নানা রঙের খেয়াল,
সেই বেলাতে কখন এল
বিজলি বাতির অনুচরের দল।
চোখ রাঙালো চামেলিটার স্পর্রা দেখে,—
শুষ্ক শূন্য আধুনিকের রূঢ় প্রয়োজনের পরে
নিত্যকালের লীলামধুর নিষ্প্রয়োজন অনধিকার
হাত বাড়ালো কেন?
তীক্ষ্ণ কুটিল আঁকৃষি দিয়ে
টেনে টেনে ছিনিয়ে ছিঁড়ে নিল
কচি কচি ডালগুলি সব ফুলে-ভরা।
এতদিনে বুঝল হঠাৎ অবোধ চামেলিটা
মৃত্যু-আঘাত বক্ষে নিয়ে,
বিজলি বাতির তারগুলো ঐ জাত আলাদা॥
২৩ ভাদ্র, ১৩৩৯