বরেন্দ্র রন্ধন/পরিশিষ্ট/টেবিল ২

পরিশিষ্ট।

টেবল নং ২

সংখ্যা ব্যঞ্জন ফোড়ন বাটনা অন্যান্য উপকরণ অনুষঙ্গ মন্তব্য
পোড়া —— মাছের পাতারীতে হলুদ, সরিষা-বাটা; এবং কাঁচা লঙ্কা বাটা অথবা জিরা-মরিচবাটা। সাধারণতঃ নুণ, তেল, কাঁচা লঙ্কা এবং স্থল বিশেষে সরিষা-বাটা দিয়া মাখা হয়। স্থল-বিশেষে পেঁয়াজ ও রশুন বাটা এবং কিঞ্চিৎ অম্লরস। স্থল বিশেষে নারিকেল-কুড়া।
শূল্য কাবাব —— লঙ্কা বা মরিচ বাটা। কদাচিৎ হলুদ। কিঞ্চিৎ অম্ল ও মিষ্ট রস। আদা, পেঁয়াজ ও রশুন-বাটা। ভোজনকালে আবশ্যকমত রাই-সরিষার গুঁড়া। বিবিধ উপাদানে প্রস্তুত পূর (ষ্টাফীং)।
সিদ্ধ —— —— নিরামিষে ঘৃত, সৈন্ধব; অথবা নুণ, তেল, কাঁচা লঙ্কা। এবং স্থলবিশেষে পেঁয়াজ বাটা বা কুচি। আমিষে নুণ, তেল, কাঁচা লঙ্কা এবং আবশ্যকমত সরিষা-বাটা ও পেঁয়াজ রশুন বাটা বা কুচি।
পোলাও তেজপাত। কেহ কেহ গোটা গরম মশল্লা ও সা-জিরা দেন। পেঁয়াজ কুচি। জাফরাণ বহু বিধ গোটা মশল্লা এবং গরম মশল্লাদি দ্বারা আখনি-জল প্রস্তুত করিতে হয়। বাদাম, পেস্তা, কিসমিস এবং অন্যবিধ মেওয়া। নারিকেল-কুড়া, বাদাম-বাটা, মোয়া-ক্ষীর।
ভাজি স্থল বিশেষে লঙ্কা, মেথি বা কালজিরা। ক্ষেত্র বিশেষে পেঁয়াজ কুচি। শাকে কাঁচা লঙ্কা এবং আবশ্যক মত পেঁয়াজ কুচি; কদাচিৎ জবানী। হলুদ। আবশ্যক মত লঙ্কা বাটা বা মরিচ বাটা। স্থল বিশেষে কিঞ্চিৎ অম্ল ও মিষ্ট রস। এবং আদা ও পেঁয়াজ বাটা। মটর বা খেঁসারী ও মাষ ডাল বাটা, বুটের বেসম, তিল, পোস্তদানা, মসিনা, সরিষা বাটা এবং ময়দা গোলা বা ‘ক্রাম্বের’ আবরণে ‘পাট’ বা ‘সুজী-ভাজি’ বা বড়াভাজি করা যায়। ইহাদের সহিত অধিকাংশ স্থলে কিছু চাউলের গুঁড়া মিশাইয়া বাঁধন দিতে হয়।
উখ্য কাবাব —— লঙ্কা বা মরিচ বাটা। কদাচিৎ হলুদ বা জাফরাণ। কিঞ্চিৎ অম্ল ও মিষ্টরস। আদা পেঁয়াজ ও রশুনবাটা গোটা পক্ষীর উখ্যে বিবিধ উপাদানে প্রস্তুত পূর (ষ্টাফীং)।
ছেঁচকী লঙ্কা, মেথি বা কালজিরা হলুদ ও কদাচিৎ লঙ্কাবাটা। নিরামিষ ব্যঞ্জনে হলুদ বাদ দিতে পার এবং লঙ্কা বাটারও প্রয়োজন নাই।
চড়চড়ী তেজপাত, লঙ্কা, মেথি বা কালজিরা। আমিষ চড়চড়ীতে আবশ্যক মত পেঁয়াজকুচি দেওয়া যায়। হলুদ এবং কদাচিৎ লঙ্কা বাটা। নিরামিষ ব্যঞ্জনে হলুদ বাদ দিতে পার এবং লঙ্কা বাটারও প্রয়োজন নাই। সরিষাবাটা এবং কাঁচালঙ্কা বাটা বা চেরা। (সরিষার সহিত একত্রে কাঁচা লঙ্কা বাটিয়া লইতে পার)। আবশ্যক মত কিঞ্চিৎ অম্লরস। মাষ-বড়ি (আবশ্যক মত) সরিষা-বাটা ব্যঞ্জন সিদ্ধ হওয়া পর জল শুকাইয়া গেলে প্রযুজ্য।
শুক্তা তেজপাত, লঙ্কা, মেথি এবং সরিষা (গোটা বা গুঁড়া) অথবা ‘ফুল-কাসুন্দি’। আমিষ শুক্তায় কদাচিৎ দুটো রাঁধনী। নিরামিষ শুক্তায় কেহ কেহ লঙ্কা ফোড়ন পছন্দ করেন না। হলুদ। (নিরামিষ শুক্তায় হলুদ বাদ দেওয়া যায়।) আবশ্যক মত পিঠালী, তিল বা পোস্তদানা বাটা অথবা আদা ছেঁচা। তিল বা পোস্তদানা বাটার সহিত কিঞ্চিৎ ভিজান আতব চাউল একত্রে বাটিয়া লইবে। আমিষ শুক্তায় পিঠালী বা তিল বা পোস্তদানা বাটা দিবে না। মটর বা খেঁসারী ডাইলের চাপড়ী বা বড়া ভাজা। মটর বা মাষ ডাইলের কুমড়াবড়ি।

সচরাচর চাপড়ী বা বড়া ভাজা দিলে তাহার সহিত তিল বা পোস্তদানা বাটা দেওয়া যায়।

করিলা, করিলাপাতা, পাট পাতা, নিমপাতা প্রভৃতি একটি তিত স্বাদ বিশিষ্ট অনুষঙ্গ তিত-শুক্তানিতে দেওয়া অবশ্য কর্ত্তব্য।

বরেন্দ্রে শুক্তায় জিরা ফোড়ন বা বাটা ঝাল বা মিষ্ট রস দেওয়া দেখা যায় না।
ঝোল তেজপাত, লঙ্কা, মেথি বা কালজিরা সচরাচর কচুজাতীয় শাকে, গাভথোড়ে, বিলাতী কুমড়ায় এবং বোয়ালাদি আঁষটে গন্ধবিশিষ্ট মাছে মেথির পরিবর্ত্তে বা মেথির সহিত একত্রে, দুটো কালজিরা ফোড়ন দেওয়া হইয়া থাকে। ‘ডালফেলানী’ ঝোলে কেহ কেহ মেথির পরিবর্ত্তে বা মেথির সহিত একত্রে, দুটো জিরা ফোড়ন দেন। অম্ল-ঝোলে দুটো সরিষা ফোড়ন দিবে। হলুদ এবং আবশ্যক মত লঙ্কাবাটা। নিরামিষ ঝোলে হলুদ বাদ দিতে পার; এবং লঙ্কাবাটার প্রয়োজন হয় না। নিরামিষ ঝোলে আবশ্যক মত পিঠালি বা চেলেনি জল; মাছের ঝোলে তাহা দিবে না।

আবশ্যক মত শলুপাদি তীব্র গন্ধ বিশিষ্ট শাকের কুচি।

নিরামিষে বুট, মুগ, মাষ বা মটর ডাইল।

কদাচিৎ নারিকেল কুড়া।

আদা, কাঁচা লঙ্কা বা পেঁয়াজ দিবে না।

মেথির সহিত একত্রে লঙ্কা ফোড়ন না দিলে ব্যঞ্জনের স্বাদ ফুটে না।

সূপ তেজপাত, জিরা, লঙ্কা। মাষ-সূপে অতিরিক্ত মৌরি। আবশ্যকমত হিঙ, পেঁয়াজ বা রশুন। অম্ল বা তিক্ত-সূপে অতিরিক্ত দুটো সরিষা। গুরুপক্ব সূপে গরমমশল্লা। হলুদ। নিরামিষ সূপে অনেক ক্ষেত্রে বর্জ্জিত হয়। স্থল বিশেষে লঙ্কাবাটা, জিরামরিচ বাটা। গুরুপক্ব সূপে গরম মশল্লা বাটা। আবশ্যক মত কিঞ্চিৎ মিষ্টরস ও অম্লরস। সাধারণতঃ তেঁতুল-গোলা, আমের কড়া, আম-চুণা, চালিতা প্রভৃতি যোগে সূপ অম্ল স্বাদ বিশিষ্ট করা যায়।

আবশ্যক মত আমাদা, আম্র-মুকুলাদি যোগে অম্ল ডাইল অনুবাসিত করা হয়।

কদাচিৎ নারিকেল-কুড়া। বিবিধ আনাজ। খেঁসারীর সূপে ঘৃতে জিরা ও লঙ্কার পরিবর্ত্তে তেলে কাঁচালঙ্কা, মেথি এবং তৎসহ দুটো সরিষা-গুঁড়া ফোড়ন দিয়া রাঁধিলে স্বাদ উত্তম হয়।
ঘণ্ট তেজপাত, জিরা ও লঙ্কা। হলুদ, লঙ্কাবাটা, জিরা-মরিচ বাটা। আমিষ ঘণ্টে আরও ধনিয়া বাটা। নিরামিষ ঘণ্টে বা বেস্বরীতে হলুদ বাদ দিবে।

মোচা ও কোবির ঘণ্টে শেষ পর্য্যন্ত একটু গরম মশল্লা বাটা মিশাইতে হয়।

পর্য্যাপ্ত পরিমাণে পিঠালী। স্থলবিশেষে, বিশেষতঃ ডাইলের চাপড়ী ভাজা অনুষঙ্গরূপে রহিলে, তিল বা পোস্তদানা বাটা মিশাইবে। বুট (ভিজান), মটর শুটি, মাষ-বড়ি, মটর বা খেঁশারী ডাইলের চাপড়ী ভাজি। স্থলবিশেষে মুগ বা মাষ ডাইল। নারিকেল-কুড়া। লাউর ঘণ্টে মটর বড়ি অনুষঙ্গরূপে ব্যবহার করিবে এবং ঝাল কম করিয়া দিবে।
১০ ঝাল তেজপাত, জিরা, লঙ্কা। মাছের ঝালে অতিরিক্ত দুটী মেথি এবং বোয়াল প্রভৃতি আঁষটে স্বাদবিশিষ্ট মাছের ঝালে দুটো কাালজিরা। সর্ব্ব প্রকার বাটনা। নিরামিষে হলুদ, ধনিয়া বাটাদি বাদ দিয়া কেবল লঙ্কা বাটা ও জিরা-মরিচ বাটা দেওয়াই বিধি। মোটা মাছে অতিরিক্ত পিপুল, রাঁধনী, লবঙ্গ বাটা। পিঠালী বুট (ভিজান), মটরশুটি, মাষ-বড়ি।
১১ কালিয়া তেজপাত, লঙ্কা, জিরা। কদাচিৎ তৎসহ দুটো মেথি; এবং আরও হিঙ, পেঁয়াজ বা রশুন কুচি এবং গোটা গরম মশল্লা সর্ব্বপ্রকার বাটা ঝাল, এবং শেষ পর্য্যন্ত গরম মশল্লা বাটা।

কারীতে ইচ্ছা হইলে সরিষাবাটা।

পিঠালী, আদা বাটা, রশুন বাটা। কিঞ্চিৎ অম্ল ও মিষ্ট রস। বুট (ভিজান), মটর শুটী। কদাচিৎ নারিকেল কুড়া।
১২ অম্বল কাঁচা লঙ্কা, সরিষা। আমিষ অম্বলে আবশ্যকমত শুকনা লঙ্কা ও মেথি। আমিষ অম্বলে হলুদ চিনি বা গুড় যেখানে পাচ্য বস্তু স্বয়ং অম্ল-স্বাদ-বিশিষ্ট না হইবে সেখানে তেঁতুল গোলা, আমচুর প্রভৃতি মিশাইবে। কোন কোন অম্বলে তিল বাঁটা মিশাইতে হয়।