ফুলের ফসল/বর্ষ-বরণ
বর্ষ-বরণ
এস তুমি এস নূতন অতিথি!
ঊষার রতন প্রদীপ জ্বালি’;
রৌদ্র এখনো হয়নি অসহ
এখনো তাতেনি পথের বালি।
মধু যামিনীর মোতিহার ছিঁড়ে
ছড়ায়ে পড়েছে মহুয়া ফুল,
তোতার তুতিয়া রঙের নেশায়
বনভূমি আজ কী মশগুল্!
রেশ্মী সবুজে সাজে দেবদারু
পশ্মী সবুজে রসাল সাজে,
আরত ধারার কিশোর-গরব
সবুজের মখ্মলের মাঝে।
কত ফুল আজি পড়িছে ঝরিয়া,—
পড়ুক ঝরিয়া নাহিক ক্ষতি;
হালকা হাওয়ার দিন সে ফুরাল,
উদিল জীবনে তপের জ্যোতি।
বসন্ত আজ মাগে অবসর
যৌবন-শোভা পড়িছে ঝরি’;
চির-নবীনের ওগো নবদূত!
তোমারে আজিকে বরণ করি।
এস গো মৌন! মর্ত্ত্য-ভবনে
নীরব চরণে এস গো চ’লে,
তন্দ্রা-তরল স্বচ্ছ আঁধার
উঠিছে দুলিয়া হাওয়ার দোলে।
ওগো পুরনারী ভরি’ হেমঝারি
চন্দন-বারি ঢালো গো ঢালো;
শিরীষ ফুলের পেলব কেশর
আকাশে বিছায় ঊষার আলো।
এস গো নূতন! রাজার মতন
এস আলোকের চতুর্দ্দোলে;
অশোকের ফুলে বুলে মধুকর
আমের কুঞ্জে কোকিল ভোলে।
আদি প্রভাতের প্রসন্ন প্রভা
পরাণে আবার বিলাও আনি’,
ভুলায়ে দাও গো শোচন রোদন
পুরাণের পরে পর্দ্দা টানি’!
বাসি স্বপনের কজ্জল-লেখা
হয়তো নয়নে রয়েছে লাগি’,
তাম্বুল-রাগ রয়েছে অধরে,
সে ক্রটির ক্ষমা নীরবে মাগি।
মঙ্গলগরতি করিছে পাখীরা
চামেলি বরিষে লাজাঞ্জলি,
পুণ্যাহ! ফিরে এস গো জীবনে
প্রভায় ভুবন সমুজ্জলি’।
উচু স্বরে বেঁধে তুলেছি সেতার
বাজাও তাহারে যেমন খুসী,
দীপকে, বাহারে, মেঘে, মল্লারে,
কখনো হাসিয়া কখনো রুষি’।
চন্দন-লেখা দ্বারে দ্বারে আজি
বন্দন-মালা দুলিছে বায়ে,
পেয়ারা-ফুলের রেশ্মী মিঠাই
ছড়ায়ে পড়িছে দখিণে বাঁয়ে।
উৎসব-সুরে বাঁশী বাজে পুরে
অতিথি আলয়ে এস হে তবে,
সাক্ষী দেবতা, তোমায় আমায়
সপ্তপদীর অধিক হ’বে।
রৌদ্র তখন রহিবে না মৃদু,
তাতিয়া উঠিবে পথের বালি,
তবু এস তুমি, অজানা পথিক!
আশার রতন প্রদীপ জ্বালি’।