পোকা-মাকড়/ষষ্ঠ শাখার প্রাণী/ঝিল্লীপক্ষ পতঙ্গ/স্ত্রী ও পুরুষ-পিঁপ্‌ড়ে

স্ত্রী ও পুরুষ-পিঁপ্‌ড়ে

 রাণী প্রথমে কেবল কর্ম্মী পিঁপ্‌ড়ের ডিম প্রসব করে। ইহা শেষ হইলে সে কিছুদিন ধরিয়া স্ত্রী ও পুরুষ পিঁপ্‌ড়ের ডিম পাড়িতে থাকে। এই ডিমগুলির আকার কিছু বড়। যাহা হউক, সেগুলি হইতে সম্পূর্ণ আকারে পিঁপ্‌ড়ে বাহির হইলে বাসার সকলেই ব্যতিব্যস্ত হইয়া পড়ে। স্ত্রী ও পুরুষ-পিঁপ্‌ড়ের ডানা থাকে। তাহারা জন্মিয়াই গর্ত্তের বাহিরে আসিবার চেষ্টা করে। কর্ম্মী পিঁপ্‌ড়েরা জোর করিয়া তাহাদিগকে গর্ত্তের মধ্যে ধরিয়া রাখে। কিন্তু মৌমাছির চাকে যেমন স্ত্রী-মাছিদের মধ্যে ক্রমাগত ঝগ্‌ড়াঝাঁটি চলে, ইহাদের মধ্যে তাহা দেখা যায় না। স্ত্রী, পুরুষ এবং কর্ম্মী সকলে মিলিয়া মিশিয়া বাস করে।

 যাহা হউক, বাসায় স্ত্রী ও পুরুষ পিঁপ্‌ড়ের সংখ্যা যখন বেশি হইয়া পড়ে, তখন কর্ম্মীরা তাহাদিগকে আর আট্‌কাইয়া রাখিতে পারে না। শেষে হঠাৎ এক দিন গর্ত্ত ছাড়িয়া দলে দলে উপরে উঠিতে আরম্ভ করে। পুরুষ-পিঁপ্‌ড়েরা একবার উপরে উঠিলে আর গর্ত্তে ফিরিয়া আসে না। কিছুক্ষণ উড়িলেই তাহাদের ডানা খসিয়া যায় এবং অনেকেই মরিয়া যায়; আবার কতকগুলিকে পাখী, ব্যাঙ্ প্রভৃতি কাছে পাইয়া খাইয়া ফেলে। ডানা-ওয়ালা অনেক স্ত্রী-পিঁপ্‌ড়েরও এই রকমে অপমৃত্যু হয়। কিন্তু কর্ম্মীরা সকলগুলিকে মরিতে দেয় না। তাহারা দলের স্ত্রীদের বিপদ্ দেখিলেই চারিদিক্ হইতে ছুটিয়া আসে এবং সেই সাঁড়াসির মত দাঁত দিয়া ধরিয়া তাহাদিগকে গর্ত্তের ভিতরে লইয়া যায়। ইহার পর স্ত্রীরা আর গর্ত্তের বাহিরে আসে না। গর্ত্তের ভিতরে গিয়া উহাদের প্রত্যেকেই একএকটি রাণী হইয়া দাঁড়ায় এবং ডিম পাড়িতে সুরু করে। যে-সকল স্ত্রী-পিঁপ্‌ড়ে উড়িতে উড়িতে গর্ত্ত হইতে দূরে আসিয়া পড়ে, কর্ম্মীরা তাহাদের সন্ধান পায় না। ইহারা নিজেই নিজেদের ডানা কাটিয়া ফেলে এবং পরে একটি ছোট গর্ত্ত খুঁড়িয়া সেখানে ডিম পাড়িতে আরম্ভ করে। এই রকমে কখনো কখনো পিঁপ্‌ড়েদের এক-একটা নূতন বাসার সৃষ্টি হইয়া পড়ে।