পুরাবৃত্তের সংক্ষেপ বিবরণ/পারসীয় রাজ্য

পারসীয় রাজ্য।

 যদ্যপি পারসীয় রাজ্যের ও গ্রীকদেশের বিবরণের অতিনৈকট্য সম্বন্ধ আছে তথাপি ঐ পরস্যের প্রথম রাজা কোরসের কাল অবধি শেষ রাজা ডারায়সের সমকাল পর্য্যন্ত যে মুখ্য কার্য্য ঘটে তাহার বিশেষ বিবরণ না লিখিলে পুরাবৃত্তের প্রণালীর বিচ্ছেদ হয়।

 পারসীয় রাজ্যের সংস্থাপক কোরসের চরিত্র ইহার পূর্ব্বে বিশেষরূপে বর্ণিত হইয়াছে অতএব এইক্ষণে এই মাত্র লিখনাবশ্যক যে খ্রীষ্টীয়ান শকের ৫২৯ বৎসর পূর্ব্বে তিনি বন্য তাতারেরদের সঙ্গে যুদ্ধে হত হইলেন এবং তাঁহার পুত্ত্র অথচ উত্তরাধিকারী কাম্বৈশিসের হস্তে যে রাজ্য সমর্পণ করিয়া যান তত্তুল্য রাজ্য ইহারপূর্ব্বে পৃথিবীর মধ্যে কখন সংস্থাপিত হয় নাই। কাশ্বৈশিস্ আফ্রিকা দ্বীপের প্রতিকূল্যে যুদ্ধ করিয়া মিসর ও লিবিয়া দেশ জয় করিয়া পারসীয় রাজ্য ভুক্ত করিলেন। মিসরদেশীয় ব্রাহ্মণেরদের প্রতি তাঁহার বিশেষ বিরাগ জন্মিল যেহেতুক তাঁহারা এমত ভাবিয়াছিলেন যে ভিন্নদেশীয় রাজার প্রভুত্ব এই রাজ্যে স্থাপিত হইলে আমারদের সর্ব্বনাশসম্ভাবনা অতএব তাঁহারা কাম্বৈশিসের প্রতি বৈরিতাচরণ করিতে লাগিলেন। ইতিহাসের মধ্যে তাঁহাকে নির্দয় রাজা বলিয়া বর্ণনা করেন। কিন্তু ইহা বিবেচনা কর্ত্তব্য যে ঐ সকল ইতিহাস যে মিসরদেশীয় ব্রাহ্মণেরদিগকে ঐরাজা দমন করিয়াছিলেন তাঁহারদের রচিত অতএব বিবেচনাপূর্ব্বক তাহার সত্যাসত্য গ্রহণ করিতে হই বে। রাজার মৃত ভ্রাতার নাম স্মর্ডিস অতএব মাগি নামে বিখ্যাত মিডিয়াদেশীয় পুরোহিতেরা স্মর্ভিসের নাম সামান্য এক ব্যক্তিকে আরােপ করিয়া তাঁহাকে রাজা করিলেন এবং তাঁহাকে তাড়না করিতে কাশ্বৈশিস্ দৈবায়ত্ত হত হইলেন। তাঁহার রাজ্যকাল সাড়ে সাত বৎসর। ঐ ভাক্ত স্মর্ডিসের আট মাস মাত্র সিংহাসনাধিকার হইলে পারসীয় মহাকুলীনেরদের মধ্যে সাত জন মিডিয়া দেশস্থ রাজাকে সহিষ্ণুতা করিতে না পারিয়া ষড়যন্ত্র করণপূর্ব্বক তাঁহাকে হত করেন। এতৎ সময়েই মিডিয়াদেশীয়েরদের যে শিল্প ও সভ্যতা ছিল তাহা ভ্রমণশীল পারসীয়েরদের মধ্যে প্রবিষ্ট হয় এবং তদবধি তাঁহারা ঘর বাটী করিয়া বসতি করণপূর্ব্বক নগর পত্তন করিতে লাগিলেন। ঐ নগর অল্পকালের মধ্যেই পৃথিবীর মধ্যে সর্ব্বাপেক্ষা সমৃদ্ধ নগরের তুল্য হইল।

 অপর ঐ সাত জন কুলীনেরা রাজা মনোনীত করণার্থ একত্র হইয়া অত্যাশ্চর্য্য বিবেচনা করণানন্তর হিষ্টাসপিসের পুত্ত্র ডারায়সকে সিংহাসনারােহী করিলেন। ডারায়স স্বীয় সিংহাসন দৃঢ় করণাভিপ্রায়ে কোরসের দুই কন্যাকে বিবাহ করেন। তিনি ছত্রিশ বৎসরপর্য্যন্ত রাজ্য করেন এবং নানা দেশ জয়করণের ও পারসীয় রাজ্যের সৌষ্ঠবকরণের দ্বারা তাঁহার রাজ্য কাল অতিস্মরণীয়। প্রথমতঃ তিনি কৃষ্ণ সমুদ্রের উত্তর তটস্থিত তাতারেরদের প্রতি মহাআক্রমণ করিলেন কিন্তু অত্যপমানিত হইয়া তথাহইতে হঠিয়া আসিতে হইল। অতএব তথাকরি ক্ষতি পূরণার্থ তিনি ইউরোপের মধ্যে যুদ্ধ করত এবং থ্রাকিয়া ও মাকিদোনে আপনার পরাক্রম সংস্থাপন করাতে ইউরোপের মধ্যে তাঁহার পরাক্রমই মূলভূত হইল। ইতিমধ্যে ইউরোপহইতে সহস্র ক্রোশ অন্তরে পারসীয় রাজার বেতনভোগি গ্রীকীয় এক ব্যক্তি দেশ দর্শনার্থ সিন্ধু নদীর ভাটিয়ানে সমুদ্রপর্য্যন্ত গমন করি লেন এবং ঐ নদীর উত্তর কোণস্থ পর্ব্বতীয় দেশ কিঞ্চিৎ কাল পরে পারসীয়েরদের অধিকার ভুক্ত হইয়া ঐ নদী পারসীয় সাম্রাজ্যের পূর্ব্ব সীমার ন্যায় নির্দ্ধারিত হইল।

 কিন্তু ডারায়সের রাজত্বসময়ে সর্ব্বাপেক্ষা যে বৃহৎ কার্য্য হয় সে গ্রীকীয়েরদের সঙ্গেই বিবাদ যেহেতুক তদ্দ্বারা ঐ উভয়দেশীয়েরদের মধ্যে অহিনকুলতারূপ শত্রুতাচরণ আরম্ভ হয় এবং ঐ শত্রুতাগ্নি কেবল পারসীয় সাম্রাজ্যের নিপতনেই নির্ব্বাণ হয়। বিশেষতঃ আসিয়াতে যে গ্রীকদেশীয় কলোনি ছিল তাঁহারা পারসীয়েরদের অবাধ্য হইলে তাঁহারদের দমনার্থ পারসীয়েরদের সৈন্য প্রেরিত হয় তাহাতে পৃথিবীর মধ্যে বাণিজ্য বিষয়ে তৃতীয় নগর অথচ টায়র ও কার্থাজের প্রতিযােগি যে ইওনিয়ার রাজধানী মাইলিটস তাহা পীরসীয়েরদের হস্তগত হয়। অপর আথেন্‌সীয়েরা যেরূপ সার্ডিসনগর দগ্ধকরণেতে তাহার বিলক্ষণ প্রতিফল দিলেন এবং যে রূপে ডারায়স উত্তরদিগে অথচ পর্ব্বতীয় পথ দিয়া গ্রীক দেশ আক্রমণ করত অকৃতকার্য্য হইলেন এবং যেরূপে তৎপর বৎসরে তিনি জাহাজ আরোহণে একেবারে গ্রীকের তটের উপরি পঁহুছিয়া মারাথনের মাঠে গ্রীকীয়েরদের সৈন্য কর্ত্তৃক আপনার সৈন্যেরদিগকে পরাভূত হইতে দেখিলেন ইত্যাদি বিষয়সকল ইহার পূর্ব্বে গ্রীকদেশীয় ইতিহাসের মধ্যে বর্ণিত হইয়াছে। অপর তিনি এতদ্রূপে পরাজিত হইয়া উদ্ধারার্থ নানা উদ্যোগ করিলেন কিন্তু নূতন যুদ্ধকরণ নিমিত্ত তাবৎ আয়োজন প্রস্তুত হইতে২ তাঁহার মৃত্যু হয়।

 তাঁহার রাজত্বকালে পারসীয় দেশের আন্তরিক শাসনের পারিপাট্য হয়। তিনি স্বীয় সাম্রাজ্য বিংশতি সুবাতে বিভক্ত করিয়া প্রত্যেক সুবাতে নিয়মিত কর বসাইলেন এবং সুবাদারেরা নিত্য আজ্ঞাধীনে থাকে এতদর্থ প্রত্যেক সুবার সৈন্যাধ্যক্ষতার ভার অন্যান্য আমলরদিগকে অর্পণ করিলেন এবং প্রত্যেক সুবাতে রাজি মুহরির বসাইয়া তাঁহারদের দ্বারা রাজাজ্ঞা সকল সুবাদারেরদের নিকটে পাঠাইতেন। অপর রাজা স্বয়ং অথবা তাঁহার নিযুক্ত আমলারা সময়ানুসারে দায়েরসায়েরী করত প্রত্যেক সুবার তত্ত্বাবধারণ করিতেন। রাজা ও রাজপ্রতিনিধিরদের মধ্যে শীঘ্র লিখন পঠনাদি চালনার্থ এক ডাকও বসাইলেন। কিন্তু যদ্যপি ইত্যাদি নানা নিয়মের দ্বারা অতি দূর দূরান্তরীয় সুবাদারেরা রাজাজ্ঞধীনে থাকিলেন তথাপি ঐ সুবাদারেরা যেমন রাজধানীহইতে দূরস্থ তেমন তাঁহারদের বাধ্যতারও সুতরাং শৈথিল্য। রাজকর প্রায় নানা দ্রব্যেতেই আদায় কখন২ রৌপ্যাদিতে উসুল হইত। ডারায়সের রাজ্যকালেই পারসীয় রাজ্যের নিয়ম সকল সম্পন্ন হয়। তিনি খ্রীষ্টীয়ান শকের ৪৮৬ বৎসর পূর্ব্বে লোকান্তরগত হন এবং তাঁহার পুত্র প্রথম জর্কশিস সিংহাসনারোহী হইলেন তিনি কেবল রাজবাটীতে বাল্যকালবিধি বাস করত আমোদ প্রমোদব্যতিরেকে অপর কোন রাজধর্ম্ম অভিজ্ঞ ছিলেন না।

 জর্কশিসের রাজত্মকালে প্রথম কার্য্য গ্রীক দেশ জয়করণার্থ অতিপ্রসিদ্ধ উদ্যোগ হয়। গ্রীকীয়ের তাঁহার যে অতিপ্রাবল্যরূপে প্রতিবন্ধকতা করিলেন এবং পরিশেষে পারসীয় রাজা যে রূপে পরাজয় হন তাহা পূর্ব্ব অধ্যায়ে লিখিত হইয়াছে। জর্কশিসের উদ্যোগের এতদ্রূপ বৈফল্য হইলে পারসীয়েরা আর কখন গ্রীকদেশের ভূমির উপর আক্রমণ করিলেন না কিন্তু গ্রীকেরদের সঙ্গে তাঁহার নানা যুদ্ধ যাত্রাতে অনেক লোক ও ধন অপচিত হইল এবং তাহাতে পারস্য রাজ্য সুতরাং ক্ষীণ হইল। অপর জর্কশিসের পরাভব হওনের পর ত্রিশ বৎসর ব্যাপিরা গ্রীকীয়েরা নিয়ত ক্ষুদ্র আসিয়াতে স্বজাতীয়েরদের স্বাধীনতা সংস্থাপনার্থ নিয়ত পারসীয়েরদের উপর প্রতিযুদ্ধ করিলেন। এই বহুকালব্যাপক যুদ্ধেতে পারসীয় রাজ্য আরো ক্ষীণবল হইল যেহেতুক তাহারদের সামাজ্যের অতিদূর এই প্রদেশ সুরক্ষণার্থ সেইস্থানেই তাঁহারদের সৈন্য সংগ্রহকরণের আবশ্যক হইল। অপর আপনারদের অস্ত্রশস্ত্রের দ্বারা গ্রীকীয়েরদিগকে জয় করিতে না পারিয়া অর্থের দ্বারা নত করিতে উদ্যোগ করিলেন। কিন্তু নির্লিপ্‌স সিমন এক দিবসের মধ্যেই ইউরিমিডন স্থানে তাঁহারদের যুদ্ধ জাহাজ ও সৈন্যগণ বিনষ্ট করিলেন এবং থ্রাকিয়া দেশ জয়পূর্ব্বক হস্তাধীন করিয়া ইউরোপ দেশে প্রবেশার্থ চাবিস্বরূপ যে স্থান পারসীয়েরদের ছিল তাহাও বলপূর্ব্বক হরণ করিলেন। জর্কশিসের রাজ্যসময়ে অন্য কিছু বিবরণব্যক্ত নাই কেবল এই শ্রুতমাত্র যে একবিংশতি বর্ষ রাজ্য করিয়া তিনি হত হইলেন।

 তাঁহার পুত্ত্র আর্টাজর্কশিস খ্রীষ্টীয়ান শকের ৪৬৫ বৎসর পূর্ব্বে সিংহাসনারোহণ করেন। তাঁহার অতি দীর্ঘ রাজত্বকালে প্রথম পারসীয় রাজ্যের মধ্যে ক্ষয়ের লক্ষণ দৃষ্ট হইল। মিসর দেশ অবাধ্য হইয়া পারসীয় মহারাজের তাবৎ উদ্যোগের বৈফল্য করিল। সিমনের আজ্ঞাধীনে গ্রীকীয়েরা পারসীয় রাজ্যের প্রতি আক্রমণে ক্ষান্ত না হইয়া পরিশেষে আর্টাজর্কশিসের রাজ ত্বের ষোলবৎসর সময়ে অপমানসূচক এক সন্ধিপত্রে সহী করিতে হইল। তদ্দ্বারা আসিয়াস্থ গ্রীকীয়েরদের স্বাধীনতা স্বীকার করিলেন এবং ইজিয়ান সমুদ্রে আপনার জাহাজ না চালাইতে এবং ঐ তটের নিকটে তিন দিবসের পথ থাকিতে স্বীয় সৈন্য না লইয়া যাইতে অঙ্গীকার করিলেন। তাহার দুই বৎসর পরে সুরিয়া দেশের সুবাদার মেগবৈশিস অবাধ্য হইয়া রাজবিদ্রোহচরণ করত রাজপরাক্রম একেবারে অবহেলিত করিলেন। সুবাদারেরদের মধ্যে যে ব্যক্তি প্রথমতঃ অবাধ্য হইয়া রাজবিদ্রোহ ব্যাপারকরণে কৃতকার্য্য হইলেন সে ইনিই এবং রাজার দৌর্ব্বল্য দৃষ্টে অন্যান্য সুবাদারেরদেরও তদনুরূপ কার্য্য করিতে প্রবােধ জন্মিল। আর্টাজর্কশিস চল্লিশ বৎসরপর্য্যন্ত রাজ্যকরণানন্তর লোকান্তরগত হইলেন।

 তাঁহার যেমন মৃত্যু হইল অমনি দুর্ঘটনা উপস্থিত হই তে লাগিল। তাঁহার পুত্ত্র অথচ উত্তরাধিকারী দ্বিতীয় জর্কশিস পঁয়তাল্লিশ দিবস রাজ্যকরণানন্তর স্বীয় জারজ ভাতা সগডিয়ানসকর্ত্তৃক হত হইলেন এবং তিনিও ছয় মাস রাজ্যকরণোত্তর অন্য এক জারজ ভ্রাতা ওখশকর্ত্তৃক হত হইলেন। তাহাতে ওখস দ্বিতীয় ডারায়স অর্থাৎ ডারায়স নোথস নাম গ্রহণপূর্ব্বক সিংহাসনারোহণ করিয়া ঊনিশ বৎসরপর্য্যন্ত রাজা করিলেন কিন্তু তিনি তিন জন খোজার অতিবাধ্য ছিলেন। তৎসময়ে রাজ্য ক্ষয়ের উত্তরোত্তর বৃদ্ধি হইতে লাগিল। প্রথম ডারায়সের অতি বিলক্ষণ নিয়মব্যতিক্রম করিয়া নানা সুবার যুদ্ধসম্পর্কীয় ক্ষমতা সুবাদারেরদিগকেই অর্পণ করিলেন এবং তাহা তাঁহারদিগকে স্বাধীনতার উপায় দেওয়াই হইল। অতএব তাঁহারা বার২ আজ্ঞানধীন হইলেন ও রাজমন্ত্রিরা তাঁহারদের দমনে অশক্ত হইয়া গােপনে তাঁহারদিগকে হত করিতে লাগিলেন তদ্দ্বারা রাজার আরো অপমান হইল। পরে মিসর দেশ তৃতীয় বার অবাধ্য হইয়া পারসীয় অধ্যক্ষেরদিগকে দেশবহিষ্কৃত করিলেন। ফলতঃ এই মহাপারসীয় রাজ্যের তাবৎ নিয়ম এমত বিশৃঙ্খল হইল যে গ্রীকীয়েরা তৎসময়েই যদি উন্মত্তারূপে পেলোপেনিসসের যুদ্ধে প্রবর্ত্ত না হইতেন এবং আপনারদের মধ্যে পরস্পর যুদ্ধ না করিতেন তবে তাহারা পারসীয় রাজার তৎসামিয়ক দৌর্ব্বল্য সুযোগে রাজসিংহাসন বিনষ্ট করিতে পারিতেন। দ্বিতীয় ডারায়স খৃীষ্টীয়ান শকের ৪০৫ বৎসর পূর্ব্বে লোকান্তরগত হইলে তাঁহার পুত্র দ্বিতীয় আর্টাক জর্কশিস তাঁহার উত্তরাধিকারী হইলেন।

 আর্টাকজর্কশিস সিংহাসন আরোহণ করিবামাত্র তাঁহার কনিষ্ঠ ভ্রাতা কোরস সিংহাসন প্রাপণবিষয়ে বিবাদী হইলেন। তাহাতে কোরসের মাতা পারিসাটিস ও এক দল গ্রীকীয়েরা তাঁহার পৌষ্টিকতা করেন। অপর কোরস সসৈন্যে আপন ভ্রাতার সঙ্গে যুদ্ধকরণার্থ অগ্রসর হই লেন কিন্তু খুীষ্টীয়ান শকের পূর্ব্বে ৪০১ বৎসর ক্যুনাকসাঁ স্থানে পরাভূত হইয়া হত হইলেন। ঐ রণস্থলহইতে তাঁহার বেতনভোগি দশসহস্র গ্রীকীয়েরদের চিরস্মরণীয় প্রত্যাগমন বিবরণ পূর্ব্বে লিখিত হইয়াছে। ইহার পর পারসীয় রাজা গ্রীকীয়েরদিগকে অর্থ প্রদানের দ্বারা ঘরে২ পরস্পর যুদ্ধ করাইতে অধিক যত্নবান্ হইলেন কিন্তু স্পার্টার রাজা আগেসিলাস পারসীয় স্রাম্রাজ্য বিনষ্ট করিতে এক মহােদ্যোগমাত্র অপেক্ষা ইহা বিলক্ষণ রূপে অবগত হইয়া আপনার অতিসাহসিক যােদ্ধারদের সমভিব্যাহারে তদ্দেশের নাভিপর্য্যন্ত গমন করিলেন কিন্তু পারসীয় রাজা অতিকৌটিল্য ব্যবহার করিয়া মেলা ঘুস ঘাস দিয়া গ্রীকদেশের মধ্যে আন্তরিক যুদ্ধ ঘটাইলেন এবং আথেন্‌সীয় সেনাপতি কোনন্‌কে সপক্ষ করিয়া গ্রীকীয়েরদের তাবৎ ব্যাপারের এমত রূপান্তর করিলেন যে তদ্বারা আগেসিলাসের পারসীয় দেশহইতে হঠিয়া যাইতে হইল। তাহাতে যে আর্টাকজর্কশিস ইহার কিঞ্চিৎ পূর্বে স্বীয় সিংহাসনে কম্পমান ছিলেন তিনি একেবারে গ্রীকদেশের শালিস হইয়া বসিলেন এবং আণ্টাল কিডাসনামে বিখ্যাত যে অত্যপমানজনক সন্ধিপত্র তাহাতে গ্রীকীয়েরদের সহী করাইলেন। তাহাতেই গ্রীকীয়েরা আসিয়াস্থিত স্বজাতীয়েরদিগকে একেবারে পারসীয়েরদের মুখেই ছাড়িয়া দিলেন। এই কুব্যাপার খ্রীষ্টীয়ান সকের ৩৮৭ বৎসর পূর্ব্বে হয় অর্থাৎ ঐ গ্রীকীয়েরদের স্বাধীনতা সংস্থাপনের বাষট্টি বৎসর পরে। তাহার কিঞ্চিদনন্তর পারসীয় রাজ্য আন্তরিক বিবাদে বিদীর্ণ হইল এবং ভারতবর্ষীয় রাজ্যের বিনাশ সময়ে যদ্রূপ হইয়া থাকে তদনুরূপ পারসীয় রাজ্যে ঘটিল অর্থাৎ রাজকীয় ক্ষমতা এককালে হেয়জ্ঞান করিয়া এক সুবাদার অনা সুবাদারের সঙ্গে যুদ্ধ করিতে লাগিলেন এবং রাজার নিজ দরবারের মধ্যেও নানা ষড়যন্ত্র ও রক্তপাতপর্য্যন্ত হইতে লাগিল। পরে রাজার পতনীজাত তিন পুত্ত্রের মধ্যে রাজ্যের উত্তরাধিকারিত্ববিষয়ক বিবাদ উপস্থিত হওয়াতে জ্যেষ্ঠ পুত্র ডারায়স হত হন। এবং রাজ্যের পশ্চিমাংশে অবাধ্যতার ধ্বজা উত্থাপিত হইল এবং ক্ষুদ্র আসিয়ার তাবৎ সুবাদার ও স্পার্টারা সেই স্থানে মিলিলেন কিন্তু তাঁহারদের প্রধান কর্ত্তা ওরণ্টিসের বিশ্বাসঘাতকতাপ্রযুক্ত তাঁহারদের সমুদায় কল্পনা বিফল হইল।

 এই সকল বিসম্বাদের সময়ে আর্টাকজর্কশিস্ তেতাল্লিশ বৎসর রাজ্য করিয়া লোকান্তর প্রাপ্ত হন এবং তাঁহার পুত্র তৃতীয় আর্টাকজর্কশিস্ উত্তরাধিকারিত্বক্রমে সিংহাসনাধিরূঢ় হইয়া খৃীষ্টীয়ান শকের ৩৬২ বৎসর অবধি ৩৩৮ বৎসরপর্য্যন্ত চব্বিশ বৎসর রাজ্য করেন। যদ্যপি রাজ্য আরম্ভ সময়ে তৎকর্ত্তৃক তাবৎ রাজবংশ্য হত হন তথাপি তিনি অতি প্রাবলরূপে রাজ্য শাসন করিয়া নানা উপদ্রব শান্তি করিলেন। এবং মিসর দেশ পুনর্জয়করণপূর্ব্বক রাজ্যের পূর্ব্বকালীন যে সীমা ছিল তৎপর্য্যন্ত সংস্থাপন করিলেন। পরিশেষে বাগোআস নামক নপুংসক তাঁহাকে বিষের দ্বারা হত করিয়া রাজার কনিষ্ঠ পুত্র আর্শিষকে এই অভিপ্রায়ে সিংহাসনারােহী করিলেন যে তাঁহার নামে আমি রাজ্য করিব। কিন্তু আর্শিষকে অবাধ্য দেখিয়া দুই বৎসরের পর তাঁহাকেও বিনষ্ট করিলেন এবং তাঁহার পরিবর্ত্তে তাঁহার এক জন সামান্য কুটুম্ব ডারায়স কদমানসকে সিংহসিনারূঢ় করিলেন তিনি সিংহাসন প্রাপ্তিমাত্রই ঐ দস্যু বাগোআসকে হত করেন।

 ডারায়স পূর্ব্ব২ রাজারদের ন্যায় বাল্যবিস্থা অবধি অন্তঃপুরে না থাকনপ্রযুক্ত এমত শক্তি দর্শাইলেন যে বহু কালাবধি পারসীয় রাজ্যের মধ্যে কোন রাজারি তাদৃশ শক্তি দৃষ্ট হইল না। কিন্তু তাঁহার রাজত্বের দ্বিতীয় বৎসরে সেকন্দরশাহ তাঁহার উপর আক্রমণ করেন এবং তাঁহার অতিশীঘ্র ঈদৃশ বােধােদয় হয় যে এমত বিক্রান্ত বিপক্ষের সঙ্গে যুদ্ধ করিতে হইলে এই জীর্ণ রাজ্য উদ্ধারকরণ অসাধ্য হইবে। তাঁহার বিলপনীয় মৃত্যু বিবরণ সেকন্দর শাহের পরমায়ুর বৃত্তান্তে পূর্ব্বে লিখিত হইয়াছে। অপর আড়বেলার যুদ্ধেতে এবং পারস্যপোলি নগর দাহেতে পূর্ব্বদেশীয় তাবৎ লোকেরদের এমত জ্ঞান হইল যে পারসীয় রাজ্যস্বরূপ সূর্য্য এইক্ষণে অস্ত হইয়া অন্যান্য রাজ্যরূপ সূর্য্যের উদয় হইল।

THE PERSIAN EMPIRE.

 Although the history of the Persian empire is closely interwoven with that of Greece, yet a distinct notice of the principal events which transpired between the age of Cyrus, its first, and Darius, its last monarch, appears necessary to afford the mind a clear view of the progress of events.

 The life and actions of Cyrus, the founder of this monarchy, have been already noticed in detail; and it may therefore be sufficient to remark that he was slain in battle with the wild Tartars, 529 years B. C. and left to his son and successor Cambyses the largest empire which had till that age been known in the world. Cambyses turned his arms against Africa and subdued both Egypt and Lybia, which became provinces of the Persian empire. He treated the sacerdotal class, the brahmuns of Egypt, with peculiar hostility, in as much as they appeared the chief opponents of a foreign rule, under which their privileges were in danger of being annihilated. He is represented in history as a monster of cruelty; but it must be remembered that the records of his life were derived from the Egyptian priests whom he had persecuted, and are therefore to be received with considerable deductions. A spurious Smerdis, (the name of the king's brother) was set up by the Magi, in the pursuit of whom Cambyses fell by an accident, after a reign of seven years and a half. The Pseudo Smerdis had been seated on the throne only eight months when seven of the chief Persian nobles, unable to brook a Median rule, conspired against and slew him. It was during this period that the arts and civilization of the Medians were introduced among the wandering tribes of Persia, who began now to settle in fixed habitations, and to erect cities which speedily vied in magnificence with the most splendid cities in the world.

 The seven nobles assembled to choose a sovereign, and after a most extraordinary debate raised Darius, the son of Hystaspes to the throne, who, to strengthen his interest, married two of Cyrus's daughters. The reign of Darius, which lasted thirty-six years, was remarkable both for the conquests he made and the improvements which he introduced into the Persian government. His first great expedition was against the Scythians lying north of the Black Sea; but he was obliged to make a disgraceful retreat. To compensate for this loss, he pushed his arms into Europe, where, after having established himself in Thrace and Macedon, he obtained a firm footing. Meanwhile at the distance of more than two thousand miles from Europe, a Greek in Persian pay sailed on a voyage of discovery down the Indus; the highlands north of that river were soon after subjected to the Persian sway, and that river became the eastern boundary of the empire.

 But the most important event in the reign of Darius was his quarrel with the Greeks, by which a lasting hatred was implanted in the minds of the two nations, extinguished only by the entire overthrow of Persia. The Grecian colonies in Asia Minor revolted; the Persian armies were sent to subdue them. Miletus, the capital of Ionia, the third commercial city in the world, the rival of Tyre and Carthage, fell into the hands of the Persians. How the Athenians revenged themselves by the burning of Sardis, how Darius invaded Greece by the northern, or mountainous route and failed, how in the next year, he sailed directly to the coasts of Greece and saw his armies defeated on the plains of Marathon, we have already related in the Grecian History. After this defeat he used every effort to repair the disgrace, but died before his preparations for a new campaign were complete.

 It was during his reign that the internal government of Persia assumed a regular form. He divided the empire into twenty satrapies, and imposed a regular tribute on each. To keep the satraps or soobadars in cheek, the military command was confided to other officers; royal secretaries were also appointed in each province, through whom the King's commands were communicated the soobadars; periodical visits were paid either by commissioners appointed from Court or by the King himself. A post was also established for the early transmission of intelligence between the sovereign and his deputies. Though the governors of distant provinces were retained in obedience by these various arrangements, still their submission was necessarily weak in proportion to their distance from the centre of authority. Tribute was collected mostly in kind, sometimes in precious metals uncoined. It was during the reign of Darius that the Persian Government attained its complete form. He died in the year 486 B. C. and was succeeded by his son Xerxes I, who, having been educated only at the Court, knew nothing of government beyond its idle promp.

 The first event of his reign was the celebrated attempt to subjugate Greece. The noble stand made by the Greeks, and the final discomfiture of the Persian monarch, have been detailed in the preceding pages. This unsuccessful enterprise of Xerxes put an end to all farther attempts of the Persians upon the soil of Greece; but his expeditions contributed much to weaken the Persian monarchy by draining it of men and money. For thirty years after the defeat of Xerxes, the Greeks continued to attack the power of Persia with the view of securing the independence of their fellow-countrymen in Asia Minor. This long protracted war served still farther to debilitate the Persians, who were obliged to concentrate their forces for the defence of a distant province of the empire. Unable to subdue the Greeks by arms, the Persian king at length endeavoured to corrupt them by gold, but the incorruptible Cimon, in one single day destroyed both his fleet and his army at Eurymedon, and by the conquest of the Thracian Chersonesus wrested from him the key of Europe. Little farther is known of Xerxes, except that he was murdered after a reign of twenty-one years.

 Artaxerxes, his son, ascended the throne B. C. 465. It was during his long reign that the first symptoms of decay appeared in the Persian empire. Egypt revolted, and baffled all the power of the great King. The Greeks under Cimon continued to push their conquests, and at length obliged Artaxerxes, in the sixteenth year of his reign, to sign a disgraceful treaty, by which he recognized the independence of the Asiatic Greeks and engaged not to navigate the Ægean sea, or to approach within three days’ march of the coast with his army. Megabysus, the satrap of Syria, revolted two years after this event, and set the royal authority completely at defiance. He was the first viceroy who exhibited the example of successful resistance, an example which the weakness of the throne soon tempted others to follow. Artaxerxes expired after a reign of forty years.

 His death became the signal for disturbances; his legitimate son and successor Xerxes II. was destroyed after a reign of forty-five days, by his bastard brother Sogdianus, who in his turn, was murdered by another bastard brother Ochus, after having reigned six months. Ochus ascended the throne under the title of Darius II. or Darius Nothus. He reigned nineteen years, but was entirely under the dominion of three eunuchs. The decline of the empire now advanced with rapid strides. The military command of the different provinces, contrary to the wise regulation of the first Darius, was confined to the satraps, which was in fact putting into their hands the means of independence. They revolted accordingly more than once, and the court, having no power to oppose to them, was obliged to have recourse to the baseness of assassination, which served to bring the government into still deeper disrepute. Egypt revolted a third time and expelled its Persian rulers from the soil. In fact the whole policy of this vast empire fell into such derangement, that if the Greeks had not at this juncture madly engaged in the Peloponnesian war and turned their arms against each other, they might have improved the opportunity of its weakness and subverted the Persian throne. Darius II. died B. C. 405, and was succeeded by his son Artaxerxes II.

 Immediately on his accession to the throne, it was disputed with him by his younger brother Cyrus, who was upheld by his mother Parysatis, and supported by a body of Greeks. Cyrus advanced with his army to meet his brother, but was defeated and slain at the battle of Cunaxa, B. C. 401. The ever memorable retreat of the ten thousand Greeks in his pay has been already recorded. The Persian Monarch after this, redoubled his efforts to bribe the Greeks and set them against each other; but Agesilaus the Spartan King, convinced that one bold effort alone was necessary to overturn the Persian monarchy, advanced with his hardy warriors into the heart of the country; the insidious policy of Persia, however, by a liberal distribution of bribes, fomented a war in Greece, secured Conon the Athenian as an ally, and so completely turned the tables on the Greeks, that Agesilaus was obliged to retire, and Artaxerxes, who not long before trembled on his throne, became the arbiter of Greece, and dictated the disgraceful peace of Antalcidas, by which the Greeks abandoned their Asiatic brethren to the Persians, B. C. 387, just sixty-two years after their independence had been achieved. The Persian empire was soon after torn with internal dissensions, and exhibited a state of things similar to that which has been so often seen in Indian monarchies when they approach the period of their downfal. Regardless of the imperial authority, satrap made war on satrap, and the court itself became the theatre of intrigue and bloodshed. A quarrel about the succession arose among the three legitimate sons of the King, of whom Darius, the eldest, was put to death. The standard of revolt was raised in the western division of the empire, and all the soobadars of Asia Minor as well as the Spartans joined it: but their designs were defeated by the treachery of the chief leader, Orontes.

 In the midst of these commotions Artaxerxes died, after a long reign of forty-three years, and was succeeded by his son Artaxerxes III. who reigned twenty-four years from B. C. 362 to 338. Although he commenced his reign by putting the royal family to death, he manifested much vigour in his administration, quelled several insurrections, subdned Egypt and restored the empire to its ancient limits. He was at length poisoned by Bagoas the eunuch, who raised to the throne the King's youngest son Arces, in whose name he hoped to govern; but finding this monarch untractable, he removed him out of the way by death within two years, and substituted in his stead a distant relative of the King, Darius Coddomanus, who signalized his accession to the throne by putting the wretch to death.

 Darius not having been educated like his predecessors in the seraglio, gave proof of more vigour than had been seen for a long time on the throne of Persia. But in the second year of his reign he was attacked by Alexander the Great, and found himself totally unable to re-establish in the face of such a foe, a kingdom so completely decayed. His tragical death has been noticed in the History of Alexander. The battle of Arbela and the burning of Persepolis now proclaimed to the Eastern world that the sun of the Persian empire had set, and that the East must acknowledge a new class of masters.