চঞ্চল

হায়রে তোরে রাখ্‌বো ধ’রে,
ভালোবাসা,
মনে ছিল সেই দুরাশা।
পাথর দিয়ে ভিত্তি ফেঁদে
বাসা যে তোর দিলেম বেঁধে
এলো তুফান সর্ব্বনাশা।
মনে আমার ছিল যে রে
ঘিরবো তোরে হাসির ঘেরে;—
চোখের জলে হ’লো ভাসা।
অনেক দুঃখে গেছে বোঝা
বেঁধে রাখা নয় তো সোজা,
সুখের ভিতে নহে তোমার
অচল বাসা॥

এবার আমি সব-ফুরানো
পথের শেষে
বাঁধ্‌বো বাসা মেঘের দেশে।
ক্ষণে ক্ষণে নিত্য নব
বদল কো’রো মূর্ত্তি তব
রঙ্-ফেরানো মায়ার বেশে।

কখনো বা জোৎস্না-ভরা
কখনো বা বাদল-ঝরা
খেয়াল তোমার কেঁদে হেসে।
যেই হাওয়াতে হেলাভরে
মিলিয়ে যাবে দিগন্তরে
সেই হাওয়াতেই ফিরে ফিরে
আস্‌বে ভেসে॥

কঠিন মাটি বানের জলে
যায় যে ব’য়ে,
শৈল-পাষাণ যায় তো ক্ষ’য়ে।
কালের ঘায়ে সেই তো মরে
অটল বলের গর্ব্ব-ভরে
থাক্‌তে যে চায় অচল হ’য়ে।
জানে যারা চলার ধারা
নিত্য থাকে নূতন তা’রা,
হারায় যারা র’য়ে র’য়ে।
ভালোবাসা, তোমারে তাই
মরণ দিয়ে বরিতে চাই,
চঞ্চলতার লীলা তোমার
রইবো স’য়ে॥


বুয়েনােস্ এয়ারিস্, ১০ ডিসেম্বর, ১৯২৪।