পূরবী/পথিক/প্রবাহিণী

প্রবাহিনী

দুর্গম দূর শৈল-শিরের
স্তব্ধ তুষার নই তো আমি;
আপ্‌না-হারা ঝর্‌না-ধারা
ধূলির ধারায় যাই যে নামি’
সরোবরের গম্ভীরতায়
ফেনিল নাচের মাতন ঢালি;
অচল শিলার ভ্রূ-ভঙ্গিমায়
বাজাই চপল করতালি।
মন্দ্র-সুরের মন্ত্র শুনাই
গভীর গুহার আঁধার তলে,
গহন বনের ভাঙাই ধেয়ান
উচ্চ হাসির কোলাহলে।
শুভ্র ফেনের কুন্দ-মালায়
বিন্ধ্যগিরির বক্ষ সাজাই,
যোগীশ্বরের জটার মধ্যে
তরঙ্গিণীর নূপুর বাজাই।

বৃদ্ধ বটের লুব্ধ শিকড়
আমার বেণী ধরিতে চায়;
সূর্য্য-কিরণ শিশুর মতন
অঙ্ক আমার ভরিতে চায়।
নাই কোনো মোর ভয়-ভাবনা,
নাই কোনো মোর অচল রীতি
গতি আমার সকল দিকেই,
শুভ আমার সকল তিথি।
বক্ষে আমার কালোর ধারা,
আলোর ধারা আমার চোখে
স্বর্গে আমার সুর চ’লে যায়,
নৃত্য আমার মর্ত্ত্যলোকে।
অশ্রু-হাসির যুগল ধারা
ছোটে আমার ডাইনে বামে।
অচল গানের সাগর-মাঝে
চপল গানের যাত্রা থামে।


বুয়েনােস্ এয়ারিস্, ১১ ডিসেম্বর, ১৯২৪।