পোকা-মাকড়/ষষ্ঠ শাখার প্রাণী/কঠিনবর্ম্মী/চিংড়ির খোলস ছাড়া
চিংড়ির খোলস ছাড়া
কঠিন আবরণে শরীর ঢাকা থাকিলে, মাঝে মাঝে তাহা বদ্লানো দরকার হয়। আবরণ পাকাপাকি রকমে দেহ ঢাকিয়া রাখিলে, শরীর বাড়িতে পায় না। তোমরা বোধ হয় শুনিয়াছ, আগে চীনদেশের মেয়েরা ছেলে-বেলায় লোহার জুতা পায়ে পরিত এবং তাহা জন্মে পা হইতে খুলিত না। কাজেই বয়সের সঙ্গে তাহাদের শরীর বাড়িত, কিন্তু পা দুখানি বুড়ো বয়সেও ছেলে-মানুষের পায়ের মত ছোটই থাকিয়া যাইত। গায়ের খোলা মাঝে মাঝে না বদ্লাইলে চিংড়িদেরও ঐ দশা হইত,—তাহারা আর বাড়িতে পারিত না; ডিম হইতে বাহির হওয়ার পর ইহাদের যে-রকম আকৃতি ছিল, চিরজীবন তাহাই থাকিয়া যাইত। সাপ যেমন খোলস ছাড়ে, তেম্নি চিংড়িরা মাঝে মাঝে গায়ের খোলা ছাড়িয়া বড় হয় এবং সেই বড় দেহের উপরে আবার নূতন করিয়া খোলা জন্মে।
চিংড়ি-সম্বন্ধে অনেক কথাই বলা হইল। কিন্তু এই সকল কথা শুনিয়া তোমরা চিংড়িকে যত নিরীহ প্রাণী বলিয়া মনে করিতেছ, তাহারা সে-রকম নয়। সর্ব্বাঙ্গ খোলায় ঢাকিয়া, লম্বা পায়ের সাঁড়াশির মত নখ ও মাথার খাঁড়া বাহির করিয়া বড় বড় চিংড়িরা যখন জলের ভিতর দিয়া চলে, তখন চিংড়িদিগকে লড়ায়ের সেপাই বলিয়া মনে হয়। এই চেহারা দেখিয়া অন্য জলচর প্রাণীরা উহাদিগকে বাঘ ভালুকের মত ভয় করিয়া ছুটিয়া পলায়। ইহাদের মত ঝগড়াটে প্রাণী বোধ হয় সমস্ত সমুদ্র খুঁজিয়াও পাওয়া যায় না। জলের ছোট প্রাণীদিগকে কাছে পাইলেই ইহারা তাহাদের সহিত অকারণে ঝগড়া বাধায় এবং অনেক সময়ে সেগুলিকে মারিয়া খাইয়া ফেলে। নিজেদের মধ্যেও ইহারা কম ঝগড়া করে না। লড়াইয়ে আমাদের হাত পা কাটিয়া বা ভাঙিয়া গেলে আমরা চিরকালের জন্য খোঁড়া বা নুলো হইয়া থাকি। ঝগড়া-ঝাঁটি করিতে গিয়া যদি চিংড়িদের দুচার খানা পা খসিয়া যায়, বা লেজের পাখ্না খসিয়া পড়ে, তবে তাহারা একটুও ভাবনা করে না। পুরাতন পায়ের জায়গায় কয়েক দিনের মধ্যে নূতন পা গজাইয়া উঠে।
চিংড়িরা যেমন ঝগড়াটে, তেমনি মাংসাশী। নদীতে মরা জন্তুর শরীর পচিতে থাকিলে, চিংড়ির দলই তাহার অধিকাংশই খাইয়া ফেলে।