পুরাবৃত্তের সংক্ষেপ বিবরণ/সেকন্দর শাহ

সেকন্দরশাহ।

 সেকন্দরশাহের বিদ্যাভ্যাসের ভার তাঁহার পিতা তৎ কালীন পণ্ডিতগণাগ্রগণ্য আরিস্টটলের প্রতি অর্পণ করিয়াছিলেন এবং সেকন্দরশাহের বিষয় আর কি প্রশংস্যের আবশ্যক যে সেকন্দরশাহ উক্ত পণ্ডিতচূড়ামণির শিষ্য যোগ্য এবং উক্ত পণ্ডিতমণিও ঈদৃশ শিষ্যের শিক্ষকোপযুক্ত। এই অধ্যয়ন অধ্যাপনার দ্বারা উভয়েরই অতিশয় সম্ভ্রম বৃদ্ধি হইল। সেকন্দরশাহ বিংশ বর্ষ বয়স্ক সময়ে মাকিদোনের সিংহাসনারোহণ করেন।

 সেকদরশাহ পরাক্রমপ্রাপ্ত হইবামাত্র দেখেন যে সরকারী কোষে যত টাকা আছে তদপেক্ষা কর্জ আটগুণ অধিক ফলতঃ তাঁহার চতুর্দ্দিগে যেরূপ বিভ্রাট দৃশ্য হইল তাহাতে সামান্য পুরুষ হইলে এককালে সংকুচিত হইয়া যাইত। তাঁহার পিতার নূতন রাজ্যের উত্তর ও পূর্ব্ব ও পশ্চিম প্রদেশের প্রজাগণ অধীনতারূপ যোয়ালি একেবারে ঝেড়ে ফেলিতে উদ্যত হইল এবং গ্রীকীয়েরা অতিবিজ্ঞ ও গূঢ় পরামর্শি ফিলিপের সিংহা সনোপরি এক বালককে উপবিষ্ট দেখিয়া আপনারদের মুক্ত হওনের ভরসাতে একেবারে পরমাহ্লাদিত হইল। কিন্তু যে যুবজন এইক্ষণে রাজমুকুট ধারণ করিলেন তিনি এই সকল গাঢ় বিভ্রাটহইতে উত্তীর্ণ হওনোপযুক্ত বটেন এবং যে বুদ্ধি ও শক্তির দ্বারা উত্তর কালে তাবৎ পৃথিবী জয় করেন তত্তুল্য শক্তি স্বীয় রাজ্যের প্রথম শাসনেই দর্শাইলেন। প্রথমতঃ তিনি উত্তম এক দল সৈন্য বাচনি করিয়া দক্ষিণাভিমুখে গ্রীক দেশের প্রতি যাত্রা করিয়া তাহারদের অবাধ্যতার অঙ্কুর স্বীয় প্রতাপে তাপিত করিলেন এবং পিতার পরিবর্ত্তে তিনি পারসীয়েরদের সঙ্গে যুদ্ধকরণার্থে তাবৎ গ্রীকীয়েরদের কর্ত্তৃক সেনাপতিস্বরূপ নিযুক্ত হওনে স্পার্টীয়েরদের ব্যতিরেকে অন্যান্য তাবৎ গ্রীকীয়েরদিগকে স্বীকৃত করাইলেন। তৎপরে মাকিদোন দেশে প্রত্যাগমন করিয়া যুদ্ধের আয়োজন প্রস্তুত করাতে তাবৎ শীতকাল ক্ষেপণ করিয়া গ্রীষ্মারম্ভে যে উত্তর কোণস্থিত অসভ্য জাতীয়েরা তাঁহার পিতাকর্ত্তৃক পরাজিত হইয়া অবাধ্য হইতেছিল তাহারদের প্রতি যুদ্ধযাত্রা করিলেন। শত্রুরা প্রতিবন্ধক করিলেও অপূর্ব্ব নৈপুণ্যের দ্বারা তিনি সসৈন্যে হেমস পর্ব্বত উত্তীর্ণ হইলেন। ঐ পর্ব্বত এইক্ষণে বালকান নামে খ্যাত। পরে বালকানের নিম্নভাগাবধি দানুব নদীপর্য্যন্ত যে মহামাঠ বিস্তীর্ণ আছে সেই স্থলে পঁহুছিয়া দেখেন যে বিপক্ষেরা দানুব নদীর মধ্যস্থিত একটা উপদ্বীপে আশ্রয় লইয়াছে। ইতিমধ্যে আপনার যে জাহাজ ঘুরিয়া ঐ নদীতে পঁহুছিয়াছিল তদ্বারা ঐ উপদ্বীপে পঁহুছিতে উদ্যোগ করিলেন কিন্তু কৃতকার্য্য হইতে পারিলেন না। পরন্তু গীতেনামক তাঁহার পিতার প্রাচীন শত্রু বহু সংখ্যক হইয়া নদীর পারে একত্র হইয়াছে শ্রবণ করিয়া তিনি ঐ অতিফালাও নদী রাত্রিযােগে মাড় অবলম্বনে উত্তীর্ণ হইয়া তাহারদিগকে আশ্চর্য্য দর্শন দিলেন অথচ ইহার পূর্ব্বে কখন কোন সৈন্য সেতু প্রস্তুত না করিয়া তাহাতে উত্তীর্ণ হইতে পারে নাই। পরে বিপক্ষের দের সঙ্গে সাক্ষাৎ করিয়া তাহারদিগকে জয় করিলেন এবং তদ্বিবসেই নদী পুনর্ব্বার পার হইয়া সেই রাত্রেই স্বীয় ছাউনিতে পঁহুছিলেন। এই অতিশয় সাহসিক কীর্ত্তি দেখিয়া চতুর্দ্দিকস্থ তাবজ্জাতীয় লােক ভয়ে কম্পমান হইয়া তাঁহার শরণাগত হইল। স্বদেশে প্রত্যাগমন কালে মাকিদোনের উত্তর ভাগে ইল্লিড়িয়ানামক পর্ব্বতীয় দেশের দুই জন অধ্যক্ষ পর্ব্বতীয় সঙ্কীর্ণ পথে দেখা দিয়া তাঁহার প্রত্যাগমনের পথ রােধ করিতে উদ্যত হইল। ইহার পূর্ব্বে তিনি যত সঙ্কটে পতিত হইয়াছিলেন তদপেক্ষাও অধিক এক্ষণে উপস্থিত হইল তথাপি তাঁহার স্বাভাবিক বুদ্ধির দ্বারা বিপক্ষেরদিগকে সম্পূর্ণরূপে বিনষ্ট করিয়া মাকিদোনের অভিমুখস্থ রাজ মার্গে পঁহুছিয়া নির্ব্বিঘেন চলিলেন। এই বিভ্রাট সময়ে গ্রীক দেশের মধ্যে তাঁহার লিখনপঠন অবরুদ্ধ হইলে এমত জনরব উত্থিত হইল যে তিনি মারা পড়িয়াছেন এবং থিবসীয়েরা ঐ জনরবে উল্লসিত হইয়া সেক ন্দরশাহের যােয়ালি ফেলিয়া যে সেনাপতিরদিগকে তিনি ঐ নগরে নিযুক্ত রাখিয়াছিলেন তাহারদিগকে হত করিল তাহারদের এই অবাধ্যতার সম্বাদ ঐ বীর পুরুষের কর্ণগােচর হইবামাত্র বিলম্ব করিলে সঙ্কট আছে ভাবিয়া অবিশ্বসনীয় বেগেতে ইল্লিড়িয়া পর্ব্বত উত্তীর্ণ হইয়া তাবৎ উত্তর গ্রীক দেশ দিয়া গমন করিলেন এবং যে সময়ে, থিব্‌স নগরস্থেরা আহ্লাদিত হইয়া গণনা করিতেছিল যে তিনি হয় দানুব নদীর তীরে স্থগিত আছেন নতুবা পর্ব্বতের মধ্যেই মারা পড়িয়াছেন এমত সময়েই সেকন্দর শাহ সসৈন্যে ঐ নগরের পুরােভাগে উপস্থিত হইলেন। তৎকালে প্রাচীরবেষ্টিত নগর অধিকার করা অনেক বৎসরসাধ্য ইহার পূর্ব্বে ঐ নগর আক্রমণ করাতে আথেন্‌সীয়েরদের তিন বৎসর অমনি ক্ষেপণ হইয়াছিল। অতএব থিব্‌সীয়েরদিগকে নগরার্পণকরণার্থ যখন হুকুম হইল তখন তাহারা নগর অধিকার করা অতিবিলম্বসাধ্য বােধ করিয়া অতিগর্ব্বপূর্ব্বক ঐ আজ্ঞা তাচ্ছল্য করিল কিন্তু সকলের অনপেক্ষিতমতে ঐ নগর প্রথমবারই আক্রমণ হইবা মাত্র বিপক্ষেরদের হস্তগত হইল। কিন্তু ঐ পরাজিত নগরের উপর সেকন্দরশাহ যেমত ব্যবহার করিলেন তাহাতে তাঁহার অত্যন্ত কলঙ্ক জন্মিল আবালবৃদ্ধবনিতাকে একেবারে সংহার করিতে অনুমতি দিলেন নগরের প্রাচীর সমভূমি করিলেন এবং জয়ি ব্যক্তির শরণাগত লােকব্যতিরেকে যাহারা তলবারহইতে রক্ষা পাইয়াছিল তাহারা গোলামের ন্যায় বিক্রীত হইল। কোন২ ইতিহাসবেত্তা কহেন যে সেকন্দরশাহের গ্রীকীয় সহযােদ্ধারা এই প্রধান নগরের বিষয়ে ঈর্ষাঈর্ষি করিয়া এতদ্রূপ বিনষ্ট করিতে তাঁহার প্রবােধ জন্মাইয়াছিল অথচ সেকন্দরশাহ নির্দোষ নহেন যেহেতুক তৎকালীন ব্যবহারাপেক্ষা তিনি স্বীয় গুণপ্রযুক্ত অনেক ভদ্র অতএব এতদ্রূপ মহানগর নিপাত নিবারণ করা তাঁহার উচিত ছিল। তাঁহার এই রূপ শীঘ্র আগমন এবং আক্রামকের অনপেক্ষিত কৃতকার্য্যতা দেখিয়া তাবৎ গ্রীকীয়েরা একেবারে ভয়ে কম্পান্বিত হইল এবং তাহারদের এমত বােধােদয় হইল যে যুদ্ধ বিষয়ে সেকন্দরশাহের তুল্য নিপুণ ব্যক্তি কখন ইহার পূর্ব্বে জন্মে নাই। মাকিদোনের রাজার এই প্রথম বৎসরের যুদ্ধের দৃষ্টে আধুনিক সেকন্দরশাহ অর্থাৎ নেপােলিয়নের প্রথম বৎসরীয় ইটালির যুদ্ধ স্মরণ হয়।

 তাবৎ গ্রীক দেশ এই প্রকারে অত্যন্ত ভীত হইয়া সেকন্দরশাহের বাধ্য হইলে স্বীয় জীবদ্দশার মুখ্য কার্য্য পারসীয় সাম্রাজ্য বিনষ্টকরণ বিষয়ে তিনি উদ্যুক্ত হইলেন। পারসীয় রাজার স্বদেশস্থ ভূরি২ ধন সৈন্য সামার্থ্যের অতিরিক্ত তাঁহার বেতন ভােগী ৫০০০০ গ্রীকীয় সৈন্য ছিল তাহারা সেকন্দরশাহের সৈন্যের তুল্য সাহসিক কেবল তদনুরূপ সেনাপতির অভাবে তাদৃশ কর্ম্মণ্য ছিল না। পারসীয় রাজ্য বিনষ্টকরণার্থ এবং তৎকালীন পরিচিত তাবৎ পৃথিবী জয়করণার্থ সেকন্দরশাহ কেবল ত্রিশ হাজার পদাতিক ও চারি হাজার পাঁচ শত অশ্বারূঢ় সৈন্য সমভিব্যাহারে লইলেন কিন্তু ইহারা সকলেই বাচা২ সৈন্য যুদ্ধে অত্যন্ত রত পরিশ্রমে অকাতর এবং তাহারদের নানা সেনাপতি এমত বীর যে তৎপরাবধিক পৃথিবীর মধ্যে তদপেক্ষা উত্তম বীর দৃষ্ট হয় নাই।

 ৩৩৪ সালের আরম্ভে সেকন্দরশাহ দ্বাবিংশ বর্ষবয়স্ক হইয়া এই সকল সৈন্যসমভিব্যাহারে হেলেস্পাণ্ট অর্থাৎ ইউরোপ আসিয়ার বিভাজক মহানাতে যাত্রা করিলেন ইহার পূর্ব্বে ঐ স্থানে তাঁহার যুদ্ধজাহাজ পঁহুছিয়াছিল। পরে সৈন্যেরা ঐ জাহাজে আরোহণ করিলে তিনি স্বীয় জাহাজের হাইল স্বহস্তে ধারণ পূর্ব্বক পরমোৎসাহে অগ্রসর হইয়া প্রথমেই আসিয়ার ভূমিতে পদার্পণ করিলেন তদ্দিবসাবধি আসিয়া যে তাঁহারি এতদ্রূপ তিনি জ্ঞান করিতে লাগিলেন। তাবৎ সৈন্য উত্তীর্ণ হইলে গ্রানিকস নদীপর্য্যন্ত গমন করিয়া তিনি দেখেন যে পারসীয় সেনাপতিরা তাঁহার আগমন নিবারণার্থ তাবৎ সৈন্য সংগ্রহপূর্ব্বক নদীর পারে অবস্থিত আছে। তাহারদের উচিত ছিল যে হেলেস্পাণ্ট মহানা উত্তীর্ণ হইতেই সেকন্দরশাহকে না দেয় এবং পারসীয় রাজার বেতনভােগী তাহারদের প্রধান সেনাপতি অতিবিজ্ঞ গ্রীকীয় যােদ্ধা মেণ্টরনামক ব্যক্তি যদি ইহার কিঞ্চিৎ পূর্ব্বে লােকান্তরগত না হইতেন তবে বােধ হয় যে তাহারা এইরূপ কার্য্য করিত। সে যাহা হউক গ্রানিকস নদীর তীরপর্য্যন্ত পঁহুছিলে সেকন্দরশাহের নীচে যে পারমিনিয়ােনামক প্রধান সেনাপতি ছিলেন তিনি ভাবি নানাবিঘ্ন দর্শাইয়া সেকন্দরশাহকে নদী উত্তরণে পরাঙ্মুখ করাইতে উদ্যুক্ত হইলেন তাহাতে সেকন্দরশাহ অতিসদ্বিবেচনাপূর্ব্বক উত্তর করিলেন যে হেলেস্পাণ্ট মহানা উত্তীর্ণ হইয়াও যদি এই অতি ক্ষুদ্র নদীর তীরে স্থগিত হওয়া যায় তবে যুদ্ধ ব্যাপারে লিপ্ত থাকনের আর আবশ্যক কি। পরে বিপক্ষেরদের সৈন্যের মধ্যে পারসীয় তাবৎ অশ্বারূ ঢের শ্রেষ্ঠ সৈন্য ছিল তাহারদের সম্মুখসম্মুখেই সেকন্দরশাহ ঐ নদী পদব্রজে পার হইয়া স্বীয় সৈন্যেরদের মধ্যে বীর্য্যোৎসাহ জন্মাইয়া বিপক্ষকে সম্যকরূপে পরাজয় করিলেন। রাজ্যের প্রধান ওমরা বিপক্ষেরদের অনেক সেনাপতি ঐ যুদ্ধে হত হয় কিন্তু সেকন্দরশাহ অত্যন্ত সুশীলতাতে তাহারদের উপযুক্তমত সমাধি ক্রিয়া করাইলেন। গ্রীষ্মকাল অতীত হইলে তিনি স্বীয় সৈন্যের অধিকাংশেরদিগকে শার্ডিস নগরে শীত কাল ক্ষেপণার্থ প্রেরণ করিলেন এবং নব বিবাহিত তাঁহার যত সেনাপতি ও সৈন্য ছিল তাহারদিগকে স্ব২ বাটী গমনার্থ ছুটি দিলেন। তাঁহার এই নিশ্চয় বােধ ছিল যে এতদ্রূপ সচ্ছলতা প্রকাশ করাতে ভূরি২ নূতন সৈন্য আমার নিকটে আসিবে। পরন্তু তিনি স্বয়ং কিছুমাত্র বিশ্রাম না করিয়া এক দল বাচা সৈন্য লইয়া ক্ষুদ্র আসিয়ার সমুদ্রতীরস্থ স্থল দিয়া গমনপূর্ব্বক আসিয়াস্থ গ্রীকীয়েরদের নিবাস স্থান সকল অধিকার করি লেন তাহাতে পারসীয়েরদের সমুদুপথে যুদ্ধকরণের অপাদানসুদ্ধ তাবদ্বিনষ্ট করিলেন। পরে ক্ষুদ্র আসিয়ার দক্ষিণ তীরে গমন করত টরস পর্ব্বতের অগম্য স্থানপর্য্যন্ত প্রবেশ করিলেন এবং যদ্যপিও তৎসময়ে মৃত্তিকাতে হিমানী জমাট হইয়াছিল তথাপি তিনি তাবৎ ফ্রিজিয়া দেশ জয় করিলেন। এই শীতকালের যুদ্ধে যদ্যপিও কোন অদ্ভুত কীর্ত্তি ছিল না তথাপি বিভ্রাটোপস্থিতিতে যে সাহস ও শক্তি ও স্থিরপ্রতিজ্ঞতার দ্বারা প্রকৃত বীর পুরুষের লক্ষণ বোধ হয় সেই সাহসাদি সেকন্দরশাহ দর্শাইলেন। পর বৎসরের গ্রীষ্মকালারম্ভে তিনি যে সকল সৈন্যেরদিগকে বাটী যাওনার্থ বিদায় করিয়াছিলেন তাহারা আরো নতুন ভূরি২ সৈন্য লইয়া মাকিদোনিয়াহইতে আগমন করিল এবং সেকন্দরশাহ পর্ব্বতীয় স্থান দিয়া গর্ডিয়ম নগরে পঁহুছিলে অবশিষ্ট সৈন্যেরা সার্ডিসহইতে তৎস্থানে আনয়ন করিতে পারমিনিয়োকে আজ্ঞা করিলেন।

 তাবৎ সৈন্য এতদ্রূপে পুনর্ব্বার সংগৃহীত হইলে সেকন্দরশাহ দ্বিতীয় বৎসরে যুদ্ধারম্ভ করিয়া কাপাডােসিয়া ও পাফ্লাগােনিয়া প্রদেশ অধিকার করিলেন। পরে তিনি টরস পর্ব্বতের অনায়ত্ত পথ দিয়া অবরােহণ পূর্ব্বক সমুদ্র তীরস্থ শিলিসিয়া প্রদেশে পঁহুছিলেন সেই স্থানে ঘর্ম্মাক্ত হইয়াই শিডনশ্ নদীতে অবগাহন করাতে তাঁহার প্রায় প্রাণবিয়ােগ হইল। স্বাস্থ্য হইলে তিনি শুনিয়া অত্যন্ত আহ্লাদিত হইলেন যে পশ্চাতে যে সকল সেনাপতিরদিগকে তিনি রাখিয়া আসিয়াছিলেন তাহারা নানাপ্রতিবন্ধক কাটাইয়া ঐ বৎসরের সেপ্তেম্বর মাসে তাবৎ ক্ষুদ্র আসিয়ার প্রদেশ তাঁহার বাধ্য করিয়াছে। এতৎসময়েই পারসীয়েরদের বেতনভােগী এবং তাহারদের সেনাপতির চূড়ামণি মেমননের লােকান্তর হয়। ইতিমধ্যে পারসীয় রাজা ডারায়স এই যুব বিপক্ষকে নিপাতকরণের অভিপ্রায়ে অসংখ্যক সৈন্য সমভিব্যাহারে মরুভূমি দিয়া তাঁহার প্রতি ধাবমান হইলেন। স্বদেশস্থেরদের সঙ্গে যুদ্ধকরণার্থ যে ত্রিংশৎ সহস্র গ্রীকীয়েরদিগকে পারসীয়েরা বৈতনিক করিয়া রাখিয়াছিল তাহারাই পারসীয় সৈন্যের মধ্যে প্রকৃত যােদ্ধা অন্য সকল ছাই। ঐ সকল সৈন্য সিলিসিয়ার মাঠে ছাউনি করিয়া থাকিল। পরে অতি নৈপুণ্যরূপে ডারায়স সেকন্দরশাহের সৈন্যের পশ্চাদ্ভাগে আসিয়া তাঁহার ক্ষুদ্র আসিয়ান্তর্গত নব পরাজিত দেশ ও সেকন্দরশাহের অবস্থিত স্থানের মধ্যে শিবির স্থাপন করিলেন এতদ্‌দৃষ্টে সেকন্দরশাহই পরাজিত হইবেন ইহা সকলেরি নিশ্চয় বােধ হইল। পরে ইশস স্থানে উভয়পক্ষীয় সৈন্যের সাক্ষাৎ হয় তাহা অতি সঙ্কীর্ণ মাঠ তাহার এক দিগে সমুদ্র অন্য দিগে দুরারোহ পর্ব্বত। ডারায়সের সৈন্যের সংখ্যা ১৪৫০০০ সেকন্দরশাহের সৈন্য উক্ত সংখ্যকের তিন অংশের একাংশমাত্র পরে যুদ্ধ হইয়া জয়পরাজয়ের বিষয় অনেক কালপর্য্যন্ত সংশয়াবগাহী থাকল পরিশেষে সেকন্দরশাহের স্বীয় অশ্বারূঢ়েরদিগকে লইয়া স্বয়ং অত্যন্ত আয়াসপূর্ব্বক স্বীয়পক্ষের জয় নিশ্চয় করিলেন। পারসীয়েরদের শ্রেণী ভঙ্গ হইয়া তাহার পলায়ন করে কথিত আছে যে তাহারদের এক লক্ষ দশ হাজার সৈন্য হত হয়। পলায়িত ব্যক্তিরদের মধ্যে পারসীয় রাজাই অগ্রগণ্য তাঁহার মাতা এবং স্ত্রী পরিজনগণ জয়ি ব্যক্তির হস্তগত হইল। যে২ দেশ সেকন্দরশাহের নিকটে প্রভুত্ব স্বীকার বিষয়ে সংশয়াত্মা ছিল এই মহা জয়ের দ্বারা তাহারা তাঁহার পক্ষেই জাতনিশ্চয় হইল। এবং অন্যান্য ব্যক্তিরা অত্যন্ত ভীত হওয়াতে উত্তর কালে সেকন্দরশাহের দেশ জয়করণবিষয়ে সুগম হইল। পরে দামাস্কস নগরে অতিশীঘ্র গমন করিতে পারমিনিয়োর প্রতি হুকুম হয় সেই স্থানে তাবৎ রাজকীয় সম্পত্তি ও তাবৎ দরবারের লােক পারমিনিয়াে হস্তগত করিলেন কিন্তু পলায়িত পারসীয় রাজা তাঁহার হাত ছাড়াইয়া স্বীয় রাজধানীতে পঁহুছিলেন।

 অনন্তর ইশসহইতে সেকন্দরশাহ ভূমধ্যস্থ সমুদ্রের তট দিয়া গমনপূর্ব্বক গ্রীকীয়েরদের বিদ্যার আকর ফেনিসিয়া দেশের মধ্যে প্রবেশ করিলেন। এই তাবদ্দেশ পর্য্যটন করাতে সমুদ্রের রাণী নামে বিখ্যাত টায়র নগরব্যতিরেকে অন্য কোন স্থানেই তাঁহার প্রতি কিছু প্রতিবন্ধক হইল না। এই অত্যন্ত সগর্ব্ব নগর সমুদ্রের তটহইতে কিঞ্চিদন্তরিত এক উপদ্বীপে গ্রথিত ছিল বাণিজ্য বিষয়ে ঐ নগর তৎকালীন পৃথিবীর মধ্যে অগ্রগণ্য নগরস্থেরদের যেমন অসংখ্যক ধন তেমনি বিজাতীয় অহঙ্কার। সেকন্দরশাহ ছদ্ম করিয়া পূজাকরণের নিমিত্ত ঐ নগরের মধ্যে প্রবেশ করিতে অনুমতি প্রার্থনা করিলেন কিন্তু তাহাতে নগরস্থেরা স্বীকৃত না হওয়াতে তিনি নগর বেষ্টন করিতে নিশ্চয় করিলেন। ঐ টায়র নগর বেষ্টন ও আক্রমণের কর্ম্ম যে সেকন্দরশাহের জীবদ্দশার মধ্যে কেবল অগ্রগণ্য কীর্ত্তি এমত নহে কিন্তু তাবৎ পুরাবৃত্তের মধ্যে ইহা অপেক্ষা স্মরণীয় কোন কার্য্য লিখিত নাই। স্বভাবত ঐ নগর অত্যন্ত দুরাক্রমণীয় এবং নৈপুণ্যের দ্বারা আরো দৃঢ়ীভূত হইয়াছিল নগরস্থেরাও পরমতলপূর্ব্বক তাহা বিপক্ষেরদের আক্রমণ হইতে নিবারণ করিল। ইহার পূর্ব্বে যত নগর আক্রমণের বার্ত্তা লিখিত আছে সে সকলের মধ্যে যত বিঘ্ন উপস্থিত হয় তদপেক্ষা অধিক সঙ্কট সেকন্দরশাহের জন্মিয়াছিল কিন্তু ইহাতে কেবল তাঁহার গুণের অসীম মাহাত্ম্য আরো দেদীপ্যমান হইল। পাঁচ মাস বেষ্টনকরণান্তনর তিনি আক্রমণ পূর্ব্বক ঐ নগর হস্তগত করিলেন। তৎপরে ঐ টায়র নগর সমুদ্রোপরি অত্যন্ত সঙ্কুচিত হইয়া পূর্ব্ববৎ অগণ্য হইল। কিন্তু তাৎকালিক ব্যবহারানুসারে পরাজিত এই নগরস্থেরদের প্রতি তিনি যে নির্দয়াচরণ করিলেন তাহাতে ঐ কীর্ত্তির অনেক অংশ ক্ষয় হইল। টায়র নগর এতদ্রূপে বিনষ্ট হওয়াতে পারসীয়েরদের সমুদ্রোপরিস্থ পরাক্রম একেবারে বিলুপ্ত হইল। তাহার কিঞ্চিৎ পরে ডারায়স সেকন্দরশাহের নিকটে এক জন দূত প্রেরণ করিয়া তাঁহার পরিজনেরদের উদ্ধারের নিমিত্ত অসংখ্যক ধন প্রদান করিতে প্রস্তাব করিলেন এবং আরো কহি লেন যে আমার সঙ্গে আপনি যদি এইক্ষণে সন্ধি করেন তবে আমার এক কন্যার সঙ্গে আপনকার বিবাহ দিয়া ফরাৎ নদীর পশ্চিম তীরস্থ আসিয়ান্তর্গত প্রদেশ সকল প্রদান করি কিন্তু সেকন্দরশাহ তাহা স্বীকার না করিয়া উত্তর করিলেন যে আমি তাবৎ আসিয়া ও তন্মধ্যস্থ তাবন্ধন নিজের ন্যায় জ্ঞান করি অতএব তাবতের পরিবর্ত্তে অর্দ্ধেক কি নিমিত্ত লইব।

 টায়র নগর অধিকারকরণানন্তর সেকন্দরশাহ পালস্তিন দেশে যুদ্ধযাত্রা করিয়া ঐ দেশ অনায়াসে আয়ত্ত করিলেন। অপর গাজাহইতে পিলুসিয়মে সপ্তাহের মধ্যে গমন করিয়া মিসর দেশে প্রবেশ করিলেন। মিসরদেশীয়েরা যদ্যপি দুই শত বৎসরাবধি পারসীয়েরদের অধীন তথাপি ঐ যােয়ালির ভার বহন করিতে তাহারা অত্যন্ত অসমত অতএব তাহারা স্বচ্ছন্দে জয়ি ব্যক্তির প্রতি আপনারদের নগরদ্বার মুক্ত করিল। সেকন্দরশাহ স্বীয় জয়ের ব্যাপারে নিত্য লােকোপকারহ ইতে পারে এমত কার্য্যে সতত চেষ্টিত ছিলেন অতএব সমুদ্রমধ্যে নীল নদীর সঙ্গম স্থান বাণিজ্য কর্ম্মের অত্যুপযুক্ত বিবেচনায় ঐ স্থানে এক নগর গ্রন্থন করিতে নিশ্চয় করিয়া ডেমারাটসনামক ব্যক্তিকে এফিসসের বৃহন্মন্দির পুর্নগ্রন্থন করিতে দেখিয়া সেকন্দরশাহ স্বীয় নগরগ্রন্থন কার্য্যে তাঁহাকে নিযুক্ত করিয়া অনেক ধন দিলেন পরে ভূমধ্যস্থ সমুদ্রতটে অতি শীঘ্র এক মহানগর উত্থিত হইল এবং যে বাণিজ্য ব্যাপার টায়র নগরহইতে ছাড়া পড়িল সেই বাণিজ্য কর্ম্মসকল ঐ নগরে আকৃষ্ট হইল এবং অনেক শত বৎসরপর্য্যন্ত সেকন্দরশাহের কীর্ত্তির অতিস্মরণীয় চিহ্নরূপ ঐ নগর বিরাজ মান থাকে। যদ্যপি তাহা এইক্ষণে ক্ষয় পাইয়াছে তথাপি বাণিজ্য দ্রব্যের আমদানী রফ্‌তানীর নিমিত্ত সুএম মহানা যদি কখন মুক্ত হয় তবে ঐ নগর পূর্ব্ববৎ ঐশ্বর্য্যশালি হইবে। মিসর দেশে অবস্থানকরণ সময়ে সেকন্দরশাহ মরুভূমি উত্তীর্ণ হইয়া পূর্ব্বদিগবস্থিত জুপিটর জুপিটর আমন দেবালয়ে গমন করিয়া দর্শন করিলেন চতুর্দিগে অনাদি উষর বালুকাতে বেষ্টিত তৃণময় অত্যুর্ব্বর এক স্থানে ঐ মন্দির স্থাপিত। পরে নৈল নদীর জল ঝরণাপর্য্যন্ত তিনি গমনোদ্যেত ছিলেন কিন্তু ডারায়স অন্য এক যুদ্ধের পরীক্ষাকরণার্থ স্বকীয় রাজ্যের অতিদূর সীমাহইতে পূর্ব্বদেশীয় তাবৎ সৈন্য সংগ্রহ করিতেছিলেন অতএব সেকন্দর নূতন২ বিষয় সৌন্দর্য্য দর্শনের অভিলাষ অপেক্ষা কর্ত্তব্য কার্য্য শ্রেয়ঃকল্প জ্ঞান করিয়া টায়র নগরে প্রত্যাগত হইলেন।

 পরে টায়র নগরে মেলা ভোজনাদি ও বলিদান করিয়া তথাহইতে স্বীয় তাবৎ সৈন্যসমভিব্যহারে বাবেলন নগরের প্রতি যাত্রা করিলেন। ভূমধ্যস্থ সমুদ্রের তট হইতে ফ্রাৎ নদীপর্যন্ত পঁহুছিয়া ঐ নদীতে সাঁকো নির্ম্মাণ করাইয়া সসৈন্য অবাধে মিসােপটেমিয়া অর্থাৎ ফ্রাৎ ও টিগ্রিস নদীর অন্তর্ব্বেদে পঁহুছিলেন। মিসােপটেমি য়া দিয়া গমন করিতে তাঁহার পাঁচ মাস গত হইল। সেকন্দরশাহ নিয়তই অতিবেগগামী অতএব তাঁহার এই যাত্রাতে যে এমত বিলম্ব হয় ইহা প্রায় অবিশ্বসনীয় কিন্তু তাঁহার ঐ যাত্রার রোজনামা বহী লুপ্ত হইয়াছে। এবং বিলম্বের কারণ এইক্ষণে কোন প্রকারে নিশ্চয়হওনের সম্ভাবনা নাই। ইতিমধ্যে ডারায়স স্বীয় অগণ্য সৈন্য লইয়া টিগ্রিস নদীর বামপার্শ্বে আড়বেলা স্থানে পঁহুছিলেন এবং সেই স্থানে তাবৎ লওয়াজিমা ন্যস্ত রাখিয়া বিংশতি ক্রোশ অগ্রসর হইয়া একটা মহামাঠের মধ্যে ছাউনি করিলেন। ঐ মাঠের পশ্চিম দিগে টিগ্রিস নদী পূর্ব্ব দিগে লৈকস নদী উত্তর দিগে পর্ব্বত সেই স্থানেই আসিয়ার মহারাজ্যের নিমিত্ত প্রাণপণে যুদ্ধ করিতে নিশ্চয় করিলেন। এইরূপে সেকন্দরসাহ নির্ব্বিঘ্নে টিগ্রিস নদী উত্তীর্ণ হইয়া পাঁচ দিবস গমনকরণানন্তর একেবারে বিপক্ষেরদের সম্মুখে পঁহুছিয়া যত দূরপর্য্যন্ত চক্ষুর্গোচর হইল তত দূর বিলক্ষণ নিরীক্ষণ করিয়া দেখিলেন যে, তাহারা মাট আচ্ছাদন করিয়া আছে। ইতিহাসবেত্তা এক জন তাহারদের সংখ্যা দশ লক্ষ গণনা করেন কিন্তু আসিয়াদেশস্থ সৈন্যের মােটে যে সংখ্যা ধরা যায় তাহার অর্দ্ধেক বাদ দিলে হানি নাই অথাৎ তৎসংখ্যাই স্থির হইতে পারে। সেকন্দরসাহের সৈন্য ৪৭,০০০ মাত্র। পারসীয় সৈন্যের মধ্যে নানাদেশীয় যোদ্ধা ছিল এবং অসিয়ার তাবৎ বীর পুরুষও ছিল কিন্তু তাহার মধ্যে তাহারদের যুদ্ধোদ্যোগ যে একই নিয়মানুসারে হয় ইহা নির্দ্ধারিতকরণার্থ কোন সুবিজ্ঞ সেনাপতি ছিল না। সেকন্দরশাহ যুদ্ধারম্ভ করিয়া বিপক্ষেরদের মধ্যম শ্রেণীতে অথাৎ যে স্থানে রাজপতাকা বিরাজমান ছিল তাহার উপরেই আক্রমণ করেন। অপর অত্যাশ্চর্য্য বীরত্ব প্রকাশ করিয়া তিনি তাহারদিগকে পরাজিত করিয়া পারসীয় বাদশাহকে প্রায় ধৃত করিয়াছিলেন ইতিমধ্যে তাঁহার সৈন্যের বামদিকস্থ দলের অধ্যক্ষ পারমিনিয়ো শত্রুকর্ত্তৃক পরাজিত প্রায় হই য়া সাহায্য প্রার্থনা করিলেন। সেকন্দরশাহ স্বীয় জয়শীল অশ্বারূঢ়েরদের সমভিব্যহারে তাঁহার উপকারার্থ ধাবমানে তথায় পঁহুছিয়া জয়ী হইলেন কিন্তু এই উদ্যোগাবসরে পারসীয় রাজা পলায়নের সময় প্রাপ্ত হইলেন। আসিয়াদেশস্থ সৈন্যেরদের মধ্যে রাজা পলায়ন করিলে বা হত হইলে সৈন্যেরা পরাভূত হয় এবং রাজধানী পরহস্তগত ও তাবদ্রাজ্য পরাধিকৃত হওয়া একই কথা অতএব এই স্থলে তাহাই ঘটিল ডারায়স অদৃশ্য হওয়াতে তাঁহার ঐ অগণ্য সৈন্য একেবারে ভগ্নশ্রেণী হইয়া কে কোথায় পলায়ন করত আশ্রয় চেষ্টা করিল। কথিত আছে যে এই যুদ্ধে পারসীয়েরদের তিন লক্ষ লােক হত এবং তত্তুল্যসংখ্যকও বিপক্ষের হস্তগত হয়। যুদ্ধানন্তর সেকন্দরশাহ অগৌণেই ডারায়সের পশ্চাৎ২ ধাবমান হইলেন কিন্তু পারমিনিয়াের সাহায্যকরণ সময়ে ডারায়স এক মঞ্জিলপর্য্যন্ত অগ্রসর হইলেন। রণস্থলহইতে যদ্যপি আড়বেলা স্থান বিংশতি ক্রোশ অন্তরিত তথাপি সামান্যত এই যুদ্ধ আড়বেলার যুদ্ধ নামে বিখ্যাত। তদ্দ্বারা আসিয়ার দফা একেবারে রফা হইল।

 রণস্থলহইতে সেকন্দরশাহ বাবেলন নগরের প্রতি যাত্রা করিলেন ঐ নগর জলপ্লাবনের পর প্রথম রাজধানীস্বরূপ স্থাপিত হয় এবং বহুকালাবধি তাবৎ আসিয়ার মধ্যে কর্ত্তৃত্বকারিও ছিল কিন্তু তৎসময়ে জীর্ণাবস্থা প্রাপ্ত। তন্নগরে পঁহুছিয়া অবশিষ্ট প্রাচীন অট্টালিকা প্রভৃতি দর্শন করত তন্মধ্যে পৃথিবীর সর্ব্বাপেক্ষা প্রাচীন বিলসের মন্দির নষ্টোদ্ধার করিতে আজ্ঞা দিলেন। অনন্তর বাবেলনহইতে সেকন্দরসাহ সুশা নগরে যাত্রা করিলেন ঐ নগর পরিসীয় রাজারদের অতিমনোরম স্থান এবং আসিয়ার রাজস্বের ব্যয়াবসানে যাহা বাঁচিত তাহা সেই স্থানে ন্যস্ত হইত। ঐ সকল ধন জয়ি ব্যক্তির হস্তগত হইলে দেশ আক্রমণের উদ্যোগের সাহায্যার্থ তাহা বিতরণ করিলেন। অপর সুশীনগরহইতে পার স্যপােলিতে প্রস্থান করিলেন ঐ নগর সুশােভিতকরণার্থ পারসীয় মহারাজেরা পূর্ব্বদেশীয় তাবদ্ধন ব্যয় করিয়াছিলেন। সেই নগরে মহারাজাধিরাজাভিমানি পরিসীয় রাজারদের সিংহাসনে তিনি কিঞ্চিৎকাল উপবেশনপূর্ব্বক নগরস্থ নানা আশ্চর্য্য অট্টালিকাদি দর্শন করিয়া তাহা লুঠ ও দগ্ধ করিতে হুকুম দিয়া কহিলেন যে ইহার দুই শত বৎসর পূর্ব্বে পারসীয়েরা আথেন স নগর দগ্ধ করিয়াছিল তাহার প্রতিফল এইক্ষণে আমি দিলাম। এতদ্রূপ কর্ম্মকরা জয়ি ব্যক্তিমাত্রেরই অনুচিত বিশেষতঃ সেকন্দরশাহের পক্ষে তাহা অমার্জনীয় মহাপরাধ। পারস্যপােলি নগরে পঁহুছিলে তাঁহার চতুর্থ বৎসরীয় যুদ্ধ সমাপ্ত হইল। পরে ডারায়সের পশ্চাৎ পুনর্দ্ধাবমান হইলেন। ডারায়স ভাবিয়াছিলেন যে অবশ্য কোন সুঘটনার দ্বারা আমি এই শত্রুহইতে নিস্তার পাইব এই ভরসাতেই আড়বেলার যুদ্ধের পর এই চারি মাস তিনি একবাটানা স্থানে নিরুদ্যোগে অমনি বসিয়া থাকিলেন।

 অপর সেকন্দরশাহের আগমনেতে ডারায়স নয় হাজার সৈন্য ও অনেক ধন সঙ্গে করিয়া উত্তর দিগে পলায়নপর হইলেন। পরে সেকন্দরশাহ পারসের সম্রাজ্যের রাজধানী ইদানীং ইস্পাহান বলিয়া প্রসিদ্ধ তদানীং একবাটানা নামে খ্যাত অতিসুশোভিত স্থানে পঁহুছিয়া স্বীয় এক ভাগ অশ্বারূঢ়েরদিগকে বহুধন পুরস্কার দিয়া স্বস্বালয়ে প্রেরণ করিলেন কিন্তু তাহারদের মধ্যে অনেকেই সৈন্যের মধ্যে থাকিল। অনন্তর পারসীয় রাজার পশ্চাৎ অতিবেগে গমন করত সেকন্দরশাহ কাস্পিয়ান সমুদ্রের সমুখবর্ত্তি পর্ব্বতীয় পথিমধ্যস্থিত ভাজিল স্থানে পঁহুছিলেন। সেই স্থানে সৈন্যেরদিগকে বিশ্রামার্থ পাঁচ দিবসপর্য্যন্ত অবস্থিতি করিয়া পুনর্ব্বার যাত্রা করিলেন এবং আর দই দিবস গমন করিয়া শুনি লেন যে বেশস ও সত্যবার্জানিস এবং ডারায়সের অন্যান্য কতিপয় প্রধান অমাত্যেরা তাঁহাকে ধৃত ও বন্ধ করিয়া সঙ্গে লইয়া যাইতেছে। অতএব তিলার্দ্ধমাত্র বিলম্ব না করিয়া সেকন্দরসাহ আপনার অশ্বারূঢ়েরদের মধ্যে বাচনিপূর্ব্বক উত্তম এক দল সৈন্য লইয়া নিরন্তর ঐ অম৷ত্যগণের পশ্চাৎ ধাবমান হইলেন এবং আপনাকে ও সৈন্যেরদিগকে কি দিবসে অলস্য ত্যাগ কি রাত্রিতে নিদ্রা কিছুমাত্র করিতে দিলেন না। পরিশেষে গমন করত দেখিলেন যে তাঁহার সম্মুখ দিয়াই ঐ অমাত্যেরদের সৈন্যের ভগ্ন শ্রেণীরূপে মন্দ২ গমন করিতেছে ও দেখিয়া আহ্লাদিত হইলেন। সেকন্দরশাহ তাহারদের প্রায় লাগাইল পাইলেন বিশ্বাসঘাতকেরা ইহা দেখিয়া ডারায়সকে কতক আঘাতী করিয়া মুষমশায় রাস্তার ধারে ফেলিয়া পলায়ন করিল। অপর সেকন্দরশাহের এই অত্যন্ত খেদের বিষয় হইল যে তিনি সেই স্থানে না পঁহুছিতে২ ডারায়সের লােকান্তর গমন হয়। কিন্তু ঐ যুব জয়শীল ডারায়সের সমাধি মহারাজ চক্রবর্ত্তির তুল্য সম্ভ্রমানুসারে সম্পন্ন করিতে আজ্ঞা দিলেন। এতদ্রূপে কোরসের রাজবংশের নিপাত এবং পারসীয় মহারাজ্যের বিনাশ হয়। ঐ রাজ্য পূর্ব্বদেশীয় অন্যান্য রাজ্যের ন্যায় এক ব্যক্তি অর্থাৎ কোরসের গুণেতে সংস্থাপিত হইয়া তাঁহার অধস্তন পুরুষানুক্রমিক রাজারদের হস্ত পতনে ক্রমে২ ক্ষয় পাইয়া গেল।

সেকশাহি ডারায়সের তাড়নাকরণার্থ এতদ্দেশে পঁহুছিয়া প্রত্যাগমনের পূর্ব্বে কাস্পিয়ান সমুদ্র ও পর্ব্বতের মধ্যবর্ত্তি হরকেনিয়া দেশ জয় করিতে নিশ্চয় করিলেন। ঐ প্রদেশ পরিসীয়েরদের অতিপ্রাচীন বীরপুরুষ মহা রষ্টমের কীর্ত্তির স্থান। এই যুদ্ধযাত্রাতে সেকন্দর শাহ যে জয়ী হইলেন তাহা প্রায় লিখনাবশ্যক নাই স্বতই বােধ হয়। পরে প্রত্যাগমন করত যে গ্রীকীয়েরা পারসীয়েরদের বেতনভোগী ছিলেন তাঁহারা এবং ডারায়সের প্রধান ওমরা আমলারা তাঁহার সঙ্গে সাক্ষাৎ করিয়া তাঁহাকে তাবৎ আসিয়ার অধিপতি বলিয়া সেলাম করিলেন। অনন্তর সেকন্দরশাহ পার্থিয়ার পূর্ব্ব দিগ দিয়া গমন করত ইদানীন্তন খােরাসান নামে বিখ্যাত সুশা স্থানে পঁহুছিলে ডারায়সের হন্তা সত্য বার্জানিস তাঁহার যথোচিত বাধ্যতা স্বীকার করিয়া স্বীয় সুবার অধ্যক্ষ কর্ম্মে পুনর্নিযুক্ত হইলেন। ইতিমধ্যে বেশস রাজমুকুট ধারণ করিয়া ডরায়সের পরিবর্ত্তে আপনাকে সর্ব্বত্র রাজত্বরূপে বিখ্যাত করিলেন অতএব তাঁহাকে দমন করা মুখ্যকার্য্যবােধে সেকন্দরশাহ অগৌণে বাক্‌রিয়া দেশে তাঁহার পশ্চাৎ২ গমন করিলেন। সত্যবার্জানিস এই উদ্যোগে সেকন্দরসাহ কে ব্যস্ত দেখিয়া পুনর্ব্বার বিশ্বাসঘাতক হইয়া যে২ মাকিদোনিয়েরা তাঁহার নিকটে ছিল তাহারদিগকে হত করিয়া রাজবিদ্রোহের পতাকা উডডীয়মান করিলেন। তাহাতে সেকন্দরশাহ পশ্চাদ্ভাগে অবাধ্য প্রদেশ মাত্র না থাকে এতদর্থ বিমুখ হইয়া অতিশীঘ্ররূপে দক্ষিণ দিগে গমন করত অকস্মাৎ ঐ রাজবিদ্রোহকের উপরে পতিত হইয়া ঐ অবাধ্য প্রদেশে পুনর্ব্বার স্বীয় প্রভুত্ব স্থাপন করিলেন।

 ইতিমধ্যে ঐ পারসীয় সুবাদারের অবাধ্যতা অপেক্ষা শঙ্কাজনক এক ষড়যন্ত্র তাঁহার নিজ ছাউনির মধ্যেই প্রকাশ পাইল। ঐ কুমন্ত্রণার মূল তাঁহার অতিপ্রিয় দুই সেনাপতি বিশেষতঃ তাঁহার সকল উদ্যোগের সম্ভোগি পারমিনিয়ো ও পারমিনিয়োর পুত্ত্র ফিলোটাস। তাহাতে অন্যান্য সেনাপতি লইয়া তদ্বিষয়ের বিচার হওয়াতে উক্ত ব্যক্তিদ্বয়ের দোষ বিলক্ষণ সপ্রমাণ হইলে তাহারদের প্রাণ দণ্ড হইল। পরে সেকন্দরশাহ পূর্ব্ব দিগে গমন করত অতিপ্রবল শীত সময়ে কান্দহার দেশ পর্য্যন্ত পর্য্যটন করিলেন এবং পরোপামিসস পর্ব্বতের তলে পঁহুছিয়া পঞ্চমবর্ষীয় যুদ্ধ সমাপনানন্তর অতিক্লান্ত স্বীয় সৈন্যেরদিগকে বিশ্রামার্থ দুই মাস অবকাশ দিলেন।

 তৎপর বৎসরের আরম্ভই তিনি ষষ্ঠ বৎসরীয় যুদ্ধ আরম্ভানন্তর সসৈন্য পর্ব্বত উত্তীর্ণ হইয়া বাক্‌ত্রিয়া দেশে প্রবেশ করিলেন। তাঁহার অতিপ্রত্যয়ার্হ ইতিহাসবেত্তা লেখেন যে অতিশয় স্থূল বরফ এবং সর্ব্বপ্রকার দ্রব্যের অভাবপ্রযুক্ত তিনি অতিক্লেশে গমন করিলেন তথাপি গমনা কর ছাড়িলেন না। অপর ইদানীন্তন বালক নামে খ্যাত অথচ তৎকালে বাক্‌ত্রিয়া নামে প্রসিদ্ধ দেশে পঁহুছিল বেশস জিহূন নদী পার হইলেন এবং সেকন্দরশাহ জিহূন ও সিহূনের মধ্যবর্ত্তি যে দেশ রৌমাণকর্ত্তৃক ত্রানশকশিয়ানা ইদানীং মাবরুলনের নামে বিখ্যাত অতিমনোরম দেশে পঁহুছিলেন এতদ্দেশীয় প্রধান প্রদেশ সগডিয়ানা অর্থাৎ উপত্যকা ভুমি। পরে জিহূন নদীর তীরে পঁহুছিলে তাঁহার অতিপ্রাচীন অশ্বারূঢ়ের এক দল শীত ও অনাহার ও পরিশ্রমেতে আপনারদিগকে অতি ক্লান্ত বলিয়া বিদায় প্রার্থনা করাতে তাঁহারদিগকে সেকন্দরশাহ অনেক পুরস্কারপূর্ব্বক অন্যান্য তাবৎ অসুস্থ সৈন্যেরদিগকে সঙ্গে দিয়া স্ব২ বাটীতে প্রেরণ করিলেন। জিহূন নদী অতিআয়ত অথচ অতিবেগপ্রবাহ এবং তাহার তীর এমত বালুকাময় যে তাহাতে কোন সাঁকোর পত্তন হইতে পারিত না। অতএব অত্যন্ত আয়াসপূর্ব্বক সেকন্দরশাহ ও তাঁহার সৈন্যেরা এক প্রকার মশক অবলম্বন করিয়া নদী উত্তীর্ণ হইলেন। পরে পঁহুছিলে বেশসের কুসঙ্গি লােকেরা তাঁহাকে সেকন্দর শাহের হস্তে সমর্পণ করিল এবং তিনি তাহাকে অত্যন্ত অপমানপূর্ব্বক কোড়া মারিয়া চরম দণ্ডের প্রতীক্ষার্থ বাক্‌ত্রিয়া দেশে প্রেরণ করিলেন। তদন্তর সেকন্দরশাহ উত্তর দিগে গমন করত সিহূন নদীর তীরে পঁহুছিলে তাঁহার পশ্চাদ্দিগে সগডিয়ানা প্রদেশে রাজবিদ্রোহ ব্যাপার উপস্থিত তাহাতে অতিশীঘ্র তথাহইতে প্রত্যাগমন করিতে হইল এবং ঐ নদীর উত্তরদিগস্থ তাতারেরা ঐ অবাধ্য ব্যক্তিরদের সাহায্য করিতে স্বীকৃত হইয়াছিল অতএব এই মহাশঙ্কার সময়েই সেকন্দরশাহের শৌর্য্য একেবারে জাজ্বল্যমান হইল। রাজবিদ্রোহকেরা পূর্ব্বদেশীয় রীত্যনুসারে অভেদ্য মৃণময় প্রাচীরবেষ্টিত সাত নগরের মধ্যে আশ্রয় লইয়াছিল। পাঁচ দিবসের মধ্যে সেকন্দরশাহ ঐ কিল্লা অধিকার করিলেন। পরে কোরপলি নগরের প্রতিকূলে যাত্রা করেন ঐ নগর ক্রাটেরস্ নামক তাঁহার সেনাপতি ইহার কিঞ্চিৎ পূর্ব্বেই বেষ্টন করিয়াছিল। ঐ স্থানে সেকন্দর এক ক্ষুদ্র নদীপথ দিয়া প্রবেশ করিলেন ঐ নদী নগরের প্রাচীরের তল ভেদ করিয়াই বহিত অতএব গ্রীষ্ম সময়ে তাহা শুকাইত তাহাতে নগর ও কিল্লা উভয়ই অধিকৃত হইল। এতদ্রূপ মহোদ্যোগকরণের যে অত্যাবশ্যক তাহা অতিশীঘ্র দৃষ্ট হইল যেহেতুক ঐ রাজবিদ্রোহকেরদের সাহায্যার্থ আগমনশীল তাতারীয় অশ্বারূঢ়েতে সিহূন নদীর উত্তর তট একেবারে আচ্ছন্ন দৃষ্ট হইল অতএব তাহারদের প্রতিকূলে সেকন্দরশাহ অবিলম্বেই যাত্রা করিলেন। ঐ বন্য তাতারীয় লোক চিরকালই তাহারদের দক্ষিণ দিগস্থ ইউরোপ ও আসিয়াদেশীয় লােকেরদের ব্যামােহদায়ক। তাহারদের দ্বারাই এই স্থানে পূর্ব্বদেশজয়ী মহাকোরস পরাভূত ও হত হইলেন অতএব ঐ অশুভ স্থানের নিকটে সেকন্দরশাহ পঁহুছিলে তাঁহার সৈন্যেরদের ঐ স্থান হানা জ্ঞান করিয়া ভয় জন্মিল এবং সেকন্দর শাহ ঐ অকল্যাণী নদী উত্তীর্ণ হইতে যে ভীত হন এতদর্থ তাঁহার সৈন্যেরা দৈবজ্ঞেরদিগকে নানা অশুভ লক্ষণ দর্শাইতে পরামর্শ দিল। কিন্তু যিনি হেলেস্পাণ্ট ও ফ্রাৎ ও টিগ্রিস নদী অনায়াসে উত্তীর্ণ হইয়াছিলেন তিনি এতদৃিশ প্রতারণাতে ভীতহওনের ব্যক্তি ছিলেন না। অতএব কাষ্ঠ মাড় মশকইত্যাদি যে সকল প্রাপ্য তাহা সংগ্রহ করিয়াই কহিলেন যে এইক্ষণে আমি কেবল শুভ লক্ষণ দর্শনার্থ প্রতীক্ষিত থাকিলাম। পরিশেষে দৈবজ্ঞেরা দেখিলাম যে এই ব্যক্তিকে ক্লান্ত করিতে পারিব না কিন্তু আপনারাই শ্রান্ত হইলাম। তাহাতে সেকন্দরসাহ নদী কূলে কল বসাইয়া বিপক্ষেরদের প্রতি প্রস্তরদি নিক্ষেপ করিতে লাগিলেন এবং যে অসভ্যেরা পারে ছিল তাহারা এই অপরিচিত দর্শনে ভীত হইয়া অতিশীঘ্র হঠিয়া যাইতে লাগিল তাহা দেখিয়া সেকন্দরশাহ তৎক্ষণাৎ তূরী বাজাইতে হুকুম দিলেন এবং মাড় খুলিয়া দিয়া স্বয়ংই সৈন্যেরদিগকে পার করিয়া কূলে নামিবামাত্র অমনি শ্রেণীবদ্ধ করাইলেন এবং তাতারীয়েরদের প্রতিকূলে যাত্রা করিলে অতিলঘু যুদ্ধানন্তরই তাহারা পরাজিত হইয়া পলায়ন করিল। কিন্তু অতিবেগে ধাবমান হইতে সেকন্দরশাহ অত্যন্ত গ্রীষ্মান্বিত হইয়া অতিশীতল জল পান করাতে হঠাৎ ঘর্ম্মবন্ধ হইয়া মুমূর্ষু প্রায়ে তাম্বুতে নীত হইলেন। কিঞ্চিৎকাল পরেই স্বাস্থ্য পাইলেন এবং বিপ ক্ষেরা তাঁহার নিকটে দূত প্রেরণ করিয়া সম্প্রতিকার যুদ্ধ বিষয়ক অপরাধ স্বীকারপূর্ব্বক শান্তির প্রার্থনা করিলেন এবং সেকন্দরশাহ অত্যাহ্লাদপূর্ব্বকই তাহা স্বীকার করিলেন। ঐ বন্য দুর্দান্ত তাতারেরদিগকে সেকন্দরশাহের এতদ্রূপ জয়করণের সম্বাদ শুনিয়া নিকটবর্ত্তি যে২ দেশীয়েরা বাধ্যতার বিষয়ে দোলায়মানচিত্ত ছিল তাহারা একেবারে সেকন্দরশাহের পক্ষে বদ্ধ হইল।

 কিন্তু সেকন্দরশাহের এই মহাকীর্ত্তি সময়েই মাকিদোনীয়েরদের বহুকালব্যাপক জয়শীল কার্য্যের মধ্যে যে একমাত্র অপমান ঘটিল সে এই সময়েই বিশেষতঃ পারসীয়েরদের মধ্যে সর্ব্বাপেক্ষা নিপুণ সেনাপতি সিপটামিনিস সগডিয়ানা দেশে রাজবিদ্রোহ ব্যাপার করিয়াছিলেন তাঁহাকে দমনার্থ সেকন্দরশাহ এক দল সৈন্য প্রেরণ করেন। কিন্তু ঐ সৈন্যেরা যদ্যপি নিয়ত জয়ী ছিল তথাপি এতৎসময়ে তাহারদের মহসেনাপতি সঙ্গে না থা কাতে তাহারা ঐ কপটি পারসীয় ব্যক্তিকর্ত্তৃক পরাভূত ও উচ্ছিন্ন প্রায় হইল। সেকন্দরশাহ এতদবার্ত্তা শ্রবণ করিয়া এক ক্ষুদ্র দল সৈন্যসমভিব্যাহারে স্বীয় ব্যবহারানুসারে অতিবেগে ধাবমান হইয়া চারি দিবসের মধ্যেই ঐ অবাধ্যের স্থান অর্থাৎ সমরখণ্ডে পঁহুছেন। তাহাতে সিপটামিনিস বনমধ্যে পলায়ন করিল এবং জয়শীল সেকন্দর তাহাকে যত দূরপর্য্যন্ত তাড়িয়া দেওয়া উপযুক্ত বােধ করিলেন তত দূরেই অপসারিত করিলেন এবং চতুর্দিকস্থ গ্রাম্য লোকেরদের শৈথিল্য বা শত্রুতাচরণবিষয়ে বিলক্ষণ প্রতিফল দিলেন।

 এই ষষ্ঠবর্ষীয় যুদ্ধ সমাপ্ত হইলে সৈন্যেরা শীতকালে বিশ্রাম করত সেকন্দরশাহের জীবিত কালের মধ্যে সর্ব্বাপেক্ষা খেদজনক ব্যাপার ঘটিল। সমস্ত আসিয়ার অধিপতি হইয়া এবং তন্মধ্যে এক নূতন রাজ্য স্থাপন করিতে নিশ্চয় করিয়া সেকন্দরশাহ আসিয়াদেশীয় বেশ ধারণ করিলেন ও তদ্দেশীয় বন্দনাদিরূপ আচার ব্যবহার করিতে লাগিলেন কিন্তু যে দুর্দান্ত সভ্যতাহীন মাকিদোনীয় সৈন্যগণ তাঁহার নানা পরিশ্রমের সম্ভোগী ছিল তাহারা ঐ আচার ব্যবহারাদির পরিবর্ত্তনে অত্যন্ত বিরক্ত হইল এবং কখন২ প্রায় অপমানজনকরূপে আপনারদের অসন্তোষ জ্ঞাপন করিয়া ঠাট্টা করিত। সেকন্দরশাহ যদ্যপি স্বভাবতঃ পরিমিতপায়ী তথাপি কখন২ মত্ততাপ্রযুক্ত অবসন্ন হইতেন। এক সময়ে একটা মহা ভােজে তিনি কিছু অতিরিক্ত পানকরাতে পরপর এলাে মেলাে কথোপকথন হইতে লাগিল তাহাতে ক্লাইটসনামক তাঁহার ধাত্রীর যে ভ্রাতা গ্রানিকস স্থানীয় যুদ্ধে তাঁহার প্রাণ রক্ষা করিয়াছিলেন সেও মত্ত হইয়া অত্যুগ্র ভাষা তাঁহার প্রতি কহিতে লাগিল এবং অধিক বৈষম্যরূপে ঐ কথা পুনঃ২ কথনেতে সেকন্দরশাহ সহিষ্ণুতা করিতে না পারি বর্সা অস্ত্রের দ্বারা তাহাকে একেবারে হত করিলেন। পরে সেকন্দরশাহ তাঁহার সর্ব্বাপেক্ষা প্রিয় এই মিত্রের স্বহস্তেই রক্তপাত দেখিয়া আপনার অপরাধ অতিগুরু বােধ করিয়া তিন দিবসপর্য্যন্ত অতিদুঃখার্ণবে মগ্নতাপ্রযুক্ত কি সরকারী কি নিজ তাবৎ কার্য্য বিরতিতে একেবারে অচৈতন্য প্রায় থাকিলেন। অপর তাঁহার সেনাপতিরা তাঁহাকে এই দুঃখাবস্থাহইতে চেতিত করিয়া সরকারী কার্য্য করিতে পুনর্ব্বার লওয়াইলেন।

 সপ্তমবৎসরীয় যুদ্ধে কেবল বাক্‌ত্রিয়া ও সগডিয়ানীর অবাধ্য লোকেরদিগকে দমন করা হইল। সে যুদ্ধের পরিশ্রম অত্যন্ত কঠিন কিন্তু ফল অতিলঘু ও সম্ভ্রমহীন ফলতঃ তাবৎ যুদ্ধের মধ্যে এই সপ্তমবৎসরীয় যুদ্ধ সর্ব্বাপেক্ষা বিমর্ষজনক ও কীর্ত্তিহীন। অতএব এই যুদ্ধপ্রসঙ্গ ত্যাগ করিয়া অষ্টমবৎসরীয় যুদ্ধ প্রস্তাবে প্রবর্ত্ত হইলাম। এক দুর্লঙ্ঘ্য দুর্গ অধিকার করাতে ঐ কিল্লাদারের রক্‌সানা নামে কন্যা তাঁহার হস্তগতা হইলেন পরম সৌন্দর্য্য দর্শনে সেকন্দর তাঁহাকে বিবাহ করিলেন। ইহাতে তদ্দেশীয় লোকেরা এমত সন্তুষ্ট হইল যে তাহারা আর কখন সেকন্দরশাহের প্রতিকুল হইল না। পরে সেকন্দর ভারতবর্ষ জয় করিতে নিশ্চয় করিলেন কিন্তু এই মহাকার্য্যে প্রবর্ত্ত হওনের পূর্ব্বেই পারসীয় রাজ্যের মহা উদ্যানে স্বচ্ছন্দে মৃগয়া করিলেন এবং স্বীয় সাহস দর্শাইয়া স্বহস্তে এক সিংহকে হত করিলেন। তৎসময়েই তাঁহার এক জন বালক ভৃত্য মৃগয়ার নিয়মের উল্লঙ্ঘনপূর্ব্বক ঐ সিংহ ও সেকন্দরশাহের মধ্য স্থানে গমন করতে কোড়ার দ্বারা তাহার দণ্ড করিলেন। ঐ বালক এই অপমানে অতি রাগান্ধতাতে অন্যান্য ব্যক্তিকে সহযোগ করিয়া সেকন্দরশাহের প্রাণ নষ্ট করিতে ষড়যন্ত্র করিতে লাগিল। ঐ ষড়যন্ত্র প্রকাশ হওয়াতে তাহারদিগকে প্রাণ দণ্ড করিতে হুকুম হয় কিন্তু প্রাণ দণ্ড হওনের পূর্ব্বেই তাহারা কহিল যে কালিস্থিনিস আমারদের এই পরামর্শের মধ্যে ছিলেন ঐ ব্যক্তি অসভ্য এক জন অব্যবস্থিত পণ্ডিত তিনি গ্রীক দেশহইতে সেকন্দরশাহের সমভিব্যাহারে আসিয়া রাবম্বার অনেক অসভ্য উক্তির দ্বারা অনেককে বিরক্ত করিয়াছিলেন এইক্ষণে গ্রেপ্তার হইয়া মরিলেন। সেকন্দর শাহের তৈনাতি সৈন্যাধ্যক্ষ আপন ইতিহাসের মধ্যে লিখেন যে তিনি কারাগারেই পঞ্চত্ব পান সেকন্দরশাহের বিপক্ষেরা কহে যে ঐ পণ্ডিতকে যন্ত্রণা দিয়া ফাঁসি দেওয়া গিয়াছিল এই কল্পিত অন্যতর মৃত্যুব্যাপীরের কোন্ কল্প সত্য তাহা পাঠকবর্গ বিবেচনা করিবেন।

 অপর গ্রীষ্মকাল আরম্ভ হইলে সেকন্দরশাহ তাঁহার শেষ ও সর্ব্বাপেক্ষা কীর্ত্তিজনক ব্যাপার অর্থাৎ ভারতবর্ষ জয় করিতে যাত্রা করত অতিশীঘ্র কাবলে পঁহুছিলেন। বোধ হয় তিনি যে নানা নগর পত্তন করিয়াছিলেন তন্মধ্যে কাবলও এক নগর হইতে পারে। সেই স্থানে পঁহুছিয়া ভাতরবর্ষীয় তাবৎ রাজগণকে তাঁহার প্রভূত্ব স্বীকারকরণার্থ আদেশ করিলেন। তাহাতে টাক্‌শিলিস্ রাজা অতিশীঘ্র স্বীকৃত হইলেন তাঁহার রাজ্য সিন্ধু নদীর উভয় তীরব্যাপক। তদনন্তর সেকন্দরশাহের সৈন্যসকল দ্বিধাকৃত হইয়া এক দল সাঁকো নির্মাণার্থ সিন্ধুনদীর অভিমুখে গমন করিল অবশিষ্ট সৈন্য লইয়া সেকন্দরশাহ সিন্ধুনদীর পশ্চিমাংশস্থ দেশ জয়করণার্থ যাত্রা করিলেন। পরে কৃতকার্য্য হইয়া সিন্ধুনদীর তীরে পঁহুছিয়া দেখিলেন যে সেই স্থান বন্য বৃক্ষে আবৃত অতএব সে সকল গাছ কাটিয়া নৌকা প্রস্তুত করিলেন এবং নদীর ভাটিয়ানে গমন করত যে স্থানে তাঁহার কর্ম্মকারকেরা সাঁকো নির্ম্মাণ করিতেছিল সেই স্থানে পঁহুছিলেন। যাত্রাকালে তিনি নিশানামক এক নগরে উপস্থিত হইলে নগরবাসিরা তাঁহাকে কহিল যে আমারদের এই নগর বাকস্ দেবতা নির্ম্মাণ করিয়াছেন তাহাতে সেকন্দর শাহ অত্যন্ত উল্লসিত হইয়া ভাবিলেন যে ঐ মহাবীর পুরুষের জয়যাত্রার শেষ সীমাতে বুঝি পঁহুছিলাম এবং যদি ভারতবর্ষের নাভিপর্য্যন্ত জয় করিতে২ যাইতে পারি তবে তাঁহাহইতে আমার অধিক কীর্ত্তি হয়। নিশা স্থানহইতে সমভিব্যাহারি নৌকাসকল ভাসিতে২ সাঁকোর নিকটে পঁহুছিল এবং তদ্দ্বারা সেকন্দরশাহ তাবৎ সৈন্যসমেত পার হইয়া ভারতবর্ষের মাঠে উত্তীর্ণ হইলেন। সিন্ধুনদীর উপরিভাগের পূর্বদিগস্থ দেশের মধ্যে তিন রাজারকর্ত্তৃত্ব ছিল প্রথমতঃ আবিসেনিস বােধ হয় যে ইনি তৎকালীন কাশ্মীরদেশীয় রাজা ছিলেন। দ্বিতীয়তঃ টাক্‌শিলিস্ ইনি পূর্ব্বেই সেকন্দরশাহের সঙ্গে মিলিয়ছিলেন। তৃতীয়তঃ পােরস ইঁহার রাজ্য হয় ডাসপিস নদীর পূর্ব্ব ধারস্থ। পোরস বাধ্যতা স্বীকার না করিয়া বরং সেকন্দরশাহের আগমন বারণার্থ প্রস্তুত হইলেন। অপর সেকন্দর সিন্ধুনদীহইতে গমন করত টাক্‌শিলা স্থানে আসিয়া স্বীয় সৈন্যেরদিগকে পর্ব্বতমধ্যে সম্প্রতিকার কৃত অতিপরিশ্রমজনক যুদ্ধের বিশ্রামর্থ অবকাশ দিলেন। ঐ নগরের তল দিয়া জিলম নদী বহে তাহার পারে পােরসের অতি ভয়ানক অশ্বারূঢ় সকল শ্রেণীবদ্ধ আছে দেখা গেল এবং যে সকল স্থান উত্তীর্ণ হওনের উপ যুক্ত তাহা তাহারদের কর্ত্তৃক সুরক্ষিত ছিল। ঐ নদীর অত্যন্ত বেগবৎ স্রোত প্রায় অর্দ্ধ ক্রোশ ব্যাপক অতএব পোরসের সৈন্য পারে থাকিতে যে একেবারে সোজাসুজি পার হইতে পারিবেন এতদ্বিষয়ে ভরসা শূন্য হইয়া সেকন্দরশাহ কৌশলক্রমে পার হইতে নিশ্চয় করিলেন। ছাউনিহইতে এক ক্রোশ ঊর্দ্ধ্ব ক্ষুদ্র এক উপদ্বীপ ব্যবধানে ঐ নদী দ্বিধা বিভক্ত ছিল অতএব ঝটকাসময়ে অন্ধকারময় রাত্রিতে যখন তাঁহার সৈন্যেরদের গমনাগমন দৃষ্ট হয় না বা তাহারদের রব শুনা যায় না এমত রাত্রিতে সেকন্দশাহ বাচনিপূর্ব্বক উৎকৃষ্ট সৈন্য লইয়া ঐ উপদ্বীপে গমন করত পর দিবস প্রত্যুষে অতিকষ্টে সৈন্যেরদিগকে পার করিলেন। তাঁহার আগমন প্রথম রাষ্ট্রহওনসময়ে বিপক্ষেরদের যে দল তাঁহার নিবারণার্থ প্রেরিত হইয়াছিল তাহারদের সঙ্গে যুদ্ধ হওয়াতে তাহারা তাড়িত হইল এবং পােরসকে সম্বাদ কহিল যে সেকন্দশাহ উত্তম২ সৈন্য লইয়া পারে আসিয়াছেন। তাহা তে পােরস স্বীয় তাবৎ সৈন্যসমভিব্যাহারে অতিসাহসে সেকন্দরশাহের প্রতি আক্রমণ করিলেন। তাঁহারদের যুদ্ধ অতিসংঘাতক দীর্ঘকাল ব্যাপিয়া প্রাণপণে হইতে লাগিল পরিশেষে সেকন্দরশাহের প্রাচীন সাহসিক সৈন্যেরা তাবৎ বাধা উত্তীর্ণ হইয়া জয়ী হইল। ভারতবর্ষীয় পােরসের সৈন্যেরা গোলমালে পতিত হইয়া পলায়ন করিল। পােরস সেকন্দরশাহের হস্তগত হইলে সাহজিক সুস্বভাবানুসারে তাঁহার সঙ্গে অতি মহাত্মর রীতি ব্যবহার করিলেন ও তাঁহার যে রাজ্য জয় করিয়াছিলেন সে সমুদায় তাঁহাকে ফিরিয়াদিয়া তদরিক্ত জয়লব্ধ অন্যান্য দেশেরও কিঞ্চিৎ দিলেন। পরে সেকন্দরশাহ আরো অগ্রসর হইয়া চনাব ও রাবিনদী উত্তীর্ণ হইলে তদ্দেশীয় লােকেরা অস্ত্রশস্ত্র ধারণ না করিয়াই একেবারে ঐ জয়শীল ব্যক্তির অনুগত হইল কেবল শিঙ্গালাস্থানীয় কাথাই জাতীয়েরা প্রথমতঃ কিঞ্চিৎ অপকারী হইয়া পরে তাহ৷রাও বাধ্য হইল।

 অনন্তর সেকন্দরশাহ বিয়া নদীর তীরে পহুছেন তাহার সম্মুখে ভারতবর্ষীয় সাম্রাজ্য বিস্তীর্ণ। ঐ রাজ্য ইউরোপীয় কোন সেনাপতিকর্ত্তৃকই পূর্ব্বে দৃষ্ট হয় নাই। কথিত ছিল ঐ মহারাজ্যের অধিপতি চন্দ্রগুপ্ত এককালীন ছয় লক্ষ সৈন্য রণস্থলে উপস্থিত করিতে সমর্থ অতএব তিনিই সেকন্দরশাহের প্রতিযােগী হওনের উপযুক্ত বটেন। সেকন্দরশাহ পূর্ব্বকার স্বকৃত নানা জয়েতে উল্লসিত এবং ভূমণ্ডলের সীমাপর্য্যন্ত জয়সূচক যাত্রাতে ভরসাযুক্ত হইয়া নদী উত্তীর্ণ হইতে পাটলিপুত্র রাজধানীর প্রতি ধাবমান হইতে উদ্যত হইলেন ইতিমধ্যে তাঁহার নিজ সৈন্যেরাই তাঁহার যাত্রা অবরুদ্ধ করিল। তাহারা নয় বৎসরাবধি অবিচ্ছেদে সেকন্দরশাহের সঙ্গে২ ভ্রমণ করত মাঠের উত্তপ্ত রৌদ্র ও পর্ব্বতীয় বরফে ক্লান্ত হইয়া কি রাত্রি কি দিন কি গ্রীষ্ম কি শীত ঋতু নিত্যই যুদ্ধে প্রবর্ত্ত ছিল এবং, তাহারদের যেরূপ পরিশ্রম তদনুরূপ ক্লেশ ইহার পূর্ব্বে ভূমণ্ড লে কোন সৈন্যই সহে নাই। তদানীং অবশিষ্ট যাহারা জীবিত ছিল তাহারা আঘাতে ক্ষত বিক্ষত ও পরিশ্রমে শ্রান্ত হইয়া স্বদেশে স্ব২ পরিজনের সঙ্গে দেখা করিতে অত্যন্ত ব্যগ্র। কিন্তু তাহারদের এই নিশ্চয় বােধ ছিল যে ঐ অশেষ অজ্ঞাত রাজ্য জয়করণার্থ যদি এইক্ষণে আমরা সেকন্দরশাহের সঙ্গেই যাত্রা করি তবে কাহারােই আর পরিজনাদির সঙ্গে সাক্ষাৎ হওনের ভরসা থাকিবে না। অতএব তাহারা এই সকল দুঃখের বিষয় আপনারদের সেনাপতিরদিগকে জ্ঞাপন করিল সেনাপতিরাও ঐ যাত্রাবিষয়ে তত্তুল্য অনিচ্ছুক ইহাতে সেকন্দর আপনাকে একেবারে উপায়হীন দেখিয়া প্রথমতঃ তাহারদের প্রতি অনেক তর্জনগর্জন করিয়া পরে বিনীতি করিলেন এবং স্বীয় কল্পিত যুদ্ধ যাত্রার অশেষ কীর্ত্তির বিষয়েও নানাপ্রকার বর্ণনা করিলেন কিন্তু তাহাতেও কিছু হইল না তাঁহার সৈন্যেরা আর অধিক দূর না যাওন বিষয়ে যে প্রতিজ্ঞা করিয়াছিল তাহাই স্থির থাকিল। অত এব সেকন্দরশাহের অত্যন্ত অনিষ্ট হইলেও রাবি নদী তাঁহার যাত্রার শেষ জ্ঞান করিয়া শিবির উঠাইয়া প্রত্যাগমন করিতে আজ্ঞা দিতে হইল।

 সেকন্দরশাহের অগত্যা এতদ্রূপ যুদ্ধ যাত্রার শেষ করিতে হইলে সিন্ধু নদী স্বীয় রাজ্যের সীমার ন্যায়ই নির্দ্ধারিত করিলেন। তদনন্তর আপনার এই মহারাজ্য দৃঢ়ীভূতকরণার্থ এবং তাহার উন্নতিবিষয়ক যে মহাসঙ্কল্প করিয়াছিলেন তাহা সম্পন্নকরণার্থ একান্ত মনােযোগ করিতে নিশ্চয় করিলেন। তিনি ভারতবর্ষের মধ্যে উত্তরদিগস্থ পথ দিয়া গমন করিয়াছিলেন এইক্ষণে অন্য পথে প্রত্যাগমন করিতে স্থির করিয়া সিন্ধু নদীর শাখা নদী দিয়া সিন্ধু নদীতে গমন করত ঐ নদীর যে স্থানে সমুদ্রের সঙ্গে সঙ্গম হয় সেই স্থানপর্য্যন্ত গমন করিলেন। কিন্তু তাঁহার পূর্ব্বকার যুদ্ধ যাত্রা বিবরণে অনেক স্থান দান করা গিয়াছে এইক্ষণে অবশিষ্ট বিবরণ সংঙ্কোচে লিখিতে হইল। সমুদ্রপর্য্যন্ত গমন করত মুলতানদেশীয় লোকেরদের শত্রুতাতে তিনি অবরুদ্ধ হইলেন এবং তাহারদের সঙ্গে যুদ্ধ করত পূর্ব্বাপেক্ষা মৃত্যু বিষয় অধিক নিশ্চিন্ত হইয়া কার্য্য করিলেন বােধ হয় যে তাঁহার পূর্ব্বোক্ত ভগ্নাশতাপ্রযুক্তই তদ্রূপ ঔদাস্য করিলেন। মুলতানের এক দৃঢ় কিল্লা বেষ্টনকরণসময়ে তিনি প্রাচীর হইতে কিল্লার মধ্যে লমফ দিলেন ও প্রাচীরে হেলান দিয়া দণ্ডায়মানে একাকীই বিপক্ষেরদের ভূরি২ সৈন্যেরদের সঙ্গে যুদ্ধ করিতে লাগিলেন। সেই স্থানে আঘাতী হইয়া অনেক কালপর্য্যন্ত তাঁহার জীবনের সংশয় থাকিল। পরে স্বস্থ হইয়া জাহাজ আরোহণে সিন্ধু নদীর ভাটিয়ানে চলিলেন পথি মধ্যে তিন নগর পত্তন এবং অপর দুই নগর দূর্গ স্থাপনেতে দৃঢ় করিলেন। অনন্তর পাটালাতে পঁহুছিলেন অর্থাৎ যে স্থানে ঐ নদী দ্বিধা বিভক্ত হইয়া সমুদ্রে পড়ে ঐ স্থানে এক দুর্গ ও এক নগর ও এক বন্দর স্থাপন করি লেন। পরে ঐ নদীর উভয় সঙ্গম স্থান বিলক্ষণরূপে দর্শন করিয়া উত্তম নির্ম্মিত জাহাজের এক বহর প্রস্তুত করাইলেন এবং জাহাজ লইয়া সমুদ্রের মধ্যে তত্ত্বাবধারণকরণার্থ নিয়ার্কসকে গমন করিতে নিযুক্ত করিয়া কহিলেন যে সমর্থ হওতো টিগ্রিস নদীর মহানাপর্য্যন্ত গমন করিবা। সেকন্দর সুফ সমুদ্র ও পারসদেশীয় নদী এবং সিন্ধু নদী এই তিনের মধ্যে এক মহাবাণিজ্য সংস্থাপনের কল্প করিয়াছিলেন এবং নিয়ার্কসের এই যাত্রাই ঐ বাণিজ্যের মূল জ্ঞান করিলেন। তাঁহার মানস ছিল যে তাঁহা কর্ত্তৃক নূতন স্থাপিত রাজ্য ভারতবর্ষীয় প্রধান২ দেশের সঙ্গে পরস্পর উপকারকতা সম্পর্কে সম্বন্ধ থাকে। অপর নিয়ার্কসের প্রতি কর্ত্তব্যাকর্ত্তব্য বিষয়ে আজ্ঞা করিয়া স্বীয় অধিকাংশ সৈন্যেরদিগকে উত্তরদিকস্থ পথ দিয়া কারমেনে প্রেরণ করিলেন এবং আপনি সর্ব্বাপেক্ষা সাহসিক বীর্য্যবন্ত যোদ্ধা লইয়া সমুদ্রের তট ঘেঁসিয়া গমন করিলেন। তাঁহার অভিপ্রায় যে জাহাজের বিভ্রাট উপস্থিত হইলে উপায় করিতে ক্ষম হন। পরে সিন্ধু নদী ছাড়িয়া গিদ্রোসিয়ার মরু ভূমিতে উপস্থিত হইলেন ঐ স্থান উত্তীর্ণ হইতে ষাইট দিন গত হইল। এই যাত্রীর উত্তপ্ত বালুকা ও জলাভাবে সৈন্যেরদের এমত ক্লেশ হইল যে ইহার পূর্ব্বে তাহারা যত পরিশ্রম করিয়াছিল সে সকলই ইহার নিকটে লঘু বোধ হইল। অপর ঐ মরু ভূমি উত্তীর্ণ হইয়া সেকন্দরশাহ বর্ম্মাণে গমন করিলেন ঐ স্থানে তাঁহার পূর্ব্ব প্রেরিত অবশিষ্ট সৈন্যের আসিয়া মিলেন। কিঞ্চিৎ কাল পরে তিনি শুনিলেন যে নিয়ার্কসের যাত্রাতে তাঁহার ভরসার অতিরিক্ত সুফল হইয়া জাহাজসকল সুনিয়ম পূর্ব্বকই নদীর মহানাতে পঁহুছিয়াছে ইহাতে তাঁহার যৎপরোনাস্তি আহ্লাদ জন্মিল। পুরাবৃত্তের মধ্যে যত সমুদ্রীয় যাত্রার বর্ণন আছে তন্মধ্যে এই যাত্রা সর্ব্বাপেক্ষা সাহসিক ও সৎফল হইয়াছে।

 কারমেনহইতে সেকন্দরশাহ অতি শীতকাল হইলে ও পারস দেশপর্য্যন্ত জয়২ পুরঃসরে প্রত্যাগমন করিলেন। পথিমধ্যে পাশাগার্দা দিয়া গমন করত পারস রাজ্যের সংস্থাপক কোরসের ভগ্ন কবর দর্শন করিয়া তাহার মেরামত করিতে হুকুম দিতেন। ইতিমধ্যে কল্যাণনামক অতি বিজ্ঞ এক জন পণ্ডিত ভারতবর্ষহইতে তাঁহার সঙ্গে আসিয়াছিলেন তিনি ইচ্ছামৃত্যুতেই চিতারোহণে দেহ ত্যাগ করিলেন কিন্তু তাহা অনিষ্ট বোধে সেকন্দরশাহ দেখিলেন না। পরে জয়ী ও জিত ব্যক্তিরদের মধ্যে সম্পর্কের অতিদৃঢ়তা করণার্থ সেকন্দরশাহ তৎসময়ে ডারায়সের কন্যাকে বিবাহ করিলেন এবং প্রধান সেনাপতিরদের মধ্যে আশী জন তাঁহার ন্যায় কার্য্য করিয়া অতি সদ্বংশজের কন্যাসকল বিবাহ করিলেন ঐ বিবাহ সকল অতি সমারোহেই সম্পন্ন হইল তাহাতে সেকন্দরশাহ স্বীয় স্বাভাবিক অতিবদান্যতা প্রকাশ করিয়া নব বিবাহিতা ঐ সকল দম্পতীকে অনেক ধন প্রদান করিলেন। কিন্তু কেবল ঐ সেনাপতিরদের প্রতিই যে তিনি এমত দান শৌণ্ডতা প্রকাশ করিলেন এমত নহে। কিন্তু তাঁহার অনেক সিপাহীরা কর্জে ডুবিত ছিল তাবৎ আসিয়া রাজ্যের লুঠিত ধনমত্ততাতে তাহারদের অপরিমিত ব্যয়ের অত্যন্তানুরাগে পরিমিত ধর্ম্মের বিষয় একেবারে লুপ্ত হইয়াছিল। এবং সেকন্দরশাহের সৈন্যের সঙ্গে২ সুদ খোর অনেক ব্যক্তি নিত্যই থাকে তাহারদের কর্জ না ধারিত প্রায় এমত সিপাহী ছিল না এবম্বিধ ব্যক্তিরাই আসিয়াস্থ সৈন্যেরদের নিত্যই এক প্রধান জ্বালা অতএব সেকন্দরশাহ ঐ মহাজনেরদের স্থানে সিপাহীরদের যত খত ছিল সে সমুদয় আনাইয়া স্বীয় ভাণ্ডারহইতে তাহা পরিশোধ করিলেন।

 পরে তিনি জাহাজ আরোহণ করিয়া পারসের মহাখালের কিনারা অনুসন্ধান করত পরিশেষে টিগ্রিস নদীর উজানে গমন করিলেন। সৈন্যেরদিগকে স্থলপথ দিয়া সুশীনগরে যাইতে আজ্ঞা দিয়াছিলেন সেই স্থানে পঁহু ছিলে সেকন্দরশাহ তাবৎ সৈন্য একত্র করিয়া কহিলেন যে তােমারদের মধ্যে যাহারা বার্দ্ধক্য বা আঘাত বা অস্বাস্থ্য প্রযুক্ত অকর্মণ্য সে সকলকে বিদায় করিলাম। কিন্তু এই অতিসৌশীল্যের প্রস্তাব শুনিয়া সকলেই একেবারে জাজ্বল্যমান হইয়া কহিল যে তবে আমারদের সকলকেই একেবারে বিদায় করুন। কিন্তু আসিয়ার জয়ি রাজা যে ইহাতেই ভীত হইবেন এমত নহে তিনি আপনার আসন হইতে ধাবমানে অবাধ্য সৈন্যেরদের মধ্যে প্রধান তের জনকে ধৃত করিয়া সেই স্থানেই প্রাণ দণ্ড করিলেন। তথাচ এই অত্যন্ত দারুণ ব্যাপার হওয়াতেও তাহারদের মনের পরিবর্ত্তন হইল না এবং দুই দিবসপর্য্যন্ত তাহারদের অবাধ্যতার কল্প কিঞ্চিৎ খর্ব্ব হইল না। তৃতীয় দিবসে সেকন্দরশাহ আপনার নূতন প্রজারদের মধ্যে সর্ব্বাপেক্ষা সাহসিক ও নিপুণ ব্যক্তিরদিগকে বাচিয়া একদল নূতন সৈন্য নিযুক্ত করিতে আজ্ঞা দিলেন এবং তাঁহার এমত কল্প ছিল যে ঐ অবাধ্য মাকিদোনীয় সৈন্যেরদের সঙ্গে আর কখন ব্যবহার করিবেন না। ইহাতেই তাহারদের একেবারে চক্ষু উন্মীলন হইল অপর অতিকাতর হইয়া আপনারদের অপরাধ স্বীকার করত সেকন্দরশাহের পায়ে ধরিয়া পুনর্ব্বার স্ব২ কার্য্যে নিযুক্ত হইল। তাহাতে সেকন্দরশাহের পরাক্রম পূর্ব্বাপেক্ষাও দৃঢ় হইল। অথচ যে নূতন পারসীয় সৈন্যেরদিগকে তিনি নিযুক্ত করিয়াছিলেন তাহারদের দ্বারা পুরাতন ও নূতন উভয় দল সৈন্যকেই পরস্পর আড়া আড়িতে বাধ্য রাখিলেন।

 এতদ্রূপে সেকন্দরশাহের সঙ্গে সৈন্যেরদের পুনর্ব্বার মিল হইলে তিনি অতিজীর্ণ দশ সহস্র সৈন্যকে অতিপ্রাচীন ক্রাটিরসের অধীনে দিয়া স্ব২ গৃহে যাইতে অনুমতি করিলেন। বিদায়কালীন তিনি স্বীয় স্বাভাবিক বদান্যতা তাহারদের প্রতি প্রকাশ করিলেন এবং তাহারদের পরস্পর বিদায় লওয়াতে অত্যন্ত করুণারস দৃষ্ট হইল। ঐ সকল সৈন্য এক২ জন করিয়া বাদশাহের স্থানে বি দায় হইল এবং তাঁহার সঙ্গে বার বৎসর ব্যপিয়া এই অতিসাহসিক প্রাচীন যে সৈন্যেরা জয় করিতে২ অপরিচিত দেশ পরিভ্রমণ করিয়াছিল এবং তৎপূর্ব্ব পৃথিবীর মধ্যে সৈন্যেরদের অননুভূত ক্লেশভােগী হইয়াছিল এমত সৈন্যেরদিগকে বিদায় করণসময়ে সেকন্দর শাহেরও অশ্রুপাত হইতে লাগিল।

 এইক্ষণে সেকন্দর শাহের এই অতিবিস্তীর্ণ বিবরণ সাঙ্গ করিয়া তাঁহার পরমায়ুর শেষ কার্য্য লিখি। প্রাচীন সৈন্যেরা যে বৎসরে বিদায় হয় তৎপরবৎসরে সেকন্দর শাহ স্বীয় রাজ্যের সৌষ্ঠব করণনিমিত্ত নিয়ত চিন্তা করত বাবেলন নগরে গমন করিয়া বন্য অবরীয়েরদিগকে দমন করিতে নিশ্চয় করিলেন তাহা না করিলে রাজ্যের শান্তি স্থাপন সুকঠিন অতএব অনেক জাহাজ নির্ম্মাণ ও তাহারদের সহযোগেই যুগ্ধকরণার্থ অনেক সৈন্য প্রস্তুত করিলেন। সেকন্দরশাহ হেলেস্পণ্ট উত্তীর্ণ হওন দি বসে যেমন ব্যগ্র ছিলেন ঐ কার্য্য সাধনেও তত্তুল্য ব্যাকুল হইয়া স্বয়ং তাবৎ কর্ম্মের তত্ত্বাবধারণ করিলেন এবং কৃতকার্য্যতার ভরসায় অত্যন্ত উল্লসিত ছিলেন ইতিমধ্যে বাবেলনের অতিপীড়াজনক পঙ্কিল ভূমিতে জ্বরগ্রস্ত হইয়া লোকান্তরগত হইলেন। বারবৎসরপর্য্যন্ত রাজ্যভোগানন্তর সেকন্দরশাহের বত্রিশ বৎসর বয়ঃক্রমে অতিযৌবন সময়েই লোকান্তর হইল। তদবধি বাইশ শত বৎসর যদ্যপি অতীত হইয়াছে তথাপি তাঁহার কীর্ত্তি অভিনব জাতার ন্যায় বিরাজমানা। পৃথিবীর সৃষ্টিঅবধি তৎকাল পর্য্যন্ত মনুষ্যবর্গের ব্যাপারে যত মহানুভব ব্যক্তিদের কর্ত্তৃত্ব হইয়াছিল তন্মধ্যে তিনিই মহত্তম। এবং যে রাজোপপ্লব তাঁহার দ্বারা সম্পন্ন হয় তাহা পূর্ব্ব২ কালীন মহোপ্লব অপেক্ষা দেশও কাল বিষয়ে অধিক ব্যাপক। জলপ্লাবনাবধি অতিপ্রাচীন আসিয়ার যে নানা রাজ্য নানা বৈলক্ষণ্য ক্রমে সংস্থিত ছিল তাহা তিনি একেবারে সমূলোৎপাটিত করিলেন এবং আসিয়াদেশীয়ের দের পরাক্রম বিষয়ে অন্যেরদের যে নিত্য ভয় ছিল তাহা এককালে সুদূর করিলেন এবং ইউরােপি জাতীয়েরদের স্বাভাবিক শক্তি ব্যক্ত করিয়া তাবৎ পৃথিবীর মধ্যে তাহারদের প্রভুত্বের পথ তিনিই প্রথমে মুক্ত করেন।

ALEXANDER THE GREAT.

 The education of Alexander the Great had been entrusted by his father to Aristotle, the greatest philosopher of the age; and it is sufficient praise of Alexander to say that the pupil was worthy of the master, and of the master that he was worthy of the scholar, so that they have reflected mutual credit on each other. Alexander ascended the throne of Macedon at the age of twenty.

 On his accession to power, he found the public debts to exceed the cash in the treasury, eight fold. The difficulties which presented themselves in every direction were such as ordinary minds would have sunk under. The northern, eastern and western subjects of his father's new empire prepared to throw off the yoke; and the Greeks seeing a stripling on the throne of the sage and deep-counselled Philip, exulted in the idea of regaining their freedom. But the youth who had now assumed the diadem was more than equal to the crisis, and the earliest acts of his reign exhibited the same wisdom and energy, which led him to the conquest of the world. His first step was to march southwards into Greece with a chosen body of troops, where with consummate wisdom he quelled the spirit of discontent, and procured the consent of all the states, Lacedemon excepted, to his succeeding Philip as Generalissimo of the Greeks against Persia. Returning to Macedonia he devoted the winter to military preparations, and at the opening of spring, proceeded against the northern barbarians, who had but recently submitted to his father's rule, and with wonderful skill marched his army across Mount Hæmus, the modern Balkan, in the very face of the enemy. On reaching the plain which stretches from the foot of the Balkan northward to the Danube, the insurgent chief retired to an island in the river, and Alexander endeavoured to reach it by his fleet which had meanwhile arrived; but his efforts were unsuccessful. Hearing however that his father's ancient foes the Getæ were assembled in large numbers on the opposite bank, he to their utter astonishment crossed on rafts during the night the broad Danube which had never been crossed before without the erection of a bridge. He met and defeated the enemy, and recrossing the stream returned to his camp the night of the victory. This bold enterprise struck all the neighbouring tribes with terrorandinduced them to submit. On his return homewards two chiefs of Illyria a mountainous track north of Macedon, appeared in arms among the defiles and threatened to cut off his return. The danger was greater than any he had yet encountered, but by the resources of his genius he signally defeated the enemy, and regained the high road to Macedon. While his communication with Greece was thus interrupted, rumours were spread abroad of his having been entirely cut off, and the Thebans, elated with the report, immediately shook off the yoke of Alexanderand massacred the generals who commanded for him in their city. When the news of this revolt reached the hero, fully sensible of the danger of delay, he descended the Illyrian mountains with incredible speed, traversed Northern Greece, and presented himself before Thebes while the citizens were pleasing themselves with the idea that he was yet detained on the banks of the Danube, or had perished in the mountains. In that age the conquest of a walled city was the work of years; the siege of this very city had cost the Athenians three years. Hence the Thebans, when summoned to surrender, trusting to a long impunity, rejected the offers with scorn. But contrary to all expectation the city fell on the first assault; Alexander tarnished his own fame by his treatment of the conquered city. An indiscriminate massacre was permitted; the walls were razed to the foundation, and all whom the sword had spared, except the adherents of the victor, were sold for slaves. This extreme severity is ascribed by some to his Grecian confederates, who through envy of this leading city urged its destruction; still Alexander is assuredly to blame in having permitted it, for he was far in advance of the principles of the age, and ought to have averted the catastrophe. The rapidity of his march, and the unexpected success of his attack, struck terror into the minds of all the Greeks, and convinced them that no military genius equal to Alexander had yet appeared in the world. This first campaign of the Macedonian monarch reminds us strongly of the first Italian campaign of Napoleon, the modern Alexander.

 Greece being thus awed into subjection, Alexander prepared for that expedition, which was the main business of his life, the subversion of the empire of Persia. The Persian monarch, in addition to the vast resources of his own dominions, had in his pay 50,000 mercenary Greeks, men of the same mettle with the troops of Alexander, who wanted nothing but an equal leader. To the subjugation of Persia, and the conquest of the known world, Alexander led only 30,000 infantry and 4500 cavalry; but they were chosen men, inured to war and fatigue, and led by a band of generals to whom the world has since produced no superiors.

 In the spring of the year 334, at the age of twenty-two, Alexander placed himself at the head of his troops and marched to the Hellespont, or the straits which divide Asia from Europe, to which place his fleet had been conducted. The troops embarked, and Alexander steering his galley with his own hand, led the way with all the ardour of enthusiasm, and was the first to leap on the shores of Asia, which from that day he considered his own. After the forces had been landed, he pushed forward to the banks of the Granicus, on the opposite shore of which the Persian generals had collected their troops to check his progress. The Persians ought to have disputed the passage of the Hellespont, and probably would have done so if they had not just before lost their chief captain, Mentor, an able Grecian commander in the pay of the king. On reaching the Granicus, Parmenio, the general in chief under Alexander, dissuaded him from crossing it by a representation of difficulties, but Alexander wisely answered him that if after crossing the Hellespont they were to be arrested by this little stream, they might as well give up the enterprise. In the very face of the enemy's troops, comprising the flower of the Persian cavalry, Alexander forded the stream and infusing some of his own martial daring into his troops, completely defeated the foe. Many of their generals, the chief men of the empire, fell in this battle, but the generous conqueror gave them honourable sepulture. The summer being now ended he sent the main body of his army into winter quarters at Sardis, and allowed all the newly married officers and men to return home on furlough, convinced that this act of generosity would bring him an abundant supply of recruits. To himself he allowed no repose, but with a chosen band of troops proceeded along the sea coast of Asia Minor and subdued the whole region inhabited by the Asiatic Greeks, thus crippling the naval resources of Persia. Then moving along the southern boundary of Asia Minor, he penetrated the wilds of Mount Taurus, though the snow lay thick on the ground, and subjugated the whole province of Phrygia. Although this winter campaign was destitute of any brilliant exploit, it was marked by that boldness, energy and perseverance in the face of difficulties which denote the true hero. On the approach of spring, the soldiers who had been sent home, returned from Macedonia with strong reinforcements, and Alexander having ascended through the mountains to Gordium, commanded Parmenio to conduct the army from Sardis to that place.

The troops being thus reunited Alexander opened the second campaign with the subjugation of Cappadocia and Paphlagonia. He then descended the defiles of Mount Taurus, marched into the maritime province of Cilicia, where he narrowly caped with his life by bathing when heated in the Cydnus. On his recovery he learned with pleasure that the generals whom he had left in his rear had overcome all opposition and that in September of that year all Asia Minor had submitted to his arms. Memnon, the Greek mercenary in the Persian pay, and by far their ablest general, died also about this time. Meanwhile Darius advanced with an immense army across the desert, to crush as he supposed, his youthful antagonist. Thirty thousand Greeks hired by Persian gold to fight their own countrymen formed the real strength of his army, which took up a position on the plains of Cilicia. By an excellent manœuvre Darius gained the rear of Alexander's army, and encamped between him and his new conquests in Asia Minor, so that his defeat appeared a matter of necessity. The armies met at Issus, a narrow flat with the sea on one hand, and bluff rocks on the other. The troops of Darius amounted to 145,000; those of Alexander to about one-third the number; the battle hung for a long time in suspense, but the personal exertions of Alexander at the head of his cavalry at length turned the scale in his favour; the Persians were routed and fled, leaving as was said 110,000 on the field. The king was among the first to escape; and his mother, wife and family fell into the hands of the victor. This great victory confirmed in their allegiance, all those states which were wavering and by striking a salutary terror into the minds of others facilitated the future progress of Alexander. Parmenio was ordered to push on to Damascus, where he seized the royal treasures, and the whole Court; but the fugitive monarch eluded his pursuit and regained the Persian capital.

 From Issus Alexander moved down the coast of the Mediterranean and entered Phenicia, the cradle of Grecian literature. Through this whole extent of country he experienced no opposition but from Tyre, then the queen of the ocean. This proud city built on an island at a little distance from the main land was at that time the first commercial city in the world, possessed of boundless wealth and proportionately haughty, Alexander demanded leave to enter it that he might sacrifice; but this having been refused him, he determined to lay siege to it. The siege and capture of Tyre formed not only one of the most important events in Alexander's life, but the most memorable event in ancient history. Strong by nature, the city was admirably fortified by art, and most obstinately defended. The difficulties which Alexander had to combat, exceeded those of every preceding siege on record; but they served only to draw forth the vast resources of his genius, so that at the end of five months the city was carried by assault. Tyre deprived of the command of the sea, soon relapsed into insignificance. The glory of this exploit was however tarnished by the cruelty exercised according to the principles of that age on the vanquished inhabitants. With Tyre fell the maritime power of Persia. Darius soon after sent an envoy to Alexander and offered an immense ransom for his family; and one of his daughters in marriage, together with the whole of Asia west of the Euphrates as the conditions of peace; but Alexander refused the terms, saying that he considered Asia with all its treasures his own, and would not accept of a part for the whole.

 On the capture of Tyre Alexander marched into Palestine, which submitted readily. Thence he passed into Egypt marching from Gaza to Pelusium in seven days. The Egyptians though subject for two centuries to the Persians, had borne the yoke with impatience and cheerfully opened their gates to the conqueror. On reaching the estuary of the pile, Alexander, who always made his conquests subservient to public improvement was struck with the great advantages which it offered for trade, and immediately ordered a city to be erected. The architect was Demaratus whom Alexander had found rebuilding the temple of Ephesus. Ample funds were placed at his disposal, and a mighty city soon arose on the shores of the Mediterranean and attracted to itself the commerce which Tyre had begun to lose. It continued for many ages to be the most enduring monument of Alexander's career, and though now in a state of decay would speedily recover its ancient grandeur if the isthmus of Suez were opened for the conveyance of merchandize. While in Egypt Alexander crossed the desert, to the east, to visit the temple of Jupiter Ammon, which stands in a green and fruitful spot, surrounded with eternal and barren sands. He would have proceeded to the cateracts of the Nile, but Darius was mustering the whole force of the East, from the utmost limits of his dominion, to try the event of another battle. Alexander therefore preferred the calls of duty to the gratification of curiosity, and returned to Tyre.

 From Tyre, after a world of feasting and sacrificing, he proceeded with all his troops towards Babylon. Marching from the shores of the Mediterranean to the banks of the Euphrates, he threw a bridge across that river, and his troops entered Mesopotamia, or the region lying between the Euphrates and the Tigris without opposition. The passage through Mesopotamia occupied five months; an incredible period, considering the usual rapidity of his movements; but the itinerary has been lost, and the cause of the delay cannot now be known. Darius, meanwhile, moved with his immense army up the left bank of the Tigris to Arbela, where he deposited the baggage, and marching forty miles onward encamped on a wide plain, with the Tigris on the west, the Lycus on the east, and the mountains to the north. Here he prepared to make his last struggle for the empire of Asia. Alexander crossed the Tigris without impediment, and after a march of five days came in sight of the enemy, whose immense host covered the plain as far as the eye could reach. One historian computes their number at a million, but one half may always be safely deducted from the gross enumeration of an Asiatic army. The Macedonian troops numbered only 47,000. The Persian army was composed of many nations, and in it was assembled all the chivalry of Asia; but a leader was wanting to give a uniform direction to its movements. Alexander opened the battle by attacking the enemy's centre, where the royal standard was conspicuous. After astonishing feats of valour he succeeded in defeating this division, and was on the point of capturing the king, when Parmenio, who commanded the left wing, pressed by his opponents, sent to beseech aid. Alexander with his victorious cavalry rode up to his relief and turned the tide of victory, but the king in the meantime effected his escape. In all Asiatic armies, the flight or fall of the king is the loss of the battle, as the capture of the metropolis is the conquest of the kingdom. On the disappearance of Darius, therefore, his immense host broke up, and each one sought safety in flight. Three hundred thousand are said to have fallen in this battle on the side of the Persians, and an equal number to have become prisoners of war. Alexander lost no time in pursuing Darius, but he had already gained a march, while Alexander was assisting Parmenio. This battle is usually called the battle of Arbela, though that place was forty miles distant. By it were definitively decided the fortunes of Asia.

 From the field of battle Alexander marched to Babylon, the first metropolitan city established after the flood, and long the mistress of Asia, but then in its dotage. There he visited all the remains of ancient art, and ordered the temple of Belus, the oldest in the world, to be restored. From Babylon he moved on to Susa, a favourite seat of the Persian kings and the depository of the surplus wealth of Asia; this treasure fell into the hands of the conqueror, and was sent abroad to assist his conquests. Leaving Susa he marched to Persepolis which the Persian monarchs had exhausted the East to embellish. There after having seated himself on the throne of the king of kings, as the Persian monarch was styled, and surveyed the wonders of art with which the city was adorned, he gave it up to be plundered and burnt, to revenge, as he said, the conflagration of Athens by the Persians two hundred years before; an action mean in any conqueror, and in Alexander unpardonable. At Persepolis ended the fourth campaign. He now set forward in pursuit of Darius, who had remained inactive at Ecbatana, during the four months which had elapsed since the battle of Arbela, in the vain hope that some fortunate accident would rid him of his conquering foe.

 Darius, on the approach of Alexander, fled northward with a large sum of money, and about nine thousand troops. The conqueror arriving at Ecbatana, the modern Ispahan, then the gorgeous capital of the Persian empire, dismissed a part of his cavalry with liberal donatives, that they might revisit their homes; many, however, chose rather to re-enlist. Alexander then advanced in pursuit of the king, and moving with great rapidity reached Bhajil, near the defiles of the mountains which overlook the Caspian sea. After halt of five days to refresh his troops, he was again in motion; on marching two days farther, he learned that Darius had been seiz- ed, and was led in confinement by Bessus, Satibarzanes, and some others of his principal attendants. Without a moment's delay he put himself at the head of a body of chosen horse, and pursued the escort without relaxation, giving neither himself nor his troops any repose by day or rest by night. At length he had the satisfaction to perceive before him the troops of the satraps marching slowly and without order. The traitors seeing Alexander gain upon them, inflicted several mortal wounds on Darius, and fled, leaving him to die by the road side. To the great mortification of Alexander, Darius expired before his arrival; but the youthful conqueror ordered his funeral obsequies to be performed with imperial honours. Thus ended the royal line of Cyrus; and thus fell the mighty empire of Persia—an empire which like every eastern severeignty, was established by the talents of one man, and waxed gradually feeble in the hands of his hereditary successors.

 Alexander, drawn into this region by the pursuit of Darius, determined before his return to subdue Hyrcania, which lies between the mountains and the Caspian sea. This region was the scene of the great Rustum's adventures, the most ancient hero of Persia. We need scarcely add that in this expedition Alexander was completely successful. On his return, he was met by the Greeks who had been in Persian pay, and by the principal officers of Darius, who now saluted him as the Lord of Asia. Alexander then marched eastward through Parthia and arrived at Susa, situated in the modern Khorasan, where Satibarzanes, one of the murderers of Darius, having made due submission to the conqueror, was reinstated in his Government. Bessus meanwhile assumed the imperial tiara, and proclaimed himself king in the room of Darius. To subdue him became therefore a duty of pressing importance, and Alexander lost no time in marching into Bactria in pursuit of him. Satibarzanes seeing the conqueror engaged in this enterprise, put his treacherous arts again in practice, murdered the Macedonians who were with him, and raised the standard of revolt. Alexander determined not to leave an insurgent district in his rear, changed his course and moving southward with his usual celerity, took the rebel by surprize, and restored his own authority through the revolted provinces.

 Meanwhile a conspiracy more dangerous than the defection of the Persian satrap was discovered in his own camp, at the head of which were his two favorite generals, Parmenio, the companion of all his toils, and his son Philotas. They were subjected to a court martial, and the proof of their guilt being irrefragable, were condemned and executed. Alexander then continued his march eastward, and in the depth of winter traversed the province of Candahar. Arriving at the foot of the Paropamisan mountains he closed his fifth campaign, and gave his wearied troops a respite of two months.

 Early the next year he opened his sixth campaign by marching his troops across the mountains, and entered Bactria. “He advanced,” says his faithful historian, “with dfficulty, on account of the deep snow and in want of all necessaries, but still he advanced.” As he reached Bactria, the modern Balk, Bessus crossed the Oxus, now the Jihoon, and entered that lovely region which lies between that river and the Jaxartes, now the Sihoon, the vale called by the Romans Transoxiana, by the moderns distinguished as Mavul-ul-nere, the principal province of which was then called Sogdiana, from El Sogd, the valley. On reaching the banks of the river, a body of his veteran cavalry complaining of exhaustion by reason of the cold, hunger, and fatigue to which they had been exposed, were sent home with rewards in company with all the other invalids. The Oxus was a broad and rapid stream, the banks of which were so sandy that no bridge could be planted on them. With great labour Alexander and his army crossed it on a species of mussuks. As soon as he had reached the opposite shore, the accomplices of Bessus delivered him up to the victor, by whom he was ignominiously scourged and sent to Bactria to await his doom. Alexander then advanced northward to the banks of the Sihoon, but was speedily recalled by a revolt that had broken out in his rear, in Sogdiana, and which the Tartars on the north of that river had agreed to aid. The crisis was important, and as usual called forth the energies of his great mind. The rebels had betaken themselves to seven cities surrounded by the impervious mud walls of the East. In five days he captured these forts, and then proceeded against Cyropolis, which Craterus his general had previously invested. This place he entered through the channel of a small stream, which running under the wall of the city was dry in summer; and both the town and citadel surrendered. The necessity of these energetic measures became doubly apparent, when the northern shore of the Sihoon was seen covered with Scythian cavalry hastening to assist the insurgents; against them he immediately turned his arms. These wild Scythians or Tartars have been the perpetual scourge of the countries lying to the south of them both in Europe and Asia. It was by them that the great Cyrus, the conqueror of the East, was defeated and slain. The arrival of Alexander in the neighbourhood of the same spot, kindled the superstitious fears of his men, who persuaded the diviners to report unfavourable omens in hopes that Alexander would be deterred from crossing the fatal stream. But he who had conquered the Hellespont, the Euphrates, and the Tigris, was not to be daunted by such artifices. He collected rafts, floats, mussuks and every thing within his reach, and then sat down to wait for an auspicious omen. At length, the priests unable to weary him out, found their own patience exhausted. The engines were planted at the edge of the stream and began to play; the barbarians on the opposite shore unaccustomed to such weapons began to retire. Instantly the trumpets sounded, the rafts pushed off, and Alexander leading his troops across, formed them as they landed, and led them against the Tartars, who after a slight engagement were defeated and fled. In the warmth of the pursuit, however, Alexander while greatly heated partook of cold water, and perspiration being checked, was carried back to his tent more dead than alive. He soon after recovered his strength, and was gratified by receiving an embassy from the enemy, to apologize for the recent attack and to sue for peace, which was readily granted. The report of this victory over the wild unconquered Tartars did Alexander immense service among the neighbouring tribes, who were wavering in their allegiance.

 This great achievement of Alexander, however, was coeval with the only solid disgrace which the Macedonian arms sustained in their long and victorious career. Spitamenes, the best general among the Persians, had revolted in Sogdiana, and Alexander sent a body of troops to subdue him. But though these troops had been familiar with victory, yet when deprived of the presence of their great Captain, they were defeated and almost exterminated by the wily Persian. Alexander hearing of this reverse, moved down with his usual impetuosity at the head of a small body of troops, and in four days reached Samarkand the scene of the revolt. Spitamenes fled to the desert and was pursued as far as the victor thought it necessary, while the neighbouring villages were severely chastised for their luke-warmness or hostility.

 It was at the close of this, the sixth campaign, while the army lay in winter quarters, that the most distressing event in Alexander's life occurred. Master of all Asia, and determined to found a new empire in it he had assumed the Asiatic dress, and patronized the oriental mode of salutation. The rough and hardy Macedonians, the companions of his toils, could not brook this change of costume and manners, and sometimes vented their displeasure in terms bordering on insult. Alexander though habitually abstemious, could not refrain from occasional intemperance. Having on one occasion, drank too deeply at a great feast, the conversation became excessively free. Clitus, the brother of his foster nurse, who had saved his life at the battle of the Granicus, being also inebriated, began to indulge in the most irritating expressions. On his repeating them with still greater aggravation, Alexander, unable to restrain his wrath, seized a lance and laid him dead at his feet. The sight of the blood of his most intimate friend, shed by his own hand, roused Alexander to the enormity of his offence, and for three days he was overwhelmed with gloom, and abstracted himself from all intercourse public or private. His generals at length aroused him from this state of despondency, and prevailed on him to resume business.

 The seventh campaign was passed in quelling the insurgent Sogdians and Bactrians. The labour was harrassing, and the result without renown. In fact this was the most gloomy and inglorious of all his campaigns. We hasten therefore to the eighth year of his career. While subduing an almost impregnable fortress, Roxana the daughter of the chief, became his prisoner. Alexander was struck with her surpassing beauty and espoused her, which so conciliated the natives, that they remained faithful to him to the last. Alexander had now determined to subdue India. Before he entered on this grand expedition, he indulged freely in the pleasures of the chase in the royal park of the Persian monarch, and signalized his personal prowess by slaying a lion with his own hand. It was on this occasion that one of his pages stepping between him and his prey, contrary to the laws of the chase, was whipped for his temerity. Stung with disgrace, he entered on a rash attempt against the life of the monarch, and enlisted others in the plot. It was discovered and the traitors adjudged to death; but before they were led to execution they accused Callisthenes of being a party to their conspiracy. He was a rude boisterous pundit who had followed the camp of the conqueror from Greece and frequently given offence by his freedom. He was taken into custody and died; the Captain of Alexander's guard wrote in his memoirs that he died in confinement; the enemies of the King reported that he was tortured and hung; the reader will judge which statement is most credible.

 Summer having now commenced, Alexander set out on the conquest of India, his last and greatest military exploit, and soon arrived at Cabul, which is not improbably one of the cities founded by him. There he summoned the sovereigns of India to yield him obedience; and Taxiles whose territories stretched to both sides of the Indus readily obeyed the summons. The army was then divided; one party moved forward to the Indus to erect a bridge; while Alexander with the rest of the troops proceeded to subdue the countries which lay westward of that river. Having at length reached the banks of the Indus which were covered with forest trees, he built boats and sailed down the stream to the spot where his engineers were employed on the bridge. During his progress he stopped at Nyssa, the inhabitants of which declared that it had been founded by Dionysius or Bacchus. Alexander was elated with the discovery, and flattered himself with the idea of having at length reached the utmost limit of that hero's conquests, and with the prospect of surpassing him by penetrating into the heart of India. From Nyssa, the fleet floated down to the bridge, and Alexander crossing it with his whole army entered upon the plains of India. The region lying to the east of the upper course of the Indus was then under the dominion of three chiefs; of Abissenes, who probably ruled Cashmere; of Taxiles, who had already joined the standard of Alexander; and of Porus, whose dominions lay eastward of the Hydaspes. This latter monarch refused to submit and prepared to oppose the progress of the victor. From the Indus, Alexander marched to Taxila, where his troops reposed after their late severe mountain campaign. The river Hydaspes washes its base; on the opposite shore was drawn up the formidable cavalry of Porus, defending every point of access. The impetuous stream was a mile broad; despairing therefore of being able to cross it in the face of an army like that of Porus, Alexander determined to employ stratagem. About two miles above his camp, a small island divided the stream into two parts. Thither he led in person a body of chosen soldiers during a dark stormy night when neither the motion of his troops could be perceived, nor the clamour of their march heard. By the morning he had crossed his troops though with infinite difficulty, and found himself engaged with a single detachment of the enemy's troops sent against him on the first alarm. These being driven back, informed Porus that Alexander himself had crossed with the elite of his army. Porus on this moved down with the main body, and boldly encountered his foe. The conflict was long, arduous and sanguinary, but the bravery of Alexander's veterans, overcame every obstacle, and victory declared in his favour. The Indian army fled in disorder, while Porus fell into the hands of the conqueror, by whom he was treated with his usual magnanimity. All his dominions were restored to him, and some recent conquests added to them. Alexander, still advancing, crossed first the Chinaub, then the Ravee, as the natives submitted to the great Captain without even lifting a lance; the Cathaians of Cingala alone gave him trouble, but they were eventually subdued.

 Alexander had now arrived on the banks of the Beyah; before him was stretched the mighty empire of India, which no European general had ever visited. Chundru-goopta, the sovereign of this wide dominion was said to be able to bring 600,000 infantry into the field, and was in every way a foe worthy of Alexander. Elated with his past victories, and animated with the hope of carrying his arms to the extremity of the globe, he prepared to cross the river and to march down on the imperial city of Patulipootra—when his career was arrested by his own troops. They had now followed him for nine years without intermission, exposed to the scorching heat of the plains, and the snows of the mountains; night and day, summer and winter, they had been engaged in perpetual conflict, and passed through fatigues which no troops in the world before them had ever sustained. The remnant who now survived their companions, covered with wounds, and exhausted by labour, were anxious to return to the bosom of their families, whom few of them could expect to revisit if they embarked with Alexander in the conquest of those unknown and boundless regions. They poured their murmurs into the willing ears of their officers, and Alexander found his course decidedly arrested. He employed menace; he used entreaty; he painted the lofty glory of this new campaign, but in vain. He found his troops fixed in their resolve not to follow him; and, with the deepest reluctance, he was obliged to make the Ravee the limit of his hopes, and to order his camp to break up and return.

 Alexander having been obliged thus to terminate his enterprise, appears to have fixed the Indus as the boundary of his dominions. He now determined to bend his attention to the consolidation of this mighty empire, and to the completion of these large projects which he had formed for its improvement. His journey to India had been by the northern rout; he resolved to return by a different path, to drop down the tributary streams of the Indus, and then down the Indus itself to its confluence with the sea. Having devoted so large a portion of our space to his expedition we must hasten through the remainder of his career. In moving down towards the sea, he was obstructed by the hostility of the inhabitants of Mooltan, and in combating them, displayed a greater recklessness of personal danger than on former occasions, owing probably to disappointment. Having besieged one of the strong holds in Mooltan, he leaped from the wall into the town, and singly opposed the whole host of its warriors, leaning for support against a wall. Here he was wounded, and for some time his life hung in doubt. On his recovery he rejoined his fleet, and sailed down the Indus, erecting on his route three cities and fortifying two others. Having reached Pattala where the river branches off into two streams, and then enters the sea, he gave orders for the erection of fortifications, a city and an harbour. He minutely examined both estuaries with the eye of a statesman, and having collected a fleet of strong vessels, ordered Nearchus to sail with it into the ocean, on a voyage of discovery, and to gain if possible the mouth of the Tigris. He had formed magnificent plans of a large commerce between the Red Sea, the rivers of Persia, and the Indus, of which this expedition was to be the basis. He proposed to connect the vast regions of India with his newly formed empire, by the interests of a beneficial trade. After having given Nearchus his sailing orders and despatched the largest body of his troops by a northern rout to Caramania, he took with him the boldest and strongest soldiers, intending to march along the coast, that he might be at hand to succour his fleet. He then crossed the Indus, and entered the sandy desert of Gedrosia which he was sixty days in passing. In this march his troops endured such hardships from the burning sands, and the absence of water, that all their former labours appeared light in comparison. Emerging from this barren waste, Alexander proceeded to Kerman where the rest of his troops joined him, and where he had the inexpressible pleasure soon after of hearing that the voyage of Nearchus had succeeded beyond his hopes, and that the fleet had reached the river in safety. Of all the voyages distinctly recorded in ancient history, this was by far the boldest and most successful.

 From Caramania Alexander continued his triumphant march to Persia, though it was then the depth of winter. Passing by Passagarda, he examined the tomb of Cyrus, the founder of the Persian monarchy, which he found dilapidated, and ordered to be restored. Soon after Calanus, a learned brahmun who had followed the conqueror from India, being weary of life, ascended the funeral pile and expired, but Alexander refused to witness the spectacle. With the view of cementing the union between the conquerors and the conquered, Alexander about this time espoused the daughter of Darius, and eighty of his chief officers following his example, allied themselves with the noblest Persian families. The nuptials were celebrated with extraordinary pomp, and distinguished by that friendly liberality in pecuniary matters which was so natural to Alexander. His generosity was not confined to his officers;—many of his soldiers were in debt: the plunder of Asia had given birth to a thoughtless profusion, subversive of all economy, and Alexander's army was followed by a crowd of usurers, the pest of every Asiatic camp, to whom the majority of his troops were indebted. He generously ordered every bond to be brought to the military chest and discharged.

 Alexander then embarked on board his fleet, and sailing up the Persian gulf explored its shores, and ascended the Tigris. His troops had been ordered to march by land to Susa, where they had no sooner arrived, than Alexander assembled them together and offered a general discharge to all those whom age, wounds, or disease had invalided. But this generous proposal, only inflamed the troops to a general mutiny, and induced them all to request their discharge. The conqueror of Asia was not to be intimidated by this step; he rushed from his tribunal, seized thirteen of the ringleaders and executed them on the spot. But this vigorous measure failed to produce a change in their minds, and for two days the mutiny raged without abatement. On the third Alexander gave orders for embodying a fresh army out of the bravest and most experienced of his new subjects, intending to dispense altogether with the services of his Macedonian veterans. This measure brought his troops to their senses; they expressed the deepest contrition for their error, and were restored to their functions; and the authority of the king became more complete than ever. At the same time the Persian force he had embodied enabled him to hold the balance between the two parties, and to keep both in check.

 After this reconciliation, ten thousand of his worn out troops were permitted to return to their homes under the command of old Craterus. Alexander exercised his usual generosity at their dismissal, and the parting between them was touching in the extreme. Every soldier was allowed to take personal leave of the king, who was most deeply affected at this separation from the hardy veterans who had for twelve years followed his victorious standard through unknown regions, and encountered difficulties which no other troops in the world had ever experienced.

 We must now close this too protracted notice of Alexander and hasten to the last scene of his existence. The year after the dismissal of the veterans, he moved on to Babylon, still occupied with the vast plans he had projected for his empire. He determined to subjugate the wild Arabs, an object indispensable to the tranquillity of his dominions. A numerous fleet was constructed, and a land army prepared to co-operate with it. Alexander was as eager in this enterprise, as on the day he crossed the Hellespont. He superintended every operation himself, and was animated with high hopes of success, when a fever caught in the pestilential marshes near Babylon, terminated his career. He died at the early age of thirty-two, after a reign of twelve years, leaving behind him a reputation which is still fresh, though twenty-two centuries have since elapsed. His was perhaps the mightiest mind which had, till that period, been brought to bear upon human affairs, and the revolution he effected was more stupendous in its character, more permanent in its effects, than any preceding political movement. He broke up the old Asiatic empires which, with various changes, had subsisted from the flood; he dispelled the awe with which the power of Asia had always been viewed, and unfolding the intrinsic energy of the nations of Europe, prepared the way for the establishment of their supremacy throughout the world.