বনবাণী/নটরাজ-ঋতুরঙ্গশালা/শীত
ওগাে শীত, ওগাে শুভ্র, হে তীব্র নির্মম,
তােমার উত্তরবায়ু দুরন্ত দুর্দম
অরণ্যের বক্ষ হানে। বনস্পতি যত
থরথর কম্পমান, শীর্ষ করি নত
আদেশনির্ঘোষ তব মানে। ‘জীর্ণতার
মােহবন্ধ ছিন্ন করাে’ এ বাক্য তােমার
ফিরিছে প্রচার করি জয়ডঙ্কা তব
দিকে দিকে। কুঞ্জে কুঞ্জে মৃত্যুর বিপ্লব
করিছে বিকীর্ণ শীর্ণ পর্ণ রাশি রাশি
শুন্য নগ্ন করি শাখা, নিঃশেষে বিনাশি
অকালপুষ্পের দুঃসাহস।
হে নির্মল,
সংশয়-উদ্বিগ্ন চিত্তে পূর্ণ করো বল।
মৃত্যু-অঞ্জলিতে ভরাে অমৃতের ধারা,
ভীষণের স্পর্শঘাতে করো শঙ্কাহারা,
শূন্য করি দাও মন; সর্বস্বান্ত ক্ষতি
অন্তরে ধরুক শান্ত উদাত্ত মুরতি
হে বৈরাগী। অতীতের আবর্জনাভার,
সঞ্চিত লাঞ্ছনা গ্লানি শ্রান্তি ভ্রান্তি তার
সম্মার্জন করি দাও। বসন্তের কবি
শূন্যতার শুভ্র পত্রে পূর্ণতার ছবি
লেখে আসি, সে শূন্য তােমারি আয়ােজন,
সেইমতাে মাের চিত্তে পূর্ণের আসন
মুক্ত করাে রুদ্রহস্তে; কুজ্ঝ্বটিকারাশি
রাখুক পুঞ্জিত করি প্রসন্নের হাসি।
বাজুক তােমার শঙ্খ মাের বক্ষতলে
নিঃশঙ্ক দুর্জয়। কঠোর উদগ্রবলে
দুর্বলেরে করাে তিরস্কার; অট্টহাসে
নিষ্ঠুর ভাগ্যেরে পরিহাসো; হিমশ্বাসে
আরাম করুক ধুলিসাৎ। হে নির্মম,
গর্বহরা, সর্বনাশা, নমাে নমাে নম।
গান
শীতের হাওয়ার লাগল নাচন
আম্লকির এই ডালে ডালে।
পাতাগুলি শির্শিরিয়ে
ঝরিয়ে দিল তালে তালে।
উড়িয়ে দেবার মাতন এসে
কাঙাল তারে করল শেষে,
তখন তাহার ফলের বাহার।
রইল না আর অন্তরালে।
শূন্য করে ভরে-দেওয়া
যাহার খেলা
তারি লাগি রইনু বসে
সারা বেলা।
শীতের পরশ থেকে থেকে
যায় বুঝি ঐ ডেকে ডেকে,
সব খোওয়াবার সময় আমার
হবে কখন্ কোন্ সকালে।