পুরাবৃত্তের সংক্ষেপ বিবরণ/কার্থাজ নগর বিনষ্ট হওনঅবধি খ্রীষ্টের জন্মপর্য্যন্ত
কার্থাজ নগর বিনষ্ট হওনঅবধি খ্রীষ্টের জন্মপর্য্যন্ত।
ইহার পূর্ব্বে যে কালের বর্ণনা করা গিয়াছে তাহা রোমানেরদের ঐশ্বর্য্য সময় কহা যাইতে পারে। পরিমিত আচরণ ও যথার্থ ও সাহস ও দেশের হিতাকাঙ্ক্ষা ইত্যাদি ধর্ম্ম রোমানেরদের আচার ব্যবহারেতে অনেকবার দৃষ্টি হইয়াছিল। কিন্তু ইহার পর যে সময়ের বর্ণনেতে প্রবর্ত্ত হওয়া গেল তন্মধ্যে ঈদৃশ ধর্ম্ম প্রায় দেখা যায় না অতএব ঐ সময় ধর্ম্মচ্যুত বলিয়া কহা যাইতে পারে। পৃথিবীর উত্তম২ অংশ সকল লুঠ করাতে রোম নগরে অশেষ লাম্পট্য এবং নীতির বিশৃঙ্খলতা হইল। যাঁহারা পরাভূত প্রদেশের শাসনের কার্য্যে প্রেরিত হইতেন সকলই অত্যন্ত ধন সঞ্চয় না করিয়া ফিরিয়া আসিতেন না। যদ্য পি মাকিদোনীয়া দেশের জয়হওনঅবধি এতদ্রূপ ধর্ম্মহীনতা ক্রমে২ রাজ্যমধ্যে বর্দ্ধিষ্ণু হইতে ছিল তথাপি কার্থাজ সত্ত্বে একপ্রকারে এই দুষ্ক্রিয়া থামনি ছিল। কিন্তু ঐ প্রতিযােগি নগর সমভূমি হইবামাত্র রোমানেরা নির্লজ্জ হইয়া অসদ্ব্যবহার ও বিশ্বসঘাতকতা ও নির্দয় আচরণের পথে ধাবমান হইলেন। ইহা তাঁহারদেরই ইতিহাসবেত্তা স্বীকার করিয়া কহেন যে “তাঁহারদের রাজসভ্যেরা ও দেশপতিরা ও বিদেশে প্রেরিত উকীলেরা সকলই এই কূকর্ম্মে রত হইলেন”।
যে বৎসরে কার্থাজ নগর বিনষ্ট হয় অর্থাৎ খ্রীষ্টীয়ান শকের ১৪৫ বৎসর পূর্ব্বে আখেয়া ও লাকিডিমোনিয়ারদের মধ্যে বিবাদের ছল ধরিয়া রােমানেরা আখেয়েরদের সমাজ উচ্ছিন্ন করিলেন এবং কোরিন্থ ও কলখিস ও থিব্স নগর ভস্মসাৎ করিয়া তাবৎ গ্রীকদেশ রোমান সাম্রাজ্যের এক সুবা করিলেন। কিন্তু ষাটি বৎসর ব্যাপিয়া রোমানেরা যুদ্ধ না করিয়া স্পাইন দেশের সম্পূর্ণ রূপ পরাভূত করিতে পারিলেন না ফলতঃ রোমানেরা পূর্ব্বাবধি যত দেশ জয় করেন তন্মধ্যে স্পাইনদেশীয়েরা যেমন আপনারদের স্বাধীনতা স্থিতির নিমিত্তে প্রাবল্য রূপে যুদ্ধ করেন তেমন অপর কোন জাতীয়েরা করিলেন না। ঐ দেশীয়েরদের সঙ্গে খীষ্টীয়ান শকের ২০০ বৎসর পূর্ব্বে যুদ্ধ আরম্ভ হইয়া ১৩৩ বৎসরপর্য্যন্ত ব্যাপিয়া থাকে অপর ১৪৬ শালে রোমান সুবাদারের অসহ্য অন্যায়াচরণে লুসিটানিয়া অর্থাৎ পাের্ত্তুগীসেরা একেবারে ক্ষিপ্ত প্রায় হইয়া বিরিয়ার্থসনামক এক জন সিপাহীকে আপনারদের সেনাপতি করিলেন। কথিত ছিল যে তিনি নিষ্কলঙ্ক এবং রোমানেরদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিতে যে গুণ বর্ত্তে তাহা তাঁহাতেই সম্পূর্ণ বিরাজমান। অদ্ভুত সাহস ও স্থির প্রতিজ্ঞামতে ছয় বৎসর ব্যাপিয়া তিনি যুদ্ধ করিলেন এবং তাঁহার দমনার্থ প্রেরিত রোমান সৈন্যেরদিগকে বারম্বার পরাভূত করিলেন। পরিশেষে রোমান সেনাপতিকে মহাপেঁচে ফেলিয়া সুযােগসময় বুঝিয়া সন্ধির সূচনা করিলেন এবং কিঞ্চিৎকাল পরে রাজসভ্যেরদের একান্ত অনুমতিক্রমে তাঁহার সঙ্গে সন্ধি হয়। পরন্তু রাজসভ্যেরা তাহাহইতে অভয় পাইয়া তাঁহাকে কিছু মাত্র না কহিয়া ঐ শান্তি উল্লঙ্ঘন করিতে নিশ্চয় করিলেন এবং রোমান কনসল সিপিয়ো অকস্মাৎ তাঁহার উপরে পড়িয়া তাঁহাকে পরাজিত করেন। পরে তাঁহারই তিন জন মিত্রকে তাঁহার সংহারার্থ ঘুস দিয়া প্রবোধ দিলেন। এই ব্যাপারেতে রোমানেরদের উপর অক্ষয় কলঙ্ক ধরিল। বিরিয়ার্থসের লোকান্তর হইলেও স্পাইনীয়েরা অর ছয় বৎসরপর্য্যন্ত যুদ্ধ করিয়া পুনশ্চ রোমান সৈন্যেরদিগকে পরাভূত করিলেন কিন্তু পরিশেষে ন্যুমান্সিয়া নগর ব্যতিরেকে দেশের মধ্যে তাঁহারদের আর কিছু অধিকার থাকিল না। ঐ নগর রক্ষার্থ স্পাইনীয়েরদের কেবল চারি হাজার সিপাহী ছিল রোমান কনসল ষাটি হাজার সৈন্য লইয়া তাহা বেষ্টন করেন। কিন্তু যেপর্য্যন্ত নগরস্থ লোকেরা অনাহারে মুমূর্ষু হইয়া আপনারদের বাটীতে অগ্নি লাগাইয়া তন্মধ্যে ঝাঁপদিয়া প্রাণপর্য্যন্ত ত্যাগ করিল সেইপর্য্যন্ত রোমানেরা নগর অধিকার করিতে পারিলেন না এবং অধিকার করিলেও নামমাত্র অধিকৃত হইল। খ্রীষ্টীয়ান শকের পূর্ব্বে ১৩৩ সালে ঐ নগর অধিকৃত হয় এবং স্পাইন দেশ লইয়া রোমান সাম্রাজ্যের দুই সুবা করা যায়। তাহার দুই বৎসর পরে পর্গামসের লক্ষ্মীছাড়া রাজা আটালস মরিবার সময়ে আপনার তাবৎ অধিকার রোমানেরদিগকে লিখিয়া দেন। তাঁহার পিতাকে পূর্ব্বে রোমানেরা ক্ষুদ্র আসিয়ার অধিকাংশ প্রদান করিয়াছিলেন। এতদ্রূপে রোমানেরা কলমের এক আঁচড়েতেই আসিয়ার অতিসমৃদ্ধ এক প্রদেশ প্রাপ্ত হইলেন কিন্তু এই দানেতে রোমানেরদের মধ্যে সুখাভিলাষিতা ও বিশ্বাসঘাতকতার এমত বৃদ্ধি হইল যে ঐ দান উপকারক না বলিয়া বরং অপকারক কহিতে হয়।
খ্রীষ্টীয়ান শকের ১৩০ বৎসর পূর্ব্বে উক্ত দেশ রোমানেরদিগকে প্রদত্ত হয়। ইহার এক শত বত্রিশ বৎসর পূর্ব্বে ইটালির সীমার বহির্ভূত এক বিঘা ভূমিতেও রোমানেরদের অধিকার ছিল না কিন্তু এতৎসময়ে তাঁহারদের সাম্রাজ্যের মধ্যে এই সকল সুবা গণিত ছিল। স্পাইনের দুই প্রদেশ। আফ্রিকা দ্বীপস্থ কার্থাজ দেশ লইয়া এক সুবা। শিশিলি। শার্ডিনিয়া। কর্ষিকা। লিগুড়িয়া। শিসাল্পিন্ গাল এই সকল দেশ পশ্চিম দিগে। এবং পূর্ব্ব দিগে মাকিদোনীয়া ও আখেয়া ও ক্ষুদ্র আসিয়া। এই সকল প্রদেশস্থ লোকেরা রোমনগরের প্রজারদের মধ্যে গণ্য এবং যাহারা রোমনগরে কনসল ও প্রেটর পদ উত্তীর্ণ হইয়াছিলেন তাঁহারাই এই সকল সুবাদারি কার্য্যে প্রেরিত হইতেন। দেওয়ানী ভার ও ফৌজদারী অর্থাৎ যুদ্ধ কার্য্য উভয়ই তাঁহারদের হস্তে অর্পিত হইত তাহাতে যৎপরোনাস্তি অন্যায় আচরণ হইতে লাগিল। ঐ সকল সুবাতে রােমান সৈন্যেরা নিযুক্ত থাকিত এবং যে২ স্থানে গ্রীক ভাষার চলন ছিল তিদ্ভন্ন স্থানে লার্টিন অর্থাৎ রোমীয় ভাষার ব্যবহার করা গেল।
অপর এই অশেষ দিগ্বিজয় করণের এবং অতিসমৃদ্ধ নানা প্রদেশ অধিকার করণের অশুভ ফল অতিশীঘ্র দৃষ্ট হইল। রোম রাজ্যের শৈশবাবস্থায় ধনি ও দরিদ্র লোকেরদের মধ্যে যেমন বিবাদ হইত তাদ্রূপ পুনর্ব্বার হইতে লাগিল। ক্রমে২ রোমানের যে ভূরি২ প্রদেশ অধিকার করিয়াছিলেন তাহা ধনি ব্যক্তিরা আপনারাই ভাগ যােগ করিয়া লইলেন দরিদ্রেরদিগকে কিছুমাত্র দিলেন না। এতদ্রূপে দীনগণ একেবারে উপায়হীন হইল যেহেতুক অন্যান্য দেশে দরিদ্র লোকেরা যে উপজীবক ব্যবসায় করিয়া থাকিত তাহা রোম নগরে হইতে পরিল না কারণ যে ঐ নগরে ব্যবসায় কার্য্য এমত অপমানকের ন্যায় গণ্য যে তাহাতে গোলামব্যতিরেকে আর কেহই নিযুক্ত হইত না। অপর খৃীষ্টীয়ান শকের পূর্ব্বে ১৩৩ বৎসরে ন্যুমানসিয়া নগরের বেষ্টন সময়ে ধনি লোকেরদের দৌরা ত্ম্যেতে রোম নগরে প্রথম অতিশয় উৎপাত ঘটে এবং প্রথমত তদ্দ্বারা নাগরিক বিভ্রাটে নগরস্থেরদের রক্তপাত হয়। তৎপরে নগরস্থ সমাজে অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার ও দাঙ্গা হয় তদনন্তর অন্যান্য অশুভ ঘটনাও অতিশীঘ্র ঘটিল পরিশেষে রোমানেরদের স্বাধীনতা, একেবারে বিলুপ্ত হইল।
তাহার বিশেষ এই। টিবিরিয়স গ্রাকস ইতর বংশজাত কিন্তু তাঁহার পিতা কার্থাজের জয়কর্ত্তা প্রথম সিপিয়োর কুলীনবংশ্য কন্যা বিবাহ করিয়াছিলেন। টিবিরিয়স পর হিতাকাঙ্ক্ষী ও সাহসী অথচ ইতর লোকের দুঃখোশমার্থ চেষ্টিত হইয়া লিসিনিয়ান ব্যবস্থার পুনরুত্থান করণব্যতিরেকে অন্য কোন সদুপায় দেখিতে পাইলেন না। ঐ ব্যবস্থাতে আজ্ঞা ছিল যে কোন রোমান ১৫০০ বিঘা ভূমির অধিক আপন দখলে রাখিতে পারিবেন না কিন্তু ঐ ব্যবস্থা কালে ক্রমশঃ অব্যবহৃত হওয়াতে রোমনগরে মান্য অনেক লোকের অতি ভারি২ জমীদারী হইল। এই প্রযুক্ত গ্রাকস লোকেরদের অত্যন্ত প্রিয় পাত্র এবং রাজসভ্যেরদের অতিঘৃণ্য হইলেন। পরে লোকেরদের ত্রৈব্যুন পদে তিনি মনোনীত হইলে ১৫০০ বিঘা ভূমির অধিক কেহ দখল করিতে পারিবেন না এমত লিসিনিয়ান ব্যবস্থা পুনরুত্থাপনের প্রস্তাব করিলেন এবং যদ্যপি অন্যান্য ত্রৈব্যুন তাহার প্রতিবন্ধকতা করিলেন তথাপি ঐ ব্যবস্থা সিদ্ধ হইল এবং ভূমিসকল ইতর লোকেরদের মধ্যে বিলিকরণার্থ আমীন নিযুক্ত হইল। এতৎ সমকালীন পূর্ব্বোক্তমতে পর্গামসের রাজা স্বীয় তাবৎ সম্পত্তি রোমানেরদিগকে দান করেন তাহাতে টিবিরিয়স গ্রাকস এই প্রস্তাব করিলেন যে ঐ সকল ধন দরিদ্র লোকেরদিগকেও দেওয়া যায় ইহাতে তাঁহার প্রতি ধনি লোকেরদের কোপ আরো বর্দ্ধিত হইল। অপর তাঁহার সাম্বৎসরিক পদ অতীত হইলে পুনর্ব্বার তিনি ত্রৈব্যুনের কার্য্যে নিযুক্ত হইতে উদ্যোগ করিলেন কিন্তু মনোনীত হওনের দিবসে যে কুলীন সিপিয়ো নাসিকার দখলে অনেক সরকারী ভূমি ছিল তিনি আপনার অনুগত যষ্টিধারি লোক ও গোলামেরদিগকে সঙ্গে লইয়া এবং ভূরি২ রাজসভ্যেরদের সমভিব্যাহৃত হইয়া টিবিরিয়সের উপরে পড়িয়া তাঁহাকে ও তাঁহার তিন শত মিত্রকে খুন করিলেন। রাজ্যের পত্তনঅবধি ছয় শত বিংশতি বৎসর ব্যাপিয়া সরকারী বিষয়ে এইপর্য্যন্ত যত বিবাদ হইয়াছিল তাহা উভয় পক্ষীয়েরা কিঞ্চিৎ২ ছাড়িয়া দেওয়াতে মৈত্রীভাবেই ভঞ্জন হইয়াছিল যেহেতুক ইতর লোকেরা রাজসভ্যেরদের সম্মান করিতেন এবং রাজসভ্যেরাও এক প্রকারে ইতর লোকেরদের ভয় করিতেন। কিন্তু এইস্থলে রাজসভাস্থেরা আপনারদের অভীষ্ট সিদ্ধ্যর্থ বিপক্ষেরদিগকে যৎপরোনাস্তি অনিষ্ট অর্থাৎ খুনপর্য্যন্ত করিতে উদ্যুক্ত হইলেন এবং এতৎকালাবধি নগরস্থ নানা দলের মধ্যে পরিমিত আচরণের লেশও থাকিল না।
টিবিরিয়সের অত্যন্ত খেদজনক অপমৃত্যুর দশ বৎসর পরে তদপেক্ষা অধিক মহানুভব ও বুদ্ধিমান তাঁহার কনিষ্ঠ ভ্রাতা কেয়স স্বীয় ভ্রাতার অনুগামী হইতে নিশ্চয় করিয়া রােমীয় রাজ্য কার্য্যের কণ্টকিত পথে প্রবেশ করিলেন। তিনি লোকেরদের ত্রৈব্যুন পদে নিযুক্ত হইলে লিসিনিয়ান ব্যবস্থা চলনকরণ বিষয়ে এমত যত্নবান হইলেন যে ধনি ও মহৎ ব্যক্তিরা তাঁহার নিপাতার্থ ষড়যন্ত্র করিতে আরম্ভ করিলেন। যাহাতে চিরস্থায়ী অথচ মহােপকার হইতে পারে এমত কার্য্যসম্পাদন বিষয়ে কেয়স নিয়ত চেষ্টিত ছিলেন কিন্তু তাঁহার পদস্থতা সময়ে সর্ব্বাপেক্ষা যে দুই প্রসিদ্ধ কল্প করিয়াছিলেন তাহা এই। মোকদ্দমার বিচার করণের যে ক্ষমতা রাজ্যের সৃষ্টি অবধি রাজসভ্যেরদের ছিল তাহা তাঁহারদের স্থানহইতে লইয়া নৈট অর্থাৎ যোদ্ধা অশ্বারোহি জাতীয়েরদিগকে অর্পণ করা। রাজ্যের মধ্যে তাঁহারা দ্বিতীয় শ্রেণীতে গণ্য এই নিয়মের দ্বারা রাজসভ্যেরদের মহাক্ষমতার কিঞ্চিৎ লাঘব করা তাঁহার মানস ছিল। দ্বিতীয়তঃ রোম নগরনিবাসিরদের যে বিশেষ ক্ষমতা ছিল তাহা ইটালির অন্যান্য দেশীয়ের দিগকে অর্পণ করিতে প্রস্তাব করা এই প্রসঙ্গের বিষয়ে পশ্চাৎ আমারদের অনেক লিখিতে হইবে। ইত্যাদি নানা প্রস্তাব দৃষ্টে রোমান ধনি ব্যক্তিদের এমত বােধ হইল যে কেয়সের সঙ্কল্পেতে আমাদের কি পর্য্যন্ত সঙ্কট না হইতে পারে। অতএব তাঁহারা নগরের মধ্যেই আক্রমণ পূর্ব্বক তাঁহাকে ও তাঁহার তিন সহস্র লোককে হত করিলেন। এতদ্রূপে কেয়স হত হইলে রাজসভাস্থেরা নানা মন্ত্রণাপূর্ব্বক লিসিনিয়ান অর্থাৎ আগ্রেরিয়ান ব্যবস্থার ভোগ এড়াইতে উদ্যোগ করিলেন অতএব ঐ ব্যবস্থা কখনই প্রকৃতরূপে দেশের মধ্যে চলন হয় নাই কিন্তু ইটালি দেশস্থ লােকেরদিগকে রোম নগরের এবং ফলতঃ তাবৎ পৃথিবীর রাজ্য শাসনের অংশী হওনের যে প্রবোধ দেওয়া গিয়াছিল তাহা এইরূপে ভগ্ন হওয়াতে তাঁহারদের অন্তঃকরণে উদ্বেগ বীজ বপন হইল এবং তাহাতে উত্তরকালে অতিতিক্ত ফল ফলিল।
অপর গ্রাকসেরদের ভ্রাতৃদ্বয়ের খুন করণেতে রাজসভ্যেরা লোকেরদিগকে পরাজয় করণেতে তাঁহারা নির্ভয়ে আপনারদের সম্পত্তিবর্দ্ধক ঘুস ঘাস লওন ইত্যাদি ব্যাপার সম্পূর্ণরূপেই করিতে ক্ষম হইলেন। অতএব প্রাচীন শুদ্ধাচারের পরিবর্ত্তে এইক্ষণে অশেষ সুখসম্বর্দ্ধক আচার হইতে লাগিল এবং অত্যন্ত নির্লজ্জতাপূর্ব্বক উৎকোচ গ্রহণাদি ব্যবহারে তাঁহারা রত হইলেন। নানা সুবাদারেরা অকুতোভয়ে যথেচ্ছ প্রজাবর্গের লুঠপাট করিতে লাগিলেন এবং যে সকল রাজগণ রোমানেরদের সঙ্গে সন্ধিবন্ধ ছিলেন তাঁহারা মহা উৎকোচ প্রদানের দ্বারা রাজসভ্যেরদের কাহাকে২ সপক্ষ করিতে সচেষ্ট হইলেন ইহার দ্বারা ঐ পূর্ব্বকার মহিমান্বিত রাজসভ্যেরদের অর্থাকাঙ্ক্ষা ও কুমন্ত্রণাসকল অত্যন্ত তেজাল হইল।
অপর এতৎসময়ে রোমীয়েরদের সঙ্গে যুগর্থার যে যুদ্ধ ঘটিল তাহাতে রোমনগরস্থ প্রধান২ লােকেরদের উৎকোচ গ্রাহকতা স্বভাব সুব্যক্ত হইল। ঐ যুদ্ধ খ্রীষ্টীয়ান শকের ১১৮ বৎসর পূর্ব্বে এইরূপে আরম্ভ হয়। কার্থাজীয় যুদ্ধেতে মাসিনিসার রাজা রোমানেরদের যে সাহায্য করিয়াছিলেন তাহার পরিতোষিকস্বরূপ তাঁহাকে আফ্রিক। দেশান্তঃপাতি ন্যুমিডিয়া রাজ্য প্রদত্ত হইল। তাঁহার মরণোত্তর তাঁহার পুত্ত্র মিসিপ্সা সিংহাসনারােহী হইলেন। তাঁহার হিয়েমসাল ও আধরবাল নামক দুই পুত্ত্র ও যুগর্থানামক এক ভাতৃপুত্ত্র ছিল যুগর্থা অতিশয় চালাক ও নিপুণ অথচ কদাচারী। যুগর্থা মিসিপ্সার পুত্রদ্বয়কে পাছে সিংহাসন চ্যুত করেন এই ভয়ে ঐ রাজা ন্যুমান্সিয়া নগর বেষ্টনকারি রোমানেরদের সাহায্যার্থ স্বীয় সৈন্যগণ তাঁহার অধীন করিয়া তথায় প্রেরণ করিলেন। ঐ যুদ্ধে তিনি নিপুণ হইয়া রোমান সেনাপতিরদের প্রশংসা পাত্র হইলেন। এবং রোমানের ছাউনিতে অনেক ব্যক্তি তাঁহার উচ্চাকাঙ্ক্ষিতার পৌষ্টিকতা করিয়া কহিলেন যে পিতৃব্যের পরলোকানন্তর অনায়াসে তুমি ন্যুমিডিয়া দেশ অধিকার করিতে পারিবা রোমানেরদের বিষয়ে তোমার কিছু ভয় নাই যেহেতুক রোম নগরে সর্ব্ব বিষয়ই অর্থাধীন। যুগর্থা স্বদেশে প্রত্যাগত হইলে তাঁহার পিতৃব্য প্রাচীন রাজা তাঁহাকে পােষ্য পুত্ত্রের ন্যায় গ্রহণ করিয়া রাজ্যে আপনার ঔরস পুত্রদ্বয়ের সঙ্গে তাঁহার সমান অধিকার করিয়া দিলেন। কিন্তু মিসিপ্সা রাজার লােকান্তর হইবামাত্র যুগর্থা হিয়েম্সালকে হত করিয়া আধরবালকে দেশ বহিষ্কৃত করিয়া ন্যুমিডিয়া দেশ অধিকার করিলেন। আধরবাল তৎক্ষণাৎ রোম নগরে রাজসভ্যেরদের নিকটে অভিযােগকণার্থ গমন করিলেন এবং যুগর্থা ঐ রাজসভ্যেরদিগকে উৎকোচের দ্বারা বাধ্য করণার্থ অর্থ সঙ্গে দিয়া স্বীয় দূতকে প্রেরণ করিলেন। তাঁহার অর্থই প্রবল হইল এবং ঐ দেশ সমানঅংশে দুই দাওয়াদারেরদের মধ্যে বাঁটওয়ারা করণার্থ দশ জন আ মীন আফ্রিকা দেশে প্রেরিত হইলেন। যুগর্থা আপনার পক্ষে উৎকৃষ্ট প্রদেশ সকল নির্দ্ধারিত করণ নিমিত্ত ঐ আমীনের দিগকে মেলা ঘুস খাওয়াইলেন এবং তৎপরে টাকা থাকিলে সকলই সম্পন্ন হইতে পারে ইহা নিশ্চয় বুঝিয়া অতি নির্লজ্জ হইয়া আপনার পিতৃব্যপুত্রের অংশের উপরও আক্রমণ করিতে লাগিলেন। তাহাতে শিত্রার নগরে তাঁহার আশ্রয় লইতে হইল। যুগর্থা ঐ নগর অতিশীঘ্রই বেষ্টন করিলেন কিন্তু আধরবাল স্বীয় সঙ্কটাবস্থার সম্বাদ রোমান রাজসভ্যেরদিগকে দেওনার্থ কৌশলক্রমে দূত প্রেরণ করিলেন। তৎসম্বাদ রোমে পঁহুছিলে প্রথমতঃ এই প্রস্তাব হয় যে যুগর্থাকে সম্পূর্ণ দণ্ড দেওনার্থ আফ্রিকাদেশে সৈন্য প্রেরিত হয় কিন্তু যাঁহারা ঐ রাজার অর্থ গ্রহণ করিয়াছিলেন তাঁহারা এই পরামর্শ নিষ্ফল করিয়া, উভয় রাজারদের বিবাদ ভঞ্জনার্থ তিন জন আমীন প্রেরণ করিলেন এতাবৎ মাত্র নির্দ্ধারিত হইল তন্মধ্যে রাজসভ্যেরদের সভাপতি স্করস অগ্রগণ্য। তাঁ হারা আফ্রিকাতে উত্তীর্ণ হইলে অপনারদের সম্মুখে যুগর্থাকে উপস্থিত হইতে তলপ করিলেন। এবৎ যদ্যপি তিনি অল্প সৈন্য লইয়া তাঁহার সম্মুখে উপস্থিত হইলেন তথাপি তাঁহার সেনাপতিরা অতিপ্রাদুর্ভাবেই শিত্রা নগরের উপরে আক্রমণ করা ছাড়িলেন না এবং ঐ আমীনেরা মানসিক দৌর্ব্বল্য কি উৎকোচগ্রহণেতে কহা যায় না অভিযোগ বিষয়ে যুগর্থার উত্তর শুনিয়া কিছুমাত্র নিষ্পত্তি না করিয়া ইটালি দেশে অমনি প্রত্যাগত হইলেন। তাঁহারদের প্রত্যাগমনের কিঞ্চিৎ পরে শিত্রা নগর যুগর্থার হস্তগত হইল এবং তিনি নানা যন্ত্রণার দ্বারা আধরবালকে হত করিয়া নগরের মধ্যে অস্ত্রধারী যত পাইলেন সকলকে সংহার করিলেন। ইত্যাদিবিষয়ক সম্বাদ রোম নগরে পঁহুছিলে লোকেরা এমত জাজ্বল্যমান হইল যে রাজসভাস্থেরা স্বীয় অপরাধ বিলক্ষণরূপে জ্ঞাত হইয়া এবং লোকেরদের রাগের বিষয়ে ভীত হইয়া একান্ত মনোযোগে আফ্রিকা দেশে সৈন্য প্রেরণ করিলেন। কিন্তু যুগর্থা পু নর্ব্বার কৌশলক্রমে সেনাপতিরদিগকে উৎকোচ প্রদান দ্বারা বাধ্য করাতে তাঁহারা কিছুমাত্র উদ্যোগ না করিয়া রাজার সঙ্গে অত্যন্ত অপমানক সন্ধিপত্র করিয়া চলিয়া আইলেন। এই সম্বাদ রোম নগরে পঁহুছিলে লোকেরদের রাগের সীমা থাকিল না এবং লোকের ত্রৈব্যুনেরদের মধ্যে মেমিয়সনামক ব্যক্তি সপষ্টতই কহিলেন যে তাবৎ সেনাপতি ও উকীলেরা উৎকোচ লইয়াছেন অতএব যাঁহারদিগকে যুগর্থা উৎকোচ দিয়াছিলেন তাঁহারদিগকে তাঁহার সম্মুখাসম্মুখি করণার্থ তাঁহাকে রোম নগরে রাজসভ্যেরদের দ্বারা এই নিয়মে আনাইলেন যে রাজাকে স্পর্শও করা যাইবে না। অতএব যুগর্থা রোম নগরে আগমন করিলেন কিন্তু রাজকীয় জাঁকজমকে না আসিয়া নিতান্তই নিবেদক ব্যক্তির বেশধারণে আগত হইলেন। তথাচ পঁহুছিবামাত্র উৎকোচ প্রদান করণের তাঁহার পূর্ব্বকার ব্যবহার চালাইতে লাগিলেন তাহাতে তাঁহার পক্ষে এই মঙ্গল হইল যে লােকের দের সভাতে তিনি তলপ হইলে ও তাঁহার তাবৎ অহিতাচার ব্যক্ত হইলে এবং এই সকল বিষয়ের উত্তর দেওনের আজ্ঞা হইলে রাজার উৎকোচগ্রাহি বেবিয়সনামক এক জন ত্রৈব্যুন তাঁহাকে কিছু মাত্র উত্তর দিতে নিষেধ করিলেন। এবং তাহাতে বোধ হইল যে যুগর্থা এই যাত্রা রক্ষা পাইলেন ইতিমধ্যে মাসেনিসার এক জন পৌত্ত্র মাসিবা সিংহাসনাকাঙ্ক্ষী হইয়া যুগর্থাকর্ত্তৃক রোম নগরের মধ্যেই হত হইলেন। এই কুকার্য্যে যুগর্থার অপরাধ পাত্র সম্পূর্ণ হইল রোমানেরা বোধ করিয়া রােম নগর ও ইটালিদেশহইতে অগৌণে যাইতে তাঁহাকে হুকুম দিলেন এবং তাঁহাকে সিংহাসন চ্যুত করণার্থ তৎক্ষণাৎ আফ্রিকাদেশে সৈন্য প্রেরিত হইল। এই যুদ্ধের ভার আলবিনসনামক রোমান কনসলের প্রতি অর্পিত হইল কিন্তু তিনি কিঞ্চিন্মাত্র উদ্যোগ না করাতে অনেকের বােধ হইল যে তিনিও যুগর্থার অর্থ গ্রহণ করিয়া থাকিবেন। ইতিমধ্যে ত্রৈব্যুনেরদের এক জন এই প্রস্তাব করিলেন যে ঐ রাজার স্থানে যাঁহারা উৎকোচ লইয়াছেন আদালতে তাঁহারদের অপরাধের বিচার হউক এবং কুলীনেরদের প্রতি ইতর লোকেরদের অত্যন্ত ঘৃণাপ্রযুক্ত এতদ্বিষয়ে নিতান্ত উৎসুকহওয়াতে রাজসভ্যেরদের তাহা স্বীকার করিতে হইল এবং দেশীয় অতি বিশিষ্ট চারি ব্যক্তি দোষীকৃত হইয়া দণ্ড্য হইলেন। তৎসমকালীন মিটেলস আফ্রিকাদেশে সৈন্যধ্যক্ষতা কার্য্যে নিযুক্ত হইলেন। তিনি উৎকোচ গ্রহণবিষয়ে নিতান্তই পরাঙ্মুখ হইয়া অতি প্রবলরূপেযুদ্ধ চালাইলেন এবং ক্রমে২ নগর অধিকার করিয়া যুগর্থাকে স্বদেশের মধ্যেই তাড়না করিলেন। কিন্তু যে সময়ে তাঁহার যুদ্ধ সমাপ্ত করণের অল্প অবশেষ থাকিল এমত সময়ে কেয়স মারিয়স তাঁহার পরিপর্ত্তে সৈন্যাধ্যক্ষতা কার্য্যে নিযুক্ত হইলেন।
কেয়স মারিয়স আড়পিনম স্থানীয় অতিদরিদ্র ও নীচ বংশ্য ব্যক্তির পুত্ত্র। স্বীয় অসমসাহস ও নৈপুণ্যের দ্বারা সৈন্য ও রাজ্যের মধ্যে নানা সম্ভ্রান্ত পদপ্রাপ্ত হইয়াছি লেন। তিনি যখন লোকেরদের ত্রৈব্যুন ছিলেন তখন লোকেরদের পক্ষ অবলম্বন করিয়া কুলীনেরদের এমত শক্ত রূপে দমন করিলেন যে তিনি ইতরলোকেরদের অত্যন্ত প্রিয় পাত্র হইলেন এবং লোকেরদের বােধ হইল যে আমারদের স্বত্ব রক্ষণার্থ ইহাঁর উপরেই নির্ভর করিতে হইবে এতৎ সময়ে তিনি আফ্রিকাদেশে সৈন্যেরদের মধ্যে মিটেলসের নায়েবী কর্ম্মে ছিলেন। পরে কন্সলী পদ প্রাপণের উদ্যোগ করিবার নিমিত্ত রোম নগরে গমনার্থ তিনি অনুমতি প্রার্থনা করিলেন। নগরে পঁহুছিলে ইতর লোকেরদের অনুকুল্যে তৎপদ প্রাপ্ত হইলেন তাঁহার শ্রীতে ধনি বংশ্যেরা অত্যন্ত কাতর হইলেন যেহেতুক পূর্ব্বে এমত নীচ বংশজাত ব্যক্তি কখন এতদ্রূপ সম্ভ্রান্ত পদ প্রাপ্ত হয় নাই। তৎসময়ে মারিয়সের আটচল্লিশ বৎসর বয়ঃক্রম। এবং যদ্যপি রাজসভ্যেরা অত্যন্ত প্রতিবন্ধকতা করিলেন তথাপি যুগর্থার প্রতি যুদ্ধ করণের ভার তাঁহাতেই অর্পিত হইল এবং মিটেলসের তাঁহার হাতে সৈন্য অর্পণ করিতে হইল মারিয়স সৈন্যাধ্যক্ষতা কার্য্যে অত্যন্ত নিপুণ অতএব তিনি যুগর্থাকে যৎপরােনাস্তি ক্লেশ দিলেন কিন্তু তাঁহাকে ধরিতে না পারিয়া তাঁহার শ্বশুর মারিটিনিয়ার রাজা বখস্কে বিশ্বাসঘাতকতাপূর্ব্বক রোমানেরদের হাতে সমপর্ণ করিতে লওয়াইলেন। বখস্ আফ্রিকাদেশস্থ ও রোমানকর্ত্তৃক অসভ্যেরদের মধ্যে গণ্য হইয়াও প্রথমতঃ এমত বিশ্বাসঘাতকতা কার্য্যহইতে পরাঙ্মুখ হইলেন কিন্তু মারিয়সের নায়েব সিল্লা বাক্ কৌশলক্রমে তাঁহার ঐ আপত্তি খণ্ডন করিলেন তাহাতে বখস্ মৈত্রীভাবে যুগর্থাকে এক সমাজে আহ্বান করিয়া রোমানেরদের হাতে তাঁহাকে সমর্পণ করিলেন এতদ্রূপ খ্রীষ্টীয়ান শকের ১০৬ বৎসর পূর্ব্বে যুগর্থার যুদ্ধ সমাপ্ত হয় কিন্তু তাহাতে মারিয়স ও সিল্লার এবং রােমান মাত্রেরই সম্ভ্রমের মহা কলঙ্ক জন্মিল।
রোমানেরদের ইতিহাসের মধ্যে তৎপরে যে গুরুতর ব্যাপার তাহা ইউরোপের উত্তরদেশীয়েরদের আক্রমণ কালক্রমে তাঁহারদেরই দ্বারা রোমানেরদের সাম্রাজ্য সমুলোৎপাটিত হয়। খ্রীষ্টীয়ান শকের পূর্ব্বে ১০৯ সালে সিম্ব্রি ও টুটোনিস ও অন্যেরা ইউরোপের উত্তর ভাগ হইতে আসিয়া ত্রানসালপিন গাল নামে রোমানেরা যে সুবা সম্প্রতি স্থাপিত করিয়াছিলেন তাহা লুঠ পাট করিলেন। তাহার চারি বৎসর পরে তাহারা সিলানস এবং তাহার কিঞ্চিৎ পরে স্করস ও সেপিয়োনামক রোমান সেনাপতিরদিগকে পরাভূত করেন এবং হানিবালের সময়ে যেমন তদ্রূপ এইক্ষণেও ইটালি দেশস্থ লোকেরা কম্পিতকলেবর হইলেন। অতএব এইক্ষণে মারিয়সব্যতিরেকে অন্য কোন সেনাপতির রাজ্য রক্ষাকরণের ক্ষমতা নাই এই বোধে তাঁহার প্রতি সকলের দৃষ্টি পড়িল। ফলতঃ এতৎসময়ে রোমানেরদের এমত গুরুতর ভয় ছিল যে তাঁহারা দেশীয় মূল ব্যবস্থা স্থগিত রাখিলেন বিশেষতঃ কোন ব্যক্তি নগরে অবর্ত্তমান সময়ে কনসলী পদে মনোনীত হইবেন না অথবা পূর্ব্বকার কনসলীপদের দশ পর বৎসর গত না হইলে পুনর্ব্বার তৎপদে কেহ নিযুক্ত হইবেন না এই দুই ব্যবস্থা। অতএব মারিয়স ইটালি দেশে না থাকিতে এবং তাঁহার পূর্ব্বে কনসলী পদের পর তিন বৎসর মাত্র গত হইলেই পুনশ্চ তিনি কনসলী পদে নিযুক্ত হইলেন। পরে উত্তম সুশিক্ষিত সৈন্য লইয়া খুীষ্টীয়ান শকের পূর্ব্বে ১০৩ সালে গল দেশে যাত্রা করিলেন। পঁহুছিয়া শুনিলেন যে রোননদীঅবধি পিরনিস পর্ব্বতপর্য্যন্ত অসভ্যেরা তাবদ্দেশ লুঠ পাট করিয়া দক্ষিণে স্পাইন দেশে যাত্রা করিয়াছে। তাহাতে মারিয়স তাঁহারদের প্রত্যাগমনের প্রতীক্ষা করিয়া স্বীয় সৈন্যেরদিগকে যুদ্ধ কার্য্যে সুশিক্ষিত করত কাল যাপন করিলেন। এই ব্যাপারে রত থাকনসময়ে তিনি তৃতীয় ও চতুর্থবার কনসলীপদে মনোনীত হইলেন। ঐ অসভ্যেরদের স্পাইন দেশে যাত্রার পর তৃতীয় বৎসরে তাঁহারা তথা হইতে প্রত্যা গত হইয়া স্বীয় সৈন্যেরদিগকে দ্বিধাবিভক্ত করিলেন। এক দল অর্থাৎ আম্ব্রোনিস ও টুটোনিস প্রবান্স দিয়া অপর দল অর্থাৎ সিম্ব্রি অতিদূরে ঘুরিয়া টিরল দিয়া ইটালি দেশে প্রবেশিত করিতে নিশ্চয় করিলেন। শেষোক্ত দল আপনারদের লক্ষিত স্থানে গমন করিল এবং মারিয়স আম্ব্রোনিসের গমনাগমনের তত্ত্বাবধারণ করত তাহারদের পশ্চাৎ গেলেন। পরিশেষে এইক্ষণে আই নামে বিখ্যাত শহরের নিকটে তাহারদের উপর পড়িয়া সম্পূর্ণরূপে তাহারদিগকে পরাজয় করিলেন এবং তাহারদের এক লক্ষ সৈন্যের অধিক হত ও ধৃত হইল। ইতিমধ্যে সিম্ব্রি আল্প পর্ব্বত উত্তীর্ণ হইল এবং তাঁহারদের নিবারণার্থ যে রোমীয় সৈন্য কাটল্লসের অধীনে প্রেরিত হন তাঁহারা অত্যন্ত ভীত হইয়া পলায়নপর হইলেন। এমত সময়ে মারিয়স রোম নগরে পুনরাগত হইলেন এবং ঐ সৈন্যাধ্যক্ষতার ভার তাঁহাকে গ্রহণ করিতে সকলই মিনতি করিলেন তাহাতে তিনি স্বীকৃত হইয়া উত্তর দিগে গমন করত পাে নদীর তীরে ঐ অসভ্যেরদের দেখা পাইয়া তুমুল সংগ্রাম হইল তাহাতে সিম্ব্রি সম্পূর্ণ রূপে পরাজিত হন। তাঁহারদের এক লক্ষ চল্লিশ হাজার সৈন্য রণস্থলে মারা পড়িল এবং ইটালি দেশ অভয় প্রাপ্ত হইল।
এতৎ সমকালীন শিশিলি উপদ্বীপে গোলামেরদের সঙ্গে যুদ্ধ ঘটে। মুনীবেরা তাহারদের প্রতি অত্যন্ত নিষ্ঠুরতা ব্যবহার করণেতে তাহারা দাসত্বহইতে মুক্ত হওনার্থ উৎসুক হইয়া ক্রমে২ অস্ত্রধারণ করত আপনারদের সেনাপতি নিযুক্ত করিয়া বারম্বর রোমান সৈন্যের দিগকে পরাভূত করিলেন। এবং ঐ অভাগা গোলামেরদের দশ লক্ষ ব্যক্তি হত হওনের পর ঐ উপদ্বীপ শান্তি সুস্থির হয়।
অপর খৃষ্টীয়ান শকের পূর্ব্বে ৯৮ সাল অবধি ৯১ সাল পর্য্যন্ত যে সাত বৎসর গত হয় তাহাতে কুলীনেরদের অগ্রগণ্য মিটেলসের দেশ বহিষ্কৃত হওন ব্যতিরেকে অন্য কোন স্মরণীয় বিষয় নাই। মারিয়স উৎকোচ প্রদানের দ্বারা কনসলী পদে ষষ্ঠবার মনোনীত হইয়া অতি দস্যু কএক ব্যক্তির সঙ্গে যোগ করিলেন। তাঁহারা শহরের মধ্যে যথেষ্টাচরণ করাতে তাবৎ ভদ্র লোক তাঁহারদের দমনার্থ যত্নবান হইলেন এবং তাঁহারদিগকে একেবারে মারিয়সের ত্যাগ করিতে হইল। তাহাতে সাটর্নিনস ও গ্লাসিয়সনামক তাঁহারদের দুই জন সরদার দুর্গের মধ্যে আশ্রয় লইলে পরিশেষে আত্মসমর্পণ করিয়া হত হইলেন। ইহারদের দৌরাত্ম্যেতে সিল্লা ও মারিয়সের অত্যন্ত দৌরাত্ম্য করণের পথ মুক্ত হইল। তদ্বিষয় অতি শীঘ্র আমারদের বর্ণন করিতে হইবে।
অপর মারিয়স ও সিল্লার আমলের বিরোধেতে যে কর্ম্মের দ্বারা রােম নগরে নদীস্বরূপ রক্ত বহিতে লাগিল তাহা বর্ণনকরণের পূর্ব্বেই ইহার প্রস্তাব করণ আবশ্যক বোধ হইল। আদি কালে রোম নগর নানা দল দস্যু লইয়াই উৎপন্ন হয় এবং তাহার পর কএক শত বৎসর পর্য্যন্ত রোমানেরা অত্যন্ত অসভ্য থাকে তাহারদের মধ্যে শিষ্ট সাম্প্রদায়িক বিদ্যার লেশও ছিল না। কিন্তু যখন রোমানেরদের ইটালি দেশের সীমান্ত রাজ্য জয় করাতে পূর্ব্ব দেশীয় সভ্যেরদের সম্পর্ক আরম্ভ হইতে লাগিল তখন রোম নগরস্থ উচ্চবিত্ত লােকেরদের সভ্য বিদ্যাবিষয়ক কিঞ্চিৎ২ রুচি জন্মিল এবং গ্রীক ভাষা অত্যন্ত মনোযোগপূর্ব্বক অধ্যয়ন করিতে লাগিলেন। লাটিন ভাষার এমত পরিপাট্য ও সংস্কার হইল যে পরিশেষে প্রায় গ্রীক ভাষার তুল্য তাহার সাধুতা ও শক্তিমত্তা হইল। অতএব রোম নগরকর্ত্তৃক গ্রীকদেশ অস্ত্রবলে পরাভূত হইল বটে কিন্তু গ্রীকীয়েরা আপনারদের বিদ্যা ও নীতিজ্ঞান ও সভ্যতার বলে রোমানেরদিগকে পরাস্ত করিলেন। অপর রোম রাজ্যের ব্যাপারের অতি বাহুল্য হওয়াতে প্রধান২ নগরস্থ লােকেরদের তীক্ষ্ণ বুদ্ধির পোষকতা হইল এবং বক্তৃতাতে যাহারদের নৈপুণ্য হইল তাঁহারা মহা ধন ও মান প্রাপ্তহওয়াতে সকলই মহোদ্যোগী হইলেন এবং উচ্চবিত্ত লোকেরদের মধ্যে বিদ্যা ও সভ্যতার অত্যন্ত চর্চ্চা হইল।
এতৎসময়ে রোম নগরস্থ নৈট জাতীয়েবদের পরাক্রম খর্ব্ব হয়। পাঠকেরদের স্মরণ থাকিবে যে কেয়স গ্রাকস ব্যবস্থাক্রমে আদালতের ভার তাঁহারদের প্রতি অর্পিত হইয়াছিল। তাঁহারাও রাজস্বের ইজারদার অতএব তাঁহারা অবাধে উৎকোচাদি গ্রহণে ক্ষম হইলেন যেহেতুক তাঁহারদের অপরাধের মোকদ্দমা বিষয় তাঁহারদেরই আদালতে উপস্থিত করিতে হইত। অতএব কালেক্টরী ও জজী উভয় কর্ম্ম এতদ্রূপে এক জনের হস্তে সমর্পণ করাতে রাজ্যের নানা প্রদেশে যৎপরোনাস্তি উৎপাত হইতে লাগিল। তাঁহারদের সংখ্যা ৩৯০০। এই বৃহৎ দল ব্যক্তিরদের যেমন পরাক্রম বৃদ্ধি হইল তেমন দাম্ভিকতাও বাড়িতে লাগিল। পরিশেষে তাঁহারদিগকে কেহই সহিষ্ণুতা করিতে পারিল না অতএব দ্রুসশ নমিক লােকেরদের এক জন ত্রৈব্যুন তাঁহারদের পরাক্রমের অর্দ্ধেক ন্যূনতা করিলেন কিন্তু রোম নগরের রাস্তার মধ্যেই তিনি হত হইলেন।
অপর রোম নগরস্থেরদের যে ক্ষমতা তত্তুল্য ক্ষমতা ইটালিনিবাসি তাবৎ লােকেরদিগকে প্রদান করণের সঙ্কল্প এতৎসময়ে দ্রুশস প্রস্তাব করিলেন। তাহা যদি সিদ্ধ হইত তবে ইটালি দেশস্থেরা একেবারে রাজশাসন কার্য্যের অংশী হইতেন। এই সঙ্কল্পেতে রাজসভ্যেরদের যেমন অনিষ্ট তেমন নগরীয় ইতরলোকেরদেরও বটে অতএব এইক্ষণে তাহা বিফল হইল। ইটালিনিবাসিরা দ্রুশসের অঙ্গীকারে কৃতকার্য্যতাবিষয়ে বড় আশা করিয়াছিলেন কিন্তু সেই আশা এতদ্রূপে ভগ্নহওয়াতে ঐ ক্ষমতা বলক্রমে কিরূপে তাঁহারা প্রাপ্ত হইবেন তদ্বিষয়ে তাঁহারা মন্ত্রণা ক রিতে লাগিলেন। তাঁহারদের এতদ্রূপ উত্তেজনা হওনসময়ে দ্রুশসের হত হওন বার্ত্তা শুনিয়া আপনারদের সাহস ব্যতিরেকে তৎক্ষমতা প্রাপণের উপায়ান্তর নাই এই বোধ তাঁহারদের মনে অতিদূঢ় হইল। পৃথিবী জয় করত রোমানেরা প্রথমঅবধি যত যুদ্ধে প্রবর্ত্ত হইয়াছিলেন সেই সকল যুদ্ধে তাঁহারদের সৈন্যের তিন অংশের দুই অংশ ইটালিনিবাসিরা। তাঁহারা স্বতন্ত্র দল হইয়াই যুদ্ধ করিতেন এবং রোমানেরদের নিজ সৈন্যের মধ্যেও কখন ভর্ত্তি ছিলেন না। যে প্রদেশস্থ লােকেরা এইরূপভগ্নাশ হইয়াছিল তাহারা সকলই শিজাল্পিন গলের দক্ষিণনিবাসী কেবল লাটিন ও সাবিন ও হিত্রুরিয়া ও অম্ব্রিয়া এই চারি জাতীয় লোকেরা রেমিনেরদের পক্ষে দৃঢ়তর সহায় থাকিলেন। এই সংসৃষ্ট লােকেরা যুদ্ধে স্পষ্টত প্রবর্ত্ত হওনের পূর্ব্বেই রোম নগরে দূত প্রেরণ করিয়া নিবেদন করিলেন যে আমরা তাবৎ যুদ্ধেই রোম রাজ্যের সাহায্য করিয়াছি এবং প্রতিবৎসরেই দ্বিগুণ সৈন্য যোগাইয়া দিয়াছি অত এব প্রার্থনা করি যে আমারদের সহযোগে যে রোম নগর এমত ঐশ্বর্য্যশালী হইয়াছে ঐ নগরস্থেরদের যেমন ক্ষমতা তত্তুল্য ক্ষমতা আমারদিগকে অর্পণ করা যায়। রাজসভাস্থেরা অতিতুচ্ছতাপূর্ব্বক এই প্রস্তাব হেয় করাতে উভয়েই যুদ্ধার্থ সসজ্জ হইলেন। ইটালি দেশীয়েরা রোম নগরহইতে ত্রিশ ক্রোশ অন্তরে কর্ফিনিয়ম স্থান আপনারদের রাজধানীস্বরূপে মনোনীত করিয়া ভরসা করিলেন যে এই নগর আমরা তাবৎ ইটালির রাজধানী করিতে পারিব। অপর তাঁহারা পাঁচ শত ভদ্র লোক লইয়া এক রাজসভা করেন এবং রোম নগরের সদৃশ কনসল ও সেনাপতি ও অন্যান্য কর্ম্মকারকেরদিগকে নিযুক্ত করিলেন। এই যুদ্ধ তিন বৎসর ব্যাপিয়া থাকে অর্থাৎ খ্রীষ্টীয়ান শকের পূর্ব্বে ৯০ শাল অবধি ৮৮ সালপর্য্যন্ত। রোমানেরা ইটালি দেশস্থেরদের কর্ত্তৃক বারম্বার পরাভূত হইলেন বটে কিন্তু পরিশেষে সিল্লার যুদ্ধ নৈপুণ্য প্রযুক্ত ইটালিস্থেরা পরাজিত হইলেন। ঐ সিল্লা যুগর্থার যুদ্ধ সময়ে মারিয়সের নায়েব ছিলেন। অপর জয় পরাজয় বিষয়ক নানা আন্দোলনের পর রোমীয় রাজসভ্যেরদের নগরীয় ক্ষমতা এক করিয়া ইটালিস্থ নানা প্রদেশের লোককে দিতে হইল। তাহা যদি প্রথমেই দিতেন তবে ঐ যুদ্ধে যে তিন লক্ষ লোক হত হয় তাহারদের প্রাণ রক্ষা পাইত। ইটালি নিবাসিরদিগকে এতদ্রূপ ক্ষমতা প্রদান করাতে রোম রাজ্যের মূল ব্যবস্থার যে সাম্যভাব তাহার সমূলােৎপাটন হইল এবং তৎপরে রোম নগরে আর শান্তি সুস্থিরতা থাকিল না। যেহেতুক নগরের মধ্যে যাঁহারা প্রবল হইতে ইচ্ছুক হইতেন তাঁহারা নাগরীয় ক্ষমতা বিশিষ্ট ভূরি২ বহিস্থ লােকেরদিগকে নগরে আনাইয়া যে কোন নিয়মের প্রস্তাব করিতে ইচ্ছুক হইতেন তাহাই বল দ্বারা সম্পন্ন করিতে পারিতেন।
তৎপরে যে যুদ্ধে রােমানেরা লিপ্ত হন তাহা মিথ্রিডাটিসের সঙ্গে হয়। ক্ষুদ্র আসিয়ার ঈশান কোণস্থিত পণ্টস রাজ্যে বহুকালাবধি যে রাজবংশ্য প্রভুত্ব করি য়াছিলেন মিথ্রিডাটিস তদ্বংশ্য। তিনি মহাজ্ঞানবান ও পারদর্শী যুদ্ধ বিষয়ে অতিদক্ষ কিন্তু তাঁহার এই সকল সদ্গুণ কেবল এক বিশ্বাসঘাতকতার কলঙ্কেতে আচ্ছাদিত ছিল। তিনি পূর্ব্বেই ইউরোপ ও আসিয়ার উত্তর ভাগের অধিকাংশ জয় করিয়া তাবৎ আসিয়া অধিকার করণবিষয়ে লালসী হইলেন। অপর ক্ষুদ্র আসিয়ান্তঃপাতি রোমানেরদের সীমাবর্ত্তি কাপাডোকিয়া প্রদেশের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করাতে রোমানেরদের সঙ্গে তাঁহার প্রথম বিরোধ হইল। এবং রোমানেরদের এই বোধোদয় হইল যে ইঁহার দ্বিগ্বিজয় করণের কল্পনা অতি শীঘ্রই আমারদের দমন করিতে হইবে। তাঁহার সঙ্গে খ্রীষ্টীয়ান শকের পূর্ব্বে ৮৯ সালে যুদ্ধ আরম্ভ হইয়া বহুকাল অর্থাৎ খ্রীষ্টীয়ান শকের পূর্ব্বে ৬৩ সালে রাজার মৃত্যুপর্য্যন্ত ব্যাপিয়া থাকে। এই দীর্ঘকালব্যাপক যুদ্ধেতে রােমানেরদের ঐ বােধ অরো দৃঢ় হইল যেহেতুক হানি বালের পরঅবধি এই রাজার তুল্য তাঁহারদের কোন প্রবল শত্রু উঠিল না। তাঁহাকর্ত্তৃক বিথিনিয়া ও কাপাডোকিয়া এই দুই দেশ অধিকৃত হইলে তদ্দেশের অপদস্থ রাজা রােম নগরে নালিশ করণার্থ গমন করিলেন। তাহাতে রাজসভ্যেরা আসিয়াতে আমীন প্রেরণ করিয়া ঐ রাজারদিগকে সিংহাসনে পুনঃ স্থাপন করিতে হুকুম দিলেন এবং মিথ্রিডাটিসও তাহাতে কিছু প্রতিবন্ধকতা করিলেন না যেহেতুক তাঁহার কল্প তৎসময়ে পরিপক্ব ছিল না। কিন্তু কিঞ্চিৎকাল পরে আপনার পুত্ত্রকে কাপাডোকিয়াতে প্রেরণপূর্ব্বক দেশ অধিকার করিয়া কহিলেন যে রোমান আমীনের অযথার্থাচরণের দ্বারা আমার এই ব্যাপার করিতে হইল। তাহাতে আমীনেরা রাজসভ্যেরদের আজ্ঞা প্রতীক্ষা না করিয়া এক মহাদল সৈন্য সংগ্রহ পূর্ব্বক একেবারে মিথ্রিডাটিসের সঙ্গে যুদ্ধে প্রবর্ত্ত হই লেন। তিনি তাঁহারদের তাবৎ সৈন্য সম্পূর্ণরূপে পরা ভূত করিয়া রোডস নগরব্যতিরেকে ক্ষুদ্র আসিয়ান্তঃপাতি রোমানেরদের যত প্রদেশ বা নগর বা উপদ্বীপ ছিল সকল হইতে তাহারদিগকে দূরীকৃত করিলেন। এই ব্যাপার খ্রীষ্টীয়ান শকের পূর্ব্বে ৮৭ সালে হয়।
এই বিভ্রাটের সম্বাদ রোম নগরে পঁহুছিলে রাজসভ্যেরা এই নূতন অথচ ভয়ঙ্কর মহাশত্রুর প্রতিকূলে সৈন্য প্রেরণ করিয়া অতি মনোযোগপূর্ব্বক যুদ্ধ করিতে নিশ্চয় করিলেন। অপর ঐ যুদ্ধ চালাইবার নিমিত্ত যাঁহারা সাকাঙ্ক্ষ হইলেন তাঁহারদের মধ্যে মারিয়স ও সিল্লা এই দুই জন অগ্রগণ্য। লোকেরদের প্রিয়পাত্র অথচ শিম্ব্রিয়েরদের জয়কারি মারিয়সের তৎসময়ে সত্তর বৎসর বয়স হইলেও ঐশ্বর্য্যের লালসাহইতে তাঁহার মন নিবৃত্ত ছিল না এবং এই যুদ্ধে তাঁহার সম্ভ্রম ও ধনের আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ হইতে পারে বোধ করিয়া তিনি যুদ্ধে প্রবর্ত্ত হইতে অতি যত্নবান্ হইলেন। পক্ষান্তরে রাজসভ্য ও কুলীন ধনি ব্যক্তিরদের প্রিয়পাত্র যে সিল্লা সম্প্রতিকার ইটালি দেশীয় আন্তরিক যুদ্ধেতে অতি প্রতিভান্বিত হইয়াছিলেন তিনিও তত্তুল্য এই যুদ্ধের কর্ত্তৃত্বের আকাঙ্ক্ষী হইলেন তাহা পাইলে তাঁহার অন্য কোন তর্পণীয়বিষয়ক ইচ্ছা থাকে না। কি বাঁটয়ারা কিম্বা রাজসভ্যেরদের মনোনীত হওয়াতে কহা যায় না ঐ যুদ্ধের কর্ত্তৃত্ব তাঁহাকেই অর্পিত হইল। তাহাতে মারিয়স ঐ যুদ্ধের কর্ত্তৃত্বকারিত্ব আপনার হস্তেই অর্পণ হয় এতদর্থে যৎপরোনাস্তি গর্হিত কার্য্যে প্রবর্ত্ত হইলেন এবং নগরস্থ দুষ্ট লােকেরদের সঙ্গে যােগ করত রাজসভাতে গিয়া কএক জন রাজসভ্যেরদিগকে ধরিয়া হত করিলেন। সিল্লা তৎসময়ে রাজসভাতে উপস্থিত ছিলেন তৎক্ষণাৎ পলায়ন পর হইয়া স্বীয় সৈন্যেরদের নিকটে গেলেন ঐ সৈন্যেরা তৎসময়ে নােলাস্থান বেষ্টন করিতেছিল। অপর রাজসভ্যেরা মারিয়সের অত্যাচারে ভীত হইয়া মিথ্রিডটিসের সঙ্গে যুদ্ধকরণের ভার তাঁহাতেই অর্পিত করিলেন। এতদ্রূপ পরাক্রম পাইয়া তিনি রােম নগর হস্তগত করিলেন ও সিল্লার অনেক বন্ধুবান্ধবকে হত করিলেন এবং তাঁহারদের সম্পত্তি জব্দ করিলেন। সিল্লা এই সম্বাদ শ্রবণে পঁয়ত্রিশ হাজার সৈন্য লইয়া রোম নগরের প্রতি ধাবমান হইলেন। রোম নগরের প্রতিকুলে যে রোমীয় সৈন্যেরা প্রথমবার যুদ্ধযাত্রা করেন সে এই। সিল্লা অনায়াসে নগর আয়ত্ত করিলেন এবং লোকেরদের পরাক্রম খর্ব্বকরণার্থ কতিপয় ব্যবস্থা স্থাপন করিলেন এবং মারিয়সের পক্ষীয়েরদিগকে হত করিয়া মারিয়সকে নগর বহিষ্কৃত করাইয়া এই হুকুম করিলেন যে ব্যক্তি ইহার মস্তকচ্ছেদন করিয়া আনিতে পারিবে সে পুরস্কার পাইবে। এতদ্রূপে নগরের মধ্যে স্বীয় দলস্থ লোকেরদের প্রভুত্ব সংস্থাপন করিয়া তিনি সিন্না ও অকটাবিয়সকে কনসলী পদে নিযুক্ত করিলেন এবং মিথ্রিডটিসের সঙ্গে যুদ্ধ করণার্থ পূর্ব্ব দেশে যাত্রা করিলেন। রােম নগরীয় লোকেরদের স্বেচ্ছামতে কর্ম্ম কারকেরদের নিযুক্ত করণের যে ক্ষমতা ছিল তাহা ইহার পরঅবধি রহিত হইল।
মারিয়স রোমহইতে পলায়ন করিয়া ইটালির দক্ষিণে আশ্রয় লইলেন। শত্রুরা তাঁহার পশ্চাৎ ধাবমান হওয়াতে তিনি পঙ্কিল ভূমিতে লুক্কায়িত হইলেন কিন্তু শীঘ্ন ধরা পড়িলে কর্দমাক্ত শরীরে তাঁহাকে বাহির করিয়া কারাগারে বন্ধ করা গেল কারাগারহইতেও পলায়ন করিয়া আফ্রিকা দেশে আশ্রয় লইলেন। তথাকার অধ্যক্ষ সিল্লার সপক্ষ হওয়াতে মারিয়সকে সে দেশহইতে গমন করিতে আজ্ঞা প্রেরণ করিলেন। মারিয়স তাঁহার দূতকে কহিলেন যে তুমি গিয়া এইমাত্র উত্তর দেও যে স্বদেশহইতে বহিষ্কৃত মারিয়সকে কার্থাজের ভগ্ন অট্টালিকাতে বসিতে দেখিলাম এ কথার অভিপ্রায় এই যে পূর্ব্বকালীন রোমের প্রতিযোগি কার্থাজের বর্ত্তমান দুরবস্থা এবং অত্যন্ত উচ্চপদহইতে অতি দুঃখার্ণবে পতিত আমার দুরবস্থা দেখিয়া ঐ দেশাধ্যক্ষ বিবেচনা করুন যে পৃথিবীর মধ্যে কিছুই স্থিরতর নহে। অপর সেই স্থান হইতে তিনি জাহাজ আরােহণে তাবৎ শীতকাল ব্যাপিয়া ইতস্ততঃ সমুদ্রোপরি পর্য্যটন করিলেন। ইতিমধ্যে অতি বিজ্ঞ অথচ দুরাচার সিন্না রোম নগরে কনসলী পদে নিযুক্ত হইয়া মারিয়সের দলের সঙ্গে অতি আত্মীয়তারূপে মিলিলেন কিন্তু এক তুমুল যুদ্ধের পর শহরহইতে তাঁহার পলায়ন করিতে হইল। তাহাতে তিনি সৈন্য সংগ্রহ করিলেন এবং তাঁহার দলস্থ অন্যান্য ব্যক্তি এবং মারিয়স স্বয়ং আসিয়া তাঁহার সঙ্গে যুটিলে সকলেই রোম নগরের প্রতিকূলে যাত্রা করিয়া ঐ নগর বেষ্টন করিলেন। অক্টেবিয়স কনসল এবং যে মিটেলসের নাম যুগর্থার যুদ্ধের বিবরণে উল্লিখিত হইয়াছে ঐ উভয়ে যথাসাধ্য নগর রক্ষার্থ উদ্যোগ করিলেন তথাপি নগরস্থেরা এমত ক্লিষ্ট হইলেন যে বিপক্ষ অর্থাৎ মারিয়সের হস্তে রাজসভ্যেরদের নগর অর্পণ করিতে হইল। তাঁহারা কেবল একই মাত্র নিয়ম বিপক্ষেরদিগকে অঙ্গীকার করাইলেন যে নগরস্থ কোন ব্যক্তিকেই তােমরা হত করিবা না। মারি এই অঙ্গীকার তৎক্ষণাৎ স্বীকার করিয়া পর ক্ষণেই নির্লজ্জতারূপে তাহা উল্লঙ্ঘন করিলেন। কিন্তু যেপর্য্যন্ত আমার দেশ বহিষ্কৃত করণের পূর্ব্ব আজ্ঞা নগরস্থের অন্যথা না করিবেন, সেইপর্য্যন্ত, নগরে, কদাচ প্রবেশ করিব না মারিয়স ইহা কহিয়া নগরের বাহিরে রাগে দণ্ডায়মান থাকিলেন। তাহাতে কর্ম্মকারকেরা তদ্বিষয়ে নগরস্থেরদের সম্মতি অসম্মতি নির্ণয় করিতে লাগিলেন কিন্তু মারিয়া রাগসম্বরণ করিতে না পারিয়া চারি হাজার গােলাম সঙ্গে লইয়া নগরের মধ্যে ধাবমান হইয়া আপনার শত্রুরদিগকে সংহার করিতে লাগিলেন। তৎপরে তিনি আপন রাগকে সম্পূর্ণরূপে তোষণার্থ অতি ধীরে২ শত্রুরদিগকে প্রতিফল দিতে বসিলেন এবং যে সকল লােকের প্রতি শত্রুতাচরণের সন্দেহমাত্র জন্মিল তাহারদিগকে হত করিলেন তন্মধ্যে নগরের অতিমান্য বিশিষ্ট অনেক লোক মারা পড়িলেন। এতদ্রূপ নির্দ্দয়াচরণ করত খীষ্টীয়ান শকের পূর্ব্বে ৮৭ সালে একাত্তর বৎসর বয়ঃক্রমে জ্বর রোগােপলক্ষে মারিয়সের পরলোক হইল।
এইক্ষণে সিল্লার কার্য্যের প্রতি দৃষ্টি করা যাউক। পূর্ব্বে কথিত হইয়াছে যে মিথ্রিডাটিস রােড্স নগরভিন্ন ক্ষুদ্র আসিয়তে রোমানেরা যত দেশ অধিকার করিয়া ছিলেন সে সকলই তিনি এক বৎসরের যুদ্ধেতেই আয়ত্ত করিয়া রোড্স নগর বেষ্টন করিলেন। তাহার কিঞ্চিৎ পরে ক্ষুদ্র আসিয়াতে যত রোমান ছিলেন সকলকেই সংহার করিতে হুকুম দিলেন এবং এক দিবসের মধ্যেই আশী হাজার লোক হত হয় এবং তাহারদের তাবৎ সম্পত্তি জব্দ হয় এবং যত দলীল ও হিসাবের কাগজমাত্র তাহারদের স্থানে পাওয়া গেল সমুদায় দগ্ধ করা গেল। এই সর্ব্বনাশক আজ্ঞা জারী হওয়াতে স্পষ্ট বোধ হইতেছে যে রোমানরদের অন্যায়াচরণেতে আসিয়া দেশস্থ প্রজারদের অত্যন্ত ঘৃণা জন্মিয়াছিল। তাবৎ দলীল দস্তাবেজ দগ্ধ হওয়াতে রোম নগরে অতিশয় গোলমাল হইল। কিন্তু ঐ বিশ্বাসঘাতকতার প্রতিফল দেওনার্থ সিল্লা তৎসময়েই যাত্রা করিতে ছিলেন। মিথ্রিডাটিস ক্ষুদ্র আসিয়া আ য়ত্ত করিলে স্বীয় অতিবিজ্ঞ সেনাপতি আর্কিলসকে সসৈন্য গ্রীক দেশে প্রেরণ করিলেন। ইহার পূর্ব্বে রোমানেরা আথেনসীয়েরদিগকে জরীমানা করিয়াছিলেন অতএব তাঁহারা স্বচ্ছন্দেই মিথ্রিডাটিসের সপক্ষ হইলেন এবং তদ্দেশীয় অন্যান্য জাতীয়েরাও তাঁহার সঙ্গে মিলিল। পরে খ্রীষ্টীয়ান শকের ৮৭ বৎসর পূর্ব্বে সিল্লা গ্রীক দেশে উত্তীর্ণ হইয়া যুদ্ধ আরম্ভ করত আথেন্স নগর বেষ্টন করিলেন কিন্তু দুই বৎসরপর্য্যন্ত নগর অধিকারার্থ যত উদ্যোগ করিলেন সে সকলই বিফল হইল পরিশেষে সিল্লা তাহা অধিকার করিয়া ইতর বিশেষ না করিয়া তাবৎ নগরস্থেরদিগকে সংহার করিতে আজ্ঞা দিলেন। এতদ্রূপ সংহার গ্রীক দেশের মধ্যে ইহার পূর্ব্বে কখনই দৃষ্ট হয় নাই। রাস্তাতে রক্তের স্রোত বহিয়া নগরের বহির্দ্বার দিয়া চলিয়া গেল। অপর তাঁহার সৈন্যেরদের প্রথম রাগ যখন কিঞ্চিৎ তৃপ্ত হইল তখন সিল্লা আপন মিত্রেরদের অত্যন্ত বিনয় প্রযুক্ত যাহারা অবশিষ্ট ছিল তা হারদের প্রাণ রক্ষা করিলেন। এইরূপে আথেন্স নগর অধিকৃত হইলে মিথ্রিডাটিসের সেনাপতি আর্কিলস বেওসিয়া দেশান্তঃপাতি করণিয়া স্থানে গমন করিলেন ঐ স্থানে সিল্লার সঙ্গে তাঁহার যুদ্ধ হইল এবং রোমান সৈন্যেরা ন্যূন সংখ্যক হইলেও বিপক্ষেরা পরাজিত হইল এবং তৎপক্ষের দশ সহস্র লােকমাত্র রণস্থলহইতে পলায়ন করিয়া রক্ষা পাইল। কিঞ্চিৎ অনন্তর পণ্টসের রাজার দরিলসনামক অন্য এক জন সেনাপতি নূতন সৈন্য লইয়া উত্তরদিগ দিয়া গ্রীক দেশে প্রবেশ করিলেন। তিনিও অর্খমিনস স্থানে সম্পূর্ণরূপ পরাভূত হইলেন। মিথ্রিডাটিস স্বীয় সৈন্যের এই দুইবার পরাজয়ের সম্বাদ পাইয়া আর্কিলসকে কহিয়া পাঠাইলেন যে কোন প্রকারে হউক সিল্লার সঙ্গে সন্ধি কর। সিল্লাও সন্ধিকরণে অনিচ্ছুক ছিলেন না যেহেতুক মারিয়সের দলস্থ এক জন সেনাপতি তাঁহাকে অপদস্থ করণার্থ রোম নগরহইতে সসৈন্য প্রেরিত হইয়াছিলেন। মিথ্রিডাটিসও শান্তিকরণ বিষয়ে এত নিমিত্ত ব্যগ্র ছিলেন যে উক্ত সেনাপতি ফিম্ব্রিয়া আসিয়াতে পঁহুছিবামাত্র রাজার এক পুত্ত্রকে পরাভূত করিয়া রাজাকেও পিটানিস্ স্থানে অবরুদ্ধ করিলেন। ফিম্ব্রিয়া এতদ্রূপে কৃতকার্য্য হইয়া ত্রয় নগরের চতুর্দ্দিগ লুঠপাট করেন তাহাতে সিল্লা অতিশীঘ্র আসিয়াতে আগমন করিলেন। অপর হেলেসপণ্ট উত্তীর্ণ হইবামাত্র মিথ্রিডাটিস সিল্লার সঙ্গে সাক্ষাৎ করিয়া সিল্লার নির্দ্দিষ্ট নিয়মানুসারেই সন্ধি করিলেন। সেই নিয়ম এই যে মিথ্রিডাটিস ক্ষুদ্র আসিয়া ও পাতাগোনিয়া প্রদেশ রোমানেরদিগকে বেন এবং বিথিনিয়া ও কাপাডোকিয়া রাজ্য তত্তদেশীয় রাজাকে ফিরিয়া দিবেন এবং ৪০ লক্ষ টাকা ও ৭০ খান যুদ্ধ জাহাজ দিবেন। সন্ধির নিয়ম এইরূপ স্থির হইলে সিল্লা ফিম্ব্রিয়ার প্রতিকূলে যাত্রা করিলেন তিনি স্বীয় ভূরি২ সৈন্যেরদিগকে পলায়ন করিতে দেখিয়া তলবারের আঘাতে আপনিই আত্মঘাতী হইলেন। পরে আ সিয়াতে সিল্লার আর কোন শত্রু না থাকাতে তাবৎ দেশ লুঠপাট করিতে আপনার সিপাহীরদিগকে অনুমতি দিলেন এবং তাহারা অপূর্ব্বরূপে ধনী হইল। পরে ঐ তাবৎ প্রদেশে যাহারা রোমানেরদের পক্ষে অতি দৃঢ়রূপে প্রভুক্ততা প্রতিপালন করিয়াছিলেন তদ্ব্যতিরেকে অন্যেরদিগকে যৎপরোনাস্তি গুনাহগারী করিয়া চারি কোটি টাকা সঞ্চয় করিলেন। ঐ টাকা লইয়া তিনি খ্রীষ্টীয়ান শকের পূর্ব্বে ৮৪ সালে আপনার শত্রুরদিগকে প্রতিফল দেওনার্থ ইটালি দেশে আগমন নিমিত্ত প্রস্তুত হইলেন।
এতৎসময়ে রোম নগর ফলতঃ তাবৎ ইটালি দেশ মারিয়সের সপক্ষ লোকেরদের অধীনে ছিল। কন্সলেরা যখন শুনিলেন যে সিল্লা জয়ি সৈন্য ও যুদ্ধ জাহাজের মহাবহর ও অসংখ্যক ধন লইয়া আসিতেছেন তখন তাঁহারা আগমিষ্যৎ যুদ্ধার্থ, সৈন্যসংগ্রহ যুদ্ধ জাহাজ প্রস্তুত করিতে লাগিলেন। ইটালি দেশের নানা ভাগে এই সময়ে তাঁহারা যত সৈন্য সংগ্রহ করিলেন তাহার সংখ্যা ন্যূনাধিক দুই লক্ষ। পরে দুই বৎসরব্যাপক এই আন্তরিক মহাযুদ্ধের সময়ে নানা সংগ্রাম হয় এবং সকলেতেই সিল্লা জয়ী হইলেন। ইটালি দেশ রক্তেতে ভাসিয়া গেল ঐ রক্তপাত কোন বিদেশীয় শত্রকর্ত্তৃক হইল না কিন্তু ইটালিদেশীয় লোককর্ত্তৃকই হয়। পরিশেষে সিল্লা রোমনগর অধিকার করিয়া আপনার শত্রুরদিগকে প্রতিফল দিতে প্রস্তুত হইলেন এবং ঐ নগর তাবৎ পৃথিবীর প্রভু হইয়াও আপন নগরস্থ এক ব্যক্তিকর্ত্তৃক বিনষ্ট হইল। সিল্লা রাজসভা সমাগত করাইয়া সভ্যেরদের নিকটে কথােপকথন করিতে২ আট হাজার কয়েদি লােককে খুন করিতে হুকুম দিলেন। তাহারদের চীৎকার শব্দেতে রাজসভাস্থেরা অত্যন্ত ভীত হইলে সিল্লা অম্লানবদনে কহিলেন যে আমি যাহা কহি তাহাতেই অবধান কর যাহা তোমরা শুনিতেছ সে কেবল যে কএক জন অবাধ্য ব্যক্তির দের দণ্ড করিতে হুকুম দিয়াছি তাহারদের রবমাত্র। অনন্তর তিনি অশেষ হত্যা করিলেন এবং যাহারদের প্রতি এমত সন্দেহ হইল যে ইহারা কখন মারিয়সের সপক্ষ ছিল তাহারদের প্রাণিমাত্র রক্ষা পাইল না। সিল্লীর মিত্রেরাও তাঁহার জ্ঞাতসারেই স্বীয়২ বিপক্ষেরদিগকে হত করিলেন। যাহার ধন ছিল তিনিই অপরাধী হইলেন এবং যাহাকে হত করাতে সিল্লার অনুচর কোন ব্যক্তির লাভ বােধ হইল তিনিও রক্ষা পাইলেন না। অপর তাঁহার মিত্র মিটেলস রাজসভার মধ্যে তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন যে এই সকল উৎপাতের শেষ কখন হইবে তখন সিল্লা উত্তর করিলেন যে কত লােককে জীবনে থাকিতে দিব ইহা কিছু এইক্ষণে নিশ্চয় করি নাই। এই কথােপকথনের পরদিবসেই যে সকল লোকের প্রাণ নষ্ট করিতে নিশ্চয় করিয়াছিলেন তাহারদের নামের এক ফর্দ্দ তিনি সর্ব্বসাধারণের দৃষ্টিগোচর স্থানে লট্কাইয়া দিলেন এবং তাহারদের মস্তকচ্ছেদন করিয়া আনয়নকারিদিগকে অধিক পুরস্কার দিতে স্বীকার করিলেন। গোলামেরদের প্রতি তাহারদের মুনীবেরদিগকে এতদ্রূপ খুন করিতে হুকুম হইল এবং পুত্ত্রের প্রতি পিতাকেও হত করিতে প্রবোধ দেওয়া গেল। হত ব্যক্তিদের সম্পত্তি জব্দ হইয়া ঐ নিষ্ঠুর যমাবতার সিল্লার অনুচরেরদিগকে দেওয়া গেল। প্রতিদিসই ঐ প্রাণ দণ্ডের ফর্দ্দেতে নূতন২ বধ্যেরদের নাম লিখিত হইতে লাগিল পরিশেষে ঐ ফর্দ্দে চারি হাজার সাত শতপর্য্যন্ত ব্যক্তির নাম উঠিল। কিন্তু ফর্দ্দের সংখ্যাপেক্ষাও অধিক ব্যক্তি হত হইল এবং এক জন রোমীয় ইতিহাসবেত্তা লেখেন যে মিথ্রিডাটিসের পূর্ব্বোক্ত সাংঘাতিক আজ্ঞাক্রমে রোমানেরদের যত লোক হত হয় তদপেক্ষা অধিক লোক সিল্লার অজ্ঞাতে মারা পড়ে। এই কথা প্রত্যয় যোগ্য বটে যেহেতুক সিল্লার অনুচরেরা তাবৎ ইটালি দেশের ইতস্ততঃ ব্যাধের ন্যায় বেড়াইয়া যাহারা মারিয়সের পক্ষ সাহায্য করণবিষয়ে সোবে হইল তাহারদিগকে হত করিলেন। কিন্তু মা রিয়সের সপক্ষ বলিয়া যত লোক হত হয় ধনী বলিয়াও তদপেক্ষায় অধিক ব্যক্তি মারা পড়িল। এবং যেপর্য্যন্ত সিলার অনুগত ব্যক্তিরা বিলক্ষণ ধনী না হইল সেইপর্য্যন্ত হত্যাকরণে নিবৃত্ত হইল না। ইটালি দেশের পাঁচ নগর সমভূমি করা গেল এবং নগরস্থেরা হত হইল ও তাহারদের তাবৎ সম্পত্তি বিক্রয় করা গেল।
এই সকল হত্যাকরণের পর সিল্লা আপনাকে চিরকালের নিমিত্ত ডিক্টেটরী পদে নিযুক্ত করাইলেন এবং যাহাতে স্বদেশস্থ লোকেরদের ধন প্রাণ তাঁহার আয়ত্ত থাকে এমত এক ব্যবস্থা করিতে আজ্ঞা দিলেন। এতদ্রূপে রোমানেরদের স্বাধীনতা বিলুপ্ত হইল যেহেতুক যদ্যপি সিল্লার মরণোত্তর প্রধান কর্ম্মকারিলোককে মনোনীত করণ বিষয়ে লোকের দৃষ্টতঃ স্বাধীন ছিলেন তথাপি নগরীয় সভা নিয়ত এক বা দুই পরাক্রান্ত লোকের বাধ্য হইয়া থাকিল। সিল্লা দুই বৎসরপর্য্যন্ত ডিক্টেটরী পদের ক্ষমতা ভোগ করিলেন এবং তৎসময়ে রাজ্যের মূল ব্যবস্থার সম্পূর্ণ মতেই রূপান্তর করিলেন। তিনি যে সকল ব্যবস্থা করেন তাহার অভিপ্রায় যে লোকেরদের ক্ষমতা হৃাস ও রাজসভ্যেরদের ক্ষমতা বৃদ্ধি হয়। ঐ রাজসভ্যের দের সঙ্খ্যা তাঁহার ও মারিয়সের আজ্ঞাকৃত বধেতে অতি অল্প হইয়াছিল অতএব তিনি নাইট অর্থাৎ অশ্বারূঢ়েরদের শ্রেণীহইতে ব্যক্তি লইয়া রাজসভ্যেরদের সঙ্খ্যা পূর্ণ করিলেন। ব্যবস্থা প্রস্তাবকরণের যে ক্ষমতা লোকেরদের ত্রৈব্যুনের ছিল তাহা উঠাইয়া তাঁহারদের গৌরব একেবারে শূন্য করণার্থ এই আজ্ঞা দিলেন যে লোকেরদের ত্রৈব্যুনী পদে যে ব্যক্তি নিযুক্ত হন তিনি আর কোন উচ্চ পদ প্রাপ্ত হইতে পারিবেন না। নাইট অর্থাৎ অশ্বারূঢ়ের শ্রেণীর মোকদ্দমা বিচারকরণের যে পরাক্রম ছিল তাহা তাঁহারদের স্থানহইতে লইয়া রাজ্যসভ্যেরদিগকে পুনর্ব্বার অর্পণ করিলেন। ইত্যাদি নানা নিয়মের দ্বারা তিনি রাজসভ্যেরদিগকে পূর্ব্ববৎ ক্ষমতপন্ন করিলেন কিন্তু ঐ রাজসভ্যেরদিগকে পূর্ব্ববৎ প্রতাপান্বিত করিতে তাঁহার শক্তি হইল না। তৎসমকালীন সরকারী ও ভিন্ন লোকেরদের ভূমি হরণ করিয়া স্বীয় অনুগত লক্ষ সিপাহীরদিগকে বিতরণ করিলেন এবং ঐ সকল ব্যক্তি যাহা পাইল সে কেবল সিল্লার অনুগ্রহেই এই প্রযুক্ত ইহারা অন্যাপেক্ষা সিল্লার পৌষ্টিকতাকারী হইল।
এতদ্রূপে সিল্লা যৎপরােনাস্তি বাঞ্ছা পরিপূর্ণ করিয়া যে সময়ে রোমীয় সাম্রাজ্যের মধ্যে অনিবার্য্য পরাক্রম ভোগ করিতে ছিলেন এমত সময়ে তিনি অকস্মাৎ এতাদৃশ পরাক্রম ও পদ সকল ত্যাগ করিয়া নির্লিপ্ত হইয়া ক্যুমে গিয়া বাস করিলেন। কিন্তু আশ্চর্য্য বিষয় এই যে তিনি যে সহস্র২ লোকেরদিগকে খুন করিয়াছিলেন তাঁহারদের কোন এক জন আত্মীয় তাঁহার প্রাণ নষ্ট করিতে উদ্যত হইল না অথচ উদ্যোগ করিলে হইতে পারিত যেহেতুক সিল্লা তখন উপায়হীন। ক্যুমে আশ্রয় লইলে তিনি স্বীয় আয়ুর বিবরণ প্রস্তুত করিলেন লাম্পট্যে আসক্ত হইলেন এবং অতি ঘৃণার্হ পীড়াগ্রস্ত হইয়া প্রাণ বিয়োগ না হইতেই তাঁহাকে ক্রমিতে দংশন করিতে লাগিল। কবরের প্রস্তুরোপরি যাহা লিখিতে হয় তাহা অপিনিই মুমূর্ষুসময়ে এইরূপে বর্ণনা করিলেন যে আমি যেমন আপন মিত্রের প্রতি অনুগ্রহ ও অমিত্রকে দণ্ড করিয়াছি এমন আর কখন কেহ করিতে পারে নাই। ফলতঃ তাঁহার আচার ব্যবহার বিষয়ক ইহা প্রকৃত বর্ণনই বটে। মারিয়স ও সিল্লার এই যুদ্ধেতে দুই শত জন রাজসভ্যেরা তন্মধ্যে তেত্রিশ জন কনসলী পদস্থ হত হন এবং দেড় লক্ষ ইতর লোক মারা পড়ে। খ্রীষ্টীয়ান শকের ৭৭ বৎসর পূর্ব্বে সিল্লা এতদ্রূপে লোকান্তরগত হন।
অপর এতৎসময়ে বোধ হইল যে রোমানেরা একাধিপত্যের শাসন সহিতে পারেন। তাহাতে লেপিডস কনসল সিল্লার মৃত্যু সম্বাদ শুনিয়া একাধিপত্য প্রাপণের উৎসাহী হইলেন কিন্তু তাঁহার ঐ উদ্যোগ বিফল হইল যেহেতুক অপর কনসল দুইবার তাঁহাকে পরাজিত করিলে শার্ডিনিয়া উপদ্বীপে তাঁহার পলায়ন করিতে হইল শেষে ঐ স্থানেই তাঁহার পঞ্চত্ব হয়। এই সকল আন্তরিক বিবাদের দ্বারা অনেক২ উৎসাহি রোমান সেনাপতির বিশেষতঃ পম্পি ও কাইসরের গুণ ব্যক্ত হইল কিন্তু রোমীয় রাজনীতির যে সাম্যাবস্থা ছিল তাহা বিলুপ্ত হইল এবং রোমীয়চক্র রাজ্যের মধ্যে একাধিপত্যব্যতিরেকে আর বহুকাল চলে না এমত উপলব্ধি হইল। তথাপি সিল্লার পদ ত্যাগ করণঅবধি আগষ্টস কাইসরের মহারাজত্ব পদপ্রাপ্তি পর্য্যন্ত সাতচল্লিশ বৎসর গত হইল। তাঁহার রাজত্ব পদ প্রাপণে রোমানেরদের স্বাধীনতার শেষ স্ফুলিঙ্গ নির্ব্বাণ হইল।
সিল্লার মরণোত্তর যে প্রথম গুরুতর যুদ্ধে রোমানের প্রবিষ্ট হন তাহা স্পাইন দেশে সরটোরিয়সের সঙ্গে হয় তিনি মারিয়সের পক্ষীয় লোকেরদের মধ্যে সর্ব্বাপেক্ষা গুণোপেত সেনাপতি। সিল্লার সঙ্গে যুদ্ধকরণে তাঁহার সহযোগি ব্যক্তিদের অপটুতা দৃষ্টে ঘৃণা জন্মিল তাহাতে তিনি খ্রীষ্টীয়ান শকের পূর্ব্বে ৮২ সালে স্পাইন দেশে গমন করিয়া তথায় দশ বৎসরপর্য্যন্ত স্বাধীনত্বরূপে বাস করিলেন। সরটোরিয়স যেমন প্রেমের যোগ্য ও বিজ্ঞ তাদৃশ ব্যক্তি তাবৎ রোম রাজ্যের ইতিহাসের মধ্যে দুষ্প্রাপ্য। তিনি পিরেনিস পর্ব্বত উত্তীর্ণ হইয়া স্পাইন দেশে প্রবেশ করত সৈন্য সংগ্রহ করিতে লাগিলেন। ইতিমধ্যে যে লুসিটানিয়ানিবাসী অর্থাৎ পের্ত্তুগীসেরা রোমানেরদের সঙ্গে যুদ্ধ করিতেছিল তাহারা আপনারদের সেনাপতি হওনার্থ তাঁহাকে আহ্বান করিলেন এবং তিনি তাহা আহ্লাদপূর্ব্বক স্বীকার করিলেন। অতিশীঘ্র তিনি লুসিটানিয়ানিবাসী ফলতঃ তাবৎ স্পাইন দেশীয়েরদের এমত বিশ্বাস পাত্র হইলেন যে তাঁহারা এতাদৃশ বােধ করিলেন যে পুনর্ব্বার হানিবালের আগমন হইল। যুদ্ধবিষয়ে তিনি সম্পূর্ণ নৈপুণ্য দর্শাইয়া মুষ্টিমিত আট হাজার মাত্র সৈন্য লইয়া চারি জন রােমান সেনাপতিরদিগকে থামাইয়া রাখিলেন অথচ তাঁহারদের সর্ব্বসুদ্ধ এক লক্ষ বিংশতি হাজার সৈন্যের কম ছিল না। যে রাজসভ্যেরা ও প্রধান লোকেরা তাঁহার সঙ্গে ছিলেন তাঁহারদিগকে লইয়া তিনি এক সভা করিয়া কহিলেন যে প্রকৃত রোমীয় রাজসভাই এই। রোম নগরে যাহারা আপনারদিগকে রাজসভ্য বলিয়া কহে তাহারা কেবল সিল্লার অনুগত লোকেরদের গেলাম। তিনি উচ্চবিত্ত স্পাইনীয়েরদের বিদ্যাধ্যয়নার্থ স্থানে২ পাঠশালা স্থাপন বিষয়ে উদ্যোগী হইলেন। এবং দেশীয় লোকের যাহাতে মঙ্গল হইতে পারে এমত কোন উদ্যোগের ত্রুটি করিলেন না। কিন্তু তৎসময়ে রােম নগর তাঁহার বিপক্ষেরদের অধীনে থাকাতে তিনি রোম নগরের প্রভুত্ব কদাচ স্বীকার করিলেন না এই প্রযুক্ত তাঁহাকে দমন করণের এক প্রকার আবশ্যক হইল। অপর রোমীয় যত সেনাপতি তাঁহার প্রতিকূলে প্রেরিত হন তাঁহারা অপমানপূর্ব্বক তাড়িত হইলে রোমীয়েরদের প্রিয় পাত্র এবং যথার্থরূপে অতিবিখ্যাত সেনাপতি পম্পি তাঁহার দমনার্থ প্রেরিত হন। কিন্তু তাঁহার উদ্যোগও সরটোরিয়স বিফল করিয়া বারম্বার তাঁহার সৈন্যেরদিগকে পরাভূত করিলেন। এইরূপে গৌরবপূর্ব্বক দশ বৎসর বাপিয়া যুদ্ধকরণানন্তর তাঁহার অধীন সেনাপতি পরপেনা তাঁহাকে খুন করেন। পরপেনার এই বিশ্বাসঘাতকতা ব্যপারের দুই কারণ ছিল প্রথমতঃ তাঁহার ঈর্ষা। দ্বিতীয়তঃ পম্পির সহযোগি লুকলস সরটোরিয়সের বধ করণার্থ যে পুরস্কার প্রদানের অঙ্গীকার করিয়াছিলেন তৎ প্রাপণের আশা।
যে বৎসরে সরটোরিয়স এইরূপে হত হন সেই বৎসরে ইটালি দেশে মল্লযোদ্ধারদের সঙ্গে যুদ্ধ আরম্ভ হইল। ঐ মল্লযোদ্ধারা যুদ্ধে ধৃত হইয়া পরে রোমানেরা তাহারদিগকে গোলাম করিয়া আমোদের নিমিত্ত উৎসব কালে হত হওনপর্য্যন্ত পরস্পর কুস্তাকুস্তি করিতে শিক্ষা দিতেন। যুদ্ধের দুর্দশাতে তাহারদের দাসত্বে পতিত হওনের পূর্ব্বে তাহারা রোমানেরদের তুল্য স্বাধীন ও সাধু ছিল। অপর কাপুয়ানিবাসি ঈদৃশ এক দল লোক আপনারদের এই কুৎসিত অবস্থাতে ঘৃণা বোধ করিয়া স্বাধীনতার নিমিত্ত উদ্যোগ করিতে নিশ্চয় করিয়া তাহারদের মধ্যে স্পার্টাকসনামক এক ব্যক্তিকে সেনাপতি করিয়া যাহারদের জিম্মায় ছিল তাহারদিগকে হত করিল। ঐ সেনাপতি সরটোরিয়সের তুল্য পরিদর্শী ও পরিমিতাচারী এবং যুদ্ধে অতিনিপুণ ফলতঃ তাঁহার বেশ কেবল গোলাম অন্তঃকরণ বীরপুরুষ। পরে ঐ মল্লযোদ্ধারদের সংখ্যা দিন২ বৃদ্ধি হইতে লাগিল এবং তিন বৎসরপর্য্যন্ত তাহারা রোমানেরদের তাবৎ উদ্যোগ বিফল করিতে ক্ষম হইল। স্পার্টাকস একাদিক্রমে চারি দল সৈন্যেরদিগকে পরাভূত করিয়া শেষে দেখিলেন যে তাঁহার অধীনে চল্লিশ হাজার সৈন্য আছে। কিন্তু তাঁহার এই বিলক্ষণ বোধ ছিল যে পরিশেষে রোমীয়েরদের অদ্ভুত পরাক্রমেতে এই মল্লযোদ্ধারা নিতান্তই মারা পড়িবে অতএব তিনি আপনার অনুগত লোকেরদিগকে এই পরামর্শ দিলেন যে আল্প পর্ব্বতের পথ এইক্ষণে মুক্ত আছে অতএব ইটালিদেশ দিয়া যাত্রা করত আল্প পর্ব্বত উত্তরিয়া আপনারদের জন্ম ভূমিতে পঁহুছিয়া স্বাধীনরূপে নিষ্কণ্টকে কালযাপন করি। কিন্তু ইটালি দেশ বিশেষতঃ রোম নগর লুঠকরণের ভরসা তাহারদের সম্মুখে দেদীপ্যমান হওয়াতে এই সুপরামর্শ তাহারা হেয়জ্ঞান করিল। পরে ক্রাশসনামক রোমান সেনাপতি পরাক্রান্ত এক দল সৈন্য লইয়া তাহারদের প্রতিকূলে প্রেরিত হওয়াতে মল্লযোদ্ধারা পরাজিত হইয়া তাহারদের চল্লিশ হাজার সৈন্য রণ ভূমিতে মারা পড়ে এবং তাহাতে এই রাজবিদ্রোহ ব্যাপার একেবারে নিবৃত্ত হয়। স্পার্টাকস আশ্চর্য্য সাহস প্রকাশ করিয়া পরিশেষে নানা আঘাতে আচ্ছন্ন হইয়া মারা পড়িলেন। এই ব্যাপার খুীষ্টীয়ান শকের পূর্ব্ব ৭০ সালে ঘটে।
যে ব্যবস্থায় সিল্লা মোকদ্দমা নিষ্পত্তির ক্ষমতা রাজসভ্যেরদিগকে পুনঃ অর্পণ করিয়াছিলেন এইক্ষণে কএক বৎসরাবধি ঐ ব্যবস্থার পরীক্ষা হইয়া দৃষ্ট হইল যে তাহাতে কেবল অমঙ্গলের বৃদ্ধিমাত্র হইয়াছে। এতৎসময়ে রাজ্যের শাসন কেবল ঘুসের দ্বারাই চলিত। প্রধান২ লোকেরা সুবাদারী কার্য্যে নিযুক্ত হইলে কেবল প্রজারদের স্থানে টাকা হরণ করিতে এবং রোম নগরে নূতন পদ ক্রয় করণার্থ ধনসঞ্চয় করিতেই রত। তাঁহারদের অত্যাচারেতে ব্যাহত অভাগা লোকেরা রোম নগরে অপীল করিলেও কিছুমাত্র উপশম হইত না যেহেতুক যাঁহারা দৌরাত্ম্যকারী তাঁহারদের নিকটেই মোকদ্দমার শুননির ভার অর্পিত হইত। ফলতঃ তাবৎ নীতিবিষয় এমত কদাকার হইয়াছিল যে পরাক্রান্ত বা ধনি ব্যক্তির নামে নালিশ করিতে কাহারো সাহস হইত না। অতএব যদ্যপি মোকদ্দমা নিষ্পত্তি করণের ভার অশ্বারূঢ় সম্প্রদায়ের দিগকে অর্পণ করাতে অত্যন্ত অহিত হইল যেহেতুক তাঁহারাই রাজস্বের কালেক্টর তথাপি উৎকোচগ্রাহি রাজসভ্যেরদের হস্তে ঐ ক্ষমতা অর্পিত হওয়াও তদপেক্ষা অধিক অনিষ্ট হইতে লাগিল যেহেতুক তাঁহারা দেশের মধ্যে প্রধান অপরাধী এবং এক২ রাজ্যের লুঠিত ধনে ভারাক্রান্ত হইয়া রোমে প্রত্যাগত হইতেন। অতএব পম্পি এই সদ্বিবেচ্য আইন স্থির করিলেন যে মোকদ্দমার বিচারকরণের ক্ষমতা রাজসভ্য ও অশ্বারূঢ় ও ত্রৈব্যুন এই তিন জাতীয়েরদের মধ্যে বিভক্ত হইয়া থাকিবে।
এইক্ষণে বোম্বেটিয়ারদের সঙ্গে অতিপ্রসিদ্ধ যুদ্ধবিষয়ক বিবরণ লিখি। তাহারা ভূমধ্যস্থ সমুদ্রের উত্তর তটস্থিত ক্ষুদ্র আসিয়ান্তঃপাতি সমুদ্রসন্নিহিত শিলিসিয়ার প্রদেশীয় লোক। ক্ষুদ্র আসিয়ার বিভ্রাট এবং রোমান সুবাদারেরদের অত্যাচারপ্রযুক্ত তাহারা বোম্বেটিয়াগিরিতে প্রবর্ত্ত হয়। যাহারা তাহারদের হস্তগত হইত তাহারদি গকে ডিলস উপদ্বীপে লইয়া গিয়া ইটালি দেশীয় ধনি লােকেরদের গোমস্তার নিকটে ভূমির চাস দেওনার্থ বিক্রয় করিত। অতএব ঐ উপদ্বীপই গোলামের এক প্রধান আডডা হইল। প্রথমতঃ তাহারা কেবল ক্ষুদ্র আসিয়ার তটের উপরে দৌরাত্ম্য করিল কিন্তু আন্তরিক বিবাদে রোমানেরা ব্যস্ত থাকতে বােম্বেটিয়ারা অধিক সাহসিক হইয়া আরো দূর২ স্থানে অত্যাচার করিতে লাগিল পরিশেষে বৃহৎ যুদ্ধ জাহাজ প্রস্তুত করিতে এবং অরক্ষিত শহরের উপরে পড়িয়া লুঠপাট করিতে তাহারদের সাহস জন্মিল। যত রোমান সেনাপতিরা তাহারদের দমনার্থ প্রেরিত হন সকলই পরাভূত হওয়াতে বোম্বেটিয়ারা শিলিসিয়াতে এক প্রকার গবর্ণমেণ্ট স্থাপন করিল। ঐ প্রদেশীয় তট জলমগ্ন প্রস্তরময় অতএব অতি দুর্গম। পরে তাহারা ঐ তট ব্যাপিয়া আপনারদের লুঠিত ধনসকল ন্যস্ত করণার্থ ভাণ্ডার এবং জাহাজের মেরামৎ করণার্থ জাহাজালয় প্র স্তুত করিল। পরিশেষে তাহারদের পরাক্রম এমত বর্দ্ধিষ্ণু হইল যে উত্তম২ মল্লাতে পূর্ণ সহস্রপর্য্যন্ত জাহাজ করিয়া ছিল এবং জাহাজপতিরা নানাপ্রকার সুখসাধনেতে কাল যাপন করিত। তাহারা চারি শত নগর অধিকার করিয়া ছিল এবং পৃথিবীর মধ্যে সর্ব্বাপেক্ষা সমৃদ্ধ ত্রয়োদশ দেবালয় লুঠ করিয়াছিল। কিন্তু এই বোম্বেটিয়ারা যত উৎপাত করে তন্মধ্যে আহারীয় দ্রব্যের অপ্রতুল করাতে রোম নগর নিবাসিরদের অধিক ক্লেশ জন্মিল। বিদেশহইতে সমুদ্র পথে আনীত আহারীয় দ্রব্যের দ্বারা রোম নগর নিবাসিরদের জীবিকা চলিত। ঐ সকল আহারীয় দ্রব্যের আমদানী বােম্বেটিয়ারা স্থগিত করিল এবং পৃথিবীর প্রভুত্বকারি রোম নগর এক দল বােম্বেটিয়ার দ্বারা আহারাভাবে মুমূর্ষু প্রায় হইলেন। অতএব এই বােম্বেটিয়ারদের চক্র দমনার্থ অতিশীঘ্র দৃঢ়তর উপায় করিতে হইল। এই অবস্থায় খ্রীষ্টীয়ান শকের পূর্ব্বে ৬৬ সালে গাবিনিয়সনামক পম্পির এক জন অনুচর বোম্বেটিয়ারদের উচ্ছিন্ন করণার্থ পম্পির হস্তে মহা পরাক্রম দেওনার্থ লোকেরদের নিকটে প্রস্তাব করিলেন। তাহাতে রাজসভাস্থেরা ও নগরের প্রধান২ লােকেরা স্মরণ করিলেন যে ইহার পূর্ব্বে সিল্লা এতদ্রূপ মহাপরাক্রমবিশিষ্ট হইয়া ইটালি দেশের কিপর্য্যন্ত দুরবস্থা না ঘটাইলেন অতএব তাঁহারা এই প্রস্তাবে অত্যন্ত প্রতিবাদী হইলেন। কিন্তু পম্পি ইতর লোকেরদের অত্যন্ত প্রিয় পাত্র হওয়াতে তাঁহারা রাজসভ্যেরদের প্রতিবাদিতা বিফল করিয়া আজ্ঞা করিলেন যে তিনি সওয়া লক্ষ যোদ্ধা ও পাঁচ শত যুদ্ধ জাহাজবহর এবং সরকারী কোষহইতে ন্যূনাধিক কোটি টাকা লইয়া এই যুদ্ধসাধনার্থ যাত্রা করুন। তাহাতে পম্পি ঐ যুদ্ধে এমত বিজ্ঞতা ও মনোযোগপূর্ব্বক কার্য্য চালাইলেন যে ইটালি দেশের তটহইতে যাত্রা করণের পর চল্লিশ দিবসের মধ্যে তাবৎ রোম সাম্রাজ্যহইতে বোম্বেটিয়ারদিগকে উচ্ছিন্ন করিলেন। এই ব্যাপার অতিশীঘ্র ও প্রতি ভারূপে নির্ব্বাহ করাতে রোম নগরস্থেরা দুর্ভিক্ষের ভয় হইতে মুক্ত হইলেন তাহাতে পম্পি অধিক মান্য হইলেন এবং মিথ্রিডাটিসের সঙ্গে যে যুদ্ধ চলিতে ছিল ঐ যুদ্ধের সম্পাদকতা প্রাপণের তাঁহার যে লালসা ছিল তাহার সাফল্য হওনের সুযোগ হইল। সরটোরিয়স ও স্পার্টাকস ও বোম্বেটিয়ারা পরাভূত হইলে পর মিথ্রিডাটিসব্যতিরেকে রোমানেরদের আর কোন প্রবল শত্রু থাকিল না।
এইক্ষণে খ্রীষ্টীয়ান শকের ৮৫ বৎসর পূর্ব্বে সিল্লা ও মিথ্রিডাটিসের মধ্যে যে সন্ধি হয় তদবধি আসিয়ার বিবরণ বর্ণনা করিয়া আসিতে হইবে। দুর্ভাগ্যক্রমে ঐ সন্ধি কেবল কথাতেই হইয়াছিল এইপ্রযুক্ত যে সেনাপতি অর্থাৎ মিউরিনা সিল্লার পর কর্ম্মের ভার গ্রহণ করিলেন তিনি এই ছল করিয়া বৎসর দুই একের পর মিথ্রিডাটিসের উপরে পুনশ্চ আক্রমণ করিলেন। রাজা তদ্বিষয়ে নালিস করাতে সিল্লার বিশেষ আজ্ঞাক্রমে ঐ মিউরিনার ক্ষান্ত থাকিতে হইল তৎসময়ে সিল্লা রােম নগরের মধ্যে প্রবল। এই ক্ষুদ্রযুদ্ধ সামান্যতঃ দ্বিতীয় মিথ্রিডাটিসের যুদ্ধ বলিয়া বিখ্যাত। পরে খ্রীষ্টীয়ান শকের পূর্ব্বে ৭৫ বৎসরে বিথিনীয়ার রাজা নিকোমিডিস রোমানেরদিগকে স্বীয় তাবৎ রাজ্য প্রদান করিয়া লােকান্তরগত হন। তাঁহার রাজ্যের এক সীমাতে মিথ্রিডাটিসের রাজ্য সংলগ্ন অপর সীমাতে রােমীয় রাজ্য। মিথ্রিডাটিস বহুকালাবধি ঐ রাজ্য প্রাপণে লালসী ছিলেন অতএব তাহা যে রোম রাজ্যের অন্তর্গত হয় ইহা কদাচ স্বীকৃত না হইয়া অনেক যুদ্ধ জাহাজ ও সৈন্য সংগ্রহপূর্ব্বক স্থল ও জলপথে ঐ রাজ্যের উপর আক্রমণ করিলেন। এতদ্রূপে তৃতীয় মিথ্রিডাটীয় যুদ্ধ আরম্ভ হইয়া দশ বৎসরপর্য্যন্ত ব্যাপিয়া থাকে। পরে ঐ বৎসরীয় এক জন কনসল লুকলস পণ্টসের রাজার সঙ্গে যুদ্ধের অধ্যক্ষতার ভার অসৎ উপা য়ের দ্বারা প্রাপ্ত হইলেন। তিনি উত্তম সেনাপতি কিন্তু অত্যন্ত অপরিমিত ব্যয়ী ঐ যুদ্ধে তাঁহার ধনলাভ হওনের সম্ভাবনা ছিল। এবং যদ্যপি তাঁহার সৈন্য মিথ্রিডাটিসের সৈন্যাপেক্ষা লঘুতর তথাপি বহুকালপর্য্যন্ত লুকলস নিয়ত জয়ী হইলেন। বিশেষতঃ মিথ্রিডাটিস আসিয়ান্তঃপাতি অতিপ্রধান সিজিকম স্থান বেষ্টন করিয়াছিলেন। লুকলস ঐ বেষ্টন রহিত করাইলেন তাহাতে রাজার প্রায় তিন লক্ষ লোক নষ্ট হইল। কিঞ্চিৎ পরে তিনি রাজার যুদ্ধ জাহাজ পরাভূত করিয়া তাঁহাকে বিথিনিয়ান দেশহইতে তাড়াইলেন। পরে নিয়ত জয় করত তিনি মিথ্রিডাটিসকে পৈতৃক অধিকারহইতেও তাড়াইলেন এবং যদ্যপি মিথ্রিডাটিস তার্ত্তার দেশহইতে মহাসৈন্য আনাইলেন তথাপি তাঁহার জামাতা অর্মিনিয়ার রাজা টিগ্রানিসের দরবারে আশ্রয় লইতে হইল।
টিগ্রানিসের কিছুমাত্র স্বাভাবিক বোধ শোধ না থাকিলেও তিনি এতৎসময়ে আসিয়ার মধ্যে সর্ব্বাপেক্ষা প্রবল রাজা ছিলেন। অধিকারক্রমে ক্ষুদ্রায়তন অর্মিনিয়ার সিংহাসন প্রাপ্ত হইলে স্বীয় রাজ্য বর্দ্ধিত করণের নানা কল্পনা করিতে লাগিলেন। পরে তিনি মিসােপটেমিয়া জয় করিয়া আরব দেশ আয়ত্ত করিলেন এবং সুরিয়ারদিগকে আপনার আশ্রিতের মধ্যে রাখিলেন। কিন্তু এই সকল দেশ জয়করণ তাঁহার নিজ শক্তিপ্রযুক্ত হয় না কিন্তু পরাভূত দেশীয়েরদের সাহস অভাবেই হয়। যখন ঐ সকল দেশ দুর্ব্বল টিগ্রানিসের বাধ্য হইল তখন পাঠকবর্গ বােধ করিতে পারিবেন যে ঐ সকল দেশীয়েরদের কিপর্য্যন্ত দৌর্ব্বল্য না ছিল। এইরূপে জয়ী হওয়াতে তিনি দর্পে মত্ত হইয়া রাজাধিরাজ নাম ধারণ করিলেন। অতএব যখন রোমান সেনাপতি তাঁহার নিকটে কহিয়া প্রেরণ করিলেন যে মিথ্রিডাটিসকে এইক্ষণেই আমারদের হাতে অবশ্যই তোমার সমর্পণ করিতে হইবে। তখন টিগ্রানিস পঁচিশ বৎসরাবধি কখন এমত রূঢ় কথা কাহারাে স্থানে না শুনিয়া একেবারে স্তব্ধ হইলেন। কিন্তু অনুদ্বেগের ছল করিয়া কহিলেন যে কখন আমি শ্বশুরকে ত্যাগ করিব না এবং তৎক্ষণাৎ যুদ্ধার্থ প্রস্তুত হইতে লাগিলেন। পরে টিগ্রানোসর্টানামক যে নূতন রাজধানী টিগ্রানিস পত্তন করিয়া তাহার বৃদ্ধি ও সুশোভিত করণার্থ কিছু ত্রুটি করিয়াছিলেন না ঐ রাজধানীর নিকটে রোমান ও আর্মিনিয়ার সৈন্যেরা যদ্ধার্থ একত্র হইল। লুকলসের সৈন্যর সংখ্যা ১৩,০০০ মাত্র ছিল বিপক্ষেরদের সৈন্য ২,৬০,০০০। লুকলস এমত অল্প সৈন্য লইয়া ঈদৃশ ভারি সৈন্যারণ্যের সঙ্গে যুদ্ধ করাতে লোককর্ত্তৃক তিনি দোষী হইলেন কিন্তু তিনি বিপক্ষেরদের দৌর্ব্বল্য ও সাহসশূন্যতা অজ্ঞাত ছিলেন না এবং স্বীয় প্রাচীন সৈন্যেরদের শক্তির উপরেই নির্ভর রাখিলেন অতএব ঐ যুদ্ধে রোমানে রা জয়ী হইলেন এবং বিপক্ষেরদের পদাতিকের এক লক্ষ ও তাবৎ অশ্বারূঢ় মারা পড়িল। এই সংগ্রামে রোমানেরা এমত সহজেই আর্মিনিয়েরদিগকে পরাস্ত করিলেন যে এতাদৃশ তুচ্ছ শত্রুর সঙ্গে যুদ্ধ করতে তাঁহারা এক প্রকার লজ্জিত হইলেন। পরে খ্রীষ্টীয়ান শকের পূর্ব্বে ৬৮ সালে আর্টাক্সাটা স্থানে টিগ্রানিসকে লুকলস পুনর্ব্বার পরাজয় করেন তাহাতে ঐ দাম্ভিক রাজা একেবারে নতমস্তক হইলেন।
কিন্তু তাহার কিঞ্চিৎ পরে রোমানেরদের যে প্রকার নিয়ত জয় হইতেছিল তাহার বৈপরীত্য হইতে লাগিল। ইহার পূর্ব্বে লুকলস সর্ব্ববিষয়ই কৃতকার্য্য হইয়াছিলেন কিন্তু তৎপরে যদ্যপি তিনি যুদ্ধে পরাভূত না হইলেন তথাপি অন্যান্য প্রকার অশুভ ঘটিতে লাগিল। তাঁহার সৈন্যেরা বিরক্ত হইয়া বারম্বার আজ্ঞানধীন হইল ও নিয়ত সতর্ক ও দক্ষ মিথ্রিডাটিস এই সুসময় বুঝিয়া লুকলস যত রাজ্য জয় করিয়াছিলেন, সে সকলই তিনি পুনর্ব্বার অধিকার করিলেন অথচ ঐ রোমান সেনাপতি তাহার নিবারণার্থ কিছুমাত্র উদ্যোগ করিতে পারিলেন না। ইতিমধ্যে রোম নগরে লুকলসের বিপক্ষেরা প্রবল হইয়া লোকেরদের সভায় এমত আজ্ঞা করিলেন যে ঐ যুদ্ধের কর্ত্তৃত্বভার পম্পির হাতে সমর্পিত হয় তাহাতে পম্পি খ্রীষ্টীয়ান শকের পূর্ব্বে ৬৭ বৎসরে সেনাপতির কর্ম্ম গ্রহণ করেন। তৎপর বৎসরে রাত্রিযোগে ফ্রাৎ নদীর তীরে তিনি মিথ্রিডাটিসকে পরাভূত করিলেন এবং অটি শত লোকমাত্র লইয়া ঐ রাজার পলায়ন করিতে হইল। এই দুরবস্থার সময়ে তিনি টিগ্রানিসের সাহায্য পুনর্ব্বার প্রার্থনা করিলেন কিন্তু ঐ নির্লজ্জ রাজা রোমানেরদের ভয়ে তাঁহাকে আশ্রয় না দিয়া তাঁহার মস্তক চ্ছেদন যে করিবে তাহাকে পুরস্কার দিবেন এমত ঘোষণা করিলেন। পল্টসের রাজা তৎকালে সত্তর বৎসর বয়ঃক্রম এবং এই অত্যন্ত বিপদসময়ে এতদ্রূপে পরিত্যক্ত হইলেন তথাপি কিছুমাত্র ভগ্নোদ্যম না হইয়া টারস পর্ব্বতঅবধি অল্প পর্ব্বতপর্য্যন্ত যত পর্ব্বতীয় জাতীয়েরা ছিল তাবৎ সংগ্রহ করিয়া হানিবালের ন্যায় ইটালির মাঠে উত্তীর্ণ হইয়া রোম নগর পর্যয়ন্ত গিয়া যুদ্ধ করিতে মানস করিলেন। ইত্যবসরে ফ্রাটিসনামক তাঁহার পুত্ত্র তাঁহাকে পরিত্যাগ করিলেন ইহাতে তাঁহার তাবৎ সঙ্কল্পই বিফল হওয়াতে তিনি একেবারে হতাশ হইলেন ও রোমানেরদের হস্তে পতিত না হইতে হয় এ নিমিত্ত আপনার সঙ্গে যে বিষ নিয়ত রাখিতেন তাহা পান করিয়া খ্রীষ্টীয়ান শকের পূর্ব্বে ৬৩ বৎসরে আত্মঘাতী হইলেন। এতদ্রূপে দেড় শত বৎসরবধি রােমানেরদের সর্ব্বাপেক্ষা প্রবল শত্রু মিথ্রিডাটিসের বিলপনীয় মৃত্যু হয়। তিনি মহানুভবে ও মানুষিক গুণেতে অত্যাশ্চর্য্য ব্যক্তি ইহার সন্দেহ নাই। তাহার এক সপষ্ট প্রমাণ এই যে তাঁহার সম্পৎসময়ে যে বাইশ দেশের লোকেরা তাঁহার অধীন ছিল তাহারদের সকলের ভাষাই কহিতে পারিতেন কিন্তু কেবল নির্দয়তাতেই তাঁহার ঐশ্বর্য্যে কলঙ্ক ধরিল।
পম্পি মিথ্রিডাটিসকে এতদ্রূপে পরাভূত করিলে পূর্ব্ব দেশীয় ব্যাপারের পারিপাট্যকরণে মনোযোগী হইয়া টিগ্রানিসের হস্তে আর্মিনিয়া দেশ অর্পণ করিলেন। আরিয়োবার্জানিসকে কাপাডোকিয়া দেশ এবং ফার্নাসিসকে বস্ফোরস দেশ দিলেন। এবং য়িহুদী দেশ জয় করিয়া হরকানসকে দিলেন এবং সুরিয়া ও ফেনিসিয়া লইয়া রোমসম্রাজ্যের এক সুবা করিলেন এবং পণ্টস ও পাফ্লাগোনিয়া লইয়া অপর এক সুবা করেন এবং শিলিসিয়া ও পাম্ফিলিয়া লইয়া তৃতীয় এক সুবা করেন। রোমরাজ্য এইক্ষণে যে অসীম পরাক্রান্ত হইল তদ্দৃষ্টে কাহার আশ্চর্য্য বোধ না জন্মে। দেখুন ইহার সাত শত বৎসর পূর্ব্বে রম্যুলস কএক জন দস্যু সংগ্রহ করি য়া তীবর নদীর তীরে কএকখান খড়ুয়া ঘর নির্ম্মাণ করত এক গ্রাম পত্তন করিয়া রোম নাম দিলেন। ঐ গ্রাম এতৎ সময়ে মহানগর হইয়া পৃথিবীস্থ তাবৎ লোকের উপর প্রভুত্ব করিলেন এবং তাহার এক জন সেনাপতি এক বৎসরের মধ্যে তাবৎ ইটালি দেশ অপেক্ষা বৃহৎ নানা রাজ্য স্বেচ্ছাক্রমে বিতরণ করিলেন।
অপর পম্পি এতদ্রূপে সংসার পাতিয়া ইটালি দেশে প্রত্যাগমনার্থ প্রস্তুত হইলেন। মিথ্রিডাটীয় প্রথম যুদ্ধে সিল্লা জয়ী হইয়া সসৈন্য ইটালি দেশ উত্তরিয়া রোম নগরে যৎপরোনাস্তি দুঃখ যে জন্মাইয়াছিলেন ইহা রাজসভ্যেরদের মনে বিলক্ষণ স্মরণ ছিল। অতএব তাঁহারদের এই ভয় জন্মিল যে কি জানি পম্পি এইক্ষণে তদবস্থ হওয়াতে পাছে তদনুসীরে কুকর্ম্মে রত হন। কিন্তু তিনি ইটালি দেশে পদার্পণ করিবামাত্র তাঁহার তাবৎ সৈন্য বিদায় করিলেন তাহাতে তাঁহারদের ভয় দূর হইল এবং জয়ি ব্যক্তির যদ্রূপ সম্ভ্রম তদনুসারে তিনি গৃহীত হইয়া রাজকোষে বিংশতি হাজীর তালন্ত অর্থাৎ চার কোটি টাকা দাখিল করিলেন।
যে সময়ে পম্পি এতদ্রূপে পূর্ব্ব দেশে যুদ্ধ করিতেছিলেন এমত সময়ে রোম নগরে কাটালিনের ষড়যন্ত্র ব্যক্ত হইল। তিনি সদ্বংশজাত ব্যক্তি বটেন কিন্তু অত্যন্ত কুৎসিত স্বভার স্বীয় তাবৎধন উড়াইয়া দিয়াছিলেন এবং সিল্লার কৃতকার্য্য স্মরণে উৎসাহী হইয়া বলপূর্ব্বক রোম নগর আয়ত্ত করিতে সঙ্কল্প করিয়াছিলেন। রোম নগরে বক্তারদের চূড়ামণি অথচ তৎ বৎসরের কনসল শিশেরো তাঁহার ও তাঁহার সঙ্গি লোকেরদের ষড়যন্ত্র ব্যক্ত করাতে ঐ দস্যুরা ভরসাহীন হইলেন এবং শিশেরোকে খুন করিতে ও নগর জ্বালিয়া দিতে কল্প করিলেন। অপর শিশেরো কৌশলপূর্ব্বক কাটালিনকে নগর ত্যাগ করিতে এবং নগরের নিকটে যে সৈন্য দল সংগ্রহ করি য়াছিলেন তাহারদের সঙ্গে মিলিতে কাটালিনকে প্রবোধ দিলেন। তাঁহার কুসঙ্গি লোকেরা নগরের মধ্যে ধরা পড়িয়া প্রাণ দণ্ড পাইল এবং তাঁহার প্রতিকূলে যে সৈন্য প্রেরিত হয় তাহারদের সঙ্গে যুদ্ধ করত কাটালিন হত হইলেন।
এতৎসময়ে অর্থাৎ খ্রীষ্টীয়ান শকের পূর্ব্বে ৬৩ বৎসর যদ্যপি রোমের রাজনীতির নিয়ম বজায় ছিল তথাপি ঐ রাজনীতির প্রকৃত ভাব বিলুপ্ত হইয়াছিল এবং ঐ নগরে ফলতঃ পৃথিবীতে তাবৎ পরাক্রম কএক প্রধান ব্যক্তির হস্তে ছিল। ঐ মান্য ব্যক্তিদের মধ্যে পাঁচ জন অগ্রগণ্য ছিলেন। প্রথম পম্পি তিনি সামান্যতঃ ভাগ্যের সন্তান নামে বিখ্যাত ছিলেন এবং নিয়ত যুদ্ধে জয়ী হওয়াতে এবং ইতর লোকেরদের খোসামেদিকরাতে রাজ্যের মধ্যে পরম মান্য হইলেন। দ্বিতীয় কাইসর তিনি সকুলোদ্ভব এবং তৎকালীন যুদ্ধ বিদ্যায় শ্রেষ্ঠ এবং অত্যন্ত নৈপুণ্য ও পারদর্শিতাতে অতিবিখ্যাত। তাঁহার এমত অশেষ উচ্চাভিলাষিতা ছিল যে তিনি বারম্বর কহিতেন যে “রােম নগরে শেষ গণ্য হন অপেক্ষা অতিক্ষুদ্র গ্রামে অগ্রগণ্য হওয়া আমার শ্রেয়ঃ জ্ঞান হয়”। তৃতীয় ক্রাসস তিনি নানা যুদ্ধে কৃতকার্য্য হওয়াতে খ্যাত হইলেন কিন্তু তৎকালীন সর্ব্বাপেক্ষা ধনী হওয়াতে অধিক খ্যাত ছিলেন। তিনি কহিতেন “যে যাঁহারা নিজ ব্যয়েতে মহাসৈন্য রাখিতে ক্ষম কেবল তাঁহারদিগকেই আমি ধনী কহি”। চতুর্থ কাটো তিনি স্বভাবত অতিকঠিন এবং পুনর্ব্বার রোম নগরে প্রাচীন রীতি চলে এমত তাঁহার নিষ্ফল আকাঙ্ক্ষা ছিল। তাঁহার ইচ্ছা যে এক বা দুই পরাক্রান্ত ব্যক্তির হুকুমে রাজকীয় ব্যাপার নির্ব্বাহ না হইয়া রাজসভ্যেরদের ও ইতর লোকেরদের আজ্ঞায় তাবৎ কার্য্য নির্ব্বাহ হয়। পঞ্চম শিশেরো তিনি ঐ মহাপুরুষেরদের কালেও বক্তৃতা ও রাজনীতিজ্ঞতা বিষয়ে অগ্র গণ্য ছিলেন কিন্তু কার্য্যেতে নিতান্ত অক্ষম। এই পাঁচ ব্যক্তির প্রতি রোমসম্পর্কীয় তাবৎলোকের দৃষ্টি ছিল এবং তাঁহারদের কার্য্যের উপরেই রোমীয় চক্র রাজ্যের মঙ্গলামঙ্গলের নির্ভর ছিল।
এই পাঁচ জনের মধ্যে কাইসর বুদ্ধিমত্ত্বাতে প্রধান। তিনি লুসিটানিয়া অর্থাৎ পোর্ত্তুগাল দেশের সুবাদারী কর্ম্মে নিযুক্ত হইয়া স্বীয় নির্দ্ধন অবস্থাহইতে মুক্ত হইলেন। রোম নগরহইতে প্রস্থান সময়ে তিনি এমত কর্জে ডুবিত ছিলেন যে তিনি কহিতেন যে কেবল নিঃসার্থই আমার বিংশতি লক্ষ টাকার আবশ্যক অর্থাৎ বিংশতি লক্ষ টাকা হইলেই কর্জ শোধ যায়। অপর রোম নগরে প্রত্যাগত হইয়া তিনি কনসলী পদে নিযুক্ত হইলেন এবং পম্পি ও ক্রাসসের সঙ্গে আপনারদের পরস্পর স্বার্থের নিমিত্ত অতি গোপনে যোগ করিলেন পশ্চাৎ ঐ যোগের নাম প্রথম ত্রৈপুরুষিক যোগ হইল। এই তিন জনের এইরূপে যোগ হইলে গল দেশের অধ্যক্ষতার ভার পাঁচ বৎসরের নিমিত্ত কাইসরের প্রতি অর্পিত হইল। এইক্ষণে যে দেশ সুইৎসের্লাণ্ড ও ফ্রান্স নামে খ্যাত ঐ দেশ তৎসময়ে গল বলিয়া বিখ্যাত তাহার অধিকাংশ তখন অনধিকৃত ছিল। কিন্তু ঐ দেশে যাত্রাকরণের পূর্ব্বে কাইসর ও তাঁহার সহযোগি উক্ত দুই জন রোম নগরে অতিপরাক্রান্ত অথচ দুরাচারি ক্লোডিয়সের সঙ্গে মিলিয়া কাটো ও শিসেরোকে নগরহইতে অপসারিত করিলেন। কাটো সয়প্রস উপদ্বীপ অধিকারকরণার্থ প্রেরিত হইলেন এবং শিসেরো ইটালি দেশহইতে তাড়িত হইলেন। কিন্তু ক্লোডিয়সের দৌরাত্ম্যে নগরে এমত গণ্ডগোল হইতে লাগিল যে শিসেরোর প্রত্যাগমনের অনুমতি পম্পির নিতান্তই দিতে হইল। শিসেরো এক বৎসরপর্য্যন্ত দেশ বহিষ্কৃত থাকিয়া খ্রীষ্টীয়ান শকের পূর্ব্বে ৫৭ বৎসরে রোম নগরে প্রত্যাগত হন।
অপর কাইসর গলপ্রভৃতি দেশে আট বৎসরপর্য্যন্ত যুদ্ধ করেন অর্থাৎ খ্রীষ্টীয়ান শকের পূর্ব্ব ৫৮ বৎসর অবধি ৫০ বৎসরপর্য্যন্ত। এবং তিনি ঐ দেশ সম্পূর্ণরূপ দমন না করিয়া রোম নগরে প্রত্যাগমন করিলেন না। তাঁহার যুদ্ধের বিবরণ তিনি আপনিই অতিসহজে অথচ কথার বাঁধনিরূপে লেখাতে অধিক শুশ্রূষণীয় হইয়াছে। প্রথমতঃ তিনি হেলবিশী লোকেরদের সঙ্গে যুদ্ধ করেন তাহারা সুইৎসের্লাণ্ড নামে বিখ্যাত দেশীয় লোক তাহারদের সম্পূর্ণরূপ দমন করিলেন। তৎপরে গল দেশ জয় করত পশ্চিম সমুদ্রের তটে পঁহুছিলেন ইহার পূর্ব্বে ঐ সমুদ্র কোন রোমান সেনাপতিকর্ত্তৃক দৃষ্ট হয় নাই। খ্রীষ্টীয়ান শকের পূর্ব্বে ৫৭ বৎসরে বেলজিরদিগকে বিলক্ষণরূপে জয় করিলেন এবং তাহার পর বৎসরে আকুইটানিরদিগকে সম্যক্রূপে পরাজয় করেন। তৎপর বৎসরে বিশেষতঃ খ্রীষ্টীয়ান শকের পূর্ব্বে ৫৫ সালে শুনিলেন তটহইতে কিঞ্চিৎ অন্তরে সমুদ্রের মধ্যে এক উপদ্বীপ আছে। তাহাতে উত্তীর্ণ হইয়া দেখিলেন যে ঐ উপদ্বীপস্থেরা অত্যন্ত অসভ্য তাহারদের মধ্যে কি কৃষি কর্ম্ম কি লিখন পঠনাদির ব্যবহার কিছুই নাই কিন্তু তাহারা সাহসিক। ঐ উপদ্বীপই ইঙ্গলণ্ড এবং কাইসরের যাত্রার পূর্ব্বে এতাদৃশ একটা উপদ্বীপ যে আছে এমত রোমানেরদের জ্ঞানগোচর ছিল না। প্রথম বৎসরে তিনি সেই স্থানে কিঞ্চিৎ আক্রমণ করিলেন কিন্তু তৎপর বৎসরে অর্থাৎ খ্রীষ্টীয়ান শকের পূর্ব্বে ৫৪ সালে অধিক সৈন্য লইয়া পুনর্ব্বার ঐ উপদ্বীপে উত্তীর্ণ হইয়া জয় করত লণ্ডন নগরপর্য্যন্ত পঁহুছিলেন। অনন্তর গল দেশে প্রত্যাগত হইলেন এবং ইঙ্গলণ্ড দেশে যাহা অধিকার করিয়াছিলেন তাহা রক্ষণার্থ কোন সৈন্য নিযুক্ত করিয়া যান নাই। অপর খ্রীষ্টীয়ান শকের পূর্বে ৫৪ ও ৫৩ সালে তিনি জর্ম্মনি দেশে যুদ্ধ যাত্রা করিয়া জয়ী হইলেন এবং যদ্যপি গলের বারম্বার অবাধ্য হইয়া না উঠিতেন তবে বোধ হয় যে, জর্ম্মনি দেশও অধিকৃত হইত। এইপ্রযুক্ত তাঁহার যুদ্ধ যাত্রাতে জর্ম্মনি দেশীয় লোকেরদের যে ভয় জন্মিল তদ্ব্যতিরেকে ঐ যাত্রার আর কোন চিহ্ন তৎদেশে থাকিল না। ইহাতে পাঠকগণের বোধ হইবে যে এই ক্ষণে যে২ দেশ সভ্যতায় প্রধান ও তাবৎ পৃথিবীর কর্ত্তৃত্বকারী পরাক্রমের মূলাধার তৎদেশে কাইসর প্রথমে রোমান সৈন্য লইয়া গমন করেন। কিন্তু তদবধি কি পর্য্যন্ত আশ্চর্য রূপান্তরই না হইয়াছে। কাইসরের কালে ইটালি দেশ বিদ্যা ও সভ্যতাতে সর্ব্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ এবং মনুষ্য জাতীয়েরদের উপরে প্রতিযোগিশূন্য কর্ত্তৃত্বকারী ছিল। তৎসময়েও ফ্রান্স ও জর্ম্মনি ও ইঙ্গলণ্ড অত্যন্ত অসভ্যাবস্থ সর্ব্ব শিল্পবিহীন লিখন পঠনেও অক্ষম। কিন্তু আঠার শত বৎসরের মধ্যে ঐ সকল দেশ অসভ্য অবস্থাহইতে মুক্ত হইয়া তৎ দেশীয়েরাই এইক্ষণে পৃথিবীর অন্যান্য ভাগের প্রভু হইয়াছেন এবং শিল্পাদি নানা বিদ্যার এমত সংস্কার করিয়াছেন যে কাইসরের সময়ে রোমীয় লোকেরা যেমন ফ্রান্স ও ইঙ্গলণ্ড দেশীয় অসভ্য জাতীয়েরদের অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ তেমন তৎ দেশীয় লোকেরা এইক্ষণে তৎকালীন রোমীয় লোকেরদের অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হইয়াছেন অথচ রোম নগর এইক্ষণে উচ্চাবস্থা হইতে পতিত এবং ইটালি দেশ ইউরোপীয় দ্বিতীয় গণ্য রাজ্যের মধ্যেও গণিত নহে।
যৎসময়ে কাইসর এতদ্রূপে গল দেশে যুদ্ধ করিতেছিলেন তৎসময়ে রোম নগরে স্বপক্ষ লোকেদের দ্বারা স্বীয় পরাক্রম বজায় রাখিতে ত্রুটি করেন নাই এবং তাঁহার নানাবিধ জয়করণ দীপ্তির চাক্চক্যে লোকেরদের দৃষ্টিপাত হওয়াতেই তাঁহার পরাক্রম আরো দৃঢ়ীভূত হইল। এই প্রযুক্ত তাঁহার প্রতি ক্রাসস ও পম্পির ঈর্ষা জন্মিল। কিন্তু ইটালি দেশস্থ লক্কা স্থানে কাইসর আগমন করত তাঁহার ঐ দুই সহযোগি ব্যক্তির পরস্পর সাক্ষাৎ হয় এবং ঐ ঈর্ষা অগ্নি কিঞ্চিৎকাল থামিল বটে কিন্তু নির্ব্বাণ হইল না। ঐ স্থানে তাঁহারা এই২ নূতন নিয়ম করিলেন যে কাইসর আর পাঁচ বৎসরপর্য্যন্ত গল দেশের প্রভুত্ব করিবেন এবং পম্পি ও ক্রাসস কনসলী পদে নিযুক্ত হইবেন এবং স্পাইন ও আফ্রিকার সুবাদারী কর্ম্ম পম্পিকে দেওয়া যাইবে এবং সুরিয়ার ফলতঃ আসিয়ার অধ্যক্ষতার ভার ক্রাসসের প্রতি অর্পিত হইবে তাহার অভিপ্রায় যে তিনি পার্থিয়ারদের প্রতিকূলে যুদ্ধ যাত্রা করিতে পারেন যেহেতুক তৎ যুদ্ধে অনেক ধন সঞ্চয় করণের সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু পম্পি ও ক্রাসসের কনসলী পদ প্রাপণ বিষয়ে কাটো অত্যন্ত প্রতিবন্ধকতাচরণ করিলেন। তাঁহার মানস ছিল যে দেশের তাবৎ পরাক্রম এক বা দুই বড় লোকের হাতে না থাকে তথাপি তাঁহারা ঐ পদ প্রাপ্ত হইলেন। কিঞ্চিৎ অনন্তর পার্থিয়ারদের প্রতিকূলে ক্রাসস নিজ ব্যয়েতেই যুদ্ধ যাত্রা করিলেন কিন্তু ফ্রাৎ নদী পার হইলে পার্থিয়ার সেনাপতি সুরিনা তাঁহাকে কারে স্থানে সম্পূর্ণরূপ পরাজিত করিয়া তাঁহার মস্তকচ্ছেদন করিলেন এবং তাঁহার মহালোভ বিষয়ে অপমান করণার্থ তপ্ত সীসা মস্তকে ঢালিয়া দিলেন।
অপর পম্পি আপনার নাএবের দ্বারা স্বীয় সুবার কার্য্য সাধন করিয়া রোম নগরে অবস্থিতি করিলেন। ক্রাসসের মৃত্যুতে তাঁহার এক জন প্রতিযোগি কমিল এবং রাজসভা ফলতঃ তাবৎ রাজ্যের প্রভুরূপে সর্ব্ব সাধারণ কর্ত্তৃক স্বীকৃত হওনের যে মহাবাঞ্ছা ছিল তাহা সিদ্ধ করণের এক প্রকার পথ মুক্ত হইল। তৎ সম্ভ্রম প্রাপণের অভিপ্রায়ে তিনি একাকী কনসল হওনের উদ্যোগ করিলেন এবং আট মাসপর্য্যন্ত তদ্বিষয়ে অনেক বাদানুবাদ হওনোত্তর কৃতকার্য্য হইলেন। এতদ্রূপে তিনি প্রধান পরাক্রম পাইলে কাইসবের সঙ্গে তাঁহার অতিশীঘ্র ভাঙ্গাভাঙ্গি হইল। পম্পি প্রতিযোগি ব্যক্তি সহিতে পারিতেন না। কাইসর তাঁহাহইতে যে কেহ বড় হয় ইহাতে অসহিষ্ণু ছিলেন। কাইসর গল দেশের জয়কারী এবং প্রাচীন সুশিক্ষিত সৈন্যেরা তাঁহার নিতান্তই শরণাগত অতএব তিনি যে যুদ্ধ না করিয়া রোম রাজ্যের সর্ব্বোপরিস্থ পদ পম্পিকে প্রাপ্ত হইতে দিবেন ইহা কাহারো বোধগম্য ছিল না অতএব এই কাল অবধি উভয়ের মধ্যে নিতান্তই যুদ্ধ ঘটিবে এমত বোধ হইল। রাজসভ্যেরদের অধিকাংশ এবং রোমনগরস্থ প্রায় তাবৎ ধনি ব্যক্তি পম্পির সপক্ষ অতএব তিনি কৃতকার্য্য হওন বিষয়ে নিঃসন্দেহ হইলেন এবং কাইসরের সঙ্গে যুদ্ধ করিতে হইবে জানিয়া দিন থাকিতে যে সকল উদ্যোগ করণ আবশ্যক তাহাতে শৈথিল্য করিলেন। কাইসর রাজসভ্যেরদের নিকটে এই প্রার্থনা করিলেন যে রোম নগরে বর্ত্তমান না থাকিয়া আমি কনসলী পদের নিমিত্ত উদ্যোগ করি। যদ্যপি তাহা আইনবিরুদ্ধ তথাপি রাজসভ্যেরা তাঁহাকে যদি বিনাশ করিতে নিশ্চয় না করিতেন তবে অবশ্যই তাহাতে স্বীকৃত হইতেন। কিন্তু তাঁহার মানস সিদ্ধ না করিয়া বরং রাজসভ্যেরা হুকুম দিলেন যে তোমার তাবৎ সৈন্য বিদায় করিয়া সামান্য ব্যক্তির ন্যায় রোম নগরে প্রত্যাগমন কর। ইহাতে কাইসর বিবেচনা করিলেন যে এই কার্য্য করা এবং পম্পির হস্তে আত্মসমর্পণ করা তুল্যই। অতএব তিনি উত্তর করিলেন যে পম্পি যদি তদ্রূপ সৈন্য বিদায় করেন তবে আমিও তাহা করিতে প্রস্তুত। অপর তাঁহারদের মধ্যে শলা করণার্থ নানা উদ্যোগ করা গেল তাহাও সোজাসুজিরূপে হইল না এবং তাহাতে কিছু ফল দর্শিল না। ইতিমধ্যে কাইসর স্বীয় সৈন্যগণ আর্মিনম স্থানে সংগ্রহ করিলেন। ঐ স্থান প্রকৃত ইটালি দেশের সীমাবর্ত্তী এবং রাজসভ্যেরদের অনুমতিবিনা কোন রোমান সেনাপতিকে সসৈন্য তাহা উল্লঙ্ঘন করিতে নিষেধ ছিল। তদনন্তর পম্পির প্রবোধে রাজসভ্যেরা এমত আজ্ঞা করিলেন যে কাইসর যদি নির্দিষ্ট মিয়াদের মধ্যে স্বীয় সৈন্য বিদায় না করেন তবে তাঁহাকে শত্রুর ন্যায় জ্ঞান করা যাইবে। শলা হওনের যে ভরসা ছিল তাহা এই আজ্ঞাতে একেবারে বিলুপ্ত হইল। কাইসর ঐ হুকুম শুনিয়া রুবিকননামে ক্ষুদ্র এক নদী সসৈন্য উত্তীর্ণ হইলেন এবং এই আন্তরিক যুদ্ধের আরম্ভ হইল।
অপর সসৈন্য কাইসরের আগমন বার্ত্তা যখন রোম নগরে পঁহুছিল তখন পম্পি ও রাজসভ্যেরদের অধিকাংশ দক্ষিণাভিমুখে এমত ত্বরায় গমন করিলেন যে রাজকোষে তাবৎ সরকারী টাকাই ফেলিয়া চলিলেন। পশ্চাৎ ঐ সকল টাকা কাইসরের হস্তগত হওয়াতে তাঁহার অত্যন্ত কার্য্য দর্শিল। পম্পি পূর্বে অতিগর্ব্বপূর্ব্বক কহিয়াছিলেন যে আমি যদি পদাঘাত করি তবে আমার সহকারি সৈন্যেরা তৎক্ষণাৎ ইটালি দেশের ভূমিহইতে উঠিবে কিন্তু তাহা হওয়া দূরে থাকুক ষাইট দিবসের মধ্যে কাইসর তাবৎ ইটালি দেশ হস্তগত করিলেন এবং কাটো ও শিসেরোর সমভিব্যহারে পম্পির নানা স্থানে পলায়ন করিতে২ জাহাজ আরোহণে গ্রীক দেশপর্য্যন্ত যাইতে হইল। কাইসরের বিবেচনা হইল যে পম্পির প্রকৃত পরাক্রম স্পাইন দেশে নিযুক্ত তাহার সৈন্য লইয়াই অতএব পম্পির পশ্চাৎ২ ধাবমান হওন অপেক্ষা ঐ সৈন্যেরদের পরাজয় করণ অধিক আবশ্যক জ্ঞান করিয়া অবিলম্বেই স্পাইন দেশে যাত্রা করিলেন এবং তদ্দেশ পর্ব্বতময় প্রযুক্ত দুর্গম হইলেও এমত উদ্যোগ করিলেন যে পম্পির সেনাপতিরদের তাবৎ সৈন্য বিনা যুদ্ধেই তাঁহাকে সমর্পণ করিতে হইল। অপর ঐ দেশহইতে প্রস্থান করিয়া আশ্চর্য্য বেগে গল দেশ দিয়া গমন করত আল্প পর্ব্বত উল্লঙ্ঘন করিলেন এবং তাবৎ ইটালি দেশের মধ্য দিয়া যাত্রা করিয়া ব্রন্দুজিয়ম স্থানে পঁহুছিলেন তথাহইতে জাহাজ আরোহণে গ্রীক দেশে উপস্থিত হইলেন। সেই স্থানে পম্পি তাবৎ পূর্ব্ব দেশহইতে মহাসৈন্য সংগ্রহ করিয়াছিলেন। ঐ সৈন্যেরা কাইসরের সৈন্যাপেক্ষা অধিক সংখ্যক ছিল কিন্তু পম্পি পরস্পর বিরুদ্ধ পরামর্শে ব্যাকুল এবং যে মানসিক উত্তেজনার দ্বারা পূর্বে তিনি নানা ব্যাপারে জয়ী হইয়াছিলেন বোধ হইল যে তাহা এই অতিবিপত্তি সময়ে তাঁহাকে ছাড়িয়া গেল। কাইসরের সৈন্য অল্প বটে কিন্তু অত্যুৎকৃষ্ট এবং নিজে কাইসরই তাবৎ উদ্যোগের মূল। অপর ইতস্ততঃ অনেক গমনাগমনের পর উভয় সৈন্যের খ্রীষ্টীয়ান শকের পূর্ব্বে ৪৮ সালের ২০ জুলাই তারিখে থেসালির মাঠে ফারসালিয়া স্থানে যুদ্ধ করিল। তাহাতে পম্পি সম্পূর্ণরূপে পরাভূত হইয়া পলায়ন করত দুই এক জন পরিচারক মাত্র লইয়া মিসর দেশে যাইতে নিশ্চয় করিলেন। ঐ দেশে তাঁহার আশ্রয় প্রাপণের ভরসা ছিল যেহেতুক স্বীয় সম্পৎসময়ে তিনি তদ্দেশীয় রাজবংশ্যেরদের অনেক উপকার করিয়া ছিলেন কিন্তু তথাকার রাজমন্ত্রী জয়ি কাইসরকে সন্তুষ্টকরণের ভরসায় তাঁহাকে হত করিলেন। তাঁহার উলঙ্গ শব সমুদ্রের কূলে নিক্ষিপ্ত হইল এবং এক জন প্রাচীন রোমান যোদ্ধা তাঁহার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করিলেন। কাইসর তাঁহার স্বভাব মত শীঘ্র পম্পির পশ্চাৎ ধাবমান হইয়া তাঁহার হত্যা হওনের তিন দিবস পরে মিসর দেশে পঁহুছিলেন। তাঁহার মহা প্রতিযোগি পম্পির ছিন্ন মস্তক যখন তাহার নিকটে আনীত হইল তখন অতিসুশীলান্তঃকরণ কাইসরের অশ্রুপাত হইতে লাগিল। ফারসালিয়ার যুদ্ধের দ্বারা যদ্যপি পম্পির দলস্থেরা একেবারে উচ্ছিন্ন হইল না তথাপি রোমের সাধারণ প্রভুত্বদশা একেবারে গেল যেহেতুক ইহার পরে রোমানেরা আর কখন স্বাধীন হইতে পারিলেন না।
কাইসর ছয় মাসপর্য্যন্ত মিসর দেশে অবস্থিতি করিলেন তাহার এক কারণ এই যে পরমসুন্দরী ক্লিয়োপাত্রার প্রেমে তিনি অত্যন্ত আসক্ত হইলেন অপর কারণ যে ঐ স্ত্রীর ভ্রাতার সঙ্গে যুদ্ধ করিতে হইল। কিঞ্চিৎকাল পরে ঐ ভ্রাতা এক সংগ্রামে হত হইলেন এবং কাইসর তাবৎ মিসর দেশ ক্লিয়োপাত্রাকে প্রদান করিলেন। অনন্তর মিথ্রিডাটিসের যে এক পুত্র অবাধ্য হইয়াছিলেন তাঁহার প্রতিকূলে ক্ষুদ্র আসিয়াতে যাত্রা করাতে ঐ অবাধ্য ব্যক্তি পরাজিত হইয়া হত হইলেন। কাইসর ঐ জয় এমত অল্পয়াসে সম্পন্ন করিলেন যে যুদ্ধের বিবরণ রাজসভ্যেরদের নিকটে প্রেরণসময়ে পত্রে কেবল এই তিনটি কথা লিখিলেন যে “বিনাই বাইডাই বাইসাই” অর্থাৎ আইলাম দেখিলাম জয় করিলাম। পরে তিনি রোম নগরে প্রত্যাগমন করিলেন। এদিগে পম্পির দলস্থ অবশিষ্ট অধ্যক্ষেরা আফ্রিকা দেশে পুনর্ব্বার সৈন্যসংগ্রহ করিতেছিলেন ইহা শুনিয়া তাঁহারদের প্রতিকূলে যাত্রা করিলেন এবং অন্য২ যাত্রাতে যেমন কৃতকার্য্য হইয়া আসিতেছিলেন এই যাত্রাতেও তদ্রূপ কুশলী হইলেন। বিপক্ষের সৈন্যাধ্যক্ষ কাটো স্বীয় দলবিষয়ে হতাশ হইয়া য়ুটিকা স্থানে আত্মঘাতী হইলেন এবং সিপিয়ো ও যুবা ও পিত্রিয়স উক্ত ব্যক্তির অনুগামী হইলেন। পরে কাইসর রোম নগরে প্রত্যাগত হইয়া অত্যল্পকাল অর্থাৎ চারি মাস মাত্র বিশ্রাম করিতে পাইলেন। পম্পির দুই পুত্ত্র আপনারদের দলের ছিন্ন ভিন্নীকৃত পরাভূত সৈন্যেরদিগকে স্পাইন দেশে সংগ্রহ করিলেন তাহাতে এক প্রকার কিঞ্চিৎ ভয়ানকও দৃষ্ট হইল। অতএব কাইসর অবিলম্বেই তথায় গমন করাতে মণ্ডা স্থানে অতিসাংঘাতিক এক যুদ্ধ হইল। তাহাতে ঐ দুই ভ্রাতারদের এক জন হত হইলেন এবং তাবৎ সৈন্য পরাস্ত হইল। পরে জয়ি কাইসর তাবৎ রোমের চক্র রাজ্যের একাধিপত্যরূপে প্রভু হইয়া শেষবার রোম নগরে প্রত্যাগমন করত খ্রীষ্টীয়ান শকের পূর্ব্বে ৪৫ বৎসরে যাবজ্জীবন ডিক্টেটরী পদে নিযুক্ত হইলেন। পৃথিবীর তাবৎ প্রকৃত পরাক্রম তৎসময়ে তাঁহার হস্তেই অর্পিত হইল এবং যদ্যপি সিল্লার ন্যায় তাঁহার কুস্বভাব থাকিত তবে তাঁহার বিপক্ষেরদের বিলক্ষণ প্রতিফল দেওনের বাধা ছিল না। কিন্তু কাইসর স্বভাবতঃ কোমলন্তঃকরণ ও দয়ালু অতএব আপনার কোন শত্রুকে দণ্ড করিলেন না এবং যাবজ্জীবন তাবৎ কার্য্যেই অত্যন্ত মহানুভবতা প্রকাশ করিলেন। তিনি এতদ্রূপ মহাপরাক্রম প্রাপ্ত হইয়া এই বহুকালস্থায়ি আন্তরিক যুদ্ধেতে ইটালি দেশীয়েরদের যে নানা ঘা হইয়াছিল তৎপ্রতিকারের উপায়ার্থ মনোযোগী হইলেন। তিনি মনের উৎসাহে সাধারণের হিতজনক নানা মহা সঙ্কল্প করিয়াছিলেন কিন্তু তন্মধ্যে কেবল এক কার্য্য অর্থাৎ পঞ্জীকা সংশোধন করিতে অবকাশ প্রাপ্ত হইলেন। তৎসময়ে রোম নগরের সাধারণ প্রভুত্বের তাবৎ নিয়ম একেবারে বিশৃঙ্খল হইয়াছিল এবং যাহাতে রাজ্যের নিয়ম প্রাচীন মতে স্থিতি হইতে পারে এমত কোন সদ্গুণ নগরস্থেরদের মধ্যে আর ছিল না। অতএব তদবস্থায় কাইসরের তুল্য গুণান্বিত ব্যক্তি যে একাকী প্রভু হন ইহা নগরের পরম সৌভাগ্য। কিন্তু রোম নগরে তাঁহার বার মাস বাসকরণ অতীত না হইতে তিনি দয়া করিয়া যে ব্যক্তিরদের প্রাণ বাঁচিয়াছিলেন এবং অনুগ্রহপূর্ব্বক যাহারদিগকে বর্দ্ধিত করিয়াছিলেন ঈদৃশ লোকেরা তাঁহার প্রাণ নষ্ট করণার্থ ষড়যন্ত্র করিল এবং খ্রীষ্টীয়ান শকের পূর্ব্বে ৪৪ সালে রাজসভ্যেরদের গৃহে তাঁহারদের অস্ত্রের দ্বারাই কাইসর হত হইলেন। এই ষড়যন্ত্রকারিরদের প্রধান ব্যক্তিরদের মধ্যে ব্রুটস ও কাসিয়স ছিলেন এবং যদ্যপি তাঁহারদের অভিপ্রায় অশুভ বলা যায় না তথাপি তাঁহারদের কর্ম্ম অত্যন্ত বিবেচনা শূন্য কহিতে হয় যেহেতুক যে ব্যক্তিমাত্র পৃথিবীর রাজকার্য্যে নির্ব্বাহক্ষম তাঁহাকেই তাঁহারা পৃথিবীহইতে অবসর করিলেন।
কাইসরের মরণোত্তর তাবৎ ব্যাপার অশেষ বিশৃঙ্খল হইল। মার্ক আণ্টোনিনামক তাঁহার মিত্র কিন্তু সদ্গুণ ও নৈপুণ্যে তত্তুল্য নন্ ইনি রাজ্যের প্রধান পরাক্রম প্রাপণের পথ মুক্ত দেখিয়া তৎপ্রাপণে উৎসুক হইলেন। কিন্তু তাঁহার অশেষ শত্রু শিসেরো রাজসভ্যেরদের সঙ্গে যোগ করিয়া কাইসরের ভ্রাতৃপুত্ত্র বাইশ বৎসরবয়স্ক অকটাবিয়সকে প্রোৎসাহী করিলেন। তাহাতে আণ্টোনির আল্প পর্ব্বতের পারে পলায়ন করিতে হইল। কিন্তু কিঞ্চিৎ পরে তিনি কৌশলক্রমে রাজসভ্যেরদের পক্ষহইতে অকটাবিয়সকে ছাড়াইলেন এবং তাঁহার সঙ্গে ও লেপিডসের সঙ্গে মিলিয়া কাইসর ও পম্পি ও ক্রাসস ইহার পূর্ব্বে যেমন ত্রৈপুরুষিক যোগ করিয়াছিলেন তদ্রূপ এক যোগ করিতে মনস্থ করিলেন। অপর বলোনিয়া নগরের তলবাহিনী নদী দ্বিধা হওয়াতে যে উপদ্বীপ পড়িয়া ছিল ঐ উপদ্বীপে ঐ তিন জন একত্র হইয়া আপনারদের শত্রুবিনাশ ও পরাক্রম সংস্থাপনার্থ এক যোগ করিলেন। পরে রোমীয় রাজসভ্য ও লোকেরদের অনুমতির অপেক্ষা না করিয়া তাঁহারা পাঁচ বৎসরপর্য্যন্ত রাজ্যাধিপতির ন্যায় আপনারদিগকে স্থাপন করিলেন এবং রাজ্যের নানা সুবা আপনারদের মধ্যে বণ্টন করিয়া লইলেন। এবং ব্রুটস ও কাসিয়স ও অন্যান্য যাঁহারা কাইসরকে হতকরণের অংশী ছিলেন এবং রাজ্যের পুরাতন রীতির পুনঃ স্থাপনেচ্ছুক ছিলেন তাঁহারদিগকে বিনষ্ট করিতে নিশ্চয় করিলেন। অনন্তর আপনারদের নিজ শত্রুরদিগকে খুন করণার্থ তাহারদের নামাঙ্কিত করিতে বসিলেন। এবং তিন শত রাজসভ্যগণ ও দুই হাজার অশ্বারূঢ় জাতীয় এবং অতিমান্য শিষ্ট বিশিষ্ট ভূরি২ ভদ্র লোকের হত্যা করিতে অবধারণ করিলেন। বাক্পটুতা ও রাজনীতিজ্ঞতা বিষয়ে অতিবিখ্যাত শিসেরো অকটাবিয়সের মিত্র হইলেও তৎকর্ত্তৃক আণ্টোনির রাগের তৃপ্তি করনার্থ তাঁহার হস্তে অর্পিত হইলেন এবং যাঁহারা এই বিদ্যালঙ্কার ব্যক্তির বিনাশার্থ প্রেরিত হন তাঁহারদের দ্বারাই তিনি হত হইলেন। পরে তাঁহার মস্তকচ্ছেদন করিয়া আণ্টোনির দুষ্টা স্ত্রী ফলবিয়ার নিকটে আনীত হইল। তিনি তাহা দেখিয়া আপনার চক্ষুর সাধ পুরাইয়া শিসেরো যে জিহ্বার দ্বারা ঐ স্ত্রীর ব্যভিচারাদি বর্ণনা করিয়াছিলেন সেই জিহ্বাতে স্বীয় সূচিকার দ্বারা পুনঃপুনঃ বিদ্ধ করিয়া পরিশেষে মস্তকটা রোম নগরীয় লোকেরদের সভাতে অর্থাৎ যে স্থানে শিসেরো স্বীয় বক্তৃতা গুণেতে চিরস্মরণীয় হইয়াছিলেন সেই স্থানে লটকাইতে হুকুম দিলেন। সিল্লার আমলে যেমন বিভ্রাট হইয়াছিল তেমন এই সময়ে হইল এবং অতিমান্য ব্যক্তিরদের রক্তপাতে ইটালি দেশ ভাসিতে লাগিল।
এই ত্রৈপুরুষিক যোগকারিরা এতদ্রূপে স্বীয় যত শত্রু ধরিতে পারিলেন সকলকে হত করিয়া ব্রুটস ও কাসিয়স ও তাহারদের সঙ্গি ব্যক্তিরদের পশ্চাৎ ধাবমান হইতে নিশ্চয় করিলেন। তৎসময়ে তাবৎ পূর্ব্ব দেশ ইঁহারদের আয়ত্ত ছিল এবং ঐ পূর্ব্ব দেশহইতে ধন আকর্ষণ করিয়া তাঁহারা মহাসৈন্য সংগ্রহ করিয়াছিলেন। পম্পির যে পুত্র মণ্ডাস্থানের যুদ্ধেতে রক্ষা পাইয়া ছিলেন তিনি স্পাইন ও শিসিলি ও সার্ডিনিয়া দেশ আয়ত্ত করিয়া ব্রুটস প্রভৃতির দলের সঙ্গে মিলিলেন অতএব ঐ দল জলে ও স্থলের উপরি এবং সেনাপতিরদের নৈপুণ্যক্রমে অকটাবিয়স প্রভৃতির দলঅপেক্ষা প্রবল ছিল। অকটাবিয়স সসৈন্য জাহাজ আরোহণে গ্রীক দেশে গমন করিলেন এবং মাকিদোনীয়ায় ফিলিপি স্থানে পরস্পর এক চূড়ান্ত যুদ্ধ হয়। তাহাতে অকটাবিয়সপ্রভৃতির সৈন্য অল্প হইলেও তাঁহারা সম্পূর্ণরূপে জয়ী হন এবং ব্রুটস ও কাসিয়স রোম রাজ্যের দশাবিষয়ে হতাশ হইয়া আত্মঘাতী হইলেন এবং অন্যান্য সদ্বংশ্য অতিমান্য রোমানেরাও আপনারদের ঐ অধ্যক্ষেরদের মৃত্যুর পর স্ব২ জীবনের অনাস্থা বোধে আত্মঘাতী হইলেন। ফিলিপির যুদ্ধ খ্রীষ্টীয়ান শকের পূর্ব্বে ৪২ সালে হয়। রোমানেরদের সাধারণ প্রভুত্ব সংস্থাপনার্থ যে শেষ যুদ্ধ হয় সে এই। ফিলিপির যুদ্ধঅবধি আক্সিয়মের যুদ্ধপর্য্যন্ত যে এগার বৎসর গত হয় সেই কাল রোম নগরে যাঁহারা তাবৎ পরাক্রম হস্তগত করিয়া ছিলেন তাঁহারদের আন্তরিক বিবাদেতেই পূর্ণ। ঐ পরাক্রান্ত ব্যক্তিরদের মধ্যে যিনি সর্ব্বাপেক্ষা ধূর্ত্ত অর্থাৎ অকটাবিয়স তিনি পরিশেষে আণ্টোনিকে জয় করেন। তৎকালীন বিবরণ তাদৃশ শুশ্রূষণীয় নহে। ত্রৈপুরুষিক যোগকারিরদের শত্রুর মধ্যে ব্রুটসের সহযোগি সেক্ষ্টস পম্পিমাত্র রহিলেন। তিনি সমুদ্রোপরি প্রবল হইয়া তাঁহার পিতা ইহার পূর্ব্বে যে বোম্বেটিয়ারদিগকে দমন করিয়াছিলেন তাহারদের ন্যায় রোম নগরে আহারীয় দ্রব্যাদির আমদানীকরণ নিবারণ করাতে এবং ইটালির তাবৎ তট অবরুদ্ধ করাতে রোম নগরস্থেরদিগকে অনাহারে অত্যন্ত ক্লেশ দিলেন অতএব অকটাবিয়সপ্রভৃতি তাঁহার সঙ্গে কোন প্রকারে শলা করিতে উদ্যোগী থাকাতে শলা হইল। কিঞ্চিৎ পরে পম্পি দেখিলেন যে এই প্রবল ব্যক্তির সঙ্গে সন্ধি করাতে কেবল আমারই বিনাশ সম্ভাবনা অতএব তিনি অকটাবিয়সের সঙ্গে যুদ্ধ আরম্ভ করিলেন। আণ্টোনি ও লেপিডস উভয়ই তাঁহার সাহায্যার্থ স্ব২ জাহাজ প্রেরণ করিলেন। তাহাতে জাহাজ চতুর্দ্দিগ্হইতে একেবারে পম্পির উপরে পড়াতে তিনি পরাভূত হইয়া আসিয়াতে পলায়ন করিয়া সেই স্থানে পঞ্চত্ব পাইলেন।
পম্পির মরণে শিসিলি উপদ্বীপ অরাজক হওয়াতে লেপিডস তাহা অধিকার করিতে উদ্যুক্ত হইলেন কিন্তু অকটাবিয়স তাঁহার তাবৎ সৈন্যকে সপক্ষ করিয়া তাঁহাকে অপদস্থ করিলেন। এতদ্রূপে ত্রৈপুরুষিক যোগকারিরদের মধ্যে এক জন অবসর হইলে তাবৎ পরাক্রম অণ্টোনি ও অকটাবিয়সের মধ্যে বিভক্তরূপেই থাকিল এবং সকলের অনুভব হইল যে ইঁহারাও বহুকাল বিনা যুদ্ধে থাকিতে পারিবেন না। অণ্টোনি তাঁহার সহযোগি ব্যক্তির অতিসাধ্বী ভগিনী আকটাবিয়াকে বিবাহ করিয়া ছিলেন কিন্তু আসিয়াহইতে প্রত্যাগত হইয়া মিসর দেশে উত্তীর্ণ হইলেপর পরমসুন্দরী ক্লিয়োপাত্রাতে অত্যাসক্ত হইয়া তাঁহার সহবাসে অশেষ সুখসাগরে মগ্ন হইলেন। তৎসমকালীন তিনি অকটাবিয়াহইতে পৃথক হইলেন তাহাতেই তাঁহার শ্যালক অকটাবিয়সর সঙ্গে যুদ্ধ হইল। অকটাবিয়স স্বার্থের নিমিত্তই এই যুদ্ধে প্রবর্ত্ত হন কিন্তু রোমানেরদিগকে ভুলাইয়া এই প্রবোধ দিলেন যে মিসর দেশীয় ক্লিয়োপাত্রা রাণী চক্র রাজ্যের কর্ত্রী হন এতদর্থ আমি কেবল রাজসভ্য ও লোকেরদের পক্ষ হইয়া যুদ্ধ করিতেছি। অপর তাঁহার যুদ্ধ জাহাজ ও আণ্টোনির যুদ্ধ জাহাজ গ্রীকদেশের আক্সিয়ম স্থানে সাক্ষাৎ হইয়া যুদ্ধ হইল। আণ্টোনির অধিক যুদ্ধ জাহাজ থাকাতে তাঁহার জয় হওনের বিলক্ষণ সম্ভাবনা ছিল কিন্তু যুদ্ধ হইতে হইতেই ক্লিয়োপাত্রা আপনার তাবৎ যুদ্ধ জাহাজ লইয়া পলায়নপরা হওয়াতে আণ্টোনিও তদনুগামী হইলেন পরিশেষে সকলই পলায়ন করিলেন। আণ্টোনি মিসর দেশে আশ্রয়ার্থ গমন করিলেন এবং অকটাবিয়স তাঁহার পশ্চাৎ২ ধাবমান হইলেন। পরে তিনি ক্লিয়োপাত্রার মৃত্যুর মিথ্যা জনরব শুনিয়া স্বীয় তলবারাঘাতে আত্মহা হইলেন। পরে মিসর দেশীয় ঐ রাণী অকটাবিয়সের পিতৃব্য কাইসর ও তাঁহার সহযোগী আণ্টোনিকে যদ্রূপ বাধ্য করিয়াছিলেন তদ্রূপ তাঁহাকে বাধ্য করিতে অনেক লওয়াইলেন কিন্তু তাঁহাকে স্বীয় সৌন্দর্য্যাদিবিষয়ে নিরপেক্ষ দেখিয়া এবং জয়ের উৎসব সময়ে আমাকে রোমনগরে সকলের সম্মুখে দর্শাইতে ইচ্ছুক আছেন ইহা জানিয়া এবং টলেমির রাজবংশ পরিশিষ্ট ব্যক্তি অর্থাৎ আপনার এতদ্রূপে অপমান না হয় এতদর্থ আত্মঘাতিনী হইলেন। এবং সেকন্দর শাহের মরণোত্তর ২৯৫ বৎসরের পরে মিসর দেশ লইয়া রোম রাজ্যের এক সুবা হইল।
ঐ বৎসরে অর্থাৎ খ্রীষ্টীয়ান শকের পূর্ব্বে ২৯ সালে রোম নগর পত্তনের ৭২৪ বৎসর পরে কনসল ও ত্রৈব্যুন প্রভৃতির হস্তে ইহার পূর্ব্বে যে সকল পরাক্রম অর্পণ হইত সে সমুদায় কাইসর অকটাবিয়সের প্রতি সমর্পিত হইলে তৎসময়ে তিনি অগষ্টস কাইসর নামধারণ করিলেন এবং তদবধি রোমানেরদের সাম্রাজ্য বিলুপ্ত হওন পর্য্যন্ত তাবৎ পরাক্রম কেরল এক ব্যক্তির হস্তেই থাকিল সেই ব্যক্তি “এম্পেরর” অর্থাৎ রাজাধিরাজরূপে বিখ্যাত হইলেন। অগষ্টস রোমনগরে ৪৪ বৎসরপর্য্যন্ত প্রভুত্ব করেন।
অগষ্টস কাইসরের ঊনত্রিংশত্তম বৎসরে যে সময়ে জানসের মন্দির দ্বিতীয়বার রুদ্ধ হইয়াছিল এবং যে সময়ে পূর্ব্বোক্ত নানা যুদ্ধ যে সকল দেশে অবিরত হইয়াছিল তত্তৎ দেশে শান্তি হইল অথচ যে সময়ে পরিচিত পৃথিবীর প্রায় তাবৎ অংশ রোমান সাম্রাজ্যের মধ্যে গণিত হইয়াছিল এমত সময়ে সম্পূর্ণকাল আগত হইলে স্বীয় মৃত্যুর দ্বারা মনুষ্যবর্গের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করণার্থ এবং পৃথিবীতে ধর্ম্ম রাজ্য সংস্থাপনার্থ য়িশু খ্রীষ্ট য়িহুদীয় দেশে অবতীর্ণ হইলেন। অতএব পুরাবৃত্তের সংক্ষেপ বিবরণের এই খণ্ড এইক্ষণে সমাপ্ত করা গেল।
ইতি পুরাবৃত্ত বিবরণীয় সংক্ষিপ্ত প্রথম খণ্ডং সমাপ্তং।
From the fall of Carthage to the birth of Christ.
The preceding period was the age of Roman glory; her citizens exhibited many noble examples of temperance, justice, courage and patriotism, for which we vainly look in the period now under review, which may justly be termed the age of Roman degeneracy. The plunder of the fairest portion of the world introduced boundless luxury, and a complete relaxation of morals. Every man who was sent to govern a province, returned with a fortune. Though this corruption had gradually been gaining ground in the republic since the conquest of Macedon, it was in some measure checked by the fear of Carthage; but no sooner was this rival city levelled with the ground, than the Romans, as the historian relates, ran precipitately into shameless dishonesty, perfidiousness and cruelty. “I mean,” adds he, “their senate, their generals, and their ambassadors.”
The same year in which Carthage was destroyed, B. C. 145, the Romans on the occasion of a dispute between the Achæans and Lacedemonians, subverted the Achæan league, burnt Corinth, Colchis, and Thebes, and reduced Greece to the abject condition of a Roman province. In Spain the Romans had to maintain a war for more than sixty years, before the country was entirely subdued. Of all the nations subjugated by Rome, the Spaniards defended their liberty with the greatest obstinacy. The war with this people began in the year B. C. 200, and continued almost without interruption to the year B. C. 133. In the year B. C. 146 the intolerable oppressions of the Roman governors drove to desperation the Lusitanians (the Portuguese), and they chose Viriathus, a private soldier, for their general. He is described as free from vice, and possessed in the highest degree of the virtues attributed to the best of the Romans. For six years he maintained the struggle, with a boldness and preseverance almost miraculous, and repeatedly defeated the Roman armies which were sent against him. Having at length driven the Roman consul to great straits, he seized the opportunity of offering him peace, which was soon after concluded with the full consent of the senate. But they were no sooner delivered from the terror of his arms than they determined to violate the peace, even without warning; and Scipio the consul having come unawares on Viriathus and defeated him, basely bribed three of his friends to murder him, to the eternal reproach of the Roman name. After his death, the Spaniards still protracted the war for six years, and again defeated the Roman troops; but at length nothing remained to them in Spain, but the city of Numantia, which contained 4000 defenders, and which the Roman consul invested with 60,000 troops. He was however unable to take it, till the besieged, after having been reduced to the last extremity of famine, had set fire to their houses, and perished in the flames, leaving to the Romans nothing of Numantia but the name. The town fell B. C. 133; and Spain was formed into two Roman provinces. Two years after, Attalus, the worthless king of Pergamus, to whose father the Romans had given a large portion of Asia Minor, dying, bequeathed his dominions to Rome. Thus by one stroke of the pen did the Romans become masters of one of the richest kingdoms in Asia; but the increase of luxury and perfidy which this gift brought on Rome, made her pay dearly for the prize.
This bequest was made in the year B. C. 130. One hundred and thirty-two years before this time, the Romans were not in possession of a single foot of land beyond the confines of Italy; but at this period, their empire comprised Spain divided into two provinces, the territory of Carthage in Africa, Sicily, Sardinia, Corsica, Liguria, and Cisalpine Gaul in the west; and in the east, Macedonia, Achæa, and Asia Minor. The inhabitants of these countries were entirely subject to Rome, and were governed by Roman officers who had already passed the offices of consul and prætor, and in whom were united both the civil and the military power, a measure which led to the most frightful oppression. Roman troops were kept up in the provinces, and the Latin language was introduced every where, except where the Greek language was already in use.
The baneful consequences of this scheme of boundless conquest, and of the acquisition of so many rich provinces, soon became apparent. The struggles which had disturbed the city in the early days of the republic were renewed. The state had successively acquired immense lands which the rich divided among themselves, excluding the poorer classes from all share in them. These were left without resource; for they could not, as in other countries, resort to trades, because they were reckoned too infamous to be performed by any but slaves. It was during the siege of Numantia, B. C. 133, that the first violent commotion was excited in Rome by the oppression of the rich, in which for the first time the blood of citizens was shed in civil broils; arms and violence were then introduced into the public assemblies, and other tragedies rapidly followed which led eventually to the entire ruin of Roman liberty.
Tiberius Gracchus, whose family was originally plebeian, but whose father had married the patrician daughter of the first Scipio, the conqueror of Carthage, was a man of the highest benevolence and courage. Being desirous of relieving the misery which pressed on the lower orders, he could discover no plan more effectual than to revive the Licinian law. This law, which forbad any Roman citizen to possess more than 500 acres of land, had gradually fallen into disuse, and many of the great men of Rome possessed extensive domains. Gracchus thus became the man of the people, and the object of the senate's most sincere abhorrence. Having been elected one of the tribunes of the people, he proposed the Licinian law for restricting the quantity of land to 500 acres; which, notwithstanding the opposition of his colleague, was passed, and a body of commissioners was appointed to divide the lands. About this time the king of Pergamus having, as we have mentioned, bequeathed his wealth to the Romans, Tiberius Gracchus proposed that it should be divided among the poorer classes, a project which served still more to enflame the hatred of the rich. When his year of office expired, he stood again for the tribuneship, but on the day of the election, Scipio Nasica, a patrician who possessed much of the public lands, taking with him a multitude of his clients and slaves armed with clubs, and accompanied by a large body of the senate, fell upon Tiberius, and put him and three hundred of his friends to death. All the public disputes since the birth of the republic, during six hundred and twenty years, had been terminated by mutual concessions, the people respecting the senate, and the senate fearing the people; but on this occasion the senate itself took the fatal resolution of having recourse to murder to compass their ends; and all moderation between the different parties in Rome, from this time, entirely ceased.
Ten years after the tragical death of Tiberius Gracchus, his younger brother Caius, a man possessed of still greater elevation of mind and talent, resolving to tread in his brother's footsteps, entered upon the thorny path of Roman politics. Having been chosen tribune of the people, he pushed the execution of the Licinian law with such vigour, as to lead the great and rich to combine for his destruction. His active mind was ever devising schemes of large and permanent utility; but there were two measures which peculiarly distinguished his period of office. He took away from the senate the power of judging, which they had enjoyed from the beginning, and bestowed it on the knights, an inferior order in the state, intending thereby to counterbalance the great authority of the senate. He also proposed to bestow the freedom of the city on the Italian allies, a project on which we shall have occasion to dwell more particularly hereafter. These measures shewed the danger to which the aristocracy were exposed by his plans; and they openly attacked him in the city itself, and put him and three thousand of his adherents to death. After his removal, the senate contrived to evade the Agrarian law, so that it was never effectually brought into practice. The hope held out to the Italian allies of participating in the government of Rome and of the world, was by his death disappointed, which sowed the seeds of discontent in their minds, and afterwards produced the most bitter fruits.
The victory which the senate had gained over the people, by the murder of the two Gracchi, enabled them to carry forward their schemes of aggrandizement and extortion with impunity. Unbounded luxury now succeeded to the ancient simplicity of manners, and corruption of the grossest character was practised without a blush. The governors of provinces plundered the people with impunity, while the various kings in alliance with Rome, endeavoured to maintain a party in the senate by large bribes, which gave a fresh impulse to the cupidity and the intrigues of this once august body.
The corruption which had infected the ruling men in Rome, was more particularly developed in the war in which about this time the state was involved with Jugurtha, and which commenced in the year B. C. 118. Massinissa, as a reward for the services he had rendered the Romans in the Carthaginian war, had received the kingdom of Numidia in Africa. He was succeeded by his son Micipsa, who had two sons, Hiempsal and Adherbal, and a nephew Jugurtha, a man, active, able, and unprincipled. Fearing lest Jugurtha should supplant his sons, he sent him with his contingent of troops to assist the Romans at the siege of Numantia. There Jugurtha perfected himself in the art of war, and gained the applause of his commanders. Many in the Roman camp moreover inflamed his ambition, by telling him that, on the death of his uncle, he might make himself master of Numidia without any fear of the Romans, for at Rome all things were venal. Jugurtha on his return was adopted by the old king his uncle, and left joint heir with his sons. But no sooner was Micipsa dead, than Jugurtha murdered Hiempsal, and driving Adherbal out of the country, became master of Numidia. Adherbal repaired to Rome to complain to the senators, and Jugurtha sent his envoys with a rich purse to bribe them. His gold prevailed, and ten commissioners were sent to Africa to divide the country equally between the two claimants. Jugurtha bribed the ten ameens to allot him the finest provinces, and finding now that gold was all powerful, audaciously made incursions even upon his cousin's share of the country, who was obliged to shut himself up in Citra. Jugurtha having laid close siege to it, Adherbal contrived to send messengers to Rome to inform the senate of his danger. It was proposed at first to send an army to Africa, to bring Jugurtha to condign punishment; but those who had touched his gold defeated this proposal, and three commissioners were deputed to decide the difference between the two kings, at the head of whom was Scaurus, the prince of the senate. Landing in Africa, they summoned Jugurtha to their tribunal. But though he appeared in person with a few troops, his generals continued to push the siege of Citra with vigour, and the commissioners, through weakness or corruption, after hearing his reply to their charge, returned to Italy without having accomplished any thing. Soon after their departure, Citra fell, and Jugurtha put Adherbal to death by torture, and massacred all whom he found in arms. The news of this event so inflamed the people of Rome, that the senate, conscious of guilt and dreading their resentment, ordered an army in good earnest to Africa; but Jugurtha contrived to bribe the generals, and induce them, without striking a blow, to agree to a disgraceful treaty. When these transactions became known in Rome, the indignation of the people knew no bounds; and Memmius, one of their tribunes, openly charged the generals and ambassadors with corruption, and prevailed on the senate to send an envoy to Africa to bring Jugurtha to Rome on the public faith, that he might be confronted with the men he had bribed. Jugurtha accordingly came to Rome, not with the pomp of a monarch, but in the garb of a suppliant, and immediately set in motion his old practices of bribery so effectually, that on being summoned to an assembly of the people, where all his foul deeds were recounted, and he was called on to reply to the charges, Bœbius one of the tribunes, who had largely tasted of the king's gold, forbad him to answer them. Jugurtha would probably have escaped with impunity, if he had not ruined his cause by causing Massiva, one of the grandsons of Massinissa, and a claimant for the throne, to be assassinated in the city of Rome. This filled up the measure of his iniquities; he was commanded to quit Rome and Italy instantly, and an army was sent to deprive him of his dominions in Africa. The Roman consul Albinus, to whom the charge of the war was committed, did nothing; which led many to conjecture that he also had been corrupted by Jugurtha. One of the tribunes meanwhile proposed, that those who had received bribes from the king should be brought to trial; and as the people, from their hatred of the nobles, became incredibly zealous on this occasion, the senate was obliged to yield to the popular voice, and four men of the highest dignity in the state were condemned. Metellus, a man of incorruptible integrity, was at the same time appointed general in Africa. He conducted the war with great vigour, took town after town, and chased Jugurtha through his own states. He was on the point of putting an end to the war, when he was supplanted in his command by Caius Marius.
Caius Marius, born of poor and ignoble parents at Arpinum, had raised himself by his own daring spirit and his great talents, to various dignities in the army and the state. While tribune of the people, he espoused the popular cause, and curbed the nobility so vigorously, as to gain the affections of the lower classes, and to be reckoned the champion on whom they depended for the protection of their rights. At this time he was serving in Africa as the lieutenant of Metellus. He solicited permission to repair to Rome and stand for the consulship, and on his arrival in the city, was raised to that dignity by the favour of the people, which greatly mortified the aristocracy, since no man of such ignoble lineage had ever been elevated to that dignity before. To Marius, then forty-eight years old, notwithstanding the opposition of the senate, was the conduct of the Jugurthine war committed, and Metellus was obliged to make over the army to him. Marius, whose talents as a commander were of the first order, drove Jugurtha to great extremities, but being unable to obtain possession of his person, prevailed on Bocchus, king of Mauritania, his own father-in-law, to betray him to the Romans. Even Bocchus, though an African, and reckoned a barbarian by the Romans, hesitated to lend himself to such an act of treachery; but the arguments of Sylla, the lieutenant of Marius, at length prevailed over his scruples. Bocchus invited Jugurtha to a friendly conference, and delivered him up to the Romans; and thus ended the Jugurthine war B. C. 106, to the great dishonour both of Marius and Sylla, and of the Roman character.
The next event of importance in the History of Rome is the irruption of the northern nations of Europe, by whom in the lapse of time the whole Roman empire was subverted. The Cimbri, the Teutones, and others, descending from the north of Europe, had about the year B. C. 109, laid waste the newly acquired province of Transalpine Gaul. Four years after, they defeated the Roman general Silanus, and soon after Scaurus and Cæpio, and Italy trembled as in the days of Hannibal. The eyes of all were now fixed upon Marius, who was considered the only general capable of saving the state. So deep indeed was at this time the terror of the Romans, that they suspended the law which forbad any man to be elected consul in his absence, or till ten years had elapsed since his previous consulship. Marius was elected to this office while absent from Italy, and though he had been consul only three years before. He proceeded with a well disciplined army in the year B. C. 103, to Gaul, where he learnt on his arrival, that the barbarians after ravaging the whole country from the Rhone to the Pyrenees, had marched southward into Spain. Marius awaiting their return, passed the time in perfecting the military discipline of his troops, and while thus engaged was elected a third and fourth time to the consulship. In the third year, the barbarians returned from Spain, and dividing their forces into two bodies, the one, consisting of the Ambrones and the Teutones, determined to enter Italy through Provence; the other, composed of the Cimbri, to fetch a wide circuit and enter it by the Tyrol. These latter marched to their destination, while Marius continued to watch the movements of the Ambrones. At length, he fell upon them near the modern city of Aix, and completely defeated them, when more than 100,000 of their troops were killed or taken prisoners. The Cimbri soon after descended the Alps; but the Roman troops under Catullus, who had been sent to oppose them, seized with a panic took to flight. Marius, who had in the mean time returned to Rome, was entreated to take the command of the army. Marching northward he came up with the barbarians on the banks of the Po; a great battle ensued; the Cimbri were totally routed; 140,000 lay dead on the field, and Italy was delivered from its terrors.
About the same time occurred the war of the slaves in Sicily. Treated with severity by their masters, and longing for liberty, they successively took up arms, chose leaders, and defeated the Roman armies; and it was not till a million of these unfortunate beings had been exterminated that peace was restored to the island.
The seven years which elapsed between the years B. C. 98 and 91, produced no memorable event, except the banishment of Metellus, the chief of the aristocratic party. Marius, having obtained his sixth consulate by money, leagued himself with several men of desperate characters, who tyrannized over the city to such a degree as to rouse the resistance of all the well disposed citizens, and to constrain Marius to abandon them. The chiefs, Saturnius and Glaucias being besieged in the capitol, were obliged to surrender, and were executed. The violence of these men prepared the way for the extraordinary violence of Marius and his opponent Sylla, which we shall soon have occasion to narrate.
Before we enter on the bloody scenes, which deluged Rome in the time of Marius and Sylla with blood, it appears proper to remark, that Rome originally formed from a band of robbers, continued for many centuries in a very barbarous state, without even the first rudiments of polite literature. But when she began to extend her conquests beyond Italy, and came in contact with the more civilized states of the East, the higher classes of Roman citizens began to imbibe a taste for letters. The Greek language was studied with care; and the Latin tongue received such a polish and refinement that at length it almost equalled the Greek in purity and strength. Rome after subduing Greece by force of arms, was thus in its turn subdued by the literature, philosophy, and refinement of the Greeks. The vastness which the affairs of the republic had attained, served also to foster the talents of the most eminent citizens; while the rich rewards which attended their success in eloquence stimulated exertion, and gave a high tone to the upper ranks of society.
It was during this period, that the power of the knights was contracted. By the laws of Caius Gracchus the judicial power had been transferred to them; being already farmers of the revenue they were now enabled to carry on their extortions without hindrance, for the appeal from their misconduct lay to their own tribunals. From this union of the office of Collector and Judge in the same persons, the various provinces of the empire were reduced to the most deplorable condition. The insolence of this large body of men, (equal in number to 3900,) increasing with their power, became at length insupportable; and Drusus, one of the tribunes of the people, succeeded in depriving them of half their authority: but he was murdered in the streets of Rome.
Another plan proposed at this time by Drusus, was that of giving all the allies of Rome in Italy the freedom of the city, which would have brought them directly into the management of the government. This project which was equally disliked by the senate and the people, was for the present frustrated. The Italians, who had formed great hopes of success from the promises of Drusus, being thus bitterly disappointed, began to contrive how they could acquire these rights by force of arms. While in this state of excitement, they heard of the murder of Drusus, which confirmed their persuasion that those rights could be obtained only by their own prowess. In all the wars in which the Romans had been engaged for the conquest of the world, the Italian allies had formed two-thirds of their armies; they served in separate cohorts, and were never admitted into the Roman legions. The disappointed states were those which lay to the south of Cisalpine Gaul, except the Latins, Sabines, Hetrurians, and Umbrians, who continued faithful to Rome. Before these confederates proceeded to open war, they sent a deputation to Rome to represent that they had served the republic in all her wars, had furnished annually a double proportion of troops, and begged that they might be admitted as citizens of the city, which they had contributed to raise to its present grandeur. The senate indignantly rejected the proposal, and both parties prepared for war. The Italians chose Corfinium, about sixty miles east of Rome for their metropolis, hoping to make it the capital of Italy; and they organized a senate of 500 members, and chose consuls, generals and other officers after the model of Rome. The war lasted about three years, from the year B. C. 90 to 88. The Romans were repeatedly defeated by the Italians, but were in the end victorious, chiefly through the able conduct of Sylla, who had served under Marius in the war against Jugurtha. After various alternations of defeat and success, the senate conceded to the Italian states one by one the rights of citizenship; which if granted at the beginning, might have saved the lives of 300,000 men, who perished in these wars. The concession thus made to the Italians, completely destroyed the balance of the Roman constitution, and irretrievably compromised the tranquillity of the city. For any demagogue was thus enabled to inundate the city with a large body of country voters, and to carry by violence any measure he might propose.
The next war in which the Romans were engaged was that against Mithridates. He was descended from a line of kings who had long governed the kingdom of Pontus, lying in the north eastern corner of Asia Minor. He possessed a great and comprehensive genius, and eminent talents for war, but his good qualities were obscured by perfidy. He had already extended his conquests over a large portion of the north of Europe and Asia, and aspired to nothing less than the entire subjugation of all Asia. By interfering in the affairs of Cappadocia, which bordered upon the Roman provinces in Asia Minor, he first came in contact with the Romans, who were very soon convinced that his ambitious projects required to be vigorously checked. The progress of the long war they waged against him, which, beginning in the year B. C. 89, ended only with his death, B.C. 63, confirmed this opinion; for the Romans had encountered no enemy more formidable, since the days of Hannibal. When he had made himself master of Bythinia and Cappadocia, the two dethroned kings of those countries repaired with their complaints to Rome. The senate sent commissioners to Asia with orders to reinstate them, to which Mithridates offered no opposition, as his plans were not yet ripe. But soon after he sent his son into Cappadocia and seized the kingdom, declaring that this step was forced upon him by the iniquity of the commissioners. Without waiting for orders from the senate, those commissioners raised an immense army, and proceeded at once to open hostilities with Mithridates. He however completely overthrew their armies, and rapidly expelled the Romans from all the provinces, towns, and islands of Asia Minor, Rhodes excepted. This happened in the year B. C. 87.
When the news of these disasters reached Rome, the senate determined to send a large army against this new and formidable foe, and to prosecute the war with vigour. Two men then appeared foremost among the candidates for the management of the war, Marius and Sylla. Marius, the champion of the people, the conqueror of the Cimbri, though then nearly seventy years old, was still tormented with the thirst of glory, and longed to embark in a war which promised to gratify both his ambition and his avarice. Sylla, the champion of the senate and the aristocracy, who had covered himself with renown in the recent war of the Italian allies, was equally anxious to obtain an appointment, which was likely to realize his highest wishes; and to his share it fell either by lot or appointment. Marius put every ignoble art in practice, and leagued himself with the most flagitious characters in the city, to get the command transferred to himself. Proceeding to the senate, he seized several of its members and put them to death; and Sylla himself, who was then present in the assembly, was obliged to escape to his army, which was then besieging Nola. Overawed by the violence of Marius, the senate transferred the command of the Mithridatic war to him. Armed with this power, Marius became master of the city, put to death many of Sylla's friends, and confiscated their effects. Sylla, on the receipt of this intelligence, marched towards Rome with thirty-five thousand men; and this was the first instance in which a Roman army had ever appeared against the city. Sylla easily made himself master of it, caused some laws to be passed for curtailing the power of the people, put several of Marius's adherents to death, and banishing Marius himself, set a price on his head. After he had thus established the superiority of his own faction in the city, he appointed Cinna and Octavius consuls, for all freedom of election was henceforth at an end, and set out with his army for the East, to conduct the war against Mithridates.
Marius, escaping from Rome, fled to the south of Italy, where, being hotly pursued by his enemies, he concealed himself in a marsh. He was soon discovered, drawn out all covered with filth, and thrown into a dungeon; but he contrived to make his escape, and repaired to Africa; where the prætor, who was in Sylla’s interest, ordered him instantly to quit the province. Marius bid the messenger say in reply, that he had seen Marius, an exile from his country, sitting amidst the ruins of Carthage; meaning thereby to give an instructive lesson upon the uncertainty of worldly possessions to the prætor, from the sad condition of Carthage once the rival of Rome, and his own case, reduced from a state of the highest importance to one of abject destitution. From thence he set sail, and traversed the seas during the greater part of the winter. Meanwhile, Cinna, who had been left consul in Rome, a man as able as he was profligate, attached himself more closely to the party of Marius, but was obliged to fly from the city after a bloody engagement. Having collected an army, and being joined by the rest of his party, as well as by Marius himself, he proceeded towards Rome, to which he laid close siege. The city, though defended by Octavius the consul, and by Metellus, who has been already mentioned in the Jugurthine war, was reduced to such straits, that the senate was obliged to capitulate. One condition only was exacted, that no citizen should be put to death; and the promise was readily given, but shamefully violated. Marius refused to enter the city, till the people had reversed the decree of his banishment; but while the officers were counting the votes, he, unable to restrain his own passions, rushed in with 4000 slaves, and began the slaughter of his enemies. He then calmly sat down to glut his revenge, and ordered all those whom he suspected of hostility to be massacred; among whom were included some of the most illustrious men of the city. While pursuing this career of cruelty, he was carried off by a fever, in the year B. C. 87, in the seventy-first year of his age.
We now turn to the acts of Sylla. It has been already remarked, that Mithridates had in one campaign made himself master of all the Roman conquests in Asia, excepting Rhodes, to which he laid siege. Immediately after, he ordered all the Romans then residing in Asia Minor to be butchered; and eighty thousand were put to death in one day; their property was confiscated, and every deed and document found in their possession, burnt. The execution of this order shews very plainly, that the extortions of the Romans had roused the hatred of their Asiatic subjects. The destruction of all the records on this occasion, produced the greatest confusion in Rome. Sylla, however, was now on his march to revenge this perfidy. Mithridates after having overrun Asia, sent his armies into Greece, under Archelaus, his ablest general; and the Athenians, who had been condemned to a fine by the Romans, willingly embraced his party, which was also joined by several other states. Sylla landed in Greece in the year B. C. 87, and opened the war by besieging Athens, which obstinately resisted all his efforts for two years, but was at length taken, and Sylla ordered an indiscriminate massacre of all its inhabitants. Such carnage had never been seen in Greece; the blood spilt in the streets flowed out at the gates. But when the first fury of his troops was slaked, Sylla, at the earnest request of his friends, spared those who had survived. Archelaus, the general of Mithridates, on the fall of Athens, proceeded to Cheronea in Bœotia, where Sylla gave him battle, and, notwithstanding the disparity of forces, completely defeated him; only 10,000 men of the enemy escaping from the field. Dorylaus, another general of the king of Pontus, soon after entered Greece from the north with a fresh army, which was however entirely routed at Orchomenos. Mithridates on hearing of this double defeat, directed Archelaus to conclude a treaty with Sylla, on any terms. Sylla himself was not indisposed to peace, as one of the generals of Marius's faction had been sent from Rome, with an army, to supersede him. Mithridates was also anxious for peace, because Fimbria, the general alluded to, on his arrival in Asia, had defeated one of the king's sons, and besieged the king himself in Pitanes. Fimbria, after this success, proceeded to ravage the country about Troy, which induced Sylla to hasten into Asia. As soon as he had crossed the Hellespont, he was met by Mithridates, who concluded a peace on the terms dictated by Sylla himself; which were, that he should restore Asia Minor and Paphlagonia to the Romans, and give up Bythinia and Cappadocia to their respective monarchs; pay 2000 talents, about forty lacs of Rupees, and deliver up seventy ships of war. The treaty being concluded, Sylla marched against Fimbria, who, seeing his soldiers desert him in great numbers, fell upon his own sword, and perished. Sylla, having now no enemy to combat in Asia, gave up the country to be pillaged by his soldiers, who enriched themselves beyond all former example. He also fined the inhabitants of the whole province (those excepted who had remained firm in the Roman interest,) and thus amassed the incredible sum of a 20,000 talents, nearly four crores of Rupees; with which he prepared, in the year B. C. 84, to return to Italy, to revenge his personal wrongs.
Rome, and in fact all Italy, was at this time in possession of the party of Marius. On the news of Sylla's approach, with a victorious army, a large fleet and an immense treasure, the consuls began to levy troops, and fit out ships for the impending war. The army they assembled on this occasion in various parts of Italy, amounted to nearly 2,00,000 men; and various bloody engagements were fought during two years, in this great civil war, in all of which Sylla was victorious. Italy was deluged with blood, shed not by a foreign foe, but by the hands of her own inhabitants. Sylla having at length obtained possession of the city, prepared to punish his enemies; and Rome, the mistress of the world, became the prey of one of her own citizens. He assembled the senate, and while yet addressing that body, caused eight thousand of his prisoners to be murdered. Their cries terrified the senators; but Sylla without any change of countenance, bid them mind what he was saying to them, as it was only the cries of a few a seditious men whom he had ordered to be punished. After this he filled Rome with slaughter, sparing none who were suspected of having belonged to the party of Marius; while his friends, with his connivance, also despatched their private enemies. Wealth became a crime; and none escaped whom it suited the interest of Sylla’s partizans to remove. When his own friend Metellus asked him in the senate, when there would be an end of these calamities, Sylla merely replied that he was not yet certain whom he should leave alive. The day after this conversation, he fixed up in a public place a list of those whom he had doomed to death, for whose heads an immense reward was offered; slaves were permitted to kill their masters, and sons encouraged to murder their fathers. The estates of the condemned were confiscated, and went to enrich the followers of the tyrant. Day after day, new names were added to the fatal list, till at length it amounted to four thousand seven hundred. The number of those slain however so greatly exceeded those who were proscribed, that one Roman historian declares, that more perished by the hands of Sylla than by the bloody edict of Mithridates, which we have noticed above. And this statement may be readily credited; for his emissaries spread themselves over Italy, and every where hunted to death every man who was suspected of having aided any of the party of Marius. More however were murdered for their wealth than for their party, nor did Sylla stop the proscription till he had enriched all his followers. Five towns in Italy were levelled with the ground; all the inhabitants were massacred, and their estates sold.
After these proscriptions Sylla caused himself to be appointed perpetual dictator, and procured a law which gave him an uncontrolled power over the lives and fortunes of all his fellow-citizens. Thus fell the liberties of Rome; for though on the death of Sylla, there remained the semblance of freedom in the election of the chief magistrates, yet the public assemblies were substantially under the control of one or two powerful citizens. Sylla enjoyed the dictatorship two years, and during this time completely changed the form of the constitution. In all his laws, it was his aim to deprive the people of their privileges, and to enlarge the prerogative of the senate. This body, which had been greatly diminished in number by his murders, as well as by those of Marius, he filled up from the order of knights. He took from the tribunes of the people the power of legislation and reduced their dignity to a mere name by ordering that no man who had been a tribune should be eligible to any superior office. He deprived the knights of the judicial power, which he again vested in the senate. By these and other regulations he restored the senate to its pristine power, though the august character of that body it was not a in his power to revive. At the same time, he provided for one hundred thousand of his own soldiers out of the estates of the cities and individuals which he had confiscated, and these men, owing their fortunes as they did to him, constituted his most powerful support.
Sylla having thus reached the summit of his wishes, while in the enjoyment of uncontrolled authority throughout the Roman world, suddenly laid down his power and offices, and retired into private life at Cumæ; and, strange to say, no one relative of the thousands whom he had massacred, thought of taking away his life, after he had voluntarily reduced himself to a defenceless state. In his retreat at a Cumæ, he wrote his own memoirs, and gave himself up to debauchery; a loathsome disease seized him, and worms preyed on his body even before life was extinct. On his death-bed he composed his own epitaph, importing, that no man had ever outdone him either in obliging his friends or punishing his enemies, a most correct delineation of his character. This war between Marius and Sylla, caused the death of 200 senators, of whom 33 had been consuls, and of 1,50,000 citizens. The death of Sylla is placed in the year B.C. 77.
As it now appeared evident that Rome could bear a master, the consul Lepidus, on hearing of Sylla's decease, aspired to the supreme power. His attempt however proved abortive; his colleague in the consulship after twice defeating him, constrained him to fly to Sardinia, where he died. These various feuds called into action the talents of many aspiring Roman generals, more especially of Pompey and Cæsar; the equilibrium of the Roman constitution was gone; yet, though it did not appear possible that the Roman world could remain much longer without an absolute master, forty-seven years elapsed between the abdication of Sylla and the elevation of Augustus Cæsar to the imperial dignity, which extinguished the last sparks of Roman freedom.
The first war of importance in which the Romans were engaged after the death of Sylla, was that waged against Sertorius in Spain, who was the ablest general of the party of Marius. Disgusted with the mismanagement of his colleagues in the war with Sylla, he retired to Spain, B. C. 82, where he maintained himself in a state of independence for ten years. The whole history of Rome presents to view no character more estimable or brilliant than that of Sertorius. On crossing the Pyrenees and entering Spain, he began to assemble an army, and was invited by the Lusitanians (the Portugueze) then at war with Rome, to take the command of their forces; an invitation which he joyfully accepted. He soon gained the entire confidence, not only of the Lusitanians, but of the rest of the Spaniards, who hailed him as a second Hannibal. Perfect master of the art of war, with a small band of only 8000 men, he maintained his ground against four Roman generals, whose combined forces numbered not fewer than 1,20,000 troops. He formed the senators and principal Romans with him into a senate, maintaining that this was the real Roman senate, while the body in Rome which bore that name, was but the tool of Sylla’s faction. He endeavoured to establish schools throughout the country for the education of the higher ranks, and left no means untried to improve the people. But as he refused to acknowledge the authority of Rome, then under the dominion of his enemies, it became necessary to subdue him. After all the generals of the republic who had been sent against him, had been repulsed with disgrace, Pompey, the darling of the people, a commander of deserved celebrity, was sent to conquer him, but Sertorius baffled all his efforts and repeatedly defeated his armies. At length after a noble struggle of ten years, he was assassinated by his own general Perpenna, who was prompted to this perfidy partly by jealousy, and partly by the hope of the reward which Lucullus, the colleague of Pompey, had offered to any who would murder him.
In the same year in which Sertorius was cut off, the war of the gladiators broke out in Italy. These men consisted of prisoners taken in war, who after being reduced to slavery, were trained to butcher each other in shews to furnish amusement to the Romans. Before the chance of war had reduced them to bondage, they were free and noble as the Romans themselves. A body of them at Capua disdaining their abject condition, rose upon their keepers, and determined to struggle for their freedom under the auspices of Spartacus, one of their own unhappy number. This man was another Sertorius, prudent, moderate, of great skill in war; in short a hero in the garb of a slave. The numbers of the gladiators so greatly increased, that for three years they were enabled to withstand all the efforts of Rome. Spartacus after defeating four Roman armies, found himself at the head of 40,000 troops. Being convinced however that the gladiators must eventually fall under the colossal power of Rome, he persuaded them to march through the entire length of Italy, recross the Alps which were unguarded, and regain their native seats, where they might hope for freedom and peace. But the prospect of plundering Italy, and more especially of sacking Rome, dazzled their eyes, and led them to neglect this prudent advice. Crassus the Roman general was sent against them with a powerful army; the gladiators were defeated, and 40,000 of their troops being left dead upon the field, the revolt was extinguished. Spartacus after performing prodigies of valour, fell, covered with wounds, B. C. 70.
Full trial had now been made for some time of that law of Sylla which restored the judicial power to the senate, and it was found only to have increased the evils complained of. The public administration of the empire was at this period insufferably corrupt. The great made no other use of their appointment to the government of provinces, than to fleece the people, and enrich themselves with the view of purchasing fresh offices in Rome. The unhappy victims of their oppression experienced no relief from appealing to Rome, where they found that their oppressors were the very individuals who were to take cognizance of their complaints. To such a pitch of corruption had morals risen that no one could be found bold enough to impeach a great or a rich man. Although therefore the transfer of the judicial power to the knights, who were also collectors of the revenue, had been found highly pernicious, the restoration of that power to the venal senate, which comprised in its body the highest criminals, men who had returned to Rome laden with the plunder of kingdoms, was discovered to be infinitely worse. A wise law was therefore carried by Pompey, which divided the judicial power among the three orders of senators, knights and tribunes.
We now come to the celebrated war against the pirates. They were originally of Cilicia, a maritime province of Asia Minor, lying on the northern shore of the Mediterranean. The troubles of Asia Minor, and the oppressions of the Roman governors drove them to piracy. Those who fell into their hands were taken to the isle of Delos, and sold to the agents of rich Italian citizens to be employed as cultivators; this island became therefore a great slave mart. Their ravages were at first confined to the coasts of Asia Minor, but as public attention was absorbed in civil broils, they were emboldened to extend their ravages, till at length they ventured to fit out large ships of war, and to surprize and plunder cities which they found without defence. As the Roman commanders hitherto sent against them had been defeated, they formed a kind of government in Cilicia, a coast difficult of approach by reason of rocks, and formed magazines along the coast for the deposit of their booty and arsenals for refitting their ships. Their power had now increased to such a degree, that they possessed a thousand well manned ships, the commanders of which indulged in every species of luxury. They had taken four hundred towns, and plundered thirteen of the richest temples in the world. But of all the mischiefs inflicted by them, none was felt more severely at Rome than the scarcity of provisions. Rome was almost entirely dependent upon the foreign supplies of corn brought by sea from abroad; these supplies were intercepted, and the mistress of the world was reduced to the brink of starvation by a host of pirates. The most prompt and vigorous measures were therefore necessary to suppress this confederacy. In these circumstances, Gabinius, a creature of Pompey, in the year B. C. 66, proposed to the people, to invest him with absolute power for the extirpation of these marauders. The senators and chief men, remembering the evils inflicted on Italy by Sylla after he had acquired absolute power, strenuously opposed the proposal; but their opposition was overruled by the people, with whom Pompey was a great favourite. They decreed him an army of 1,25,000 men and a fleet of 500 ships, and gave him permission to take from the treasury more than 6000 talents, more than a crore of Rupees, for the expedition. Pompey applied himself to the war with such vigour and ability, that within forty days of his leaving the shores of Italy, the entire body of pirates was suppressed throughout the Roman states. The speedy and glorious termination of this enterprise, by relieving the citizens of Rome from the pressure of famine, greatly increased his influence, and opened a way to the attainment of his great object, the conduct of the war against Mithridates, who, after the defeat of Sertorius, Spartacus, and the pirates, was the only enemy remaining to be conquered.
We must now go back for a few years to trace the progress of events in Asia since the treaty concluded between Sylla and Mithridates in the year B.C. 85. Unhappily this treaty had not been reduced to writing, which afforded Murena, the Roman general who succeeded Sylla, a pretext for attacking Mithridates a year or two after. Upon the complaints of the king, he was however obliged to desist by the express orders of Sylla, then all powerful in the city of Rome. This is usually termed the second Mithridatic war. In the year B. C. 75, Nicomedes, king of Bythinia, a country bordering on the one hand on the dominions of the republic, on the other, on the territories of Mithridates, dying, bequeathed his kingdom to the Romans. Mithridates who had long coveted the possession of this region, refused to acquiesce in its being annexed to Rome, and preparing a large fleet and army, attacked it both by land and by sea; thus arose the third Mithridatic war which raged for ten years. Lucullus, one of the consuls of the year, a good general, but extravagant in his expenses to the highest degree, contrived by means not very honourable, to obtain the conduct of this war, which promised to yield a rich harvest of gain. Though his army was greatly outnumbered by that of Mithridates, he was for a long time uniformly victorious. Mithridates had laid siege to Cyzicum, one of the most important places in Asia. Lucullus obliged him to raise the siege, with the loss of nearly 3,00,000 men. Soon after he defeated the king's fleet, and obliged him to evacuate Bythinia. Pursuing his victorious career, he chased Mithridates through his hereditary dominions, and, notwithstanding a large army which the king had drawn from the wilds of Tartary, constrained him to take refuge at the Court of his son-in-law Tigranes, king of Armenia, B. C. 71.
Tigranes, without possessing one spark of talent, was at this time the most powerful monarch in Asia. On his succeeding by inheritance to the throne of Armenia, a country of very limited extent, he conceived the idea of aggrandizing his kingdom. He had already subdued Mesopotamia, brought Arabia under obedience to his will, and extended his protection to the Syrians. These conquests were owing not so much to the vigour of his arms, as to the cowardice of those whom he subdued; the reader may therefore form some idea of the degree of weakness which then pervaded these countries, when he finds that they yielded even to Tigranes. Inflated with unbounded pride by these victories, he assumed the title of King of kings. When therefore the Roman general sent imperiously to demand that Mithridates should be delivered up, Tigranes, unaccustomed for twenty-five years to such freedom, was not a little disconcerted at the message, but putting on an appearance of calmness, he replied that he would never abandon his father-in-law, and immediately commenced his preparations for war. The Roman and Armenian armies met at Tigranocerta, the new capital which Tigranes had founded, and which he had spared no pains to enlarge and adorn. The army of Lucullus amounted only to 13,000 men; that of the enemy to 2,60,000. Lucullus was censured for his rashness in risking an engagement against such fearful odds; but he was not ignorant of the weakness and cowardice of his foe, and fully confident in the energy of his own veterans. Victory declared for the Romans; 1,00,000, of the enemy's foot, and all their cavalry perished. The defeat of the Armenians was achieved with so much ease, that the Roman soldiers were almost ashamed of having drawn their swords against such contemptible foes. The next year, B. C. 68 Lucullus gained another victory over Tigranes at Artaxata, which completed the humiliation of this vain-glorious monarch.
The tide of victory, however, soon after turned against the Romans. Lucullus, hitherto so fortunate in all his expeditions experienced a sad reverse though never overcome in the field. His troops became discontented, and mutinied repeatedly. Mithridates, ever active and vigilant, seized this favourable opportunity, and recovered almost all the territories of which Lucullus had despoiled him, without the Roman general's being able to take one efficient step to arrest his progress. Meanwhile the party adverse to Lucullus at Rome, gained strength, and procured a decree of the people for transferring the conduct of the war to Pompey, who entered upon the command of the army, B. C. 67. The year after, he defeated Mithridates by night on the banks of the Euphrates, and obliged him to fly with only 800 men. In this extremity he again sought the aid of Tigranes, but that base monarch, through fear of the Romans, not only refused him shelter, but set a price on his head. The king of Pontus thus deserted in his utmost need, though then above seventy years of age, still undaunted in spirit, determined to collect the wild highlanders from the Taurus to the Alps, and like a second Hannibal, burst upon the plains of Italy, and carry destruction to the gates of Rome. But the desertion of his son Phraates disarranged all his plans and reduced him to despair. In this state of mind, rather than fall into the hands of the Romans, he swallowed a dose of poison, which he always carried about with him, and died, B. C. 63. Such was the miserable end of Mithridates, the most formidable foe the Romans had encountered for nearly a hundred and fifty years. He was a very extraordinary man, both for greatness of spirit and endowments of mind, which is sufficiently attested by the fact that of twenty-two nations over whom he ruled in his days of his prosperity, he was said to be able to address each one in his own tongue; but all his glory was tarnished by his cruelty.
Pompey having thus subdued Mithridates, applied himself to settle the affairs of the East. Armenia Major was left to Tigranes; Cappadocia was allotted to Ariobarzanes; the Bosphorus to Pharnaces; Judea was subjugated and given to Hyrcanus; while Syria and Phenicia were formed into a province of the Roman empire; Pontus and Paphlagonia into another; and Cilicia and Pamphylia into a third. Who can restrain his astonishment at the amazing power which the republic had now attained? Seven hundred years before this period, Romulus, collecting a few banditti, erected some rude huts on the banks of the Tibur, and called his village Rome. That village had now grown into a mighty city, and swayed the destinies of mankind, and one of its generals, in this single year, disposed of kingdoms far exceeding in magnitude the whole extent of Italy.
After Pompey had completed these arrangements, he prepared to return to Italy. The senate had not forgotten how Sylla returning victorious at the close of the first Mithridatic war, had landed with his troops in Italy, and inflicted the deepest misery on Rome; they were not therefore without apprehension lest Pompey, now placed in similar circumstances, should follow the same course. But he quieted all their fears by disbanding his army on his landing. He was honoured with a splendid triumph, and brought into the treasury the sum of not less than 20,000 talents, or four crores of Rupees.
While Pompey was thus engaged in the East, the conspiracy of Cataline broke out at Rome. He was a man of noble birth, but of ruined fortunes, and of a most profligate disposition, who, with the successful example of Sylla before him, conceived the idea of making himself master of Rome by violence. Cicero, the most eloquent man in Rome, and consul for the year, discovered the designs of Cataline and his associates, on which they became desperate, and planned to murder him and to set fire to the city. Through the skilful contrivance of Cicero, Cataline was induced to quit the city and join a body of troops which he had assembled in the neighbourhood. His accomplices were taken in the city and executed, and he himself fell in an engagement with the troops sent against him.
At this period, B. C. 63, though the old forms of the Roman constitution were preserved, its spirit had departed, and all power in Rome, and hence throughout the world, was shared among a few of its leading men. Of these the most prominent at this time were five; Pompey, usually called the child of fortune, who by his constant victories, and by courting the people, had attained the first importance in the republic; Cæsar, a man of illustrious birth, the first military commander of the age, distinguished for his splendid talents and the vast compass of his genius; whose boundless ambition, “led him often to repeat that he would rather be the first man in a village, than the last man in Rome;” Crassus, who though distinguished by his success in several campaigns, was still more remarkable as the most wealthy and avaricious man of that period, and “who only considered those as rich who could maintain an army by their own private means.” Cato, who naturally stern, wished, but in vain, to bring back Rome to its former condition, in which the people and the senate, and not the will of one or two powerful men governed the state; and lastly, Cicero, the most accomplished orator and wisest statesman in that age of great men, but totally destitute of all nerve of character. These were the five individuals upon whom the eyes of all men in the Roman world were fixed, and upon whose conduct the destinies of the empire were suspended.
Cæsar, who possessed the greatest talents of the five, had been appointed to the government of Lusitania where he retrieved his ruined fortunes; for on quitting Rome, he was so deeply involved in debt as to say, that he wanted twenty lacs of Rupees to be worth nothing. On his return to Rome he obtained the consulship, and began to lay the foundation of his own power, by forming a secret league with Pompey and Crassus for the mutual support of each other's interest; this is called the first triumvirate. When matters had been thus settled between them, Cæsar was appointed for five years to the government of Gaul, which included the modern Switzerland and France, the greater part of which was then unconquered. But before he set out for his province, he and his associates leaguing with Clodius, a man of great interest in the state, but of abandoned habits, procured the removal of Cato and Cicero from the city. Cato was despatched to Cyprus to take possession of the island, and Cicero was sent into banishment. But the violence of Clodius, who filled the city with tumult, constrained Pompey to sanction the return of Cicero after he had been a year in exile. He returned to Rome, B.C. 57.
Cæsar prosecuted the war in Gaul, more than eight years, from the year B. C. 58 to 50, and did not return to Rome till he had entirely subdued that country. His campaigns have been rendered doubly interesting by the narrative which he has left us of them in his own simple and nervous style. His first engagement was with the Helvetii, the natives of modern Switzerland, whom he completely subdued; after this he continued to push his conquests through Gaul till he reached the shores of the western ocean, which no Roman general had previously visited. In the year 57 he gained a decisive victory over the Belgæ, the next year over the Aquitani, and in the succeeding year, B. C. 55, hearing that there was an island a few miles distant, he passed over to it. He found the natives living in a savage state, without the use of the plough or the knowledge of letters, but extremely bold. This island was Britain, of the existence of which the Romans had no idea before Cæsar's expedition. He simply made an irruption into it the first year; in the next, namely, in the year 54 B. C. he landed in it again with a larger force, and pushed on as far as London, but returned to Gaul, without leaving any troops to preserve the footing he had gained. In the years 54 and 53 he carried his victorious arms into Germany, which country he would probably have subdued, had not the Gauls so repeatedly revolted; and hence there remained no trace of Cæsar's expedition into Germany beyond the terror which his arms had inspired. The reader will perceive that it was Cæsar, who first carried the Roman arms into those countries which are now the chief seats of civilization, and the centre of that power which regulates the rest of the world. How are times altered! In the days of Cæsar, Italy enjoyed the highest degree of culture and civilization, and governed mankind without a rival. Gaul, Germany and Britain, were in a state of barbarism, ignorant of all arts, and destitute of literature. But in the lapse of eighteen centuries, these countries have emerged from that savage state, have given to Europe the supremacy over the other quarters of the globe, and carried arts and sciences to a degree of perfection as far exceeding the highest attainments of the Romans in Cæsar's day, as those Romans then surpassed the wild tribes of Britain and Gaul; while Rome is fallen from its high estate, and Italy is barely reckoned among the powers of secondary importance in Europe.
While Cæsar was thus engaged in Gaul he did not however neglect to keep up his interest in the city of Rome, by means of his partizans; and that interest was in no small degree strengthened by the splendour of his conquests, which completely dazzled the eyes of the citizens. Hence a degree of jealousy arose between Crassus, Pompey and him, which was however smothered for a time though not extinguished, by a meeting held at Lucca in Italy, to which place Cæsar had repaired to meet his two associates. New arrangements were there made. Cæsar was allowed to retain his government in Gaul, for a second period of five years. Pompey and Crassus were to secure the consulship for themselves; the former to have for his province, Spain and Africa; the latter, Syria, or, more properly speaking, Asia, with the view of marching against the Parthians, among whom he hoped to acquire a large accession to his wealth. Pompey and Crassus did not obtain the consulship without great opposition from Cato, who was anxious to prevent the monopoly of power in the hands of one or two overgrown citizens. Crassus soon after proceeded on his expedition against the Parthians, solely at his private expense; but after crossing the Euphrates, he was completely defeated at Carrhæ by Surena, the Parthian commander, who cut off his head, and filled it with molten lead by way of reproaching his great avarice, B. C. 53.
Pompey, who remained at Rome, governed his province through his various lieutenants. The death of Crassus removed one rival out of his way, and brought him one step nearer to the object of his ambition, which was, to be the acknowledged head of the senate and the republic. With this view he endeavoured to secure his being appointed sole consul, in which, after violent disputes of eight months' continuance, he at length succeeded. These strides to supreme power hastened his rupture with Cæsar. Pompey could not endure a rival, nor Cæsar a superior; it was not to be supposed therefore that Cæsar, the conqueror of Gaul, with a veteran army at his devotion, would allow Pompey to become the first man in the Roman world without a struggle. From this time a war between them appeared inevitable. As Pompey had on his side the greater part of the senate, and almost all the great men of Rome, he felt over-confident of success, and neglected to take those precautionary measures, which, considering that Cæsar was to be his antagonist, ought to have been his first care. Cæsar had asked permission to stand for the consulship while he was absent from Rome, which, though contrary to law, would have been granted, had not a determination existed in the senate to crush him. Instead of complying with his wishes, they ordered him to disband his troops and return to Rome as a private citizen. This would have placed him at the mercy of Pompey, and he therefore refused to comply, unless Pompey would also agree to disband his army. Repeated attempts were made to bring about an accommodation, with little sincerity and no success. Cæsar meanwhile drew his troops to Arminium, on the boundary line of Italy proper, which no Roman general could pass at the head of his army without permission from the senate. Instigated by Pompey, the senate at length passed a decree, that if Cæsar did not disband his army within a given period, he should be considered a public enemy. This put an end to all hopes of accommodation. Cæsar, on receiving the decree, crossed the little stream termed the Rubicon, and the civil war commenced.
When the news of Cæsar's approach with his army reached Rome, Pompey and the greater part of the senate, retired southward in such haste that they left all the public money behind them in the treasury, which subsequently falling into the hands of Cæsar, proved of the most essential service to him. Pompey had boasted that he had only to stamp with his foot, and an army would spring up in Italy for his defence; so far however was this from being the case, that Cæsar, in the short space of sixty days, made himself master of Italy, while Pompey with Cato and
Cicero in his train, was obliged to retreat from post to post, and at length to embark for Greece. Cæsar being fully aware that the real strength of Pompey lay in his armies then quartered in Spain, deemed the conquest of those troops a matter of more pressing importance than the pursuit of Pompey. He passed over into Spain, therefore, without delay, and, notwithstanding the natural difficulties of the country, obliged Pompey's lieutenants to give up their armies without so much as fighting a battle. From thence he passed with incredible speed through Gaul, crossed the Alps, traversed the whole length of Italy and having reached the port of Brundusium, embarked for Greece, where Pompey had assembled a large army from all the countries of the East. Though Pompey's troops far exceeded in number those of his antagonist, his councils were distracted, and Pompey himself, in this important crisis, appears to have lost that vigour of mind and action which had carried him triumphantly through so many events. Cæsar's army though small in comparison, was composed of better materials, and he himself was the soul of it. After various military manoeuvres, both armies came to a battle at Pharsalia, in the plains of Thessaly, July 20, B. C. 48. Pompey was completely defeated, and constrained to fly. With only one or two attendants, he determined to land in Egypt, where he hoped for an asylum, as he had, in the days of his prosperity, rendered great services to the royal family; but he was basely murdered by the orders of the minister, who hoped thus to gain favour with the conqueror. Pompey's body was cast out naked on the strand, where it was indebted to an old Roman soldier for the rites of sepulture. Cæsar followed him with his usual speed, but arrived in Egypt three days after the murder. When the head of his great rival was brought to him, the generous victor burst into tears. The battle of Pharsalia, though it did not extinguish the party of Pompey, decided the fate of the Roman republic, which never after recovered its freedom.
Cæsar continued six months in Egypt, partly attracted by the charms of the beautiful Cleopatra, and partly detained on account of a war in which he was engaged with her brother, who was soon after killed in battle, after which Cæsar bestowed the whole kingdom on Cleopatra. From Egypt he marched into Asia Minor, against a son of Mithridates who had revolted, but was now defeated and slain. The victory was achieved with so little trouble, that Cæsar when sending an account of the campaign to the senate, employed only three words, veni, vidi, vici, I came, I saw, I conquered. He now returned to Rome; but as the remaining chiefs of Pompey's party were assembling all their forces in Africa, he was obliged to march against them. His usual success attended him in this expedition; Cato who commanded the troops, despairing of his cause, put himself to death at Utica; and Scipio, Juba, and Petreius followed his example. Cæsar returning victorious to Rome, was allowed to enjoy but a brief repose of four months. The two sons of Pompey had collected in Spain the scattered troops of their discomfited party, and began to appear formidable. Cæsar, therefore, proceeded thither without loss of time, and a bloody but decisive battle was fought at Munda, in which one of the brothers was killed, and the army totally routed. The conqueror returned for the last time to Rome, in the year B. C. 45, absolute master of the Roman world, and was created dictator for life. All the real power of the state was concentrated in him, and had he possessed the same disposition as Sylla, he had now an opportunity of revenging himself on his enemies; but Cæsar was by nature mild and clement, and so far from persecuting any of his adversaries, manifested on every occasion in life, the utmost greatness of soul. The power he had acquired, he employed in healing the wounds which this long civil war had inflicted on Italy. His active mind led him also to project the largest schemes of public utility, of which however he lived only to accomplish one, the reformation of the calender. In the state to which Rome was now reduced, in the wreck of all her republican institutions, without any vestige of that virtue which alone could maintain the ancient spirit of the constitution, the government of a single man with the endowments of Cæsar, was the greatest of all blessings. But he had not resided at Rome a single twelvemonth before a conspiracy was formed against him by men who owed their lives to his clemency, and their fortunes to his favour; and Caesar fell under their daggers in the senate house, B. C. 44. Among the chiefs of this confederacy, were Brutus and Cassius; men whose patriotic motives we cannot but respect, while we are constrained to lament that catastrophe which removed from the world the only man capable of governing it.
On the death of Caesar affairs fell into inextricable confusion. Mark Antony, his friend, though not his equal in virtue or talent, thinking the way open to the supreme authority in the state, endeavoured to obtain possession of it; but Cicero his mortal foe, combined with the senate to set up as his opponent Octavius, the nephew of Caesar, then twenty-two years old. Antony was obliged to flee across the Alps, but contrived soon after to detach Octavius from the party of the senate, and in conjunction with Lepidus, to form a second triumvirate, similar to that which had been established by Caesar, Pompey and Crassus. In a small island, formed by a division of the stream, which flows by the city of Bologna, the three chiefs met, and formed a league for the destruction of their enemies, and the consolidation of their power. Without asking the consent of the senate or of the people of Rome, they declared themselves directors of the republic for five years, and parcelled out the various provinces of the empire among each other. They also decreed the destruction of Brutus, Cassius, and the others who had embrued their hands in the blood of Caesar, and who were desirous of restoring the ancient forms of the republic. Finally they proceeded to mark out their private enemies for destruction, and doomed to death three hundred senators, two thousand knights, and a great number of the most distinguished citizens. Cicero, the celebrated orator and statesman, and the friend of Octavius, was basely given up by him to gratify the revenge of Antony; and this ornament of literature was assassinated by the ruffians sent to hunt after him. His head was cut off, and brought to Fulvia, the abandoned wife of Antony, who, after feasting her eyes with the sight, and pricking with her bodkin that tongue which had described her profligacy in such lively colours, ordered the head to be fixed up in the rostrum of Rome, which Cicero had rendered immortal by his eloquence. The days of Sylla were renewed; and Italy again streamed with the blood of its best citizens.
The triumvirs having thus put to death all their personal enemies whom they could seize, resolved upon the pursuit of Brutus, Cassius, and their associates. These were in possession of the East, from the resources of which they maintained a large army. The son of Pompey who had escaped destruction at Munda, and made himself master of Spain, Sicily, and Sardinia, also joined their party, which was, therefore, much more powerful by sea and land, as well as by the superior talents of its generals, than that of Octavius and his associates. They embarked with their troops for Greece, and a decisive battle was fought at Philippi in Macedonia, in which the triumvirs notwithstanding their inferiority were completely victorious. Brutus and Cassius, despairing of the destiny of Rome, put themselves to death; and many other Romans, of noble birth and great reputation, disdaining to survive their chiefs, became their own executioners. The battle of Philippi was fought, B. C. 42; it was the last struggle made for the renovation of the republic of Rome.
The eleven years which elapsed between the battle of Philippi, and that of Actium, were passed in disputes between the men who now monopolized all power at Rome, of whom the most subtle, Octavius, was in the end victorious over Antony. The details of this period, are of little interest. Sextus Pompeius, the associate of Brutus, alone held out against the triumvirs. His power was on the sea; by cutting off the supplies of corn as the pirates whom his father subdued, had formerly done, and by blockading the sea coast, he reduced Rome to a state of starvation; so that Octavius and his associates were happy to conclude a peace with him. Pompey however very soon discovered that this league with the more powerful triumvirs could only end in his destruction, and therefore declared war against Octavius. Antony sent his contingent of ships, as also did Lepidus. With these united forces, Pompey was attacked on all sides at once, and being defeated, fled to Asia, where he perished.
Lepidus was anxious to take possession of Sicily, left vacant by the death of Pompey; but Octavius gained over his troops and reduced him to insignificance. Thus one of the triumvirs being removed, all power was shared between Antony and Octavius; who, it was foreseen, would soon be at issue with each other. Antony had married the sister of his colleague, the virtuous Octavia, but on his return from Asia, he landed in Egypt, was smitten with the charms of Cleopatra, and abandoned himself to unlimited indulgence in her society. At the same time he formally separated himself from Octavia, which speedily brought on a war with his offended brother-in-law. Octavius, who, while in reality he was fighting only for his own interests, had the address to make the Romans believe that he was fighting the battles of the senate and the people, to prevent the subjugation of the republic to an Egyptian queen. His fleet and that of Antony came to battle at Actium in Greece. That of Antony was the most considerable, and he might have reasonably counted on victory, but in the midst of the engagement Cleopatra took to flight with her ships. Antony followed her example, and the rout became genera. Antony fled to Egypt, was pursued by Octavius, and hearing a false report of the death of Cleopatra, fell on his own sword. The Egyptian queen tried all her blandishing arts on Octavius, hoping to subdue him as she had his uncle, and his colleague, Caesar and Antony. But finding him indifferent to her charms, and knowing that he was only anxious to exhibit her alive in his triumph at Rome, she, rather than thus degrade the last of the Ptolemies, gave herself a voluntary death; and in the 295th year after the death of Alexander the Great, Egypt was reduced to the condition of a Roman province.
In this same year, B.C. 29, and in the year 724 from the building of Rome was Octavius invested
with all the power which heretofore was entrusted to the consuls and the tribunes, when he assumed the name of Augustus Caesar. From that year to the final extinction of the Roman empire, the entire government centered in one individua, who was called Emperor. Augustus reigned in Rome fortyfour years.It was in the 29th year of the reign of Augustus Caesar, when the temple of Janus was closed a second time, and universal peace had dawned on the regions so long the theatre of the wars we have narrated; and when the greater part of the known world was enclosed within the circle of the Roman empire, that, in the fulness of time, Jesus Christ became incarnate, in the land of Judea, to atone for the sins of men by his own death, and to establish a kingdom of righteousness throughout the world. Here then we close this Brief Survey of Ancient History.
END OF PART I.