পোকা-মাকড়/ষষ্ঠ শাখার প্রাণী/কঠিন-পক্ষ পতঙ্গ/ধাম্সা পোকা
ধাম্সা পোকা
ধাম্সা-পোকা কঠিনপক্ষ পতঙ্গ। ইহাদের দলে ছোট বড় অনেক পোকা আছে। আমরা যাহাকে ধাম্সা-পোকা বলিতেছি, ইংরাজিতে তাহাকে Tiger Beetle অর্থাৎ বাঘা-পোকা বলে। ইহারা বাঘের মতই বটে। ইহাদিগকে অনেকে “সাপের মাসী-পিসি”ও বলে। যে দুইটা শক্ত ডানায় ধাম্সা-পোকাদের শরীর ঢাকা থাকে, তাহা প্রায়ই কালো, সবুজ বা বাদামী রঙের হয়। বাঘের গায়ে যেমন গোল গোল দাগ থাকে, ইহাদের কঠিন ডানার উপরে সেই রকম ফোঁটা ফোঁটা দাগ আছে। এই দলের অনেকের আবার এই ডানা দুটা জোড়া থাকে। তাহারা উড়িতে পারে না। অন্য পতঙ্গদের চেয়ে ইহাদের পা কয়েকখানি খুব লম্বা,—সেই লম্বা পা ফেলিয়া ধাম্সা-পোকারা ছুটিয়া
চিত্র ৫৬—ধাম্সা-পোকা।
বেড়ায়। চোখ দুটি চিংড়ি-মাছের চোখের মত মাথার দুই পাশে উঁচু হইয়া থাকে। ইহাদের মুখের বাঁকানো দাঁত জোড়াটি দেখিলে বাস্তবিকই ভয় হয়। ছোট পোকা-মাকড় ও ফড়িং ভিন্ন অন্য কিছু ইহারা খায় না। একটা ধাম্সা-পোকা ধরিয়া যদি গোটা কুড়ি-পঁচিশ ফড়িং তাহার সম্মুখে ধরা যায় তবে একটাও পড়িয়া থাকে না। বাঘ যেমন কুকুরের বাচ্চাকে চিবাইয়া খায়, উহারা ঠিক্ সেই রকমে ফড়িংগুলিকে কড়মড় করিয়া চিবাইয়া খাইয়া ফেলে।
জলা-জায়গায় মাটির তলায় ধাম্সা-পোকারা ডিম পাড়ে। ডিম ফুটিলে যে শুঁয়ো-পোকার আকারে বাচ্চা বাহির হয়, তাহারা গর্ত্তের বাহিরে চলা-ফেরা করে। ইহাদেরও প্রধান খাদ্য ছোট পোকা-মাকড়। এক বছর না হইলে এই পোকারা সম্পূর্ণ পতঙ্গ হয় না। কিন্তু সম্পূর্ণ আকার পাইলে ইহারা বেশি দিন বাঁচে না; মাসখানেক পোকা-মাকড় খাইয়া ও ডিম পাড়িয়া মরিয়া যায়।
গান্ধী-পোকাদের গা হইতে কি-রকম খারাপ গন্ধ বাহির হয়, তোমরা তাহা জান। ধাম্সা-পোকারা গান্ধী-পোকার জাতীয় পতঙ্গ নয়, কিন্তু তথাপি ইহারা লেজের দিক্ হইতে এক রকম গন্ধ-ওয়ালা রস বাহির করিতে পারে। বোধ হয় এই গন্ধে অন্য পোকা-মাকড় বা বড় প্রাণী ইহাদের কাছে আসিয়া অনিষ্ট করিতে পারে না।