পুরাবৃত্তের সংক্ষেপ বিবরণ/কোরসের কালঅবধি সেকন্দর শাহের কাল পর্য্যন্ত
৫ অধ্যায়।
খ্রীষ্টীয়ান শকের ৫৬০ অবধি ৩৩৮ বৎসরপর্য্যন্ত।
কোরসের কালঅবধি সেকন্দর শাহের কালপর্য্যন্ত।
পূর্ব্ব অধ্যায়ে কোরসের মহাগুণের দ্বারা যে পারসের সামাজ্য উৎপন্ন হয় তাহাতে পশ্চিম আসিয়ার অতি প্রাচীন রাজ্য অর্থাৎ আসুরীয়া ও বাবেলনীয় ও মেদিয়া এবং পালেষ্টিন ও ক্ষুদ্র আসিয়ার রাজ্য লীনহওনের বিবরণ বর্ণনা করা গেল। এইক্ষণে যে কালের বিবরণ প্রস্তাব্য তাহাতে পারস দেশ এবং গ্রীকেরদের ক্ষুদ্র অথচ শক্তিবিশিষ্ট রাজ্যের যুদ্ধঘটিত যে ব্যাপার তাহাই প্রধান। ঐ যুদ্ধ এতদ্রূপে সমাপ্ত হয় যুদ্ধবিষয়ক জ্ঞান ও মহানুভব বিষয়ে কোরসের তুল্য অথবা তাঁহা অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ যে সেকন্দর শাহ তিনি পারসের তাবৎ সামাজ্য জয় করিলেন। অপর যে দেশের চক্রবর্ত্তিত্বরূপ পরাক্রম প্রাপণের বিবরণ লইয়া পশ্চাৎ দুই পুরাবৃত্তের কালিক বিবরণ তাথাৎ রােমাণেরদের বিবরণ পরিপূর্ণ হইবে তাহারদেরই শৈশব কালীন যুদ্ধ বিবরণ সকল এই প্রস্তাবিত কালের মধ্যে পড়ে। এতদ্রূপে পুরাবৃত্তের স্রোত বহিয়া চলিতে যে রাজ্য ও দেশের বিবরণে পাঠকেরদের বিশেষ মনােযােগ করিতে হইয়াছিল ঐ রাজ্য প্রভৃতি পরাধীন হইয়া অগণ্য হয় এবং পূর্ব্বকালীন অসভ্য অথবা অজ্ঞাত স্থানে নূতন রাজ্য উৎপন্ন হইয়া পরাক্রম প্রাপণের মিত্ত তাঁহারদের যে যুদ্ধ তদ্বিবরণ লইয়াই ইতিহাস পূর্ণ হয়।
কোরস স্বীয় বলবদ্দেশীয় অর্থাৎ পারসীয়েরদের সাহায্যে এমত মহাচক্ররূপ এক রাজ্য স্থাপন করিলেন যে তাহার পূর্ব্বসীমা সিন্ধু নদী পশ্চিম সীমা গ্রীক দেশীয় স মুদ্র দক্ষিণে পারসের মহাখাল উত্তরে তার্ত্তারীয় পর্ব্বত। এতাদৃশ বৃহৎ রাজ্য স্থাপনানন্তর তাঁহার এমত সুবুদ্ধির উদয়হইল যে স্বীয় শৌর্য্যের উত্তেজনা থামাইয়া ঐ সাম্রাজ্য দৃঢ় করিতে এবং যে কোটি২ প্রজারা তাঁহার আশ্রিত ছিল তাহারদের মঙ্গলার্থ সুনিয়ম ও ব্যবস্থা করাতে আয়ুঃ শেষপর্য্যন্ত যাপন করিলেন। কিন্তু তাঁহার অতি বার্ধক্যাবস্থায় উত্তর দেশীয় চঞ্চল তার্ত্তারীয়েরা তাঁহার রাজ্যে প্রবিষ্ট হইলে পুনর্ব্বার তাহার রণস্থলে গমন করিতে হইল। তিসিয়াস লেখেন যে ঐ যুদ্ধে তিনি পরাজিত হইয়া হতপ্রাণ হন।
কোরসের উত্তরাধিকারী কাম্বাইসিস্ শত২ দেশের রাজত্ব প্রাপ্তিতেও তৃপ্ত না হইয়া পারসের সাম্রাজ্যে মিসর দেশ সংলগ্ন করেন এমত নিশ্চয় করিলেন। তাঁহার রাজত্বের প্রথম বৎসরে এক দল মহাসৈন্য লইয়া তদ্দেশে প্রবেশপূর্ব্বক পিলুসিয়ম স্থানে এক যুদ্ধে তিনি ফরও য়া বংশের রাজ্য সমূলোৎপাটন করিলেন এবং খ্রীষ্টীয়ান শকের ৫২৫ বৎসর পূর্ব্বে মিসর দেশ পারস রাজ্যের এক সুবা হয়। তৎপরে মরুভূমিতে প্রবেশ করণার্থ এবং আমোনিয়মনামক অতি সমৃদ্ধ বাণিজ্যের আডডা জয় করিতে যে উদ্যোগ করিলেন তাহাতে কৃতকার্য্য হইলেন না। এবং কাজের প্রতিকূলে তিনি যে সকল কল্পনা করিয়াছিলেন তাহাও বিফল হইল যেহেতুক তাঁহার জাহাজের ফিনিসিয়া দেশীয় মল্লারা তাহারদের দেশীয় কলোনি কার্থাজ বিনষ্টকরিতে অসম্মত হইল। ইতি মধ্যে মাগি অর্থাৎ পারল দেশের দৈবজ্ঞেরা মিদিয় রাজবংশ্যকে পুনর্ব্বার সিংহাসনে সংস্থাপন করিতে ষড়যন্ত্র করিলেন। এবং স্মর্ডিসনামক এক ব্যক্তিকে লইয়া তাহাকে কাম্বাইসিসের জ্যেষ্ঠ বলিয়া সিংহাসনোপবেশিত করিলেন ইহাতে যে ঘটনা হয় তাহা তে কাম্বাইসিস্ সাড়ে সাতবৎসরপর্য্যন্ত রাজ্য করিয়া হতপ্রাণ হন। ঐ ভাক্ত স্মর্ডিস আট মাস মাত্র রাজ্য করেন। পরে পারসীয়েরা মিদিয় জাতীয় রাজাকে সহিষ্ণুতা করিতে না পারিয়া তাঁহারদের সাত জন কুলীন মন্ত্রণা করিয়া ঐ রাজাকে বধ করেন। ঐ কুমন্ত্রী কাহাকে রাজ্যে মনােনীত করিবেন এতদ্বিষয়ে অনেক বাগ্বিতণ্ডা করিয়া পরে ডারিয়স্কে সিংহাসনােপবিষ্ট করিলেন এবং তিনি কোরসের আটসা নামে এক কন্যাকে বিবাহ করিয়া সিংহাসনে অতিদৃঢ় হইলেন। ডারিয়স্ ছত্রিশ বৎসরপর্য্যন্ত রাজ্য করিয়া রাজ্যের সীমা যৎপরোনাস্তি বাড়াইলেন এবং নানা হিতৈষি নিয়মের দ্বারা দেশের মঙ্গল করিলেন অধিকন্তু আপনার ও অমাত্যগণের বাসের নিমিত্তে রাজকীয় বদান্যতা প্রকাশপূর্ব্বক মহা২ নগর গ্রন্থন করিলেন। কোরস আসিয়া দেশ এবং কাম্বাইসিস মিসর দেশ জয় করিয়াছিলেন অতএব ডারিয়স্ ইউরােপের মধ্যে থাকিয়া ও মাকিদনে স্বীয় সৈন্য প্রেরণ করিলেন। ঐ দেশ এইক্ষণে তুরুকীয় রাজ্যভুক্ত ইতিমধ্যে বাবেলন আজ্ঞানধীন হয় কিন্তু এক বিংশতি মাস ব্যাপিয়া ঐ নগর বেষ্টন হওনানন্তর তাহা অধিকার হয়। ডারিয়েসর মনে যুদ্ধোৎসাহ নিবৃত্তি না হইয়া তিনি ভ্রমণ শীল অথচ অজেয় তার্ত্তারেরদের সঙ্গে যুদ্ধে প্রবর্ত্ত হইলেন তাঁহার শ্বশুরও কোরসের ন্যায় পরাভূত হইলেন এবং অপমানিত হইয়া তাঁহার পলাইয়া আসিতে হইল। কিন্তু পূর্ব্বদিগে তিনি জয়ী হইলেন। তাঁহার বেতনভোগি এক জন গ্রীকীয় সিন্ধ নদীতে জাহাজ দ্বারা গমনাগমন করেন এবং ঐ নদীর উত্তর ভাগের দেশ পারসের সামাজ্য মধ্যে গণিত হইল। তৎসমকালে তাঁহার একজন সেনাপতি আফ্রিকা দেশান্তর্গত বার্কা নগর অধিকার করিয়া বিনষ্ট করেন।
অপর যে সময়ে ডারিয়সের সৈন্যেরা এতদ্রূপে ডাকিউবনদী ও সিন্ধুনদীতে ও আফ্রিকা দেশে জয়ী হন তৎসময়ে ক্ষুদ্র অথচ এই কালপর্য্যন্ত অগণ্য গ্রীক জাতীয়েরদের মধ্যে তাঁহার বিবাদ উপস্থিত হয়। তাবৎ গ্রীক দেশ পা রস দেশ মহাধিকারের পঞ্চদশাংশের একাংশের তুল্যও ছিল না। তৎসময়ে সকলের এমত অনুভব হইতে পারিত যে মিসরদেশে যেমত হইয়াছিল তেমন এক বৎসরের যুদ্ধে গ্রীক দেশ পরাভূত হইয়া পারসের সাম্রাজ্যের সুবার মধ্যে গণিত হইতে পারিবে কিন্তু ঐ গ্রীক দেশে স্বাধীনত্বের অত্যন্তানুরাগপ্রযুক্ত তদ্দেশীয় লোকেরদের মন শৌর্য্যগুণেতে প্রতিভান্বিত ছিল।
সভ্যতাচরণের প্রকৃত আধার ক্ষুদ্র আসিয়ার অন্তঃপাতি যে গ্রীক নগর সে সকল পারস রাজ্যের যোঁয়ালেতে বন্ধ হইয়াছিল ইহা পূর্ব্বে লেখা গিয়াছে। গ্রীক দেশের অব্যবহিতোত্তর যে থ্রাকিয়া ও মাকিদন দেশ তাহাও পারস সাম্রাজ্যভুক্ত হইয়াছিল। তাহাতে গ্রীক দেশস্থেরা দেখিলেন যে পৃথিবীর অধিকাংশ যে রাজা জয় করিয়াছেন তিনি এইক্ষণে আমারদিগের চতুর্দ্দিগ ঘেরিয়া আসিতেছেন তথাপি যুদ্ধ না করিয়া স্বাধীনতা ত্যাগ করিব না নিশ্চয় করিলেন। ক্ষুদ্র আসিয়ার নগর স্থেরা পারস রাজার যোঁয়ালে অসহিষ্ণু হইয়া পরিশেষে ঐ সকল নগরের মধ্যে অতি প্রবল মিলিটসের আরিষ্টগোরস্নামক অধ্যক্ষ পারসের সুবাদারের ক্রোধ পাত্র হওয়াতে একেবারে আজ্ঞানধীন হইয়া উঠিলেন এবং পারসীয়েরদের প্রতিকূলে তাবৎ গ্রীকীয়েরদিগকে মেলবন্ধ করাইতে কল্প করিলেন। তাঁহার ঐ কল্প সফল হইল এবং তাবৎ আসিয়াস্থ গ্রীক নগস্থেরা পারসের রাজার প্রভুত্ব ত্যাগ করিয়া সাধারণাধিপত্য রূপ রাজ্যশাসনের নিয়ম স্থাপন করিলেন। পরে ঐ উত্তেজনাকারি ব্যক্তি প্রকৃত গ্রীক স্বদেশস্থ লোকেরদের মধ্যে পারসের মহারাজের বিরুদ্ধেশত্রুতাচরণের প্রবোধ দেওনের ভরসায় তথায় গমন করিলেন। তাঁহাকে লাখিডিমোনে সকলেই বিদ্রুপ ব্যঙ্গ করিল কিন্তু আথেনুস নগরে দৈবায়ত্ত এমত সুযোগ হইল যে তাঁহার ইষ্ট সিদ্ধির অনুকূল হইয়া উঠিল বিশেষতঃ পিসিসত্রাটসের দেশবহিস্কৃত পুত্ত্র হিপিয়ন্স স্বীয় পরাক্রম পুনঃ প্রাপণ বিষয়ে সহায়তা যাচ্ঞাকরণার্থ ক্ষুদ্র আসিয়াতে পারসের সুবাদারের দরবারে গমন করিয়াছিলেন। আথেন্সীয়েরা তাঁহার অভিপ্রায় বিফলকরণাশয়ে উকীল তথায় প্রেরণ করিলেন কিন্তু পারসের সুবাদার অতিগর্ব্বপূর্ব্বক উত্তর করিলেন যে তোমরা যদি নিষ্কণ্টকরূপে থাকিতে চাহ তবে হিপিয়সকে পুনর্ব্বার নগরের মধ্যে গ্রহণ করিতে হইবে। এই অতি উষ্মাজনক উত্তর প্রাপ্ত হইয়া দূতেরা আথেন্স নগরে প্রত্যাগমন করিয়া যেমাত্র ক্ষুদ্র আসিয়াস্থ গ্রীকেরদের পক্ষে পারসীয়েরদের বিরুদ্ধে আরিষ্টগোরস্ সাহায্য প্রার্থনা করিতেছিলেন তন্মাত্রই নগরে পঁহুছিল। তৎকালে আথেন্স নগরে ইতর লোকেরাই প্রবল তাহারা ঐ উত্তর শুনিয়া একেবারে জ্বলিয়া উঠিল এবং কিঞ্চিৎ বিবেচনা না করিয়া যুদ্ধ জাহাজ প্রস্তুত করিল ও ক্ষুদ্র আসিয়াতে সৈন্য প্রেরণ করিল। আথেনীয় সৈন্যেরা তথায় উত্তীর্ণ হইয়া অগৌণ তথা কার রাজধানী শার্দিস নগরে গমন করিয়া তাহা দগ্ধ করিল। কিন্তু পারসীয় সৈন্য শীঘ্র সংগ্রহ হইলে আথেন্সীয়েরা পলায়ন করিল এবং পারসীয়েরা তাহারদিগকে সমুদ্রের তটে লাগইল পাইয়া পরাভূত করিল। অতএব বহুকালব্যাপিয়া গ্রীক ও পারসীয়েরদের মধ্যে পরস্পর শত্রুতাচরণ যে জাজ্বল্যমান হইল তাহার মুল আথেন্সীয়েরদের এই খামকা অত্যাচার।
অপর গ্রীকনিবাসি প্রদেশস্থেরা যে এতদ্রূপে পারসের রাজ্যানধীন হইয়াছিল ঐ প্রদেশ পুনঃপ্রাপণার্থে ডারিয়স এক চিত্তে মনোযোগ করিতে লাগিলেন। স্থলপথের যুদ্ধেতে পারসীয়েরা প্রবল ইহা গ্রীকেরা জানিয়া যুদ্ধ জাহাজের বিষয়ে বিশেষ উদ্যোগ করিতে লাগিলেন। কিন্তু পারসীয় সৈন্যেরদের আসিয়াস্থিত গ্রীকেরদিগকে দমন করা সহজ কর্ম্ম নহে ইহা কার্য্যের দ্বারা তাহারদের বোধ হইল যেহেতুক তাঁহারা ছয় বৎসর যুদ্ধ করিলেও মাইলিটস নগর অধিকার করিতে পারিলেন না কারণ গ্রীকীয়েরদের যুদ্ধজাহাজ অতিপ্রবল ছিল। পরি শেষে পারসের সেনাপতিগণ তাঁহারদের অধীন সমুদ্র তীরস্থ প্রদেশহইতে যুদ্ধজাহাজের বহর একত্র করিতে লাগিলেন কিন্তু ঐ জাহাজে পারস দেশীয় মল্লা না থাকাতে তাহার উপর বড় একটা নির্ভর করিতে পারিলেন না তথাপি সমুদ্রোপরি এক মহা যুদ্ধেতে তাঁহারা জয়ী হইলেন। ঐ যুদ্ধের এই ফলোদয় হয় যে আসিয়াস্থিত তাবৎ গ্রীকলোক এবং তাবৎ গ্রীক উপদ্বীপ পারসীয়েরদের অধীন হইল। অতএব এইক্ষণে শার্দিস নগর দাহ করণের নিমিত্ত আথেন্সীয়েরদিগকে শাস্তি দেওয়া মাত্র কার্য্য অবশিষ্ট থাকিল এতন্নিমিত্ত ডারিয়সের জামাতা মাডোনিয়মের অধীন এক মহা দল সৈন্য সংগ্রহ হইল। তিনি সসৈন্যে হেলেসপণ্ট উত্তীর্ণ হইয়া ইউরোপে পঁহুছিয়া রাজদূতেরদিগকে গ্রীকীয়েরদের স্থানে মৃত্তিকা ও জলের দাওয়া করিতে প্রেরণ করিলেন। ঐ মৃত্তিকা ও জলদানকরাই তাহারদের মধ্যে বাধ্যতা স্বীকারের চিহ্ন। ইহাতে ভয়শীল ও ক্ষুদ্র প্রদেশস্থেরা স্বীকৃত হইল বটে কিন্তু স্পার্টা ও আথেন্স নগরস্থেরা ঐ দাওয়া তে যে কেবল অস্বীকৃত হইলেন এমত নহে পরন্তু আগত রাজদূতেরদিগকে অপমানও করিলেন। পরে পারসের সৈন্যেরা উত্তর দিগহইতে থ্রাকিয়া ও মাকিদোনের পর্ব্বতীয় পথ দিয়া প্রবেশ করিল কিন্তু এই প্রথম যুদ্ধে তাহারা কৃতকার্য্য হইতে পারিল না যেহেতুক তাহারদের যুদ্ধ জাহাজ ঝটকায় ছিন্নভিন্ন হইল এবং তাহারদের সৈন্য থ্রাকিয়ার পর্ব্বতীয় লােকের দ্বারা ভগ্নোদ্যোগও হইল। এই ব্যাপার খ্রীষ্টীয়ান শকের পূর্ব্বে ৪৯৩ সালে হয়। তাহার পর বৎসরে পূর্ব্বাপেক্ষা নিপুণ সেনাপতির অধীনে অন্য দল সৈন্য গ্রীক দেশে প্রেরিত হয় অনুমান হইল যে হিপিয়সের পরামর্শানুসারে সে কর্ম্ম হয়। পূর্ব্ব বৎসরীয় যুদ্ধ যাত্রা উত্তর ভাগস্থ পর্ব্বতীয় পথ দিয়া গমন করাতেই বিফল হইল অতএব এইক্ষণে সেই পথে গমন না করিয়া পারসীয় সেনাপতিরা করদায়ক গ্রীকেরদের এবং অন্যেরদের স্থানে যুদ্ধ জাহাজের এক বৃহৎ বহর শিলিসিয়ার তটে একত্র করিয়া স্বীয় সৈন্য এককালীন গ্রীক দেশের নাভিপর্য্যন্ত আনিয়া আটিকার মাঠে উপস্থিত করিলেন। এবম্বিধ মহাদল সৈন্যেরদের সঙ্গে যুদ্ধ করণার্থে গ্রীকীয়েরা সসজ্জ ছিলেন না। সাধারণ দেশরক্ষণার্থ কোন যোগযাগও হয় নাই অতএব বর্দ্ধমান জিলা অপেক্ষা বৃহৎ নহে এমত ক্ষুদ্র পরিমিত আথেন্সদেশস্থেরদের বিনা সাহায্যে একাকী তাবৎ যুদ্ধের ভার সহিষ্ণুতা করিতে হইল। আথেন্সীয়েরা স্পার্টারদের সাহায্যের নিমিত্তে অতি বিনীতি করিলেন কিন্তু তৎসময়ে পূর্ণিমা তিথির পাঁচ দিবস অপেক্ষা ছিল তৎপ্রযুক্ত স্পার্টীয়েরা স্বস্থানহইতে লড়িতে অনিচ্ছুক হইল। এই অত্যন্ত সঙ্কটাবস্থায় ঈশ্বরের আনুকূল্যে মিল্টয়াদিস স্বীয় জন্ম ভূমি আথেন্সের ত্রাণকর্ত্তা হইলেন। পারসীয়েরদের এক লক্ষ দশ হাজার সৈন্য মারাথনের মাঠে ছাউনি করিয়া ছিল। মিল্টয়াদিস নয় হাজার আথেন্সীয়ও হাজার প্লাটিয় সৈন্য লইয়া তাঁহার সঙ্গে যুদ্ধে প্রবৃত্ত হইয়া জয়ী হইলেন। পরে জয়ি আথেন্সীয়েরা এই অনপেক্ষিত কৃ তার্থতাতে প্রগল্ভ হইয়া যে উপদ্বীপস্থেরা পারসীয়েরদের সাহায্য করিয়াছিলেন তাঁহারদের উপরে কর বসাইতে নিশ্চয় করিলেন। অতএব মিল্টয়াদিস তাহারদের প্রতিকূলে যুদ্ধ জাহাজসমভিব্যাহারে প্রেরিত হইলেন কিন্তু নাক্সস্ স্থানে অকৃতকার্য্য হইয়া তাঁহার পরাঙ্মুখ হইতে হইল এবং আথেন্সীয়েরা যদ্যপি ইহার পূর্ব্বে তাঁহার দ্বারা নিস্তার পাইয়াছিলেন তথাপি এই ব্যাপারে অকৃতকার্য্য হওনবিষয়ে তাঁহার অর্থ দণ্ড করিলেন অথচ ঐ যুদ্ধ যাত্রা কেবল তাঁহারদের পাগলামিতেই হয়। তিনি ঐ দণ্ডের টাকা দিতে না পারাতে কারাবন্ধ হইয়া সেই স্থানেই মরিলেন। এই কর্ম্ম আথেন্সীয়েরদের কৃতঘনতার অতিস্মরণীয় চিহ্ন।
মারাথনে পারসীয়েরা যেরূপ অপমানিত হইয়াছিলেন তাহার প্রতিফল দেওনের নিমিত্ত তাঁহারা জাজ্বল্যমান হইলেন এবং তিন বৎসরব্যাপিয়া যুদ্ধের নিমিত্ত আয়োজন করাতে তাবৎ আসিয়াতে অত্যন্ত ধুমধাম লাগিয়া গেল। ইতিমধ্যে ডারিয়স লােকান্তর গত হন এবং তাঁহার উত্তরাধিকারী জর্কশিস তৎসময়ে যৌবন মত্ততার উৎসাহেতে অত্যন্ত প্রবল এবং তাঁহার মনে এই বােধ হইল যে গ্রীক দেশ জয় করিলে ঐ দেশের পরস্থ যে অসীম অথচ অপরিচিত দেশ থাকিতে পারে তাহা অনায়াসে অধিকার করিতে পারি। তিনি এমত বহু সংখ্যক সৈন্য সংগ্রহ করিলেন যে তাহার পূর্ব্বে এমত শুনা যায় নাই এবং শার্দিস নগরে সৈন্যেরদিগকে সমাগত হইতে আজ্ঞা দিয়া আপনি ঐ যুদ্ধনির্বাহার্থ তথায় গমন করিলেন। কথিত আছে যে গমন সময়ে ঐ সৈন্যের জলপানেতে কএক নদী শুষ্ক হইল। এই মহা লােকারণ্যকে আসিয়াহইতে ইউরোপে উত্তীর্ণ করণার্থ হেলেসপণ্ট মহানার উপর দুই নৌকাময় সাঁকো করিলেন সৈন্য পার হইতে সাত দিবা রাত্রি লাগিল। পরে ইউরােপের মাঠে সৈন্যেরা পঁহুছিলে তাহার সংখ্যা করিয়া দেখা গেল যে বিংশতি লক্ষেরও অধিক। এই প্রায় অবিশ্বসনীয় সৈন্য সঙ্গে লইয়া জকশিস মন্দ২ রূপে মাকিদন ও থেসালি দিয়া গমন করিতে নিশ্চয় করিলেন এবং গমন সময়ে যথাসাধ্য সমুদ্রের তট ঘেঁসিয়া যাইতে স্থির করিলেন এবং তাঁহার জাহাজস্থেরদের প্রতিও সমুদ্রের কুলে২ যাইতে আজ্ঞা ছিল। যে সময়ে উত্তর দিগে এই প্রচণ্ড ঝটকা যোগ হইয়া গ্রীকেরদের মাথায় পড়ে এমত সময়ে ঐ গ্রীকেরদের মধ্যে এমত আন্তরিক বিবাদ ছিল যে তাঁহারা কর্ত্তব্য কর্ম্মের কোন সুনিয়ম স্থির করিলেন না। অতএব দেশ রক্ষণ বিষয়ে যা হইবার তাহাই হইবে এই ভাবে থাকিলেন। এরূপে অনেক কাল মিথ্যা হরণ হইলে পর থরমপিলির অল্প আয়তন পথে বিপক্ষেরদের আগমন নিবারণার্থ এক দল সৈন্য প্রেরিত হইল ঐ থরমপিলি থেসালি পর্ব্বতের অন্তর্গত এবং উত্তর দিগহইতে গ্রীক দেশে প্রবেশ করণের ঐ মাত্র পথ। স্পার্টা দেশীয় লিওনিদাস সৈন্যাধ্যক্ষ স্বদেশীয় তিন শত সৈন্য এবং থেসি্পয়েরদের সাত শত সৈন্য লইয়া তিন দিন ব্যাপিয়া আসম সাহসে আপনি ও সমভিব্যাহারি যোন্ধারা মৃত্যুপর্য্যন্ত ঐ পর্ব্বতীয় পথে বিপক্ষেরদিগকে অবরুদ্ধ করিলেন। এই ব্যাপার খ্রীষ্টীয়ান শকের ৪৮০ বৎসর পূর্ব্বে হয়। এই অতিসাহসিক কর্ম্মে গ্রীকেরদের অতিমঙ্গল দর্শিল যেহেতুক ঐ কার্য্যের দেখা দেখিতে তাঁহারা পারসীয়েরদিগকে তুচ্ছ করিতে ক্ষম হইলেন এবং তাঁহারদের সাহসও প্রায় উন্মত্ততাপর্য্যন্ত বর্দ্ধিত হইল। পরে জর্কসিস্ আটিকার অভিমুখে যাত্রা করিলেন এবং আথেন সীয়েরা আপনারদের নগর রক্ষা করণের কোন উপায় না দেখিয়া তাহা ত্যাগ করিলেন। বিপক্ষগণ ঐ নির্জন নগর অধিকার করিয়া দগ্ধ করিল এবং শার্দিসনগর দগ্ধহওনের অপরাধের সম্পূর্ণ প্রায়শ্চিত্ত হইল। অপর পারসীয়েরদের যুদ্ধ জাহাজ শালামিসের মহাখালপর্য্যন্ত গ্রীকেরদের যুদ্ধ জাহাজ তাড়াইতে২ গেল কিন্তু সেই স্থানে তৎকালীন মহাপুরুষ থিমিষ্টক্লিশের আজ্ঞাধীনে সমুদ্রোপরি এক যুদ্ধ হয় তাহাতে পারসীয়েরা বিলক্ষণরূপ পরাভূত হন। অনন্তর জর্কশিস স্বীয় অকৃত কার্য্যতাতে বিরক্ত হইয়া এবং আপনার বহুসংখ্যক সৈন্যের আহারীয় দ্রব্যের অপ্রতুলের ভয় করত এক ভাগ সৈন্য গ্রীক দেশে রাখিয়া অবশিষ্ট লইয়া আসিয়াতে ফিরিয়া গেলেন। তৎপর বৎসরে প্লাটিয়া স্থানে ঐ সৈন্যেরদের সঙ্গে গ্রীকীয়েরা যুদ্ধ করিয়া পরাজিত করেন সেই দিবসেই মিকালি স্থানে পারসীয়েরা সমুদ্রপথে পুনর্ব্বার পরাভূত হন এবং এতদ্রূপে এক মহােদ্যোগের দ্বারা পারসীয়েরদের আক্রমণের ভয়হইতে গ্রীক দেশীয়েরা চিরকালের নিমিত্ত মুক্ত হইল।
এই যুদ্ধের এমত মাঙ্গলিকরূপ শেষ হওয়াতে গ্রীকেরদের অবস্থার একেবারে রূপান্তর হইল। ইহার পূর্ব্বে আক্রান্তের ন্যায় ছিলেন কিন্তু যুদ্ধের পর তাঁহারা আক্রামক হইয়া উঠিলেন। পারসীয়েরদের যোঁয়ালহই তে আসিয়াস্থিত তাঁহারদের স্বজাতীয়েরদিগকে মুক্তকরণার্থে গ্রীকীয়েরা স্পার্টারদের অধীন হইয়া অবিরত পারস রাজার প্রতি যুদ্ধ করিতে লাগিলেন। পরে যখন স্পার্টার সেনাপতির প্রগল্ভতা ও বিশ্বাসঘাতকতা দেখিয়া সহকারি যােদ্ধারা তাঁহার প্রতি বিরক্ত হইল তখন আথেন্স নগরের অধীন হইয়া গ্রীকীয়েরা যুদ্ধ করিতে লাগিলেন। পেলােপােনিসসের সরহদ্দের বহিস্থিত দেশ এবং উপদ্বীপস্থেরদের মধ্যে চিরকালের নিমিত্ত এক শলার নির্ব্বন্ধ হয় এবং আথেন্স নগরের অধীনে তাহারদের সাধারণ শত্রু পারসীয়েরদের সঙ্গে যুদ্ধকরনার্থ প্রত্যেক দেশ নির্দিষ্ট সংখ্যক জাহাজ যােগাইয়া দিতে স্বীকৃত হইলেন। তৎপশ্চাৎ জাহাজের পরিবর্ত্তে কতক টাকা দিতে স্বীকার করিলেন ঐ টাকা সংগ্রহপূর্ব্বক দিলস স্থানে সাধারণ ভাণ্ডারে ন্যস্ত হইত।
অনন্তর পারসীয়েরা গ্রীক দেশহইতে প্রত্যাগত হইলে আথেন্সীয়েরা আপনারদের বিলুপ্ত নগরে ফিরিয়া আইলেন এবং থিমিষ্টক্লিশের অপূর্ব্ব গুণের দ্বারা ঐ নগরের নষ্টোধার হইল এবং দুর্গের দ্বারা এমত সুরক্ষিত হইল যে তাহা অনাক্রমণীয় বোধ হইল। থিমিষ্টক্লিশ আপনার পূর্ব্বের অনুশীলনের দ্বারা এমত বোধ করিলেন যে যুদ্ধ জাহাজের উপর নির্ভর না রাখিলে আথেন নগর রক্ষা ও প্রতিভান্বিত হওনের আর কোন সদুপায় নাই। অতএব গ্রীক দেশের মধ্যে স্বীয় পৈতৃক নগর অগ্রগণ্য হয় এই নিমিত্ত তিনি সমুদ্রের উপরি তাহারদের পরাক্রম বৃদ্ধি করণের যথাসাধ্য চেষ্টা পাইলেন কিন্তু নগরের যৎপরোনাস্তি উপকারকরণানন্তর তাঁহার স্বনগর স্থেরা কৃতঘনতা করিয়া তাঁহাকে দেশহইতে তাড়িয়া দিল তাহতে পারস দেশে আশ্রয় লইয়া তিনি সেই স্থানেই লোকান্তর প্রাপ্ত হইলেন। তদনন্তর একাদিক্রমে অনেক অতি বিজ্ঞ মন্ত্রিরদের হস্তে সরকারী কার্য্যের ভারার্পণ হওয়াতে থিমিষ্টক্লিশ যে মহাকল্পনা করিয়াছিলেন তাহা ইহারা সিদ্ধ করিল এবং অল্পকালেই তাবৎ গ্রীক দে শের মধ্যে আথেন্স নগর সর্ব্বাপেক্ষা পরাক্রমি হইল। অতএব পারসৗয়েরদের যুদ্ধের শেষ অবধি পেলোপোনিসসীয় যুদ্ধের আরম্ভপর্য্যন্ত ইহার মধ্যে যে চল্লিশ বৎসর ইহাই আথেন্স নগরের শ্রেষ্ঠ অবস্থার কাল। তাবৎ গ্রীকেরদের নিমিত্তই আথেন্স নগর যোদ্ধার ন্যায় গণ্য হইল এবং তাবৎ রাজব্যাপারের মূলই সেই স্থান। আথেন্স নগরস্থেরদের মনে সাধারণ মঙ্গলকরণের উৎসাহ হইল এবং মনুষ্যেরদের মধ্যে যাহা শ্রেষ্ঠ ও সম্ভ্রান্ত তাহা ঐ নগরে অত্যন্ত তেজালরূপে উৎপন্ন হইল এবং শিল্প বিদ্যারও এমত বৃদ্ধি হইল যে তাহার কোন প্রতিযোগী থাকিল না। কাব্য বিদ্যা সেই স্থানে পরিপক্বরূপ হইল এবং দর্শন বিদ্যাতেও অত্যন্ত মনোভিনিবেশপূর্ব্বক উদ্যোগ হইতে লাগিল বক্তৃতার নিবাস স্থানের ন্যায় ঐ নগর গণ্য হইল এবং ছবি ও ভাস্করীয় ও এমারতের বিদ্যা এককালে অনুপমরূপে সুসিদ্ধ হইল। কিন্তু আশ্চর্য্যের বিষয় এই যে গ্রীকীয়েরদের স্বাভা বিক গুণের এই সকল ফুল অত্যন্ত অশুভাবস্থায় প্রস্ফুটিত হইল যেহেতুক আথেন্স নগরে যে ব্যক্তি শ্রেষ্ঠ তিনি স্বীয় প্রতিবাসিরদের অপেক্ষা শ্রেষ্ঠতাপ্রযুক্ত নগর হইতে নিত্য তাড়িত হইতেন। কিন্তু স্পার্টাতে এতদ্রূপ ছিল না ঐ নগরনিবাসিরদের অসভ্যতাচরণের দ্বারা গুণ সকল আচ্ছন্ন হইয়া থাকিল সেই স্থানে দেশের মঙ্গলের নিমিত্ত স্বীয় প্রাণপর্য্যন্ত দেওয়া উচিত এমত উপদেশ করা যাইত কিন্তু আথেন্স নগরে কেবল দেশের হিতের নিমিত্তই কালযাপন করা উচিত এমত সকলকে উপদেশ হইত।
খ্রীষ্টীয়ান শকের পূর্ব্বে ৪৪৯ বৎসর আথেন্সীয়েরা বারম্বার পারসীয়েরদিগকে জয়করণানন্তর ঐ মহারাজকে এক সন্ধিপত্রে সহী করাইলেন তাহাতে ক্ষুদ্র আসিয়ার নগরস্থেরদিগকে তিনি স্বাধীনরূপে স্বীকারপূর্ব্বক গ্রীক সমুদ্রে স্বীয় জাহাজদ্বারা গমনাগমন করিবেন না এমত অঙ্গীকার করিলেন। এতদ্রূপে ত্রিশ বৎসরব্যাপিয়া বুদ্ধকরণনন্তর পারসীয় রাজার গর্ব্ব খর্ব্ব হয় কিন্তু ঐ রাজ্যের ঐশ্বর্য্যের প্রাবল্য সময় এইক্ষণে অতীত হইয়া ছিল। মহাকোরসের তুল্য উৎসাহ তাঁহারদের রাজসভার পরামর্শিরদের মধ্যে আর দৃষ্ট হইল না। পূর্ব্বদেশীয় চক্রবর্ত্তি রাজারদের দশার ন্যায় ঐ রাজ্যের অবস্থা হইল অর্থাৎ যে অল্পসংখ্যক বড় লোকের দ্বারা রাজ সংস্থাপন হয় তাঁহারা লোকান্তরগত হইলে অন্তঃপুরবাসিনী অর্থাৎ স্ত্রী ও তাঁহার অনুগামিরা রাজ্যের মধ্যে প্রবল হইয়া রাজাও স্ত্রীবাধ্য এবং সুবাদার অতিপ্রবল ও আজ্ঞানধীন।
যৎসময়ে আথেন্স নগরে বিদ্যা ও শিল্পাদি ব্যবসায় দেদীপ্যমান হইল এবং যৎসময়ে আথেন্স নগরের পরাক্রম কেবল গ্রীক রাজ্যব্যতিরেকে পারসের মহারাজ্যের মধ্যেও সুদৃষ্ট হইল তৎসময়ে তাঁহারদের সহকারি অন্যান্য গ্রীকেরদের প্রতি তাঁহারা অত্যন্ত প্রাগলভ্য ও নির্দ্দয়তা প্রকাশ করিতে লাগিলেন। পারসীয়েরদের সঙ্গে যুদ্ধকরণার্থ ঐ গ্রীকীয়েরা যে টাকা স্বেচ্ছাপূর্ব্বক প্রদান করিতে স্বীকৃত হইয়াছিলেন তাহা আথেন্সীয়েরা করের ন্যায় দাওয়া করিতে লাগিলেন এবং মিত্রতুল্য ঐ নগরস্থেরদের সঙ্গে প্রজার ন্যায় ব্যবহার করিতে লাগিলেন। অপর পেরিক্লিস আথেন্স নগরের তাবৎ পরাক্রম প্রাপ্ত হইয়া অনেক বৎসরপর্য্যন্ত স্বীয় গুণ ও উৎসাহের দ্বারা ঐ অবাধ্যেরদিগকে চাপিয়া রাখিলেন। কিন্তু গ্রীকেরদের অগ্নিরূপ অবাধ্যতা স্পার্টারদের দ্বারা বাতাস পাইয়া পেরিক্লিসের লােকান্তর হওনের কিঞ্চিৎ পূর্ব্বে খ্রীষ্টীয়ান শকের অগ্রে ৪৩০ সালে একেবারে প্রজ্বলিত হইয়া উঠিল। প্রায় তাবৎ গ্রীকীয়েরদের মধ্যে কেহ স্পার্টা কেহ আথেন্সীয়েরদের পক্ষে হইল এবং অত্যন্ত রাগারাগিরূপে দেশে২ যুদ্ধহইতে লাগিল গ্রীক দেশের ভাবি ভদ্রতার অঙ্কুর বিনষ্ট না হওয়া পর্য্যন্ত ঐ যুদ্ধ নিবৃত্ত হইল না। যখন আথেন্স ঐ যুদ্ধে প্রবৃত্ত হয় তখন যে নগরের যুদ্ধ জাহাজ ছিল তাহারা সকলই আথেন্সের পক্ষ কিন্তু স্থলের উপরে স্পার্টারা প্রবল। যুদ্ধের প্রথম তিন বৎসরে আথেন্সীয়েরা কেবল বিপক্ষেরদিগকে থামাইয়া রাখতে কালযাপন করিল। চতুর্থ বৎসরে আথেন্স নগরে মারী উপস্থিত হইয়া তাহাতে বিপক্ষেরদের আক্রমণাপেক্ষা অধিক অমঙ্গল হইল যেহেতুক তাহাতেই পেরিক্লিশ মারা পড়েন। অনন্তর ক্লিয়ােননামক এক জন চর্ম্মকার দেশের পরাক্রম প্রাপ্ত হইল এবং যুদ্ধ ব্যাপার অত্যন্ত অবিবেচনা ও নির্দয়তারূপে চালাইতে লাগিল। স্পার্টারদের মধ্যে অতিনিপুণ গুণশালি ব্রাসিডাস প্রতিভাম্বিত হইলেন কিন্তু যে সময়ে তাঁহার দ্বারা স্বীয় দেশের হিতৈষিতামতে যুদ্ধ সমাপ্তির সম্ভাবনা দৃষ্টি হইল এমত সময়ে তিনি স্বীয় বীর্য্যপ্রভাবে প্রস্ফুটিত যৌবন সময়েই পরলােকগত হন। তৎপরে যুদ্ধে লিপ্ত নানা লােকেরদের মধ্যে পঞ্চাশ বৎসরের নিমিত্ত এক শলা হয় কিন্তু তাহার পাঁচ বৎসর অতীত নাহইতে২ ঐ সন্ধি ভগ্ন হইল। ইতিমধ্যে আলকিবৈয়াডিসনামক অত্যন্ত প্রতাপান্বিত নানা গুণোপেত কিন্তু বিবেচনাহীন এক যুব ব্যক্তি আথেন্সীয়েরদিগকে অতিদৃঢ়রূপে আপনার বাধ্য করিলেন তাহাতে অতিঅমঙ্গল দর্শিল যেহেতুক যুদ্ধ হইলেই স্বয়ং অতিপ্রতাপান্বিত হইবেন এই প্রত্যাশায় স্বীয় নগরস্থেরদিগকে পুনর্ব্বার যুদ্ধে প্রবর্ত্ত করাইলেন। অতিঅবিবেচনাতে শিশিলি উপদ্বীপ জয়করণ কল্পনাতে তিনি আথেন্সীয়েরদিগকে লওয়াইলেন। এই দূরস্থ অথচ নিরর্থক যুদ্ধ যাত্রায় রাজ্যের তাবৎ সামর্থ্য যােজিত হইল। কিঞ্চিদনন্তর দেবালয় অপবিত্রকরণাপরাধে তিনি দেশবহিস্কৃত হইয়া স্পার্টারদের সঙ্গে মিলিলেন এবং স্পার্টারা শিশিলিনিবাসি সিরাকিউসেরদের সাহায্যার্থ এক দল মহাসৈন্য প্রেরণ করেন তদ্দ্বারা আথেন্সীয়েরদের সৈন্য ও যুদ্ধ জাহাজ একেবারে নিপাত হয়।
এই মহাব্যাঘাতহইতে আথেন্সীয়েরা কখন শামলিয়া উঠিতে পারিল না তথাপি যখন নগরস্থেরা দেখিল যে কি সেনাপতি কি সৈন্যগণ কি যুদ্ধজাহাজ সকলই এক চোটেই বিনষ্ট হইয়াছে তখন তাহারদের উত্তেজনা যৎপরােনাস্তি বর্দ্ধিত হইল। অবিশ্বাস্য শীঘ্ররূপে তাহারা নূতন যুদ্ধজাহাজ ও সৈন্য প্রস্তুত করিয়া তাহারদের সহকারি যােদ্ধৃগণকে বশীভূত রাখিল। ইতিমধ্যে স্পার্টারা যুদ্ধজাহাজ প্রস্তুত করিতে অত্যন্ত মনােযােগী হইল অথচ যুদ্ধজাহাজে হস্তক্ষেপ করা তাহারদের প্রধান ব্যবস্থাপক লাইকরগসের বিধানের বিপরীত। ঐ জাহাজের খরচার টাকার অকুলান হইলে তাহারা পারসীয় রাজার নিকটে টাকা প্রার্থনা করিল। ইহা তাবৎ গ্রীকীয়েরদের পক্ষে অত্যন্ত অশুভসূচক হইল যেহেতুক তাহাতেই পারসীয় রাজার চক্ষুরুন্মীলন হয় এবং তাঁহার এই বােধােদয় হইল যে গ্রীকীয়েরা পরস্পর যুদ্ধ করিয়া দুর্ব্বল হয় এই নিমিত্ত তাহারদিগকে টাকা দেওয়াতেই আমার লাভ এবং পারসীয়েরা সাহসের দ্বারা যাহা নির্ব্বাহ করিতে অক্ষম ছিল তাহা এতদ্রূপ মুদ্রা দানে সম্পন্ন করিল। যেকালে গ্রীকীয়েরা প্রথম পারসীয়েরদের মুদ্রা সপর্শ করিল তৎকালেই তাহারদের স্বাভাবিক সরলতা দূরগত হইল এবং ঐ সারল্যের সঙ্গে সঙ্গেই তাহারদের সামর্থ্যও গেল।
কিঞ্চিৎ পরে আলকিবৈয়াড়িস স্পার্টারদিগকে ত্যাগ করিয়া স্বীয় তীক্ষ্ণ বুদ্ধিও গুণের দ্বারা স্বদেশের মহােপকার করিতে লাগিলেন এবং নানা যুদ্ধে বিপক্ষপক্ষকে জয় করেন। তথাপি স্পার্টার সেনাপতি লাইসাণ্ডর তাঁহাকে জয় করেন পরে স্পার্টারা পুনর্ব্বার জয়ী হয় কিন্তু আথেন্সীয়েরা আপনারদের তাবৎ পরাক্রম সংগ্রহ করিয়া ইগিন্যুসে স্থানে স্পার্টারদিগকে পরাজয় করেন কিন্তু জাহাজধ্যক্ষেরদের নিকটে আথেন্স নগরস্থেরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার না করিয়া অতিনির্দয়তারূপে হিত করিল। এই অতিশয় ক্রূরকর্ম্মের পরক্ষণেই আথেন্স নগর একেবারে বিনষ্ট হয়। যেহেতুক লাইসাণ্ডর এগসপটামস্ স্থানে আথেন্সীয়েরদের যুদ্ধ জাহাজের উপর হঠাৎ আক্রমণ করিয়া প্রত্যেক জাহাজ অধিকার করিল। আথেন্সীয়েরা সমুদ্রের উপর এতদ্রূপ পরাক্রমশূন্য হইলে তাহারদের সাহায্যকারকেরা সকলই স্পার্টারদের অনুগত হইল। পরে আথেন্স নগর বেষ্টিত হইয়া শত্রুরদের হস্তগত হয় এবং নগরের প্রাচীর ও পয়রিয়সনামক বন্দরের প্রাচীর সমভূমীকৃত হইল এবং দেশের শাসনার্থ ত্রিশ জন অতিনিষ্ঠুর পুরুষ কর্ত্তৃক নিযোজিত হয়। এতদ্রূপে আথেন্সীয়েরদের পরাক্রম বিলুপ্ত হওয়াতে পেলোপনিসসীয় যুদ্ধ সমাপ্ত হয়। ঐ যুদ্ধের দ্বারা গ্রীকীয়েরদের ন্যায্যান্যায্য বিবেচনা একেবারে লোপ পাইল এবং দেশের সাধারণ হিত চেষ্টা না করিয়া সকলই স্বার্থপর হইল ও পরস্পর ঈর্ষাঈর্ষি কলহাদির দ্বারা দেশের সাধারণ পরাক্রমও গেল।
এই যুদ্ধ সমাপ্তহওনের চারি বৎসর পরে পারসীয় রাজাকে সিংহাসনচ্যুতকরণের মানসে তাহার কনিষ্ঠ ভ্রাতা কোরস্ দশ সহস্র গ্রীকীয় সৈন্যেরদিগকে বেতন দিয়া রাখিলেন। পরে কিউনাস্কা স্থানে যুদ্ধ হওয়াতে কোরস্ পরাজিত হইয়া গতপ্রাণ হইলেন কিন্তু তাঁহার সৈন্যান্তঃপাতি গ্রীকীয়েরা আপনারদের অস্ত্রশস্ত্র ত্যাগ করিতে অস্বীকৃত হইয়া জেনােফন সেনাপতির কর্ত্তৃত্বাধীনে পারস্য দেশের মধ্য ভাগঅবধি বিপক্ষ জাতীয়েরদের সঙ্গে যুদ্ধ করত এবং অজ্ঞাত অথচ পর্ব্বতময় দেশ দিয়া গমন করিয়া স্বদেশে স্বচ্ছন্দে শুভপ্রত্যাগ মন করিলেন এবং যদ্যপি বিপক্ষ সৈন্যের পথিমধ্যে তাহারদের প্রতিদিনই বিঘ্ন জন্মাইতে লাগিল তথাপি জয় করিতে সমর্থ হইল না। এই দশ সহস্র সৈন্যের এতদ্রূপে শুভপ্রত্যাগমন দৃষ্টে গ্রীকীয়েরা আপনারদের মহাশত্রু পারসীয় রাজার আন্তরিক দুর্ব্বলতা বিলক্ষণ রূপে জ্ঞাত হইল এবং যদ্যপি পারসীয় রাজার ঘুষের দ্বারা তাহারদের দেশীয় বিবেচনা নষ্ট না হইত তবে অবশ্যই ঐ দুর্ব্বলতা জ্ঞানে তাহারদের উপকার হইতে পারিত।
আথেন স নগর আক্রমণের পর স্পার্টারা গ্রীকের মধ্যে প্রবল হইয়া অতিকঠিনরূপে দেশের শাসন করিতে লাগিল। কিন্তু স্পার্টারদের প্রভুত্ব পঁয়ত্রিশ বৎসর মাত্র ব্যাপিয়া থাকে। আসিয়াস্থিত যে গ্রীকীয়েরা কোরসের সাহায্য করিয়াছিল তাহারদের উপরে ক্ষুদ্র আসিয়ার পারসীয় সুবাদারের ক্রোধাগ্নি শীঘ্র লাগাতে স্পার্টারা পারসীয়েরদের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হইল। এবং স্পার্টার পরম নিপুণ রাজা আগেসিলাস খ্রীষ্টীয়ান শকের ৩৯৬—৩৯৪ বৎসরের পূর্ব্বে পারসীয় সাম্রাজের নাভিপর্য্যন্ত যুদ্ধ যাত্রা করিয়া বাদশাহকে স্বীয় সিংহাসনের উপরেই কম্পায়মান করিল। এবং ঐ রাজ্যের আন্তরিক দুর্ব্বলতাবিষয়ে তাঁহার যে অনুভব হইয়াছিল তাহা আপনার এই জয়যুক্ত যাত্রা দেখিয়া আরাে দৃঢ় হইল অতএব তিনি পারসীয় রাজ্যের সিংহাসন একেবারে বিনষ্ট করিতে অতিসাহসপূর্ব্বক কল্প করিলেন ইত্যবসরে পারসীয়েরা গ্রীক দেশের মধ্যে ধন বি তরণ করিয়া তাঁহার শত্রু জন্মাইল সুতরাং তাহাতে তাঁহার ঐ মহাসঙ্কল্প ত্যাগ করিতে হইল।
ইতিমধ্যে আথেন্সীয়েরা স্পার্টারদের যোয়াল ঝেড়ে ফেলিয়া পুনর্ব্বার ক্রমে প্রবল হইতে লাগিল। আগে সিলাসের সাহসিক অভিপ্রায় বিফলকরণার্থ আথেন্স ও স্পার্টীয়েরদের মধ্যে পারসীয় রাজা যুদ্ধ ঘটাইলেন ঐ যুদ্ধে কোরিন্থ ও থিব্স ও আরগস আথেন্সীয়েরদের সঙ্গে যোগ করিল কিন্তু স্পার্টারা ঐ সম্মিলিত লোকেরদিগকে করাণিয়া স্থানে জয় করে কিন্তু কোনান আথেন্স ও পারসীয়েরদের যুদ্ধজাহাজ লইয়া স্পার্টারদের যুদ্ধ জাহাজ জয় করে। তৎপরে পারসীয়েরদিগকে তাহারদের নূতন সাহায্যকারী গ্রীকীয়েরদের হইতে পৃথক করিতে স্পার্টারা যথাসাধ্য সযতন হইল এবং পারসীয়েরদিগকে সপক্ষকরণার্থ অনেক ক্ষতিও স্বীকার করিল। গ্রীকীয়েরদের এতদ্রূপ আন্তরিক বিবাদ আণ্টালকিডসের করা অতিপ্রসিদ্ধ সন্ধির দ্বারা ভঞ্জন হয় ঐ সন্ধিপত্র তাঁ হার নামেই বিখ্যাত। তাহা পারসীয় রাজার আজ্ঞাতেই সম্পন্ন হয় এবং তদ্বারা পূর্ব্বকালীন অতিগাম্ভীর্য্য জয়ী গ্রীকীয়েরদের সম্ভ্রম একেবারে মাটি হইয়া গেল এবং ক্ষুদ্র আসিয়াস্থিত তাবৎ গ্রীক নগর তাহারা পারসীয়েরদের হস্তে সমর্পণ করিল। গ্রীকীয়েরদের মধ্যে স্পার্টার প্রবল রহিল কিন্তু তাহারদের অন্যথাচরণের দ্বারা তৎকালেই তাহারদের বিনষ্টহওনের অঙ্কুর জন্মিতে লাগিল।
খ্রীষ্টীয়ান শকের ৩৮২ বৎসরের পূর্ব্বে স্পার্টীয় সেনাপতি ফেবিডাস অতিবিশ্বাসঘাতকতারূপে থিব্সের দুর্গ হস্তগত করিয়া স্বীয় গোলামেরদের প্রতি যেরূপ ব্যবহার করিয়া থাকিতেন তদ্রূপ থিব্স নগরনিবাসিরদের প্রতিও করিলেন। কিন্তু তৎসময়ে থিব্স নগরে পিল পিডাস এবং ইপামিনাস নামে দুই ব্যক্তি ছিল তাহারা যদ্যপিও তৎকালপর্য্যন্ত অপ্রসিদ্ধ তথাপি পণ্ডিতের যাদৃশ বুদ্ধি ও সৌজন্য এবং বীরপুরুষের যাদৃশ সাহস উভয়েরি তাহা ছিল। তাহারা মহােদ্যোগ করিয়া থিব্স দেশ স্পার্টীয়েরদেরহইতে মুক্ত করিতে এবং স্পার্টা দেশপর্য্যন্ত যুদ্ধ করিতে নিশ্চয় করিল। ল্যুকত্রা স্থানে খ্রীষ্টীয়ান শকের ৩৭১ বৎসর পূর্ব্বে থিব্সীয়েরদের ও স্পার্টীয়েরদের সৈন্যের সঙ্গে যুদ্ধস্থলে সাক্ষাৎ হইল তাহাতে ইপামিনণ্ডাস জয়ী হওয়াতে স্পার্টীয়েরদের পরাক্রম মূলপর্য্যন্ত লাড়িত হইল এই দূরবস্থা সময়ে দাম্ভিক স্পার্টীয়েরা আথেন্সীয়েরদের সাহায্য প্রার্থনা করে এবং ঐ সাহায্য প্রাপ্ত হইয়া কিছু কাল এই নূতন শত্রুগণকে দমন করিয়া রাখিল। ইতিমধ্যে পিলপিডাস উত্তর দিগে থিব্সের অধিকার বিস্তার করিতে উদ্যত হইয়া থেসালি দেশ থিব্সের রাজ্য অধীন করাতে প্রায় কৃতকার্য্য হওন সময়ে খ্রীষ্টীয়ান শকের ৩৬৪ বৎসর পূর্ব্বে তিনি যুদ্ধে হত হইলেন। পরে ইপামিনণ্ডাস স্পার্টীয়েরদের দেশ আক্রমণ করিয়া যে মেসিনীয়েরদিগকে স্পার্টীয়েরা বহুকালাবধি দাসের ন্যায় রাখিয়াছিল তাহারদিগকে তিনি মুক্ত করিলেন। এবং খ্রীষ্টীয়ান শকের পূর্ব্বে ৩৬২ সালে মাণ্টেনিয়ার মাঠে পুনর্ব্বার স্পার্টীয়েরদের সঙ্গে যুদ্ধ করেন ঐ যুদ্ধে ঐ তিনি সম্পূর্ণ রূপ কৃতকার্য্য হইলেন বটে কিন্তু পরিশেষে হত প্রাণ হন। এতদ্রূপে এই দুই ব্যক্তি স্পার্টীয়েরদের গর্ব্ব খর্ব্ব ও প্রভুত্ব সঙ্কুচিত করেন এবং আপনার অতিক্ষুদ্র জন্মস্থান এমত সমৃদ্ধ করেন যে তাবৎ গ্রীকের মধ্যে তাহা প্রবল হয়। কিন্তু থিব্স নগরের ঐশ্বর্য্য অত্যল্প কাল থাকে যেমন এই দুই রাজনীতিজ্ঞ পুরুষেরদের কীর্ত্তিতে বর্দ্ধিষ্ণু হয় তেমনি তাহারদের নিধনেতেই নির্দ্ধন হইল।
এতৎসময়াবধি অর্থাৎ খ্রীষ্টীয়ান শকের পূর্ব্বে ৩৬২ সালঅবধি সেকন্দরশাহের মাকিদোনের সিংহাসনারােহণ ৩৩৬ সালপর্য্যন্ত ছাব্বিশ বৎসর ব্যাপিয়া আথেন্স ও স্পার্টা ও থিব্স যাদৃশ প্রবল হয় গ্রীক দেশের মধ্যে তাদৃশ অন্য কোন রাজ্য প্রবল হইতে পারিল না। গ্রীক দেশ একেবারে জীর্ণ হইয়া গেল অন্তঃপাতি প্রত্যেক রা জ্য প্রতিবাসি রাজ্যের সঙ্গে ঈর্ষাঈর্ষিরূপে চলিতে লাগিল। সাধারণ উপকারের চেষ্টা এককালে নির্ব্বাণ হইল এবং উৎকোচ গ্রহণাদি অনিবার্য্যরূপে চলিতে লাগিল। গ্রীকীয়েরদের অশুভবর্দ্ধিত অশুভস্বরূপ আরো এই ঘটিল যে আন্তরিক শান্তি রক্ষণার্থ যে আমফিক্টিয়োনিক সভা পূর্ব্বে স্থাপিত হইয়াছিল তাহারদের কুমন্ত্রণার দ্বারা আন্তরিক যুদ্ধ উপস্থিত হইয়া দশ বৎসর পর্য্যন্ত ব্যাপিয়া থাকিল। বিশেষতঃ খ্রীষ্টীয়ান শকের পূর্ব্বে ৩৫৭ বৎসর ফোসিয়ারা ডেলফি মন্দিরের পবিত্র ভুমিতে লাঙ্গল চালাইয়াছিল তৎপ্রযুক্ত উক্ত সভা তাহারদিগকে অভিসম্পাত করে কিন্তু ফোসিয়ারা এককালীন যুদ্ধযাত্রা করিয়া ঐ দেবালয়ের অসংখ্য ধন লুঠ করিয়া আপল্লো দেবতার ঐ আলয় রক্ষণার্থ যে থিব্সীয়েরা স্বীকৃত হইয়াছিল তাহারদের ও তাহারদের সহযোদ্ধারদের সঙ্গে যুদ্ধ করিতে তাবৎ গ্রীক দেশে সৈন্য সংগ্রহকরণার্থ ঐ লুঠিত ধন সর্ব্বত্র বিতরণ করে। এই বহুসংখ্যক ধন এতদ্রূপে বিতরিত হওয়াতে পারসীয়ে রদের উৎকোচ দানে গ্রীকীয়েরদের যে যৎকিঞ্চিৎ সারল্য অবশিষ্ট ছিল তাহাও বিনষ্ট হইল।
অতএব এইক্ষণে গ্রীকীয়েরদের নানা রাজ্যের অবসান সময় উপস্থিত। ইপামিনণ্ডাসের শিষ্য মাকিদোনের রাজা পরম নৈপুণ্যশালি ফিলিপ অনুপম সঙ্কট সময়ে ঐ রাজ্যের সিংহাসনারূঢ় হন। দুই বৎসরের মধ্যে তিনি সে সকল সঙ্কট হইতে উত্তীর্ণ হইয়া স্বীয় দিগ্বিজয়িতা ব্যাপার নির্ব্বাহ করিতে আরম্ভ করিলেন এবং গ্রীক দেশের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করিয়া খীষ্টীয়ান শকের পূর্ব্ব ৩৩৮ সালে থেরনিয়া স্থানের যুদ্ধে জয়ী হইয়া একেবারে তাবৎ গ্রীক রাজ্যের প্রভু হইলেন। যে সময়ে তিনি উৎকোচ ও যুদ্ধের দ্বারা আপনার পরাক্রম মূলবন্ধ করিতেছিলেন তৎকালীন তাঁহার সৈন্যাধ্যক্ষের মাকিদোনের উত্তর কোণে ত্রাকিয়ার পর্ব্বতীয় রাজ্যে প্রবেশ করিয়া ত্রাকিয়ার তটে পূর্ব্বে গ্রীকীয়েরা যে সকল নগর পত্তন করিয়াছিল তাহা অধিকার করেন ঐ সকল নগরই গ্রীকীয়েরদের অহঙ্কারের প্রধান সামগ্রী ছিল। পরে তিনি স্বীয় ব্যাপারসমূহে কৃতকার্য্য হইলে পারসীয় সামাজ্য আক্রমণ করিতে নিশ্চয় করিলেন কিন্তু খৃীষ্টীয়ান শকের ৩৪০ বৎসর পূর্ব্বে এক ব্যক্তি খুনির দ্বারা তিনি হত হইলেন। পরে তাঁহার পুত্র সেকন্দরশাহ তৎসিংহাসনে উপবিষ্ট হইয়া দ্বাদশ বর্ষের মধ্যে পৃথিবীর পশ্চিম ভাগের তাবদ্ব্যাপারের রূপান্তর করেন। তাঁহার দিগ্বিজয়ের মহাকার্য্যের ছায়াতে গ্রীক দেশীয় ব্যাপার সকল প্রায় অদৃশ্য হইল এবং পুনর্ব্বার কখন দেদীপ্যমানহইতে পারিল না।
CHAP. V.
B. C. 560—330.
FROM CYRUS TO ALEXANDER THE GREAT.
IN the preceding chapter we described the absorption of the old empires of Western Asia, the Assyrian, the Babylonian, the Median; and the kingdoms of Palestine and Asia Minor, in the empire of Persia, created by the genius of Cyrus. In the epoch now to be considered, the most prominent events are those which relate to the conflict of Persia, with the small but energetic republics of Greece, a conflict which terminated in the conquest of the whole of the Persian empire by Alexander the Great, the equal, if not the superior of Cyrus, both in military prowess and mental grandeur. To this period also belong the infant struggles of that power, whose accession to universal empire will form the most prominent object in the history of the two succeeding periods,—we mean the empire of Rome. Thus as we move down the stream of history, those empires and kingdoms which monopolized the attention of the reader, losing their independence, gradually fall into oblivion, while other nations and empires spring up in regions heretofore barbarous and unknown, and fill the page of history with their struggles for dominion.
Cyrus having, with the aid of his own hardy countrymen, the Persians, erected so vast a monarchy, that its extreme limits touched the Indus on the east; the Grecian seas on the west; the Persian Gulf, on the south; and the Scythian mountains on the north,—had the wisdom to curb his military ardour, and to devote the remainder of his life to the consolidation of his empire, and to the improvement, by wise institutions, of the numerous millions who looked to him for protection. In his old age an irruption of the restless Scythians of the north, obliged him to take the field again, but according to Ctesias he was defeated and lost his life.
Cambyses, who succeeded Cyrus, not content with ruling a hundred nations, determined to add Egypt to the Persian empire. In the first year of his reign he entered that country with a large army, and in one battle, fought at Pelusium, overthrew the empire of the Pharaohs, and Egypt merged into a Persian province, B. C. 525. In his attempt to penetrate the desert, however, and to conquer the rich emporium of Ammonium, he was unsuccessful; and the designs he had formed against Carthage were also frustrated, by the refusal of his Phenician sailors to contribute to the downfall of their own colony. In the mean time the Magi conspired to re-seat a Median dynasty on the throne, and set up Smerdis, pretending that he was the elder brother of Cambyses. This gave birth to an accident which cost Cambyses his life, after a reign of seven years and a half. The false Smerdis reigned eight months; but the Persians, unable to brook a Median sovereign, seven of the nobles conspired against him and put him to death. The seven conspirators, after a remarkable debate concerning the election of a future monarch, raised Darius to the throne, who strengthened his power by marrying Atoha, one of Cyrus's daughters. The reign of Darius lasted thirty-six years. He extended the bounds of the empire to its utmost limit; improved the country by a variety of useful institutions, and built cities with royal magnificence for the residence of the Court. Cyrus had conquered Asia, and Cambyses Egypt; Darius turned his arms against Thrace and Macedon in Europe, countries now included in the Turkish empire. In the mean time Babylon revolted, but was subdued after a siege of twenty-one months. Darius still bent on war, entered into hostilities with the wandering and therefore invincible Scythians, but was defeated, like his father-in-law Cyrus, and constrained to make a disgraceful retreat. In the East he was more successful; a Greek in his service navigated the Indus, and the highlands north of that river were added to his empire. About the same time one of his generals attacked and destroyed the city of Barca in Africa.
While the arms of Darius thus triumphed on the Danube, on the Indus, and in Africa, a contest arose between him and the small, and till then insignificant nation of the Greeks, the whole of whose territory was not equal to a fiftieth part of the Persian dominion. In all human probability one campaign would have been sufficient to render Greece, like Egypt, a province of the Persian empire; but in that country the love of national independence animated its inhabitants with the spirit of heroes.
We have noticed the subjugation to the Persian yoke of the Greek cities in Asia Minor, then the chief seat of civilization. Thrace and Macedon, which bordered immediately on Greece to the north, were also under the Persian authority. The republics of Greece thus found themselves hemmed in by the power which had conquered the best part of the known world, and determined not to resign their liberty without a struggle. The cities of Asia Minor bore the Persian yoke with much impatience. At length Aristagoras, the chief of Miletus the most powerful of those cities, having offended the Persian satrap, broke out into revolt, and conceived the design of raising a Greek confederacy against his oppressors. His plan succeeded; the Grecian cities threw off the Persian supremacy, and established a republican form of government. The agitator then passed over into Greece, with the hope of kindling a kindred feeling of hostility against the great King in the minds of his fellow-countrymen. At Lacedemon he was treated with ridicule. At Athens there happened a conjuncture of circumstances, highly favourable to his views. Hippias, the exiled son of Pisistratus, had resorted to the court of the Persian satrap of Asia Minor, to solicit aid for the recovery of his authority. The Athenians sent embassadors to counteract his views, but the Persian satrap haughtily replied, that if they wished for safety, they must receive Hippias back. With this irritating reply they returned to Athens, just at the moment when Aristagoras was soliciting aid against the Persians on behalf of the Asiatic Greeks. The populace, who bore sway in Athens, were blown into a flame. With a breathless haste a fleet was fitted out, and troops embarked for Asia Minor. The Athenian soldiers on landing there, proceeded without delay to Sardis, the metropolis of the province, and set it on fire. The Persians collected an army; the Athenians fled, and being overtaken on the sea shore were defeated. This act of wanton aggression laid the foundation for those feelings of mutual hostility which during so long a period raged between the Greeks and the Persians.
Darius now bent his undivided attention to the recovery of the revolted provinces inhabited by the Greeks, who, fully aware of the superiority of the Persians by land, directed all their efforts to their fleet. The Persian armies, however, found it no easy task to subjugate the Asiatic Greeks. After six years of warfare, the town of Miletus still held out, and the Greeks were in possession of a powerful fleet. The Persian commanders at length proceeded to assemble a fleet from their tributary maritime provinces; but not being manned with Persians, it inspired but little confidence. It was, however, victorious in a great naval engagement, the result of which was the entire reduction of the Asiatic Greeks and the Grecian Islands. It only remained now to chastise the Athenians for the burning of Sardis. A large force was assembled under Mardonius the son-in-law of Darius, who crossed the Hellespont into Europe, and sent his heralds to demand of the Greeks earth and water, the tokens of submission. The small and pusillanimous states submitted to these demands, but the Spartans and Athenians not only rejected them, but treated the envoys with insolence. The Persian army advanced from the north through the defiles of Thrace and Macedon, but this first campaign proved unsuccessful, as the fleet was dispersed in a storm, and the army baffled by the Thracian mountaineers, B. C. 493. The next year, a second army was sent under the command of more able generals, guided, as is supposed, by the councils of Hippias. Avoiding the mountains of the north which had proved fatal to the former expedition, the generals collected a large fleet in Cilicia, from the tributary Greeks and others, and transporting the army at once into the heart of Greece, landed them on the plains of Attica. The Greeks were ill prepared to resist so mighty a host. No union for national defence had been formed; and the little territory of Athens, not exceeding Burdwan in extent, was left unaided to bear the brunt of the war. The Athenians implored aid of the Spartans, but it wanted five days of the full moon, and the Spartans would not stir. In this moment of extreme peril, Miltiades became the instrument under Providence of saving his native land. The Persians encamped on the plains of Marathon 110,000 strong. Miltiades met them with 9000 Athenians, and 1000 Platæans, and obtained a complete victory. The victorious Athenians, flushed with this unexpected success, determined to levy contributions on the islands which had abetted the Persians. Miltiades was sent against them with a fleet, but failing at Naxos, he was obliged to return, and the Athenians, who owed their salvation to him, fined him for his failure in an expedition to which their own folly had given birth. Unable to pay the fine, he was sent to prison and there expired; a memorable example of the ingratitude of the Athenians.
The Persians burned with impatience to revenge the disgrace of Marathon, and for three years Asia resounded with preparations for a new war. In the mean time Darius died, and was succeeded by Xerxes, then in the vigour of youthful ambition. The conquest of Greece appeared to him but the first step to the subjugation of those boundless and unknown regions which were supposed to lie beyond it. He assembled an army exceeding in number any which had ever been heard of, and appointed its rendezvous at Sardis, to which place he himself repaired to take the command of the expedition. In their passage to the sea, the troops are said to have exhausted several rivers. Two bridges of boats were thrown across the Hellespont to transport this great multitude from Asia to Europe, and seven days and nights elapsed before the whole force had crossed. The army was then mustered on the plains of Europe, and found to exceed two millions. With this almost incredible force, Xerxes proposed to march deliberately through Macedon and Thessaly, keeping as near as possible to the sea shore, which the fleet was directed at the same time to coast. While the storm was gathering in the north ready to burst on the Greeks, they were so distracted in their councils as to have formed no plan of operation: and the defence of the country was left to accident. At length, after much time had been lost, a body of troops was sent to dispute with the enemy the narrow pass of Thermopylæ, in the mountains of Thessaly, the only path into Greece. Leonidas, the Spartan, commanded the troops, and with 300 of his fellow-countrymen, and 700 Thespians, defended the pass for three days with incredible valour, till he and his soldiers were all slain, B. C. 480. The moral effect of this heroic example was of the highest value to the Greeks, since it taught them to despise the Persians, and raised their own courage to enthusiasm. Xerxes continued his march upon Attica, and the Athenians seeing no chance of defending Athens, quitted it. The city, bereft of its inhabitants, was taken and burnt, and the conflagration of Sardis was expiated. The Persian fleet then pursued that of the Greeks to the bay of Salamis, and a naval engagement ensued under the direction of Themistocles, the Athenian, the master spirit of that age, in which the Persians were completely defeated. Xerxes disgusted with his failure, and dreading a scarcity of food for so large an army, returned with his forces to Asia; leaving a portion of his army in Greece, which met the Greeks the next year at Platea, and was completely overthrown. On the same day a naval victory was gained over the Persians at Mycale, and Greece, by one bold effort, was for ever delivered from Persian invasion.
The successful termination of this war wrought an entire change in the state of Greece. From being the aggressed, the Greeks became the aggressors. To free their Asiatic brethren from the Persian yoke, they continued the war, at first under the direction of Sparta, and afterwards when the Spartan general, by his haughtiness and treachery, had disgusted the allies, under the auspices of Athens. A permanent confederacy was formed of the islands, and of the states beyond the limits of Peloponnesus; each state agreeing to furnish a certain number of ships to fight under the banners of Athens against the common enemy; this contingent of ships was afterwards commuted for the payment of a certain sum of money, which was deposited in a common bank at Delos.
After the retreat of the Persians, the Athenians returned to the wreck of their city, which under the commanding talents of Themistocles, rose from its ashes, and was so strongly fortified as to be able, it was supposed, to stand a siege. Themistocles from past experience however felt a conviction that the Athenians must trust for safety and look for glory to their navy. With the hope of making his native city the mistress of Greece, he directed his powerful mind to the increase of its maritime power. After having rendered the greatest services to Athens, however, he was banished by his ungrateful fellow-citizens, and obliged to take refuge in Persia, where he died. A succession of able statesmen, to whom the administration of the state was committed, filling up the plan he had devised, in the course of a few years gave Athens the entire ascendancy in Greece. The high and palmy state of Athens may therefore be placed in the forty years which elapsed between the close of the Persian and the commencement of the Peloponnesian war. Athens became the champion of Greece, and the centre of every political movement. Public spirit animated the breasts of the citizens. Whatever was great and ennobling sprung up with luxuriant vigour; the arts were carried to a degree of unrivalled perfection; poetry received its last polish; philosophy was cultivated with enthusiasm; the art of public speaking was domesticated in the public; and painting, sculpture, and architecture reached at once the summit of perfection: and strange to say, these results of national genius burst forth under every disadvantage, in a city where the greatest man was perpetually liable to banishment for surpassing his fellow-citizens. Far different was the case in Sparta, where the rude habits of the citizens arrested the growth of genius; there men were taught to die for their country; in Athens, the citizens learned to live for its benefit.
In the year 449 before Christ the Athenians, after a long series of victories, obliged the Persian monarch to sign a treaty of peace in which he declared the cities of Asia Minor free, and engaged not to navigate the Ægean sea. Thus was the pride of Persia humbled after a thirty years' war. But this empire had already passed the meridian of its glory. The spirit of Cyrus no longer animated its councils, Like all great eastern monarchies, after the few great men by whom it had been raised, were removed, the Seraglio obtained a pernicious influence in the state, the king became effeminate, and the governors of distant provinces, powerful and disobedient.
While literature and the arts were so successfully cultivated in Athens, and its power was felt not only by the Grecian states, but by the great king himself the Athenians indulged in a spirit of hauteur and even cruelty towards the confederated Greek states, That which had been a voluntary contribution for the Persian war, they began to exact as tribute, and to treat the associated cities as their subjects. Pericles having attained the supreme power at Athens, for many years overawed the malcontents by his energy and talents, but the flame of discontent fanned by the Spartans at length broke out, B. C. 430, a little before his death. Almost all Greece was ranged either on the side of Sparta or Athens, and a rancorous civil war arose, which did not cease until it had blighted the fairest prospects of Greece. Athens took the field with all the maritime strength of Greece on her side; Sparta with a great superiority by land. During the first three years, the Athenians continued to act on the defensive; in the fourth year a pestilence which broke out in Athens did more injury than the enemy, as it occasioned the death of Pericles. The republic then fell under the influence of Cleon, a currier, and the war was prosecuted with great recklessness and cruelty. Among the Spartans arose Brasidas, a man of superior ability, and there was every probability of his terminating the war honourably for his country, when he was cut off in the flower of his youth, a victim to his own gallantry. A peace was soon after concluded between all the belligerents for fifty years, which was however broken before five had elapsed. Alcibiades, a youth of fierce disposition, great versatility of talents, but without discretion, now attained a strong but pernicious influence over the Athenians, whom he urged to break the peace, hoping for much personal distinction in case of a war. He rashly engaged the Athenians in a project for the conquest of Sicily, and the whole strength of the republic was put forth in this distant and fruitless expedition. He was soon after banished for sacrilege, and joined the Spartans, who sending a large force to the aid of the Syracusans, in Sicily, annihilated the army and navy of Athens.
From this heavy blow the Athenians never recovered; yet when the people saw themselves by one stroke deprived of their generals, their army, and their fleet, their enthusiasm rose to the highest pitch; a new fleet and army were created with incredible speed, and their confederates were retained in their allegiance. The Spartans in the mean time applied diligently to the formation of a navy (though this step was directly at variance with the institutions of Lycurgus); and being pushed for money to support it, applied for aid to Persia. This was a new and disastrous event for Greece. The eyes of the Persian monarch were by this step opened to his true interest-that of bribing the Greeks to fight against and weaken each other. Thus what Persian valour had been unable to achieve, was accomplished with ease by their gold. From the time when the Greeks first touched the money of the Persians, their national integrity departed, and with it, their national vigour.
Alcibiades soon after deserted the Spartans, and giving to his native land the benefit of his great talents, defeated the enemy in various engagements. Lysander, the Spartan general, however, defeated him; a second victory was also gained by Sparta; but the Athenians collecting all their strength gave the Spartans a completeoverthrow at Æginussæ; the admirals, instead of receiving thanks at Athens, were barbarously put to death. This act of cruelty was immediately after followed by the downfal of the state; Lysander surprised the Athenian fleet at Ægospotamos, and captured every vessel. Deprived of the command of the sea, the confederates of Athens soon yielded to the Spartans; Athens itself was besieged and taken; her walls and the Pyræus were levelled with the ground, and thirty tyrants appointed to govern her. Thus with the downfal of Athens ended the Peloponnesian war; a war which totally destroyed the moral feeling of the Greeks; patriotism gave way to party spirit, and mutual jealousy and hatred absorbed the national energies.
Four years after the termination of this war, Cyrus the younger brother of the reigning monarch of Persia, anxious to dethrone the king, engaged ten thousand auxiliary Grecian troops in his service. A battle was fought at Cunaxa, in which Cyrus was defeated and lost his life. The Greeks in his army, however, refusing to lay down their arms, marched back under the command of Xenophon to their own land from the centre of Persia, through hostile tribes and an unknown and mountainous country, daily harassed by the Persian army, but never subdued. The triumphant return of the ten thousand, fully laid open to the Greeks the internal weakness of their great enemy, of which they might have taken advantage, had not corruption shed its baneful influence over their councils.
After the capture of Athens, Sparta became the predominant power in Greece, and ruled it with an iron sceptre. The Spartan supremacy lasted thirty-five years. The Asiatic Greeks, who had aided Cyrus, soon after felt the wrath of the Persian satraps of Asia Minor, and Sparta became thereby involved in a war with Persia. Agesilaus, its king, a man of the most splendid talents, marched a body of troops, B. C. 396—394, into the heart of the Persian empire, and made the king tremble on his throne. His victorious progress confirmed his suspicions of the domestic weakness of the empire, and he conceived the bold idea of overturning at once the Persian throne, when Persian gold was employed to raise up enemies in Greece, and he was obliged to relinquish his plan.
Athens had in the mean time thrown off the yoke of Sparta, and begun gradually to recover strength. The Persians, to frustrate the bold design of Agesilaus, fomented a war between the Athenians and the Spartans, in which Corinth, Thebes, and Argos joined the former. The Spartans beat the confederates at Coronea; but Conon, with the combined fleet of Athens and Persia, discomfited their navy. The Spartans then endeavoured to detach the Persians from their new allies, and made great sacrifices to bring them over to their interest. This state of internal discord was closed by the famous peace negotiated by Antaleidas, which bears his name. This treaty, dictated by the Persian King, levelled the once proud and victorious Greeks who agreed to abandon the Grecian cities of Asia Minor to Persia. Sparta was left preponderant in Greece; but its arbitrary proceedings were even then paving the way for its downfal.
Phoebidas, the Spartan general, treacherously obtained possession of the citadel of Thebes, B. C. 382, and treated the Thebans as he had been accustomed to treat his own slaves. There were however at that time in Thebes, two men, as yet unknown to fame, Pelopidas and Epaminondas, who united the wisdom and virtue of philosophers with the spirit of heroes. By one bold effort they liberated Thebes from the Spartan yoke, and then detemined to carry the war into the heart of Lacedemon. At Leuctra, the Theban and Spartan armies met, B. C. 371. Epaminondas was successful, and the power of Sparta was shaken. In this extremity, the haughty Spartans applied for aid to Athens, and thus for a time kept this new enemy at bay. In the mean while Pelopidas endeavoured to extend the sovereignty of Thebes in the north, and was on the point of annexing Thessaly to her dominion, when he fell in battle, B. C. 364. Epaminondas made a new irruption into the Spartan territories, declared Messina free, which the Spartans had so long held in slavery, and B. C. 362, again fought the Spartans on the plains of Mantinea. He was completely successful, but fell in the combat. Thus did these two men humble the pride and destroy the supremacy of Sparta, while they raised their own little town to be the arbitress of Greece. But the grandeur of Thebes was of short duration; it rose with these two illustrious statesmen, and fell on their death.
From this time, 362 B. C. to the accession of Alexander the Great to the throne of Macedon, 336, a period of twenty-six years, no one state in Greece attained that supremacy which had been enjoyed in succession by Athens, Sparta and Thebes. Greece was now in its dotage; each state was inflamed with jealousy of its neighbour, public spirit was extinct, and corruption reigned without control. To add to the misfortunes of Greece, a ten years’ social war was enkindled by the Amphictyonic council, originally established to preserve harmony. The Phocæans had, it seems, tilled the sacred lands of Delphi, 357 B. C. and were denounced by the council. But they marched at once to Delphi, plundered the temple of its immense wealth, which they employed in hiring mercenary soldiers in all parts of Greece to fight the Thebans and their confederates, who had undertaken to protect the shrine of Apollo. The dispersion of this immense wealth over Greece, served to destroy the little national virtue which had survived the Persian bribes.
The crisis of the Grecian republics now approached. Philip, King of Macedon, a prince of extraordinary ability, educated by Epaminondas, succeeded to the throne of Macedon in the midst of unexampled difficulties. In two years he surmounted every obstacle, and began his ambitious career by interfering in the affairs of Greece, of which he soon after became the arbiter, by winning the battle of Chæronea, B. C. 338. While he was establishing his power in Greece, as much by bribery and corruption as by force of arms, his generals invaded the mountainous regions of Thrace, to the north of his dominions, and conquered those settlements which the Grecians had formed on the Thracian coasts, and which had so long been the pride of Greece. Having succeeded in all his enterprises, he determined to attack the great empire of Persia, but perished by the hand of an assassin B. C. 336, and was succeeded by his son Alexander the Great, who in twelve years changed the face of affairs throughout the western world. Under the mighty shadow of his conquests, the affairs of Greece dwindled into an insignificance, from which they never recovered. To his exploits we now turn.