প্রভাত সংগীত/আহ্বান সংগীত

লুয়া ত্রুটি মডিউল:Header_template এর 348 নং লাইনে: bad argument #1 to 'next' (table expected, got nil)।

প্রভাত সংগীত

আহ্বান-সংগীত

ওরে তুই জগৎ ফুলের কীট,
জগৎ যে তোর শুকায়ে আসিল,
মাটিতে পড়িল খ’সে,
সারা দিন রাত গুমরি গুমরি
কেবলি আছিস ব’সে।
মডকের কণা, নিজ হাতে তুই
রচিলি নিজের কারা,
আপনার জালে জড়ায়ে পড়িয়া
আপনি হইলি হারা।
অবশেষে কারে অভিশাপ দিস
হাহুতাশ ক’রে সারা,
কোণে ব'সে শুধু ফেলিস নিশাস,
ঢালিস বিষের ধারা।
জগৎ যে তোর মুদিয়া আসিল,
ফুটিতে নারিল আর,

প্রভাত হইলে প্রাণের মাঝারে
ঝরে না শিশির ধার।
জড়িত কুঞ্চিত বলিত হৃদয়ে
পশে না রবির কর,
নয়নে তাহার আলোক সহে না
জ্যোৎস্না দেখিলে ডর।
কালো কীট ওরে, শুধু তোরে নিয়ে
মরণ পুষিছে প্রাণে,
অশ্রুকণা তোর জলিতেছে তার
মরমের মাঝখানে।
ফেলিস নিশাস, মরুর বাতাস,
জ্বলিস জ্বালাস কত,
আপন জগতে আপনি আছিস
একটি রোগের মতো।
হৃদয়ের ভার বহিতে পারে না,
আছে মাথা নত ক’রে,
ফুটিবে না ফুল, ফলিবে না ফল,
শুকায়ে পড়িবে ম'রে।
তুই শুধু সদা কাঁদিতে থাকিবি
মৃত জগতের মাঝে,
আঁধারের কোণে ঘুরিয়া বেড়াবি
কী জানি কিসের কাজে।
আঁধার লইয়া হুতাশ লইয়া
আপনে আপনি মিশে,

জরজর হয়ে মরিয়া রহিবি
নিজের নিশাস বিষে।
বাহিরে গাহিবি মরণের গান
শুকানো পল্লবগুলি,
জগতের সাথে ভূতলে পড়িয়া
ধূলিতে হইবি ধূলি।


রোদন, রোদন, কেবলি রোদন,
কেবলি বিষাদ শ্বাস,
লুকায়ে, শুকায়ে, শরীর গুটীয়ে
কেবলি কোটরে বাস।
মাথা অবনত, আঁখি জ্যোতিহীন,
শরীর পড়েছে নুয়ে,
জীর্ণ শীর্ণ তনু ধূলিতে মাখানো
অলস পড়িয়া ভূঁয়ে।
নাই কোনো কাজ—মাঝে মাঝে চাস
মলিন আপনা পানে,
আপনার স্নেহে কাতর বচন
কহিস আপন কানে।
দিবস রজনী মরীচিকা-সুরা
কেবলি করিস পান।
বাড়িতেছে তৃষা—বিকারের তৃষা
ছটফট করে প্রাণ।

দাও দাও ব’লে সকলি যে চাস
জঠর জ্বলিছে ভূখে,
মুঠি মুঠি ধুলা তুলিয়া লইয়া
কেবলি পূরিস মুখে।
নিজের নিশ্বাসে কুয়াশা ঘনায়ে
ঢেকেছে নিজের কায়া,
পথ আঁধারিয়া পড়েছে সমুখে
নিজের দেহের ছায়া।
ছায়ার মাঝারে দেখিতে না পাও,
শব্দ শুনিলে ডরো—
বাহু প্রসারিয়া চলিতে চলিতে
নিজেরে আঁকড়ি’ ধরো।
মুখেতে রেখেছ আঁধার পুঁজিয়া,
নয়নে জ্বলিছে রিষ,
সাপের মতন কুটিল হাসিটি,
লুকানো তাহার বিষ।
চারিদিকে শুধু ক্ষুধা ছড়াইছে
যে দিকে পড়িছে দিঠ,
বিষেতে ভরিলি জগং, রে তুই
কীটের অধম কীট।
আজিকে বারেক ভ্রমরের মতো
বাহির হইয়া আয়,
এমন প্রভাতে এমন কুসুম
কেনরে শুকায়ে যায়।

বাহিরে আসিয়া উপরে বসিয়া
কেবলি গাহিবি গান,
তবে সে কুসুম কহিবে কথা,
তবে সে খুলিবে প্রাণ।
অতি ধীরে ধীরে ফুটিবে দল,
বিকশিত হয়ে উঠিবে হাস,
অতি ধীরে ধীরে উঠিবে আকাশে
লঘু পাখা মেলি’ খেলিবে বাতাসে
হৃদয়-খুলানো, আপনা-ভুলানো,
পরান-মাতানো বাস।
পাগল হইয়া মাতাল হইয়া
কেবলি ধরিবি রহিয়া রহিয়া
গুন্‌ গুন্‌ গুন্‌ তান।
প্রভাতে গাহিবি, প্রদোষে গাহিবি,
নিশীথে গাহিবি গান।
দেখিয়া ফুলের নগন মাধুরী,
ঘিরে ঘিরে তারে বেড়াইবি ঘুরি,
দিবানিশি শুধু গাহিবি গান।
থর থর করি কাঁপিবে পাখা
কোমল কুসুম-রেণুতে মাখা,
আবেগের ভরে বাতাসের পরে
থর থর করি কাঁপিবে প্রাণ।
কখনো উড়িবি, কখনো বসিবি,
কখনো মরম-মাঝারে পশিবি,

আকুল নয়নে কথনো চাহিবি
কখনো গাহিবি গান।
অমৃত-স্বপন দেখিবি কেবল
করিবিরে মধুপান।
আকাশে হাসিবে তরুণ তপন,
কাননে ছুটিবে বায়,
চারিদিকে তোর প্রাণের লহরী
উথলি উথলি যায়।
বায়ুর হিল্লোলে ধরিবে পল্লব
মর মর মৃদু তান,
চারিদিক হতে কিসের উল্লাসে
পাখিতে গাহিবে গান।
নদীতে উঠিবে শত শত ঢেউ,
গাবে তারা কল কল,
আকাশে আকাশে উথলিবে শুধু
হরষের কোলাহল।
কোথাও বা হাসি, কোথাও বা খেলা,
কোথাও বা সুখগান,
মাঝে বসে তুই বিভোর হইয়া,
আকুল পরানে নয়ান মুদিয়া
অচেতন সুখে চেতনা হারায়ে
করিবিরে মধুপান।
ভুলে যাবি ওরে আপনারে তুই
ভুলে যাবি তোর গান।

মোহ লাগিবেরে নয়নেতে তোর,
যে দিকে চাহিবি হয়ে যাবি ভোর,
যাহারে হেরিবি, তাহারে হেরিয়া
মজিয়া রহিবে প্রাণ।
ঘুমের ঘোরেতে গাহিবে পাখি
এখনো যে পাখি জাগেনি,
ভোরের আকাশ ধ্বনিয়া ধ্বনিয়া
উঠিবে বিভাস রাগিণী।
জগত-অতীত আকাশ হইতে
বাজিয়া উঠিবে বাঁশি,
প্রাণের বাসনা আকুল হইয়া
কোথায় যাইবে ভাসি।
উদাসিনী আশা গৃহ তেয়াগিয়া
অসীম পথের পথিক হইয়া
সুদূর হইতে সুদূরে উঠিয়া
আকুল হইয়া চায়,
যেমন, বিভোর চকোরের গান
ভেদিয়া ভেদিয়া সুদূর বিমান,
চাঁদের চরণে মরিতে গিয়া
মেঘেতে হারায়ে যায়।
মুদিত নয়ান, পরান বিভল,
স্তব্ধ হইয়া শুনিবি কেবল,
জগতেরে সদা ডুবায়ে দিতেছে
জগত-অতীত গান;

তাই শুনি যেন জাগিতে চাহিছে
ঘুমেতে মগন প্রাণ।
জগৎ বাহিরে যমুনা-পুলিনে
কে যেন বাঁজায় বাঁশি,
স্বপন সমান পশিতেছে কানে
ভেদিয়া নিশীথরাশি;
উদাস জগৎ যেতে চায় সেথা
দেখিতে পেয়েছে পথ,
দিবস রজনী চলেছেরে তাই
পূরাইতে মনোরথ।
এ গান শুনিনি এ আলো দেখিনি,
এ মধু করিনি পান,
এমন বাতাস পরান পুরিয়া
করেনিরে সুধা দান,
এমন প্রভাত-কিরণ-মাঝারে
কখনো করিনি স্নান,
বিফলে জগতে লভিনু জনম,
বিফলে কাটিল প্রাণ।
দেখ্‌রে সবাই চলেছে বাহিরে
সবাই চলিয়া যায়,
পথিকেরা সবে হাতে হাতে ধরি
শোন্‌রে কী গান গায়।
জগৎ ব্যাপিয়া, শোন্‌রে, সবাই
ডাকিতেছে, আয়, আয়,