পুরাবৃত্তের সংক্ষেপ বিবরণ/নগরের পুনর্গ্রন্থন অবধি কার্থাজের প্রথম যুদ্ধ আরম্ভপর্যন্ত বিবরণ
নগরের পুনর্গন্থন অবধি কার্থেজীয়েরদের প্রথম যুদ্ধ
আরম্ভপর্য্যন্ত বিবরণ।
রোমানের স্বীয় নগর পুনর্গন্থন সমাপ্ত না করিতে২ নিকটবাসি যে২ দেশীয় লোকেরদের সঙ্গে রাজ্য সৃষ্টিঅবধি অবিরত যুদ্ধ ছিল তাহারা পুনর্ব্বার প্রতিকূল্যাচরণ করিতে লাগিল কিন্তু তৎকালীন সর্ব্বাপেক্ষা প্রধান যোদ্ধা কামিলস তাহারদিগকে জয় করিলেন। অপর গলেরদের প্রত্যাগমনের চারি বৎসর পরে যে মানলিয়সের সাহসেতে পূর্ব্বোক্ত মতে রােম নগরের দুর্গ রক্ষা পাইয়া ছিল তিনি দীন দরিদ্র লোকেরদের প্রতি দয়া করিতে লাগিলেন। ঐ দরিদ্র লোকেরদের ঘরদ্বার পুনর্ব্বার প্রস্তুত করণার্থ পুনশ্চ কর্জ করিতে হইয়াছিল এবং অতিনিদারুণরূপে তাহারদিগকে ধনি উত্তমবর্ণেরা ক্লেশ দিলেন অতএব মানলিয়স তাহারদের উপকারার্থ নিজের অর্থ ব্যয় করিতে লাগিলেন তাহাতে ধনি লোকের রাগী হইয়া মানলিয়স রাজা হওন অভিপ্রায়ে ইতর লোকেরদের প্রতি এবম্প্রকার দয়া করিতেছেন এমত এক অভিযোগ তাঁহার প্রতি করিয়া তুলিলেন এবং এক জন ডিক টেটর নিযুক্ত করিয়া মানলিয়সকে তাঁহারা আদালতে আনয়ন করিলেন। অপর মানলিয়সকে লোকেরা যখন প্রাণদণ্ড করিতে উদ্যত হইলেন তখন তিনি তাঁহারদিগকে কহিলেন যে আমি যে দুর্গ প্রাণপণে রক্ষা করিয়াছিলাম তাহার প্রতি আপনারা অবলােকন করুন এবং কথিত আছে যে ঐ দুর্গ যতক্ষণ লোকেরদের দৃষ্টিগোচর ছিল ততক্ষণ ঐ লােকেরদিগকে মানলিয়সের প্রাণ দণ্ড করিতে রাজসভ্যেরা কোন প্রকারেই লওয়াইতে পারিলেন না। পরে আপনারদের অভিপ্রেত সিদ্ধকরণার্থ আদালত স্থানান্তরে স্থাপন করিলে মানলিয়সের প্রাণ দণ্ড হইল এবং যে পর্ব্বতহইতে তিনি রোমনগরের শত্রুরদিগকে তাড়িয়া দিয়া ছিলেন সেই পর্ব্বতহইতে তিনি আপনি নিক্ষিপ্ত হইয়া হত হইলেন।
মানলিয়সের এতদ্রূপ প্রাণ দণ্ড হওয়াতে ইতর লো কেরা ভগ্নোদ্যম হইল। ইহার পূর্ব্বে ইতর লােকেরদের সপক্ষহওয়াপ্রযুক্ত কুলীনের কাসিয়স ও মেলিয়সকে যে হত করিয়াছিলেন ইহা তাঁহারা বিস্মৃত ছিলেন না। এতদ্রূপে তাঁহারা দেখিলেন যে যত লোক তাঁহারদের অনুকূল হয় তাহারা সকলই একাদিক্রমে বলপূর্ব্বক হত হইতেছে এবং তাহারদের দুঃখের যে কখন শেষ হইবে এমত সম্ভাবনাও থাকিল না। গলেরদের আক্রমণেতে এবং রোমনগরের লুঠ হওয়াতে তাহারদের কর্জের অত্যন্ত বৃদ্ধি হইয়াছিল এবং উত্তমর্ণেরদের কর্ত্তৃক পূর্ব্বাপেক্ষা তাহারা অধিক ক্লেশ পাইতে লাগিল। কিন্তু যে সময়ে বোধ হইল যে কুলীনেরা। এইক্ষণে দেশের তাবৎ প্রভুত্ব চিরকালের নিমিত্ত প্রাপ্ত হইয়াছেন এবং ইতর লোক দাস্যাবস্থায় পতিত হইয়া উদ্ধারের বিষয়ে ভরসা শূন্য হইয়াছে এমত সময়ে দুই জনের সাহস ও স্থিরপ্রতিজ্ঞতাতে লোকের নত উদ্যম পুনর্ব্বার উত্থিত হইল এবং রাজ্যের অতিসম্ভ্রান্ত পদ প্রাপণের পথ তাঁহারদের প্রতি মুক্ত হইল। এই বিষয় অতিস্পষ্টরূপে ব্যাখ্যাকরণার্থ পাঠকগণকে জ্ঞাপন করিতে হয় যে এই কালপর্য্যন্ত রোমানেরদের কুলীনেরা এক স্বতন্ত্র জাতি ছিলেন এবং বাহ্মণ জাতি যেমন আপনারদিগকে শূদ্রাদি অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ জ্ঞান করেন তেমন তাঁহারাও ইতর লোক অপেক্ষা আপনার দিগকে উত্তম বোধ করিতেন। কুলীনেরা আজন্ম মর্য্যদান্বিত ও ধনী তাঁহারাই রাজসভ্য ও রাজ্যের তাবৎ কার্য্য চালাইতেন তাঁহারাই যুদ্ধকালীন সৈন্যের সেনাপতি হইতেন এবং নগরের রক্ষণাবেক্ষণ করিতেন ও তাবৎ মোকদ্দমার বিচার করিতেন এবং পৌরোহিত্যের অতিগুরুতর কার্য্যে কেবল তাঁহারদেরই অধিকার ছিল। প্লিবিয়ন অর্থাৎ ইতর লোক সামান্যতঃ দরিদ্র ও পরিশ্রমী এবং তাহারাই সৈন্যেরদের মধ্যে সিপাহী। ইহার পূর্ব্বে ঐ দুই জাতির পরস্পর বিবাহ সম্বন্ধ হইত না কিন্তু ঐ ঘৃণার্হ ব্যবস্থা কিয়ৎ কালাবধি রহিত হইয়াছিল। ইতিমধ্যে ইতর লোকেরদের কেহ কেহ ধন ও মান প্রাপ্ত হইয়াছিলেন এবং কুলীন বংশ্যের মধ্যে তাঁহারদের বিবাহ হওয়াতে তাঁহারা সুতরাং দেশীয় অতিসম্ভ্রান্ত পদ প্রাপ্ত হইতে অত্যন্ত ইচ্ছুক হইলেন। অতএব নগরের নানা দলস্থেরদের এতদ্রূপ অবস্থা থাকিতে লিসিনিয়স ও সেক্ষ্টস নামক লােকেরদের দুই জন ত্রৈব্যুন লিসিনিয়ান ব্যবস্থা নামে অতিপ্রসিদ্ধ ব্যবস্থার প্রস্তাব করিলেন। ব্যবস্থার নিয়ম এই২ প্রথমতঃ যুদ্ধসম্পর্কীয় ত্রৈব্যুনের পরিবর্ত্তে কন্সল পুনঃ মনােনীত হইবেন এবং কনসলদ্বয়ের মধ্যে এক জন ইতর লোক থাকিবেন। দ্বিতীয়তঃ কর্জের সুদ বলিয়া যত টাকা দেওয়া গিয়া থাকে তাহা আসল টাকাহইতে বাদ দেওয়া যাইবে এবং আসল টাকা বার্ষিক তিন কিস্তিতে পরিশোধ করা যাইবে। তৃতীয়তঃ রোমনগরস্থ কেহই পনর শত বিঘার অধিক ভূমি আপন হস্তে রাখি তে পারিবেন না এবং কুলীনেরা যে ভূমি ভোগ দখল করিয়া আসিতেছেন তাহার খাজানা সরকারী ভাণ্ডারে জমা করিয়া দিবেন। অতএব যে ব্যবস্থার দ্বারা ভারতবর্ষস্থ শূদ্রজাতীয়েরদের তুল্য অপমানিত ব্যাক্তিরদিগকে ধনও মান প্রদান করিতে প্রস্তাব হয় ঈদৃশ ভারি ব্যবস্থা যে বিনা বিবাদেই সিদ্ধ হইবে এমত কাহারো বোধগম্য ছিল না। রাজসভাস্থেরা যথাসাধ্য দশ বৎসর ব্যাপিয়া ঐ ব্যবস্থা সিদ্ধ হওনের প্রতিবন্ধকতা করিলেন এবং নগরীয় শাসন অতিবিশৃঙ্খল হইয়া উঠিল। কিন্তু লিসিনিয়স ঐ প্রস্তাবিত ব্যবস্থার কোন অংশ ত্যাগ না করিতে নিশ্চয় করিয়া আশ্চর্য্য স্থিরপ্রতিজ্ঞাপূর্ব্বক পরিশেষে ঐ বিষয় রাজসভাস্থেরদিগকে স্বীকার করাইলেন। অতএব খ্রীষ্টীয়ান শকের ৩৬৬ বৎসর পূর্ব্বে ইতর লোকেরা কন্সলীপ দের অধিকার প্রাপ্ত হন এবং ক্রমশঃ তৎপর ত্রিশ বৎসরের মধ্যে অন্যান্য সম্ভ্রান্ত পদেরও অধিকারী হইলেন শেষ বিষয় অর্থাৎ পৌরােহিত্যের অধিকার খ্রীষ্টীয়ান শকের পূর্ব্বে ৩০০ বৎসরে তাঁহারদিগকে প্রদত্ত হয়। এতদ্রূপ রাজকীয় ক্ষমতার বিষয়ে কুলীন ও ইতর লােকেরদের সমান অধিকার হওয়াতে ঐ দুই জাতীয়েরদের মধ্যে ঈর্ষাঈর্ষি ভাব দূরীকৃত হইল এবং এইকাল রোমানেরদের প্রকৃত মহিমার আরম্ভ কালই অবশ্য গণিতে হইবে। ইহার পর রাজ্যের মধ্যে সর্ব্বাপেক্ষা গুণোপেত ব্যক্তিদের শক্তি রাজসভাস্থেরদের বুদ্ধির দ্বারা অন্যান্য দেশ জয়করণ এবং রাজ্যবর্দ্ধন বিষয়ে নিযােজিত হইল। এই নিয়মকরণ সময়ে কন্সলী পদহইতে জজীকর্ম্ম পৃথক্করণের অন্য এক নিয়মও স্থির হয় এবং মোকদ্দমা নিষ্পত্তি করণার্থ প্রেটরনামক এক জন নূতন অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন।
অপর কন্সলী পদে ইতর লোকেরদের অধিকার হওয়াঅবধি সীমনীয় যুদ্ধের আরম্ভপর্য্যন্ত চব্বিশ বৎসর গত হয়। তৎসময়ে রোমনগরীয় ভূমিতে দৈবকৃত এক খাত হইয়া উঠিল তাহাতে পুরোহিতেরা কহিলেন যে রোমানেরা যাহা সর্ব্বাপেক্ষা মূল্যবান জ্ঞান করেন তাহা ঐ খাতের মধ্যে নিক্ষেপ না করিলে খাত বন্দ হইবে না। ইহা শুনিয়া কর্সিয়সনামক অতিসাহসি এক ব্যক্তি অস্ত্রধারী হইয়া অশ্বারোহণে ঐ খাতের নিকটে আগমন করিয়া কহিলেন যে অস্ত্র ও সাহসব্যতিরেকে রোমানেরদের বহুমূল্য বস্তু আর কি আছে ইহা কহিয়া ঐ খাতের মধ্যে ঝাঁপ দিয়া পড়িলেন কথিত আছে যে ঐ খাত তৎক্ষণাৎ বন্ধ হইল। অনন্তর গলেরা পুনর্ব্বার রোমানেরদের প্রতি আক্রমণ করিলেন কিন্তু মানলিয়সের অদ্ভুত সাহসপ্রযুক্ত তাঁহারা তাড়িত হইলেন। ঐ মানলিয়স গলেরদের মধ্যে বৃহৎ কায় এক জন যোদ্ধার সঙ্গে স্বয়ং যুদ্ধ করিয়া তাঁহাকে হত করেন। এই চব্বিশ বৎসর ব্যাপিয়া লিসিনিয়ন ব্যবস্থা অন্যথাকরণপূর্ব্বক দুই জন কুলীন্কে কনসলী পদে নিযুক্ত করিতে যদ্যপি রাজসভ্যেরা অত্যন্ত মনোযোগী হইলেন তথাপি ইতর লোকেরা ক্রমশঃ বর্দ্ধিত হইতে লাগিল। এতকালপর্য্যন্ত রোমানেরা আপনারদের নগরের চতুর্দ্দিগে কেবল পনর ক্রোশের মধ্যে যুদ্ধ করিয়া ছিলেন কিন্তু ঐ চক্রের মধ্যে তাঁহারদের তাবৎ শত্রু পরাজিত হওয়াতে তাঁহারা এইক্ষণে আরো অধিক সাহসিক এবং যতেন দূরদেশ জয়করণের উদ্যোগেতে অত্যন্ত উৎসাহী হইলেন এবং তাবৎ ইটালি দেশ অধিকার করণের আশা তাঁহারদের মনের মধ্যে বিরাজমান হইল।
শহর পত্তনহওনের ৪১০ বৎসর পরে খৃষ্টীয়ান শকের পূর্ব্বে ৩৪২ সালে রোমানেরদের ও সামনীয়েরদের প্রথমতঃ প্রাতিকূল্যরূপে ছোঁয়াছুঁয়ি হইল। যে সময়ে রোম নগরস্থেরা চতুর্দ্দিক্স্থ তাবৎ প্রতিবাসিরদের প্রতি যুদ্ধে রত তৎসময়ে সামনীয়েরা দক্ষিণ ইটালি দেশে আপনারদের অধিকার বাড়াইলেন। পরে সামনীয়েরা কাম্পানীয়া দেশ আক্রমণ করিলেন। কাম্পানীয়েরা তাঁহারদি গকে নিবারণ করিতে অক্ষম হইয়া রোমানেরদের সাহায্য প্রার্থনা করিলেন কিন্তু রােমানেরা সাহায্য করণবিষয়ে গতিক্রিয়া করাতে কাম্পানীয় উকীলেরা স্বদেশস্থ লোক কর্ত্তৃক পূর্ব্বে সুশিক্ষিত হইয়া কহিলেন যে আপনারদিগকে ও আপনারদের দেশ ও যথাসর্বস্ব তােমারদিগকে আমরা সমর্পণ করিলাম। তাহাতে রোমানেরা অগৌণে এতদ্রূপ অর্পণবিষয়ে সমিনীয়েরদিগকে সম্বাদ প্রেরণ করিয়া কহিলেন যে কাম্পানীয়েরা এইক্ষণে রােমানেরদের প্রজা হইল অতএব তােমরা তাহারদিগকে এতদ্রূপ ক্লেশ দেওয়া রহিত কর। সমিনীয়েরা অতিগর্ব্বপূর্ব্বক তাহা স্বীকৃত না হওয়াতে যুদ্ধ ঘটিল। ঐ যুদ্ধ ষাটি বৎসর ব্যাপিয়া থাকে পরিশেষে রোমানেরা তাবৎ দক্ষিণ ইটালি দেশ অধিকার করেন।
যুদ্ধের প্রথম বৎসরই রোমানেরা সামনীয়েরদিগকে দুই বার পরাজয় করেন। দ্বিতীয় বৎসরে যে এক বৃহৎ দল রােমান সৈন্যেরা কাম্পানীয়েরদের অতি সুখসম্পাদক দেশে বাসকরত সৎস্বভাবাদি রহিত হইয়া অবাধ্য হইয়াছিল তাহারদিগকে দমন করাতে কাল গত হইল। তৃতীয় বৎসরে রোমানেরা সামনীয়েরদের ক্ষেত্রের শস্যাদি লুঠপাঠ হওয়াতে তাঁহারা একেবারে ভগ্নোদ্যম হইয়া শান্তি প্রার্থনা করিলেন এবং খ্রীষ্টীয়ান শকের ৩৪০ বৎসরের পূর্ব্বে শান্তি সম্পন্ন হয়। সামনীয়েরদের যুদ্ধ সমাপ্ত হইতেই তদপেক্ষা ভয়ানক রােমানেরদের অন্য এক প্রবল বিপক্ষ রণস্থলে উপস্থিত হইল। যে লাটিন দেশীয়েরা ইহার দেড়শত বৎসর পূর্ব্বে রেগিলস হ্রদের নিকটে সম্পূর্ণরূপ পরাজিত হইয়া তৎপরঅবধি করিয়া রোমানেরদের সঙ্গে অতিদৃঢ় নির্বন্ধে থাকিলেন এবং যে লাটিন লােক লইয়া রোমানেরদের অধিকাংশ সৈন্য হইত এই লাটিন লোকেরা অবাধ্য হইয়া কাম্পানীয়েরদের সঙ্গে মিলিল। কাম্পানীয়েরা আপনারদের বিপক্ষ সামনীয়েরদিগকে রোমকর্ত্তৃক দমন হইতে দেখিয়া রোমানেরদের যোয়ালহইতে আপনারদিগকে মুক্ত করিতে চেষ্টা পাইলেন। তাহাতে রোমানের রাজসভা লাটিনেরদের দশ জন অধ্যক্ষকে তৎক্ষণাৎ তলব করিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন যে তোমরা কি নিমিত্ত যুদ্ধার্থ প্রস্তুত হইতেছ। তাঁহারা উত্তর করিলেন যে আমারদের সহযোগে রোম রাজ্য বর্দ্ধিত হইয়াছে অতএব আমারদের দাওয়া এই যে রোমানেরা ও আমরা সর্ব্ববিষয়ে সমানাধিকারী হই এবং রাজসভাতে অর্দ্ধেক আমারদের জাতীয় লোক থাকেন এবং প্রতিবৎসরে যে দুই জন করিয়া কন্সল নিযুক্ত হয় তাহার এক জন লাটিন লোক হন।
এই দাওয়া রোমানেরদের রাজসভ্যেরা অতিতুচ্ছ করিয়া যুদ্ধার্থ প্রস্তুত হইলেন এবং ঐ যুদ্ধে অনেক রক্তপাত হওনের সম্ভাবনা হইল। এইক্ষণে যাঁহারদের প্রতি রোমানেরদের যুদ্ধ করিতে হইল তাঁহারা বহুকাল অবধি রোমানেরদের শ্রেণীর মধ্যে থাকিয়া তাঁহারদের পক্ষে যুদ্ধ করিয়াছিলেন। উভয় জাতীয়ের একই ভাষা ও এক প্রকার অস্ত্রশস্ত্রাদি অতএব সৈন্যেরদিগকে অতিকঠিন শাসনে রাখণের আবশ্যক হওয়াতে হুকুম হইল যে কোন সেনাপতি বা সিপাহী স্বীয় শ্রেণী ভঙ্গ করিয়া কদাচ যুদ্ধ করিবেন না। যুদ্ধের কএক দিবস পূর্ব্বে মানলিয়স কনসলের পুত্ত্র আপনার অধীন এক দল সৈন্য লইয়া ভ্রমণ করত বিপক্ষের এক দল সৈন্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করাতে বিপক্ষ সেনাপতি তাঁহাকে একাকী যুদ্ধ করিতে আহ্বান করিলেন। যুব মানলিয়স স্বীয় যৌবধর্ম্মের তেজে সেনাপতির আজ্ঞা বিস্মরণেতে অগ্রসর হইয়া শত্রুর সঙ্গে যুদ্ধ করত তাহাকে হত করিলেন এবং হর্ষচিত্ত হইয়া বিপক্ষের অস্ত্রসমেত পিতার তাম্বুতে উপস্থিত হইলেন। তাঁহার পিতা তৎক্ষণাৎ স্বীয় আজ্ঞা উলঙ্ঘন দোষেতে তাঁহার মস্তকচ্ছেদন করিতে হুকুম দিলেন এবং যদ্যপি এই অনাবশ্যক কাঠিন্য ব্যবহারেতে শিবিরের মধ্যে অনেক কলহ হইল তথাপি তদ্দ্বারা তাবৎ সৈন্যেরা অত্যন্ত আজ্ঞাধীন হইল এবং তৎপরেই যে যুদ্ধ হয় তাহাতে বড় উপকার দর্শিল। পরিশেষে যে উভয় জাতীয় সৈন্যেরা বারম্বার একই পতাকার অধীনে যুদ্ধ করিয়া ছিল তাহারা বিষুবিয়স পর্ব্বতের তলে পরস্পর সাংঘাতিক যুদ্ধে প্রবর্ত্ত হইল। ঐ যুদ্ধে প্রথমত উভয়দিগস্থ সৈন্যেরদের সমান সাহসই প্রকাশ হইল কিন্তু পরিশেষে রোমানেরদের বামদিক্স্থ সৈন্যেরা কিঞ্চিৎ হঠিতে লাগিলে তাঁহারদের সেনাপতি ডিসিয়স মস স্বপক্ষ সৈন্যকে জয়ী করণার্থ আপনার প্রাণ উৎসর্গ করিতে নিশ্চয় করিয়া বিপক্ষ সৈন্যেরদের ঘন শ্রেণীর উপরে ধাবমান হইয়া হত হইলেন। ইহা দেখিয়া তাঁহার সৈন্যেরা তৎক্ষণাৎ পুনর্ব্বার ধাবমান হইয়া জয়ী হইল। কিন্তু লাটিনেরা যদ্যপি এই মহাযুদ্ধে পরাভূত হইলেন তথাপি আগামি বৎসরের যুদ্ধের পূর্ব্বে দমন হইলেন না। তাঁহারদের প্রধান২ নগরস্থেরা পূর্ব্বে যদনুসারে রোমানেরদের অল্প বা ভারিরূপে প্রতিকুল্যাচরণ করিয়াছিলেন তদনুসারে তাঁহারদিগকে কোমল বা কঠিন প্রতিফল দিলেন। কিন্তু লাটিনেরা ইহার পূর্ব্বে রোমানেরদের সঙ্গে এক প্রকার সমানরূপে সন্ধিবন্ধ ছিলেন এইক্ষণে তৎপরিবর্ত্তে তাঁহারা রোমানেরদের প্রজা হইলেন। যে কাম্পানীয় নগর লাটিনেরদের সাহায্য করিয়া ছিল রোমানেরা তাহারদের প্রতি কিছুমাত্র অনুগ্রহ প্রকাশ না করিয়া তাহারদের ভূমিসকল তাহারদের হাতছাড়া করিয়া রোমীয় কলোনিরদিগকে দিলেন। তৎসময়ে রোমানেরদের রাজসভ্যেরা যেমন প্রতাপান্বিত ও চতুর তত্তুল্য প্রতাপশালী প্রায় কোন রাজসভ্যই ছিলেন না এবং তাঁহারা নিত্যই উত্তম২ নূতন নিয়ম অবলম্বন করিতে ব্যগ্র ছিলেন। লাটিনেরদের পরাজয় হওনের কিয়ৎকালানন্তর প্রতিবৎসরে নূতন সৈন্য সংগ্রহকরণের যে প্রাচীন রীতি ছিল তাহা পরিবর্তন করিয়া সেনাপতির পরিবর্ত্তন হইলেও সৈন্যেরদিগকে রণস্থলে থাকিতে হুকুম দিলেন। এবং তাহার কিঞ্চিৎ কাল পরে তাহারা পুনশ্চ উত্তম এক নূতন নিয়ম অবলম্বন করিয়া সেনাপতিরদের বার্ষিক পরিবর্ত্তন রহিত করিলেন এবং বৎসরান্তে ঐ সেনাপতিরদিগকে প্রোকনসল নাম দিয়া সেই সৈন্যের অধ্যক্ষতা কার্য্যে বজায় রাখিলেন।
সমনীয়েরদের পূর্ব্বোক্ত শান্তি হওনের বার বৎসর পরে রোমানেরা তাঁহারদের অতিসন্নিহিত স্থানে এক কলোনি সংস্থাপন করাতে তাঁহারা অত্যন্ত রাগান্ধ হইলেন এবং খ্রীষ্টীয়ান শকের ৩২৭ বৎসর পূর্ব্বে পুনর্ব্বার যুদ্ধ আরম্ভ হইল। ঐ যুদ্ধের প্রথম সাত বৎসরে কোন স্মরণীয় কার্য্য হইল না কিন্তু রোমানেরা নিয়তই জয়ী ছিলেন। এই সময়ে রোম নগরে এমত ব্যবস্থা হয় যে অধমর্ণকে কর্জের নিমিত্তে কয়েদ করা যাইবে না এবং কর্জের দায়ী অধমর্ণের সম্পত্তি মাত্র জ্ঞান করা যাইবে। আশ্চর্য্য বিষয় এই যে এইক্ষণকার সভ্য দেশের মধ্যে অগ্রগণ্য যে ইঙ্গলণ্ড ও আমেরিকা এই দুই দেশের মধ্যেও অদ্যাপি এমত যথার্থ ব্যবস্থা নিরূপণ হয় নাই। অপর যুদ্ধের সপ্তম বৎসরে অস্ত্র ব্যাপারে অতিনিপুণ পণ্টিয়সনামক ব্যক্তি সামনীয়েরদের সৈন্যাধ্যক্ষতা কর্ম্ম প্রাপ্ত হইয়া রোমান সৈন্যেরদিগকে পর্ব্বতদ্বয়ের মধ্যে অতিসঙ্কীর্ণ এক উপত্যকা ভূমিতে কৌশলে আনয়ন করিয়া তাহারদের পথ অবরোধ করিলেন এবং তাবৎ সৈন্যেরা সামনীয়েরদের হাতে পড়িয়া এক প্রকার তেকাঠার মধ্যে দিয়া চালিত হইল। রোমান সৈন্যেরদের বিবেচনায় ইহাহইতে অধিক অপমানের বিষয় ছিল না এই অত্যন্ত অপমানক ব্যাপার কডিন ফর্কনামক স্থানে হয় এবং এই অখ্যাতি বহু বৎসরপর্য্যন্ত ব্যাপিয়া রোমানেরদের মনোমধ্যে থাকিল। তাঁহারদের ঐ স্থানে পরাজয়ের কারণ এই যে পর্ব্বতোপরি যুদ্ধ করিতে তাঁহারদের অভ্যাস ছিল না কিন্তু তদ্রূপ যুদ্ধেও অতিশীঘ্র তাঁহারা সুশিক্ষিত হইলেন। সামনীয়েরদিগকে এই অপমানের প্রতিফল দিতে রোমানেরা বহুকালপর্য্যন্ত ত্রুটি করিলেন না। পাপিরিয়স কর্সরনা মক তাঁহারদের প্রধান সেনাপতি সামিনীয়েরদিগকে অনেক বার পরাজয় করেন। ইতিহাসবেত্তারা সেকন্দরশাহের সঙ্গে পাপিরিয়স কর্সরের তুলনা করেন বটে কিন্তু সে মিথ্যা।
কিঞ্চিৎকালপরে রোমানেরদের প্রাচীন শত্রু ইজুরিয়ার লোকেরা পুনর্ব্বার অস্ত্রধারণ করিলে রোমান সেনাপতি ফাবিয়স অতিসাহসপূর্ব্বক সিমিনিয়াননামক বন ভেদ করিয়া গলেরদের অধিকারের সীমাপর্য্যন্ত তাবৎ টস্কানি অর্থাৎ ইত্রুরিয়া দেশ অধিকার করিলেন। পূর্ব্বে ঐ বন অলঙ্ঘ্য সীমার ন্যায় বোধ করা যাইত অপর একপক্ষে রোমানেরদের অন্য পক্ষে ইরিয়া ও সামনীয়া ও ইটালির দক্ষিণ দিগস্থিত নানা দেশীয়েরদের যত বার যুদ্ধ হয় তাহার সবিশেষ বিবরণ লিখিলে কেবল পাঠকগণের পাঠে পরিশ্রম মাত্র হয় অতএব এই মাত্র বক্তব্য যে ঐ যুদ্ধ সাতান্ন বৎসর ব্যাপনের পর রোম নগরের আন্তরিক সুস্থির ও শান্তি ছিল এবং বিদেশীয় রাজ্যসম্পর্কে অতি সৌষ্ঠব ছিল। বিশেষতঃ ইত্রুরিয়ার অধিকাংশ পরাজিত সামনীয় দেশ দান্ত ঈশান কোণস্থ অমব্রিয়া দেশ ও অগ্নি কোণস্থ লুকানিয়া দেশ রেমানেরদের নিতান্ত বাধ্য ছিল এবং রোমরাজ্যের অধিকারের অত্যন্ত বৃদ্ধি হইয়াছিল। ইটালির সর্ব্বত্র তাঁহারদের কলোনি স্থাপিত হইয়াছিল তদ্দ্বারা অবাধ্য লোকেরদের উৎসাহ নিয়ত দমন থাকিল। কিন্তু এতদ্রূপ শান্তি সুস্থির বহুকালস্থায়ী হইল না। ইটালিদেশস্থ সকলের এমত নিশ্চয় বোধ হইল যে রোমানেরদের পরাক্রমের অভিলাষ অশেষ অতএব রোমীয়েরদের দিন২ বর্দ্ধিষ্ণু পরাক্রমেতে ভীত হইয়া ইটালিদেশীয়েরা আপনারদের স্বাধীনতা রক্ষণার্থ চূড়ান্ত এক উদ্যোগকরণ অভিপ্রায়ে একবাক্য হইয়া অস্ত্রধারণ করিলেন। ইটালি দেশের মধ্যে সর্ব্বাপেক্ষা সুখেরত এবং তুচ্ছনীয় টারণ্টিন নগরস্থেরদের প্রবোধে এই সংসর্গ খ্রীষ্টীয়ান শকের পূর্ব্বে ২৮১ সালে সম্পন্ন হয়। কিন্তু রোমানেরদের যদ্যপি এককালীন উত্তর ও পূর্ব্ব ও দক্ষিণদিগে যুদ্ধ করিতে হইল তথাপি তাঁহারা সর্ব্বত্র সম্পূর্ণরূপে জয়ী হইলেন। ঐ সকল লোকের সম্মিলের গুপ্তমূল টারণ্টিন লোকেরা পরিশেষে স্পষ্টতঃ শত্রুতাচরণ করিয়া তাঁহারদের বন্দরে প্রবিষ্ট রোমানেরদের জাহাজ আক্রমণ করিল এবং যে রোমানেরা হাতে পড়িলেন তাঁহারদের কাহাকে হত কাহাকে বা গোলামের ন্যায় বিক্রয় করিল। রোমানেরা তৎক্ষণাৎ ইহার প্রতিকারের দাওয়া করণার্থ সেখানে দূত প্রেরণ করিলেন কিন্তু নির্বোধ টারণ্টিন লোকেরা অপূর্ব্ব অপমান করিয়া তাহারদিগকে বিদায় করিল। কিন্তু যখন টারণ্টিনেরা এমত বিবেচনা করিল যে আমরা অত্যন্ত দুর্ব্বল ক্ষুদ্র জাতীয় হইয়া ইটালির জয়ি মহাবল পরাক্রান্ত রেমানেরদিগকে রাগাইয়াছি তখন তাহারা সাহায্য প্রাপণার্থ ইতস্ততঃ অবলোকন করিয়া পরিশেষে ইপাইরসের রাজা পিরসের নিকটে সহকারিতা প্রার্থনা করিল। এতদ্বিষয় পূর্ব্বে কিঞ্চিৎ লেখা গিয়াছে।
গ্রীকদেশস্থ ইপাইরসের রাজা পিরস যুদ্ধ বিষয়ে অতি নিপুণ কিন্তু অত্যন্ত অস্থিরচিত্ত। তিনি ইটালিস্থ হইয়া অসীম ঐশ্বর্য্য প্রাপণ সম্ভাবনায় টারণ্টিনেরদের ঐ প্রস্তাব গ্রহণ করিলেন। অতএব এক দল অতিসুশিক্ষিত সৈন্য লইয়া গ্রীক দেশহইতে জাহাজ আরোহণে হস্তিসমেত ইটালি দেশে নির্বিঘ্নে উত্তীর্ণ হইলেন। রোমানেরা তৎক্ষণাৎ সৈন্য প্রেরণ করিয়া যুদ্ধ আরম্ভ করিলেন কিন্তু রোমীয় কনসল বিলক্ষণ পরাজিত হইলেন। ঐ পরাজয়ের মুখ্যকারণ ঐ হস্তী যেহেতুক রোমানেরদের সিপাহী কিম্বা অশ্ব কেহই হস্তিকে পরিচিত ছিল না। পিরসের এই প্রথম জয় পাণ্ডোসিয়া স্থানে খ্রীষ্টীয়ান শকের ২৮০ বৎসরের পূর্ব্বে হয়। তৎপরে তিনি সম্ভ্রমপূর্ব্বক এক সন্ধির বি ষয় অনেক কথোপকথন রোমানেরদের সঙ্গে করিলেন। কিন্তু তাঁহারা কহিলেন যে তুমি যত কালপর্য্যন্ত ইটালি দেশে থাকিব সেপর্য্যন্ত সন্ধির কোন প্রস্তাবই আমরা শুনিব না। তৎপর বৎসরে অপর একদল সৈন্য পিরসের প্রতিকূলে প্রেরিত হইল। তাহারদেরও আস্ক্যুলম স্থানে সম্পূর্ণরূপে পরাজয় হয়। এই দুই যুদ্ধে পিরসের শ্রেষ্ঠ সেনাপতি ও সিপাহীরদের এতলোক মারা পড়িল যে তিনি কহিলেন এতদ্রূপ আর একবার জয়ী হইলে আমার সর্ব্বনাশ। অতএব ইটালি দেশ কোন প্রকারে ত্যাগ করিতে মনস্থ করিতে লাগিলেন। এতদ্রূপ অস্থির অবস্থায়ও শিশিলি উপদ্বীপনিবাসিরা তাঁহার সাহায্য প্রার্থনা করিলেন। এবং তিনি হৃষ্টমনা হইয়া তাহা স্বীকার করিলেন যেহেতুক তিনি বোধ করিলেন যে এতদ্রূপে আপনার সম্ভ্রমে কলঙ্ক না জন্মাইয়া ইটালি দেশ ত্যাগ করিয়া যাইতে পারি। ইটালি দেশে উত্তীর্ণ হওনের তিনবৎসর পরে তিনি তদ্দেশ ত্যাগ করেন। পিরস এতদ্রূপে প্রত্যাগত হইলে ইটালির দক্ষিণদিকস্থ যে জাতীয়েরা তাঁহার সাহায্য করিয়াছিল তাহারদিগকে বিলক্ষণ শাস্তি দিতে লাগিলেন এবং তাহারা পিরসকে ফিরাইয়া আনিতে অত্যন্ত ব্যগ্র হইল। ইতিমধ্যে শিশিলি দেশে তাঁহার ব্যাপারের তাদৃশ সৌষ্ঠব না হওয়াতে তিনি আপন সম্ভ্রম বজায় রাখিয়া ঐ উপদ্বীপ ত্যাগ করিতে এই সদুপায় প্রাপ্তে আহ্লাদ পূর্ব্বক ইটালি দেশে প্রত্যাগমন করিলেন। শিশিলি উপদ্বীপ ত্যাগকরণসময়ে তিনি তটের প্রতি দৃক্পাত করিয়া কহিলেন যে রোমান ও কার্থাজীয়েরদের যুদ্ধার্থ কি উত্তম স্থান আমরা ত্যাগ করিয়া চলিলাম এবং ঐ ভবিষ্যৎ বাণী অতিশীঘ্র সিদ্ধ হইল। পরে ইটালি দেশে পঁহুছিলে তিনি আপন সহকারি লোকেরদের সৈন্য একত্র করিলেন তাহাতে আশী হাজার পদাতিক ও ছয় হাজার অশ্বারূঢ় দৃষ্ট হইল। তৎপরে বেনিবেণ্টম স্থানে তাঁহার ও রোমানেরদের অতিসাংঘাতিক এক যুদ্ধ হয় ঐ যুদ্ধে তাঁহার পঁচিশ হাজার লোক মারা পড়ে এবং তাঁহার শিবি রও রোমানেরদের হস্তগত হয়। রোমানেরা ঐ শিবিরে প্রবেশ করত দেখিয়া চমৎকৃত হইলেন এবং তৎপর অবধি ঐ শিবিরের রীতিমতে আপনারদের ছাউনি স্থাপন করিতে লাগিলেন। কিঞ্চিৎকাল পরে পিরস ইটালি দেশ ত্যাগ করিলেন এবং পূর্ব্বোক্ত কথিতমতে আর্গস নগরে প্রবেশ করণসময়ে হত হইলেন।
পিরসের পরাজয়হওনের এগার বৎসর পরে কার্থাজীয়েরদের সঙ্গে প্রথম যুদ্ধ ঘটে। ঐ এগার বৎসর ব্যাপিয়া রোমানেরা সন্ধিবদ্ধ দেশীয়েরদের ও আপনারদের প্রজার অবাধ্যতা হওনবিষয়ে দণ্ড করিলেন এবং ইটালি দেশের দক্ষিণ অঞ্চলে আপনারদের পরাক্রম মূলবন্ধ করিলেন অতএব কার্থাজীয়েরদের সঙ্গে যুদ্ধ হওনের পূর্ব্বেই ইত্রুরিয়ার উত্তর সীমাঅবধি দক্ষিণে ইয়োনিয়া সমুদ্রপর্যন্ত এবং পূর্ব্ব পশ্চিমদিগের এক সমুদ্রঅবধি অপর সমুদ্রপর্যন্ত তাবৎ দেশ তাঁহারদের অধিকার হইয়াছিল এবং সিসাল্পাইন নামে প্রসিদ্ধ গলেরদের ব্যতিরেকে ইটালি দেশে অদান্ত আর কোন জাতীয় থাকিল না। আল্প পর্ব্বতের দক্ষিণ সীমাতে বাসকরত তাহারদের ঐ নাম হয়। রোমানেরা ইহার সমকালীন পরাজিত দেশীয়েরদের রক্ষণাবেক্ষণের রীতি এবং আপনারদের পরাক্রম মূলীভূতকরণের নিয়ম স্থির করিলেন। তাহা এই যত দেশ রোমানেরদের বাধ্য হইল তত্তৎ দেশে নিয়ত রোমনগরস্থ লোকেরদিগকে প্রেরণ করিয়া কলোনিস্বরূপ স্থাপন করিলেন এবং পরাজিত ব্যক্তিরদের ভূমি তাঁহারদের হাতছাড়া করিয়া ঐ কলোনিরদিগকে দিলেন। ঐ কলোনির দ্বারা দুই উপকার দর্শিল প্রথমতঃ অবাধ্য অথচ বিঘ্নজনক রোমনগরীয় প্রচুর প্রজার সংখ্যা কম হইল এবং যত দেশে ঐ কলোনি সংস্থাপিত হয় সেই সকল দেশে রোমনগরের পরাক্রম অতিদৃঢ়ীভূত হইল। ইটালি দেশের নানা রাজ্য ও নগর নানা প্রকারে রোমের সঙ্গে সম্বন্ধ ছিল প্রত্যেকের সঙ্গে যে পৃথক্২ সন্ধি হইয়াছিল তদনুসারে তাহারদের সঙ্গে সম্পর্কের ভাবও থাকিল কোন২ নগরীয় ও জাতীয়েরদিগকে রোম নগরস্থেরদের যেমন ক্ষমতা তদ্রূপ ক্ষমতা দেওয়া গেল। অন্য২ নগরের নাগর্য্য শাসনের ভার নগরীয়েরদের হস্তে থাকিল কিন্তু রোমানেরদের প্রভুত্ব তাহার উপরে বজায় রহিল। কাহারো২ সঙ্গে সন্ধি ছিল। অপরেরা প্রজারদের মধ্যে গণ্য হইয়া রোমানের রাজসভ্যেরা তাহারদের উপরে অধ্যক্ষ নিযুক্ত করিলেন। অতএব রোমানেরদের তৎসময়ই যে গবর্ণমেণ্টের সম্পূর্ণ ভদ্রতার সময় এমত কহা যাইতে পারে যেহেতুক কুলীন ও ইতর লোকেরদের মধ্যে যে বিশেষ ছিল সে কেবল নামমাত্র এবং দেশীয় ঐশ্বর্য্য বৃদ্ধি করণার্থ তাবৎ নগরস্থ বর্গের শক্তি যোগ করা গেল। যদ্যপি রাজসভা ক্রমশঃ অত্যন্ত প্রবল হইয়া আসিতেছিল তথাপি দেশীয় কার্য্য পরিমিত আচরণরূপে চলিল কিন্তু পরে যখন রোমানের তাবৎ পৃথিবীর লুঠেতে ভারাক্রান্ত হইলেন তখন ঐ পরিমিতাচার একেবারে দূর হইল।
From the rebuilding of the City to the beginning of
the first Punic War.
The Romans had scarcely completed the rebuilding of their city before the neighbouring nations with whom they had been at war from the foundation of their state, again appeared in arms against them; they were however completely subdued by Camillus, the greatest captain of that age. Four years after the departure of the Gauls, Manlius, whose valour, as we have already related, had saved the Capitol, taking compassion on the poor who had been obliged to contract fresh debts to rebuild their houses, and who were harassed beyond example by the rich patricians, began to expend his own fortune in their relief. This roused the indignation of the wealthy; they fabricated a charge of his courting popularity, that he might become king, and having created a dictator, brought him to trial. Manlius conjured the people when about to sentence him to death, to turn their eyes to the Capitol which he had saved. And it is said that the senate unable to prevail on the people to condemn him while the Capitol was in their view, were obliged to change the place of meeting, to secure their object. Manlius was condemned and thrown headlong from the very same hill down which he had hurled the enemies of the state.
This condemnation of Manlius appears to have broken the spirits of the people. They had not forgotten the examples of Cassius and Mælius, both put to death by the patricians for having espoused the cause of the people. Thus they saw every advocate of their cause successively removed by violence; and there appeared no prospect of an end to their sufferings. Their debts had been augmented by the Gallic invasion and the sack of Rome; and their creditors had become more oppressive than ever. Just however, when the patricians seemed to have secured to themselves for ever the entire authority of the state, and when the commons appeared ready to sink into hopeless servitude, the courage and perseverance of two men raised the drooping spirits of their people and opened their way to all the honours of the state. To explain this matter more clearly it is necessary to premise, that up to this period the patricians of Rome had formed a caste by themselves as superior to the rest of the people, as the brahmun reckons himself superior to the soodra. The patricians were the noble and the rich; they alone sat in the senate and directed the affairs of the Republic; they led the armies to battle, governed the city, and administered justice; and they alone enjoyed the important right of presiding at sacrifices. The plebeians consisted generally of the poor and the laborious, and from their number were the armies recruited. Formerly the two castes were not allowed to intermarry, but this odious law had been for some time abolished. Some of the plebeians, moreover, had acquired wealth and distinction, and this circumstance, combined with their marriage into noble families created a natural longing in their minds to participate in the honours of government. Such being the state of parties in the city, Licinius and Sextus, two tribunes of the people, proposed the celebrated Licinian rogations, which provided, first, that consuls should be chosen instead of military tribunes, and that of the two consuls one should always be a plebeian; secondly, that whatever sums had been paid as interest on debts should be deducted from the principal, and that the principal should be liquidated in three annual instalments; thirdly, that no Roman citizen should be allowed to possess more than 500 acres of land, and that the patricians should pay into the public treasury a certain rent for the land they enjoyed. It may easily be supposed that laws of such serious import, by which wealth and honour were to be bestowed on those who had hitherto been despised like the poor soodras in India, would not pass without a violent contest. The senate used every effort in their power during the term of ten years to prevent the enactment of them, and the government of the city fell into the greatest disorder. Licinius however determined not to relinquish either of his proposed laws, and by dint of astonishing perseverance, at length brought the senate to yield the point to the people. The plebeians having thus in the year B. C. 366 obtained a right to the consulate, gradually during the following thirty years obtained a participation in all the other magisterial offices; the last, that of a right to the priesthood, being conceded to them in the year B. C. 300. The enjoyment of equal political rights by the patricians and plebeians, removed all cause of jealousy between the two orders, and from this period may be dated the commencement of Roman grandeur. Henceforth the undivided energies of all the ablest men in the state, were directed by the wisdom of the senate to foreign conquest and national aggrandizement. This arrangement was accompanied by another for the separation of the judicial functions from the office of consul; a new officer called a Prætor being appointed to determine all causes.
Twenty-four years elapsed between the admission of plebeians to the consular authority and the beginning of the Samnian war. During this period the earth having on one occasion suddenly opened in the city of Rome, the priests declared that it would not close until that which the Romans held most precious had been thrown in; upon which Curtius, a brave citizen, fully equipped, rode up on horseback, saying that the Romans had nothing more valuable than arms and valour, and plunged into the gulf, which is said to have closed instantly. The Gauls also attacked the Romans, but were bravely repulsed, chiefly through the extraordinary courage of Manlius, who killed their gigantic champion in single combat. The commons during this period were gradually rising in importance, though the senate spared no pains to set aside the Licinian law and to elect two patricians as consuls. Down to this time the scene of Roman warfare had been confined to a circuit of thirty miles round the city; but, all their enemies within this circle having now been subdued, they aspired to bolder and more distant conquests, and the entire sovereignty of Italy already glittered in their sight.
It was in the 410th year after the foundation of the city, and the year 342 B. C. that the Romans first came in contact with the Samnites, who had been gradually enlarging their territories in the south of Italy, while Rome had been engaged with her immediate neighbours. The Samnites had invaded Campania; the Campanians unable to withstand them, applied for help to the Romans, which the Romans hesitating to promise, the Campanian envoys, according to instructions received from their fellow-countrymen, gave up themselves, their country and all their property to Rome. The Romans lost no time in sending to inform the Samnites of the surrender, and to desire them to desist from molesting a people now become the subjects of Rome. A haughty refusal from the Samnites, brought on a war which lasted more than sixty years, and ended in the entire subjugation of the South of Italy to the Romans.
In the very first year of the war the Romans gained two victories over the Samnites. The second year was passed in endeavouring to quell the mutiny of a large body of Roman troops whom the luxuriant climate of Campania had already corrupted. And it was in the third year of the war that the Samnites, disheartened by the ravages committed on their lands by the Romans, sued for peace, which was granted them in the year B. C. 340. But no sooner was the Samnian war intermitted, than a more dangerous enemy appeared in arms. The Latin nation, which had been completely subdued near the lake Regillus more than a hundred and fifty years before, which had during this long period remained the firm ally of Rome, of whose armies the Latins formed a very considerable part, revolted and joined the Campanians, who now their enemies the Samnites were subdued, eagerly endeavoured to throw off the Roman yoke. The Roman senate instantly summoned ten of the Latin chiefs to appear at Rome and account for their warlike preparations. They replied, that, as they had been instrumental in building up the republic, they demanded to be put upon a footing of perfect equality, and requested that one-half the senate should be composed of Latins, and one of the consuls be of that nation.
These demands the senate treated with scorn and prepared for war, which was likely to be very bloody. As the Romans had now to combat those who had long fought in their own ranks, who spoke the same language, and were armed after the same fashion, it became necessary to maintain the strictest discipline, and it was ordered that no officer or soldier should dare to fight out of his rank. A few days before the engagement, the consul Manlius's son, at the head of a detachment, met a squadron of the enemy, whose commander challenged him to single combat. Young Manlius, in the ardour of youth, forgot the orders of the general and met his adversary, killed him, and proceeded exultingly with the spoils to his father's tent. His father instantly ordered him to be beheaded for disobedience of orders; and although this instance of unnecessary severity created many murmurs in the camp, it served to keep up that high discipline in the army, which proved of such essential service in the ensuing battle The two armies which had so often fought under the same eagles now met in deadly combat at the foot of Mount Vesuvius. The battle was at first maintained with equal obstinacy on both sides; but the Roman left wing beginning at length to give way, the consul in command, Decius Mus, devoting himself to death with the hope of securing the victory, rushed into the thickest of the enemy and perished. His troops instantly renewed the charge and turned the tide of victory. The Latins though overcome in this great engagement were not subdued till the next campaign. Their principal cities were treated with more or less severity, according as their opposition to Rome had been obstinate or the reverse; but the nation generally from having been allies were reduced to the condition of subjects. The cities of Campania which had sided with the Latins were treated with less indulgence; their lands were taken from them and given to Roman colonists. The senate of Rome, than whom at this time there was in the world no body of men more steady and politic, were ever adopting improvements. Several years after this defeat of the Latins, they changed their old plan of raising a new army every year, and ordered the same army to keep the field, even upon a change of generals. Some time after, they adopted the farther improvement of keeping the same generals in the field of action after their year of service had expired, under the title of proconsuls.
Twelve years after the peace concluded with the Samnites, the Romans gave umbrage to them by planting a colony in their neighbourhood, and the war was rekindled in the year B. C. 327. For seven years it was carried on without the occurrence of any remarkable event, the Romans being constantly victorious. It was during this period that a law was passed at Rome declaring that the person of a debtor should not be seized, and that his property only should be held responsible for his debts. It is not a little singular that in the two nations which are at present esteemed amongst the foremost in civilization, tion, England and America, so equitable a law should never yet have been enacted. In the seventh year of the war, the Samnite army being commanded by Pontius, an able general, the Roman troops were drawn into a narrow defile and completely blocked in by the Samnites, who after taking the whole army prisoners caused them to pass under the yoke, which was the greatest ignominy to which Roman soldiers could be subject. The scene of their disgrace was called the Caudine forks, and it was long before the memory of this dishonour was obliterated from their minds. The cause of their discomfiture, was their ignorance of the mode of mountain warfare, but of this they soon made themselves masters. The Romans were not long in revenging the insult they had received from the Samnites. Under their great general Papirius Cursor, whom the Roman historians affect to compare with Alexander the Great, they repeatedly defeated the Samnites.
Soon after, the old enemies of the republic, the Hetrurians, having again taken up arms, the Roman general, Fabius boldly penetrated the Ciminian forest, which had hitherto been deemed an impervious barrier, and overran Tuscany up to the very border of the territories of the Gauls. To recount all the battles which were fought between the Romans on one side, and the Hetrurians, the Samnites, and other nations in the south of Italy on the other, would only fatigue the reader. Suffice it to say that after the war had lasted fifty-seven years, Rome found herself in a state of perfect tranquillity at home, and in a flourishing condition abroad. A large portion of Hetruria had been subdued; Samnium was overawed; Umbria in the north-east, and Lucania in the south-east, were obedient to the Romans. The territories of the republic had been abundantly enlarged, her colonies were spread over Italy, and served to keep in check the spirit of discontent. But this tranquillity was short-lived; the Italians now fully convinced of the boundless ambition of Rome, and alarmed by her daily increasing power, took up arms with one accord to make a last effort for the preservation of their liberties, chiefly at the instigation of the Tarentines, the most voluptuous and contemptible people in Italy. This happened in the year B. C. 281, but the Romans though they had to meet their enemies at one and the same time in the north, the south and the east, completely triumphed over them. The Tarentines, the secret authors of this union among the states, at length openly declared their hostility, by attacking a Roman fleet which had entered their harbour; of the prisoners which fell into their hands some were put to death and the rest sold for slaves. Ambassadors were instantly sent from Rome to demand redress; but the silly Tarentines dismissed them with unparralleled insolence. When however they came to reflect that they, a weak and small people, had provoked the mighty conquerors of Italy, they determined to look abroad for succour, and invited to their aid Pyrrhus, king of Epirus, of whom we have before spoken.
Pyrrhus, the king of Epirus in Greece, was a consummate general, but extremely fickle in his purposes. He readily agreed to the proposal of the Tarentines, as it opened to him a boundless prospect of glory in Italy. He sailed from Greece with a body of well disciplined troops and elephants, and safely landed in Italy. The Romans immediately sent an army to meet him, but the consul was totally defeated, chiefly through the elephants to which neither his horses nor his men had been accustomed. This first victory of Pyrrhus was achieved at Pandosia in the year 280 B.C. He subsequently made many overtures to Rome for an honourable peace, but the Romans replied that they would never treat with him while he continued in Italy. Another army was therefore sent against him the next year, which was also totally routed at Asculum; but Pyrrhus lost so many of his best officers and men in these two engagements, as to be obliged to declare that such another victory would prove his ruin; he began therefore to contemplate the abandoning of Italy. While he was in this state of uncertainty, he was invited to assist the inhabitants of Sicily, and gladly embraced the offer, as it enabled him, as he thought, to leave Italy honourably. He left Italy the third year after having landed in it. Upon the departure of Pyrrhus, the Romans proceeded to punish with severity the southern nations of Italy who had assisted the king; which made them exceedingly earnest with him to return. Meanwhile his affairs in Sicily not appearing to be in a flourishing condition, he was glad of an honourable pretext for quitting the island, and re-embarked for Italy. On leaving Sicily he cast a parting glance at the island, and exclaimed: What a noble field for contest do we leave the Romans and the Carthaginians! a prediction which the event abundantly verified. Arriving in Italy he assembled all the troops of his allies, so that his army amounted to 80,000 foot and 6000 horse. A bloody battle ensued between him and the Romans at Beneventum, in which he lost 25,000 men, together with his entire camp, which the Romans entering, beheld with astonishment, and immediately adopted in future as their model. Pyrrhus soon after quitted Italy, and was killed, as we have already narrated, while entering Argos.
Between the defeat of Pyrrhus and the first war with Carthage, there elapsed eleven years. During this period the Romans were employed in chastising the defection of their allies and subjects, and consolidating their power in the south of Italy, so that, before the Punic war Rome had become mistress of all Italy from the northern confines of Hetruria to the Ionian sea on the south, and from the eastern sea to the western. No independent power remained in Italy but the Gauls, called Cisalpine, from their inhabiting the southern side of the Alps. It was during this period that the Roman system of governing conquered states, and of securing on a firm basis the power of the republic, was fully developed. Colonies of Roman citizens were invariably planted in all the countries which submitted to Rome, and on these colonists were bestowed the lands which were taken away from the conquered. These colonies served a double purpose: they thinned the turbulent and dangerous population of Rome, and fully established the power of the republic in all the countries in which they were planted. The different states and cities of Italy were bound to Rome by ties very diverse in their character, which were regulated by the treaties which had been concluded with each. Some few cities and nations were indulged with all the rights of Roman citizens; others enjoyed their own civic government under the sovereignty of Rome; some again were ranked as allies, while others were regarded as subjects, over whom the senate appointed absolute governors. The present is the period, at which it appears that the Roman government attained its perfection; the difference between patrician and plebeian was almost nominal, the energies of all classes of the people, were directed to the increase of national glory; and though the senate were gradually acquiring a predominant power, yet moderation had not yet forsaken the counsels of the republic, as it did afterwards when Rome was glutted with the plunder of the world.