বরেন্দ্র রন্ধন/পরিশিষ্ট/টেবিল ১

পরিশিষ্ট।

টেবিল নং ১

সংখ্যা মশল্লাদি ফোড়নরূপে প্রয়োগ বাটনারূপে প্রয়োগ উপকরণরূপে প্রয়োগ মন্তব্য
লঙ্কা বা লঙ্কা মরিচ প্রায় সর্ব্ব প্রকার ব্যঞ্জনে। মেথির সহিত একত্রে ফোড়ন দিলে তবে মেথি ফোড়ন দেওয়া ব্যঞ্জনের স্বাদ পরিস্ফুট হয়। প্রায় সর্ব্ব প্রকার ব্যঞ্জনে। মেথি পর্ব্বান্তর্গত ব্যঞ্জনে প্রয়োজন মত। ভাজিতে কদাচিৎ। সূপে আবশ্যক মত। রোগীর পথ্যে ব্যবহার নিষেধ। ঝাল চাটনিতে, ঝাল আচারে, সৈর্ক্ক আচারে। বারসজের এক সজ। এই গ্রন্থের সর্ব্বত্র ‘লঙ্কা’ বলিতে ঝুনা-পাকা ‘শুক্না লঙ্কা’ বুঝাইবে। ইহা পূর্ব্ববঙ্গে উৎপন্ন হইয়া শুষ্ক অবস্থায় বঙ্গের সর্ব্বত্র বেনের দোকানে বিক্রীত হয়। শুষ্ক পক্ব অবস্থায় ইহা দেশী লঙ্কা অপেক্ষা আকারে বৃহত্তর, ইহার খোলা অপেক্ষাকৃত পাৎলা এবং ইহার রঙ্গ ঘোর রক্তবর্ণের।
কাঁচা লঙ্কা বা গাছ মরিচ শাক ভাজিতে, খেঁসারীর সূপে এবং কোন কোন অম্বলে শুক্না লঙ্কার পরিবর্ত্তে ব্যবহৃত হয়। কদাচিৎ ডাল-ফেলানী ঝোলেও প্রযুক্ত হয়। ——— বাটিয়া বা ঘষিয়া পোড়ায় এবং সিদ্ধে। গোটা চিরিয়া বা বাটিয়া সরিষা বাটার সহিত চড়চড়ীতে ও সরিষা বাটা ঝোলে। সাদাসিধা চাটনিতে এবং আচারে। জিরার সম্পর্কে কাঁচা লঙ্কার প্রয়োগ দেখা যায় না। এই গ্রন্থের সর্ব্বত্র কাঁচা লঙ্কাকে ‘কাঁচা লঙ্কা’ রূপে বিশেষিত করা হইয়াছে। ইহা বঙ্গের সর্ব্বত্রই প্রায় জন্মে এবং হাটে বাজারে মাছ-তরকারীর সহিত বিক্রীত হয়। ইহা সুপক্ব হইলে সিন্দূর বর্ণ হয়। সুপক্ব বা অর্দ্ধপক্ব অবস্থায় রন্ধনে ব্যবহৃত হয়।
মেথি সর্ব্বপ্রকার ছেঁচকীতে, চড়চড়ীতে, শুক্তানীতে ও ঝোলে। এই নিমিত্ত ইহাদিগকে মেথি পর্ব্বান্তর্গত ব্যঞ্জন বলা যায়। কদাচিৎ ভাজিতে এবং অম্বলে। জিরা পর্ব্বান্তর্গত মাছের বিশেষতঃ তৈলাক্ত মোটা মাছের ঝালে জিরার সহিত একত্রে ফোড়ন দেওয়া যায়। অগ্নিপক্ব সাদাসিদা চাটনিতে, ‘মরিচ-বাটায়’। ——— বারসজের এক সজ। শুক্না লঙ্কার সহিত একত্রে ফোড়ন না দিলে মেথির স্বাদ পরিস্ফুট হয় না। লঙ্কা, মেথি ফোড়ন-পক্ব ব্যঞ্জনে আর কোন প্রকার বাটাঝাল দেওয়ার প্রয়োজন নাই। তবে উপকরণরূপে চড়চড়ীতে সরিষা বাটা, কাঁচা লঙ্কা বাটা এবং শুক্তায় তিল বাটা বা আদা বাটা দেওয়া যায়। উত্তপ্ত তেলে ছাড়িলে মেথি শীঘ্র ‘পুড়ে’ বলিয়া উহা লঙ্কার পর ফোড়ন দিতে হয়।
কালজিরা অনেক স্থলে মেথির পরিবর্ত্তে ফোড়নরূপে ব্যবহৃত হয়। আবার মেথির সহিত একত্রেও ফোড়ন দেওয়া যায়। জিরার সহিত স্থলবিশেষে ফোড়ন দেওয়া যায়। কচু জাতীয় শাক, গাভথোড়, বিলাতী (মিঠা) কুমড়া, গন্ধভাদালী প্রভৃতি আনাজে এবং বোয়ালাদি আঁষটে গন্ধবিশিষ্ট মাছের সর্ব্বপ্রকার ব্যঞ্জনে কালজিরা অমনি বা মেথি বা জিরার সহিত ফোড়ন দেওয়া বিধেয়। বাটনারূপে ব্যবহার দেখা যায় না। তবে আধকচড়া করিয়া বাটিয়া কোন কোন ‘মরিচ-বাটায়’ দেয়। সাদাসিধা আচার প্রস্তুতে কালজিরা দেয়।

ময়দা সম্পর্কীয় ভাজিতে ময়দার গোলায় দেয়।

বার সজের এক সজ।

পূর্ব্ববঙ্গে মেথির পরিবর্ত্তে কালজিরা ফোড়ন দেওয়াই অধিক প্রচলিত।

জিরা সূপে, ঘণ্টে, ঝালে এবং কালিয়াতে। এই নিমিত্ত এই সকল ব্যঞ্জনকে জিরা পর্ব্বান্তর্গত ব্যঞ্জন বলা যায়।

জিরা ফোড়ন দিলে তৎসহ লঙ্কা ফোড়ন দেওয়া না দেওয়া পাচক পাচিকার ইচ্ছাধীন।

যে যে ব্যঞ্জনে জিরা ফোড়ন দেওয়া যায় সেই সেই ব্যঞ্জনে উহা বাটনারূপেও দেওয়া যায়।

ব্যঞ্জন নামাইবার অব্যবহিত পূর্ব্বে জিরাবাটা দিলে তবে উহার ঘ্রাণ অব্যাহত থাকে। সচরাচর জিরা বাটার সহিত গোলমরিচ বাটা একত্রে দেওয়া যায়। এতদুভয় মিলিয়া একত্রে ‘বাটা-ঝাল’ বা শুধু ‘ঝাল’ আখ্যা লাভ করিয়াছে।

ঝাল-চাটনিতে এবং কাসুন্দিতে জিরা কাটখোলায় ভাজিয়া গুঁড়া করতঃ ‘ঝাল’ রূপে দেওয়া হয়।

বার সজের এক সজ।

বিশেষ বিশেষ স্থল ছাড়া বরেন্দ্রে জিরা ও মেথি একত্রে ফোড়ন দেওয়া হয় না। বরেন্দ্রে ‘পাঁচ ফোড়নের’ ব্যবহার প্রচলিত নাই। তবে বিশেষ বিশেষ স্থলে—যথা মাছের ঝালে, জিরার সহিত দুটো মেথি বা কালজিরা ফোড়ন দেওয়া হয়। মাষ-সূপে জিরার সহিত মৌরি ফোড়ন দেয়। আবার কোনও ঝোলে মেথির সহিত দুটো জিরা ফোড়ন দেয়।

জিরা বিলম্বে ‘পুড়ে’ এই নিমিত্ত সর্ব্বাগ্রে—তেজপাতেরও পূর্ব্বে, তেলে বা ঘৃতে জিরা ছাড়িতে হয়।

সা বা সিয়া (সিত) জিরা সাধারণ জিরার ন্যায়ই ব্যবহৃত হইতে পারে। তবে সচরাচর ইহা সিঙ্গাড়া, কচুরী প্রভৃতি পূরীর পূর প্রস্তুতে ফোড়নরূপে ব্যবহৃত হয়।

পোলাওর ফাকীতেও ইহাই ব্যবহার্য্য।

বাটনারূপে ব্যবহৃত হইবার বাধা না থাকিলেও ব্যবহার বিরল।
গোল মরিচ বা মরিচ (কাল) বাটনা বা বাটা-ঝালের মধ্যে ইহাই সর্ব্বপ্রধান ‘ঝাল’ বলিয়া গণ্য হয়। লঙ্কার স্বাদ ইহাপেক্ষা অধিক ঝাল হইলেও তাহাকে নিম্নস্থান দেওয়া হইয়া থাকে এবং ‘ঝাল’ বলিতে মরিচের বাটনাকেই বুঝায়—লঙ্কাবাটাকে বুঝায় না। মরিচবাটার সহিত জিরাবাটা একত্রে মিশ্রিত হইয়া ‘ঝাল’ বা ‘বাটা-ঝাল’ রূপে কথিত হইয়া থাকে। জিরা ফোড়ন দেওয়া ব্যঞ্জনেই ইহা প্রধানতঃ ব্যবহৃত হয়। কদাচিৎ ভাজিতে ও কাবাবে প্রযুক্ত হয়। গুঁড়া কোন কোন পোড়ায় এবং সিদ্ধে ব্যবহৃত হয়।

ঝাল-চাটনিতে এবং কাসুন্দিতে ব্যবহৃত হয়।

বার সজের এক সজ।

এই গ্রন্থের সর্ব্বত্র গোল মরিচকে শুধু ‘মরিচ’ রূপে অভিহিত করা হইয়াছে। 
সা বা সিয়া (সিত) মরিচ ——— কাল বা গোলমরিচের ন্যায়ই ব্যবহৃত হইতে পারে। কিন্তু ইহা তদপেক্ষা কম তীব্র।
পিপুল ——— মরিচের পরিবর্ত্তে রোগীর পথ্য রন্ধনে দেয়। মোটা মাছের ঝালে মরিচাদির সহিত একত্রে দেওয়া হয়। বার সজের এক সজ।
১০ ধনিয়া বা সজ ——— জিরা পর্ব্বান্তর্গত আমিষ ব্যঞ্জনে (ঝালে, কালিয়ায় এবং কারীতে) প্রযুজ্য। নিরামিষ ব্যঞ্জনে ইহার ব্যবহার বিরল।

ইহা কাঁচাবাটা অবস্থায় ব্যঞ্জনে মিশান অপেক্ষা তৈলে বা ঘৃতে একটু কষিয়া লইয়া মিশাইলে স্বাদের উন্নতি হয়।

আনেক গৃহস্থ বাটীতে ইহা কাঠখোলায় ভাজিয়া গুঁড়া করিয়া উঠাইয়া রাখা হয়। ব্যঞ্জনে কাঁচা বাটা ধনিয়া দেওয়ার পরিবর্ত্তে এই ভাজা গুঁড়া জিরা-মরিচ বাটার সহিত একত্রে জল দিয়া পাটায় একটু বাটিয়া লইয়া মিশান হয়।

ঝাল-চাট্‌নিতে এবং কাসুন্দিতে ভাজা ধনিয়ার গুঁড়া ব্যবহৃত হয়।

ইহা বার সজের শ্রেষ্ঠ সজ রূপে গণ্য হয়।

১১ তেজপাত মেথি ও জিরা উভয় পর্ব্বের অন্তর্গত অষ্ট প্রকার ব্যঞ্জনেই ইহা ফোড়নরূপে ব্যবহৃত হয়, কেবল ছেঁচকীতে ইহা বাদ দেওয়া যায়। পোলোওয়ে ইহার দ্বারা হাঁড়ীর তলায় আস্তর দেওয়া যায়। দুই এক স্থলে অম্বলেও ব্যবহৃত হয়। জিরা পর্ব্বান্তর্গত আমিষ ব্যঞ্জনে ব্যবহৃত হয়। ইহা বার সজের এক সজ।
১২ মৌরি জিরার সহিত মাষ-সূপে। কদাচিৎ অন্যত্র। আধ কচড়া করিয়া বাটিয়া মাষ ডাইলের বড়ায় এবং মাষ ডাইলের কচুরীর পিঠীতে। তৈল-আচারে।

মালপোয়া ভাজিবার গোলায়।

বার সজের এক সজ।

বরেন্দ্র দুই এক ক্ষেত্র ব্যতীত সাধারণতঃ ফোড়ন বা বাটনারূপে ব্যবহৃত হয় না। দক্ষিণ বঙ্গে পাঁচ-ফোড়নের একতম ফোড়ন, কিন্তু বরেন্দ্রে পাঁচফোড়নের প্রচলন না থাকায় সাধারণতঃ ইহা ফোড়ন দিতে দেখা যায় না।
১৩ রন্ধনী কদাচিৎ শুক্তানিতে ও মোটা মাছের ঝালে। কাঠ-খোলায় ভাজিয়া গুঁড়া করিয়া মোটা মাছের ঝালে অপরাপর ঝালের সহিত দেওয়া হয়। বার সজের এক সজ।
১৪ জবাইন ও শলুপ বীজ কলমী শাক ভাজিতে এবং গন্ধ-ভাদালীর ঝালে কেহ কেহ ফোড়ন দেন। উভয়ই বার সজের দুইটী সজ। ব্যবহার বিরল।
১৫ সরিষা শুক্তানিতে, অম্বলে, তিত ও অম্ল সূপে। অম্ল ঝোলে।

বারানসে রাই-সরিষা প্রায় সকল ব্যঞ্জনেই ফোড়নরূপে ব্যবহৃত হয়।

চড়চড়ীতে কাঁচালঙ্কা সহ একত্রে বাটিয়া প্রযুক্ত হয়।

(তৈলাক্ত মাছের পাতারীতে এবং সরিষা বাটা ঝোলে কাঁচালঙ্কার সহিত ইহা সর্ব্বপ্রধান উপকরণ) (বৈদেশিক কারীতে ইহা কখন কখন মিশান হয়।)

বাটিয়া পোড়ায় ও সিদ্ধে মিশান যায়। রাইসরিষা বাটিয়া কাবাবে মাখিয়া খাওয়া যায়।

কোন কোন সাদাসিধা চাট্‌নিতে ইহা বাটিয়া মিশান যায়। আচারে ইহা গোটা বা গুঁড়া করিয়া মিশান যায়।

কাসুন্দির ইহাই সর্ব্বপ্রধান উপকরণ।

তৈলাক্ত (স্নেহ) পদার্থ। বাটনারূপে ব্যবহৃত হইলেও ইহা ‘ঝাল’ মধ্যে পরিগণিত নহে। সর্ব্বশেষে মিশান হয়। তেলে ছাড়িলে অতি শীঘ্র ‘পুড়িয়া’ যায় এবং তিত স্বাদ বিশিষ্ট হয় সুতরাং ইহা ফোড়ন দিয়াই তেলে আনাজাদি ছাড়িতে হয়। তেল অধিক তাতিলে জ্বাল হইতে নামাইয়া তবে সরিষা ফোড়ন দিবে।
১৬ তিল এবং পোস্তাদানা ——— কোন কোন শুক্তানিতে এবং ঘণ্টে। দুটো ভিজান আতপ চাউলের সহিত একত্রে বাটিয়া লইলে বাটনা আর ছাকড়া ছাকড়া হয় না—তাহাতে বাঁধন পড়ে। সচরাচর মটর বা খেঁসারীর ডাইলের চাপড়ী ভাজি অনুষঙ্গ থাকিলে শুক্তানিতে ও ঘণ্টে ইহার প্রয়োগ প্রশস্ত। বাটিয়া পাট ভাজার খোলারূপে ব্যবহৃত হয়। কাটখোলায় ভাজিয়া চিনি বা গুড়ের সহিত মিশাইয়া মিষ্টান্ন প্রস্তুত হয়।

বারানসে কাটখোলায় ভাজা তিলের গুঁড়া দ্বারা কোন কোন ঝাল-চাট্‌নি মাখা হয়।

তৈলাক্ত পদার্থ।

বাটনারূপে ব্যবহৃত হইলেও এতদুভয় ‘ঝাল’ মধ্যে পরিগণিত হয় না। ব্যঞ্জন নামাইবার পূর্ব্বে মিশান হইয়া থাকে। বরেন্দ্রে পোস্ত দানা বিরল, তিলের চলনই অধিক।

১৭ নারিকেল (মালাই) এবং বাদাম কুড়িয়া ও বাটিয়া বা ‘দুগ্ধ’ কোন কোন ভাজিতে, পোড়ায়, ছেঁচকীতে, শুক্তায়, ঘণ্টে, ঝোলে, কালিয়ায় এবং বৈদেশিক ষ্টূ ও কারীতে প্রযুক্ত হয়। পোলাও ও ঘি-ভাতে মিশান যায়। দুগ্ধ, চিনি বা গুড়ের সহিত ‘কুড়া’ পাক করিয়া অনেক প্রকার মিষ্টান্ন প্রস্তুত হয়। কুড়া বাটিয়া কোন কোন সাদাসিধা চাটনি ও ‘মরিচ বাটায়’ প্রযুক্ত হয়। কুচাইয়া কাটখোলায় ভাজিয়া পোলাও প্রভৃতিতে অনুষঙ্গরূপে দেওয়া হয়। স্নেহ পদার্থ।

বাটনারূপে ব্যবহৃত হইলেও ইহারা ‘ঝাল’ মধ্যে পরিগণিত হয় না। উপকরণ ও অনুষঙ্গরূপে প্রযুক্ত হয়।

ব্যঞ্জন নামাইবার পূর্ব্বে মিশান প্রশস্ত।

বরেন্দ্রে বিরল।

১৮ আদা শুক্তানিতে ও কালিয়াতে। রন্ধন শেষে ব্যঞ্জন নামাইয়া দেওয়াই প্রশস্ত।

কদাচিৎ পোড়ায় ও ভাজিতে বিশেষতঃ কাবাবে।

কোন কোন ঝাল-চাটনিতে এবং আচারে। বাটনারূপে ব্যবহৃত হইলেও ‘ঝাল’ মধ্যে পরিগণিত হয় না।
১৯ পেঁয়াজ কুচাইয়া কোন কোন চড়চড়ীতে, বিশেষতঃ আমিষ চড়চড়ীতে। আবশ্যকমত সূপে এবং কালিয়াতে, কারীতে।

ফোড়নরূপে বা পশ্চাৎ ভাজিয়া খিঁচুড়ী বা পোলাওয়ের উপর ছড়াইয়া দেওয়া হয়।

পোড়ায় এবং ভাজিতে বিশেষতঃ কাবাবে। কুচাইয়া কোন কোন সিদ্ধে। আবশ্যকমত কালিয়াতে এবং কারীতে। সাদাসিধা চাট্‌নিতে বাটিয়া মিশান যায়। বরেন্দ্রে পেঁয়াজ ব্যবহার বিরল হইলেও একেবারে নিষিদ্ধ বলিয়া বোধ হয় না। অপরাপর মশল্লার ন্যায় ইহার ব্যবহারও সুনির্দ্দিষ্ট রহিয়াছে,—নির্ব্বিচারে ইহার প্রয়োগ করা হয় না। বাটিয়া ব্যবহার করিলেও ইহা ‘ঝাল’ মধ্যে পরিগণিত নহে।
২০ রশুন কুচাইয়া কোন কোন সূপে, কালিয়াতে এবং কারীতে। বেগুন পোড়ায়। কাবাবে। কোন কোন সূপে, আমিষ কালিয়াতে, কারীতে।

ব্যঞ্জন নামাইয়া মিশানই প্রশস্ত।

সৈর্ক্ক আচারে। বরেন্দ্রে ইহার ব্যবহার এক্ষণে বিরল।
২১ হিঙ কোন কোন সূপে, বিশেষতঃ মাষ এবং অরহর সূপে। কোন কোন কালিয়াতে। বারানস অঞ্চলে প্রায় সর্ব্বপ্রকার ব্যঞ্জনে। একটু জলে বা গরম তেলে গুলিয়া মাষ ডাইল ঘটিত বড়াতে ও কচুরীর পিঠীতে। কোন কোন চাট্‌নিতে। প্যাঁজ বা রশুনের পরিবর্ত্তে সচরাচর ব্যবহৃত হয়। তবে বঙ্গদেশ অপেক্ষা উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলেই ইহার সমধিক প্রচলন। মুলতানী হিঙই শ্রেষ্ঠ বলিয়া গণ্য হয়।
২২ গুজরতী বা ছোট-এলাচী, দারুচিনি ও লবঙ্গ। (এক সাথে গরম-মশল্লা নামে অভিহিত।) একত্রে ফোড়নরূপে গুরুপক্ব সূপে (বিশেষতঃ বুট-সূপে) ও কালিয়াতে।

খিঁচুড়ীতে এবং পোলাওয়ে।

পূরীর পূর রন্ধনে। পায়স, হালুয়াদি রন্ধনে।

মোচা ও কোবি প্রভৃতির ঘণ্টে, কালিয়াতে। কারীতে ও কাবাবে।

ব্যঞ্জন নামাইয়া পশ্চাৎ তাহাতে গাওয়া ঘিয়ের সহিত একত্রে মিশাইতে হয়। পূরীর পূর-রন্ধনে।

ভাজিয়া গুঁড়া করিয়া কাসুন্দিতে দেয়।
২৩ বড় এলাচী কোন কোন মিষ্টান্নে ব্যবহার বিরল
২৪ জায়ফল এবং জৈত্রী ফাকী করিয়া পোলাওয়ে মিশান যায়। ঐভাবে হালুয়া পায়সাদিতেও দেওয়া যায়। পোলাওর আখনি-জলে দেওয়া যাইতে পারে।

এক প্রকার ‘বিড়ালীর’ দ্বারা আঁচড়াইয়া জায়ফলের গুঁড়া বাহির করিতে হয়।
২৫ শলুপ পাতা, ধনিয়া পাতা, পার্শ্লী-পাতা ও পুদিনা পাতা ঝোলে। সূপে। মটর, পালঙ প্রভৃতি শাকের ঘণ্টে; কুচাইয়া ব্যঞ্জন সিদ্ধ কালে দেওয়া যায়। সাদাসিদা চাটনিতে ও বৈদেশিক সসে বাটিয়া বা কুচাইয়া দিয়া তাহা অনুবাসিত করা হয়।
২৬ আম্র মুকুল এবং আমাদা গোটা বা বাটিয়া সূপ (অম্ল) বা চাটনি অনুবাসিত করা হয়।
২৭ হলুদ কদাচিৎ ব্যবহৃত হয়। বর্ণকর ও দুর্গন্ধনাশক রূপে বাটিয়া বা গুঁড়া করিয়া সর্ব্বপ্রকার ব্যঞ্জনে, পোড়াতে, ভাজিতে প্রচুর পরিমাণে ব্যবহৃত হয়। কাসুন্দিতে দেওয়া হয়। বরেন্দ্রে নিরামিষ ব্যঞ্জনে অধিকাংশ স্থলে হলুদ বর্জ্জিত হয়।

মাছের ব্যঞ্জনে বিশেষ ভাবে প্রযুজ্য।

২৮ জাফরাণ, কেশর বা কুঙ্কুম পোলাওয়ে, খিঁচুড়ীতে, সূপে, কাবাবে, কালিয়াতে, কারীতে; হলুদের পরিবর্ত্তে ব্যবহৃত হইয়া থাকে। কাশ্মীরজ এই পীতবর্ণ মূল্যবান উদ্ভিজ্য পদার্থটি বরেন্দ্রে বলা বাহুল্য বিরল। ক্ষীরে বা দধিতে কিছুক্ষণ ভিজাইয়া রাখিলে তবে কেশরের বর্ণ নির্গত হয়; এবং তখন ব্যঞ্জনে মিশাইবার যোগ্য হয়।