আন্-মনা

আন্-মনা গো, আন্‌-মনা,
তোমার কাছে আমার বাণীর মালাখানি আন্‌বো না।
বার্ত্তা আমার ব্যর্থ হবে, সত্য আমার বুঝ্‌বে কবে?
তোমারো মন জান্‌বোনা,
আন্-মনা গো আন্-মনা।
লগ্ন যদি হয় অনুকূল মৌন মধুর সাঁঝে
নয়ন তোমার মগ্ন যখন ম্লান আলোর মাঝে,
দেবো তোমায় শান্তসুরের সান্ত্বনা
আন্-মনা গো আন্-মনা॥


জনশূন্য তটের পানে ফির্‌বে হাঁসের দল;
স্বচ্ছ নদীর জল
আকাশ পানে র’ইবে পেতে কান,
বুকের তলে শুন্‌বে ব’লে গ্রহতারার গান;
কুলায়-ফেরা পাখী
নীল আকাশের বিরামখানি রাখ্‌বে ডানায় ঢাকি’;
বেণুশাখার অন্তরালে অস্তপারের রবি
আঁক্‌বে মেঘে মুছ্‌বে আবার শেষ বিদায়ের ছবি;

স্তব্ধ হবে দিনের বেলার ক্ষুব্ধ হাওয়ার দোলা,
তখন তোমার মন যদি রয় খোলা;—
তখন সন্ধ্যাতারা
পায় যদি তা’র সাড়া
তোমার উদার আঁখি-তারার পারে;
কনক চাঁপার গন্ধ-ছোঁওয়া বনের অন্ধকারে
ক্লান্তি-অলস ভাব্‌না যদি ফুল-বিছানো ভুঁয়ে
মেলিয়ে ছায়া এলিয়ে থাকে শুয়ে;
ছন্দে গাঁথা বাণী তখন পড়্‌বো তোমার কানে
মন্দ মৃদুল তানে,
ঝিল্লি যেমন শালের বনে নিদ্রা-নীরব রাতে
অন্ধকারের জপের মালায় একটানা সুর গাঁথে।
এক্‌লা তোমার বিজন প্রাণের প্রাঙ্গণে
প্রান্তে ব’সে একমনে
এঁকে যাবো আমার গানের আল্‌পনা,
আন্‌-মনা গো আন্‌-মনা।


আণ্ডেস্ জাহাজ, ১৮ অক্টোবর, ১৯২৪।