প্রজাপতির নির্বন্ধ/৯
(৯)
অক্ষয়। হল কি বল দেখি! আমার যে ঘরটি এতকাল কেবল ঝড়ু বেহারার ঝাড়নের তাড়নে নির্ম্মল ছিল, সেই ঘরের হাওয়া দুবেলা তোমাদের দুই বোনের অঞ্চল বীজনে চঞ্চল হয়ে উঠ্ছে যে!
নীর। দিদি নেই, তুমি একলা পড়ে আছ বলে দয়া করে মাঝে মাঝে দেখা দিয়ে যাই, তার উপরে আবার জবাবদিহি?
অক্ষয়—(গান করিয়া) ভৈরবী।
ওগো দয়াময়ী চোর! এত দয়া মনে তোর!
বড় দয়া করে কণ্ঠে আমার জড়াও মায়ার ডোর!
বড় দয়া করে চুরি করি লও শূন্য হৃদয় মোর!
নীর। মশায়, এখন সিঁধ কাটার পরিশ্রম মিথ্যে; আমাদের এমন বোকা চোর পাওনি! এখন হৃদয় আছে কোথায় যে, চুরি কর্তে আসব?
অক্ষয়। ঠিক করে বল দেখি হতভাগা হৃদয়টা গেছে কতদূরে?
নৃপ। আমি জানি মুখুজ্জে মশায়। বল্ব? ৪৭৫ মাইল!
নীর। সেজ্দিদি অবাক করলে! তুই কি মুখুজ্জে মশায়ের হৃদয়ের পিছনে পিছনে মাইল গুন্তে গুন্তে ছুটেছিলি নাকি?
নৃপ। না ভাই, দিদি কাশী যাবার সময় টাইম্ টেবিলে মাইলটা দেখেছিলুম।
অক্ষয়। (গান) বাহার।
চলেছে ছুটিয়া পলাতকা হিয়া
বেগে বহে শিরা ধমনী,
হায় হায় হায় ধরিবারে তায়
পিছে পিছে ধায় রমণী!
বায়ু বেগভরে উড়ে অঞ্চল,―
লটপট বেণী দুলে চঞ্চল,
একিরে রঙ্গ, আকুল অঙ্গ
ছুটে কুরঙ্গ-গমনী!
নীর। কবিবর, সাধু সাধু। কিন্তু তোমার রচনায় কোন কোন আধুনিক কবির ছায়া দেখ্তে পাই যেন!
অক্ষয়। তার কারণ আমিও অত্যন্ত আধুনিক! তোরা কি ভাবিস তোদের মুখুজ্জে মশায় কৃত্তিবাস ওঝার যমজ ভাই। ভূগোলের মাইল গুণে দিচ্চিস্, আর ইতিহাসের তারিখ ভুল? তাহলে আর বিদুষীশ্যালী থেকে ফল হল কি? এত বড় আধুনিকটাকে তোদের প্রাচীন বলে ভ্রম হয়?
নীর। মুখুজ্জেমশায়, শিব যখন বিবাহ সভায় গিয়েছিলেন, তখন তাঁর শ্যালীরাও ঐ রকম ভুল করেছিলেন, কিন্তু উমার চোখে ত অন্য রকম ঠেকেছিল! তোমার ভাবনা কিসের, দিদি তোমাকে আধুনিক বলেই জানেন!
অক্ষয়। মূঢ়ে, শিবের যদি শ্যালী থাক্ত তাহলে কি তাঁর ধ্যানভঙ্গ করবার জন্যে অনঙ্গদেবের দরকার হত; আমার সঙ্গে তাঁর তুলনা?
নৃপ। আচ্ছা মুখুজ্জেমশায়, এতক্ষণ তুমি এখানে বসে বসে কি করছিলে?
অক্ষয়। তোদের গয়লা বাড়ীর দুধের হিসেব লিখ্ছিলুম!
নীর। (ডেস্কের উপর হইতে অসমাপ্ত চিঠি তুলিয়া লইয়া) এই তোমার গয়লা বাড়ীর হিসেব? হিসেবের মধ্যে ক্ষীর নবনীর অংশটাই বেশী!
অক্ষয়। (ব্যস্তসমস্ত) না, না, ওটা নিয়ে গোল করিস্নে আহা, দিয়ে যা—
নৃপ। নীরু ভাই জ্বালাস্নে—চিঠিখানা ওঁকে ফিরিয়ে দে, ওখানে শ্যালীর উপদ্রব সয় না! কিন্তু মুখুজ্জেমশায় তুমি দিদিকে চিঠিতে কি বলে সম্বোধন কর বল না!
অক্ষয়। রোজ নূতন সম্বোধন করে থাকি―
নৃপ। আজ কি করেছ বল দেখি?
অক্ষয়। শুন্বে? তবে সখি শোন! চঞ্চলচকিতচিত্তচকোরচৌর চঞ্চুচুম্বিতচারুচন্দ্রিকরুচিরুচির চিরচন্দ্রমা।
নীরু। চমৎকার চাটু-চাতুর্য্য!
অক্ষয়। এর মধ্যে চৌর্য্যবৃত্তি নেই, চর্ব্বিত চর্ব্বণ শূন্য।
নৃপ। (সবিস্ময়ে) আচ্ছা মুখুজ্জেমশায় রোজ রোজ তুমি এই রকম লম্বা লম্বা সম্বোধন রচনা কর? তাই বুঝি দিদিকে চিঠি লিখতে এত দেরী হয়?
অক্ষয়। ঐ জন্যেই ত নৃপর কাছে আমার মিথ্যে কথা চলে না। ভগবান যে আমাকে সদ্য সদ্য বানিয়ে বলবার এমন অসাধারণ ক্ষমতা দিয়েছেন সেটা দেখছি খাটাতে দিলে না! ভগ্নীপতির কথা বেদবাক্য বলে বিশ্বাস করতে কোন্ মনুসংহিতায় লিখেছে বল্ দেখি?
নীর। রাগ কোরো না, শান্ত হও মুখুজ্জেমশায়, শান্ত হও! সেজ দিদির কথা ছেড়ে দাও, কিন্তু ভেবে দেখ, আমি তোমার আধখানা কথা সিকি পয়সাও বিশ্বাস করিনে, এতেও তুমি সান্ত্বনা পাও না?
নৃপ। আচ্ছা মুখুজ্জেমশায়, সত্যি করে বল, দিদির নামে তুমি কখনো কবিতা রচনা করেছ?
অক্ষয়। এবার তিনি যখন অত্যন্ত রাগ করেছিলেন তখন তাঁর স্তব রচনা করে গান করেছিলুম―
নৃপ। তার পরে?
অক্ষয়। তার পরে দেখলুম, তাতে উল্টো ফল হল, বাতাস পেয়ে যেমন আগুন বেড়ে ওঠে তেমনি হল―সেই অবধি স্তব রচনা ছেড়েই দিয়েছি।
নৃপ। ছেড়ে দিয়ে কেবল গয়লা বাড়ীর হিসেব লিখ্চ। কি স্তব লিখেছিলে মুখুজ্জেমশায় আমাদের শোনাও না।
অক্ষয়। সাহস হয় না, শেষকালে আমার উপরওয়ালার কাছে রিপোর্ট করবি!
নৃপ। না আমরা দিদিকে বলে দেব না।
অক্ষয়। তবে অবধান কর! (সিন্ধুকাফি)
মনোমন্দির সুন্দরী!
স্খলদঞ্চলা চল চঞ্চলা
অয়ি মঞ্জুলা মঞ্জরী।
রোষরুণরাগরঞ্জিতা!
গোপনহাস্য- কুটিল আস্য
কপট কলহ গঞ্জিতা!
সঙ্কোচনত-অঙ্গিনী!
চকিতচপল নবকুরঙ্গ
যৌবনবনসঙ্গিনী!
অয়ি খল, ছলগুণ্ঠিতা!
লুব্ধ-পবন ক্ষুব্ধ লোভন
মল্লিকা অবলুণ্ঠিতা!
চুম্বনধনবঞ্চিনী!
রুদ্ধ-কোরক-সঞ্চিত-মধু
কঠিন কনক কঞ্জিনী!
কিন্তু আর নয়। এবারে মশায়রা বিদায় হন।
নীর। কেন এত অপমান কেন? দিদির কাছে তাড়া খেয়ে আমাদের উপরে বুঝি তার ঝাল ঝাড়তে হবে?
অক্ষয়। এরা দেখ্ছি পবিত্র জেনানা আর রাখ্তে দিলে না। আরে দুর্ব্বত্তে! এখনি লোক আস বে!
নৃপ। তার চেয়ে বলনা দিদির চিঠিখানা শেষ করতে হবে।
নীর। তা আমরা থাক্লেই বা, তুমি চিঠি লেখ না, আমরা কি তোমার কলমের মুখ থেকে কথা কেড়ে নেব না কি?
অক্ষয়। তোমরা কাছাকাছি থাক্লে মনটা এইখানেই মারা যায়, দূরে যিনি আছেন সে পর্য্যন্ত আর পৌঁছায় না! না ঠাট্টা নয়, পালাও। এখনি লোক আস্বে—ঐ একটী বই দরজা খোলা নেই, তখন পালাবার পথ পাবে না।
নৃপ। এই সন্ধে বেলায় কে তোমার কাছে আস্বে?
অক্ষয়। যাদের ধ্যান কর তারা নয় গো তারা নয়!
নীর। যার ধ্যান করা যায় সে সকল সময় আসে না, তুমি আজকাল সেটা বেশ বুঝ্তে পারছ কি বল মুখুজ্জেমশায়! দেবতার ধ্যান কর আর উপদেবতার উপদ্রব হয়।
“অবলাকান্ত বাবু আছেন?” বলিয়া ঘরের মধ্যে সহসা শ্রীশের প্রবেশ। “মাপ করবেন” বলিয়া পলায়নোদ্যম। নৃপ ও নীরর সবেগে প্রস্থান।
অক্ষয়। এস এস শ্রীশ বাবু!
শ্রীশ। (সলজ্জভাবে) মাপ করবেন।
অক্ষয়। রাজি আছি কিন্তু অপরাধটা কি, আগে বল!
শ্রীশ। খবর না দিয়েই―
অক্ষয়। তোমার অভ্যর্থনার জন্য ম্যুনিসিপালিটির কাছ থেকে যখন বাজেট স্যাংশন করে নিতে হয় না তখন না হয় খবর না দিয়েই এলে শ্রীশ বাবু!
শ্রীশ। আপনি যদি বলেন, এখানে আমার অসময়ে অনধিকার প্রবেশ হয় নি তা হলেই হল!
অক্ষয়। তাই বল্লেম! তুমি যখনি আসবে তখনি সুসময়, এবং যেখানে পদার্পণ করবে সেই খানেই তোমার অধিকার, শ্রীশবাবু স্বয়ং বিধাতা সর্ব্বত্র তোমাকে পাস্পোর্ট দিয়ে রেখেছেন। একটু বোস অবলাকান্ত বাবুকে খবর পাঠিয়ে দিই! (স্বগত) না পলায়ন করলে চিঠি শেষ করতে পারব না!
শ্রীশ। চক্ষের সম্মুখ দিয়ে এক জোড়া মায়া স্বর্ণমৃগী ছুটে পালাল, ওরে নিরস্ত্র ব্যাধ তোর ছোটবার ক্ষমতা নেই! নিকষের উপর সোনার রেখার মত চকিত চোকের চাহনি দৃষ্টিপথের উপরে যেন আঁকা রয়ে গেল!
রসিকের প্রবেশ।
শ্রীশ। সন্ধ্যাবেলায় এসে আপনাদের ত বিরক্ত করিনি রসিকবাবু?
রসিক। ভিক্ষু-কক্ষে বিনিক্ষিপ্তঃ কিমিক্ষু নীরসো ভবেৎ? শ্রীশ বাবু আপনাকে দেখে বিরক্ত হব আমি কি এত বড় হতভাগ্য!
শ্রীশ। অবলাকান্ত বাবু বাড়ি আছেন ত?
রসিক। আছেন বৈ কি, এলেন বলে!
শ্রীশ। না, না, যদি কাজে থাকেন তাহলে তাঁকে ব্যস্ত করে কাজ নেই—আমি কুঁড়ে লোক, বেকার মানুষের সন্ধানে ঘুরে বেড়াই।
রসিক। সংসারে সেরা লোকেরাই কুঁড়ে এবং বেকার লোকেরাই ধন্য। উভয়ে সম্মিলন হলেই মণিকাঞ্চন যোগ! এই কুঁড়ে বেকারের মিলনের জন্যেই ত সন্ধ্যে বেলাটার সৃষ্টি হয়েছে। যোগীদের জন্যে সকাল বেলা, রোগীদের জন্যে রাত্রি, কাজের লোকের জন্যে দশটা চারটে, আর সন্ধ্যে বেলাটা, সত্যি কথা বলচি, চিরকুমার সভার অধিবেশনের জন্যে চতুর্ম্মুখ সৃজন করেন নি! কি বলেন শ্রীশ বাবু?
শ্রীশ। সে কথা মানতে হবে বৈ কি, সন্ধ্যা চিরকুমার সভার অনেক পূর্ব্বেই সৃজন হয়েছে, সে আমাদের সভাপতি চন্দ্র বাবুর নিয়ম মানে না―
রসিক। সে যে চন্দ্রের নিয়ম মানে তার নিয়মই আলাদা। আপনার কাছে খুলে বলি হাসবেন না শ্রীশবাবু, আমার এক তলার ঘরে কায়ক্লেশে একটি জানালা দিয়ে অল্প একটু জ্যোত্মা আসে—শুক্ল সন্ধ্যায় সেই জ্যোৎস্নার শুভ্র রেখাটি যখন আমার বক্ষের উপর এসে পড়ে তখন মনে হয় কে আমার কাছে কি খবর পাঠালে গো! শুভ্র একটি হংসদূত কোন বিরহিনীর হয়ে এই চিরবিরহীর কানে কানে বলচে―
অলিন্দে কালিন্দীকমল সুরভৌ কুঞ্জবসতের্
বসন্তীং বাসন্তীনবপরিমলোদ্গার চিকুরাং।
ত্বদুৎসঙ্গে লীনাং মদমুকুলিতাক্ষীং পুনরিমাং
কদাহং সেবিষ্যে কিসলয় কলাপব্যজনিনী!
শ্রীশ। বেশ বেশ রসিক বাবু, চমৎকার। কিন্তু ওর মানেটা বলে দিতে হবে। ছন্দের ভিতর দিয়ে ওর রসের গন্ধটা পাওয়া যাচ্ছে কিন্তু অনুস্বার বিসর্গ দিয়ে একেবারে এঁটে বন্ধ করে রেখেছে।
রসিক। বাঙ্লায় একটা তর্জ্জমাও করেছি—পাছে সম্পাদকরা খবর পেয়ে হুড়াহুড়ি লাগিয়ে দেয়, তাই লুকিয়ে রেখেছি—শুন্বেন শ্রীশ বাবু?
কুঞ্জ কুটীরের স্নিগ্ধ অলিন্দের পর
কালিন্দীকমলগন্ধ ছুটীবে সুন্দর;
লীনা রবে মদিরাক্ষী তব অঙ্কতলে,
বহিবে বাসন্তীবাস ব্যাকুল কুন্তলে।
তাহারে করিব সেবা, কবে হবে হায়,
কিসলয় পাখা খানি দোলাইব গায়?
শ্রীশ। বা, বা, রসিক বাবু আপনার মধ্যে এত আছে তা ত জানতুম না।
রসিক। কি করে জান্বেন বলুন। কাব্যলক্ষ্মী যে তাঁর পদ্মবন থেকে মাঝে মাঝে এই টাকের উপরে খোলা হাওয়া খেতে আসেন এ কেউ সন্দেহ করে না। (হাত বুলাইয়া) কিন্তু এমন ফাঁকা জায়গা আর নেই!
শ্রীশ। আহাহা রসিক বাবু, যমুনাতীরে সেই স্নিগ্ধ অলিন্দওয়ালা কুঞ্জ কুটীরটি আমার ভারি মনে লেগে গেছে। যদি পায়েনিয়রে বিজ্ঞাপন দেখি সেটা দেনার দায়ে নিলেমে বিক্রী হচ্ছে তা হলে কিনে ফেলি!
রসিক। বলেন কি শ্রীশ বাবু! শুধু অলিন্দ নিয়ে করবেন কি? সেই মদমুকুলিতাক্ষীর কথাটা ভেবে দেখবেন। সে নিলেমে পাওয়া শক্ত।
শ্রীশ। কার রুমাল এখানে পড়ে রয়েছে!
রসিক। দেখি দেখি! তাইত! দুর্লভ জিনিষ আপনার হাতে ঠেকে দেখচি! বাঃ দিব্যি গন্ধ! শ্লোকের লাইনটা বদ্লাতে হবে মশায়, ছন্দ ভঙ্গ হয় হোক্ গে—বাসন্তীনবপরিমলোদ্গাররুমালং”! শ্রীশবাবু, এ রুমালটাতে ত আমাদের কুমারসভার পতাকা নির্ম্মাণ চল্বে না। দেখেছেন, কোণে একটি ছোট্ট ন অক্ষর লেখা রয়েছে?
শ্রীশ। কি নাম হতে পারে বলুন্ দেখি? নলিনী? না, বড্ড চলিত নাম। নীলাম্বুজা? ভয়ঙ্কর মোটা। নীহারিকা? বড় বাড়াবাড়ি। বলুন না রসিক বাবু, আপনার কি মনে হয়?
রসিক। নাম মনে হয় না মশায়, আমার ভাব মনে আসে, অভিধানে যত ন আছে সমস্ত মাথার মধ্যে রাশীকৃত হয়ে উঠ্তে চাচ্চে, নয়ের মালা গেঁথে একটি নীলোৎপলনয়নার গলায় পরিয়ে দিতে ইচ্ছে করচে―নির্ম্মলনবনীনিন্দিত নবীন―বলুন্ না শ্রীশবাবু―শেষ করে দিন না―
শ্রীশ। নবমল্লিকা।
রসিক। বেশ বেশ—নির্ম্মলনবনী নিন্দিত নবীন নবমল্লিকা! গীত গোবিন্দ মাটি হল! আরো অনেকগুলো ভাল ভাল ন মাথার মধ্যে হাহাকার করে বেড়াচ্চে, মিলিয়ে দিতে পাচ্চি নে―নিভৃত নিকুঞ্জনিলয়, নিপুণনূপুরনিক্কণ, নিবিড় নীরদনির্ম্মুক্ত-অক্ষয় দাদা থাক্লে ভাবতে হত না! মাষ্টার মশায়কে দেখবামাত্র ছেলেগুলো যেমন বেঞ্চে নিজ নিজ স্থানে সার বেঁধে বসে—তেমনি অক্ষয় দাদার সাড়া পাবামাত্র কথাগুলো দৌড়ে এসে জুড়ে দাঁড়ায়। শ্রীশবাবু, বুড়ো মানুষকে বঞ্চনা করে রুমালখান চুপি চুপি পকেটে পুরবেন না―
শ্রীশ। আবিষ্কার কর্ত্তার অধিকার সকলের উপর―
রসিক। আমার ঐ রুমালখানিতে একটু প্রয়োজন আছে শ্রীশ বাবু! আপনাকে ত বলেছি আমার নির্জ্জন ঘরের একটি মাত্র জালনা দিয়ে একটু মাত্র চাদের আলো আসে—আমার একটি কবিতা মনে পড়ে―
বীথীষু বীথীষু বিলাসিনীনাং
মুখানি সংবীক্ষ্য শুচিস্মিতানি,
জালেষু জালেষু করং প্রসার্য্য
লাবণ্যভিক্ষামটতীব চন্দ্রঃ।
কুঞ্জ পথে পথে চাঁদ উঁকি দেয় আসি,
দেখে বিলাসিনীদের মুখভরা হাসি।
কর প্রসারণ করি ফিরে সে জাগিয়া
বাতায়নে বাতায়নে লাবণ্য মাগিয়া।
হতভাগা ভিক্ষুক আমার বাতায়নটায় যখন আসে তখন তাকে কি দিয়ে ভোলাই বলুনত? কাব্য শাস্ত্রের রসালো জায়গা যা কিছু মনে আসে সমস্ত আউড়ে যাই, কিন্তু কথায় চিঁড়ে ভেজে না। সেই দুর্ভিক্ষের সময় ঐ রুমালখানি বড় কাজে লাগ্বে। ওতে অনেকটা লাবণ্যের সংস্রব আছে।
সে লাবণ্য কি দৈবাৎ কখনো দেখেছেন রসিক বাবু?
রসিক। দেখেছি বৈ কি, নইলে কি ঐ রুমালখানার জন্যে এত লড়াই করি? আর ঐ যে ন অক্ষরের কথাগুলো আমার মাথার মধ্যে এখনো এক ঝাঁক ভ্রমরের মত গুঞ্জন করে বেড়াচ্চে তাদের সাম্নে কি একটি কমলবনবিহারিণী মানসীমুর্ত্তি নেই?
শ্রীশ। রসিক বাবু, আপনার ঐ মগজটি একটি মৌচাক বিশেষ, ওর ফুকরে ফুকরে কবিত্বের মধু―আমাকে সুদ্ধ মাতাল করে দেবেন দেখচি! (দীর্ঘ নিঃশ্বাস পতন)
পুরুষবেশী শৈলবালার প্রবেশ।
শৈল। আমার আসতে অনেক দেরী হয়ে গেল, মাপ করবেন শ্রীশ বাবু।
শ্রীশ। আমি এই সন্ধে বেলায় উৎপাত করতে এলুম, আমাকেও মাপ করবেন অবলাকান্ত বাবু!
শৈল। রোজ সন্ধ্যা বেলায় যদি এই রকম উৎপাত করেন তাহলে মাপ করব, নইলে নয়।
শ্রীশ। আচ্ছা রাজি, কিন্তু এর পরে যখন অনুতাপ উপস্থিত হবে তখন প্রতিজ্ঞা স্মরণ করবেন।
শৈল। আমার জন্যে ভাববেন না, কিন্তু আপনার যদি অনুতাপ উপস্থিত হয় তা হলে আপনাকে নিষ্কৃতি দেব।
শ্রীশ। সেই ভরসায় যদি থাকেন তাহলে অনন্তকাল অপেক্ষা করতে হবে।
শৈল। রসিক দাদা তুমি শ্রীশ বাবুর পকেটের দিকে হাত বাড়াচ্চ কেন? বুড়ো বয়সে গাঁটকাটা ব্যবসা ধরবে না কি?
রসিক। না ভাই, সে ব্যবসা তোদের বয়সেই শোভা পায়। একখানা রুমাল নিয়ে শ্রীশবাবুতে আমাতে তকরার চল্ছে, তোকে তার মীমাংসা করে দিতে হবে।
শৈল। কি রকম?
রসিক। প্রেমের বাজারে বড় মহাজনী করবার মূলধন আমার নেই— আমি খুচরো মালের কারবারী―রুমালটা, চুলের দড়িটা, ছেঁড়া কাগজে দুচারটে হাতের অক্ষর এই সমস্ত কুড়িয়ে বাড়িয়েই আমাকে সন্তুষ্ট থাক্তে হয়। শ্রীশবাবুর যে রকম মূলধন আছে তাতে উনি বাজার সুদ্ধ পাইকেরি দরে কিনে নিতে পারেন―রুমাল কেন সমস্ত নীলাঞ্চলে অর্দ্ধেক ভাগ বসাতে পারেন; আমরা যেখানে চুলের দড়ি গলায় জড়িয়ে মরতে ইচ্ছে করি উনি যে সেখানে আগুল্ফবিলম্বিত চিকুররাশির সুগন্ধ ঘনান্ধকারের মধ্যে সম্পূর্ণ অস্ত যেতে পারেন। উনি উঞ্ছবৃত্তি করতে আসেন কেন?
শ্রীশ। অবলাকান্ত বাবু, আপনি ত নিরপেক্ষ ব্যক্তি, রুমালখানা এখন আপনার হাতেই থাক্, উভয় পক্ষের বক্ত্তৃতা শেষ হয়ে গেলে বিচারে যার প্রাপ্য হয় তাকেই দেবেন।
শৈল। (রুমালখানি পকেটে পুরিয়া) আমাকে আপনি নিরপেক্ষ লোক মনে করচেন বুঝি? এই কোণে যেমন একটি ন অক্ষর লাল সুতোয় সেলাই করা আছে আমার হৃদয়ের একটি কোণে খুঁজলে দেখতে পাবেন ঐ অক্ষরটি রক্তের বর্ণে লেখা আছে। এ রুমাল আমি আপনাদের কাউকেই দেব না।
শ্রীশ। রসিক বাবু এ কি রকম জবর্দস্তি? আর, ন অক্ষরটিও ত বড় ভয়ানক অক্ষর!
রসিক। শুনেছি বিলিতী শাস্ত্রে ন্যায়ধর্ম্মও অন্ধ, ভালবাসাও অন্ধ, এখন দুই অন্ধে লড়াই হোক্, যার বল বেশী তারই জিত হবে।
শৈল। শ্রীশ বাবু, যার রুমাল আপনি ত তাকে দেখেন নি, তবে কেন কেবলমাত্র কল্পনার উপর নির্ভর করে ঝগড়া করচেন।
ঐশ। দেখিনি কে বল্লে?
শৈল। দেখেছেন? কাকে দেখলেন। ন ত দুটি আছে―
শ্রীশ। দুটিই দেখেছি― তা এ রুমাল দুজনের যাঁরই হোক্, দাবী আমি পরিত্যাগ করতে পারব না।
রসিক। শ্রীশ বাবু বৃদ্ধের পরামর্শ শুনুন, হৃদয়গগনে দুই চন্দ্রের আয়োজন করবেন না, একশ্চন্দ্রস্তমোহন্তি।
ভৃত্যের প্রবেশ।
ভৃত্য। (শ্রীশের প্রতি) চন্দ্র বাবুর চিঠি নিয়ে একটি লোক আপনার বাড়ি খুঁজে শেষকালে এখানে এসেছে।
শ্রীশ। (চিঠি পড়িয়া) একটু অপেক্ষা করবেন? চন্দ্র বাবুর বাড়ি কাছেই—আমি একবার চট্ করে দেখা করে আসব।
শৈল। পালাবেন না ত?
শ্রীশ। না, আমার রুমাল বন্ধক রইল, ওখানা খালাস না করে যাচ্চিনে।
রসিক। ভাই শৈল, কুমারসভার সভ্যগুলিকে যে রকম ভয়ঙ্কর কুমার ঠাউরেছিলুম তার কিছুই নয়। এদের তপস্যা ভঙ্গ করতে মেনকা রম্ভা মদন বসন্ত কারো দরকার হয় না, এই বুড়ো রসিকই পারে।
শৈল। তাই ত দেখছি।
রসিক। আসল কথাটা কি জান? যিনি দার্জ্জিলেঙে থাকেন তিনি ম্যালেরিয়ার দেশে পা বাড়াবামাত্রই রোগে চেপে ধরে। এঁরা এতকাল চন্দ্র বাবুর বাসায় বড্ড নীরোগ জায়গায় ছিলেন, এই বাড়িটি যে রোগের বীজেভরা; এখানকার রুমালে, বইয়ে, চৌকিতে, টেবিলে যেখানে স্পর্শ করচেন সেইখান থেকেই একেবারে নাকে মুখে রোগ ঢুক্চে―আহা, শ্রীশ বাবুটি গেল।
শৈল। রসিক দাদা, তোমার বুঝি রোগের বীজ অভ্যেস হয়ে গেছে?
রসিক। আমার কথা ছেড়ে দাও! আমার পিলে যকৃত যা কিছু হবার তা হয়ে গেছে।
নীরবালার প্রবেশ।
নীরবালা। দিদি আমরা পাশের ঘরেই ছিলুম।
রসিক। জেলেরা জাল টানাটানি করে মরচে, আর চিল বসে আছে ছোঁ মারবার জন্যে?
নীর। সেজদিদির রুমালখানা নিয়ে শ্রীশ বাবু কি কাণ্ডটাই করলে? সেজ দিদি ত লজ্জায় লাল হয়ে পালিয়ে গেছে। আমি এম্নি বোকা, ভুলেও কিছু ফেলে যাইনি। বারোখানা রুমাল এনেছি ভাব্ছি এবার ঘরের মধ্যে রুমালের হরির লুঠ দিয়ে যাব!
শৈল। তোর হাতে ও কিসের খাতা নীর?
নীর। যে গানগুলো আমার পছন্দ হয় ওতে লিখে রাখি দিদি।
রসিক। ছোটদিদি, আজকাল তোর কি রকম পারমার্থিক গান পছন্দ হচ্ছে তার এক আধটা নমুনা দেখতে পারি কি?
নীর।—দিন গেলরে, ডাক দিয়েনে পারের খেয়া,
চুকিয়ে হিসেব মিটিয়ে দে তোর দেয়া নেয়া।
রসিক। দিদি ভারি ব্যস্ত যে! পার করবার নেয়ে ডেকে দিচ্ছি, ভাই! যা দেবে যা নেবে সেটা মোকাবিলায় ঠিক করে নিয়ো।
“অবলাকান্ত বাবু আছেন?” বলিয়া বিপিন ঘরে প্রবিষ্ট ও সচকিত হইয়া স্তম্ভিতভাবে দণ্ডায়মান―নীরবালা মুহূর্ত্ত হতবুদ্ধি হইয়া দ্রুতবেগে বহিষ্ক্রান্ত।
শৈল। আসুন বিপিনবাবু।
বিপিন। ঠিক করে বলুন আস্ব কি? আমি আসার দরুণ আপনাদের কোন রকম লোকসান নেই?
রসিক। ঘর থেকে কিছু লোকসান না করলে লাভ হয় না বিপিনবাবু―ব্যবসার এই রকম নিয়ম। যা গেল তা আবার দুনো হয়ে ফিরে আস্তে পারে, কি বল অবলাকান্ত?
শৈল। রসিক দাদার রসিকতা আজকাল একটু শক্ত হয়ে আসছে।
রসিক। গুড় জমে যে রকম শক্ত হয়ে আসে। কিন্তু বিপিন বাবু কি ভাব্চেন বলুন দেখি?
বিপিন। ভাব্চি কি ছুতো করে বিদায় নিলে আমাকে বিদায় দিতে আপনাদের ভদ্রতায় বাধবে না।
শৈল। বন্ধুত্বে যদি বাধে?
বিপিন। তা হলে ছুতো খোঁজবার কোন দরকারই হয় না।
শৈল। তবে সেই খোঁজটা পরিত্যাগ করুন, ভাল হয়ে বসুন।
রসিক। মুখখানা প্রসন্ন করুন বিপিন বাবু! আমাদের প্রতি ঈর্ষা করবেন না। আমি ত বুদ্ধ, যুবকের ঈর্ষার যোগ্যই নই। আর আমাদের সুকুমারমুর্ত্তি অবলাকান্ত বাবুকে কোন স্ত্রীলোক পুরুষ বলে জ্ঞানই করে না। আপনাকে দেখে যদি কোন সুন্দরী কিশোরী ত্রস্ত হরিণীর মত পলায়ন করে থাকেন তাহলে মনকে এই বলে সান্ত্বনা দেবেন যে, তিনি আপনাকে পুরুষ বলেই মস্ত খাতিরটা করেছেন। হায়রে হতভাগ্য রসিক, তোকে দেখে কোন তরুণী লজ্জাতে পলায়নও করে না!
বিপিন। রসিকবাবু আপনাকেও যে, দলে টান্চেন অবলাকান্তবাবু! এ কি রকম হল?
শৈল। কি জানি বিপিনবাবু―আমার এই অবলাকান্ত নামটাই মিথ্যে—কোন অবলা ত এ পর্য্যন্ত আমাকে কান্ত বলে বরণ করে নি।
বিপিন। হতাশ হবেন না, এখনো সময় আছে।
শৈল। সে আশা এবং সে সময় যদি থাক্ত তাহলে চিরকুমারসভায় নাম লেখাতে যেতুম না!
বিপিন। (স্বগত) এঁর মনের মধ্যে একটা কি বেদনা রয়েছে নইলে এত অল্প বয়সে এই কাঁচামুখে এমন স্নিগ্ধ কোমল করুণভাব থাক্ত না। এটা কিসের খাতা? গান লেখা দেখচি। নীরবালা দেবী! (পাঠ)
শৈল। কি পড়চেন বিপিনবাবু?
বিপিন। কোন একটি অপরিচিতার কাছে অপরাধ করচি, হয় ত তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবার সুযোগ পাব না এবং হয়ত তাঁর কাছে শাস্তি পাবারও সৌভাগ্য হবে না কিন্তু এই গানগুলি মাণিক এবং হাতের অক্ষরগুলি মুক্তো! যদি লোভে পড়ে চুরি করি তবে দণ্ডদাতা বিধাতা ক্ষমা করবেন!
শৈল। বিধাতা মাপ করতে পারেন কিন্তু আমি করব না। ও খাতাটির পরে আমার লোভ আছে বিপিনবাবু।
রসিক। আর আমি বুঝি লোভ মোহ সমস্ত জয় করে বসে আছি? আহা, হাতের অক্ষরের মত জিনিষ আর আছে? মনের ভাব মূর্ত্তি ধরে আঙুলের আগা দিয়ে বেরিয়ে আসে―অক্ষরগুলির উপর চোখ বুলিয়ে গেলে, হৃদয়টি যেন চোখে এসে লাগে। অবলাকান্ত, এ খাতাখানি ছেড়োনা ভাই! তোমাদের চঞ্চলা নীরবালা দেবী কৌতুকের ঝরনার মত দিনরাত ঝরে পড়ছে, তাকে ত ধরে রাখ্তে পার না, এই খাতাখানির পত্রপুটে তারি একটি গণ্ডুষ ভরে উঠেছে―এ জিনিষের দাম আছে! বিপিনবাবু, আপনি ত নীরবালাকে জানেন না, আপনি এ খাতাখানা নিয়ে কি করবেন?
বিপিন। আপনারা ত বয়ং তাঁকেই জানেন―খাতাখানিতে আপনাদের প্রয়োজন কি? এই খাত থেকে আমি যেটুকু পরিচয় প্রত্যাশা করি তার প্রতি আপনারা দৃষ্টি দেন কেন?
শ্রীশের প্রবেশ।
শ্রীশ। মনে পড়েছে মশায়—সে দিন এখানে একটা বইয়েতে নাম দেখেছিলেম, নৃপবালা, নীরবালা—একি, বিপিন যে! তুমি এখানে হঠাৎ?
বিপিন। তোমার সম্বন্ধেও ঠিক ঐ প্রশ্নটা প্রয়োগ করা যেতে পারে।
শ্রীশ। আমি এসেছিলুম আমার সেই সন্যাস সম্প্রদায়ের কথাটা অবলাকান্তবাবুর সঙ্গে আলোচনা করতে। ওঁর যে রকম চেহারা, কণ্ঠস্বর, মুখের ভাব, উনি ঠিক আমার সন্ন্যাসীর আদর্শ হতে পারেন। উনি যদি ওঁর ঐ চন্দ্রকলার মত কপালটিতে চন্দন দিয়ে, গলায় মালা পরে, হাতে একটি বীণা নিয়ে সকাল বেলায় একটি পল্লীর মধ্যে প্রবেশ করেন তা হলে কোন্ গৃহস্থের হৃদয় না গলাতে পারেন?
রসিক। বুঝতে পারচিনে মশায়, হৃদয় গলাবার কি খুব জরুর দরকার হয়েছে?
শ্রীশ। চিরকুমারসভা হৃদয় গলাবার সভা।
রসিক। বলেন কি? তবে আমার দ্বারা কি কাজ পাবেন?
শ্রীশ। আপনার মধ্যে যে রকম উত্তাপ আছে আপনি উত্তর মেরুতে গেলে সেখানকার বরফ গলিয়ে বন্যা করে দিয়ে আস্তে পারেন। বিপিন উঠ্চ না কি?
বিপিন। যাই, আমাকে রাত্রে একটু পড়তে হবে।
রসিক। (জনান্তিকে) অবলাকান্ত জিজ্ঞাসা করচেন পড়া হয়ে গেলে বইখানা কি ফেরৎ পাওয়া যাবে?
বিপিন। (জনান্তিকে) পড়া হয়ে গেলে সে আলোচনা পরে হবে, আজ থাক্।
শৈল। (মৃদুস্বরে) শ্রীশ বাবু ইতস্ততঃ করচেন কেন, আপনার কিছু হারিয়েছে না কি?
শ্রীশ। (মৃদুস্বরে) আজ থাক, আর এক দিন খুঁজে দেখব।
নীরবালা। (দ্রুত প্রবেশ করিয়া) এ কি রকমের ডাকাতী দিদি। আমার গানের খাতাখানা নিয়ে গেল? আমার ভয়ানক রাগ হচ্চে।
রসিক। রাগ শব্দে নানা অর্থ অভিধানে কয়।
নীর। আচ্ছা পণ্ডিত মশায়, তোমার অভিধান জাহির করতে হবে না—আমার খাতা ফিরিয়ে আন।
রসিক। পুলিশে খবর দে ভাই, চোর ধরা আমার ব্যবসা নয়।
নীর। কেন দিদি তুমি আমার খাতা নিয়ে যেতে দিলে?
শৈল। এমন অমূল্য ধন তুই ফেলে রেখে যাস্ কেন?
নীর। আমি বুঝি ইচ্ছে করে ফেলে রেখে গেছি?
রসিক। লোকে সেই রকম সন্দেহ করছে!
নীর। না রসিকদাদা, তোমার ও ঠাট্টা আমার ভাল লাগে না!
রসিক। তা হলে ভয়ানক খারাপ অবস্থা!
সলজ্জ নৃপবালার প্রবেশ।
রসিক। কি নৃপ, হারাধন খুঁজে বেড়াচ্ছিস্?
নৃপ। না আমার কিছু হারায় নি!
রসিক। সে ত অতি সুখের সংবাদ। শৈলদিদি, তা হলে আর কেন, রুমালখানার মালিক যখন পাওয়া যাচ্ছে না, তখন যে লোক কুড়িয়ে পেয়েছে তাকেই ফিরিয়ে দিস্। (শৈলের হাত হইতে রুমাল লইয়া) এ জিনিসটা কার ভাই?
নৃপ। ও আমার নয়! (পলায়নোদ্যত)।
রসিক। (নৃপকে ধরিয়া) যে জিনিসটা খোওয়া গেছে নৃপ তার উপরে কোন দাবীও রাখ্তে চায় না।
নৃপ। রসিকদাদা, ছাড় আমার কাজ আছে!