প্রজাপতির নির্বন্ধ/১৫
(১৫)
জগত্তারিণী। বাবা অক্ষয়! দেখত, মেয়েদের নিয়ে আমি কি নেপ বসে বসে কাঁদচে, নীর রেগে অস্থির, সে বলে সে কোন মতেই বেরবে না। ভদ্রলোকের ছেলেরা আজ এখনি আসবে, তাদের এখন কি বলে ফেরাবে! তুমিই বাপু ওদের শিখিয়ে পড়িয়ে বিবি করে তুলেছ এখন তুমিই ওদের সামলাও!
পুরবালা। সত্যি, আমিও ওদের রকম দেখে অবাক্ হয়ে গেছি ওরা কি মনে করেছে ওরা―
অক্ষয়। বোধ হয় আমাকে ছাড়া আর কাউকে ওরা পছন্দ করচে না; তোমারই সহোদরা কিনা, রুচিটা তোমারি মত!
পুরবালা। ঠাট্টা রাখ, এখন ঠাটার সময় নয়—তুমি ওদের একটু বুঝিয়ে বলবে কি না বল! তুমি না বল্লে ওরা শুনবে না!
অক্ষয়। এত অনুগত! একেই বলে ভগ্নীপতিব্রতা শ্যালী! আচ্ছা আমার কাছে একবার পাঠিয়ে দাও,―দেখি! (জগত্তারিণী ও পুরবালার প্রস্থান)
নৃপ ও নীরর প্রবেশ।
নীর। না, মুখুজ্জেমশায়, সে কোনমতেই হবে না!
নৃপ। মুখুজ্জেমশায় তোমার দুটি পায়ে পড়ি আমাদের যার তার সাম্নে ও রকম করে বের কোরো না!
অক্ষয়। ফাঁসির হুকুম হলে একজন বলেছিল, আমাকে বেশী উঁচুতে চড়িয়ো না আমার মাথাঘোরা ব্যামো আছে! তোদের যে তাই হল! বিয়ে করতে যাচ্চিস এখন দেখা দিতে লজ্জা করলে চলবে কেন?
নীর। কে বল্লে আমরা বিয়ে করতে যাচ্চি?
অক্ষয়। অহো, শরীরে পুলক সঞ্চার হচ্চে!―কিন্তু হৃদয় দুর্ব্বল এবং দৈব বলবান, যদি দৈবাৎ প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করতে হয়―
নীর। না ভঙ্গ হবে না!
অক্ষয়। হবে না ত? তবে নির্ভয়ে এস; যুবক দুটোকে দেখা দিয়ে আধপোড়া করে ছেড়ে দাও―হতভাগারা বাসায় ফিরে গিয়ে মরে থাকুক!
নীর। অকারণে প্রাণীহত্যা করবার জন্যে আমাদের এত উৎসাহ নেই।
অক্ষয়। জীবের প্রতি কি দয়া! কিন্তু সামান্য ব্যাপার নিয়ে গৃহবিচ্ছেদ করবার দরকার কি? তোদের মা দিদি যখন ধরে পড়েছেন এবং ভদ্রলোক দুটি যখন গাড়িভাড়া করে আসচে তখন একবার মিনিট পাঁচেকের মত দেখা দিস্, তারপরে আমি আছি—তোদের অনিচ্ছায় কোনমতেই বিবাহ দিতে দেব না।
নীর। কোনমতেই না?
অক্ষয়। কোনমতেই না!
পুরবালার প্রবেশ।
আয়, তোদের সাজিয়ে দিইগে!
নীর। আমরা সাজব না!
পুর। ভদ্রলোকের সামনে এই রকম বেশেই বেরোবি? লজ্জা করবে না?
নীর। লজ্জা করবে বৈ কি দিদি―কিন্তু সেজে বেরতে আরো বেশী লজ্জা করবে।
অক্ষয়। উমা তপস্বিনী বেশে মহাদেবের মনোহরণ করেছিলেন; শকুন্তলা যখন দুষ্যন্তের হৃদয় জয় করেছিল তখন তার গায়ে একখানি বাকল ছিল, কালিদাস বলেন সেও কিছু আঁট হয়ে পড়েছিল, তোমার বোনেরা সেই সব পড়ে সেয়ানা হয়ে উঠেছে, সাজতে চায় না!
পুর। সে সব হল সত্যযুগের কথা। কলিকালের দুষ্যন্ত মহারাজারা সাজসজ্জাতেই ভোলেন।
অক্ষয়। যথা―
পুর। যথা তুমি। যেদিন তুমি দেখতে এলে মা বুঝি আমাকে সাজিয়ে দেন নি?
অক্ষয়। আমি মনে মনে ভাবলেম, সাজেও যখন একে সেজেছে তখন সৌন্দর্য্যে না জানি কত শোভা হবে!
পুর। আচ্ছা তুমি থাম, নীরু আয়!
নীরু। না ভাই দিদি―
পুর। আচ্ছা সাজ নাই করলি চুল ত বাঁধতে হবে।
অক্ষয়।(গান)
অলকে কুসুম না দিয়ো,
শুধু, শিথিল কবরী বাঁধিয়ো!
কাজলবিহীন সজল নয়নে
হৃদয়দুয়ারে ঘা দিয়ো।
আকুল আঁচলে পথিকচরণে
মরণের ফাঁদ ফাঁদিয়ো!
না করিয়া বাদ মনে যাহা সাধ
নিদয়া নীরবে সাধিয়ো!
পুর। তুমি আবার গান ধরলে? আমি এখন কি করি বল দেখি? তাদের আসবার সময় হল—এখনো আমার খাবার তৈরি করা বাকি আছে। (নৃপ নীরুকে লইয়া প্রস্থান)
রসিকের প্রবেশ।
অক্ষয়। পিতামহ ভীষ্ম, যুদ্ধের সমস্তই প্রস্তুত?
রসিক। সমস্তই। বীর পুরুষ দুটিও সমাগত।
অক্ষয়। এখন কেবল দিব্যাস্ত্র দুটি সাজতে গেছেন। তুমি তাহলে সেনাপতির ভার গ্রহণ কর, আমি একটু অন্তরালে থাকতে ইচ্ছা করি।
রসিক। আমিও প্রথমটা একটু আড়াল হই! (উভয়ের প্রস্থান)
শ্রীশ ও বিপিনের প্রবেশ।
শ্রীশ। বিপিন, তুমি ত আজকাল সঙ্গীত বিদ্যার উপর চীৎকার শব্দে ডাকাতী আরম্ভ করেছ―কিছু আদায় কর্তে পারলে?
বিপিন। কিছু না! সঙ্গীতবিদ্যার দ্বারে সপ্তসুর অনবরত পাহারা দিচ্ছে, সেখানে কি আমার ঢোকবার জো আছে? কিন্তু এ প্রশ্ন কেন তোমার মনে উদয় হল?
শ্রীশ। আজকাল মাঝে মাঝে কবিতায় সুর বসাতে ইচ্ছে করে! সে দিন বইয়ে পড়ছিলুম―
কেন সারাদিন ধীরে ধীরে
বালু নিয়ে শুধু খেল তীরে!
চলে যায় বেলা, রেখে মিছে খেলা
ঝাঁপ দিয়ে পড় কালো নীরে।
অকূল ছানিয়ে যা’ পাস্ তা’ নিয়ে
হেসে কেঁদে চল ঘরে ফিরে!
মনে হচ্ছিল এর সুরটা যেন জানি গাবার যো নেই!
বিপিন। জিনিষটা মন্দ নয় হে—তোমার কবি লেখে ভাল! ওহে ওর পরে আর কিছু নেই? যদি সুরু করলে ত শেষ কর!
শ্রীশ।নাহি জানি মনে কি বাসিয়া
পথে বসে আছে কে আসিয়া!
যে ফুলের বাসে অলস বাতাসে
হৃদয় দিতেছে উদাসিয়া,
যেতে হয় যদি চল নিরবধি
সেই ফুলবন তলাসিয়া!
বিপিন। বাঃ বেশ! কিন্তু শ্রীশ, শেল্পের কাছে তুমি কি খুঁজে বেড়াচ্চ?
শ্রীশ। সেই যে সে দিন যে বইটাতে দুটি নাম লেখা দেখেছিলাম, সেইটে—
বিপিন। না ভাই, আজ ওসব নয়!
শ্রীশ। কি সব নয়?
বিপিন। তাঁদের কথা নিয়ে কোন রকম—
শ্রীশ। কি আশ্চর্য্য বিপিন। তাঁদের কথা নিয়ে আমি কি এমন কোন আলোচনা করতে পারি যাতে—
বিপিন। রাগ কোরো না ভাই—আমি নিজের সম্বন্ধেই বলছি, এই ঘরেই আমি অনেক সময় রসিক বাবুর সঙ্গে তাঁদের বিষয়ে যে ভাবে আলাপ করেচি,আজ সে ভাবে কোন কথা উচ্চারণ করতেও সঙ্কোচ বোধ হচ্চে―বুঝচনা―
শ্রীশ। কেন বুঝবনা? আমি কেবল একখানি বই খুলে দেখবার ইচ্ছে করেছিলুম মাত্র―একটি কথাও উচ্চারণ করতুম না!
বিপিন। না আজ তাও না। আজ তাঁরা আমাদের সম্মুখে বেরবেন আজ আমরা যেন তার যোগ্য থাকতে পারি!
শ্রীশ। বিপিন তোমার সঙ্গে―
বিপিন। না ভাই আমার সঙ্গে তর্ক কোরোনা, আমি হারলুম―কিন্তু বইটা রাখ!
রসিকের প্রবেশ।
রসিক। এই যে, আপনারা এসে একলা বসে আছেন—কিছু মনে করবেন না―
শ্রীশ। কিছু না। এই ঘরটি আমাদের সাদর সম্ভাষণ করে নিয়েছিল!
রসিক। আপনাদের কত কষ্টই দেওয়া গেল।
শ্রীশ। কষ্ট আর দিতে পারলেন কই? একটা কষ্টের মত কষ্ট স্বীকার করবার সুযোগ পেলে কৃতার্থ হতুম।
রসিক। যা হোক্, অল্পক্ষণের মধ্যেই চুকে যাবে এই এক সুবিধে তার পরেই আপনারা স্বাধীন। ভেবে দেখুন দেখি যদি এটা সত্যকার ব্যাপার হত তাহলেই পরিণামে বন্ধনভয়ং! বিবাহ জিনিষটা মিষ্টান্ন দিয়েই শুরু হয় কিন্তু সকল সময় মধুরেণ সমাপ্ত হয় না। আচ্ছা আজ আপনারা দুঃখিত ভাবে এ রকম চুপচাপ করে বসে আছেন কেন বলুন দেখি। আমি বল্চি আপনাদের কোন ভয় নেই! আপনারা বনের বিহঙ্গ, দুটি খানি সন্দেশ খেয়েই আবার বনে উড়ে যাবেন, কেউ আপনাদের বাঁধবে না! নাত্র ব্যাধশরাঃ পতন্তি পরিতো, নৈবাত্র দাবানলঃ―দাবানলের পরিবর্ত্তে ডাবের জল পাবেন!
শ্রীশ। আমাদের সে দুঃখ নয় রসিকবাবু, আমরা ভাবচি, আমাদের দ্বারা কতটুকু উপকারই বা হচ্চে! ভবিষ্যতের সমস্ত আশঙ্কা ত দূর করতে পার্চিনে!
রসিক। বিলক্ষণ। যা কর্চেন তাতে আপনারা দুটি অবলাকে চিরকৃতজ্ঞতাপাশে বদ্ধ কর্চেন—অথচ নিজেরা কোন প্রকার পাশেই বদ্ধ হচ্চেন না!
(নেপথ্যে মৃদুস্বরে জগত্তারিণী) আঃ নেপ, কি ছেলে মানুষী কর্চিস্। শীগ্গির চকের জল মুচে ঘরের মধ্যে যা! লক্ষ্মী মা আমার―কেঁদে চোক লাল কল্লে কি রকম ছিরি হবে ভেবে দেখো দেখি!― নীরো যা’না! তোদের সঙ্গে আর পারিনে বাপু! ভদ্রলোকদের কতক্ষণ বসিয়ে রাখ্বি? কি মনে কর্বেন?
শ্রীশ। ঐ শুন্চেন, রসিকবাবু, এ অসহ্য! এর্ চেয়ে রাজপুতদের কন্যাহত্যা ভাল।
বিপিন। রসিকবাবু এঁদের এই সংকট থেকে সম্পূর্ণ রক্ষা করবার জন্যে আপনি আমাদিগকে যা বল্বেন আমরা তাতেই প্রস্তুত আছি।
রসিক। কিছু না, আপনাদের আর অধিক কষ্ট দেব না! কেবল আজকার দিনটা উত্তীর্ণ করে দিয়ে যান্—তারপরে আপনাদের আর কিছুই ভাব্তে হবে না!
শ্রীশ। ভাবতে হবে না? কি বলেন রসিক বাবু! আমরা কি পাষাণ? আজ থেকেই আমরা বিশেষরূপে এঁদের জন্যে ভাববার অধিকার পাব।
বিপিন। এমন ঘটনার পর আমরা যদি এঁদের সম্বন্ধে উদাসীন হই তবে আমরা কাপুরুষ।
শ্রীশ। এখন থেকে এদের জন্যে ভাবা আমাদের পক্ষে গর্ব্বের বিষয় গৌরবের বিষয়!
রসিক। তা বেশ, ভাববেন, কিন্তু বোধ হয় ভাবা ছাড়া আর কোন কষ্ট করতে হবে না।
শ্রীশ। আচ্ছা রসিক বাবু, আমাদের কষ্ট স্বীকার করতে দিতে আপনার এত আপত্তি হচ্ছে কেন?
বিপিন। এঁদের জন্যে যদিই আমাদের কোন কষ্ট করতে হয় সেটা যে আমরা সম্মান বলে জ্ঞান করব।
শ্রীশ। দু’দিন ধরে রসিকবাবু, বেশী কষ্ট পেতে হবে না বলে আপনি ক্রমাগতই আমাদের আশ্বাস দিচ্চেন—এতে আমরা বাস্তবিক দুঃখিত হয়েছি।
রসিক। আমাকে মাপ করবেন—আমি আর কখন এমন অবিবেচনার কাজ করব না, আপনারা কষ্ট স্বীকার করবেন!
শ্রীশ। আপনি কি এখনো আমাদের চিন্লেন না?
রসিক। চিনেছি বই কি, সেজন্যে আপনারা কিন্তু মাত্র চিন্তিত হবেন না।
কুণ্ঠিত নৃপ ও নীরবালার প্রবেশ।
শ্রীশ। (নমস্কার করিয়া) রসিক বাবু, আপনি এঁদের বলুন আমাদের যেন মার্জ্জনা করেন।
বিপিন। আমরা যদি ভ্রমেও ওঁদের লজ্জা বা ভয়ের কারণ হই তবে তার চেয়ে দুঃখের বিষয় আমাদের পক্ষে আর কিছু হতে পারে না, সে জন্যে যদি ক্ষমা না করেন তবে—
রসিক। বিলক্ষণ! ক্ষমা চেয়ে অপরাধিনীদের অপরাধ আরো বাড়াবেন না। এঁদের অল্প বয়স, মান্য অতিথিদের কি রকম সম্ভাষণ করা উচিত তা যদি এঁরা হঠাৎ ভুলে গিয়ে নতমুখে দাঁড়িয়ে থাকেন তাহলে আপনাদের প্রতি অসদ্ভাব কল্পনা করে এঁদের আরো লজ্জিত করবেন না। নৃপ দিদি, নীর দিদি―কি বল ভাই! যদিও এখনো তোমাদের চোখের পাতা শুকোয় নি—তবু এঁদের প্রতি তোমাদের মন যে বিমুখ নয় সে কথা কি জানাতে পারি? (নৃপ ও নীরু লজ্জিত নিরুত্তর) না একটু আড়ালে জিজ্ঞাসা করা দরকার। (জনান্তিকে) ভদ্রলোকদের এখন কি বলি বলত ভাই? বলব কি, তোমরা যত শীঘ্র পার বিদায় হও।
নীর। (মৃদুস্বরে) রসিকদাদা কি বক তার ঠিক নেই, আমরা কি তাই বলেছি, আমরা কি জানতুম এঁরা এসেছেন?
রসিক। (শ্রীশ ও বিপিনের প্রতি) এঁরা বলচেন—
সখা, কি মোর করমে লেখি—
তাপন বলিয়া তপনে ডরিনু,
চাঁদের কিরণ দেখি!
এর উপরে আপনাদের আর কিছু বল্বার আছে?
নীর। (জনান্তিকে) আঃ রসিক দাদা, কি বল্চ তার ঠিক নেই! ওকথা আমরা কখন্ বল্লুম!
রসিক। (শ্রীশ ও বিপিনের প্রতি) এঁদের মনের ভাবটা আমি সম্পূর্ণ ব্যক্ত করতে পারিনি বলে এঁরা আমাকে ভর্ৎসনা কর্ছেন! এঁরা বল্তে চান, চাঁদের কিরণ বল্লেও যথেষ্ট বলা হয় না― তার চেয়ে আরো যদি―
নীর। (জনান্তিকে) তুমি অমন কর যদি তা হলে আমরা চলে যাব।
রসিক। সখি, ন যুক্তম্ অকৃতসৎকারম্ অতিথিবিশেষম্ উজ্ঝিত্বা স্বচ্ছন্দতো গমনম্! (শ্রীশ বিপিনের প্রতি) এঁরা বল্চেন এঁদের যথার্থ মনের ভাবটি যদি আপনাদের কাছে ব্যক্ত করে বলি, তা হলে এঁরা লজ্জায় এঘর থেকে চলে যাবেন। (নীর নৃপ প্রস্থানোদ্যম)
শ্রীশ। রসিকবাবুর অপরাধে আপনারা নির্দ্দোষদের সাজা দেবেন কেন? আমরা ত কোন প্রকার প্রগল্ভতা করিনি। (উভয়ের ন যযৌ ন তস্থৌ ভাব)
বিপিন। (নীরকে লক্ষ্য করিয়া) পূর্ব্বকৃত কোন অপরাধ যদি থাকে ত ক্ষমা প্রার্থনার অবকাশ কি দেবেন না?
রসিক। (জনান্তিকে) এই ক্ষমাটুকুর জন্যে বেচারা অনেক দিন থেকে সুযোগ প্রত্যাশা করচে―
নীর। (জনান্তিকে) অপরাধ কি হয়েছে, যে ক্ষমা কর্তে যাব?
রসিক। (বিপিনের প্রতি) ইনি বল্ছেন, আপনার অপরাধ এমন মনোহর যে, তাকে ইনি অপরাধ বলে লক্ষ্যই করেন নি।―কিন্তু আমি যদি সেই খাতাটি হরণ করতে সাহসী হতেম তবে সেটা অপরাধ হত—আইনের বিশেষ ধারায় এই রকম লিখচে।
বিপিন। ঈর্ষা করবেন না রসিকবাবু! আপনারা সর্ব্বদাই অপরাধ কর্বার সুযোগ পান এবং সেজন্য দণ্ডভোগ করে কৃতার্থ হন, আমি দৈবক্রমে একটি অপরাধ কর্বার সুবিধা পেয়েছিলুম―কিন্তু এতই অধম যে দণ্ডনীয় বলেও গণ্য হলেম না, ক্ষমা পাবার যোগ্যতাও লাভ করলেম না।
রসিক। বিপিন বাবু, একেবারে হতাশ হবেন না! শাস্তি অনেক সময় বিলম্বে আসে কিন্তু নিশ্চিত আসে। ফস্ করে মুক্তি না পেতেও পারেন!
ভৃত্যের প্রবেশ।
ভৃত্য। জল খাবার তৈরি। (নৃপ ও নীরর প্রস্থান)
শ্রীশ। আমরা কি দুর্ভিক্ষের দেশ থেকে আসছি রসিক বাবু? জল খাবারের জন্যে এত তাড়া কেন?
রসিক। মধুরেণ সমাপয়েৎ!
শ্রীশ। (নিশ্বাস ফেলিয়া) কিন্তু সমাপনটাত মধুর নয়!(জনান্তিকে বিপিনের প্রতি) কিন্তু বিপিন, এঁদের ত প্রতারণা করে যেতে পারব না!
বিপিন। (জনান্তিকে) তা যদি করি তবে আমরা পাষণ্ড!
শ্রীশ। (জনান্তিকে) এখন আমাদের কর্ত্তব্য কি।
বিপিন। (জনান্তিকে) সে কি আর জিজ্ঞাসা করতে হবে?
রসিক। আপনারা দেখছি ভয় পেয়ে গেছেন! কোন আশঙ্কা নেই শেষকালে যেমন করেই হোক্ আমি আপনাদের উদ্ধার করবই।
অক্ষয় ও জগত্তারিণীর প্রবেশ।
জগৎ। দেখলে ত বাবা, কেমন ছেলে দুটি?
অক্ষয়। মা, তোমার পছন্দ ভাল, এ কথা আমি ত অস্বীকার করতে পারি নে!
জগৎ। মেয়েদের কম দেখলে ত বাবা! এখন কান্নাকাটি কোথায় গেছে তার ঠিক নেই!
অক্ষয়। ঐ ত ওদের দোষ! কিন্তু মা, তোমাকে নিজে গিয়ে আশীর্ব্বাদ দিয়ে ছেলে দুটিকে দেখতে হচ্ছে।
জগৎ। সে কি ভাল হবে অক্ষয়? ওরা কি পছন্দ জানিয়েছে?
অক্ষয়। খুব জানিয়েছে। এখন তুমি নিজে এসে আশীর্ব্বাদ করে গেলেই চট্পট্ স্থির হয়ে যায়!
জগৎ। তা বেশ, তোমরা যদি বল, ত যাব, আমি ওদের মার বয়সী, আমার লজ্জা কিসের!
পুরবালার প্রবেশ।
পুর। খাবার গুছিয়ে দিয়ে এসেছি। ওদের কোন্ ঘরে বসিয়েছে আমি আর দেখ্তেই পেলুম না।
জগৎ। কি আর বল্ব পুরো, এমন সোনার চাঁদ ছেলে!
পুর। তা জান্তুম,! নীর নৃপর অদৃষ্টে কি খারাপ ছেলে হতে পারে!
অক্ষয়। তাদের বড়দিদির অদৃষ্টের আঁচ লেগেছে আর কি।
পুর। আচ্ছা থাম; যাও দেখি, তাদের সঙ্গে একটু আলাপ করগে; কিন্তু শৈল গেল কোথায়?
অক্ষয়। সে খুসী হয়ে দরজা বন্ধ করে পূজোয় বসেছে।