ফুলের ফসল/কুন্দ
কুন্দ
ফুল হয়ে আমি উঠেছি ফুটিয়া
তোমারি অশ্রু-কণা,
ফিরে চাও ওগো শীতের বাতাস!
উদাসীন উনমনা!
দুনিয়ার লোক রুধিল দুয়ার
পাইয়া তোমার সাড়া,
রুদ্ধ কবাটে নিশ্বাস ফেলি’
কেন ফির পাড়া পাড়া?
কুঞ্জবনের ঝরোখায় আজি
কাহোরো নাহিক দেখা,
ক্ষুদ্র প্রাণের আরতি লইয়া
কুন্দ জাগিছে একা!
দাঁড়াও দাঁড়াও পউষ-বাতাস
তুষার-শীতল তুমি,
তুষারের মত শুভ্র অধরে
চরণ তোমার চুমি।
যারে তুমি আজ ফুটায়েছ বঁধু
তুচ্ছ সে অতিশয়,
পুষ্প-সভায় সকলেরি কাছে
মেনেছে সে পরাজয়!
তবু সাধ তার ছিল ফুটিবার
সে সাধ পূরিল আজি,
ওগো দক্ষিণ উত্তর-বায়ু
তুমি ভেঙে দিলে লাজ।
গোলাপের দিনে ছিল যে গোপন,—
কমলের দিনে স্নান,—
তারেও ফুটালে ওগো অতুলন
এই তো তোমার মান,
এই তো তোমার গৌরব, ওগো!
কেন দূরে যাও তুমি?
দাঁড়াও, দাঁড়াও, তরুণ অধরে
চরণ তোমার চুমি।
ধূলির নিকটে ফুটায়েছ তুমি
প্রথম চাঁদের কলা,—
শকুনের পাখা কুয়াসায় ঢাকা
বনের শকুন্তলা!
চ’লে যেয়োনা গো নিঠুরের মত
কঠোর করিয়া প্রাণ,
তোমার পূজায় একটি কুসুম,—
একটি জীবন দান।
সে জীবন অতি ক্ষুদ্র জীবন,
সুষমা নাই সে ফুলে;
নিরালার মাঝে সঙ্গী সে তবু,
আলো কুহেলির কুলে।
ওগো সহৃদয়! মদেকসদয়!
দাঁড়াও দাঁড়াও তুমি;
কুণ্ঠিত কুঁড়ি ধন্য হইবে
তোমার চরণ চুমি’।