প্রভাতী

চপল ভ্রমর, হে কালো কাজল আঁখি,
খনে খনে এসে চ’লে যাও থাকি থাকি।
হৃদয় কমল টুটিয়া সকল বন্ধ
বাতাসে বাতাসে মেলি’ দেয় তার গন্ধ,
তোমারে পাঠায় ডাকি’,
হে কালো কাজল আঁখি॥


যেথায় তাহার গোপন সোনার রেণু
সেথা বাজে তার বেণু;
বলে, এসো, এসো, লও খুঁজে লও মোরে,
মধু সঞ্চয় দিয়ো না ব্যর্থ ক’রে,
এসো এ-বক্ষ মাঝে,
কবে হবে দিন আঁধারে বিলীন সাঁঝে॥

দেখো চেয়ে কোন্ উতলা পবন-বেগে
সুরের আঘাত লেগে
মোর সরোবরে জলতল ছল-ছলি’
এ-পারে ও-পারে করে কী যে বলাবলি,
তরঙ্গ উঠে জেগে।
গিয়েছে আঁধার গোপনে-কাঁদার রাতি,
নিখিল ভুবন হের’ কী আশায় মাতি’
আছে অঞ্জলি পাতি’॥


হের গগনের নীল শতদলখানি
মেলিল নীরব বাণী।
অরুণ-পক্ষ প্রসারি’ সকৌতুকে
সোনার ভ্রমর আসিল তাহার বুকে
কোথা হ’তে নাহি জানি॥


চপল ভ্রমর, হে কালো কাজল আঁখি,
এখনো তোমার সময় আসিল না কি?
মোর রজনীর ভেঙেছে তিমির বাঁধ
পাওনি কি সংবাদ?

জেগে-ওঠা প্রাণে উথলিছে ব্যাকুলতা,
দিকে দিকে আজি রটেনি কি সে বারতা?
শোনোনি কী গাহে পাখী?
হে কালো কাজল আঁখি॥


শিশির - শিহরা পল্লব ঝলমল,
বেণু শাখাগুলি খনে খনে টল মল,
অকৃপণ বনে ছেয়ে গেলো ফুল দল
কিছু না রহিল বাকি।
এলো যে আমার মন-বিলাবার বেলা,
খেলিব এবার সব-হারাবার খেলা,
যা-কিছু দেবার রাখিব না আর ঢাকি’,
হে কালো কাজল আঁখি॥


বুয়েনােস্ এয়ারিস্, ১ ডিসেম্বর, ১৯২৪।