পুরাবৃত্তের সংক্ষেপ বিবরণ/প্রথম প্যুনিক যুদ্ধের আরম্ভঅবধি শেষ প্যুনিক যুদ্ধের সমাপ্তপর্যন্ত
প্রথম প্যুনিক যুদ্ধের আরম্ভঅবধি শেষ প্যুনিক যুদ্ধের
সমাপ্তপর্য্যন্ত।
কার্থাজীয় ও রোমীয় উভয়ই দিগ্বিজয়করণের আকাঙ্ক্ষী হইয়া ক্রমশঃ পরস্পর সন্নিহিত হইতে লাগিলেন। যেমন কার্থাজীয়েরা শিশিলি উপদ্বীপ জয় করিলেন তেমন রোমানেরা ইটালির দক্ষিণ দেশ জয় করিলেন। পরিশেষে রোমানেরদের রিজিয়ম নগর ও কার্থাজীয়েরদের মেসিনা নগর সম্মুখাসম্মুখি হইল মধ্যে কেবল এক অতি অপ্রশস্ত সমুদ্র খাল ব্যবধান থাকিল অতএব এইক্ষণে পৃথিবীর পশ্চিম অংশের প্রভুত্ব প্রাপণবিষয়ে এই উভয় রাজ্য পরস্পর যুদ্ধার্থে প্রস্তুত হইল। প্রথমতঃ উভয়ের পরাক্রম ও যুদ্ধসাধন দ্রব্যাদি প্রায় তুল্যই। কার্থাজীয়েরদের অতিলাভজনক বাণিজ্য ছিল এবং তাহারদের ভাণ্ডার পূর্ণ অতএব যত ইচ্ছা সিপাহীরদিগকে বেতন দিয়া রাখিতে পারিতেন এবং সমুদ্রোপরিও তাঁহারা সম্পূর্ণ প্রবল। রোম নগর স্বাভাবিক প্রবল তাহার সকল প্রজাই যােদ্ধা অত্যন্ত ভরসাতে উৎসাহী এবং সর্ব্বপ্রকার উদ্যোগ করণক্ষম।
রোমানের একাদিক্রমে কার্থাজীয়েরদের সঙ্গে তিন বার যুদ্ধ করেন ঐ যুদ্ধ সর্ব্বত্র তিন প্যুনিক যুদ্ধ বলিয়া প্রসিদ্ধ। খ্রীষ্টীয়নি শকের ২৬৪ বৎসরের পূর্ব্বে রােমানেরা ইটালিহইতে সমুদ্র পারে শিশিলিতে সৈন্য প্রেরণ করিয়া মেসিনা নগর অধিকার করেন। তাহাতে কার্থাজীয়েরা সিরাক্যুসের অধ্যক্ষ হাইরাের সহযােগে ঐ নগর বেষ্টন করেন কিন্তু রোমানেরদের কনসল তাঁহারদিগকে পরাজয় করিলেন। তৎপর বৎসরে হাইরো অনেক টাকা ঘুস খাইয়া রােমানেরদের পক্ষ হইলেন তাহাতে রোমানেরদের এমত বোধোদয় হইল যে বুঝি আমরা তাবৎ শি শিলি উপদ্বীপ জয় করিতে পারিব। হাইরাের আনুকূল্যে রোমানেরা একেবারে ঐ উপদ্বীপের মাঝখান দিয়াই গমন করিয়া ঐ উপদ্বীপের সর্ব্বাপেক্ষা সমৃদ্ধ আগ্রিজেণ্টম নগর অধিকার করিলেন। কার্থাজীয়েরা যদ্যপি স্থল পথে রােমানেরদের অপেক্ষা হীনবল তথাপি সমুদ্রের মধ্যে অতিপ্রবল তদ্দ্বারা তাহার। এমত উপকৃত হইল যে রোমানেরদেরও যুদ্ধ জাহাজ প্রস্তুতকরণ আবশ্যক হইল। জাহাজের কার্য্য রোমানেরদের বহু শত বৎসরপর্য্যন্ত অভ্যাস ছিল কিন্তু কার্থাজীয়েরদের সঙ্গে যুদ্ধকরণোপযুক্ত তাঁহারদের কোন বড় জাহাজ ছিল না। দৈবায়ত্ত কার্থাজীয়েরদের এক জাহাজ ইটালির তটের উপরে পড়িয়া ভাঙ্গিয়া গেল রােমানেরা ঐ জাহাজের নমুনাতে অতি শীঘ্র এক যুদ্ধ জাহাজের বহর প্রস্তুত করিলেন ড্যুইলিয়সকে ঐ জাহাজের অধ্যক্ষতা কর্ম্ম দিলেন। ড্যুইলিয়স জাহাজ লইয়া কার্থাজীয়েরদের সঙ্গে যুদ্ধকরণাভি প্রায়ে সমুদ্রে যাত্রা করিলেন। আশ্চর্য্য বিষয় এই যে ড্যুইলিয়স কার্থাজীয়েরদিগকে সম্পূর্ণরূপেই পরাজয় করিলেন। জয়ের মুখ্য কারণ এই যে রোমানেরা জাহাজ আকর্ষক এক প্রকার নূতন যন্ত্র প্রস্তুত করিয়া ব্যবহার করেন। তৎপর বৎসরে রোমান কনসল শার্ডিনিয়া ও কর্ষিকা উপদ্বীপে উত্তীর্ণ হইলেন এবং কিঞ্চিৎ পরেই ঐ উপদ্বীপদ্বয় আক্রান্ত হইয়া রোমানের সামাজ্য ভুক্ত হইল। যুদ্ধের অষ্টম বৎসরে রোমানেরদের যুদ্ধ জাহাজকর্ত্তৃক কার্থাজীয়েরা পুনর্ব্বার পরাভূত হন তাহাতে রোমানের রাজসভ্যেরা ঐ জাহাজের দ্বারা আফ্রিকাতে গমন করিয়া বিপক্ষেরদের নিজ দেশেই তাহারদের সঙ্গে যুদ্ধ করিতে অতিসাহসিক কল্প অবলম্বন করিলেন। এবং ঐ কালঅবধি রোমানেরদের যুদ্ধ বিষয়ে এই এক বিধি স্থির হইয়া থাকিল যে সাধ্য হইলে বিপক্ষেরদের দেশে প্রবেশপূর্ব্বক নিয়ত যুদ্ধ করা যায়।
খ্রীষ্টীয়ান শকের ২৫৬ বৎসর পূর্ব্বে উভয় কনসল ৩৩৩ জাহাজ ও ১,৪০,০০০ সৈন্য লইয়া আফ্রিকা দেশে প্রেরিত হন। এমত বৃহৎ সৈন্য রোমানেরা ইহার পূর্ব্বে কখনই সংগ্রহ করেন নাই। প্রথমতঃ জাহাজের যুদ্ধে রোমানেরা জয়ী হইয়া সসৈন্য আফ্রিকা দেশ উত্তীর্ণ হইয়া ইতস্ততঃ লুঠ পাট করিলেন। তাহাতে কার্থাজীয়েরা এমত ক্লিষ্ট হইলেন যে রোমান সেনাপতি রেগ্যুলস যখন এক দূত তাঁহারদের নিকট প্রেরণ করিয়া শান্তিকরণার্থ প্ররোচনা দিলেন তখন তাঁহারা ঐ প্রস্তাব অত্যাহ্লাদপূর্ব্বক গ্রহণ করিলেন। কিন্তু অতিগর্ব্বী ঐ কনসল তাঁহারদের নিকটে শান্তির যে নিয়ম প্রস্তাব করিলেন তাহ। এমত অপমানজনক যে কার্থাজীয়েরা এমত ভাবিলেন যদ্যপি আমারদের সম্পূর্ণরূপ দমন হইত তথাপি ইহা অপেক্ষা অপমান হইত না। এই বিবেচনায় তাঁহারা পুনর্ব্বার যুদ্ধে প্রবৃত্ত হওন কল্প শ্রেয় বোধ করিলেন। অপর তাঁহারদের এই অতিবিভ্রাট সময়ে সৌভাগ্যক্রমে স্পার্টা দেশ হইতে শাণ্টিপস এক দল বেতনভোগি সৈন্য লইয়া কার্থাজ নগরে পঁহুছিলেন তিনি যুদ্ধ বিষয়ে অত্যন্ত নিপুণহওয়াতে কার্থাজীয়েরা স্বীয় সৈন্য তাঁহার হস্তে অর্পিত করিলেন। এবং তিনি যুদ্ধ যাত্রা করিয়া রেগ্যুলসকে বিলক্ষণ রূপে পরাজয় করিলেন। রোমানেদের সৈন্যের মধ্যে দুই হাজার মাত্র রক্ষা পাইয়া আর সকল মারা পড়িল এবং রেগ্যুলস বিপক্ষের হস্তগত হইলেন। তৎপর বৎসর অর্থাৎ যুদ্ধের নবম বৎসরে ঐ অবশিষ্ট রোমান সৈন্যেরদিগকে স্বদেশে ফিরিয়া আনিতে জাহাজ প্রেরিত হয় এবং যদ্যপি তাঁহারা সমুদ্রোপরি কার্থাজীয়েরদিগকে সম্পূর্ণ জয় করেন তথাপি এক বৃহৎ ঝটকাতে তাবৎ জাহাজ মারা পড়িল। তৎপরে অপর এক যুদ্ধজাহাজ বহরের তদ্রূপ দুর্দশা হওয়াতে কিয়ৎকালের নিমিত্ত রোমানেরা যুদ্ধজাহাজের বিষয়হইতে ক্ষান্ত হইলেন কিন্তু যুদ্ধের চতুর্দ্দশ বৎসরে রোমানেরা জলপথে ও স্থল পথে এমত প্রাবল্য রূপে যুদ্ধের উদ্যোগ করিলেন যে কার্থাজীয়েরা ক্ষতিগ্রস্ত প্রযুক্ত ভগ্নোদ্যম হইয়া ছয় বৎসরঅবধি যে রেগ্যুলস তাঁহারদের নিকটে কয়েদ ছিলেন তাঁহার সঙ্গে আপনারদের কএক জন দূত রােম নগরে প্রেরণ করিয়া শান্তির সূচনা করিলেন। কিন্তু রেগ্যুলস রাজসভ্যেরদিগকে শান্তিকরণ বিষয়ে পরাঙ্মুখ করতে পুনর্ব্বার যুদ্ধ আরম্ভ হইল। যুদ্ধের অষ্টাদশ বৎসরে কার্থাজীয়েরা শিশিলি উপদ্বীপে আপনারদের জাহাজ ও সৈন্যের অধ্যক্ষতা কার্য্যে হামিল্কার বার্কাকে নিযুক্ত করিয়া পাঠাইলেন। তিনি স্বীয় আশ্চর্য্য নৈপুণ্যপ্রযুক্ত তিন বৎসর ব্যপিয়া রোমানেরদের তাবৎ উদ্যোগ নিষ্ফল করিলেন এবং অত্যন্ত বিঘ্ন হইলেও যুদ্ধকুশল ব্যক্তি কিপর্য্যন্ত না করিতে পারেন ইহা রোমানেরদিগকে স্পষ্ট দর্শন করাইলেন। পরে যুদ্ধ জাহাজ না থাকিলে শিশিলি উপদ্বীপ জয়করণ অসাধ্য ইহা রােমানেরা দেখিয়া পুনর্ব্বার জাহাজ প্রস্তুত করিতে নিশ্চয় করিলেন। তৎসময়ে তাঁহারদের ভাণ্ডার শূন্য অতএব ভিন্ন২ ব্যক্তিরা নিজ খরচে দুই শত জাহাজ নির্ম্মাণ করিলেন তদ্দ্বারা রোমানেরা কার্থাজ ও শিশিলি এই উভয়ের মধ্যে কার্থাজীয়েরদের যাতায়াতের পথ অবরুদ্ধ করিলেন। পরিশেষে যখন চব্বিশ বৎসরব্যাপক এই যুদ্ধের দ্বারা উভয় দেশীয় লােকেরা শ্রান্ত হইল তখন সন্ধি করা গেল সেও কার্থাজীয়েরদের পক্ষে অশুভাবহ যেহেতুক তাহার নিয়ম এই যে তাহারা শিশিলি ও তন্নিকটবর্ত্তি ক্ষুদ্র২ উপদ্বীপ ত্যাগ করিবেন এবং যুদ্ধের খরচ বলিয়া রোমানেরদিগকে দশ বৎসরে দশ কিস্তিতে ৪০ লক্ষ টাকা দিবেন এবং সিরাক্যুসের রাজা হাইরাের প্রতি যুদ্ধ না করিতে অঙ্গীকার করিবেন। এতদ্রূপে খ্রীষ্টীয়ান শকের ২৪০ বৎসর পূর্ব্বে রােমানেরা তাঁহারদের পক্ষে অত্যাবশ্যক শিশিলি ও শার্ডিনিয়া ও কর্ষিকা এই তিন উপদ্বীপ এবং যুদ্ধজাহাজের অতিপ্রবল বহর ও সমুদ্রের উপরে প্রভুত্ব প্রাপ্ত হইয়া নূতন দেশ অধিকারকরণার্থ উৎসুক হইলেন।
কার্থাজীয়েরদের সঙ্গে রোমানেরদের বাইশ বৎসর পর্য্যন্ত শান্তি থাকে। তৎসময়ে রোমানেরা অন্য দুই যুদ্ধে প্রবর্ত্ত হইলেন বিশেষতঃ গ্রীকদেশের উত্তর সীমাস্থ ইলিরিয়া দেশে এক যুদ্ধ এবং শিশাল্পিন গলে অপর যুদ্ধ হয়। কিন্তু এই যুদ্ধদ্বয়ের বিবরণ বর্ণনের পূর্ব্বেই কথয়িতব্য যে খ্রীষ্টীয়ান শকের ২৩৪ বৎসর পূর্ব্বে রোমানেরা যুদ্ধবিহীন থাকাতে জানসের দেবালয় বন্দ করা গেল। এই দেবালয়ের বিষয়ে ন্যুমা রাজা আজ্ঞা করিয়াছিলেন যে যুদ্ধ সময়ে তাহা মুক্ত থাকিবে কেবল শান্তি সময়ে রুদ্ধ করা যাইবে। ন্যুমার সময়অবধি যে ৪৫০ বৎসর অতীত হয় তৎসময় ব্যাপিয়া যুদ্ধবিনা রোমানেরদের এক বৎসরও গত হইল না। অতএব ঐ দেবালয়ের পত্তনঅবধি তাহার এই প্রথম রুদ্ধকরণ রোমানেরদের ইতিহাসের মধ্যে এক প্রধান স্মরণীয় বিষয় হইল।
ইলিরিয়ার যুদ্ধ এতদ্রূপে ঘটে। ট্যুটা নাম্নী তদ্দেশীয়া রাণী আড্রিয়াটিক সমুদ্রে স্বীয় প্রজারদিগকে বোম্বেটিয়াগিরিতে প্রবোধ দেন তাহাতে ইটালিদেশের বণিকেরদের অত্যন্ত ক্ষতি হইতে লাগিল। রােমীয় রাজসভ্যেরা এই ব্যাপার নিবারণ করিতে তাঁহার নিকটে দূত প্রেরণ করিলেন কিন্তু তিনি অত্যন্ত গর্ব্বপূর্ব্বক দূতেরদিগকে গ্রহণ করিয়া প্রত্যাগমন সময়ে কোন কৌশলক্রমে তাহারদিগকে হত করাইলেন। এই বিশ্বাসঘাতকতা ব্যাপারের প্রতিফল দেওনার্থ উভয় কনসল সৈন্য ও জাহাজ লইয়া যুদ্ধ যাত্রাতে প্রবর্ত্ত হইলেন। রোমানের সৈন্যেরা গ্রীক দেশে যে প্রবিষ্ট হয় এবং ইটালির পূর্ব্বসীমা বহির্গত হইয়া যে যুদ্ধ করেন সে প্রথম এই। এবং তাঁহারা যেমন নিয়ত কৃতকার্য্য হইয়া থাকিতেন তদ্রূপ এই স্থলেও হইলেন অর্থাৎ দুই বৎসরের মধ্যে ঐ সকল বোম্বেটিয়ারা একেবারে সমুদ্রহইতে উচ্ছিন্নীকৃত হইল এবং রোমানেরদের হস্তে ঐ রাণীর স্বীয় অধিকারের প্রায় তাবৎ অর্পণ করিতে হইল এবং যে অল্প ভূমি তাঁহার হস্তে থাকিল তাহার নিমিত্তেও বার্ষিক কর দিতে হইল। এই যুদ্ধ খ্রীষ্টীয়ান শকের ২২৭ বৎসর পূর্ব্বে সম্পন্ন হয়। ফলত ঐ যুদ্ধ যদ্যপি তাদৃশ গুরুতর ছিল না তথাপি তাহাতে এই মহাফলোদয় হইল যে তদ্দ্বারা গ্রীকদেশীয় ও রােমীয়েরদের সঙ্গে প্রথম সম্পর্ক জন্মে।
ইলিরিয়ার যুদ্ধ সমাপ্ত হইবা মাত্র পো নদীর উভয় পার্শ্বস্থ অতিসমৃদ্ধ মাঠস্থিত এবং লিগুড়িয়া পর্ব্বতস্থ গলের। অল্প পর্ব্বতের পারে রোন নদীর তীরস্থ তাঁহারদের সজাতীয়েরদের সঙ্গে যোগ করিয়া যুদ্ধ আরম্ভ করিলেন এবং খ্রীষ্টীয়ান শকের ২২৬ অবধি ২২০ সালপর্য্যন্ত ছয় বৎসর ব্যাপিয়া তুমুল সংগ্রাম থাকে। কথিত আছে যে রোমানেরা ইটালির সর্ব্বপ্রদেশহইতে সাত লক্ষ সৈন্য সংগ্রহ করিয়া যুদ্ধ অরিম্ভ করেন ইহাতেই বােধ হয় যে রোমানেরদের ঐ শত্রুরদের প্রতি কিপর্য্যন্ত ভয় না ছিল। অপর গলেরা ইত্রুরিয়াদেশের প্রতি ধাবমান হইয়া রােম নগরঅবধি তিন মঞ্জিল অন্তরে ক্লুজিয়ম স্থানপর্য্যন্ত আগমন করিলেন। কিন্তু যদ্যপি গলেরদের অসমসাহস ছিল তথাপি রোমীয় কনসলকর্ত্তৃক তাঁহারা বিলক্ষণ পরাভূত হইলেন। তাঁহারদের চল্লিশ হাজার সৈন্য মারা পড়িল এবং দশ সহস্র ধৃত হইল। তদনন্তর রোমানেরা শিশাল্পিন গলেরদিগকে সম্পূর্ণরূপে দমন করিতে নিশ্চয় করিয়া সৈন্যসুদ্ধ উভয় কনসলেরদিগকে পাে নদীর পারে প্রেরণ করেন। গলেরা রোমানেরদের এতদ্রূপ দৃঢ় প্রতিজ্ঞা দেখিয়া চূড়ান্ত যুদ্ধের নিমিত্ত আপনারদের তাবৎ সৈন্য সংগ্রহ করিতে ত্রুটি করিলেন না। তাঁহারদের সৈন্য সংখ্যা রােমান সৈন্য অপেক্ষা অধিক তথাপি রোমা নেরা পুনর্ব্বার জয়ী হইলেন। তৎপর বৎসরে খ্রীষ্টীয়ান শকের ২২২ বৎসর পূর্ব্বে গলেরা তদপেক্ষা অধিক সংখ্যক অর্থাৎ নব্বই হাজার সৈন্য সংগ্রহ করিয়া মার্সেলস কনসলের মুষ্টিমিত সৈন্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করিয়া উভয় সৈন্য যুদ্ধে প্রবর্ত্তহওনার্থ প্রস্তুত হইতেই গলেরদের সেনাপতি রোমানেরদের সৈন্যাধ্যক্ষকে একাকী যুদ্ধ করিতে আহ্বান করিলেন এবং তিনি তাহা স্বীকার করিলেন কিন্তু রোমান কনসলের শৌর্য্যের দ্বারা গল হত হইলেন তাহাতে গলের সৈন্যেরা ভগ্নোদ্যম হইয়া পলায়ন পর হওয়াতে রণ স্থল রোমানেরদের আয়ত্ত হইল স্বীয় স্বাধীনত্ব বিষয়ে শিশাল্পিন গলেরা রোমানেরদের সঙ্গে যে শেষ যুদ্ধ করেন সে এই। তৎপরে গলেরদের প্রদেশ অধিকৃত হইয়া রোমানেরদের রাজ্যভুক্ত হইল এবং জয়ি রোমানেরদের প্রভুত্ব আল্প পর্ব্বতঅবধি দক্ষিণে ইয়ােনিয়া সমুদ্রপর্য্যন্ত বিস্তৃত হইল।
তৎপর বৎসরে ইলিরিয়াতে দ্বিতীয়বার যুদ্ধ ঘটে কিন্তু এই অতিসংক্ষিপ্ত বিবরণে তাহা ক্ষুদ্র বোধে অর্পণ করা অনাবশ্যক। তদপেক্ষা গুরুতর বিষয় এই যে পো নদীর পারে পরাভূত গলেরদের প্রদেশে রােমানের প্লাসেন্সিয়া ও ক্রিমেনা নামে দুই কলোনি স্থাপন করেন। ইহাতে তদ্দেশীয়েরা অত্যন্ত উৎকণ্ঠিত হইয়া হানিবালকে ইটালি দেশে আগমন করিতে আহ্বান করিলেন। এই বৃহদ্ব্যাপারে এই ক্ষণে দৃষ্টিপাত করা যাউক।
কার্থাজীয়েরদের সঙ্গে সন্ধিক্রমে অতিসমৃদ্ধ শিশিলি উপদ্বীপ তাঁহারদের হাত ছাড়া হইয়াছিল সেই সন্ধিঅবধি এইক্ষণে বাইশ বৎসর অতীত হইয়াছিল। ঐ উপদ্বীপ হরণরূপ মহাক্ষতি পূরণার্থ এবং রোমানেরদিগকে বার্ষিক যে ভারি কর দিতে হইল তাহা যােগাইবার নিমিত্ত কার্থাজীয়েরা আপনারদের অত্যন্ত ঈর্ষান্বিত প্রতিযােগি রোমানেরদের দৃষ্টির অগোচরে স্পাইন দেশ অধিকার করিতে উদ্যুক্ত হইলেন। তাঁহারদের সৈন্যাধ্যক্ষতা কর্ম্মে আসদ্রুবাল নিযুক্ত হইলেন তিনি কার্থাজীয়েরদের মহা২ সেনাপতিরদের মধ্যে এক জন অগ্রগণ্য। অতিশীঘ্র তিনি ইব্রো নদীর দক্ষিণে প্রায় তাবৎ স্পাইন দেশ অধিকার করিলেন। তৎপরে সৈন্যাধ্যক্ষতা কার্য্য হামিল্কারের পুত্র হানিবালকে দেওয়া গেল তৎসময়ে তাঁহার বয়ঃক্রম পঁচিশ বৎসর। তিনি তৎকালীন যোদ্ধারদের চূড়ামণি এবং খ্রীষ্টীয়ান শকের পূর্ব্বে সেকন্দরশাহ ও কাইসরব্যতিরেকে তাঁহার সঙ্গে অন্য কোন সেনাপতির তুলনা করা যায় না। যুদ্ধে সাহস ও নৈপুণ্য বিষয়ে যেমন তিনি অন্যাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ তদ্রূপ অন্যান্য লোক অপেক্ষাও রোমানেরদের অধিক ঘৃণা করিতেন। কারণ রোমানেরদের কর্ত্তৃক তাঁহার অতিপ্রিয় জন্ম স্থান কার্থাজ নগর নতমস্তক হইয়াছিল।
এই যুদ্ধ সামান্যতঃ দ্বিতীয় প্যুনিক যুদ্ধ নামে বিখ্যাত। তাহা খ্রীষ্টীয়ান শকের ২১৮ সালে আরম্ভ হইয়া ২০১ সালপর্য্যন্ত ব্যাপিয়া থাকে। তাহার কারণ ইব্রো নদীর দক্ষিণে রােমানেরদের সঙ্গে সন্ধিবন্ধ সাগন্টম নগর বেষ্টন করণ। নগরস্থেরা হানিবালকর্ত্তৃক বেষ্টিত হইলে রোমানেরদের সাহায্য প্রার্থনা করিলেন এবং ঐ নগর বেষ্টন রহিত করিতে ঐ যুব বীরকে আজ্ঞা দেওনার্থ রোমহইতে রাজদূত প্রেরিত হইলে হানিবাল তৎক্ষণাৎ তাহা অস্বীকার করিলেন। দূতেরা অগৌণে কার্থাজ নগরে গমনপূর্ব্বক আক্রামক হানিবালকে রােমানেরদের হস্তে অর্পণ করিতে দাওয়া করিল। পূর্ব্বেই বোধ হইতে পারিত যে এই দাওয়া তাহারা তুচ্ছ করিয়া স্বীকার করিবেন না এবং তাহাই হইল। ইতিমধ্যে হানিবাল ঐ নগরের উপরে অতিশক্তরূপে আক্রমণ করিতে লাগিলেন এবং নগরস্থেরা সাহায্য প্রাপণে হতাশ হইয়া আট মাসের পর তাঁহাকে নগর অর্পণ করিলেন। এতদ্রূপে ঐ নগর অধিকৃত হইলে কিয়ৎকালপর্য্যন্ত স্পাইন দেশে রোমানেরদের পরাক্রম লুপ্ত হইল। অপর রোমানের রাজ সভ্যেরা আগমনশীল যুদ্ধের নিমিত্ত সসজ্জ হইতে লাগিলেন কিন্তু ইহার পূর্ব্বে যত শত্রুর সঙ্গে তাঁহারা যুদ্ধ করিয়ছিলেন এইক্ষণে তদপেক্ষা অধিক পরাক্রান্ত শত্রুর সঙ্গে যুদ্ধ করিতে হইল। হানিবাল এই এক মহাকল্প করিয়াছিলেন যে আল্প পর্ব্বত উত্তীর্ণ হইয়া একেবারে ইটালি দেশের নাভিপর্য্যন্ত গমনপূর্ব্বক যুদ্ধ করেন এবং পূর্ব্বকালীন যােদ্ধারা যে কোন মহাব্যাপারের সঙ্কল্প বা তাহা সম্পন্ন করিয়াছিলেন সর্ব্বাপেক্ষা এই কল্প সাহসে গুরুতর ইহা সকলই স্বীকার করেন। এবং অস্মদাদির গোচর সময়ে নেপোলিয়ন এতদনুরূপ যে মহাব্যাপার করিয়াছিলেন তাহাতে তিনি চিরস্মরণীয় হইয়াছেন। যে সময়ে রোমানেরা বােধ করিয়াছিলেন যে হানিবাল অদ্যাপি স্পাইন দেশে আছেন তৎসময়ে তিনি আশ্ত ইব্রো নদীর উত্তরদিকস্থ প্রদেশ আয়ত্ত করিয়া পিরেনিস পর্ব্বত উত্তীর্ণ হইয়া গল অর্থাৎ ফ্রান্সের দক্ষিণাংশে প্রবেশ পূর্ব্বক আল্পের অভিমুখে যাত্রা করিয়া রোন নদী পার হইলেন। অপর যে কনসল ইটালি দেশান্তঃপাতি পিসা স্থানহইতে জাহাজ আরোহণে যাত্রা করিয়াছিলেন তিনি মার্সেল্স নগরে পঁহুছিয়া শুনিলেন যে হানিবাল তাঁহার লাগাইলের বাহির হইয়াছে। অতএব অতিশীঘ্র ইটালি দেশে প্রত্যাগমন করিয়া পঁহুছিবামাত্র শুনিলেন যে তাঁহার বিপক্ষ হানিবাল আল্প পর্ব্বত উত্তীর্ণ হইয়া ইটালির মাঠে পঁহুছিয়াছে।
হানিবাল রোন নদীহইতে নিষ্কণ্টকে ফুঙ্গি দেশের ঈশান কোনস্থ প্রদেশ দিয়া যাত্রা করিলেন কিন্তু বরফ আচ্ছাদিত আল্প পর্ব্বত উডীর্ণহইতে তাঁহার অনেক সৈন্য ও হস্ত্যাদি বিনষ্ট হইল। পরিশেষে এই ক্ষণে লম্বার্ডি নামে বিখ্যাত তৎকালে শিশাল্পিন গল নামধারী অতিউর্ব্বর মাঠ যে স্থান হইতে দৃষ্ট হইল এমত পর্ব্বতের শৃঙ্গোপরি পঁহুছিয়া তিনি আপনার সৈন্যেরদিগকে তাহ দর্শাইয়া কহিলেন যে তোমারদের পরিশ্রমের পুরস্কারস্বরূপ এই পুরোবর্ত্তি দেশ দেখ। অপর পর্ব্বতহইতে নামিয়া টিচি নস নদীর তীরে রোমান সৈন্যেরদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করিয়া সম্পূর্ণরূপেই তাহারদিগকে পরাভূত করিলেন। সেই বৎসরেও ত্রেবিয়া স্থানে উভয় কনসলের সৈন্যের সঙ্গে যুদ্ধ হওয়াতে পূর্ব্ববৎ তিনি কৃতকার্য্য হইলেন। ইহা শুনিয়া রোমান রাজসভ্যেরা ভয়ে কম্পিতকলেবর হইলেন। এক শত বৎসর অবধি তাঁহারদের সৈন্যেরা কখন এমত দুরবস্থ হয় নাই। এই দুই যুদ্ধে হানিবাল জয়ী হইলে পো নদীর উত্তর দিক্স্থ যে গলেরা রোমানেরদের যোয়াল অত্যন্ত অসহ্য বোধ করিতেন তাঁহারা তাঁহার পক্ষ হইলেন। তৎপর বৎসরে তিনি পঙ্কিল ভূমি উত্তীর্ণ হইয়া ইত্রুরিয়া দেশে প্রবেশপূর্ব্বক চতুর্দ্দিকস্থ ভূমি লুঠপাট করিলেন। ঐ পঙ্কিল ভূমির দ্বারা অতিদুর্গম যাত্রাতে তাঁহার এক চক্ষুর হানি হয়। অপর রোমানের রাজসভ্যেরা এক মহাদল সৈন্য সংগ্রহ করিয়া কার্থাজীয় সেনাপতিকে নিবারণার্থ প্রেরণ করিলেন কিন্তু হানিবাল থ্রাসিমেনে হ্রদের নিকটে রোমানেরদের ঐ বৃহদ্দল সৈন্যের সঙ্গে যুদ্ধ করিয়া পুনর্ব্বার তঁহারদিগকে পরাজিত করিলেন। পূর্ব্ব বৎসরীয় দুই যুদ্ধেতে রোমানেরদের যত লোক মারা পড়ে এই তৃতীয়বার যুদ্ধেতে ততোধিক সৈন্য বিনষ্ট হইল।
অপর হানিবালের নিবারণার্থ রোমীয় রাজসভ্যেরদের আর কোন সৈন্য না থাকাতে তিনি সর্ব্বত্র কর লইতে২ অবাধে ইটালির দক্ষিণে আপ্যুলিয়াপর্য্যন্ত গমন করিলেন। যুদ্ধের তৃতীয় বৎসরে পূর্ব্বাপেক্ষা অধিক সংখ্যক সৈন্য লইয়া রােমান কনসল আদ্রিয়াটিক সমুদ্রের তীরে কানে স্থানে হানিবালের সঙ্গে যুদ্ধ করিলেন কিন্তু হানিবাল চতুর্থবারও জয়ী হইলেন। পুরাবৃত্ত বিবরণের মধ্যে যে যুদ্ধ অতিস্মরণীয় তন্মধ্যে এই মহাযুদ্ধ প্রকৃতরূপেই গণিত আছে কিন্তু এই অপূর্ব্ব বিপদ সময়ে রােমান রাজসভ্যেরা যে মহানুভবতা ও ধৈর্য্য প্রকাশ করিলেন তাহা যুদ্ধাপেক্ষাও স্মরণীয়। রোম নগরের রক্ষা পাওন বিষয়ে ক্ষণমাত্রও তাঁহারা ভগ্নোৎসাহ হন নাই এবং হানিবালের সঙ্গে সন্ধিকরণার্থ কখন স্বপ্নেও চিন্তিত ছিলেন না। যদ্যপি কানের যুদ্ধেতে রোমানেরদের কুলীন ও যোদ্ধার শ্রেষ্ঠাংশ এবং এক জন কনসল মারা পড়িয়াছিলেন তথাপি রাজসভ্যেরা নূতন সৈন্য সংগ্রহ করণেতে এমত যত্নবান হইলেন যে বার মাস অতীত না হইতেই আরাে আশী হাজার সৈন্য রণ স্থলে প্রস্তুত হইল। এই নূতন সৈন্যের অধ্যক্ষতার ভার ফাবিয়সকে দেওয়া গেল। তিনি নিয়ত হানিবালের সঙ্গে প্রকৃত যুদ্ধ না করিয়া নানা কৌশলক্রমে তাঁহাকে কিঞ্চিৎ থামিয়া রাখিলেন তথাপি ইটালির দক্ষিণদিগস্থ লোকেরদের তাঁহার সঙ্গে ঐক্যহওন নিবারণ করিতে পারিলেন না। এই অতিবিখ্যাত কানের যুদ্ধের পর আট বৎসর ব্যাপিয়া হানিবাল বারম্বার জয়ী হইলেন কিন্তু তৎযুদ্ধের তুল্য যুদ্ধ কোনবারেই হয় নাই এবং যদ্যপি তিনি ইটালি দেশে তিষ্ঠিতে ক্ষম হই লেন তথাপি নূতন সৈন্যের অভাবে কোন নূতন উদ্যোগ করিতে পারিলেন না।
ইতিমধ্যে শিরাক্যুস নগর কার্থাজীয়েদের সপক্ষহওয়াতে রােমান সেনাপতি মার্সেলস অতিদৃঢ়রূপে তাহা বেষ্টন করিলেন। কিন্তু প্রাচীনকালীন ন্যুটনের তুল্য আর্কিমেডিসের আশ্চর্য্য নৈপুণ্যপ্রযুক্ত দুই বৎসরপর্য্যন্ত তাঁহার তাবৎ উদ্যোগ নিষ্ফল হইল পরিশেষে ঐ নগর রোমানেরদের হস্তগত হয় এবং এক জন সিপাহী আর্কিমেডিসের গুণ বা নামপর্য্যন্ত অজ্ঞাত হইয়া তাঁহাকে হত করেন। ইহার সমকালীন রোমানেরা স্পাইন দেশের কার্য্যের ভার সিপিয়োনামক দুই জন সেনাপতির প্রতি অর্পণ করিলে তাঁহারা তদ্বিষয়ে কৃতকার্য্য হইলেন বিশেষতঃ খ্রীষ্টীয়ান শকের পূর্ব্বে ২১৬। ১৫ সালে তাঁহারা কার্থাজীয়েরদিগকে দুইবার জয় করেন কিন্তু শেষে অন্যের কুমন্ত্রণার দ্বারা তাঁহারা হত হইলেন। তৎপরে যুবা পব্লিয়স সিপিয়োর প্রতি সৈন্যাধ্যক্ষতার কার্য্য অর্পিত হইল। তিনি একেবারে তাবদ্বিষয়ের রূপান্তর করিয়া রোমানেরদের পুনর্ব্বার সাহস জন্মাইলেন।
কার্থাজীয়েরা হানিবালের সাহায্যার্থে সৈন্যেরদিগকে ইটালি দেশে প্রেরণ করিতে নিতান্ত নিশ্চয় করিয়া ছিলেন কিন্তু তাঁহারদের ঐ কল্প নিয়তই বিফল হইল। পরিশেষে যুদ্ধের দ্বাদশ বৎসরে আসদ্রুবাল মহাসৈন্য লইয়া স্পাইনহইতে প্রস্থান করিয়া পূর্ব্বে হানিবাল যে পথ দিয়া গমন করিয়াছিলেন ঐ পথ দিয়া আল্প পর্ব্বতীয়েরদের অনুকূলে ঐ পর্ব্বত উত্তীর্ণ হইয়া ইটালি দেশে পঁহুছিয়া স্বীয় অগমনের সম্বাদ হানিবালের নিকটে প্রেরণ করিলেন কিন্তু তাঁহার দূত রোমান কনসলের হস্তে পতিত হইল। আসদ্রুবাল স্বীয় ভ্রাতা হানিবালের নিকটে না পঁহুছিতেই রোমান কনসল তাঁহার উপর আক্রমণ করিতে অবধারণ করিলেন। অপর মিটারস নদীর তীরে উভয় পক্ষের সৈন্যের সঙ্গে যুদ্ধ হয় তাহাতে রোমানের সম্পূর্ণরূপ জয়ী হইলেন। আসদ্রুবাল সেনাপতির উচিত কার্য্যের কিছুমাত্র ত্রুটি না করিয়া স্বীয় সৈন্যেরা পরাজিত হইলে আপনার জীবনে অনাস্থা করিয়া রােমানেরদের শ্রেণীর উপরে ধাবমান হইয়া মারা পড়িলেন। রোম নগরস্থেরা যখন ইটালিদেশে আসদ্রুবালের আগমন বার্ত্তা শুনিলেন তখনি এমত কম্পিতকলেবর হইলেন যে তাঁহারা তাবৎ বাণিজ্যের বন্দোবস্ত করণ এবং ক্রয় বিক্রয়করণ ও কর্জ দেওন ও কর্জ পরিশোধকরণ ইত্যাদি বিষয় সকল স্থগিত রাখিলেন। কিন্তু উক্ত জয় হওয়াতে তাবৎ নগরের রূপান্তর হইয়া লেনাদেনা কার্যয় পুনর্ব্বার আরম্ভ হইল। রোমান কনসল আসদ্রুবালকে পরাভূত করিয়া তাঁহার মস্তকচ্ছেদন করিলেন এবং হানিবালের প্রতিকূলে অতিশীঘ্র ধাবমান হইয়া যুদ্ধেধৃত দুই জনের দ্বারা তাঁহার নিকটে আপনার জয়ের সম্বাদ পাঠাইলেন এবং ভ্রাতার ছিন্ন মস্তক তাঁহার শিবিরের মধ্যে নিক্ষেপ করিলেন। মহা হানিবাল তাঁহার জন্মভূমি ও নিজ পরিবারের এই অতি অমাঙ্গলিক ব্যাপার শ্রবণ করিয়া কহিলেন যে নিয়তই কার্থাজের এই দুর্দ্দশা হইতেছে। তৎক্ষণাৎ তিনি শিবির সেই স্থানহইতে উঠাইলেন এবং ইটালির অন্যান্য ভাগ ত্যাগ করিতে হওয়াপ্রযুক্ত দেশের দক্ষিণ কোণে ব্রটিয়ম স্থানে গমন করিলেন এবং নিঃসহায় হইলেও চারিবৎরপর্য্যন্ত রােমানেরদের নিয়ত আক্রমণ নিবারণ করিয়া সেই স্থানে টেঁকিয়া থাকিলেন।
আসদ্রুবল স্পাইনহইতে পূর্ব্বোক্তমতে প্রত্যগিত হইলে যুবা সিপিয়াে তাবৎ দেশ আয়ত্ত করিলেন এবং হানিবাল যেমন ইটালি দেশের উপর আক্রমণ করিয়াছিলেন তদ্রূপ তিনি আফ্রিকাদেশের প্রতি আক্রমণার্থ নিশ্চয় করিয়া আফ্রিকা দেশস্থ ন্যুমিডিয়ার রাজা সেফাক্সের সঙ্গে সন্ধি করিলেন কিন্তু কিঞ্চিৎ পরে ঐ রাজা পরমসুন্দরী স্বীয় ভার্য্যা সােফোনিস্বার উদ্যেগে কার্থাজীয়েরদের সঙ্গে মিলিল। তাহাতে সিপিয়ো মাসিনিশানামক অপর এক রাজার সঙ্গে সন্ধি করিয়া যুদ্ধের পঞ্চদশ বৎসরে সসৈন্য আফ্রিকাতে উত্তীর্ণ হইয়া কার্থাজীয়েরদিগকে দুই বার পরাভূত করিলেন এবং নগরও বেষ্টন করিতে প্রস্তুত হইলেন তাহাতে কার্থাজীয় রাজসভ্যেরদের স্বীয় দেশ রক্ষা করিবার নিমিত্ত হানিবলকে ইটালি দেশহইতে আনয়ন করাইতে হইল। ইটালি দেশ ত্যাগকরণ সময়ে হানিবালের অনেক অশ্রুপাত হইল এবং জাহাজ যেমন ক্রমশঃ কিনারা ছাড়িয়া যাইতে লাগিল তেমনি অত্যন্ত খেদার্ণবে মগ্ন হইয়া তটের দিগে দৃষ্টি করিতে লাগিলেন। অপর যখন রােম নগরে এমত সম্বাদ পঁহুছিল যে রােমীয়েরদের এই অপূর্ব্ব শত্রু ইটালি দেশ ছাড়া হইয়াছে তখন তাঁহারদের আনন্দের সীমা থাকিল না এবং রাজসভ্যেরা তন্নিমিত্ত পাঁচ দিন ব্যাপিয়া দেবতারদের স্তুতিপাঠ করিতে আজ্ঞা দিলেন। হানিবাল আফ্রিকা দেশে পঁহুছিলে যে যুদ্ধে তাঁহার জন্মভূমির চূড়ান্ত মঙ্গল বা অমঙ্গল ঘটিবে এমত যুদ্ধের উদ্যোগী হইলেন। পরে তৎকালীন সর্ব্বাপেক্ষা মহাসেনাপতিদ্বয় সিপিয়াে এব৭ হানিবালের সসৈন্যে জামা স্থানে সাক্ষাৎ হইয়া অতিসাংঘাতিক এক যুদ্ধ হয় তাহাতে হানিবাল জন্মিয়অবধি প্রথম পরাজিত হন তৎকালে তাঁহার পয়তাল্লিশ বৎসর বয়ঃক্রম। যুদ্ধের রীতি বিষয়ে বিজ্ঞ ব্যক্তিরা বিবেচনা করেন যে ঐ যুদ্ধে বিজ্ঞতম যােদ্ধার যাহা২ কর্ত্তব্য সে সকলই তিনি করিলেন কিন্তু বিফল হইল। অপর এই দুরবস্থা সময়ে তিনি স্বদেশের হিত পরামর্শ দেওনার্থ স্বদেশীয় রাজসভাতে আহূত হইলে কহিলেন যে এইক্ষণে শান্তি ব্যতিরেকে অন্য উপায় দেখি না। মহাযোদ্ধা হানিবাল যখন এমত পরামর্শ দিলেন তখন তদ্বিষয়ে আর কোন কথাই থাকিল না। তাহাতে খ্রীষ্টীয়ান শকের পূর্ব্ব ২০১ সালে সন্ধি হয় তাহা যৎপরোনাস্তি কার্থাজীয়েরদের অপমানজনক বিশেষতঃ আফ্রিকা দেশে যত প্রদেশ তাঁহার। জয়পূর্ব্বক অধিকার করিয়াছিলেন সে সকল ছাড়ি য়া দিতে এবং দশখান ব্যতিরেকে তাঁহারদের সমুদায় যুদ্ধ জাহাজ এবং তাবৎ হস্তী রোমানেদিগকে দিতে কার্থাজীয়েরদিগকে স্বীকার করিতে হইল এবং দুই কোটি টাকা নগদ দিতে হইল এবং রোমানেদের অনুমতিব্যতিরেকে কাহারো সঙ্গে যুদ্ধ করিবেন না এমত স্বীকার করিতে হইল এবং মাসিনিশার পূর্ব্বপুরুষেরা যে সকল ভূমি কখন ভোগ দখল করিয়াছিলেন তাহাও তাঁহাকে ফিরিয়া দিতে হইল।
রোমানেরা আপনার প্রতিযোগি কার্থাজীয়েরদিগকে এই প্রকার নতমস্তক করিলে তাবৎ পৃথিবী জয় করিতে তাঁহারদের অত্যন্ত উৎসাহ জন্মিল। ইটালি দেশে ও তন্নিকটবর্ত্তি উপদ্বীপে ও স্পাইনের অধিকাংশ দেশে তাঁহারদের প্রভুত্ব উত্তমরূপেই সংস্থাপিত হইল সমুদ্রোপরি তাঁহারদের পরাক্রমের খর্ব্বকারক কেহই থাকিল না এবং পৃথিবীস্থ অন্যান্য রাজারাও তাঁহারদের নাম শ্রবণে ভয়ে কাঁপিতেন। এতদ্রূপে তাঁহারদের তা বৎ পৃথিবী জয়করণের মহানুভবতার কারণ তাঁহারদের গবর্ণমেণ্টের ভারমাত্র যেহেতুক তাঁহারদের সর্ব্বাপেক্ষা কৃতকার্য্য সেনাপতি ও অতিদক্ষ রাজনীতিজ্ঞেরদের দ্বারা গবর্ণমেণ্টের তাবৎ কার্য্যই সম্পন্ন হইত ফলতঃ তাঁহারাই গবর্ণমেণ্ট ছিলেন। যে উপায়েতে তাঁহারা এতদ্রূপে পৃথিবী জয় করেন তাহা এই তাঁহারদের সৈন্যের সাহস ও সেনাপতির বিজ্ঞতা এবং যে পারদর্শিতার দ্বারা তাঁহারদের প্রতিকূল রাজার সংসৃষ্টির কল্প পরিপক্ব না হইতেই বিফল করিলেন তাহা। কিন্তু যদ্যপি অন্যান্য তাবৎ রাজ্যের মধ্যে সর্ব্বত্র নীতির বিশৃঙ্খলতা না হইত এবং যদ্যপি তাঁহারদের যুদ্ধ নৈপুণ্য ও দেশের হিতাকাঙ্ক্ষা রহিত না হইত তবে উক্ত কারণ ও উক্ত উপায় সত্ত্বেও রোমানেরা পৃথিবী জয় করিতে ক্ষম হইতেন না।
রোমানের বহুকালাবধি মাকিদোনিয়ার রাজা ফিলিপের প্রতি আক্রমণ করিতে নিশ্চয় করিয়াছিলেন ইহার এক কারণ এই যে তিনি হানিবালের সহকারী ছিলেন কিন্তু মুখ্য কারণ এই যে রোমানের তাবৎ পূর্ব্বদেশ জয় করিতে নিশ্চয় করিয়াছিলেন। কিন্তু কার্থাজীয় যুদ্ধের লেঠা যত কাল তাঁহারদের উপরে ছিল তত কাল অতি সদ্বিবেচনাপূর্ব্বকই ফিলিপের সঙ্গে যুদ্ধে নিবৃত্ত ছিলেন পরে ঐ যুদ্ধ সমাপ্তির পর বৎসরেই রোমানের ফিলিপের সঙ্গে বিবাদের কোন কারণ অন্বেষণ করিতে লাগিলেন তাহাও শীঘ্র লব্ধ হইল। গ্রীকদেশীয় সর্ব্বাপেক্ষা পরাক্রান্ত ইটোলিয়ার সমাজ এই যুদ্ধে রোমানেরদের মহোপকার করিলেন কিন্তু যুদ্ধ অত্যল্পকাল অর্থাৎ কেবল তিন বৎসর থাকিল। খ্রীষ্টীয়ান শকের ১৯৬ বৎসর পূর্ব্বে ক্যুনোকেফলি স্থানে সংগ্রাম হইয়া যুদ্ধ সমাপ্ত হইল সেই যুদ্ধে ফিলিপের সম্পূর্ণ পরাজয় হওয়াতে শান্তির প্রার্থনা করিতে হইল। তাহাতে রোমানেরা আপনারদের অভীষ্টমতই সন্ধি করিলেন। তাহার নিয়ম এই যে ফিলিপ গ্রীক দেশ পরিত্যাগ করিবেন এবং তাঁহার সকল যুদ্ধ জাহাজ রোমানেরদিগকে দিবেন ও স্বীয় সৈন্যের লাঘব করিবেন এবং বিংশতি লক্ষ টাকা নগদ দিবেন অগত্যা এই কঠিন নিয়মও ফিলিপের স্বীকার করিতে হইল। এতৎসময়ে রোমানেরদের সমুদ্রোপরি সম্পূর্ণ প্রভুত্ব প্রাপণের আশা ছিল কিন্তু আপনারদের যুদ্ধ জাহাজ বৃদ্ধি না করিয়া বিপক্ষেরদের যুদ্ধ জাহাজ অপহরণ করিয়া তাহা করেন যেহেতুক স্বীয় যুদ্ধ জাহাজ বৃদ্ধি করণ ব্যয় সাধ্য। অপর রোমানেরা গ্রীক দেশ ফিলিপের যোয়ালহইতে মুক্ত করিয়া স্বাধীন করিলেন এবং কিয়ৎকালপর্য্যন্ত অতিদুর্ব্বল রাজ্য প্রবলতর দাম্ভিক রাজ্যের সন্নিহিত থাকিয়া যেপর্য্যন্ত স্বাধীনতার সুখ ভােগ করিতে ক্ষম তদ্রূপ কিঞ্চিৎকাল ভােগ করিলেন। রোমানেরদের কর্ম্মকারক অর্থাৎ পেলিটিকাল এজেণ্ট দেশময় স্থাপিত হইল। তাঁহারা স্বাভাবিক পরস্পর ঈর্ষাম্বিত গ্রীকীয়েরদের নানা প্রদেশের মধ্যে বিবাদ ঘটা ইলেন এবং সর্ব্বত্র গোয়েন্দা নিযুক্ত করিয়া সকলকে বিরক্ত করত রোমানেরদের পরাক্রম মূলীভূত করিলেন।
কার্থাজ ও মাকিদোনিয়া দেশ এতদ্রূপে পরাস্ত হওয়াতে পৃথিবীস্থ অন্যান্যদেশীয়েরা বিবেচনা করিলেন যে রোমানেরদের দ্বারা আমারদেরই বা কি দশা ঘটে। এবং রোমানেরদের ক্রমশঃ বর্দ্ধিষ্ণু পরাক্রম যথাসাধ্য খর্ব্বকরণার্থ সর্ব্ব সাধারণের ইচ্ছা জন্মিল। রোমানেরদের অশেষ শত্রু হানিবালের প্রতি কার্থাজের রাজশাসন ব্যাপার অর্পিত হওয়াতে তিনি হিতজনক সুনিয়মের দ্বারা আপনার দেশ পুনঃ প্রবল করিতে উদ্যুক্ত হইলেন কেবল ইহা নহে কিন্তু কার্থাজ ও সুরিয়া এবং সাধ্যমত মাকিদোনিয়া ও মিসর দেশ যাহাতে সকলই মেলবন্ধ হইয়া রোমানেরদের প্রতিকূল্য করে এমত উদ্যেগ করিলেন। পরন্তু রোমানেরা নানা কৌশলে তাঁহাকে কার্থাজহইতে বহিস্কৃত করিলেন এবং যৎকিঞ্চিৎ অনুগ্রহ করিয়া মাকিদোনিয়ার ফিলিপ রাজাকে ফুসলিয়া থামিয়া রাখি লেন এবং ক্ষুদ্র২ রাজ্যে অপনারদের দল পুষ্ট করিলেন ইত্যাদি নানা উপায়েতে রোমানেরা উক্ত রাজ্যের মেল ভঙ্গ করিলেন ঐ সম্মিলিত রাজ্যের যুদ্ধশক্তি যদি হানিবালের অতিতীক্ষ্ণ বুদ্ধির অধীন হইয়া কার্য্যে লাগান যাইত তবে রোমানেরদের পক্ষে অতি অমঙ্গল হইত। সুরিয়ার রাজা আণ্টিয়োকসের দরবারে তাঁহার আশ্রয় লইতে হইল এবং রোমানেরদের সঙ্গে ঐ রাজার যুদ্ধ করিতে যে ইচ্ছা হইয়াছিল তাহাতে হানিবান পৌষ্টিকতা করিয়া সুনিয়ম দর্শাইলেন। রোমানেরদের ও আণ্টিয়োকসের মধ্যে যুদ্ধের প্রথম কারণ এই যে রোমানেরা গ্রীকীয়েরদিগকে যেমন স্বাধীন করিয়াছিলেন তেমনি আণ্টিয়োকসের অধীনে ক্ষুদ্র আসিয়াস্থ গ্রীকীয়ের দিগকে স্বাধীন করিতে ইচ্ছুক হইলেন এবং আণ্টিয়োকস রোমানেরদিগকে আসিয়াতে পদার্পণ করিতে অনিচ্ছুক ছিলেন দ্বিতীয় কারণ এই যে আণ্টিয়োকস ইউরোপস্থ থ্রাকিয়ার এক অংশ অধিকার করিয়াছিলেন এবং ইউরোপে তাঁহার পাদাপর্ণ করিতে রােমীনেরা কদাচ ইচ্ছুক ছিলেন না কিন্তু যুদ্ধের প্রকৃত কারণ রোমানেরদের দিগ্বিজয়ের আকাঙ্ক্ষা।
পরে আণ্টিয়োকস যুদ্ধার্থ নিশ্চয় করিয়া পূর্ব্বদেশস্থ রাজার তুল্য অতি জাঁকজমকে চারি লক্ষ যোদ্ধা লইয়া গ্রীক দেশে প্রবেশ করিলেন। শীত ঋতুতে যে সময়ে রোম৷নেরা যুদ্ধার্থ অতিমনোযোগপূর্ব্বক তাবদায়োজন করিতে লাগিলেন সেসময়ে রাজা মিথ্যা আমোদে কালযাপন করিলেন। গ্রীষ্মকাল আরম্ভেই রোমান কনসলেরা রণস্থলে উপস্থিত হইলেন এবং অতিপ্রসিদ্ধ থর্মোপিলের পর্ব্বতীয় পথে উভয় সৈন্যের সাক্ষাৎ পূর্ব্বক যুদ্ধ হইয়া আণ্টিয়োকস সম্যক্ রূপেই পরাভূত হইলেন এবং পাঁচ শত অশ্বারূঢ়ব্যতিরেকে তাঁহার তাবৎ সৈন্য মারা পড়িল। ঐ অশ্বারূঢ় সঙ্গে লইয়া তিনি আসিয়াতে পলায়ন করিলেন। এই যুদ্ধ খ্রীষ্টীয়ান শকের ১৯০ বৎসর পূর্ব্বে হয়। তৎসমকালীন জল পথেও এক যুদ্ধ হয় তাহাতে রাজা পরাস্ত হইয়া তাঁহার তাবৎ যুদ্ধ জাহাজপ্রভৃতি বিপক্ষ কর্ত্তৃক হৃত হইল। তৎপর বৎসর কার্থাজের জয়কর্ত্তা সিপিয়ো রোমানেরদের যুদ্ধর নিয়মানুসারে আণ্টিয়োসের নিজ অধিকারের মধ্যে যুদ্ধকরণার্থ স্বীয় ভ্রাতার সমভিব্যাহারে আসিয়াতে প্রেরিত হন। অপর মাগনেসিয়া স্থানে উভয় সৈন্যে যুদ্ধ হইয়া আণ্টিয়োকস পুনর্ব্বার পরভুিত হওয়াতে তাঁহার সৈন্যের চারি অংশের তিন অংশ মারা পড়িল। এবং রােমানেরা শান্তির যে নিয়ম স্থির করিলেন তাহাই তাহার স্বীকার করিতে হইল। সেই নিয়ম এই যে ইউরােপের মধ্যে তাঁহার যত দাওয়া তাহা ত্যাগ করিবেন এবং ক্ষুদ্র আসিয়া রোমানেরদের হাতে অর্পণ করিয়া টারস পর্ব্বতপর্য্যন্ত স্বীয় রাজ্যের সীমা নির্দ্দিষ্ট করিলেন এবং যুদ্ধের ব্যয় বলিয়া তিন কোটি টাকা রোমানেরদিগকে দিবেন পরিশেষে হানিবালকে রোমানেরদের হস্তে অর্পণ করিবেন যেহেতুক রােমানেরদের এমত বোধ ছিল যে হানিবাল মুক্ত থাকিতে আমারদের স্বচ্ছন্দতা নাই এবং ইহা যথার্থও বটে। ক্ষুদ্র আসিয়ান্তঃপাতি নান প্রদেশ এতদ্রূপে রোমানেরা প্রাপ্ত হইয়া আপনারদের সহায় পর্গামসের রাজা যুমিনিস ও রোডিয়ান লোকেরদিগকে বণ্টন করিয়া দিলেন তাঁহারদের বােধ ছিল ইচ্ছা হইলেই ইহা ফিরিয়া লওনের আটক নাই। এতদ্রূপে কার্থাজ নত হওনের পর অত্যল্পকাল অর্থাৎ দশ বৎসরের মধ্যে তাবৎ সভ্যদেশীয়েরদের ব্যাপারের রূপান্তর হইয়া পূর্ব্বদেশে রােমানেরদের মহিমার পত্তন হইল। এতৎসময়ে আটলাণ্টিক সমুদ্রঅবধি ফ্রাৎ নদীপর্য্যন্ত তাবৎ দেশের কর্ত্তৃত্বকারী বােমানে রাই। কথিজি ও সুরিয়া ও মাকিদেনিীয় তিন প্রধান রাজ্যের পরক্রিম এমত খর্ব্ব হইয়াছিল যে যুদ্ধ জাহাজ ও অর্থাভাবে তাঁহারা নূতন কোন যুদ্ধে প্রবর্ত্ত হইতে পারি লেন না। এবং সন্ধির নিয়মানুসারে রােমানেরদের অনু মতিব্যতিরেকে তাঁহারদের প্রতি যুদ্ধ করিতে নিষেধ ছিল। চতুর্থ রাজ্য অর্থাৎ মিসর দেশ অন্তরিক বিবাদে ব্যাহত হইয়া খ্রীষ্টীয়ান শকের পূর্ব্বে ২০১ সালে রোমানেরদের শরণাগত হইয়াছিল। অন্যান্য ক্ষুদ্র২ দেশ রোমানেরদের সহকারী নামে বিখ্যাত হইল এবং এই মোহনীয় নামের দ্বারা রোমানেরা তাঁহারদিগকে ভুলাইয়া নিরুদ্যোগে রাখিলেন। পরে যখন তাঁহারদের শৃঙ্খল বন্ধ করিতে রোমানেরা উপযুক্ত সময় বুঝিলেন তখন তাঁহারদিগকে সুবার ন্যায় আপনারদের সমাজের অন্তর্গত করিলেন। ইহার পর অবধি ছয় শত বৎসরপর্য্যন্ত রোমানেরদের ইতিহাসই পৃথিবীর ইতিহাস।
অপর আণ্টিয়োকসের পরাজয়হওনের পরে বিংশতি বৎসর ব্যাপিয়া রোমানেরদের ইতিহাসের মধ্যে কোন গুরুতর ব্যাপার দৃষ্ট হয় না। কিন্তু এমত অনেক ব্যাপার ঘটিল যে রোমনগরের শৈশবাবস্থাতে গুরুতর বোধ হইত। তথাচ এই অতি সংক্ষেপ বিবরণে লেখা কর্ত্তব্য যে সিপিয়ো আফ্রিকেনস ও হানিবাল এই দুই মহাপ্রতিযােগি ব্যক্তি আপনারদের রাজনীতিজ্ঞতা ও বীর্য্যের দ্বারা যে জন্মভূমি বিরাজমান করিয়াছিলেন সেই২ দেশহইতে তাড়িত হইয়া খ্রীষ্টীয়ান শকের ১৮৩ বৎসর পূর্ব্বে লােকান্তরগত হন।
খ্রীষ্টীয়ান শকের ১৭৯ বৎসর পূর্ব্বে মাকিদোনের রাজা ফিলিপের লোকান্তর হইলে তাঁহার পুত্ত্র পর্সিয়স সিংহাসনের অধিকারী হইলেন। তিনি পরাক্রম প্রাপ্তি মাত্র রােমানেরদের সঙ্গে যুদ্ধার্থ প্রস্তুত হইতে লাগিলেন। তাহাতে তাবদ্বিষয়ের তত্ত্বাবধারণার্থ মাকিদোনীয়তে রোমানেরদের দুই জন দূত প্রেরিত হইল এবং যদ্যপি তাঁহারা বাদশাহের সঙ্গে সাক্ষাত করিতে পারিলেন না তথাপি তাঁহারদের এমত নিশ্চয় বোধ হইল যে তিনি অবশ্যই যুদ্ধের মানসে আছেন। পর্গামসের রাজা যুমিনিসও তাঁহার বৈরিতাচরণ বিষয়ে রােমান রাজসভ্যেরদের নিকটে অভিযােগ করিলেন। বোধ হয় যে আণ্টিয়ােক সের অপহৃত দেশের এক অংশ যেমন ইহার পূর্ব্ব প্রাপ্ত হইয়াছিলেন তেমনি এই রাজার অধিকারেরও কিয়দংশ প্রাপণাশয়ে এতদ্রূপ অভিযোগ করিলেন।
খ্রীষ্টীয়ান শকের ১৭১ বৎসর পূর্ব্বে রোমানেরা পর্সিয়স রাজার সঙ্গে যুদ্ধ আরম্ভ করিলেন তাঁহারদের অভিপ্রায় যে মাকিদোনীয়া দেশের স্বাধীনতা একেবারে বিলুপ্ত করেন। ঐ যুদ্ধ দুই বৎসরপর্য্যন্ত শৈথিল্যরূপে চলিল কিন্তু তৃতীয় বৎসরে পলস্ ইমিলিয়সনামক অতিবিজ্ঞ সেনাপতিকে রোমানেরদের সৈন্যাধ্যক্ষতার ভার অর্পিত হইলে পিডনা স্থানে তিনি পর্সিয়সের লাগাইল পাইয়া অতি সাংঘাতিক ও চূড়ান্ত যুদ্ধ করেন। তাহাতে রাজা সম্পূর্ণরূপে পরাভূত হইয়া পলায়নপর হইলেন এবং তৎপরে রোমানেরদের হস্তে আত্ম সমর্পণ করিতেও হইল। রোমানেরা স্বীয় নগরের রাস্তায় তাঁহাকে ঘুরাইয়া শেষে কারাগারে নিক্ষিপ্ত করিলেন সেই স্থানেই তাঁ হার পঞ্চত্ব হইল। মাকিদোনীয়া দেশ রােমানেরা প্রথমতঃ স্বাধীনত্ব ভাবে রাখিলেন পরিশেষে তাহা লইয়া সাম্রাজ্যের এক সুবা করিলেন। এই যুদ্ধের লুঠে তাঁহারা এত টাকা প্রাপ্ত হন যে তাহাতে এক শত বিংশতি বৎসর পর্য্যন্ত তাবৎ রোমীয় রাজ্যের খরচ চলিল। মাকিদোনীয় দেশ জয় করাতে রােমানেরা অনিবার্য্যরূপ পরাক্রান্ত হইলেন। ইঙ্গলণ্ডীয় অত্যুত্তম ইতিহাসবেত্তা এক জন তৎকালীন রোমরাজ্যের পরম সৌভাগ্য এবং উত্তরকালে ঐ রাজ্যের ক্ষয় ও নিপাত এতদ্রূপে বর্ণনা করেন যে “এতৎ সময়ে রােম রাজ্যের যৎপরোনাস্তি বৃদ্ধি হইয়াছিল। ক্ষেত্রের মধ্যে ঐ রাজ অত্যুত্তম ফল পুষ্পিতের ন্যায় দৃষ্ট হইতেছে এবং পৃথিবীর অন্যান্য লোকেরদের দৃষ্টিগােচর ও প্রশংসা পাত্র হওনার্থ যাহা ব্যবধান ছিল তাহা রোমানেরা সমূল উৎপাটন বা ছিন্ন করিলেন কিন্তু এতদ্রূপ কিঞ্চিৎ কাল থাকিলে পর রাজ্যক্রমে শ্রীভ্রষ্ট হইবে ও পরাক্রমাকাঙ্ক্ষা রূপ ঝটকাতে তাহার বৃহৎ২ শাখা পল্লবাদি পরস্পর আন্দোলনে ব্যাহত হইবে তাবৎ পত্র পতিত অবয়ব সকল ভগ্ন হইবে পরিশেষে অসভ্য জাতীয়েরা ক্ষেত্রে প্রবিষ্ট হইয়া ঐ বৃক্ষ বিচ্ছন্ন করিবে।”
অপর মাকিদোনীয় রাজ্যের পরাজয় হওনের পরঅবধি শেষ প্যুনিক যুদ্ধের আরম্ভপর্য্যন্ত বিংশতি বৎসর গত হয়। এই বিংশতি বৎসরের মধ্যে পপিলিয়সনামক রােমানেরদের উকীল আলেকজান্দ্রিয়া নগর অধিকারার্থ গমনশীল সুরিয়ার রাজার সঙ্গে সাক্ষাৎ করিয়া ঐ উদ্যোগে ক্ষান্ত থাকিতে রোমান রাজসভ্যেরদের আজ্ঞা তাঁহাকে জ্ঞাপন করিলেন। রাজা কহিলেন যে এতদ্বিষয়ক বিবেচনার্থ অমাকে কিঞ্চিৎ সময় দেউন। তাহাতে ঐ দাম্ভিক রোমান স্বীয় তলোয়ারের দ্বারা ভূভাগে চক্রাকৃতি চিহ্ন দিয়া কহিলেন যে উত্তর না দিয়া তুমি এই চক্রের বাহিরে যাইতে পারিবা না তাহাতে মহারাজ নতমস্তক হইয়া কহিলেন যে আজ্ঞ রাজসভ্যের আজ্ঞাই প্রতিপালন করিব। পরে শিবিরহইতে আপনার সৈন্য উঠাইয়া লইয়া গেলেন। এতৎসময়েও গ্রীকদেশের অতিমান্য বিশিষ্ট সহস্র ব্যক্তিরদিগকে কয়েদ করিয়া রোমনগরে পাঠান গেল তন্মধ্যে কেহ২ সতর বৎসরপর্য্যন্ত ঐ নগরে কারাবদ্ধ থাকিলেন। এতৎকালেও রােমানেরা এক দিবসের মধ্যে ইপাইরসের সত্তর নগর লুঠ করিয়া দেড় লক্ষ লােককে গোলাম করিয়া বিক্রয় করিলেন। ফলতঃ পৃথিবীর মধ্যে অন্য কেহ পরাক্রান্ত না থাকে এবং অন্যান্য তাবৎ জাতীয়েরদিগকে আপনারদের প্রজার ন্যায় রাখেন রোমানেরা এমত প্রতিজ্ঞা করিয়াছিলেন।
এতদ্রূপ প্রতিজ্ঞা করিয়া তাঁহারা কার্থাজ নগরের সমূলােৎপাটন করিতে স্থির করিলেন। তদ্দেশে এক অন্তিরিক বিবাদ ভঞ্জনার্থ কাটো রােমানেরদের পক্ষে উকীল স্বরূপ প্রেরিত হইয়া কার্থাজহইতে প্রত্যাগত হইয়া কহিলেন যে কার্থাজ নগর পুনর্ব্বর্ধিষ্ণু হইতে দেখিলাম অত এব রাজসভ্যেরদিগকে নগর উচ্ছিন্ন করিতে আমি পরামর্শ দেই। রাজসভ্যেরাও ঐ পরামর্শ গ্রহণ করিলেন। পরে তাঁহারা যুদ্ধার্থ একটা ছল উঠাইয়া কার্থাজের প্রতি অভিযােগ করিলেন যে কাথার্জীয়েরা যুদ্ধ জাহাজ প্রস্তুত করিয়া রোমানেরদের সহকারি ন্যুমিডিয়া রাজার উপরে চড়াউ করিয়াছিলেন অথচ তাঁহারা কেবল আত্মরক্ষার্থই তাহা করিয়াছিলেন এমত স্পষ্ট বােধ হইল। অপর রোমানের। বৃহৎ জাহাজবহর এবং অতি ভারি সৈন্য আফ্রিকাতে প্রেরণ করিলেন। কার্থিজীয়েরদের বিলক্ষণ বােধ ছিল যে আমরা অতিদূর্ব্বল রোমানেরদিগকে পরাজয় করিতে পারিব না অতএব কাকুতি মিনতি করিতে লাগিলেন তাহাতে রােমান কনসল প্রথমতঃ তাবৎ জাহাজ তাঁহার হস্তে অর্পণ করিতে আজ্ঞা দিলেন। কার্থাজীয়েরা তাহা স্বীকৃত হইলেন এবং রোমানেরা তাঁহারদের চক্ষুর গোচরে ঐ সকল জাহাজ পুড়িয়া ফেলিলেন। পরে তাঁহারদের তাবৎ অস্ত্রশস্ত্র অর্পণ করিতে হুকুম দিলেন তাহাও তাঁহারা স্বীকার করিলেন। পরিশেষে তাঁহারদিগকে এই হুকুম দিলেন যে তােমরা কার্থাজ নগরহইতে উঠিয়া সমুদ্র হইতে দূর মফঃসলে এক নূতন নগর গ্রন্থন কর। এই দাম্ভিকতার আজ্ঞা শুনিয়া নগরস্থেরা একেবারে ক্ষিপ্তপ্রায় হইল ও কার্থাজীয় রাজসভ্যস্থেরা শপথ করিয়া কহিলেন যে আমরা এই জন্মস্থান কদাচ ত্যাগ করিব না। পরে নূতন জাহাজ প্রস্তুতকরণার্থ তাঁহারা যৎপরোনাস্তি কৃত যত্ন হইয়া যে স্থানে যে কাষ্ঠ পাইলেন তাহা জাহাজ আলয়ে আনাইয়া কার্য্য আরম্ভ করিলেন। এবং শহরের মধ্যে বহুমূল্য বা সামান্য এবং পবিত্র বা সাধারণ যত ধাতু ছিল সমুদায়ই অস্ত্র প্রস্তুতকরণার্থ গলাইলেন এবং ধনুকের গুণ ও জাহাজের হামার প্রস্তুতকরণার্থ স্ত্রী লোকেরা আপনারদের দীর্ঘ২ কেশসকল ছেদন করিয়া দিল। আবাল বৃদ্ধ বনিতা কি ভদ্র কি ক্ষুদ্র সকলই এই সাধারণ উদ্যোগের অংশী হইলেন এবং তিন বৎসর পর্য্যন্ত রোমান সেনাপতি যত উদ্যোগ করিলেন সকলই ব্যর্থ হইল। যখন নগরের দুই প্রাচীর রোমানেরদের অধিকৃত হইল তখন নগরস্থেরা তৃতীয় প্রাচীর গাঁথিলেন এবং যখন এক বন্দর অপহৃত হইল তখন তাঁহারা অন্য বন্দর খনন করিলেন। পরিশেষে রোমান সেনাপতি সিপিয়ো কৌশলক্রমে ঐ নূতন বন্দরও আয়ত্ত করিলেন কিন্তু যদ্যপি তাহাতে শহর খােলা এবং উপায়হীন হইল তথাপি নগরস্থেরা ছয় দিবা রাত্রিপর্য্যন্ত অতিদৃঢ় প্রতিজ্ঞাপূর্ব্বক যুদ্ধ করিলেন। কিন্তু যখন আর যতন করা মিথ্যা বোধ হইল তখন তাঁহারা নগরের চতুর্দ্দিগে আগুন লাগাইয়া স্বীয় পূর্ব্ব পুরুষেরদের কবরের উপরে ও দুর্গের মধ্যে ও দেবালয়ে আপনারাই আত্মঘাতী হইলেন। ঐ অগ্নিতে সতর দিনপর্য্যন্ত নগর পুড়িল এবং ঐ অতি মহাগর্ব্বি যে নগরে পূর্ব্বে সাত লক্ষ লােকের বসতি ছিল অথচ যে নগর সহস্র বৎসর বিরাজমান এমত কার্থাজ নগর এককালে উচ্ছিন্ন হইল। কার্থাজীয়েরা আপনারদের দেশ রক্ষার্থ যে মহোদ্যোগ করিলেন তদপেক্ষা উৎকৃষ্ট বিষয় এবং রোমানেরা ঐ নগরের প্রতি যদ্রূপ নির্দয় আচরণ করিলেন ইহা অপেক্ষা অপকৃষ্ট বিষয় পুরাবৃত্ত বর্ণনের মধ্যে দুষ্পাপ্য।
From the beginning of the first, to the close of the
last Punic War.
Carthage and Rome, both aspiring after universal dominion, had been gradually approaching each other. The Carthaginians made conquests in Sicily, as the Romans did in the south of Italy, till the Roman city of Regium and the Carthaginian Messina, faced each other, being separated only by a narrow sea. These two republics now prepared to dispute the empire of the western world. Their power and resources were at first perhaps equal. Carthage possessed a lucrative commerce, and a full treasury, by means of which she was enabled to enlist as many mercenaries as she pleased; she enjoyed also the command of the sea. Rome strong in itself, was a nation of warriors, burning with lofty hopes and equal to any enterprise.
The Romans waged three successive wars with the Carthaginians, which are usually called the three Punic wars. In the year B. C. 264, the Romans sent an army across from Italy to Sicily and took possession of Messina. The Carthaginians, in concert with Hiero, king of Syracuse, besieged the place but were defeated by the Roman consul. The next year Hiero accepted a large bribe and sided with the Romans, which appears to have given them the first idea of conquering the whole island. Through his aid they were enabled to march across the country, and make themselves masters of Agrigentum, one of its richest and noblest cities. The Carthaginians, though inferior to the Romans by land, were masters of the sea; this gave them such pre-eminent advantages that the Romans found it necessary to construct a navy. They had, it is true, for several centuries been accustomed to maritime affairs, but they possessed no vessels of war capable of coping with those of their enemies. One of the Carthaginian frigates having about this time been stranded on the coast of Italy, the Romans took it as their model, and speedily built a large fleet, with which Duillius their admiral put to sea, with the design of at once meeting the Carthaginians. Strange as it may appear, Duillius gained a complete victory over them chiefly by the aid of some grappling machines which the Romans had just invented. The very next year the Roman consul made a descent upon the islands of Sardinia and Corsica, which were soon after subdued and annexed to the Roman empire. In the eighth year of the war, the Roman fleet gained a second victory over the Carthaginians, upon which the senate conceived the bold idea of carrying the war, by means of their fleet, into Africa itself, and of fighting their enemy upon his own shores. And from this time it became one of the military maxims of the state, invariably to attack an enemy, when possible, in his own country.
In the year, B. C. 256 both consuls were sent to Africa with a fleet of 330 ships, and an army of 140,000 men, the largest Rome had ever raised. They gained a complete victory over the Carthaginian fleet, and landing their troops, devastated the country far and wide. The Carthaginians were reduced to such difficulties, that when Regulus sent a messenger to exhort them to think of peace, he was joyfully received. But the haughty consul proposed terms so insulting, that the Carthaginians rightly judged that nothing more humiliating could befal them even if they were entirely conquered; they determined therefore to stand the chance of continuing the war. In the height of their distress there fortunately arrived at Carthage a few mercenaries from Sparta, under the conduct of Xantippus, a commander of consummate talent. He was immediately entrusted with the Carthaginian army, marched out, and totally defeating Regulus, whom he made prisoner, annihilated the Roman army, of which only 2000 men escaped. The next year, being the ninth of the war, a fleet was fitted out to bring back the remainder of the Roman troops, but though they gained a victory over the Carthaginians, their fleet was subsequently lost in a storm. Their next fleet having experienced a similar disaster, they relinquished for a time all naval enterprises. But in the fourteenth year of the war, they renewed their exertions by land and by sea with such vigour that the Carthaginians, disheartened by their losses, sent embassadors to Rome, together with Regulus, who had now been in confinement for six years, to treat of a peace; but he dissuaded the senate from all thoughts of accommodation, and the war recommenced. In the eighteenth year of the war, the Carthaginians sent Hamilcar, surnamed Barca, to command their fleets and armies in Sicily. By his unrivalled skill he baffled for three years all the power of Rome, and shewed her what a grand military genius was able to achieve in the midst of every difficulty. The Romans finding it impossible to conquer Sicily without a fleet, determined once more to create one, but as their treasury was entirely empty, private individuals at their own expense fitted out two hundred ships, with the aid of which the Romans were enabled to cut off all communication between Carthage and Sicily. Both parties being now exhausted by this war of twenty-four years’ continuance, a peace was concluded between them, much to the disadvantage of the Carthaginians, since they were obliged to evacuate Sicily and the smaller islands adjacent; to pay towards the expenses of the war, 2000 talents, or about forty lacs of Rupees, in ten yearly instalments, and to engage not to make war on Hiero king of Syracuse. Thus in the year B. C. 240, the Romans had obtained possession of the three important islands of Sicily, Sardinia, and Corsica; acquired a powerful fleet, and the command of the sea; and were ready to spring forward to new conquests.
During the peace with Carthage which lasted two and twenty years, the Romans engaged in two wars, the one in Illyria, on the northern confines of Greece, the other in Cisalpine Gaul. Before noticing these wars, it may be proper to mention that in the year B. C. 234, the Romans having no war on their hands, closed the temple of Janus. This temple was directed by Numa to be left open during war and to be closed only in time of peace. Four hundred and fifty years had now elapsed since the days of Numa, during which time the Romans had never for a single year been without a war. The closing of this temple for the first time since its erection, became therefore a memorable event in the history of Rome.
The war in Illyria arose from the following circumstance. Teuta, the queen of the country, had encouraged her subjects to practise piracy in the Adriatic sea, to the great annoyance of the Italian merchants. The Roman senate sent envoys to remonstrate with her; but she received them with great haughtiness, and contrived to have them murdered on their return. To revenge this breach of faith, both the consuls were employed against her with a powerful army and fleet. This was the first time a Roman force had appeared in Greece, or, in fact, beyond the eastern limit of Italy. The usual success crowned the efforts of Rome; in less than two years the sea was cleared of the pirates; and the queen was forced to surrender to the Romans nearly the whole of her dominion, and to pay an annual tribute for what was left to her. This war which ended B. C. 227, was in itself of trifling account; but it produced the most important results, in as much as it led to a connection between Rome and Greece.
The Illyrian war was scarcely finished before the Gauls who inhabited the rich plain of the Po, and the Ligurian mountains, having entered into an alliance with their brethren who lived on the Rhone beyond the Alps, commenced hostilities, and a dreadful war of six years ensued, which lasted from the year B. C. 226 to 220. How great was the dread the Romans had of these foes may be gathered from the fact, that they are said to have raised an army of no fewer than 700,000 men, from all the provinces of Italy. The Gauls poured down with impetuosity on Hetruria, and advanced to Clusium within three marches of Rome. The Roman consuls, notwithstanding the fierce courage of the Gauls, completely defeated them; 40,000 were left dead on the field, and 10,000 were made prisoners. The Romans now determined entirely to subdue the Cisalpine Gauls, and sent both the consuls with their armies into the country beyond the Po. The Gauls perceiving this fixed determination, neglected not to collect all their strength as if for a final encounter; hence they greatly outnumbered the Romans, who were however again victorious. The next year, (the year B. C. 222,) the Gauls assembled a still more numerous army, consisting of 90,000 men, with which they met the handful of Roman troops under Marcellus. When the two armies were ready to join battle, the Gallic general defied the Roman commander to single combat. It was cheerfully accepted: the Gaul fell beneath the prowess of the Roman; and the troops becoming disheartened, fled, leaving the Romans masters of the field. This was the last battle of independence fought between the Cisalpine Gauls and Rome. The Gallic provinces being subdued were incorporated with the Roman possessions, and the authority of the victorious republic of Rome was extended from the Alps to the southern or Ionian sea.
During the next year the second Illyrian war occurred; but it is too insignificant for a place in this rapid sketch of events. A far more important event was the planting of two colonies, Placentia and Cremona, in the territory of the conquered Gauls beyond the Po. The irritation it occasioned, led the Gauls to invite Hannibal into Italy. To this great event we now bend our attention.
Twenty-two years had elapsed since the conclusion of the peace with Carthage, which deprived her of the valuable island of Sicily. To compensate for this heavy loss, as well as to meet the heavy tribute they were obliged to pay annually to the Romans, the Carthaginians determined to push their conquests in Spain, far from the view of their jealous rival. Their troops were commanded by Asdrubal, one of the ablest generals that state had ever possessed, who made himself master of the greater part of Spain south of the Ebro. The command of the army after devolved on Hannibal, the son of Hamilcar, then about twenty-five years of age, the greatest captain of that age, with whom, before the birth of Christ, few, besides Alexander the Great and Cæsar, are worthy to be compared. As he excelled all other men in military boldness and talent, he seemed to exceed others likewise in his hatred of Rome, by whom his beloved city Carthage had been reduced to so humble a state.
This war, usually called the second Punic war, soon which commenced in the year 218 and lasted to the year B. C. 201, arose out of the siege of Saguntum, a city south of the Ebro in alliance with the Romans. The citizens, when besieged by Hannibal, applied for aid to Rome, from whence embassadors were sent to order the young hero to raise the siege. He gave them a flat refusal, upon which they repaired to Carthage, and demanded that the aggressor Hannibal should be delivered up to them. Their demand, as might have been expected, was rejected with scorn. Hannibal meanwhile pressed the siege, and the inhabitants despairing of succour, surrendered to him at the end of eight months. The fall of this town extinguished for the present the influence of the Romans in Spain. The senate now prepared vigorously for the impending war, but they had to deal with an enemy far superior to any with whom they had heretofore come in contact. Hannibal had formed the grand design of crossing the Alps, and at once carrying the war into the heart of Italy, a design confessedly the boldest conceived or executed by any general of antiquity, the imitation of which in our days by Napoleon, has shed so great a lustre over his memory. Hannibal speedily reduced the country north of the Ebro, crossed the Pyrennees, entered Gaul, that is, the south of France, and had passed the Rhone, in his march to the Alps, while the Romans vainly fancied that he was yet engaged in Spain. The Roman consul who had sailed from Pisa, landing at Marseilles, learned to his astonishment that Hannibal was already beyond his reach. He hastened back therefore to Italy, which he had scarcely reached, when he found that his enemy had crossed the barrier of the Alps and descended into the plains.
Hannibal marched from the Rhone through the south eastern part of France without much difficulty; but the passage of the snow-covered Alps cost him many men, and elephants. At length he reached that point from whence the rich plains of Cisalpine Gaul, the present Lombardy, became visible; these he pointed out to his troops as the glorious reward of their toils. Descending from the mountains, he encountered the Roman army on the banks of the Ticinus, and totally defeated it. In the same year he met the combined forces of both consuls again at Trebia, and was equally successful. The Roman senate was now filled with alarm. For a hundred years their troops had met with no such reverses. These two victories completely brought over to Hannibal the Gauls on either side of the Po, who bore the Roman yoke with impatience. The next year he crossed the marshes, in which difficult passage he lost an eye, and entering Hetruria, ravaged the country far and wide. The senate raised a large army and sent it to oppose the Carthaginian; but Hannibal met the Romans at the lake Thrasymene, and again defeated them. Their loss in this third battle was far more severe than in the two which had been fought the preceding year.
As the senate had no army to oppose to Hannibal, he marched without hindrance to the south of Italy as far as Apulia, levying contributions in his progress. In the third year of the war the Roman consul with a still larger army than any which had yet taken the field, met him at Cannæ on the shores of the Adriatic, but Hannibal was a fourth time victorious. This great battle is justly ranked among the most memorable in the annals of antiquity. But the fortitude and greatness of mind displayed by the senate, in the midst of these unparalleled disasters is even still more memorable. Never for a moment did they despair of the fortunes of Rome, or dream of a compromise with Hannibal. Though the flower of their nobility and soldiers with one of their consuls, had perished at Canna, the senate pushed the levies with such vigour that 80,000 troops were again in the field before a twelvemonth had elapsed. The command of this army was given to Fabius, who by always avoiding a pitched battle with Hannibal, contrived to keep him in some measure in check, although he could not prevent the greater part of the south of Italy from joining him. During the next eight years of this celebrated war, Hannibal gained many battles, but none to be compared with that of Cannæ; and he maintained his ground, although for want of reinforcements he was unable to make any progress.
Meanwhile the city of Syracuse having declared for the Carthaginians was closely besieged by Marcellus the Roman general, but the astonishing talents of Archimedes, the Newton of antiquity, baffled all his efforts for nearly two years. The town at length fell into the hands of the Romans, and Archimedes was killed by a soldier, who knew not his worth or even his name. Great progress was also made by the Romans in Spain, by two generals of the name of Scipio, to whom their affairs in that country had been confided. In the years B. C. 216 and 215, they gained two important victories over the Carthaginians, but were afterwards cut off by treachery. The command of the army then devolved on young Publius Scipio, who entirely changed the face of affạirs, and inspired the Romans with fresh courage.
The Carthaginians had all along intended to send succours to Hannibal in Italy, but their designs had been constantly frustrated. At length, in the twelfth year of the war, Asdrubal with a large army left Spain, and pursuing the route formerly traversed by his brother Hannibal, crossed the Alps under favour of the mountaineers, and having reached Italy, sent to inform him of his approach. But his messenger fell into the hands of the Roman consul, who determined to attack Asdrubal before he could form a junction with his brother. The two armies met on the Metaurus, and the Romans were completely victorious. Asdrubal having performed all the duties of a general, unwilling to survive the defeat of his troops, threw himself upon the Roman ranks, and was slain. The citizens of Rome had been so greatly alarmed by the arrival of Asdrubal in Italy, as to suspend contracts, to put a stop to all buying and selling, to the lending of money or the discharge of debts. This victory changed the face of the city, and business was resumed. The Roman consul after defeating Asdrubal, cut off his head, and marching rapidly against Hannibal, sent him an account of the victory by means of two prisoners, and then threw the head of his brother into his camp. The great Hannibal struck with a blow so fatal to his country, and to his family, exclaimed, ‘’Tis like the fortune of Carthage.’ He immediately broke up his camp, and, being obliged to abandon the rest of Italy, retired into Bruttium, the southern corner of that peninsula; where he maintained himself unaided for four years against all the attacks of the Romans.
Young Scipio having on the departure of Asdrubal made himself master of Spain, projected a descent on Africa, as Hannibal had upon Italy, and concluded a treaty with Syphax, king of Numidia in Africa, who was soon after however brought to join the Carthaginians through his wife, the beautiful Sophonisba. But Scipio having formed an alliance with another king, Massinissa, passed over with his army in the fifteenth year of the war, into Africa, where he twice defeated the Carthaginians, and prepared to besiege the city. The Carthaginian senate were therefore under the necessity of recalling Hannibal to the defence of his own country. Hannibal quitted Italy with tears in his eyes, and as his vessel gradually receded from the shore, gazed on the coast with feelings of most intense regret. The joy of Rome on hearing of the departure of this, the most redoubted foe the republic had ever met with, was so unbounded, that the senate ordered five days of thanksgiving to the gods. Hannibal, having arrived in Africa, prepared for the battle which was to decide the fortunes of his native land. Scipio and he, the two greatest generals of that period, met at Zama at the head of their troops, and a bloody battle ensued, in which, for the first time in his life, at the age of forty-five, Hannibal was defeated. It was acknowledged by the best judges of the art of war, that he performed every duty which might have been expected from a consummate general, but in vain. On being called into the Carthaginian senate to assist his country with his advice in this emergency, he declared that she had now no resource but in a peace, and this from the warlike Hannibal was decisive. The peace which was concluded in the year B. C. 201, was the most humiliating which could have been imposed. The Carthaginians were obliged to give up all their conquests in Africa, all their ships of war except ten, and all their elephants; to pay ten thousand talents, or about two crores of Rupees; to engage to commence no war without the consent of Rome; and to restore to Massinissa all the lands that had ever been possessed by his ancestors.
Rome having now humbled her great rival Carthage, openly aspired to the conquest of the world. Her dominion was fully established in Italy, the adjacent islands, and the greater part of Spain. She had the uncontrolled command of the sea, and was become terrible to the rest of the world. The cause of this lofty aspiring after universal empire, is to be found almost entirely in the spirit of her government, which was composed of her most successful generals and most able statesmen. The means by which this dominion was attained, were both the excellence of her armies and generals, and that uniform, keen-sighted policy by which she was enabled to break the confederacies formed against her, before they were ripe. But neither these causes, nor these means, would have been found so successful, if in all the foreign states there had not been a universal corruption of morals, and an entire absence of all military skill and public spirit.
The Romans had long determined to attack Philip, king of Macedon, partly because he had assisted Hannibal, but chiefly because they had determined upon subjugating the East. While the Carthaginian war was upon their hands, they wisely refrained from open hostility; but, the year after its close, they sought a pretext for breaking with Philip, which of course was easily found. The Ætolians, the most powerful body in Greece, sided with the Romans, and rendered great assistance in this war; which however was but of brief continuance. It lasted three years, and closed with the battle of Cynocephalæ, fought in the year B. C. 196; in which Philip was completely defeated and obliged to sue for peace. The Romans dictated their own terms; which were, that he should evacuate Greece, give up his navy, reduce his army, and pay 1000 talents, or about twenty lacks of Rupees. To these hard conditions he was obliged to submit. The object of the Romans at this time, was to obtain the command of the sea, not by augmenting their own navy, which would have been expensive, but by destroying that of all their enemies; and this object was now secured in regard both to Carthage and Macedon. Greece, freed from the yoke of Philip, was declared free by the Romans; and for a time the Greeks enjoyed that degree of freedom, which a weak state can enjoy in the vicinity of one that is strong and overbearing. Roman Commissaries, or Political Agents, were scattered over the country, who sowed dissensions among the states, naturally too jealous of each other, carried on a system of espionage of the most galling description, and strengthened the influence of Rome.
The fall of Carthage and Macedon shewed the rest of the world what was to be expected from Rome; and a general desire arose if possible to curb the growing power of the republic. Hannibal, constantly breathing hostility to the Romans, was now placed at the head of affairs in Carthage, and endeavoured not only to invigorate his own country by salutary reforms, but to form a powerful league against Rome, in which should be included Carthage and Syria, and perhaps Macedon and Egypt. The Romans however procured his banishment from Carthage by various arts, amused Philip of Macedon by granting him some trifling advantages, and strengthened their influence among the smaller states. By these means the coalition, which, guided by the master spirit of Hannibal, might have been formidable, was broken; and he himself was obliged to take refuge in the Court of Antiochus, king of Syria, whose desire of trying his strength with the Romans he endeavoured to improve and direct. The first cause of contention between them, was the desire of the Romans to extend the liberty which had been given to the Greeks, to the Greek cities of Asia Minor, which were under the government of Antiochus; and he would not allow them to set foot in Asia. The second cause was the occupation of a part of Thrace in Europe by Antiochus, whom the Romans were equally strenuous to keep out of Europe; but the real cause of the war was the ambition of Rome.
Antiochus, having resolved upon war, marched with an army of 400,000 men into Greece, with all the pomp and luxury of an eastern monarch, and passed the winter in idle pleasures, while the Romans were diligently preparing for the war. Early in the spring, the Roman consuls took the field, and both armies met at the celebrated pass of Thermopylæ. Antiochus was entirely defeated, and lost his whole army, with the exception of 500 horse, with whom he escaped into Asia. This battle was fought B. C. 190. A naval victory, gained over him at the same time, deprived him of the aid of his fleet. The next year, Scipio, the conqueror of Carthage, was sent in company with his brother into Asia, to carry the war into the dominions of Antiochus, according to the maxims of Roman policy. The two armies came in contact at Magnesia; Antiochus was again defeated with the loss of three-fourths of his army, and was obliged to submit to the peace dictated by the Romans; the conditions of which were, that he should relinquish all his pretensions in Europe, resign to the Romans Asia Minor, make Mount Taurus the boundary of his empire, and pay towards the expenses of the war the enormous sum of three crores of Rupees, and finally that he should deliver up Hannibal to the Romans, who rightly judged that while he was at liberty they could never deem themselves secure. The provinces of Asia Minor the Romans divided between their two allies, Eumenes king of Pergamus, and the Rhodians, being well aware that they could reclaim them at any moment. Thus within the short space of ten years after the humiliation of Carthage, was the entire aspect of affairs in the civilized world changed, and the foundation laid of Roman grandeur in the East. Rome was now arbitress of all the countries from the Atlantic to the Euphrates; the power of three of the principal states, Carthage, Syria, and Macedon, was so curtailed that they could begin no new war for want of ships and money, and were bound by treaty not to go to war without the sanction of Rome; and the fourth state, Egypt, torn by internal disputes, had already placed itself, in the year B. C. 201, under the guardianship of the Romans. The smaller states were dignified with the title of allies; and by this delusive name were they lulled into security, till it suited the convenience of Rome to fix their chains, and turn their countries into provinces of the empire. From this time and onwards for nearly six hundred years the history of Rome is the history of the world.
For nearly twenty years after the defeat of Antiochus, no event occurs in the history of Rome of peculiar magnitude, though many which, in the infancy of the republic, would have been deemed important. Even in this rapid sketch, however, it may be interesting to add, that the year B. C. 183 witnessed the death of the two great military rivals Scipio Africanus and Hannibal, both in exile from the countries they had rendered illustrious by their political genius and military renown.
In the year B.C. 179, Philip, king of Macedon, died, and was succeeded by his son Perseus, who, immediately on his accession, began to prepare for war with the Romans. Three ambassadors were accordingly sent to Macedon to look into affairs, who, though they could not obtain an audience of the king, were fully convinced that his intentions were war-like. Eumenes, king of Pergamus, also accused him to the senate of hostile designs, in the hope perhaps of obtaining a share of his dominions, as he had already done of those taken from Antiochus.
In the year B. C. 171, Rome declared war against Perseus, with the intention of entirely destroying the independence of Macedon. The war lingered for two years; but in the third campaign, Paulus Æmilius, an able general, having been appointed to command the Roman forces, came up with Perseus at Pydna, where a bloody and decisive battle was fought, in which the king was entirely routed. He was obliged to betake himself to flight, and afterwards to surrender himself to the Romans, by whom he was led in triumph through the streets of Rome and then thrown into a dungeon, where he perished. Macedon, though at first declared free, was finally reduced to the condition of a Roman province. The plunder obtained in this war, was so great, that it sufficed to meet all the public expenses of the republic for nearly a hundred and twenty years. The Roman state, by the conquest of Macedon, became exalted to a pitch of irresistible power. An excellent English historian thus describes at this period the high fortune of Rome, and the future decline and fall of its empire: “The state of Rome was at this time almost at the highest. We perceive it flourishing in the middle of the field, having rooted up or cut down all that kept it from the eyes and admiration of the world. But after some continuance, it shall begin to lose the beauty it had; the storms of ambition shall beat its great boughs and branches one against another, its leaves shall fall off, its limbs wither, and a rabble of barbarous nations enter the field and cut it down.”
Between the conquest of Macedon and the last Punic war, twenty years elapsed. It was during this period, that the Roman envoy Popilius, meeting the king of Syria on his march to the conquest of Alexandria, delivered a message from the senate ordering him to desist from the enterprise. The king desired time for deliberation, upon which the haughty Roman drawing a circle around him with a sword, said, “You stir not from that circle till you have given me a reply.” The humbled monarch was obliged to say, “The senate shall be obeyed,” and to break up his camp and return. It was during this period, that a thousand of the most distinguished citizens of Greece were carried prisoners to Rome, and detained there, many of them, seventeen years. It was during this period, also, that the Romans in one day sacked seventy cities of Epirus, and reduced 150,000 of its inhabitants to slavery, Rome was determined to tolerate no other power in the world, but to reduce all nations to the condition of subjects.
In the spirit of this resolution she now determined to annihilate Carthage. Cato having been sent as envoy to that city on the part of the Romans with the view of terminating some local disputes, reported on his return that Carthage again appeared flourishing; he therefore advised the senate to destroy it. His advice prevailed; and a pretext was soon found for war. Carthage was charged with having fitted out a fleet and attacked the king of Numidia, an ally of Rome, though it had manifestly been done only in self defence. A large fleet, and an immense army were sent by the Romans to Africa. The Carthaginians, who knew too well their own weakness to hope for success in a war with Rome, had recourse to supplication. The Roman consul commanded them to deliver up all their ships; this was complied with, and the ships were burnt before their eyes. They were then ordered to give up all their arms; this also was complied with. Finally, they were commanded to quit Carthage for ever, to retire into the country far from the sea, and build a new city. This insolent demand drove the citizens to desperation. The Carthaginian senate swore to stand or fall with Carthage. Every exertion was made to replace their navy; all the timber that could be collected was brought into the dock yards and used; and all the metal in the city, precious or vile, sacred or ignoble, was melted down to make arms; the women cut off their long hair to furnish bowstrings and cordage; all ages, all ranks, and both sexes shared in this common danger, and for three years the city held out against the utmost efforts of the Roman general. When two of the walls had been taken, the besieged built a third; when one harbour was lost, they dug another; and even when Scipio had gained access to the new harbour by stratagem, and the city lay open and defenceless, the citizens still maintained an obstinate conflict for six days and nights. But when they perceived that all farther defence was useless, they set the city on fire, and slew themselves on the tombs of their fathers, in the citadel, and in the temples. The fire raged seventeen days, and this proud city which had at one time numbered 700,000 inhabitants, and had flourished nearly for a thousand years, sunk into oblivion. Ancient History records nothing more noble than the defence of Carthage, and nothing more base than the treatment inflicted on it by Rome.