পুনশ্চ/শালিখ
শালিখ
শালিখটার কী হোলো তাই ভাবি।
একল! কেন থাকে দলছাড়া।
প্রথম দিন দেখেছিলেম শিমুল গাছের তলায়,
আমার বাগানে,
মনে হোলো একটু যেন খুঁড়িয়ে চলে।
তারপরে ঐ রোজ সকালে দেখি,—
সঙ্গীহারা, বেড়ায় পোকা শিকার করে।
উঠে আসে আমার বারান্দায়
নেচে নেচে করে সে পায়চারি,
আমার পরে একটুকু নেই ভয়।
কেন এমন দশা।
সমাজের কোন শাসনে নির্ব্বাসনের পালা,
দলের কোন্ অবিচারে
জাগল অভিমান।
কিছু দূরেই শালিখগুলো
করচে বকাবকি,
ঘাসে ঘাসে তাদের লাফালাফি,
উড়ে বেড়ায় শিরীষ গাছের ডালে ডালে,
ওর দেখি তো খেয়াল কিছুই নেই।
জীবনে ওর কোন্খানে যে গাঁঠ পড়েচে
সেই কথাটাই ভাবি।
সকাল বেলার রোদে যেন সহজ মনে
আহার খুঁটে খুঁটে
ঝরে-পড়া পাতার উপর
লাফিয়ে বেড়ায় সারা বেলা।
কারো উপর নালিশ কিছু আছে
মনে হয় না একটুও তা।
বৈরাগ্যের গর্ব্ব তো নেই ওর চলনে,
কিম্বা দুটো আগুন-জ্বলা চোখ।
কিন্তু ওকে দেখিনি তো সন্ধ্যেবেলায়—
একলা যখন যায় বাসাতে ডালের কোণে
ঝিল্লি যখন ঝিঁ ঝিঁ করে অন্ধকারে,
হাওয়ায় আসে বাঁশের পাতার ঝরুঝরানি।
গাছের ফাঁকে তাকিয়ে থাকে
ঘুম-ভাঙানো
সঙ্গীবিহীন সন্ধ্যাতারা॥
২১ ভাদ্র, ১৩৩৯