বনলতা সেন/নগ্ন নির্জন হাত
নগ্ন নির্জন হাত
আবার আকাশে অন্ধকার ঘন হ'য়ে উঠছে:
আলাের রহস্যময়ী সহােদরার মতাে এই অন্ধকার।
যে আমাকে চিরদিন ভালােবেসেছে।
অথচ যার মুখ আমি কোনােদিন দেখিনি,
সেই নারীর মতাে
ফাল্গুন আকাশে অন্ধকার নিবিড় হয়ে উঠেছে।
মনে হয় কোন বিলুপ্ত নগরীর কথা
সেই নগরীর এক ধূসর প্রাসাদের রূপ জাগে হৃদয়ে।
ভারতসমুদ্রের তীরে
কিংবা ভূমধ্যসাগরের কিনারে
অথবা টায়ার সিন্ধুর পারে
আজ নেই, কোনাে এক নগরী ছিল একদিন,
কোন এক প্রাসাদ ছিল।
মূল্যবান আসবাবে ভরা এক প্রাসাদ
পারস্য গালিচা, কাশ্মিরী শাল, বেরিন তরঙ্গের নিটোল মুক্তা প্রবাল,
আমার বিলুপ্ত হৃদয়, আমার মৃত চোখ, আমার বিলীন স্বপ্ন আকাঙক্ষা,
আর তুমি নারী—
এই সব ছিল সেই জগতে একদিন।
অনেক কমলা রঙের রােদ ছিল,
অনেক কাকাতুয়া পায়রা ছিল,
মেহগনির ছায়াঘন পল্লব ছিল অনেক;
অনেক কমলা রঙের রােদ ছিল,
অনেক কমলা রঙের রােদ;
আর তুমি ছিলে;
তােমার মুখের রূপ কত শত শতাব্দী আমি দেখি না,
খুঁজি না।
ফাল্গুনের অন্ধকার নিয়ে আসে সেই সমুদ্রপারের কাহিনী,
অপরূপ খিলান ও গম্বুজের বেদনাময় রেখা,
লুপ্ত নাশপাতির গন্ধ,
অজস্র হরিণ ও সিংহের ছালের ধূসর পাণ্ডুলিপি,
রামধনু রঙের কাচের জানালা,
ময়ূরের পেখমের মতাে রঙিন পর্দায় পর্দায়
কক্ষ ও কক্ষান্তর থেকে আরাে দুর কক্ষ ও কক্ষান্তরের
ক্ষণিক আভাস—
আয়ুহীন স্তব্ধতা ও বিস্ময়।
পর্দায়, গালিচায় বক্তাভ রৌদ্রের বিচ্ছুরিত স্বেদ,
রক্তিম গেলাসে তরমুজ মদ!
তােমার নগ্ন নির্জন হাত।
তােমার নগ্ন নির্জন হাত।