ছুটির আয়োজন

কাছে এল পূজার ছুটি।
রোদ্দুরে লেগেচে চাঁপাফুলের রঙ।
হাওয়া উঠচে শিশিরে শিরশিরিয়ে,
শিউলির গন্ধ এসে লাগে
যেন কার ঠাণ্ডা হাতের কোমল সেবা।
আকাশের কোণে কোণে
সাদা মেঘের আলস্য,
দেখে মন লাগে না কাজে।


মাষ্টার মশায় পড়িয়ে চলেন
পাথুরে কয়লার আদিম কথা,—
ছেলেটা বেঞ্চিতে পা দোলায়
ছবি দেখে আপন মনে,
কমল দিঘির ফাটল-ধরা ঘাট,
আর ভঞ্জদের পাঁচিল-ঘেঁষা
আতা গাছের ফলে-ভরা ডাল।
আর দেখে সে মনে মনে তিসির ক্ষেতে
গোয়ালপাড়ার ভিতর দিয়ে
রাস্তা গেছে এঁকে বেঁকে হাটের পাশে
নদীর ধারে।

কলেজের ইকনমিক্স ক্লাসে
খাতায় ফর্দ্দ নিচ্চে টুঁকে
চষমা চোখে মেডেল-পাওয়া ছাত্র-
হালের লেখা কোন্ উপন্যাস কিনতে হবে,
ধারে মিল্‌বে কোন্ দোকানে
“মনে-রেখো” পাড়ের সাড়ি,
সোনায় জড়া শাঁখা,
দিল্লির কাজ-করা লাল মখমলের চটি।
আর চাই রেশমে বাঁধাই-করা
এণ্টিক কাগজে ছাপা কবিতার বই,
এখনো তার নাম মনে পড়চে না।

ভবানীপুরের তেতালা বাড়িতে
আলাপ চল্‌চে সরু মোটা গলায়—
এবার আবু পাহাড়, না মাদুরা
না ড্যালহৌসী কিম্বা পুরী,
না সেই চিরকেলে চেনা লোকের দার্জ্জিলিঙ।

আর দেখচি সামনে দিয়ে
ষ্টেশনে যাবার রাঙা রাস্তায়
সহরের দাদন দেওয়া দড়ি-বাঁধা ছাগল ছানা
পাঁচটা ছ-টা ক'রে;
তাদের নিষ্ফল কান্নার স্বর ছড়িয়ে পড়ে
কাশের ঝালর দোলা শরতের শান্ত আকাশে।
কেমন করে বুঝেচে তারা
এল তাদের পুজার ছুটির দিন॥

১৭ ভাদ্র, ১৩৩৯