পূর্ব্ববঙ্গ-গীতিকা (দ্বিতীয় খণ্ড, দ্বিতীয় সংখ্যা)/শান্তি

৪। শান্তি ও নীলা। (১২১—১৪৮ পৃঃ)

 ‘শান্তি’ পালাটি ১৯২৫ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে আমাদের অন্যতম সংগ্রাহক মুন্‌সী জসীমুদ্দীন কর্ত্তৃক ফরিদপুর জেলার পিয়ারপুর গ্রামের এছেম খাঁ নামক পঞ্চাশৎবর্ষীয় একজন নিরক্ষর মুসলমানের নিকট হইতে সংগৃহীত হয়। পালাটি একশত পঁচিশ ছত্রে সমাপ্ত। ভণিতায় জয়ধর বাণিয়া নামক এক ব্যক্তি পালা রচয়িতা বলিয়া উল্লিখিত হইয়াছে। শ্রীহট্ট হইতে মহম্মদ আসর্‌ফ হোসেন এই পালাটি সামান্য পরিবর্ত্তিত একটি সংস্করণ প্রকাশিত করিয়াছেন; আসর্‌ফ হোসেন জয়ধর বাণিয়াকে শ্রীহট্টবাসী বলিয়াছেন। কিন্তু জয়ধর বাণিয়া এই পালার আদি-রচয়িতা না হইতেও পারেন। পালাটি বিভিন্ন নামে বহুস্থানে প্রচলিত ছিল, এই পুস্তকে প্রকাশিত ‘নীলার বারমাসী’ পালাটিও ইহা হইতে অভিন্ন বলিয়া মনে হয়। মুসলমান গায়ক-পরম্পরা কর্ত্তৃক সংরক্ষিত হইলেও পালাটি হিন্দুভাবাপন্ন ও মূলতঃ হিন্দু কবির রচিত বলিয়া অনুমান করিবার কারণ আছে। ইহাতে দাম্পত্য বন্ধনের অনাবিল পবিত্রতা সহজ সুন্দর কবিত্বের মধ্য দিয়া প্রতিপন্ন হইয়াছে,—নায়ক নায়িকা উভয়েই হিন্দু, এবং হিন্দুর দুর্গোৎসব প্রভৃতির উপর কবির সশ্রদ্ধ উল্লেখ দৃষ্ট হয়। পালাটির বৈশিষ্ট্য, ক্ষুদ্রায়তনের মধ্যে কবির ভাব প্রকাশের অদ্ভুত ক্ষমতা; সঙ্ক্ষিপ্ত কথোপকথনের আকারে কবি অতি কৌশলে বর্ণনার বিষয়ের সঙ্কেত করিয়া গিয়াছেন। অতি শৈশবেই শান্তির যখন বিবাহ হয়, তখন স্বামীকে চিনিয়া লইবার ক্ষমতা তাহার হয় নাই, অতি অস্পষ্ট একটি স্মৃতিমাত্র তাহার মনে রহিরা গিয়াছিল। বহুবৎসরের অদর্শনের পর স্বামী তাহাকে ছলনাদ্বারা পরীক্ষা করিতে আসিয়াছেন; শান্তি তখন যৌবন সীমায় পদার্পণ করিয়াছে। কিন্তু ছলনাকারী যে শান্তির স্বামী, কবি কোথায়ও একথা স্পষ্ট করিয়া বলেন নাই; বলিলে হয়ত পালার সৌন্দর্য্য হানি হইত, শান্তিরও চরিত্রমাহাত্ম্য এরূপ উজ্জ্বল হইয়া উঠিত না। ছলনাশীল যুবক ও রঙ্গপ্রিয় স্বাধ্বীর কথোপকথনের মধ্য দিয়া এক দিকে যেমন শান্তির অটল চরিত্র মহিমা ও দৃপ্ততেজ প্রতিফলিত হইয়া উঠিয়াছে, অপর দিকে তেমনই তাহার নারীজনোচিত কমনীয় চরিত্র-মাধুর্য্য এবং রহস্যপ্রিয়তা প্রকাশ পাইয়াছে। যে ব্যক্তি শান্তিকে প্রলুব্ধ করিতে আসিয়াছিল, শান্তি তাহাকে প্রত্যাখ্যান করিয়াও একটা হাস্যোজ্জ্বল কৌতুকপ্রিয়তা দ্বারা তাহার বিফলতার কষ্ট ততটা বুঝিতে দেয় নাই। অন্যান্য সাধ্বী রমণীরা বঙ্গসাহিত্যে কখনই প্রলোভনকারীদের সঙ্গে রঙ্গরসের অবতারণা করেন নাই। এই পরিহাস অনাবিল ও পবিত্র; ইহা নির্ম্মল ঝরণার জলের মত হৃদয়ের অতিমাত্র প্রফুল্লতার পরিচয় দিতেছে; অথচ তদ্দ্বারা চরিত্র-মাহাত্ম্য অনুমাত্রও ক্ষুণ্ন হয় নাই। এই কৌতুক করিতে করিতে যখন ছলনাকারীকে শান্তি স্বামী বলিয়া চিনিতে পারিল, তখন তাঁহার পরিহাস-রসিকতা প্রকৃতই সার্থক হইল। নতুবা স্বামীর সঙ্গে অতিরূঢ় আচরণ করিলে দাম্পত্যের মর্য্যাদা শেষপর্য্যন্ত রক্ষা হইত না; ইহাতে কবির শিল্প-নৈপুণ্য অতি উৎকৃষ্টভাবে প্রদর্শিত হইয়াছে। ছলনাকারীকে যখন শান্তি স্বামী বলিয়া চিনিতে পারিল; তাঁহার তখনকার বধূজনোচিত সলজ্জ মধুরভাব এবং প্রসাধন-তৎপরতার চিত্র বাস্তবিকই বড় সুন্দর হইয়াছে।

 পালাটি ‘বারমাসী’ জাতীয়। ষড়ঋতু বাঙ্গালা দেশের প্রকৃতির উপর যে বিচিত্র পরিবর্ত্তন আনয়ন করে, সেই বিচিত্র দৃশ্যাবলী রহস্য ও স্নিগ্ধ শ্লেষের দ্বারা মধুর হইয়া এই পালাটির মধ্যে আলোক-আঁধারের সৃষ্টি করিয়াছে।

শান্তি


“ধম্মীত রাজা কাট্‌ছেন হারে দীঘি সানের বান্ধা ঘাট।
শান্তি নারী ভরবে জল কিসের চৌকিদার॥” ১২৩ পৃঃ

“একেত কার্ত্তিক হারে মাসে শান্তি আমন ধানের ক্ষীর।[]
শান্তি নারীর যৈবন দেইখে আমার প্রাণ করে অস্থির॥”

“থির কর[] থির কর হারে প্রাণরে তুমি শান্ত কর মন।
কাইল বিয়ালে[] ওই না ঘাটে তোরে দিব দরশন॥

ওঝা না জ্ঞিয়ানী নহে হারে আমি[] হইলাম গুণো বাইন্যার ঝি।
তোমার ধড়ের মদ্দি[] হইছে রোগরে ও তার আমি কর্‌ব কি?”

“জল ভর জল ভর আলো শান্তি জল ভরলো তুমি।
এঘাটে যে ভর জল ও তার চৌকিদার হৈলাম আমি॥”

“ধর্ম্মীত রাজা কাট্‌ছেন হারে দিঘী, সানের বান্দা ঘাট।[]
শান্তি নারী ভরবে জল তার কিসের চৌকিদার।”

“এমাস ভারাইল্যারে[] শান্তি না পুরিল আশ।
লব লং ছুরৎ[] ধইর‍্যা আইল আগণ মাস॥

“এহি ত আঘ্রাণ হারে মাসে শান্তি দুতীয়ার চান[]
দেখা দিয়া রাখ শান্তি আজ বৈদেশীর প্রাণ॥”
শাশুরীর শুয়াইগ্যা[১০] হারে শান্তি আমি সোয়ামীর পরাণ।
ভিন্ন দেশের সাধু দেখি আমি বাপ ভাইর সমান॥
“এও মাস ভাড়াইল্যারে শান্তি না পুরিল আশ।
লবলং ছুরৎ ধইর‍্যা কেমন আইল পৌষ মাস॥”

“এহি ত পূষ না হারে মাসে শান্তি পূষ অন্ধকারি।[১১]
আজি রিশী[১২] প্রভাতের কালে তোমার বাসর করব চুরি।[১৩]

ঘরেতে জ্বালিয়া রাখপ[১৪] আমি সস্রেক[১৫] বাতী।
দরজায় বাঁধিয়া রাখপ তোমার হস্তী গজমতী।”

“থাবায়ে[১৬] নিবাব আলো শান্তি তোমার এক সস্র বাতী।
দরজায় পাছড়ায়ে[১৭] মার্‌ব তোমার হস্তী গজমতী॥”

“পরণ বেশ পাটের হারে শাড়ী আমি কঙ্কণে জড়াব।[১৮]
খড়গ হস্তে লয়্যা আমি আজ এও রিশী পোহাব।
আজ রিশী প্রভাতের কালে যদি চোরের নাগাল পাই।
কাটিয়া তাহার ছেররে[১৯] আমি দেবীকে বুঝাই॥”[২০]

“য়্যাও[২১] মাস গ্যাল আরে শান্তি না পুরিল আশ।
লবলং ছুরৎ লয়্যা আইল মাঘ মাস॥”

এহি ত মাঘ না মাসে শান্তি কাপড় পর খাটো।
আমি আছি পান সুপারী শান্তি আঁচল পাইত্যা রাখ॥[২২]

“আইন্যা থাক পান সুপারী আমি উয়্যা[২৩] নাহি চাই।
তোমার ঘরে আছে জ্যেষ্ঠ বহিন তুমি দেওগ্যা তেনার[২৪] ঠাঁই॥”

“কি বোল বলিলা হারে শান্তি আমার অন্ত্রে দিলা কালি[২৫]
জ্যেষ্ঠ বহিন বইল্যা তুমি আমায় দিল্যা গালি।

য়্যাও মাস ভারাইল্যা আলো শান্তি না পুরিল আশ।
লবলং ছুরৎ ধইর‍্যা আইল ফাগুণ মাস॥”

“এহি না ফাল্গুন হারে মাসে শান্তি দিঘ্যান[২৬] বড় রিশি।
তোমার বাড়ী অথিত গেলি তারে, দিব্যার উচিত কি?”

“খাট দিব পালঙ্ক দিব শিয়রে বালিস।
এই কয়েক চিজ্‌ হৈলে হবে পরবাসীর[২৭] উচিত[২৮]
চাইল দিব ডাইল দিব তুমি রুসাই[২৯] কইরে খাইও।
লেপ দিব নেওয়ালী[৩০] দিব তুমি শুইয়ে নিদ্রা যাইও॥”

“য়্যাও মাস ভাড়াইল্যা হারে শান্তি না পুরিল আশ।
লববং ছুরৎ ধইরা আইল চৈত্র মাস॥”

এহিত চৈত্র মাসে না শান্তি খরার বড় তা[৩১]
শান্তি নারীর যৈবন দেইখে আমার পোড়ে সর্ব্ব গা॥

“মাও তোমার দোচারণী[৩২] বাপ তোমার হিযা[৩৩]
দরিয়াতে দাও ঝাপরে শরীর যাক্ ঠাণ্ডা হৈয়া॥”

“য়্যাও মাস ভাড়াইল্যা হারে শান্তি না পুরিল আশ।
লবলং ছুরৎ ধইরা আইল বৈশাখ মাস॥”

এহিত বৈশাখ হারে মাসে শান্তি দুগ্ধে বান্ধে সর।[৩৪]
খাও না বিলাওরে শান্তি তোমার যৈবন কাল॥”

“খেতের তরমুজ নয়রে সাধু আমি কাটিয়া বিলাব।
কোলের সন্তান নয়রে আমি এ স্তন পিলাব॥”[৩৫]

“য়্যাও মাস ভারাইল্যা হারে শান্তি না পুরিল আশ।
লবলং ছুরৎ ধইর‍্যা আইল জ্যৈষ্ঠ মাস॥

এহিত জ্যৈষ্ঠ না মাসে শান্তি গাছে পাকে আম।
ভারায় ভারায়[৩৬] আইন্যা দিব শান্তি আম কাঠাল জাম॥”

“আনছাও আনছাও[৩৭] আম হারে কাঁঠাল আমি উয়া নাহি চাই।
তোমার ঘরে আছেন জ্যেষ্ঠ বহিন তুমি দাওগা তানার ঠাঁই॥”

“কি বোল বলিলা হারে শান্তি আমার অন্ত্রে দিলা কালি।
ছোট বইন বইল্যা তুমি আমায় দিল। গালি।
“য়্যাও মাস ভারাইল্যারে শান্তি না পুরিল আশ।
লবলং ছুরৎ ধইরা আইল আষাঢ় মাস॥”

“এহি আষাঢ় হারে মাসে শান্তি গাঙে নুড়্যা[৩৮] ভাটি।
তোমার সাধু গেছে মারা কাঞ্চনপুরের ভাটি॥”

“আমার যদি সাধু হারে মরত কাঞ্চনপুরের ভাটি।
আমার আওলাইত[৩৯] মাথার ক্যাশরে[৪০] ছিড়ত গলার মোতী॥

রাম লক্ষ্মণ দুডী[৪১] শঙ্খ আমার ভাইঙ্গ্যা হৈত চুর।
আস্তে আস্তে মৈলাম হৈত শিন্তার[৪২] সিন্দুর॥”

“য়্যাও মাস ভাড়াইল্যা হারে শান্তি না পুরিল আশ।
লবলং ছুরৎ ধইর‍্যা আইল শ্রাবণ মাস॥”
“এহিত শ্রাবণ হারে মাস শান্তি ঘোলা হাটু পানি।
এঘর হৈতে ওঘর যাইতে তোরে মার্‌ব শরবাণী[৪৩]॥”

“মারিয়ারে মারিয়ারে তুই ফেইলে দাওরে জলে।
তবু না যাইব আমি বিগানার মহালে॥”[৪৪]

“য়্যাও মাস ভরাইল্যারে শান্তি না পুরিল আশ।
লবলং ছুরৎ ধইর‍্যা আইল ভাদ্র মাস॥”

“এহিত ভাদ্দর হারে মাসে শান্তি গাঙে ভরা পানি।
ষোল দাঁড়ের পান্‌সী দিব তুমি খেলাইও বাইছ্যানি[৪৫]॥”

“দ্যাওগ্যা দ্যাও ষোল দাঁড়ের হারে পানসী তোমার মাবুনীর আগে।[৪৬]
তোমার দরদের যে আছে সাধু আজ তারির মনে লাগে।”[৪৭]

“যাও মাস ভারাইল্যা হারে শান্তি না পুরিল আশ।
লবলং ছুরং ধইরা আজি আইল আশ্বিন মাস॥”

মিলন


“এহিত আশ্বিন হারে মাসে দুর্গা পূজা করে ঘরে ঘরে।
আমি আইচি তোমার সাধু আজ চিন্যা লও আমারে॥”

এ কথা শুনিয়া হারে শান্তি হেট করে মাথা।
ধর্ম্ম না বুঝিয়া[৪৮] আজ শান্তি পোছেন[৪৯] আরেক কথা॥
“কোন সহরে বাড়ী হারে তোমার সাধু কোন সহরে ঘর।
কি নাম তোমার মাতাপিতার আর কি নামডী[৫০] তোমার॥”

“বাহাটিয়া বাড়ী আমার বাহাটিয়া ঘর।
বাপ আমার কল্পতরু মাও গণেশ্বর॥
পেরথম কার্ত্তিক মাসে শান্তি বিয়া করছি তোরে।
হাউস কইরে নাম রাইখ্যাছে আমার তিল্যাম সওদাগরে[৫১]॥”

“যদি আইস্যা থাক মোর হারে সাধু তুমি থাকরে ঐখানে।
আমি বাড়ী যাইয়া শুইন্যা আসি আমার মা বাপের জবানে।”
“কি কররে বের্‌ধ[৫২] মা বাপ কি কর বসিয়ে।
কার বা খাইছাও টাকাকড়ি মাধন কারছুন[৫৩] দিছাও বিয়ে॥”

“বার না বচ্ছরের হারে শান্তি তের নাহি পোরে।
আজ যৈবনের ভারেতে শান্তি তুমি জামাই বল কারে॥”

হাতে নয়ে খৈল খরসী[৫৪] মাথায় তৈলের বাটী।
হেলিতে দুলিতে চলে আজ জামাই চিন্‌তি।

“চিন্যাছি চিন্যাছি হ্যারে শান্তি তোমার নিজ পতি।
আওগাইয়া[৫৫] লওগ্যা শান্তি আজ গলার গজমতি॥
বাইর কর বেসরের ঝাপি শান্তি খোলরে ঢাকিনী।
দুই হস্তে বাহিয়া নাওলো আজ আবের চিরুণ খানি॥”

চেরণে চিরিয়া হারে কেশরে শান্তি বায়[৫৬] বান্ধিল খোপা।
খোপার উপর তুইল্যা থুইল আজ গঞ্জল আলো চাঁপা॥
সিত্যা পাটী চন্দ্রহাররে গলায়ে হাসুলী।
তার বালা বাজুবন[৫৭] আজি পায়েতে পাশলী॥
শিন্তাতে[৫৮] সিন্দুর হারে নৈল নয়ানে কাজল।
চরণে নুপূর নৈল আজ কোমরে ঘাগর॥
বাহু চায়্যা নৈল হারে এনা জোড় তাড়।
গলেতে তুলিয়া লইল আজ মোতীর হার॥
সোয়ামীর আগে যায়রে হায়রে ঠারে শান্তি না সুন্দরে।
চল চল আমার সাধু আমরা যাই বাসর ঘরে॥

  1. আমন ধানের ক্ষীর, = কার্ত্তিক মাসে নবান্ন ও গুড় দিয়া কৃষকেরা একরূপ ক্ষীর প্রস্তুত করে, তাহা যেরূপ মিষ্ট, শান্তির যৌবন তেমনই প্রীতিদায়ক। তাহা দেখিয়া আমার মন চঞ্চল হয়।
  2. থির কর = স্থির কর।
  3. বিয়ালে = বিকাল বেলায়।
  4. ওঝা ... আমি = আমি ওঝা। পণ্ডিত, উপাধ্যায় অথবা জ্ঞানী (জ্ঞিয়ানী) নহি।
  5. ধড়ের মদ্দি = দেহের মধ্যে।
  6. ধম্মী ... ঘাট = ধর্ম্মশীল রাজা দীঘি কাটিয়াছেন, এবং তাহার ঘাট পাথরে বাঁধিয়া দিয়াছেন। আমি শান্তি তাহাতে জল ভরিব—চৌকিদার আবার কি করিতে আসিবে?
  7. ভারাইল্যা = প্রবঞ্চনা করিলে।
  8. লবলং ছুরৎ = নূতন রং ও রূপ লব লং = নব রং।
  9. দূতীয়ার চান = তুমি দ্বিতীয়ার চন্দ্রের মত।
  10. শাশুরীর শুয়াইগ্যা = শ্বাশুড়ীর সোহাগী।
  11. পূষ অন্ধকারী = পৌষের কোয়াসা।
  12. রিশি = নিশি।
  13. বাসর করব চুরি = তোমার বাসরে (শয্যা গৃহে) চুরি করিয়া প্রবেশ করিব।
  14. রাখ্‌প = রাখিব।
  15. সস্রেক = সহস্রেক।
  16. থাবায়ে = থাবা দিয়া।
  17. পাছড়ায়ে = আছাড় মারিয়া।
  18. কঙ্কণে জড়াব = পরিবার শাড়ীর আঁচল দিয়া আমার কঙ্কণ জড়াইব যাহাতে কোন শব্দ হইতে না পারে। C.F. “মঞ্জীর চীরহি ঝাঁপি।” গোবিন্দ দাস। কঙ্কণের স্থানে মঞ্জীর—এই তফাৎ।
  19. ছেররে = ছের অর্থ শির; রে, পাদপূরণে।
  20. দেবীকে বুঝাই = দেবীকে উপহার দিব, বুঝাই = বুঝাইয়া দিব।
  21. য়্যাও = এও
  22. শান্তি সাধুকে বলিল, “তুমি পরের নারীকে পান সুপারী দিতে চাও। তোমার নিজের বোনকে দাও না কেন?”
  23. উয়্যা = উহা।
  24. তেনার = তাহার।
  25. অস্ত্রে ... কালি = মনে বড় ব্যথ্যা দিলে।
  26. দিঘ্যান = দীর্ঘ।
  27. পরবাসী = প্রবাসী।
  28. উচিত = যোগ্য।
  29. রুসাই =রান্না, পাক।
  30. নেওয়ালী = তোষক (?)
  31. খরার বড় তা = রৌদ্রের অত্যন্ত উত্তাপ।
  32. দোচারিণী = দ্বিচারিণী, কুলটা।
  33. হিযা = হিজা বা হাজাম; পুরুষত্ববিহীন, ক্লীব।
  34. দুগ্ধে ... সর। বৈশাখ দুধের সর খুব ভাল জমে, তোমার যৌবন তেমনই লোভনীয় হইয়াছে।
  35. পিলাব = পান করাইব। এই সকল ছত্র পড়িয়া ময়নামতীর গানের “ধর্ম্ম ঘটী যৌবন আমি কেমনে রাখিব” প্রভৃতি ছত্র মনে পড়িবে।
  36. ভারায় ভারার = ভারে ভারে।
  37. আনছাত আনছাও = আনিয়া থাক। (এনেছ এনেছ)।
  38. নুড়্যা = জোরের; খরতর। ‘নোড়’ শব্দ পূর্ব্ববঙ্গে দৌড়ান অর্থে ব্যবহৃত হয়; পুরাতন বাঙ্গালায় ‘বড়, রহড়’ প্রভৃতি শব্দও পাওয়া যায়। সুতরাং ‘নুড়্যা ভাটি’ শব্দে খুব জোরে ভাটিকে বুঝাইতেছে।
  39. আওলাইত= আলুলায়িত হইত; খসিয়া যাইত।
  40. ক্যাশ = কেশ।
  41. দুডি = দুটি। ময়নামতী গানে ও আমরা রাম লক্ষ্মণ শাঁখার উল্লেখ পাইতেছি।
  42. শিন্তার = সিঁথির।
  43. শরবাণী = চেঙ্গা; ছোট লাঠি।
  44. বিগানের মহালে = অনাত্মীয়ের অন্তঃপুরে।
  45. বাইছানি = নৌকা বাইছ।
  46. মা বুনীর আগে = তোমার মাতা ও বহিনকে।
  47. তোমার দরদের—লাগে = তোমার ব্যথিতা প্রেমিকা। যে আছে, তারই মন পাইবার জন্য এ সকল দাও গে।
  48. ধর্ম্ম সাক্ষ্য করিয়া।
  49. পোহেন = জিজ্ঞাসা করেন।
  50. নামডী = নামটি।
  51. তিল্যাম সওদাগরে = সখ করিয়া আমার নাম তিল্যাম সওদাগর রাখা হইয়াছে।
  52. বেরধ = বৃদ্ধ।
  53. কারছুন = কার কাছে। মা তুমি কার নিকট টাকা লইয়া আমাকে বিয়া দিয়াছ? মাধন = মাতার প্রতি প্রীতি বাচক সম্বোধন।
  54. খরসী = খৈলের প্রকার ভেদ।
  55. আওগাইয়া = অগ্রসর হইয়া। অথবা অর্ঘিয়া অর্থাৎ পূজা করিয়া।
  56. বায় = বামে।
  57. বাজুবন = বাজুবন্ধ।
  58. শিন্তাতে = সিঁথিতে।