বঙ্গসাহিত্যে নারী

বঙ্গসাহিত্যে নারী

বঙ্গসাহিত্যে নারী

বিশ্ববিদ্যাসংগ্রহ

বিশ্ববিদ্যাসংগ্রহ ॥১৩৫৭॥

ডক্টর প্রবোধচন্দ্র বাগচী
৭৯. ভারত ও মধ্য এশিয়া
৮০. ভারত ও ইন্দোচীন
৮১. ভারত ও চীন
শ্রীবিষ্ণুপদ ভট্টাচার্য
৮২. বৈদিক দেবতা
শ্রীব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়
৮৩. বঙ্গসাহিত্যে নারী
৮৪. সাময়িকপত্র-সম্পাদনে বঙ্গনারী
শ্রীযোগেশচন্দ্র বাগল
৮৫. বাংলার স্বীশিক্ষা
ডক্টর গগনবিহারী বন্দ্যোপাধ্যায়।
৮৬. গণিতের রাজ্য

বিদ্যার বহুবিস্তীর্ণ ধারার সহিত শিক্ষিত-মনের যোগসাধন করিয়া দিবার জন্য ইংরেজিতে বহু গ্রন্থমালা রচিত হইয়াছে ও হইতেছে। কিন্তু বাংলা ভাষায় এরকম বই বেশি নাই যাহার সাহায্যে অনায়াসে কেহ জানবিজ্ঞানের বিভিন্ন বিভাগের সহিত পরিচিত হইতে পারেন।

বিশ্ববিদ্যাসংগ্রহ ও লোকশিক্ষাগ্রন্থমালা প্রকাশ করিয়া বিশ্বভারতী যুগশিক্ষার সহিত সাধারণ-মনের যোগসাধনের এই কর্তব্য পালনে ব্রতী হইয়াছেন।

১৩৫০ হইতে ১৩৫৬ সালে বিশ্ববিদ্যাসংগ্রহের মোট ৭৮ খানি পুস্তক প্রকাশিত হইয়াছে। প্রতি গ্রন্থের মূল্য আট আনা। পত্র লিখিলে পূর্ণ তালিকা প্রেরিত হইবে।

বিশ্ববিদ্যাসংগ্রহের পরিপূরক লোকশিক্ষা গ্রন্থমালার পূর্ণ তালিকা মলাটের তৃতীয় পৃষ্ঠায় দ্রষ্টব্য।

বঙ্গসাহিত্যে নারী


বিশ্বভারতী গ্রন্থালয়
২ বঙ্কিম চাটুজ্যে স্ট্রীট।
কলিকাতা

প্রকাশ ১৩৫৭ মাঘ

মূল্য আট আনা

প্রকাশক শ্রীপুলিনবিহারী সেন
বিশ্বভারতী, ৬।৩ দ্বারকানাথ ঠাকুর লেন, কলিকাতা
মুদ্রাকর শ্রীপ্রভাতচন্দ্র রায়
শ্রীগৌরাঙ্গ প্রেস, ৫ চিন্তামণি দাস লেন, কলিকাতা

৩-১


স্বীকৃতি

 বঙ্গসাহিত্যে নারী ও সাময়িকপত্র-সম্পাদনে বঙ্গনারী এই দুই গ্রন্থে প্রকাশিত চিত্রাবলীর অধিকাংশ শ্রীইন্দিরা চৌধরাণী দিয়াছেন।

 বঙ্গীয়-সাহিত্য-পরিষৎ-কর্তৃপক্ষ পরিষৎ-মন্দিরে রক্ষিত মানকুমারী বসু ও গিরীন্দ্রমোহিনী দাসীর তৈলচিত্র ব্যবহার করিতে দিয়াছেন। ব্রাহ্মবালিকা বিদ্যালয়ে রক্ষিত লাবণ্যপ্রভা সরকারের চিত্র বিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ ব্যবহার করিতে দিয়াছেন।

 শরৎকুমারী চৌধরাণীর চিত্র শ্রীঅতুল বসু কর্তৃক অঙ্কিত ও তাঁহারই সৌজন্যে প্রাপ্ত; কৃষ্ণভাবিনী দাসের চিত্র মিস্‌ লার্চার অঙ্কিত প্রতিকৃতির অনুকৃতি। বঙ্গসাহিত্যে নারী গ্রন্থে প্রকাশিত স্বর্ণকুমারী দেবীর চিত্রখানি শিল্পী উইলিয়ম আর্চার কর্তৃক অঙ্কিত।

 লেখিকাদের আত্মীয় ও সুহৃদ্বর্গের নিকট হইতেও অনেকগুলি ছবি পাওয়া গিয়াছে, যথা, শ্রীঅমিয়া ঠাকুর—প্রজ্ঞাসুন্দরী দেবী; শ্রীঅশ্রুভূষণ দাসগুপ্ত—অম্বুজাসুন্দরী দাসগুপ্ত; শ্রীকল্যাণী মল্লিক—হিরন্ময়ী দেবী; শ্রীকানাইলাল সরকার—রাসসুন্দরী দেবী, শ্রীসরলাবালা দাসী; শ্রীগণেশচন্দ্র গুহ— শ্রীবিনয়কুমারী ধর, প্রমীলা নাগ; শ্রীজ্যোতিষচন্দ্র ঘোষ—শ্রীহেমলতা দেবী; শ্রীদীপক চৌধুরী—সরলা দেবী; শ্রীদেবব্রত চক্রবর্তী—বনলতা দেবী; শ্রীমীরা সেন—কামিনী রায়; শ্রীসতীকুমার চট্টোপাধ্যায়—সারদাসুন্দরী দেবী, মোহিনী দেবী; শ্রীসুকুমার মিত্র—লজ্জাবতী বসু, কুমুদিনী বসু; শ্রীরণজিৎ রায়—শ্রীনিরুপমা দেবী। শ্রীঅমিতা ঠাকুর, শ্রীঅশোকা রায়, শ্রীজ্যোতিঃপ্রকাশ সরকার ও শ্রীসনৎকুমার গুপ্তের নিকট হইতেও চিত্রসংগ্রহ ব্যাপারে সাহায্য পাওয়া গিয়াছে।



গত শতাব্দীর শেষ পাদ পর্যন্ত বঙ্গসাহিত্যে যেসকল মহিলা বিশিষ্টতা অর্জন করেন এই গ্রন্থে তাঁহাদের পরিচয় ও রচনাপঞ্জী দেওয়া হইয়াছে; গ্রন্থশেষে বর্তমান শতাব্দীর লব্ধপ্রতিষ্ঠ মহিলা-সাহিত্যিকগণের উল্লেখ করা হইয়াছে, কিন্তু তাঁহাদের সম্বন্ধে বিস্তৃত আলোচনা করা হয় নাই।



 দেড় শত বৎসর পূর্বে—ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভে বঙ্গদেশে স্ত্রীশিক্ষার অবস্থা মোটেই উল্লেখযোগ্য ছিল না। প্রধানত সম্ভ্রান্ত পরিবারের অন্তঃপুর-প্রাচীর মধ্যেই ইহা সীমাবদ্ধ ছিল; মেয়েরা ঘরে বসিয়া শিক্ষয়িত্রীর সাহায্যে বিদ্যাচর্চা করিতেন। ‘সম্বাদ ভাস্কর’সম্পাদক গৌরীশঙ্কর তর্কবাগীশ একবার স্ত্রীশিক্ষা প্রসঙ্গে লিখিয়াছিলেন:

 “কলিকাতা নগরে মান্য লোকদিগের। বালিকারা প্রায় সকলেই বিদ্যাভ্যাস করেন, প্রাপ্ত রাজা সুখময় রায় বাহাদুরের পরিবারগণের মধ্যে বিদ্যাভ্যাস স্বাভাবিক প্রচলিতরূপ হইয়াছিল, বিশেষত রাজা সুখময় রায় বাহাদুরের পুত্র প্রাপ্ত রাজা শিবচন্দ্র রায় বাহাদুরের কন্যা প্রাপ্তা হরসুন্দরী দাসী সংস্কৃত, বাঙ্গালা, হিন্দী এই তিন ভাষায় এমত সুশিক্ষিতা হইয়াছিলেন পণ্ডিতেরাও তাঁহাকে ভয় করিতেন।...শ্রীযুত বাবু প্রসন্নকুমার ঠাকুরের জ্যোষ্ঠা কন্যা [সুরসুন্দরী দেবী] বর্তমানা থাকিলে মুক্তাশ্রেণীর ন্যায় তাঁহার অক্ষর শ্রেণী ও নানা প্রকার রচনা দেখাইয়া সাধারণকে সন্তুষ্ট করিতে পারিতাম...। শ্রীযুত বাবু আশুতোষ দেব [সাতু বাবু] মহাশয়ের কন্যা গৌড়ীয় ভাষা, উর্দ্দু ভাষা, ব্রজভাষায় সুশিক্ষিতা হইয়াছেন, এবং দেবনাগরাক্ষর লিখন পঠন বিষয়ে পণ্ডিতেরাও তাহার ধন্যবাদ করেন, বিশেষত শিল্পবিদ্যায় ঐ কন্যার যে প্রকার ব্যুৎপত্তি হইয়াছে অনুমান করি ইংলণ্ডদেশীয়া প্রধানা শিল্পকারিকারাও তাঁহার শিল্পকর্ম্মদর্শনে হর্ষ প্রকাশ করিবেন।” (৩১ মে, ১৮৪৯)

 ইহা ত হইল সম্ভ্রান্ত ধনী পরিবারের কথা। সাধারণ গহন্থ-পরিবারে মেয়েদের বিদ্যাশিক্ষার কোনো ব্যবস্থাই ছিল না; বরং প্রাচীনাদের অনেকের বদ্ধমূল সংস্কার ছিল, যে-মেয়ে লেখাপড়া করে সে “রাঁড়” (বিধবা) হয়। এই শোচনীয় অবস্থার কথা স্মরণ করিয়াই রামমোহন রায় ১৮১৯ খীস্টাব্দে সহমরণবিষয়ে বাদানুবাদে এক স্থলে প্রতিপক্ষকে বলিয়াছিলেন:

 “আপনারা বিদ্যাশিক্ষা জ্ঞানোপদেশ স্ত্রীলোককে প্রায় দেন নাই, তবে তাহারা বন্ধিহান হয় ইহা কিরূপে নিশ্চয় করেন?”

 যে-সময়ে রামমোহন এই তিরস্কার-বাণী উচ্চারণ করেন, ঠিক সেই বৎসরেই কলিকাতায় সর্বপ্রথম প্রকাশ্য বালিকাবিদ্যালয়ের সচনা হয়। অন্যান্য অনেক জনহিতকর অনুষ্ঠানের ন্যায়, অগ্রণী হিসাবে ইহার গৌরবও মিশনরীদেরই প্রাপ্য। তাঁহাদেরই নিরলস চেষ্টায় অচিরাৎ কলিকাতার বিভিন্ন অঞ্চলে অনেকগুলি বালিকাবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হইয়া ব্যাপকভাবে স্ত্রীশিক্ষা প্রচারের সূত্রপাত হয়। এই ব্যাপারে তাঁহারা কয়েকজন দেশীয় বিদ্যোৎসাহী ব্যক্তির—যথা, সভাবাজারের রাজা রাধাকান্ত দেব, কলিকাতা স্কুল-বক ও স্কুল সোসাইটির পণ্ডিত গৌরমোহন বিদ্যালঙ্কার, জোড়াসাঁকো-রাজপরিবারের রাজা বৈদ্যনাথ রায় প্রভৃতির সাহায্য ও সহানুভূতি লাভ করিয়াছিলেন। গৌরমোহন স্ত্রীশিক্ষার পক্ষে জনমত গঠনের উদ্দেশ্যে ১৮২২ খ্রীস্টাব্দের মার্চ মাসে ‘স্ত্রীশিক্ষাবিধায়ক—অর্থাৎ পুরাতন ও ইদানীন্তন ও বিদেশীয় স্ত্রীলোকের শিক্ষার দষ্টান্ত’ নামে একখানি পুস্তক রচনা করিয়া দিয়াছিলেন। দুই বৎসর পরে প্রকাশিত এই পুস্তকের তৃতীয় সংস্করণে সংযোজিত ‘দুই স্ত্রীলোকের কথোপকথনে’র নিম্নোদ্ধৃত অংশ হইতে সে সময় সাধারণ গৃহস্থঘরের মেয়েরা বিদ্যাচর্চায় কত দর অনগ্রসর ছিলেন তাহার একটি চিত্র পাওয়া যাইবে:

 “প্র। ওলো। এখন যে অনেক মেয়্যা মানষ লেখাপড়া করিতে আরম্ভ করিল। এ কেমন ধারা। কালে২ কতই হবে ইহা তোমার মনে কেমন লাগে।

 উ। তবে মন দিয়া শুন দিদি। সাহেবেরা এই যে ব্যাপার আরম্ভ করিয়াছেন, ইহাতেই বুঝি এত কালের পর আমারদের কপাল ফিরিয়াছে, এমন জ্ঞান হয়।

 প্র। কেন গো। সে সকল পুরুষের কায। তাহাতে আমাদের ভাল মন্দ কি।

 উ। শুন লো। ইহাতে আমারদের ভাগ্য বড় ভাল বোধ হইতেছে; কেননা এদেশের স্ত্রীলোকেরা লেখাপড়া করে না, ইহাতেই তাহারা প্রায় পশুর মত অজ্ঞান থাকে। কেবল ঘর বারের কায কর্ম্ম করিয়া কাল কাটায়।

 প্র। ভাল। লেখাপড়া শিখিলে কি ঘরের কায কর্ম্ম করিতে হয় না। স্ত্রী লোকের ঘর বারের কায রাঁধা বাড়া ছেলাপিলা প্রতিপালন না করিলে চলিবে কেন। তাহা কি পুরুষে করিবে।

 উ। না। পুরুষে করিবে কেন, স্ত্রীলোকেরই করিতে হয়, কিন্তু লেখাপড়াতে যদি কিছ জ্ঞান হয় তবে ঘরের কায কর্ম্ম সারিয়া অবকাশ মতে দই দণ্ড লেখা পড়া নিয়া থাকিলে মন স্থির থাকে, এবং আপনার গণ্ডাও বুঝিয়া পড়িয়া নিতে পারে।

 প্র। ভাল! একটা জিজ্ঞাসা করি। তোমার কথায় বুঝিলাম যে লেখাপড়া আবশ্যক বটে। কিন্তু সে কালের স্ত্রীলোকেরা কহেন, যে লেখাপড়া যদি স্ত্রীলোকে করে তবে সে বিধবা হয় এ কি সত্য কথা। যদি এটা সত্য হয় তবে মেনে আমি পড়িব না, কি জানি ভাঙ্গা কপাল যদি ভাঙ্গে।

 উ। না বইন, সে কেবল কথার কথা। কারণ আমি আমার ঠাকুরাণী দিদির ঠাঁই শুনিয়াছি যে কোন শাস্ত্রে এমত লেখা নাই, যে মেয়্যা মানুষ পড়িলে রাঁড় হয়। কেবল গতর শোগা মাগিরা এ কথার সৃষ্টি করিয়া তিলে তাল করিয়াছে। যদি তাহা হইত তবে কত স্ত্রীলোকের বিদ্যার কথা পুরাণে শনিয়াছি, ও বড়২ মানষের স্ত্রীলোকেরা প্রায় সকলেই লেখাপড়া করে এমত শুনিতে পাই। সংপ্রতি সাক্ষাতে দেখ না কেন, বিবিরা তো সাহেবের মত লেখাপড়া জানে, তাহারা কেন রাঁড় হয় না।

 প্র। ভাল। যদি দোষ নাই তবে এতদিন এ দেশের মেয়্যা মানষে কেন শিখে নাই।

 উ। শুন লো। যখন স্ত্রীলোক মা বাপের বাড়ী থাকে, তখন তাহারা কেবল খেলাধূলা ও নাটরঙ্গ দেখিয়া বেড়ায়। বাপ মায়ও লেখাপড়ার কথা কহেন না। কেবল কহেন, যে ঘরের কায কর্ম্ম রাঁধা বাড়া না শিখিলে পরের ঘরকন্না কেমন করিয়া চালাইবি। সংসারের কর্ম্ম দেয়া থোয়া শিখিলেই শ্বশুরবাড়ী সুখ্যাতি হবে। নতুবা অখ্যাতির সীমা নাই। কিন্তু জ্ঞানের কথা কিছুই কহেন না।

 প্র। হায়২ কেমন দুঃখের কথা দিদি। ভাল প্রায় সকল গাঁয়েই তো পাঠশাল আছে, তবে কন্যারা আপনারাই সেখানে গিয়া কেন শিখে না। তখন তো বাল্যকাল থাকে কোন স্থানে যাইবার বাধা নাই।

 উ। হেদে দেখ দিদি বাহির পানে তাকাইতে দেয় না। যদি ছোট২ কন্যারা বাটীর বালকের লেখাপড়া দেখিয়া সাদ করিয়া কিছু শিখে ও পাততাড়ি হাতে করে তবে তাহার অখ্যাতি জগৎ বেড়ে হয়। সকলে কহে যে এই মদ্দা ঢেঁটি ছুঁড়ি বেটাছেলের মত লেখাপড়া শিখে, এ ছুঁড়ি বড় অসৎ হবে। এখনি এই, শেষে না জানি কি হবে। যে গাছ বাড়ে তাহার অঙ্কুরে জানা যায়।” পৃ ১-৪

 কিন্তু এত করিয়াও মিশনরী-পরিচালিত বালিকাবিদ্যালয়গুলি জনপ্রিয় হইয়া উঠিতে পারে নাই। ইহার কারণ ইঁহাদের শিক্ষাবিস্তার প্রচেষ্টা যে অবিমিশ্র সদিচ্ছাপ্রসূত ছিল না, খ্রীস্টধর্ম বিস্তারই যে মুখ্য লক্ষ্য ছিল, তাহা ধরা পড়িতে বিলম্ব হয় নাই। সতরাং উক্ত বিদ্যালয়গুলিতে একমাত্র দরিদ্র-ঘরের—অনেক স্থলে নিম্নবর্ণের ছাড়া কোনো শিক্ষিত ও সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়েরা যোগদান করেন নাই। প্রকৃতপক্ষে সম্ভ্রান্ত হিন্দুরা মেয়েদের প্রকাশ্য বিদ্যালয়ে পাঠাইবার আদৌ পক্ষপাতী ছিলেন না। এই বাধা সর্ব্বপ্রথম দূর করেন, তৎকালীন সরকারী শিক্ষা-সংসদের সভাপতি ভারত-হিতৈষী ড্রিঙ্কওয়াটার বীটন (বেথুন)। তিনি রামগোপাল ঘোষ, দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায়মদনমোহন তর্কালঙ্কার-প্রমুখ এদেশের কয়েকজন সুসন্তানের সহায়তায় ১৮৪৯ সনের ৭ই মে কলিকাতা বালিকাবিদ্যালয় (বর্তমানে বেথুন কলেজ) প্রতিষ্ঠা করেন।[১] তদবধি দেশে প্রকাশ্যে স্ত্রীশিক্ষা প্রসার লাভ করিতে থাকে। ইহারই প্রত্যক্ষ ফলস্বরূপ অনতিকালমধ্যে আমরা কোনো কোনো বঙ্গমহিলাকে পর্দার অন্তরাল ভেদ করিয়া সাহিত্যক্ষেত্রে অবতীর্ণ হইতে দেখি। তাঁহাদের রচিত কবিতাবলী ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত সম্পাদিত ‘সংবাদ প্রভাকর’ পত্রে সাদরে গৃহীত হইতে থাকে।

 ১৮৫৬ খ্রীস্টাব্দে বঙ্গমহিলা-রচিত সব প্রথম পুস্তক প্রকাশিত হয়; উহা ‘চিত্তবিলাসিনী’ নামে একখানি নাতিদীর্ঘ কাব্য (পৃষ্ঠা-সংখ্যা ৭২), লেখিকা—কৃষ্ণকামিনী দাসী[২] গুপ্ত-কবি ইহার সমালোচনা প্রসঙ্গে ‘সংবাদ প্রভাকরে’ (২৮-১১-১৮৫৬) লেখেন:

 “আমরা পরমানন্দ-সাগর-সলিলে নিমগ্ন হইয়া প্রকাশ করিতেছি যে ‘চিত্তবিলাসিনী’ নামক অভিনব গ্রন্থ প্রাপ্ত হইয়া পাঠানন্তর চিত্তানন্দে আনন্দিত হইয়াছি, অঙ্গনাগণের বিদ্যানুশীলন বিষয়ে যে সুপ্রণালী এ-দেশে প্রচলিতা হইতেছে, তাহার ফলস্বরূপ এই গ্রন্থ,.. অবলাগণ বিদ্যানুশীলন পূর্ব্বক অবনীমণ্ডলে প্রতিষ্ঠিতা হয়েন ইহাই আমারদিগের প্রাথনা।”

 রচনার নিদর্শনস্বরূপ এই একান্ত দুষ্প্রাপ্য কাব্যখানির কয়েক পংক্তি উদ্ধৃত করিতেছি:

দয়া ছাড়া ধর্ম নাই।

পুরুষের উক্তি: ঘোর রজনীতে তুমি কাহার কামিনী।
কিসের লাগিয়ে ভ্রমিতেছ একাকিনী॥
বয়েসে নবীন অতি রূপ মনোহর।
আছ রঙ্গে নাহি সঙ্গে সঙ্গিনী অপর॥
কি নাম কাহার কন্যা বল রসবতি।
অপ্সরী কিন্নরী কিবা হবে দেবজাতি॥


কামিনীর উক্তি: আমি হে রমণী,  আছি একাকিনী,
কুলের কামিনী তায়।
তুমি হে এখানে,  কিসের কারণে,
বল ওহে যুবরায়॥
একি তব রীত,  হেরি বিপরীত,
নাহি চিতে কিছু ভয়।
রমণীর পাশে,  এলে অনায়াসে,
কিরূপেতে মহাশয়॥
আলাপ করিতে,  বাসনা মনেতে,
নাহি ভাব তাহে লাজ।
আমি নারী জেতে,  তোমার সহিতে,
পরিচয়ে কিবা কায॥..



পু। দেবগণ মধ্যে হয় আমার বসতি।
ধর্ম্ম নামে খ্যাত আমি শুন রসবতি॥
সমাদরে যারা করে আমার সাধন।
তাদের শরীরে করি সতত ভ্রমণ॥
মর্ত্ত্যলোকে সেই হেতু আমার বসতি।
আপন বৃত্তান্ত ধনি কহ লো সম্প্রতি॥

কা।  প্রবৃত্তির কন্যা আমি দয়া নামে খ্যাত।
শ্রদ্ধা নামে ভগ্নী মম জগতে বিদিত॥
মর্ত্ত্যলোকে মহাত্মাগণের অন্তরেতে।
নিবাস আমার তাই ভ্রমি হেনমতে॥

সুরগণ শ্রেষ্ঠ তুমি ধর্ম্ম মহামতি।
এরপ ব্যাভার কেন অবলার প্রতি॥
তোমার উচিত কভু না হয় এমন।
ছাড় ছাড় পথ করি স্বস্থানে গমন॥ ..

পু  দয়া ছাড়া ধর্ম্ম বল আছে কোন খানে।
যেখানেতে দয়া দেখ ধর্ম্ম সেইখানে॥
অতএব কেন কর এমন ভাবনা।
দয়া ছাড়া ধর্ম্ম প্রিয় কখন হবে না॥
দয়া হীনে ধর্মের নাহিক হয় গতি।
দয়া ধর্ম্ম দুয়ে হয় একাধারে স্থিতি॥

কা।  শপথ করিতে যদি পার মহাশয়।
তবে সে আমার ইথে হইবে প্রত্যয়॥
যেখানেতে রব আমি সেইখানে রবে।
তিলেক তিলার্দ্ধ নাহি ছাড়াছাড়ি হবে॥
তুমি ধর্ম্মরাজ হও সত্যের আশ্রয়।
ত্রিসত্য করিলে পরে ঘুচিবে সংশয়॥..

দুই জনে সত্য বন্ধ করি হেন মতে।
পারিজাত হার ছিল দোঁহার সনেতে॥
আপন আপন করে লইয়ে আপন।
উভয়ে উভয় গলে করিল অর্পণ॥
হেন কালে আচম্বিতে নিদ্রাভঙ্গ হলো।
কিছু নাহি জানিলাম পরে কি ঘটিল॥

 ‘চিত্তবিলাসিনীর’ প্রকাশকাল হইতে পরবর্তী দশ বৎসরের মধ্যে (১৮৫৬-৬৬) আমরা আরও সাতজন গ্রন্থকর্ত্রীর সন্দর্শন পাই।(৩) ইঁহাদের নাম ও রচনা:[৩]

১। বামাসুন্দরী দেবী (পাবনা): ‘কি কি কুসংকার তিরোহিত হইলে এদেশের শ্রীবৃদ্ধি হইতে পারে।’ ৪ বৈশাখ ১৭৮৩ শক (ইং ১৮৬১)। পৃ. ২০। এই সন্দর্ভটির ভূমিকায় লোকনাথ মৈত্রেয় লিখিয়াছেন:

 “ইহার রচয়িত্রী তিন বৎসরের অধিক হইবে না, বিদ্যাচর্চ্চা আরম্ভ করিয়াছেন। যত্ন সহকারে বিদ্যার্জ্জনে নিবিষ্টমনা হইলে আমাদের দেশীয় রমণীগণ যে কত অল্পকাল মধ্যে বিদ্যা ও জ্ঞানালঙ্কারে ভূষিতা হইতে পারেন, তাহা এদেশের লোকের হৃদয়ঙ্গম করিয়া দেওয়া আমার এই ক্ষুদ্র পুস্তক প্রচার করিবার অন্যতর উদ্দেশ্য।”

২। হরকুমারী দেবী (কালিঘাট): বিদ্যাদারিদ্রদলনী’ (কাব্য) ..১২ আশ্বিন। ১৭৮৩ শক (ইং ১৮৬১)। পৃ. ৮৪। পুস্তকে লেখিকা নিজ নাম এই ভাবে ব্যক্ত করিয়াছেন:

“পঞ্চমীতে যেই দ্রব্য না করে ভক্ষণ।
তার আদ্য বর্ণ অগ্রে করিয়া গ্রহণ॥
কর্ক্কট মিথুন রাশে হয় যেই নাম।
রচয়িত্রী সেই দেবী কালীঘাট ধাম”

৩। কৈলাসবাসিনী দেবী (দুর্গাচরণ গুপ্তের পত্নী): ‘হিন্দু মহিলাগণের হীনাবস্থা’ (সন্দর্ভ) .. ১৭৮৫ শক (ইং ১৮৬৩)। পৃ. ৭২। ‘হিন্দু অবলাকুলের বিদ্যাভ্যাস ও তাহার সমুন্নতি’ .. ১৭৮৭ শক (ইং ১৮৬৫)। পৃ. ৩৯।
৪। মার্থা সৌদামিনী সিংহ: ‘নারীচরিত’ .. ইং ১৮৬৫। পৃ. ৯৪।
৫। রাখালমণি গুপ্ত: ‘কবিতামালা’ .. ইং ১৮৬৫। পৃ. ৭২।
৬। কামিনীসুন্দরী দেবী (শিবপুর: ‘উর্বশী নাটক’ .. ১২৭২ সাল (ইং ১৮৬৬)। পৃ. ৮৫।

 গ্রন্থকর্ত্রীর নাম “দ্বিজতনয়া” আছে। কিন্তু ইঁহার পরবর্তী পুস্তক ‘বালা বোধিকা’য় (ইং ১৮৬৮) “উর্ব্বশী নাটক রচয়িত্রী শ্রীমতী কামিনীসুন্দরী দেবী প্রণীত” মুদ্রিত হইয়াছে। বঙ্গমহিলাদের মধ্যে কামিনীসুন্দরীই প্রথমে নাটকরচনায় হস্তক্ষেপ করেন।

৭। বসন্তকুমারী দাসী (বরিশাল): ‘কবিতামঞ্জরী’।

 একে যথোচিত শিক্ষার অভাব, তাহার উপর সামাজিক ও পারিবারিক প্রতিকূলতা—ইহা স্মরণ করিলে স্বল্পশিক্ষিতা এইসকল কুলবালার প্রথমোদ্যম নিতান্ত অকিঞ্চিৎকর মনে হইবে না।

 ক্রমশ মাসিকপত্রের পৃষ্ঠাতেও বঙ্গমহিলারা আত্মপ্রকাশ করিতে লাগিলেন। ‘বামাবোধিনী পত্রিকা’ বামাগণের রচনার জন্য পত্রিকার কয়েক পৃষ্ঠা উন্মুক্ত রাখিবার ব্যবস্থা করিলেন। চারি দিকেই স্ত্রীশিক্ষা প্রসারের আন্দোলন মাথা তুলিল। ১৮৬৯ খ্রীস্টাব্দে সরকার বেথুন কলেজের সহিত একটি শিক্ষয়িত্রী-বিদ্যালয়ের সূচনা করিলেন; কলিকাতার ব্রাহ্মসমাজগুলিও, বিশেষত কেশবচন্দ্রের প্রগতিশীল দল, স্ত্রীশিক্ষার সবাঙ্গীণ উন্নতিসাধনের জন্য বদ্ধপরিকর হইলেন। স্ত্রীশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা প্রতিপন্ন করিবার জন্য নানা প্রবন্ধ ও পুস্তক-পুস্তিকা প্রচারিত হইতে লাগিল। যে-সকল মহিলা ইতিপূর্বে বিদ্যালয়ে শিক্ষাপ্রাপ্ত হইয়াছেন, তাঁহারাও অশিক্ষিতা ভগ্নীগণকে বিদ্যাশিক্ষায় অন্যপ্রাণিত করিতে লাগিলেন। স্ত্রীশিক্ষার প্রসারের সহিত পরবর্তী দশ-এগার বৎসরে সাহিত্য-মন্দিরের পূজারিণীর সংখ্যাও দ্রুত বৃদ্ধি পাইয়াছিল। তাঁহাদের দান কেবলমাত্র সাহিত্যের কাব্য-বিভাগেই সীমাবদ্ধ ছিল না। ইহাদের সকলের নামধাম ও রচনার দীর্ঘ তালিকা না দিয়া মাত্র কয়েকজনের উল্লেখ করিলেই চলিবে: তাঁহারা

নবীনকালী দেবী: ‘কামিনী কলঙ্ক’ (উপন্যাস) ..  এপ্রিল ১৮৭০।
হেমাঙ্গিনী: ‘মনোরমা’ (আখ্যায়িকা) ..  জুলাই ১৮৭৪।
সুরঙ্গিনী দেবী (প্রসন্নকুমার সবাধিকারীর পত্নী):
  ‘তারাচরিত’ (রাজস্থানীয় ইতিহাস-মূলক
  আখ্যায়িকা)
..  জানুয়ারি ১৮৭৫।
ফৈজুন্নিসা চৌধুরাণী: ‘রূপ-জালাল’
  (প্রণয়মলক আখ্যায়িকা)
..  ঢাকা ১৮৭৬।
রাসসুন্দরী (কিশোরীলাল সরকারের মাতা):
  ‘আমার জীবন’
..  ডিসেম্বর ১৮৭৬।[৪]
 শেষোক্ত গ্রন্থখানি উল্লেখযোগ্য; ইহা সরল ও প্রাঞ্জল ভাষায় লিখিত আত্মকথা। রচনার নিদর্শনস্বরূপে ‘আমার জীবন’ হইতে কিঞ্চিৎ উদ্ধৃত করিতেছি:

 “আমার মা বলিলেন, এই যে, আমাদের দালানে ঠাকুর আছেন, তাঁহারি নাম দয়ামাধব, তিনি ঠাকুর। কল্য তোমাদের যে লোক নদীর কূল হইতে কোলে করিয়া বাটীতে আনিয়াছিল, সে মানুষ। তখন আমি বলিলাম, মা তুমি বলিয়াছিলে, ভয় হইলে দয়ামাধবকে ডাকিও, আমাদের দয়ামাধব আছেন। তবে যে কালি যখন ভয় হইল, আমরা দয়ামাধব! দয়ামাধব! বলিয়া কত ডাকিলাম, আইলেন না কেন? মা বলিলেন, ভয় পাইয়া কাঁদিতে কাঁদিতে দয়ামাধব! দয়ামাধব! বলিয়া ডাকিয়াছিলে। দয়ামাধব তোমাদের কান্না শুনিয়া ঐ মানুষ পাঠাইয়া দিয়া তোমাদিগকে বাটীতে আনিয়াছেন। আমি তখন মাকে জিজ্ঞাসা করিলাম, মা! দয়ামাধব দালানে থাকিয়া কেমন করিয়া আমাদের কান্না শুনিলেন? মা বলিলেন, তিনি পরমেশ্বর, তিনি সব স্থানেই আছেন, এজন্য শুনিতে পান। তিনি সকলের কথাই শানেন।

 “সেই পরমেশ্বর আমাদিগের সকলকে সৃষ্টি করিয়াছেন। তাঁহাকে যে যেখানে থাকিয়া ডাকে তাহাই তিনি শুনেন। বড় করিয়া ডাকিলেও তিনি শুনেন, ছোট করিয়া ডাকিলেও শুনেন, মনে মনে ডাকিলেও শুনিয়া থাকেন। এজন্য তিনি মানুষ নহেন, পরমেশ্বর। তখন আমি বলিলাম, মা! সকল লোক যে পরমেশ্বর পরমেশ্বর বলে, সেই পরমেশ্বর কি আমাদের? মা বলিলেন, হাঁ, ঐ এক পরমেশ্বর সকলেরি, সকল লোকেই তাঁহাকে ডাকে, তিনি আদিকর্ত্তা। এই পৃথিবীতে যত বস্তু আছে, তিনি সকল সৃষ্টি করিয়াছেন, তিনি সকলকেই ভাল বাসেন, তিনি সকলেরই পরমেশ্বর।

 “বাস্তবিক পরমেশ্বর যে কি বস্তু, তাহা আমি এ পর্য্যন্ত বুঝিতে পারি নাই। সকল লোক পরমেশ্বর পরমেশ্বর বলে, তাহাই শুনিয়া থাকি, এই মাত্র জানি। মা বলিলেন, তিনি ঠাকুর, এজন্য সকলের মনের ভাব জানিতে পারেন। মার ঐ কথা শুনিয়া আমার মন অনেক সবল হইল। বিশেষ সেই দিবস হইতে আমার বুদ্ধির অঙ্কুর হইতে লাগিল। আর পরমেশ্বর যে আমাদের ঠাকুর, তাহাও আমি সেই দিবস হইতে জানিলাম। আর আমার মনে অধিক ভরসা হইল। পরমেশ্বরকে মনে মনে ডাকিলেও তিনি শুনেন, তবে আর কিসের ভয়, এখন যদি আমার ভয় করে, তবে আমি মনে মনে পরমেশবর পরমেশ্বর বলিয়া ডাকিব। মার ঐ কথা আমার চিরস্থায়ী হইয়াছে, মা বলিয়াছেন, আমাদের পরমেশ্ববর আছেন।”

 গত শতাব্দীর সপ্তম দশক পর্যন্ত ইতিহাস সংক্ষিপ্ত। এই সময়ে বাংলা সাহিত্যক্ষেত্রে এমন এক প্রতিভাশালিনী মহিলা আবির্ভূত হইলেন যাঁহার গদ্য-পদ্যে আমরা সর্বপ্রথম শিল্পসুষমার আস্বাদ পাইলাম, যাঁহার হাতে বঙ্গভারতীর বীণায় মৌলিক নারী-সুর ঝংকৃত হইল; ইনি রবীন্দ্রনাথের অগ্রজা স্বর্ণকুমারী দেবী। প্রতিভার যাদুস্পর্শে সর্বপ্রথম ইঁহার রচনাই রসমণ্ডিত হইয়া সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। গল্প উপন্যাস, কবিতা গান, নাটক প্রবন্ধ ও বিজ্ঞান—এক কথায় সাহিত্যের সকল বিভাগেই তাঁহার দান স্বীকৃত হইতে থাকে। এই সাফল্যের প্রভাব অচিরাৎ পরিলক্ষিত হয়। এই সময় হইতে শতাব্দীর শেষ পাদ পর্যন্ত এমন কতকগুলি মহিলা-সাহিত্যিকের আবিভাব ঘটে, যাঁহারা বঙ্গসাহিত্যে বিশিষ্টতা অজন করেন। তাঁহাদের সংক্ষিপ্ত পরিচয় ও রচনাবলীর কালানুক্রমিক তালিকা দিতেছি:

 স্বর্ণকুমারী দেবী। আনুমানিক ১৮৫৫ খ্রীস্টাব্দে কলিকাতা জোড়াসাঁকোর বিখ্যাত ঠাকুরপরিবারে স্বর্ণকুমারী দেবীর জন্ম হয়। তিনি মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের চতুর্থ কন্যা; রবীন্দ্রনাথের ভগিনী। ১৮৬৭ সনের ১৭ই নবেম্ববর ১৩ বৎসর বয়সে জানকীনাথ ঘোষালের সহিত তাঁহার বিবাহ হয়। স্বর্ণকুমারীর সুদীর্ঘ জীবন বাণী-সাধনায় সমুজ্জ্বল। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি বঙ্গভারতীর সেবা করিয়া গিয়াছেন। সাহিত্যে তাঁহার দান সুবিপুল। বঙ্গমহিলাদের মধ্যে তিনিই সর্বপ্রথম সার্থক উপন্যাস, গাথা ও বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ রচনা করেন। তাঁহার রচিত গ্রন্থাবলী:

১ দীপ-নির্ব্বাণ (উপন্যাস): ১২৮৩ সাল (১৫-১২-১৮৭৬)। পৃ ৩২১।
২ বসন্ত উৎসব (গীতিনাট্য): ১৮০১ শক (৪-১১-১৮৭৯)। পৃ ৪০।
৩ ছিন্নমুকুল (উপন্যাস): (৪-১১-১৮৭৯)। পৃ ২৩৮।
৪ মালতী (উপন্যাস): ১২৮৬ সাল (২৫-৩-১৮৮০)। পৃ ৪৪।
৫ গাথা: ১২৮৭ সাল (২০-১২-১৮৮o)। পৃ ৯৫।
৬ পৃথিবী (বৈজ্ঞানিক পুস্তক): আশ্বিন ১২৮৯ ২ে৭-৯-১৮৮২)। পৃ ১৮৪।

৭ সখিসমিতি: ১২৯৩ সাল (১২-৮-১৮৮৬)। পৃ ২৪।
৮ মিবাররাজ (ঐতিহাসিক উপন্যাস): জ্যৈষ্ঠ ১৮০৯ শক (১৭-৬-১৮৮৭)। পৃ ৮০।
৯ হুগলীর ইমামবাড়ী (ঐতিহাসিক উপন্যাস): পৌষ ১২৯৪ (৮-১-১৮৮৮)। পৃ ২৫৬।
১০ বিদ্রোহ (ঐতিহাসিক উপন্যাস): ১৫ শ্রাবণ ১২৯৭ (৯-৮-১৮৯০)। পৃ ২৮২।
১১ বিবাহ-উৎসব (গীতি-নাট্য): (১৩-৫-১৮৯২)। পৃ ২৩।
১২ নবকাহিনী (ছোট গল্প): (১৭-৮-১৮৯২)। পৃ ১২৮।
১৩ স্নেহলতা বা পালিতা (উপন্যাস)
১ম খণ্ড। ১২৯৯ সাল (১৩-১০-১৮৯২)। পৃ ২৩৮
২য় খণ্ড। ফাল্গুন ১২৯৯ (১৫-৩-১৮৯৩)। পৃ ১৮২।
১৪ ফুলের মালা (উপন্যাস): (১২-৩-১৮৯৫)। পৃ ১৫৯।
১৫ কবিতা ও গান: কার্তিক ১৩০২ (১-১২-১৮৯৫)। পৃ ২৪০।
১৬ কাহাকে? (উপন্যাস): জুলাই ১৮৯৮। পৃ ১২১।
১৭ কৌতুকনাট্য ও বিবিধ কথা: ইং ১৯০১, জ্যৈষ্ঠ। পৃ ৮১।
১৮ দেবকৌতুক (কাব্যনাট্য): ১৩১২ সাল (২৬-২-১৯০৬)। পৃ ৯৬।
১৯ কনে-বদল (প্রহসন): বৈশাখ ১৩১৩, ইং ১৯০৬। পৃ ৫৮।
২০ পাকচক্র (প্রহসন): (২৮-২-১৯১১)। পৃ ৭০+১৮।
২১ রাজকন্যা (নাট্যোপন্যাস): (১৭-৪-১৯১৩)। পৃ ৮২।
২২ নিবেদিতা (নাটক): ৩ এপ্রিল ১৯১৭। পৃ ৬০।
২৩ যুগান্ত কাব্যনাট্য: (২০-১-১৯১৮)। পৃ ৩৬।
২৪ বিচিত্রা (উপন্যাস): ১ বৈশাখ ১৩২৭ (৭-৫-১৯২০)। পৃ ১৫৭।
২৫ স্বপ্নবাণী (উপন্যাস): জ্যৈষ্ঠ ১৩২৮ (২৪-১০-১৯২১)। পৃ ১৭২।
২৬ মিলন রাত্রি (উপন্যাস): জ্যৈষ্ঠ ১৩৩২, ইং ১৯২৫। পৃ ২৮৫।
২৭ দিব্য-কমল (নাটক): (১৪-৪-১৯৩০)। পৃ ১৬৩।

 স্বর্ণকুমারী অনেকগলি পাঠ্য পস্তকেরও রচয়িত্রী। তিনি অতীব যোগ্যতার সহিত দীর্ঘকাল ‘ভারতী’ সম্পাদন করিয়া গিয়াছেন। ১৯৩২ সনের ৩রা জলাই তাঁহার মত্যু হইয়াছে।

 প্রসন্নময়ী দেবী। ইনি সার্‌ আশুতোষ চৌধুরীর জ্যেষ্ঠা ভগিনী ও প্রিয়ম্বদা দেবীর মাতা; জন্ম ১৮৫৭ সনে। ইঁহার পিতা পাবনা জেলার হরিপুর গ্রাম-নিবাসী দুর্গাদাস চৌধুরী। দশ বৎসর বয়সে পাবনা গুণাইগাছা গ্রাম-নিবাসী কৃষ্ণকুমার বাগচীর সহিত প্রসন্নময়ীর বিবাহ হয়। বিবাহের দুই বৎসর পরেই তাঁহার স্বামী উন্মাদরোগগ্রস্ত হন; সেই অবধি তিনি পিত্রালয়েই কাটাইয়াছেন।

 প্রসন্নময়ী শৈশব হইতেই সাহিত্যচর্চায় আত্মনিয়োগ করিয়াছিলেন। তাঁহার ‘বনলতা’ও ‘নীহারিকা’ কাব্য দুইখানি তাঁহাকে সাহিত্যসমাজে সুপ্রতিষ্ঠ করিয়াছিল। তাঁহার রচিত গ্রন্থাবলীর কালানুক্রমিক তালিকা:

১ আধ আধ ভাষিণী (কাব্য): ১২৭৬ সাল (১৪-২-১৮৭০)। পৃ ১২।
২ পূর্ব্বস্মৃতি। কৃষ্ণনগর ২১ বৈশাখ ১২৮২ (ইং ১৮৭৫)।[৫]
৩ যুবরাজ প্রিন্স অব ওয়েলসের ভারতবর্ষে শুভাগমন (কবিতা) (২৭-১২-১৮৭৫)। পৃ ২৬।
৪ বনলতা (কাব্য): ১২৮৭ সাল (২০-৫-১৮৮০)। পৃ ১১৯।
৫ নীহারিকা (কাব্য)
১ম ভাগ, ১২৯০ সাল (২৩-৮-১৮৮৪)। পৃ; ১৪৯।
২য় ভাগ, অগ্রহায়ণ ১৮১৮ শক (১১-১২-১৮৯৬)। পৃ ১৬২।
৬ আয্যাবর্ত্ত (ভ্রমণ): পৌষ ১২৯৫ (১২-১-১৮৮৯)। পৃ ১৭৭।
৭ অশোকা (উপন্যাস): ১২৯৬ সাল (১০-৪-১৮৯০)। পৃ ৬২।
৮ তারাচরিত (জীবনী): ১৩২৪ সাল (৩-৯-১৯১৭)। পৃ ১১৬।
৯ পূর্ব্বকথা (জীবনী): ১৩২৪ সাল (১৯-১০-১৯১৭)। পৃ ১৮৭।

১৯৩৯ সনের ২৫এ নবেম্বর প্রসন্নময়ী পরলোকগমন করিয়াছেন।

 জ্ঞানদানন্দিনী দেবী। ১৮৫২ খ্রীস্টাব্দে যশোহর জেলার নরেন্দ্রপুর গ্রামে জ্ঞানদানন্দিনীর জন্ম হয়। তাঁহার পিতার নাম অভয়াচরণ মুখোপাধ্যায়। ১৮৫৯ সনে, আট বৎসর বয়সে, মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের দ্বিতীয় পুত্র সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সহিত জ্ঞানদানন্দিনীর বিবাহ হয়। স্বামীর উৎসাহ ও নিজের যত্ন-চেষ্টায় জ্ঞানদানন্দিনী নিজেকে সুশিক্ষিতা করিয়া তুলিয়াছিলেন। বাংলা সাহিত্যের প্রতি তাঁহার আন্তরিক অনুরাগ ছিল। পুরাতন ‘ভারতী’র পৃষ্ঠায় মুদ্রিত তাঁহার এই কয়টি রচনার সন্ধান পাওয়া গিয়াছে:

শ্রাবণ, ১২৮৮: ইংরাজ-নিন্দা ও দেশানুরাগ
আশ্বিন, ১২৮৮: স্ত্রী-শিক্ষা
অগ্রহায়ণ, ১২৮৮: কিণ্টারগার্টেন।
মাঘ-চৈত্র ১২৯০;   ভাউ সাহেবের বখর
বৈশাখ-আষাঢ়-শ্রাবণ-    
আশ্বিন ১২৯১   (মরাঠী হইতে অনূদিত)

 জ্ঞানদানন্দিনীর নিকট হইতে আমরা দুইখানি সুলিখিত শিশুপাঠ্য পুস্তক লাভ করিয়াছি; সেগুলি:

১ টাক্‌ ডুমা ডুম্‌ ডুম্‌ (নাটিকা): (৬-৬-১৯১০)। পৃ ১৭।
২ সাত ভাই চম্পা (নাটিকা): (২৬-১২-১৯১১)। পৃ ৫২।

১৩৪৮ সালের ১৫ই আশ্বিন, ৯০ বৎসর বয়সে, জ্ঞানদানন্দিনী পরলোকগমন করিয়াছেন।

 শরৎকুমারী চৌধুরাণী। শরৎকুমারীর জন্ম ১৮৬১ সনের ১৫ই জুলাই। তাঁহার পিতার নাম শশিভূষণ বসু (কলিকাতা চোরবাগানের বসু-বংশজাত); তিনি ১৮৬৩ সনে চাকুরী উপলক্ষে সুদূর লাহোরে গমন করিয়াছিলেন। শরৎকুমারীর শৈশব লাহোরেই কাটে। ১৮৭১ সনের ১২ই মার্চ আন্দুলের বিখ্যাত চৌধুরী-বংশের অক্ষয়চন্দ্র চৌধুরীর সহিত তাঁহার বিবাহ হয়। অক্ষয়চন্দ্র সুকবি ছিলেন; স্বামীর ন্যায় শরৎকুমারীও মাতৃভাষার পরম অনুরাগিণী ছিলেন। পুরাতন সাময়িক-পত্রের পৃষ্ঠা অন্বেষণ করিলে তাঁহার বহু রস-রচনার সন্ধান মিলিবে। তাঁহার প্রথম রচনা ‘কলিকাতার স্ত্রীসমাজ’ ১২৮৮ সালের ভাদ্র ও কার্তিক-সংখ্যা ‘ভারতী’তে প্রকাশিত হয়। এক মাত্র ‘শুভবিবাহ’ (মার্চ ১৯০৬) ছাড়া শরৎকুমারীর আর কোনো রচনা পুস্তকাকারে প্রকাশিত হয় নাই। এই সামাজিক চিত্রখানি বঙ্গসাহিত্যে লেখিকাকে একটি বিশিষ্ট আসন দান করিয়াছে। ইহার সমালোচনা-প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ লিখিয়াছিলেন:

 “এমন সজীব সত্য চিত্র বাংলা কোনো গল্প বইয়ে আমরা দেখি নাই।”

 তাঁহার সমগ্র রচনাবলী সম্প্রতি গ্রন্থাবলী-আকারে বঙ্গীয়-সাহিত্য-পরিষৎ কর্তৃক প্রকাশিত হইয়াছে।

 শরৎকুমারীর শেষজীবন বৈধব্য অবস্থায় কাটে; স্বামীর মৃত্যুর (৫-৯-১৮১৮) ২২ বৎসর পরে—১৯২০ সনের ১১ই এপ্রিল তিনি পরলোকগমন করিয়াছেন।

 মোক্ষদায়িনী মুখোপাধ্যায় (মোক্ষদা দেবী)। ইনি ডবলিউ. সি. বোনার্জীর সহোদরা। বউবাজারের প্রতিষ্ঠাতা ধনকুবের বিশ্বনাথ মতিলালের দৌহিত্র শশিভূষণ মুখোপাধ্যায়ের সহিত ইঁহার বিবাহ হয়। মোক্ষদায়িনী উচ্চশিক্ষিতা মহিলা ছিলেন। তাঁহার রচিত ‘বন-প্রসূন’ কাব্য সমালোচনাকালে সঞ্জীবচন্দ্র-সম্পাদিত ‘বঙ্গদর্শন’ (জ্যৈষ্ঠ ১২৮৯) যে মন্তব্য করেন, তাহা উদ্ধারযোগ্য:

 “মুখোপাধ্যায় মহাশয়ার কবিতাগুলি পড়িয়া আমরা মুক্তকণ্ঠে বলিতে পারি যে তিনি ক্ষমতাশালিনী বটে। .. আমরা এই গ্রন্থকর্ত্রীর অন্যান্য গুণের প্রশংসা ছাড়িয়া দিয়া তাঁহার কাব্যগত সাহসের প্রশংসা করিব। সকলেই জানেন, বাঙ্গালায় সাহিত্যসংগ্রামক্ষেত্রে বাবু হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় অদ্বিতীয় মহারথী। তাঁহার প্রতি শরসন্ধানে সাহস করে বাঙ্গালার পুরুষ লেখকদিগের মধ্যে এমন শূর বীর কেহ নাই। তাঁহার প্রণীত “বাঙ্গালীর মেয়ে” নামক কবিতার জ্বালায় অনেক বাঙ্গালীর মেয়ে আজিও কাতর। আজি সেই আঘাতের প্রতিশোধের জন্য এই কাব্যবীরাঙ্গনা বদ্ধপরিকর—ধৃতাস্ত্র। হেমচন্দ্রের ঐ কবিতার উত্তরে মোক্ষদায়িনী “বাঙ্গালির বাবু” শিরোনামে একটি কবিতা লিখিয়াছেন। কবিতাটি বড় রঙদার—লেখিকার লিপিশক্তিপরিচায়িকা—আদ্যোপান্ত পাঠের যোগ্য।”

 রচনার নিদর্শন-স্বরূপ আমরা মোক্ষদায়িনী-লিখিত ‘বাঙ্গালির বাবু’ কবিতাটির কয়েক পংক্তি উদ্ধৃত করিতেছি:

“হায় হায় অই যায় বাঙ্গালীর বাবু।
দশ্‌টা হ’তে চারটাবধি দাস্য বৃত্তি করা
সারাদিন বইতে হয় দাসত্ব পশরা।

উকীল, ডেপুটি কেহ, কেহ বা মাষ্টার,
সব্‌জজ কেরাণী কেহ, ওভারসিয়ার,
বড় কর্ম্ম বড় মান, অহঙ্কার কত
ধরারে দেখেন বাবু সরাখানা মত।
সারা দিন খেটে খেটে, রক্ত উঠে মুখে
পেগের বড়াই হয় ঘরে এসে সুখে।”

আমরা মোক্ষদায়িনীর রচিত এই তিনখানি গ্রন্থের সন্ধান পাইয়াছি:

১ বন-প্রসূন (কাব্য)। ইং ১৮৮২।
২ সফল স্বপ্ন (ইতিবৃত্তমূলক উপন্যাস)। ইং ১৮৮৪ (১২ ডিসেম্বর)। পৃ ১৬৯।
৩ কল্যাণ-প্রদীপ (জীবনী)। অগ্রহায়ণ ১৩৩৫ (ইং ১৯২৮)। পৃ ৪২৯।

 গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী। ইহার জন্ম ১৮৫৮ সনের ১৮ই আগস্ট। পিতার নাম হারাণচন্দ্র মিত্র। দশ বৎসর বয়সে গিরীন্দ্রমোহিনীর বিবাহ হয়। তাঁহার স্বামী নরেশচন্দ্র দত্ত, বউবাজার-নিবাসী অক্রূর দত্তের প্রপৌত্র দুর্গাচরণের কনিষ্ঠ পুত্র। ১৮৮৪ সনে গিরীন্দ্রমোহিনীর বৈধব্য ঘটে। তিনি দ্বাদশ বর্ষ হইতেই কবিতারচনায় হস্তক্ষেপ করেন। তাঁহার রচিত ‘অশ্রুকণা’ বাংলা-সাহিত্যে তাঁহাকে প্রতিষ্ঠা দান করিয়াছিল। গিরীন্দ্রমোহিনীর গ্রন্থগলির তালিকা।

১ জনৈক হিন্দুমহিলার পত্রাবলী: (১৯ ফেব্রুয়ারি ১৮৭২)। পৃ ১৭।
২ কবিতাহার (কাব্য): ২৯ মাঘ ১২৭৯ (ইং ১৮৭৩)। পৃ ৩৯।
৩ ভারত-কুসম (কাব্য): ১ কার্তিক ১২৯৯ (ইং ১৮৮২)। পৃ ৮৮।
৪ অশ্রুকণা (কাব্য): ১২৯৪ সাল (ইং ১৮৮৭)।
৫ আভাষ (কাব্য): ১২৯৭ সাল (৫-৪-১৮৯০)। পৃ ১৪১।
৬ সন্ন্যাসিনী বা মীরাবাই (ঐতিহাসিক নাট্যকাব্য): ১ কার্তিক ১২৯৯ (ইং ১৮৯২)। পৃ ১০৩।
৭ শিখা (কাব্য): ১৩০৩ সাল (২৮-৪-১৮৯৬)। পৃ ১৫৮।
৮ অর্ঘ্য (কাব্য): ১৩০৯ সাল (১০-৯-১৯০২)। পৃ ৮২।
৯ স্বদেশিনী (কাব্য): ১৩১২ সাল (২৫-২-১৯০৬)। পৃ ২৭।

১০ সিন্ধুগাথা (কাব্য): ১৩১৪ সাল (৬-৫-১৯০৭)। পৃ ৮২।

১৯২৪ সনের ১৬ই আগস্ট গিরীন্দ্রমোহিনীর মত্যু হইয়াছে।

 মানকুমারী বসু। ১৮৬৩ সনের ২৫এ জানুয়ারি যশোহর জেলায় শ্রীধরপুর গ্রামে মাতুলালয়ে মানকুমারীর জন্ম হয়। ইনি মাইকেল মধুসূদনের জ্ঞাতিভ্রাতুষ্পুত্রী। ইঁহার পিতার নাম আনন্দমোহন দত্ত চৌধুরী। ১৮৭৩ সনে, দশ বৎসর বয়সে, বিদ্যানন্দকাটী গ্রামের বিবুধশংকর বসুর সহিত মানকুমারীর বিবাহ হয়। উনিশ বৎসর পর্ণ হইতে-না-হইতেই ইঁহার বৈধব্য ঘটে। বিধবা হইবার পর সংসারের নিত্যনৈমিত্তিক কার্যে মানকুমারীর মন বসিত না, ইনি শেষে সাহিত্য-সেবায় আত্মনিয়োগ করেন। ইঁহার রচিত গ্রন্থগুলির তালিকা দিতেছি:

১ প্রিয়প্রসঙ্গ বা হারাণো প্রণয় (গদ্য-পদ্য): ইং ১৮৮৪ (২৪ ডিসেম্বর)। পৃ ১৩০।
২ বনবাসিনী (উপন্যাস): ভাদ্র ১২৯৫ (৫-৯-১৮৮৮)। পৃ ২৩।
৩ বাঙ্গালী রমণীদিগের গৃহধর্ম্ম (সন্দর্ভ): (১৫-৭-১৮৯০)। পৃ ১২।
৪ দুইটি প্রবন্ধ: ১২৯৮ সাল (২২-১২-১৮৯১)। পৃ ৩২।
৫ কাব্যকুসুমাঞ্জলি (কাব্য): ইং ১৮৯৩ (২ অক্টোবর)। পৃ ২৭১।
৬ শুভ সাধনা (গদ্য-পদ্য সংকলন): ১৩০১ সাল।
৭ কনকাঞ্জলি (কাব্য): ১৩০৩ সাল (২৯-১০-১৮৯৬)। পৃ ২৬০।
৮ বীরকুমার-বধ কাব্য: ১৩১০ সাল (১০-৫-১৯০৪)। পৃ ২৩৫।
৯ বিভূতি (কাব্য): চৈত্র ১৩৩০ (১২-৪-১৯২৪)। পৃ ৩১১+১।
১০ সোনার সাথী (কাব্য): (২-৫-১৯২৭)। পৃ ৫০।
১১ পুরাতন ছবি (আখ্যায়িকা): (২৫-৭-১৯৩৬)। পৃ ১৩১।

 ছোট গল্প রচনায় মানকুমারী সিদ্ধহস্ত ছিলেন। ‘কুন্তলীন-পুরস্কারে’র প্রথম (১৩০৩), তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষে (১৩০৫-৬) তাঁহার গল্প স্থান পাইয়াছিল। ১৯৪৩ সনের ২৬এ ডিসেম্বর, ৮১ বৎসর বয়সে, তাঁহার মৃত্যু হইয়াছে।

 কামিনী রায়। ১৮৬৪ সনের ১২ই অক্টোবর বাখরগঞ্জ জেলার অন্তর্গত বাসণ্ডা গ্রামে এক বৈদ্য পরিবারে কামিনী দেবীর জন্ম হয়। তাঁহার পিতা লব্ধপ্রতিষ্ঠ লেখক চণ্ডীচরণ সেন। ১৮৮৬ সনে কামিনী বেথুন ফিমেল স্কুল হইতে কৃতিত্বের সহিত বি. এ. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৮৯৪ সনে স্ট্যাটুটরি সিবিলিয়ান কেদারনাথ রায়ের সহিত তাঁহার বিবাহ হয়। ১৯০৯ সনে তাঁহার বৈধব্য ঘটে।

 কামিনী আট বৎসর বয়স হইতেই কবিতা লিখিতে আরম্ভ করেন। তাঁহার ‘আলো ও ছায়া’ কাব্যখানি সাহিত্যসমাজে তাঁহাকে স্থায়ী আসন দান করিয়াছিল। কামিনী রায়ের রচিত গ্রন্থগুলির একটি কালানুক্রমিক তালিকা দিতেছি:

১ আলো ও ছায়া (কাব্য): ইং ১৮৮৯ (১ নবেবর)। পৃ ১৬৮।
২ নির্মাল্য (কাব্য): (১ এপ্রিল ১৮৯১)। পৃ ৮০।
৩ পৌরাণিকী (কাব্য): ১৮১৯ শক (ইং ১৮৯৭)। পৃ ৬০।
৪ গুঞ্জন (শিশুরাজ্যের কবিতা): ১৩১১ সাল (১৫-৫-১৯০৫)। পৃ ৬৬।
৫ ধর্ম্মপুত্র (গল্প): ১৩১৪ সাল (১৫-৭-১৯০৭)। পৃ ৪২।
৬ অশোক-স্মৃতি (জীবনী): (২ জুন ১৯১৩)। পৃ ৩২।
৭ শ্রাদ্ধিকী (জীবনী): ইং ১৯১৩ (৪ জুন)। পৃ ১০৩।
৮ মাল্য ও নির্ম্মাল্য (কাব্য): ইং ১৯১৩ (২৫ সেপ্টেম্বর)। পৃ ১৬০।
৯ অশোক-সঙ্গীত (সনেটগুচ্ছ: ইং ১৯১৪ (২৩ ডিসেম্বর)। পৃ ৫৮।
১০ অম্বা (নাট্যকাব্য): ইং ১৯১৫ (৮ এপ্রিল)। পৃ ১০৪।
১১ সিতিমা (গদ্য নাটিকা): ইং ১৯১৬ (১৭ এপ্রিল)। পৃ ৬২।
১২ বালিকা শিক্ষার আদর্শ—অতীত ও বর্ত্তমান (নিবন্ধ): (১ সেপ্টেম্বর ১৯১৮)। পৃ ৩৫।
১৩ ঠাকুরমার চিঠি (কবিতা): (১৭ মে ১৯২৪)। পৃ ২৩।
১৪ দীপ ও ধূপ (কাব্য): ইং ১৯২৯। পৃ ১৭৬।
১৫ জীবনপথে (সনেটগুচ্ছ): ইং ১৯৩০। পৃ ৭০।

১৯৩৩ সনের ২৭এ সেপ্টেম্বর কামিনী রায়ের মৃত্যু হইয়াছে।

 কুসুমকুমারী দেবী। ইনি বরিশালের অন্তর্গত লাখুটিয়ার জমিদার রাখালচন্দ্র রায় চৌধুরীর পত্নী, কবি দেবকুমার রায় চৌধুরীর জননী। কুসুমকুমারী স্বামীর নিকট উৎসাহ লাভ করিয়া স্বীয় অবসরকাল মাতৃভাষার সেবায় নিয়োজিত করিয়াছিলেন। তাঁহার রচিত পুস্তকগুলির কালানুক্রমিক তালিকা দিতেছি; তিনি কোনো পুস্তকেই নিজ নাম প্রকাশ করেন নাই:

১ স্নেহলতা (সামাজিক উপন্যাস): ১১ মাঘ ১২৯৬ (২৭-২-১৮৯০)। পৃ ১৯২।[৬] “কোন মহিলা কর্তৃক প্রণীত।”
২ প্রেমলতা (সামাজিক উপন্যাস): ১১ আশ্বিন ১২৯৯ (ইং ১৮৯২)। পৃ ২৬৮।
৩ প্রসূনাঞ্জলি (সন্দর্ভাবলী): ১৩০৭ সাল। (৩০-৯-১৯০০)। পৃ ২৭+১৬।
৪ শান্তিলতা (উপন্যাস): (২৭-৯-১৯০২)। পৃ ২৫৭।
৫ লুৎফ-উন্নিসা (ঐতিহাসিক উপন্যাস): ১৩১২ সাল (৩-৯-১৯০৫)। পৃ ২০০।

 কুসুমকুমারীর পুস্তকগুলি[৭] সুধীসমাজে বিশেষভাবে আদৃত হইয়াছিল। ‘স্নেহলতা’-পাঠে বিদ্যাসাগর মহাশয় এইরপ অভিমত প্রকাশ করেন:

 “সমাজচরিত্র জানিবার পক্ষে ইহা একখানা সুন্দর গ্রন্থ। স্বাধীন রাজ্য হইলে ইহার পঞ্চবিংশতি সংস্করণ হইত বলিলেও অত্যুক্তি হয় না।

সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র ‘প্রেমলতা’ পাঠ করিয়া লিখিয়াছিলেন:

 “আমার বিবেচনায় গ্রন্থখানি যত দূর উৎকৃষ্ট হইতে পারে, তাহার ত্রুটি হয় নাই। প্রত্যেক পরিবারে এক একখানা প্রেমলতা থাকা বাঞ্ছনীয়।

১৩২২ সালের ভাদ্র মাসে কুসমকুমারী দেবীর মত্যু হইয়াছে।[৮]

 বিনয়কুমারী বসু (ধর)। ১৮৭২ সনের নবেম্বর মাসে বিনয়কুমারীর জন্ম। তাঁহার পিতা কাশীচন্দ্র বসু; মাতা ললিতমণি বসু, ব্যারিস্টার মনোমোহন ঘোষের জ্যেষ্ঠ সহোদরা। ১৩০০ সালের অগ্রহায়ণ মাসে ডাক্তার ভারতচন্দ্র ধরের সহিত বিনয়কুমারীর বিবাহ হয়; এই বৎসরের অগ্রহায়ণ সংখ্যা ‘সাহিত্যে’ ইঁহার নামের শেষে ‘বসু’ আছে, কিন্তু পৌষ-সংখ্যায় ‘ধর’ দেখিতেছি। তিনি বেথুন কলেজের এক জন প্রাক্তন ছাত্রী; বারো-তেরো বৎসর বয়স হইতেই সাহিত্যচর্চা শুরু করেন। ১২৯৫ সালের মাঘ-সংখ্যা ‘ভারতী ও বালকে’ তাঁহার একটি প্রাথমিক রচনা— “জাগো (বালিকার রচনা)” স্থান পাইয়াছিল। বিনয়কুমারীর কবিতা ‘সাহিত্য’, ‘ভারতী’, ‘দাসী’, ‘প্রদীপ’ প্রভৃতি মাসিকপত্রে সাদরে স্থান লাভ করিত। আমরা তাঁহার দুইখানি কাব্যের উল্লেখ পাইয়াছি; উহা:

১ নব মকুল (কাব্য): (৫ সেপ্টেম্বর ১৮৮৭)। পৃ ৯০।
২ নির্ঝর (কাব্য): (১১ সেপ্টেম্বর ১৮৯১)। পৃ ১০২।

 প্রমীলা বসু (নাগ)। ১৮৭১ সনে প্রমীলার জন্ম। তাঁহার পিতা বিজয়চন্দ্র বসু; মাতা লালমণি বসু, মনোমোহন ঘোষের কনিষ্ঠা সহোদরা। ইঁহার পিত্রালয় বিক্রমপুর। ১২৯৭ সালে বিলাত-ফেরত ডাক্তার গঙ্গাকান্ত নাগের সহিত প্রমীলার পরিণয় হয়।[৯] অতি অল্প বয়সেই ইঁহার কাব্য প্রতিভা স্ফূরিত হয়। ১২৯৩ সাল হইতে ইঁহার রচিত কবিতা ‘বামাবোধিনী পত্রিকা’, ‘ভারতী’, ‘নব্যভারত’, ‘সাহিত্য’ (১২৯৮-১৩০০, ১৩০৪-৫), ‘প্রতিমা’ প্রভৃতি সে যুগের শ্রেষ্ঠ পত্রিকায় স্থান লাভ করিয়াছিল। প্রমীলার এই দুইখানি কাব্যগ্রন্থের সন্ধান পাওয়া গিয়াছে:

১ প্রমীলা (কাব্য): জ্যৈষ্ঠ ১২৯৭ (ইং ১৮৯০)। পৃ ১২৫।
২ তটিনী (কাব্য): ইং ১৮৯২। পৃ ১৪৮।

১৩০৩ সালে প্রমীলা অকালে পরলোকগমন করেন।[১০]

 কৃষ্ণভাবিনী দাস। আনমোনিক ১৮৬৪ সনে বহরমপুরের অন্তর্গত কাজলা গ্রামে এক জমিদার-গহে কৃষ্ণভাবিনীর জন্ম হয়। দশ বৎসর বয়সে বউবাজার-নিবাসী শ্রীনাথ দাসের পুত্র—‘সেঞ্চুরী কলেজ’-প্রতিষ্ঠাতা ব্যারিস্টার দেবেন্দ্রনাথ দাসের সহিত তাঁহার বিবাহ হয়। ইনি স্বামীর সহিত বিলাত যাত্রা করিয়াছিলেন। বিলাত হইতে ফিরিবার পর, তাঁহার লিখিত ‘ইংরাজদের পর্ব্ব’ ও ‘বিলাতের গল্প’ ১৮৯২ সনের ‘সখা’য় প্রকাশিত হইয়াছিল। এই বিদূষী মহিলার বহু সুলিখিত সন্দর্ভ ‘ভারতী’ (১২৯৬..), ‘সাহিত্য’ (১২৯৮..), ‘প্রদীপ’ (১৩০৪..), ‘প্রবাসী’ ‘ভারতবর্ষ’ প্রভৃতির পুরাতন পৃষ্ঠায় বিক্ষিপ্ত রহিয়াছে। কৃষ্ণভাবিনী নারীকল্যাণ-কার্যে জীবন উৎসর্গ করিয়াছিলেন; তিনি ভারতস্ত্রী-মহামণ্ডলের প্রাণস্বরূপ ছিলেন বিলাত-ফেরত হইয়াও তিনি বৈধব্যাবস্থায় হিন্দুবিধবার ন্যায় জীবন যাপন করিয়া গিয়াছেন। ১৯১৯ সনের ২৭এ ফেব্রুয়ারি তাঁহার মৃত্যু হইয়াছে।[১১]

 অম্বুজাসুন্দরী দাসগুপ্তা। ১৮৭০ সনে পাবনা জেলার ভাঙ্গাবাড়ী গ্রামে অম্বুজাসুন্দরীর জন্ম হয়। তাঁহার পিতা গোবিন্দনাথ সেন রাজসাহীর একজন উকীল ছিলেন। কবি রজনীকান্ত সেন এই গোবিন্দনাথেরই ভ্রাতুষ্পুত্র। অম্বুজাসুন্দরীর বিবাহ হয় ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট কৈলাসগোবিন্দ দাসের সহিত। কিশোর বয়স হইতেই তাঁহার অন্তরে কবিত্বশক্তির উন্মেষ হয়; বিদ্যোৎসাহী স্বামীর সংস্পর্শে আসিয়া তাঁহার কবিপ্রতিভা বিকশিত হয় ও তিনি বিদ্যাচর্চা করিবার সংযোগ লাভ করেন। ‘বামাবোধিনী পত্রিকা,’ ‘সাহিত্য’, ‘নব্যভারত’ প্রভৃতি মাসিকপত্রে ও ‘কুন্তলীন-পুরষ্কারে’ অম্বুজাসুন্দরীর গদ্য-পদ্য বহু রচনা প্রকাশিত হইয়াছে। তাঁহার রচিত গ্রন্থগুলি এই:

১ কবিতালহরী: (১০-৯-১৮৯২)। পৃ ২১।
২ অশ্রুমালা (কাব্য): (১২-১০-১৮৯৪)। পৃ ২৪।
৩ প্রীতি ও পূজা (কাব্য): ১৩০৪ সাল (২-৯-১৮৯৭)। পৃ ১৪১।
৪ খোকা (শোক-কবিতা): সংবৎ ১৯৫৯ (২৫-৪-১৯০৩)। পৃ ২১২।
৫ প্রভাতী (উপন্যাস): ইং ১৯০৫ (১০ জুলাই)। পৃ ৪৬।
৬ দুটি কথা (গল্প): ১৩১২ সাল (৬-২-১৯০৬)। পৃ ৬৯।
৭ ভাব ও ভক্তি (কাব্য): ১৩১৩ সাল (২৫-১-১৯০৭)। পৃ ১৬৮।
৮ গল্প: ১৩১৩ সাল (১৭-৪-১৯০৭)। পৃ ১৭৭।
৯ প্রেম ও পণ্য (কাব্য): ১৩১৭ সাল (২০-৫-১৯১০)। পৃ ১৮৩।

 ইহা ছাড়া তিনি ভাগবতের সারাংশ লইয়া ‘শ্রীশ্রীকৃষ্ণলীলামৃত ’(ইং ১৯৩২) ও পরে ‘শ্রীশ্রীকৃষ্ণকেলিরসালাপ’ (১৩৪১), ‘শ্রীশ্রীরামকীর্ত্তি সুধা’, ‘শ্রীশ্রীকৃষ্ণের সহস্র নাম’ প্রভৃতি কবিতাগ্রন্থ রচনা করিয়াছিলেন। ১৯৪৬ সনের ১লা জানয়োরি তারিখে অম্বুজাসুন্দরীর মৃত্যু হইয়াছে।

 মৃণালিনী সেন। ১৮৭৯, ৩রা আগস্ট মৃণালিনী জন্মগ্রহণ করেন। ইঁহার পিতা ডাক্তার লাড্‌লিমোহন ঘোষ। ইনি ১৩ বৎসর বয়সে পাইকপাড়ার ভূম্যধিকারী ইন্দ্রচন্দ্র সিংহের সহিত পরিণীতা হন। বিবাহের দুই বৎসর পরে ইঁহার বৈধব্য ঘটে। স্বামি-বিয়োগ-বিধুর অবস্থায় মৃণালিনী কাব্য চর্চায় প্রবৃত্ত হন। তাঁহার নিকট হইতে আমরা এই চারিখানি কাব্যগ্রন্থ লাভ করিয়াছি:

১ প্রতিধ্বনি (কাব্য): ১৩০১ সাল (১০-৮-১৮৯৪)। পৃ ১৮৪।
২ নির্ঝরিণী (কাব্য): ১৩০২ সাল (৭-৫-১৮৯৫)। পৃ ১৬৩।
৩ কল্লোলিনী (গীতিকাব্য): ১৩০৩ সাল (ইং ১৮৯৬)। পৃ ২৩৭।
৪ মনোবীণা (কাব্য): মাঘ ১৩০৬ (২৪-৪-১৯০০)। পৃ ২৫৯।

 ১৯০৫ সনে ব্রহ্মানন্দ কেশবচন্দ্র সেনের দ্বিতীয় পুত্র নির্মলচন্দ্র সেনের সহিত মৃণালিনীর বিবাহ হয়। ইনি স্বামীর সহিত বহু দিন বিলাতে কাটাইয়াছেন। নারীপ্রগতিমূলক বহু কার্যে ইঁহার নাম যুক্ত দেখা যায়।

 সরোজকুমারী দেবী। ইনি সুপ্রসিদ্ধ সাহিত্যিক নগেন্দ্রনাথ গুপ্তের ভগিনী। ইঁহার জন্ম ৪ নবেম্বর ১৮৭৫ তারিখে। দশ বৎসর বয়সে (ইং ১৮৮৬) কলুটোলার সেন-বংশীয় যোগেন্দ্রনাথ সেনের সহিত ইঁহার বিবাহ হয়; যোগেন্দ্রনাথ সম্বলপরের গভর্নমেণ্ট উকীল ছিলেন। সরোজকুমারী বিবাহের পর নিজের চেষ্টায় লেখাপড়া শিখিয়াছিলেন। ১২৯৫ সাল হইতে তিনি ‘ভারতী’তে ও ১২৯৭ সাল হইতে ‘সাহিত্যে’ লিখিতে শুরু করেন। তাঁহার রচিত এই কয়খানি গ্রন্থের সন্ধান মিলিয়াছে:

১ হাসি ও অশ্রু (কাব্য): মাঘ ১৩০১ (ইং ১৮৯৫)। পৃ ২৯৫।
২ অশোকা (কাব্য): ১৩০৮ সাল (৬-৭-১৯০১)। পৃ ২৭৪।
৩ কাহিনী বা ক্ষুদ্র গল্প: ১৩১২ সাল (৩০-১১-১৯০৫)। পৃ ৩১৬।
৪ শতদল (কাব্য): (২ ৬-৯-১৯১০)। পৃ ১০২।

৫ অদৃষ্ট-লিপি (গল্প): (২২-৩-১৯১৫)। পৃ ১৭৭।:৬ ফুলদানি (গল্প): (৮-১০-১৯১৫)। পৃ ১৫৫।

১৯২৬ সনে সরোজকুমারীর মৃত্যু হইয়াছে।[১২]

 নগেন্দ্রবালা মুস্তোফী (সরস্বতী)। ১৮৭৮ সনে নগেন্দ্রবালার জন্ম হয়। ইঁহার পিতার নাম নৃত্যগোপাল সরকার। দশ বৎসর বয়সে তিনি হুগলি জেলার সুখড়িয়া গ্রাম-নিবাসী খগেন্দ্রনাথ মুস্তোফীর সহিত বিবাহিত হন। খগেন্দ্রনাথ সাব-রেজিস্ট্রার ছিলেন। বিবাহের পর হইতে নগেন্দ্রবালা কবিতা-রচনায় হস্তক্ষেপ করেন। তাঁহার রচিত এইসকল গ্রন্থের সন্ধান পাওয়া গিয়াছে:

১ মর্ম্মগাথা (কাব্য): ১৩০৩ সাল (২৫-৯-১৮৯৬)। পৃ ১৭০।
২ প্রেম-গাথা (কাব্য): অগ্রহায়ণ ১৩৩৫ (১০-১২-১৮৯৮)। পৃ ১৫৫।
৩ নারীধর্ম্ম (সন্দর্ভ): (৪-১২-১৯০০)। পৃ ১০৮।
৪ অমিয়গাথা (কাব্য): ১৩০৮ সাল (২৫-৩-১৯০২)। পৃ ২১০।
৫ ব্রজগাথা (কাব্য): (২০-১২-১৯০২)। পৃ ২৫০।
৬ ধবলেশ্বর (কাব্য): (১৭-৩-১৯০৩)। পৃ ২২।
৭ গার্হস্থ্যধর্ম্ম (সন্দর্ভ): (১২-১২-১৯০৪)। পৃ ১২৮।
৮ বসন্ত গাথা (কাব্য): (২৩-১-১৯০৫)। পৃ ৩১।
৯ কণা (কাব্য): ১৩১২ সাল (১৬-৬-১৯০৫)। পৃ ৬০।
১০ কুসুম গাথা (কাব্য): ১৩১২ সাল (১২-১২-১৯০৫)। পৃ ৯০।
১১ সতী (সামাজিক উপন্যাস): ১৩১৩ সাল (২-৮-১৯০৬)। পৃ ৭৮।

১৩১৩ সালের বৈশাখ মাসে অকালে নগেন্দ্রবালার মত্যু হইয়াছে।[১৩]

 হিরন্ময়ী দেবী। ইনি স্বর্ণকুমারী দেবীর জ্যেষ্ঠা কন্যা। শিশুপাঠ্য মাসিকপত্র ‘সখা’য় (ডিসেম্বর ১৮৮৩) প্রকাশিত ‘ভাইবোনের দোলনা’ কবিতাটিই বোধ হয় ইঁহার প্রথম মুদ্রিত রচনা। ১২৯১ সালের বৈশাখ সংখ্যা ‘ভারতী’ ও ১২৯২ সালের ‘বালকে’ও ইঁহার কয়েকটি প্রাথমিক রচনা মুদ্রিত হইয়াছে। বিশেষ করিয়া ‘ভারতী’র পৃষ্ঠায় হিরন্ময়ীর বহু গদ্য-পদ্য রচনার সন্ধান মিলিবে। পুস্তকাকারে তিনি কোনো কিছই রাখিয়া

যান নাই। ইনিও অন্যতর সম্পাদিকারূপে তিন বৎসর ‘ভারতী’ পরিচালনা করিয়া গিয়াছেন। ১৯২৫ সনের ১৩ই জুলাই তাঁহার মৃত্যু হইয়াছে।

 সরলা দেবী। ইনি স্বর্ণকুমারী দেবীর কনিষ্ঠা কন্যা; জন্ম ১৮৭২ সনের ৯ই সেপ্টেম্বর। ১৮৯০ সনে ইনি বেথুন কলেজ হইতে কৃতিত্বের সহিত বি. এ. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯০৫ সনে পঞ্জাবের আর্য সমাজ-নেতা পণ্ডিত রামভজ দত্ত চৌধুরীর সহিত ইঁহার বিবাহ হয়। ১৯২৩ সনের ৬ই আগস্ট রামভজের মত্যু হয়।

 জীবনের দীর্ঘ কাল দেশসেবায় নিজেকে উৎসর্গ করিলেও সরলা দেবী মাতৃভাষার প্রতি উদাসীন ছিলেন না। প্রকৃতপক্ষে শৈশবাবধি সাহিত্যের প্রতি তাঁহার প্রগাঢ় অনুরাগ ছিল। ১২৯২ সালের জ্যৈষ্ঠ-সংখ্যা ‘বালকে’ তাঁহার লিখিত প্রথম রচনা—‘দুর্ভিক্ষ (বালিকার রচনা)’ প্রকাশিত হয়। ১৮৮৫ সনের নবেম্বর-সংখ্যা ‘সখা’য় তাঁহার পুরস্কারপ্রাপ্ত রচনা ‘পিতামাতার প্রতি কিরূপ ব্যবহার করা কর্ত্তব্য’ স্থানলাভ করে; রচনার শেষে লেখিকার বয়স ‘১২ বংসর ১১ মাস’ দেওয়া আছে। ১২৯৪ সাল হইতে আরম্ভ করিয়া সরলা দেবী ‘ভারতী’তে বহু গদ্য-পদ্য রচনা ও স্বরলিপি প্রকাশ করিয়াছেন; ১৩০০ সালের আশ্বিন-সংখ্যা ‘ভারতী ও বালকে’ তাঁহার কৃত ‘বন্দে মাতরং’ গানের স্বরলিপি স্থান পাইয়াছে। তিনি অনেক কাল ‘ভারতী’ও সম্পাদন করিয়াছেন। একদা তাঁহার রচনা সাহিত্য-সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্রের প্রশংসাও অর্জন করিয়াছিল। সরলা দেবী তাঁহার স্মৃতিকথায় বলিয়াছেন:

 “‘ভারতী’তে আমার আঠার উনিশ বৎসরের লেখা ‘রতিবিলাপ’ [‘ভারতী ও বালক’, বৈশাখ ১২৯১] ও ‘মালবিকা-অগ্নিমিত্র’ [‘ভারতী ও বালক’, পৌষ, ফাল্গুন, চৈত্র ১২৯৮] পড়ে তাঁর লেখা চিঠি। সে চিঠি সাহিত্য দায়রায় দণ্ডায়মান একজন নবীনের উপর তাঁর রায়—বা তাকে দুই বাহু বাড়িয়ে আদর করে নেওয়া। যদিও রবিমামার চিঠিতে তাঁরও appreciation ব্যক্ত হয়েছিল, কিন্তু তাঁর চেয়েও সেদিন সাহিত্যসম্রাট ও সাহিত্যের ন্যায়াধীশ বঙ্কিমের রায়ে নিজেকে বেশি চরিতার্থ মনে করলুম।..শ্রীশ মজুমদার প্রভৃতি বন্ধুদের কাছে বঙ্কিম আমার লেখাগুলি সম্বন্ধে না কি নিজের সবিস্ময় অভিমত ব্যক্ত করেছিলেন—তা তাঁদের লিখিত বঙ্কিমের জীবন-প্রসঙ্গে লিপিবদ্ধ আছে। কিন্তু বঙ্কিমের লিপি আর অন্যের লিপিতে অনেক তফাৎ। বঙ্কিমের লিপিখানি ছিল পুরো বঙ্কিমী ঠাটের সাহিত্যের একখানি হীরের কুচি। বিদূষক সম্বন্ধে আমার মন্তব্যের সঙ্গে তাঁর মতের মিল হয় নি। তার উল্লেখ করে “গরীব বিদষকের” পক্ষ নিয়ে তাঁর সরস লেখনী দুই এক ছত্রে কি হাস্যের ছটাই তুলেছিল। তাই বলছি তাঁর চিঠিখানি ছিল একটি সাহিত্যিক ক্ষুদ্র রসকুম্ভ।”

 সরলা দেবীর বাংলা পুস্তক-পুস্তিকার সংখ্যা খবই কম। তিনি নিজেই জীবনস্মৃতিতে বলিয়াছেন:

 “আজ পর্যন্ত আমার সব লেখাই প্রায় ‘ভারতী’র পৃষ্ঠাতেই নিবদ্ধ এবং গানগুলি আমার খাতায় বা গায়কদের মখে মুখে। আমার লেখা-কুমারীরা মাসিকে সাপ্তাহিকে দৈনিকে ছাপাসুন্দরী হয়েছে কিন্তু গ্রন্থের ঘরণী হয় নি— মাত্র গুরুদাস চাটুয্যে কোম্পানীর আট আনার এডিশনে ছাপান ‘নববর্ষের স্বপ্ন’ নামে কতকগুলি ছোট গল্প, বড় বড় সভাসমিতিতে ভাষিত ইংরেজি ও বাঙ্গলা বক্তৃতা, ‘বঙ্গের বীর’ সিরিজের দুখানি পুস্তিকা ও ইদানীংকার দুয়েকটি আধ্যাত্মিক বিষয়ের বই ছাড়া। লাহোর থেকে দুএকবার আগেকার লেখাগুলি বই আকারে ছাপাবার চেষ্টা করে ব্যর্থশ্রম হয়েছি। ‘কবিমন্দির’ প্রভৃতি দুতিন ফর্মা ছেপে, প্রেসওয়ালাদের পকেটে টাকা ভরে’ রুদ্ধশ্বাস হয়ে গেছে।”

 আমরা সরলা দেবীর লিখিত এই কয়খানি পুস্তক-পুস্তিকার সন্ধান পাইয়াছি:

১ শতগান (স্বরলিপি সহ): বৈশাখ ১৩০৭ (ইং ১৯০০)। পৃ ২১৬।
২ বাঙ্গালীর পিতৃধন: (২৬-৫-১৯০৩)। পৃ ৯।
৩ ভারতস্ত্রী-মহামণ্ডল: (৭-৩-১৯১১)। পৃ ২৪।
৪ নব-বর্ষের স্বপ্ন (গল্প): শ্রাবণ ১৩২৫ (১৫-৭-১৯১৮)। পৃ ১৫২।
৫ কালীপূজার বলিদান ও বর্ত্তমানে তাহার উপযোগিতা (২-২-১৯২৬)। পৃ ২১।
৬ শ্রীগুরু বিজয়কৃষ্ণ দেবশর্ম্মানুষ্ঠিত শিবরাত্রিপূজা (ইং ১৯৪১)।
৭ বেদবাণী (আচার্য্য বিজয়কৃষ্ণ দেবশর্ম্মার উপদেশাবলী সরলা দেবী কর্ত্তৃক লিখিত): ১ম খণ্ড (জ্যৈষ্ঠ ১৩৫৪)-১১শ খণ্ড (পৌষ ১৩৫৭) ইং ১৯৪৭-৫০।

 ১৮ আগস্ট ১৯৪৫ তারিখে, ৭৩ বৎসর বয়সে, সরলা দেবীর মত্যু হইয়াছে। মৃত্যুর অব্যবহিত পূর্বে তিনি সাপ্তাহিক ‘দেশ’ পত্রিকায় (১১-১১-১৯৪৪—৯-৬-১৯৪৫) ‘জীবনের ঝরা পাতা’ নামে জীবনস্মৃতি বিবৃত করিয়াছিলেন। এই প্রসঙ্গে তাঁহার লিখিত ‘আমার বাল্যজীবনী’ (‘ভারতী, বৈশাখ ১৩১২) ও ‘রবীন্দ্রনাথ’ (‘ভারতবর্ষ, কার্তিক ১৩৪৬) প্রবন্ধ দুইটি পঠিতব্য।

 প্রিয়ম্বদা দেবী। ইনি প্রসন্নময়ী দেবীর একমাত্র সন্তান। ১৮৭১ সনে পাবনা জেলার গুণাইগাছা গ্রামে তাঁহার জন্ম হয়। ১৮৯২ সনে প্রিয়ম্বদা বেথুন কলেজ হইতে কৃতিত্বের সহিত বি. এ. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এই বৎসরই মধ্যপ্রদেশের ব্যবহারাজীব তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের সহিত তাঁহার বিবাহ হয়। কিন্তু পাঁচ বৎসর যাইতে-না-যাইতেই তাঁহার বৈধব্য (১৬-৯-১৮৯৫) ঘটে।

 শৈশবাবধি বাংলা-সাহিত্যে প্রিয়ম্বদার অনরাগ ছিল। ১২৯২ সালের আশ্বিন-সংখ্যা ‘বামাবোধিনী’ পত্রিকায় প্রকাশিত ‘ফুল’ নামে একটি ক্ষুদ্র সন্দর্ভই তাঁহার প্রথম মুদ্রিত রচনা। পর-বৎসর ‘ভারতী ও বালকে’ (কার্তিক ১২৯৩) তাঁহার একটি ‘গান’ “বালিকার রচনা” হিসাবে মুদ্রিত হয়। ১৩০৫ সাল হইতে ‘ভারতী’তে তাঁহার গদ্য-পদ্য বহু রচনা প্রকাশিত হইয়াছে। সুকবি হিসাবে প্রিয়ম্বদা খ্যাতি অর্জন করিয়াছিলেন। তাঁহার রচিত গ্রন্থাবলী:

১ রেণু (কাব্য): (১-৯-১৯০০)। পৃ ৬৯।
২ তারা (শোক-কবিতা): (১৮-১১-১৯০৭)। পৃ ৩৪।
৩ পত্রলেখা (কাব্য): (১০-১-১৯১১)। পৃ ১৫৮।
৪ ঝিলে জঙ্গলে শিকার (অনূদিত): (১৫-৯-১৯২৪)। পৃ ৯৮।
৫ অংশু (কাব্য): শ্রাবণ ১৩৩৪ (ইং ১৯২৭)। পৃ ১২৫।
৬ চম্পা ও পাটল (কাব্য): (ইং ১৯৩৯)। পৃ ৩৮।

 ইহা ছাড়া তিনি তিনখানি শিশ্যপাঠ্য গ্রন্থ-—‘অনাথ’ (১৮-২-১৯১৫), ‘কথা ও উপকথা’ ও ‘পঞ্চুলাল’ (ইং ১৯২৩) রচনা করিয়াছিলেন। ১৩৪১ সালের ফাল্গুন মাসে প্রিয়ম্বদার মৃত্যু হইয়াছে।[১৪]

 সরলাবালা দাসী। বাংলায় যে-কয়খানি সুপরিচিত শোক-কাব্য আছে, তাহার মধ্যে সরলাবালা দাসীর ‘প্রবাহ’ অন্যতম। তিনি কিশোরীলাল সরকারের কন্যা, ডাক্তার সরসীলাল সরকারের ভগিনী। ১২৮২ সালের ২৫এ অগ্রহায়ণ তাঁহার জন্ম, এবং ১২৯৪ সালে রায়-বাহাদুর মহিমচন্দ্র সরকারের পুত্র শরচ্চন্দ্রের সহিত বিবাহ হয়। ১৩০৫ সালের কার্তিক মাসে তাঁহার বৈধব্য ঘটে।

 তরুণ বয়স হইতেই সরলাবালার কাব্যানুরাগের পরিচয় পাওয়া যায়। ১২৯৭ সালের অগ্রহায়ণ-সংখ্যা ‘ভারতী ও বালকে’ প্রকাশিত ‘লজ্জাবতী’ নামে কবিতাটিই বোধ হয়। তাঁহার প্রথম মুদ্রিত রচনা। ‘সাহিত্য’, ‘প্রদীপ’ প্রভৃতি বহু সাময়িক-পত্রিকাতে তাঁহার কবিতা প্রকাশিত হইয়াছে। ছোট গল্প রচনাতেও তাঁহার কৃতিত্ব কম নহে; তাঁহার প্রথম গল্প ‘ঘরের লক্ষ্মী’ তৃতীয় বর্ষের ‘সাহিত্যে’ (কার্তিক ১২৯৯) মুদ্রিত হয়। ‘উৎসাহ’, ‘জাহ্নবী’, ‘উদ্বোধন' প্রভৃতির পৃষ্ঠা অনুসন্ধান করিলে সরলাবালার বহু, গদ্য-পদ্য রচনার সন্ধান মিলিবে। তিনি যে কয়খানি গ্রন্থ প্রকাশ করিয়াছেন, তাহার তালিকা:

১ প্রবাহ (শোককাব্য): ১৩১১ সাল (৮-১০-১৯০৪)। পৃ ২৫৩।
২ চিত্রপট (গল্প): (১৫-১-১৯১৭)। পৃ ২০৪।
৩ নিবেদিতা (জীবনী): জ্যৈষ্ঠ ১৩১৯ (১০-৬-১৯১২)। পৃ ৫৩।
৪ কুমুদনাথ (জীবনী): ১৩৪৪ সাল (১-৩-১৯৩৮)। পৃ ১৫৩।

 লজ্জাবতী বসু। ইনি স্বনামধন্য রাজনারায়ণ বসুর কন্যা। ইহার বহু কবিতা ‘সাহিত্য’ (১৩০০..), ‘প্রদীপ’, ‘নব্যভারত’, ‘প্রবাসী’ প্রভৃতির পৃষ্ঠায় স্থানলাভ করিয়া বঙ্গীয় পাঠক-সমাজকে আনন্দ দান করিয়াছে। ইনি আজীবন কৌমার্য-ব্রত অবলম্বন করিয়া ১৯৪২ সনের ২১এ আগষ্ট, বাহাত্তর বৎসর বয়সে, পরলোকগমন করিয়াছেন। ইঁহার প্রতিভা সম্বন্ধে ১৩৫০ সালের জ্যৈষ্ঠ-সংখ্যা ‘প্রবাসী’তে প্রকাশিত বারীন্দ্রকুমার ঘোষের আলোচনা দ্রষ্টব্য।

 লাবণ্যপ্রভা বসু (সরকার)। ইনি সার্‌ জগদীশচন্দ্র বসুর ভগিনী; ১৯০৭ সনে হেমচন্দ্র সরকার, ডি. ডি.র সহিত তাঁহার বিবাহ হয়। লাবণ্যপ্রভা বিদূষী মহিলা ছিলেন। দৈনিক ধর্ম সাধনের সাহায্যার্থ লিপির আকারে সংকলিত তাঁহার ‘দৈনিক’ গ্রন্থখানি (প্রথমার্ধ ১৮৯৯, উত্তরাধ ১৯০১) বহু ক্ষুধিত আত্মার তৃপ্তিসাধন করিয়াছে। এতদ্ব্যতীত তিনি ‘নীতি-কথা’, ‘গৃহের কথা’, ‘পরিণয়’, ‘কবি ও কাব্যের কথা’ ‘পৌরাণিক কাহিনী’ (১ম

খণ্ড, মহাভারত; ২য় খণ্ড রামায়ণ), ‘শ্রদ্ধায় স্মরণ’ (১৩১৯) প্রভৃতি আরও কয়েকখানি পুস্তকের রচয়িত্রী। তিনি সুপরিচিত শিশুপাঠ্য পত্রিকা ‘মুকুলের’ শেষ তিন বৎসর সম্পাদন করিয়াছিলেন। ১৯১৯ সনে তাঁহার মৃত্যু হইয়াছে।

 প্রজ্ঞাসুন্দরী দেবী। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের পৌত্রী, হেমেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কন্যা। ইঁহার রচিত ‘আমিষ ও নিরামিষ আহার’ (ইং ১৯০০ ..) সাহিত্যক্ষেত্রে নিতান্ত অপরিচিত নহে।

 সারদাসুন্দরী দেবী। ইনি ব্রহ্মানন্দ কেশবচন্দ্র সেনের জননী; জন্ম ১৮১৯ সনে। ১৮৯২ ও ১৯০০ সনে ইঁহার বিবৃত আত্মকথা যোগেন্দ্রলাল খাস্তগীর ১৯১৪ সনের জানুয়ারি মাসে ‘কেশবজননী দেবী সারদাসুন্দরীর আত্মকথা’ নামে প্রকাশ করিয়াছেন।

 পঙ্কজিনী বসু। ১৮৮৪ সনে ঢাকা জেলার বিক্রমপুর পরগণার শ্রীনগর গ্রামে পঙ্কজিনীর জন্ম হয়। তাঁহার পিতার নাম নিবারণচন্দ্র গুহ মুস্তফী। তেরো বৎসর বয়সে বজ্রযোগিনী গ্রামে কুমন্দবন্ধু বসুর জ্যেষ্ঠ পত্র আশুবোধ বসুর সহিত পঙ্কজিনীর বিবাহ হয়। সতের বৎসর পূর্ণ হইতে-না-হইতেই ২ সেপ্টেম্বর ১৯০০ তারিখে তাঁহার মৃত্যু হয়। তাঁহার সকল কবিতাই বিবাহের পরে রচিত। ১৯০১ সনে ‘হেলেনা’ কাব্যের লেখক আনন্দচন্দ্র মিত্র স্বীয় ভূমিকা সহ ‘স্মৃতি-কণা’ নামে পঙ্কজিনীর কবিতাগুলি প্রকাশ করেন। পনর বৎসর পরে ১৯১৬ সনে ইহার পরিবর্ধিত দ্বিতীয় সংস্করণ বাহির হয়; এই সংস্করণে খ্যাতনামা পণ্ডিত হরিনাথ দে কর্তৃক ‘সূর্যমুখী’ কবিতাটির ইংরেজী অনুবাদও স্থান পাইয়াছে।

 অন্নদাসুন্দরী ঘোষ। ১৮৭৩ সনের ৩১এ ডিসেম্বর বাখরগঞ্জ জেলার অন্তঃপাতী রামচন্দ্রপুর গ্রামে সম্ভ্রান্ত গৃহ-পরিবারে অন্নদাসুন্দরীর জন্ম হয়। তাঁহার পিতার নাম মোহনচন্দ্র গুহ। বারো বৎসর বয়সে নিকটবর্তী গাভা গ্রামের ক্ষেত্রনাথ ঘোষের সহিত তাঁহার বিবাহ হয় (২৭ মে ১৮৮৬)। ইঁহাদের জ্যেষ্ঠ পত্র-রংপরে কারমাইকেল কলেজের ভূতপূর্ব অধ্যক্ষ শ্রীদেবপ্রসাদ ঘোষ। অন্নদাসুন্দরী উনিশ-কুড়ি বৎসর বয়স হইতেই কবিতা লিখিতে আরম্ভ করেন। তাঁহার বহু কবিতা ‘দাসী’, ‘বামাবোধিনী পত্রিকা’, ‘অন্তঃপুর’, ‘নব্যভারত’ প্রভৃতিতে সাদরে স্থান লাভ করিয়াছিল। বরিশালের ‘ব্রহ্মবাদী’ নামক মাসিকপত্রেও তাঁহার প্রবন্ধাদি প্রকাশিত হইয়াছে। অন্নদাসুন্দরীর লিখিত কবিতাগুলি পুত্র দেবপ্রসাদ ১৩৪৭ সালের বৈশাখ মাসে ‘কবিতাবলী’ নামে পুস্তকাকারে প্রকাশ করিয়াছেন। কয়েক মাস পূর্বে—১৩৫৭, ৪ঠা শ্রাবণ—অন্নদাসুন্দরী পরলোকগমন করিয়াছেন।

 এই ক্রমোন্নতির জের আজও পর্যন্ত অব্যাহত আছে। বঙ্গসাহিত্যে মহিলার দানের আয়তন উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাইতেছে। প্রবন্ধ, ভ্রমণ-কাহিনী কাব্য, ও কথাসাহিত্যের ক্ষেত্রে তাঁহাদের কেহ কেহ স্থায়ী আসন লাভ করিয়াছেন। যিনি বর্তমান কাল পর্যন্ত এই ইতিহাসের জের টানিবেন, সাহিত্যে বঙ্গমহিলার দীর্ঘতর তালিকা তাঁহাকে প্রস্তুত করিতে হইবে; কারণ, স্বভাবতই জীবনের নানা ক্ষেত্রের মত সাহিত্যক্ষেত্রেও নারীদের অভিযান ব্যাপকভাবে আরম্ভ হইয়াছে। গ্রন্থকর্ত্রী এবং সাময়িক-পত্রের লেখিকা হিসাবে এই শতাব্দীর গোড়া হইতে—

অনিন্দিতা দেবী, অনুরূপা দেবী, আশাপূর্ণা দেবী, আশালতা দেবী, আশালতা সিংহ, ইন্দিরা দেবী (চৌধরাণী), ইন্দিরা দেবী (বন্দ্যোপাধ্যায়), উমা দেবী (গুপ্ত), উমা রায়, উর্মিলা দেবী, কুমন্দিনী মিত্র (বসু), গিরিবালা দেবী, জ্যোতির্ময়ী দেবী, জ্যোতির্মালা দেবী, তুষার দেবী, দুর্গাবতী ঘোষ, নিরুপমা দেবী, নিরুপমা দেবী (সেন), নিস্তারিণী দেবী, পারুল দেবী, পূর্ণশশী দেবী, প্রতিভা বসু, প্রতিমা দেবী (ঠাকুর), প্রফুল্লময়ী দেবী (ঠাকুর), প্রভাবতী দেবী, ফুলকুমারী গুপ্ত, বাণী গুপ্তা, বাণী রায়, বিনোদিনী দাসী, বিমলা দাশগুপ্তা, বীণা দাস (ভৌমিক), মিসেস আর. এস. হোসেন, মৈত্রেয়ী দেবী, রত্নমালা দেবী, রমা চৌধরী, রাজকুমারী অনঙ্গমোহিনী, রাণী চন্দ, রাধারাণী দেবী (অপরাজিতা দেবী), লীলা দেবী (চৌধুরী), শরৎকুমারী দেবী, শান্তা দেবী, শান্তিসুধা ঘোষ, শৈলবালা ঘোষজায়া, সরযুবালা দাসগুপ্তা, সীতা দেবী, সুখলতা রাও, সরমাসুন্দরী ঘোষ, সুরুচিবালা সেনগুপ্তা, স্নেহলতা সেন, হাসিরাশি দেবী, হেমন্তবালা দেবী, হেমলতা দেবী, হেমলতা সরকার

প্রমুখ লেখিকাদের নামের সহিত পাঠকেরা পরিচিত হইতেছেন এবং প্রতিদিন আরও নূতন নাম তালিকায় ভুক্ত হইতেছে। ইঁহাদের অনেকেই ক্ষমতাশালী লেখিকা এবং ব্যাপকতর আলোচনার দাবী রাখেন।

  1. ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত-সম্পাদিত ‘সংবাদ প্রভাকর’ (দ্র ১৫, ২৬, ৩০ মে, ১৮৪৯) ও ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রবর্তিত ‘সমাচার চন্দ্রিকা’ (১৪ মে), এই বিদ্যালয়টিকে বিক্টরিয়া বালিকাবিদ্যালয়’ নামে অভিহিত করিয়াছেন। প্রথমাবস্থায় ইহা এই নামেই পরিচিত ছিল, এরূপ মনে করা অসঙ্গত হইবে না।
  2. মিসেস মুলেন্স (Mullens) ১৮৫২ খ্রীস্টাব্দে “স্ত্রীলোকদের শিক্ষার্থে বিরচিত” ‘ফুলমণি ও করুণার বিবরণ (পৃ ৩০৬) প্রকাশ করেন। স্থানীয় লোকের মুখে শনিয়াছি, ইনি একজন বঙ্গমহিলা, চক্রবেড়িয়া-নিবাসী খ্রীস্টধর্মাবলম্ববী ভগবানচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কন্যা, পাদরি মুলেন্সকে বিবাহ করেন। ‘ফুলমণি ও করুণার বিবরণ’ সম্পবন্ধে পাদরি লং তাঁহার পুস্তক-তালিকায় এইরূপ বিবরণ দিয়াছেন: “In the guise of fiction, written for native Christian women, to shew the practical effects of Christianity in forming marriage connections, behaviour to husbands, moral training of children and women's duty to the poor and sick, the bad effects of debt, and of secluding females; of domestic economy, cleanliness, cheerfulness, industry, attending God’s house, reading the Bible. Appended to it is a very useful list of suitable names for Native Children.”
  3. General Report on Public Instruction .. for 1865-666 (p. 111) and 1866-67 (p. 82)
  4. প্রথম সংস্করণের পুস্তকের এই প্রকাশকাল বেঙ্গল লাইব্রেরি-সংকলিত মুদ্রিত পুস্তকাদির তালিকা হইতে গহীত। স্মৃতিকথায় সন-তারিখের গণ্ডগোল হওয়া স্বাভাবিক; রাসসান্দরী লিখিয়াছেন: “১২১৬ সালে চৈত্র মাসে আমার জন্ম হইয়াছে, আর এই বহি ১২৭৫ সালে যখন প্রথম ছাপা হয়, তখন আমার বয়ঃক্রম ঊনষাইট বৎসর ছিল।”
  5. এই পুস্তিকার সমালোচনা প্রসঙ্গে ‘সাধারণী’ (৩ শ্রাবণ ১২৮২) লিখিয়াছিলেন: “কৃষ্ণনগরে যে জাতীয় সম্মিলন সভা হইয়াছিল, তাহাতে প্রসন্নময়ী এই ‘পূর্ব্বস্মৃতি’ প্রবন্ধ পাঠ করিয়াছিলেন। এক্ষণে তাহা মুদ্রিত হইয়াছে। এই পূর্ব্বস্মৃতিতে, আমাদের বর্ত্তমান অবস্থায় আস্থা হইল ও ভবিষ্যৎ আশা জাগ্রতা হইল। প্রসন্নময়ী দেবী ভারতের জন্য অশ্রুপাত করিয়াছেন, আর ভারতমহিলার জন্য অশ্রুপাত করিয়াছেন। আমরাও অশ্রুপাত করিলাম।”
  6. স্বর্ণকুমারী দেবী ‘ভারতী ও বালকে’র পৃষ্ঠায় ‘স্নেহলতা’ নামে একখানি উপন্যাস ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করিতেছিলেন। কুসুমকুমারী দেবীর ‘স্নেহলতা’ বাহির হইলে স্বর্ণকুমারী তাঁহার উপন্যাসখানির নাম পরিবর্তন করিয়া ‘পালিতা’ রাখেন (‘ভারতী ও বালক’ বৈশাখ ১২৯৭ দ্রষ্টব্য)।
  7. ইণ্ডিয়া আপিস লাইব্রেরিতে ১৮৭৮ সনে বরিশাল হইতে প্রকাশিত “কুসমকুমারী”-রচিত ‘কুসুমিকা’ নামে একখানি ক্ষুদ্র কাব্য আছে। ইনি ও কুসুমকুমারী দেবী অভিন্ন বলিয়া মনে হয়।
  8. দ্র° ‘ভারতবর্ষ, আশ্বিন ১৩২২।
  9. দ্র° “শুভদিনে”—‘প্রতিমা’ অগ্রহায়ণ ১২৯৭।
  10. দ্র° “প্রমীলা নাগ” কবিতা: শ্রীহেমেন্দ্রপ্রসাদ ঘোষ—‘সাহিত্য’, পৌষ ১৩০৩।
  11. দ্র° ‘ভারতী’, অগ্রহায়ণ ১৩২৯।
  12. দ্র° ‘প্রবাসী’, জ্যৈষ্ঠ ১৩৩৩।
  13. দ্র° ‘জাহ্নবী’, জ্যৈষ্ঠ ১৩১০।
  14. দ্র° ‘ভারতবর্ষ, চৈত্র ১৩৪১।


বিষয়-সূচী
অক্ষয়চন্দ্র চৌধুরী
১৩
অন্নদারী ঘোষ
২৭
অম্বুজাসুন্দরী দাসগুপ্তা
২০-১
আনন্দচন্দ্র মিত্র
২৭
আশুতোষ চৌধুরী
১২
আশুতোষ দেব
ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
১৮
কামিনী রায়
১৬-৭
কামিনীসুন্দরী দেবী
কুসুমকুমারী দেবী
১৭-৮
কৃষ্ণকামিনী দাসী
কৃষ্ণভাবিনী দাস
১৯-২০
কেশবচন্দ্র সেন
৮,২১,২৭
কৈলাসবাসিনী দেবী
গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী
১৫-৬
গৌরমোহন বিদ্যালংকার
গৌরীশংকর তর্কবাগীশ
চণ্ডীচরণ সেন
১৬
‘চিত্তবিলাসিনী’ কাব্য
৪-৬
জ্ঞানদানন্দিনী দেবী
১২-৩
দক্ষিণারঞ্জন মখোপাধ্যায়
দেবকুমার রায় চৌধুরী
১৭
দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর
১০,১৩,২৭
দ্বিজতনয়া—
 ‘কামিনীসুন্দরী দেবী’ দ্র°
নগেন্দ্রনাথ গুপ্ত
২১
নগেন্দ্রবালা মুস্তোফী (সরস্বতী)
২২
নবীনকালী দেবী
পঙ্কজিনী বসু
২৭
প্রজ্ঞাসুন্দরী দেবী
২৭
প্রমীলা বসু (নাগ)
১৯
প্রসন্নকুমার ঠাকুর
প্রসন্নকুমার সর্বাধিকারী
প্রসন্নময়ী দেবী
১২,২৫
প্রিয়ম্বদা দেবী
২৫
‘ফুলমণি ও করুণার বিবরণ’
ফৈজুন্নিসা চৌধুরাণী
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
১৮, ২৩
বসন্তকুমারী দাসী
বামাসুন্দরী দেবী
বিক্টরিয়া বালিকাবিদ্যালয়
বিনয়কুমারী বসু
১৮-৯
বীটন, ড্রিঙ্কওয়াটার
বেথুন—‘বীটন’ দ্র°
বৈদ্যনাথ রায়, রাজা
ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়
ভারতস্ত্রী-মহামণ্ডল
২০,২৪
মধুসূদন দত্ত, মাইকেল
১৬
মনোমোহন ঘোষ, ব্যারিস্টার
১৯
মানকুমারী বস
১৬
মার্থা সৌদামিনী সিংহ
মিশনরী বালিকাবিদ্যালয়
 কলিকাতা
১-৩
মুলেন্স, মিসেস
মৃণালিনী সেন
২১
মোক্ষদায়িনী মুখোপাধ্যায়
১৪
রজনীকান্ত সেন
২০
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
১০,১৪,২৩-৪
রাখালচন্দ্র রায়চৌধুরী,
 লাখুটিয়া
১৭
রাখালমণি গুপ্ত
}৭
রাজনারায়ণ বস
২৬
রাধাকান্ত দেব, রাজা
রামগোপাল ঘোষ
রামমোহন রায়
রাসসুন্দরী
লজ্জাবতী বসু
২৬
লাবণ্যপ্রভা বসু (সরকার)
২৬-৭
লোকনাথ মৈত্রেয়
শরৎকুমারী চৌধুরাণী
১৩
শিবচন্দ্র রায়, রাজা
শ্রীনাথ দাস
১৯
‘সংবাদ প্রভাকর’
সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর
১৩
‘সমাচার চন্দ্রিকা’
‘সম্বাদ ভাস্কর’
সরলা দেবী
২৩-৪
সরলাবালা দাসী
২৫-৬
সরোজকুমারী দেবী
২১-২
সাতু বাব—আশুতোষ দেব দ্র°
সারদাসুন্দরী দেবী
২৭
সুখময় রায়, রাজা
সুরঙ্গিনী দেবী
সুরসুন্দরী দেবী
‘স্ত্রী শিক্ষাবিধায়ক’
স্বর্ণকুমারী দেবী
১০-১,১৮
হরকুমারী দেবী
হরসুন্দরী দাসী
হিরন্ময়ী দেবী
২২
হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়
১৪
হেমাঙ্গিনী

এই লেখাটি বর্তমানে পাবলিক ডোমেইনের আওতাভুক্ত কারণ এটির উৎসস্থল ভারত এবং ভারতীয় কপিরাইট আইন, ১৯৫৭ অনুসারে এর কপিরাইট মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে। লেখকের মৃত্যুর ৬০ বছর পর (স্বনামে ও জীবদ্দশায় প্রকাশিত) বা প্রথম প্রকাশের ৬০ বছর পর (বেনামে বা ছদ্মনামে এবং মরণোত্তর প্রকাশিত) পঞ্জিকাবর্ষের সূচনা থেকে তাঁর সকল রচনার কপিরাইটের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যায়। অর্থাৎ ২০২৪ সালে, ১ জানুয়ারি ১৯৬৪ সালের পূর্বে প্রকাশিত (বা পূর্বে মৃত লেখকের) সকল রচনা পাবলিক ডোমেইনের আওতাভুক্ত হবে।