পোকা-মাকড়/তৃতীয় শাখার প্রাণী/প্রবাল
প্রবাল
তোমরা হয় ত প্রবাল দেখিয়া থাকিবে। জিনিষটা দেখিতে সিঁদুরের মত লাল এবং পাথরের মত শক্ত। লোকে প্রবালের মালা গাঁথিয়া গলায় পরে এবং সৌখিন লোকেরা ইহা সোনার আংটিতে বসাইয়া ব্যবহার করে। কিন্তু সকল প্রবালই লাল নয়; হাড়ের মত সাদা প্রবালও দেখা যায়। এই জিনিষটা কোথায় ও কি প্রকারে উৎপন্ন হইল, তাহা খোঁজ করিলে দেখা যায়, হাইড্রার মত এক জাতি প্রাণীই ইহা উৎপন্ন করে। স্পঞ্জ্ যেমন এক রকম প্রাণীর বাসা, প্রবালও আর এক রকম প্রাণীর বাসা।
এখানে প্রবাল-প্রাণী ও তাহাদের ঘরের একটা ছবি
চিত্র ১০।
দিলাম। এক একটি হাইড্রা যেমন পৃথক্ হইয়া বাস করে, প্রবাল-প্রাণীদের সে-রকমে থাকিতে দেখা যায় না। একই জায়গায় ইহারা হাজারে হাজারে একত্র বাস করে, এবং তাহাদের সন্তান-সন্ততি সেই জায়গা ছাড়িয়া দুরে যায় না। ছবিতে যেগুলিকে গাছের ডালের মত দেখিতেছ, তাহাদের প্রত্যেকটিই এক একটি প্রবাল-প্রাণীর বাসা। জীবন্ত প্রাণীগুলি ছবির ডালের মাথায় শুঁয়ো বাহির করিয়া আছে।
এক-কোষ প্রাণীরা কি রকমে গায়ের চারিদিকে খোলা প্রস্তুত করে, তাহা আগে শুনিয়াছ। ইহারাও সেই প্রকারে সমুদ্রের জল হইতে চূণ টানিয়া লইয়া পাথরের মত শক্ত বাসা তৈয়ার করে। এই রকমে অনেক প্রাণী গায়ে গায়ে বাসা করিতে থাকিলে, সেগুলি কিছুকাল পরে প্রবালের মোটা থামের মত হইয়া পড়ে। তার পরেও যখন হাজার হাজার প্রাণী তাহারি উপরে বাসা করিতে আরম্ভ করে, তখন সমস্ত জিনিসটা সমুদ্রের তলার প্রকাণ্ড গাছের মত হইয়া দাঁড়ায়।
লাল প্রবালের চেয়ে সমুদ্রের তলায় সাদা প্রবাল অধিক পাওয়া যায়। সাদা প্রবালের প্রাণীরা নানা রকম আকৃতির ঘর
চিত্র ১১।
প্রস্তুত করে। এখানে ইহাদের এক রকম ঘরের ছবি দিলাম। ইহা দেখিলে, মনে হইবে, যেন, জিনিসটা বাতাস খাইবার হাত-পাখা। কিন্তু ইহার আগাগোড়া সাদা প্রবালে তৈয়ারি এবং পাথরের মত শক্ত।
ঠাণ্ডা দেশের সমুদ্রে প্রবাল জন্মে না। যে-সকল দেশে শীত কম, সেখানকার সমুদ্রতলে গাছের মত অসংখ্য প্রবাল-প্রাণীদের বাসা দেখা যায়। আমাদের ভারত-মহাসাগর এবং ভূমধ্য-সাগর ইহাদের প্রধান বাস-স্থান। শত শত বৎসর ধরিয়া একই জায়গায় বাসা করায়, প্রবাল-প্রাণীদের ঘরগুলি এক একটি ছোট-খাটো পাহাড়ের মত হইয়া পড়ে। তার পরে এই সকল প্রবালের পাহাড়ের গায়ে মাটি জমিতে আরম্ভ করিলে, সেগুলি এক একটি দ্বীপ হইয়া দাঁড়ায়। এই রকম প্রবালের দ্বীপ পৃথিবীতে অনেক জায়গায় দেখা যায়। আমাদের ভারতবর্ষের কাছে যে মালদ্বীপ, লাক্ষাদ্বীপ আছে তাহার কথা হয় ত তোমরা ভূগোলে পড়িয়াছ। এই দ্বীপগুলি গোড়ায় প্রবাল-প্রাণীদের বড় বড় বাসা ছিল; পরে তাহারি গায়ে মাটি জমিয়া এখন বড় বড় দ্বীপের সৃষ্টি হইয়াছে। এই সকল দ্বীপের উপরে এখন চাষ আবাদ হইতেছে—মানুষ, পশু বাস করিতেছে। সুতরাং বুঝা যাইতেছে, প্রবাল-প্রাণীরা সমুদ্রের মধ্যে নূতন নূতন ডাঙা জমি প্রস্তুত করিয়া মানুষের অনেক উপকার করে।