বরেন্দ্র রন্ধন/সপ্তম অধ্যায়
সপ্তম অধ্যায়।
মেথি পর্ব্ব।
(৪) ঝোল (নিরামিষ)।
তৈলে (এবং নিরামিষ বোলে ঘৃতেও বটে) তেজপাত, লঙ্কা, মেথি ফোড়ন দিয়া আনাজ, মৎস্য বা উভয় একত্রে আংসাইয়া নুণ হলুদ সহ জলে সিদ্ধ করতঃ ঝোল ঝোল রাখিয়া নামাইলে যে ব্যঞ্জন প্রস্তুত হইল তাহাকে ‘ঝোল’ কহে।
‘ঝোলের’ আনাজ অপেক্ষাকৃত বড় বড় ডুম ডুমা করিয়া শুক্তানির আনাজের ছায় কুটিয়া লইতে হয়। ‘ডাল ফেলানী’ প্রভৃতি কোন কোন নিরামিষ ঝোল ছাড়া সাধারণতঃ ঝোলে পিঠালী দিতে হয় না এবং ডালফেলানী প্রভৃতি ঝোলেও পিঠালীর পরিবর্ত্তে ‘চেলেনী জল’ দিলে তবে তাহার আস্বাদন উত্তম হয়। অনেক ‘ঝোলের’ ঝোল শুকাইয়া ফেলিয়া ছেঁচকীর ন্যায় নস্নসে গোছ করিয়া রাঁধা হয়; কিন্তু ছেঁচ্কীতে যেরূপ অপেক্ষাকৃত বুড়া আনাজাদি ব্যবহৃত হয় এবং তাহা ছোট ছোট করিয়া কুটিয়া অধিক কষাইয়া রাঁধিতে হয়, শুষ্ক ‘ঝোলে’ সেরূপ করিতে হয় না। নচেৎ ‘ছেচ্কীর’ সহিত ‘ঝোলের’ অপর বিশেষ পার্থক্য নাই এবং এই অধ্যায়ে লিখিত নিরামিষ ‘লাবরা’ ব্যঞ্জন এবং আমিষ ‘ভাঙ্গা’ প্রভৃতিকে প্রকৃতপক্ষে ‘ছেঁচ্কী’ অধ্যায় ভুক্ত করিলেও নিতান্ত অন্যায় হয় না। তবে কেবল তাহাতে কচি আনাজ মৎস্য ব্যবহৃত হয় এবং অতিরিক্ত আংসাইতেও হয় না বলিয়া তদধ্যায়ভুক্ত করা যায় না।
শুক্তানির সহিতও ‘ঝোলের’ সাদৃশ্য খুব নিকট—‘শুক্তানিতে’ অতিরিক্ত সরিষা ফোড়ন দিতে হয় ‘ঝোলে’ তাহা হয় না, শুক্তানিতে অনেক ক্ষেত্রে পরিশেষে আদা সংযোগ করিতে হয়, ‘ঝোলে’ তাহা হয় না, অথবা তিলপিঠালী প্রভৃতিও ঝোলে যোগ করিতে হয় না, এবং শুক্তানির ন্যায় ঝোলের স্বাদ তিক্ত করা হয় না।
কোন কোন নিরামিষ ঝোলে ডাইল অনুষঙ্গরূপে ব্যবহৃত হয় এবং তাহাতে চেলেনী জল বা নারিকেল দুগ্ধ যোগ করা হয়। এইরূপ দুই এক স্থলে ঝোলে কেহ কেহ মেথির পরিবর্ত্তে জিরা ফোড়ন দিয়া থাকেন। ঝোলে প্রয়োজন হইলে, বিশেষতঃ কোন কোন মাছের ঝোলে বা ভাঙ্গায়, কদাচিৎ কিছু শুক্না লঙ্কা বাটা দেওয়া হইয়া থাকে। নচেৎ ‘ঝোলে’ অপর কোনও প্রকার বাটা ঝাল ব্যবহৃত হয় না। ‘ঝোলের’ সহিত ‘ঝালের’ এইখানেই একটি প্রধান পার্থক্য।
১৩২। লাউর ঝোল
লাউ অপেক্ষাকৃত বড় বড় ডুমা আকারে কুটিয়া লও। কিছু মটরের ডাইল ভিজাইয়া রাখ। তৈলে তেজপাত, লঙ্কা, মেথি ফোড়ন দিয়া লাউ ছাড়। আংসাও। নুণ হলুদ দিয়া চেলেনী জল ঢালিয়া দাও। আবার শুধু জল দিয়াও সিদ্ধ করিতে পার। ফুটিলে ভিজান মটর ডাইল ছাড়। ঝোল ঝোল থাকিতে নামাও। (চেলেনী জল যেন কদাপি ঘন না হয়।)
ইহার সহিত সচরাচর লাল আলু ও গাভথোড় ডুম ডুমা করিয়া কুটিয়া মিশান হইয়া থাকে।
মটরের ডাইলের পরিবর্ত্তে মটরের বড়ী বা ফুলবড়ী অথবা মটরের ডাইলের জলবড়া অনুষঙ্গরূপে ব্যবহার করিতে পার। এবং চেলেনী জলের পরিবর্ত্তে নারিকেল দুগ্ধ ব্যবহার করিতে পার।
চেলেনী জল—শুলী ধানের আতপ চাউল জলে ভিজাইয়া রাখ। সের জলে দুই ছটাক খানেক চাউল ভিজাইলেই চলিবে। ঘণ্টা দুই মত পরে চাউল রগড়াইয়া জল ঈষৎ শ্বেতবর্ণ হইলে ঐ জল আলগোছে ঢালিয়া বা ছাঁকিয়া লইয়া শুধু জলের পরিবর্ত্তে তদ্দ্বারা ব্যঞ্জন সিদ্ধ করিবে।
নারিকেল দুগ্ধ—উত্তম ঝুনা নারিকেল কুড়িয়া লও। একটা বড় বাটিতে রাখিয়া তদুপরি ফুটন্ত জল ঢালিয়া ঢাকিয়া রাখ। ঘণ্টা খানেক মত পরে নারিকেল কুড়া রগড়াইয়া বা জল অধিক গরম থাকিলে নাড়িয়া, কাপড়ে ছাঁকিয়া জলটুকু লও। চেলেনী বা শুধু জলের পরিবর্তে এই জলে সিদ্ধ করিয়া ঝোল রাঁধিতে পার।
১৩৩। ছাঁচী-কুমড়ার ঝোল
ছাঁচী-কুমড়া ডুম ডুমা করিয়া কুট। মটর ডাইল ভিজাইয়া রাখ বা ছোলার ডাইল অর্দ্ধ সিদ্ধ করিয়া রাখ। (ছোলার ডাইলেই স্বাদ ভাল হয়।) তৈলে তেজপাত, লঙ্কা, মেথি ফোড়ন দিয়া কুমড়া ছাড়। আংসাও। নুণ হলুদ দিয়া চেলেনী জল বা শুধু জল দাও। ফুটিলে ডাইল ছাড়। ঝোল ঝোল থাকিতে নামাও। ছাঁচী-কুমড়ার ঝোলে মেথির পরিবর্ত্তে জিরা ফোড়ন দিতে পার। ইহার সহিত কাঁটালবীচি (ভাপ দেওয়া) এবং ডাঁটা (ভাপ দেওয়া) সচরাচর মিশান হইয়া থাকে।
চেলেনী জলের পরিবর্ত্তে নারিকেল দুগ্ধ ব্যবহার করিতে পার।
শশার ঝোলও এই প্রকারে রাঁধিবে।
১৩৪। বিলাতী কুমড়ার ঝোল
কাঁচা (ডাগর) বিলাতী কুমড়া বড় বড় ডুমা করিয়া কুট। আলু ও বেগুন কুটিয়া লও। বিলাতী কুমড়ার শাক ও ডগা কুটিয়া লও। তৈলে লঙ্কা ও কালজিরা ফোড়ন দিয়া শাক ও ডগা ছাড়। আংসাও। অনেকে শুক্না লঙ্কার পরিবর্ত্তে (সম্ভবতঃ শাক থাকার নিমিত্ত) কাঁচা লঙ্কা ফোড়ন দেওয়া সঙ্গতবোধ করেন। আনাজ ছাড়। আংসাও। নুণ হলুদ দিয়া শুধু জল বা চেলেনী জল দাও। শুক্না লঙ্কা বাটা মিশাও। ফুটিলে বালুতে ভাজা মাষকলাই ডাইল মিশাও। সিদ্ধ হইয়া ঝোল ঝোল থাকিতে নামাও।
১৩৫। পাঁচমিশালী ডালফেলানী ঝোল বা তরকারী
বরেন্দ্রে এই ব্যঞ্জনটী সচরাচর রন্ধন হইয়া থাকে। ইহা দুই প্রকারে রান্না হইয়া থাকে —এক চেলেনী জল দিয়া, তৎক্ষেত্রে ইহাতে হলুদ দেওয়া হয় না। অপর চেলেনী জলের পরিবর্ত্তে শুধু জল দিয়া, তৎক্ষেত্রে ইহাতে হলুদ দেওয়া হইয়া থাকে।
লাল আলু, গোল আলু, পটোল, বেগুন, শিম, মূলা, লাউ, বরবটী, বোরা কলাই, সজিনা শুটী, গাভথোড়, ঝিঙ্গা, কুমড়া, শশা কাঁটালবীচি, ডাঁটা, খামাকচু প্রভৃতি আনাজ ইহাতে ব্যবহৃত হইয়া থাকে। এবং আজিকালি ফুলকোবি, ওলকোবি, সালগম, গাজর, স্কোয়াস, বীন, মটরশুটী, বিট, টোমেটো প্রভৃতি হালি আনাজও চেলেনী জলে পক্ব ঝোলে খুব ব্যবহৃত হইতেছে। করিলা প্রভৃতি তিক্ত স্বাদযুক্ত আনাজ ব্যবহার করিবে না।
(ক) শুধু জলে,—উপরিলিখিত আনাজের মধ্যে ঋতু অনুসারে তিন হইতে পাঁচ প্রকারের আনাজ লইয়া অপেক্ষাকৃত বড় বড় আকারে কুটিয়া লও। ঘৃতে তেজপাত, লঙ্কা ও মেথি অথবা জিরা (অল্প পরিমাণে দিবে) ফোড়ন দিয়া আনাজ ছাড়। আংসাও। নুণ হলুদ দিয়া জল দাও।
ফুটিলে মটর (ভিজান), মুগ (বালুতে ভাজা) অথবা মাষকলাই (বালুতে ভাজা) ডাল ছাড়। সিদ্ধ হইলে অল্প চিনি মিশাও। ঝোল ঝোল থাকিতে নামাও। ঝোল অবশ্য ঝপঝপে মত রাখিলে স্বাদ পান্সে হইবে, অথচ ঠিক গামাখা গামাখা মত অপেক্ষাও কিছু বেশী ঝোল রাখিবে। ইহাতে নওগেঁয়ে লাল্চে আলুই ভাল খাপ খায়।
(খ) চেলেনী জলে,—ইহাতে উপরিলিখিত সর্ব্বপ্রকার আনাজের মধ্যে ঋতু অনুসারে যে কোন তিন হইতে পাঁচ প্রকারের আনাজ লইয়া ঈষৎ বড় গোছের করিয়া কুটিয়া লও। খেসারী বা ছোট মটরের ডাইল ভিজাইয়া রাখ। (ইহাতে সাধারণতঃ অপর কোনও ডাইল ফেলান হয় না)। ঘৃতে তেজপাত, লঙ্কা, মেথি বা জিরা (অল্প পরিমাণে) এবং রুচী অনুসাবে দুটো সরিষা গুঁড়া ফোড়ন দিয়া আনাজ ছাড়। আংসাও। চেলেনী জল ঢালিয়া দাও। নুণ দাও। ফুটিলে মটর ডাইল ছাড়। সিদ্ধ হইলে অল্প চিনি দাও। ঝোল ঝোল থাকিতে নামাও। ইহাতে নইনীতালী আলুই ভাল খাপ খায়।
চেলেনী জলের পরিবর্ত্তে নারিকেল দুগ্ধ দিয়াও ইহা রাঁধিতে পার। পিত্তলী কড়াইয়ে রাঁধিলেই ভাল হয়। জিরা ফোড়ন দিলে সরিষা ফোড়ন দিবে না। সরিষা ফোড়ন দিলে শুক্তানি পর্য্যায়ে যায় বলিয়া অনেকে আবার আদৌ ইহাতে সরিষা ফোড়ন দেন না। মেথি বা জিরা কিছুই ফোড়ন না দিয়া শুধু তেজপাতা, লঙ্কা (শুক্না বা কাঁচা) ফোড়ন দিয়াই রাঁধেন। এই সমস্ত ডালফেলানী ঝোলে জিরা ফোড়ন পড়াতে সাধারণ নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটিতেছে। প্রকৃতপক্ষে ‘ঝোলে’ জিরা ফোড়ন দেওয়া সমীচীন কিনা সন্দেহ। কিন্তু সম্ভবত এই সমস্ত ঝোলে ডাল ফেলান হওয়াতে এবং চেলেনী জল দ্বারা রন্ধন হওয়াতে ইহাতে জিরা ফোড়ন দেওয়া চলিতে পারে।
ডাল ফেলানী ঝোলের আনজ অধিক কষিও না।
১৩৬। লাবরা (লাফরা) বা সাদা তরকারী
লাবরা বরেন্দ্রের (এবং পূর্ব্ব বঙ্গেরও বটে) একটি বিখ্যাত ব্যঞ্জন। লুচীর সহিত সাধারণতঃ ইহা খাওয়া হয়। বিবাহাদি ব্যাপারে ফলাহারে গৃহস্থ বাটীতে ইহা ভূরী পরিমাণে রাঁধা হইয়া থাকে। তখন এক সঙ্গে পরিমাণে অনেক রাঁধা হয় বলিয়া বস্তুতঃ ইহার স্বাদও উত্তম হইয়া থাকে। শ্রীচৈতন্যচরিতামৃতে এবং শ্রীচৈতন্যভাগবতে লিখিত আছে স্বয়ং মহাপ্রভু শ্রীশ্রীচৈতন্যদেব লাবরা বা লাফরা ব্যঞ্জনের পক্ষপাতী ছিলেন।[১]
লাল আলু, গোল আলু, আনাজিকলা, খামা (শোলা) কচু, কুমড়া, শশা, কাঁটালবীচি, গাভথোড়, শিম, বেগুন, মূলা, বিলাতী কুমড়া, পটোল, ঝিঙ্গা প্রভৃতি আনাজ ইহাতে ব্যবহৃত হইয়া থাকে। কোবি প্রভৃতি হালি আনাজ ইহাতে সাধারণতঃ দেওয়া যায় না। এবং নইনীতালী আলু অপেক্ষা বরেন্দ্রের (নওগেঁয়ে) ছোট ছোট লাল্চে আলুতেই ইহার স্বাদ উত্তম হয়। করিলা প্রভৃতি তিক্ত স্বাদযুক্ত অনাজাদি ইহাতে কদাপি দিবে না। অথবা বিলাতী (মিঠা) কুমড়া লাবরায় অবশ্য দেয়; নচেৎ লাবরা শেষ পর্যন্ত বেশ লপেট গোছের হইবে না সুতরাং ব্যঞ্জনও মজিবে না। সম্ভবতঃ বেগুন বিশেষতঃ ‘লাফা’ বেগুন (এবং তদভাবে বিলাতী কুমড়া) এই ব্যজনের অত্যাবশ্যকীয় আনাজ বলিয়া ইহার নাম ‘লাফরা’ বা ‘লাবরা’ ব্যঞ্জন হইয়াছে। লাউর সহিত ইহার কোন সম্পর্ক থাকা দেখা যায় না।
লৌহার কড়াই অপেক্ষা পিত্তলী কড়াইয়ে রাঁধিলে ইহার রঙ্গ বেশ পরিষ্কার হয়।
উপরিলিখিত আনাজের মধ্যে ঋতু অনুসারে গোটা পাঁচ ছয় আনাজ লইয়া (বলা বাহুল্য তন্মধ্যে বেগুন বা বিলাতী কুমড়া একতম আনাজ থাকিবে। ডুম ডুমা করিয়া কুটিয়া লও। (ব্যাপারের রান্না হইলে আনাজ বড় বড় ডুমা ডুমা করিয়া কুটা হয় এবং তৎক্ষেত্রে অনেক আনাজের খোসা ছাড়ানও হয় না)। ঘৃতে বা তৈলে তেজপাত, লঙ্কা, মেথি ফোড়ন দিয়া আনাজ ছাড়। আংসাও (আংসান ভাল হওয়া চাহি)। নুণ হলুদ দিয়া অল্প জল দাও। ফুটিলে ইচ্ছা করিলে দুটো ভিজান ছোলা মিশাইতে পার। সিদ্ধ হইলে একটু চিনি দেও। জল শুকাইয়া বেশ লপেট গোছ করিয়া নামাও। কোন প্রকার বাটনা বা পিঠালী দিবে না। ব্যাপারের রান্নার একটু লঙ্কা বাটা মিশান হইয়া থাকে।
ঝোল (আমিষ)
১৩৭। ক্ষুদ্র মাছের ঝোল
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র তৈল বিহীন মৎস্য বা চুনা (চুঁচড়া) মৎস্য অথবা বৃহত্তর মৎস্যের ক্ষুদ্র ছা’র দ্বারাই উত্তম ঝোল রান্না হইয়া থাকে। তেলে লঙ্কা, মেথি বা শুধু লঙ্কা ফোড়ন দিয়া বা পোড়াইয়া এই ঝোল পাক হয় বলিয়া কেহ কেহ ইহাকে ‘লঙ্কা পোড়া ঝোল’ নামে অভিহিত করিয়া থাকেন। শুক্ত-ঝোলে ইহার সহিত অতিরিক্ত দুটো সরিষা বা ফুলকাসুন্দী ফোড়ন পড়ে সুতরাং তাহাকে ‘কাসুন্দ পোড়া ঝোল’ বলা হইয়া থাকে। শুক্ত-ঝোলের ন্যায় এই ঝোলে পশ্চাৎ আদা সংযোগ করা হয় না। মোটা মাছের ‘ঝালের’ সহিত ক্ষুদ্র মাছের এই ‘ঝোলের’ যে পার্থক্য তাহা এই অধ্যায়ের মুখবন্ধেই বলা হইয়াছে।
মোয়া, সাঁপই, পুঁঠি, বাটা, পিয়ালী, পবা, বাঁশপাতা, পাতাশী, ট্যাংড়া, মেটর বা আইড়, ঢাঁই (সিলঙ), বাচা প্রভৃতির বাচ্ছা, নোছী বা রুই, বাউস,
কাৎলার বাচ্ছা, কইর বাচ্ছা, খলিশা, ফল্লি, ছাতিয়ান, কাঁখলে, খরিয়া, রাইখরিয়া প্রভৃতি মাছের এই ঝোল রান্না হয়।
ইহার মধ্যে এক বা একাধিক প্রকার মাছ লইয়া গোটা রাখিয়া অথবা বড় হইলে খণ্ড খণ্ড করিয়া কুটিয়া লও। নুণ হলুদ মাখ। তৈলে তেজপাতা, লঙ্কা, মেথি ফোড়ন দিয়া মাছ ছাড়। আংসাও। পুনরায় কিছু নুণ হলুদ দিয়া জল দাও। সিদ্ধ হইয়া অল্প ঝোল অবশিষ্ট থাকিতে নামাও। পিঠালী দিবে না। সিদ্ধ এতটা করিবে যাহাতে মৎস্যের ক্কাথ বাহির হইয়া আসিয়া ঝোলে সংক্রমিত হয়, তবে ঝোল সুস্বাদু হইবে।
উত্তম গাওয়া ঘি ও নেবুর রস সংযোগে গরম ভাতের সহিত মাখিয়া এই ঝোল খাইতে ভাল।
১৩৮। রুই মাছের ভাঙ্গা
উপরিলিখিত মাছের ঝোলে ব্যবহৃত ক্ষুদ্র নোছি মাছ অপেক্ষা যদ্যপি রুই প্রভৃতি মাছ বড় হয় অথচ ঠিক পাকা রুই মাছ বলিলে যাহা বুঝায় তত বড় না হয়, অর্থাৎ বরেন্দ্রে যাহাকে ‘নহলা মাছ’ কহে তাহার এবং কালবাউস মাছের ‘ভাঙ্গা’ অতি চমৎকার হয়। তৎব্যতীত আইড়, গুজা, ঢাঁই, বোয়াল প্রভৃতি মাছের শলুপ শাক যোগে অতি সুন্দর ভাঙ্গা হইয়া থাকে। ভাঙ্গায় মাছের সহিত পটোল, বেগুন, আলু প্রভৃতি আনাজ ব্যবহৃত হইয়া থাকে। পটোল ও কাঁটাল বীচি অথবা ডুমুরের সহিত ইলিশ মাছেরও অতি উপাদেয় ‘ভাঙ্গা’ রাঁধা যায়। ইলিশ মাছের ভাঙ্গায় একটু লঙ্কা বাটা দিতে হয়, কিন্তু শলুপ শাক দেয় না।
রুই প্রভৃতি মাছের শুকৎ হইতে এই ভাঙ্গার পার্থক্য অতি সামান্য,—‘শুকতে’ সরিষা ফোড়ন দিতে হয় এবং পশ্চাতে নামাইয়া আদা ছেঁচা মিশাইতে হয়, ভাঙ্গাতে তাহা হয় না। তবে মাছ কিঞ্চিৎ নরম গোছ থাকিলে কেহ কেহ আদা ছেঁচা মিশান কর্ত্তব্য মনে করেন। শুকতের
ন্যায় ভাঙ্গা তিক্তবিশিষ্ট করা হয় না। কিন্তু শুকতের ন্যায় ভাঙ্গা ঈষৎ ঝোল ঝাল রাখিয়া নামাইতে হয়। উভয়েই পিঠালী দেওয়া যায় না।
পক্ষান্তরে ছেঁচকীর সহিত ভাঙ্গার পার্থক্য,—ভাঙ্গায় মাছ ও আনাজ অপেক্ষাকৃত কচি হইবে এবং তাহা কদাপি অতিরিক্ত কষাইবে না। ভাঙ্গা একটু ঝোল ঝোল রাখা যাইতে পারে, কিন্তু ছেঁচকিতে তাহা চলিবে না।
সাধারণ ভাবে মাছ কুটিয়া নুণ হলুদ মাখ। আলু-বেগুন বা আলু পটোল ছোট ছোট ডুমা ডুমা করিয়া কুটিয়া লও। তৈলে কষাইয়া রাখ। তৈলে তেজপাতা, লঙ্কা, মেথি ফোড়ন দিয়া কাঁচা মাছ ছাড়। আংসাও। (অধিক আংসাইবে না)। পুনঃ একটুকু নুণ হলুদ দিয়া জল দাও। রুচী অনুসারে শলুপ শাক বা তাহার কচিডগা কুচি ছাড়। মাছ অপেক্ষাকৃত পচা বা নরম মত হইলে একটু লঙ্কা বাটা দিতে পার নচেৎ প্রয়োজন নাই। ফুটিলে কষান আনাজ ছাড়। সিদ্ধ হইলে মাছ হাত দিয়া ভাঙ্গিয়া ঘোট ঘোট ডুম ডুমা করিয়া দাও। অল্প ঝোল অবশিষ্ট থাকিতে নামাও। মাছ ছোট হইলে বা নরম মত হইলে ঝোল একেবারে শুকাইয়া ফেলিয়া নামাইবে। পিঠালী দিবে না।
কালবাউস মাছের এইরূপে ভাঙ্গা রাঁধিবে। কাৎলা ও মৃগেল প্রভৃতি মাছের ভাঙ্গা তাদৃশ সুস্বাদু হয় না।
মাছে ব্যবহৃত বেগুন সম্বন্ধে এখানে একটি বিষয় বলা নিতান্ত প্রয়োজন। বেগুন বহু প্রকারের পাওয়া যায়। ‘পোড়া’ বা ‘ভাজির’ নিমিত্ত বড় অথচ নরম দেখিয়া বেগুন লইবে যাহাতে তাহা পোড়াইলে বা ভাজিলে সুন্দর মোলায়েম হইবে। ইহাকে ‘মুক্তকেশী’ বা ‘লাফা’ বেগুন কহে। ‘লাফরা’, ‘ঘণ্ট’ প্রভৃতি ব্যঞ্জনের নিমিত্ত এই নরম লাফা বেগুন লইবে কেননা তৎক্ষেত্রে বেগুন গলাইয়া ফেলিয়া ব্যঞ্জন লপেট করাই প্রয়োজন। অপরাপর মাছ তরকরীতে দিবার জন্য ছোট ও অপেক্ষাকৃত শক্ত গোছের বেগুন লইবে,
যাহাতে তাহা মাছ তরকারীতে দিলে গলিয়া না যায়। বরেন্দ্রে ছোট ছোট সবুজ বর্ণ ও বহু কণ্টকবিশিষ্ট এক প্রকার বেগুন পাওয়া যায় যাহাকে ‘গৃহস্থী’ বা ‘কড়ুই’ বেগুন কহে। ইহা এক বৃন্তে বহু ফলে। ইহা মাছ তরকারীতে দেওয়ার জন্যই উৎপন্ন হইয়া থাকে। এই ছোট গৃহস্থী কড়ুই বেগুনই মাছ-তরকারীতে দিবে।
১৩৯। বোয়াল মাছের ভাঙ্গা
বোয়াল মাছের ভাঙ্গা রুই মাছের মতই শলুপ শাক যোগে রাঁধিবে, কেবল তাহাতে অতিরিক্ত কালজিরা ফোড়ন দিবে।
আইড়, শিলঙ প্রভৃতি তৈলাক্ত মাছের ভাঙ্গা এই প্রকারে রাঁধিবে।
শলুপ শাকের পরিবর্ত্তে হালি পার্শলী, সেলেরী প্রভৃতি শাকের কুচিও মিশাইতে পার।
১৪০। ইলিশ মাছের ভাঙ্গা
পটোল ও কাঁটালবীচি অথবা যজ্ঞডুমুর দিয়া ইলিশ মাছের অতি সুন্দর ‘ভাঙ্গা’ হইয়া থাকে। টাট্কা অপেক্ষা কিঞ্চিৎ নরম ইলিশ মাছেরই ভাঙ্গা অধিকতর সুস্বাদু হয়। ইলিশ মাছের ভাঙ্গায় আলু, বেগুন প্রভৃতি আনাজ সাধারণত ব্যবহৃত হয় না, তবে বিলাতী কুমড়া ব্যবহৃত হইতে পারে। আনাজের অনুপাতে মাছ যেন কম না পড়ে, তাহা হইলে ভাঙ্গার আস্বাদন ভাল হইবে না।
পটোল ও কাঁটালবীচি ছোট ছোট ডুমা ডুমা করিয়া কুট। তৈলে কষাইয়া রাখ। ইলিশ মাছ সাধারণভাবে কুটিয়া লইয়া নুণ হলুদ মাখ। তৈলে তেজপাত, লঙ্কা, মেথি ফোড়ন দিয়া মাছ ছাড়। আংসাও। পুনঃ কিঞ্চিৎ নুণ হলুদ ও একটু লঙ্কা বাটা দিয়া জল দাও। ফুটিলে কষান আনাজ ছাড়। সিদ্ধ হইলে হাত দিয়া মাছ ভাঙ্গিয়া সমস্ত মিশাইয়া দাও। জল শুকাইলে নামাও। পিঠালী দিবে না।
যজ্ঞডুমুরের সহিত ভাঙ্গা রাঁধিতে হইলে তাহা পূর্ব্বে ভাপ দিয়া লইবে। ইলিশ মাছের ভাঙ্গায় দুটো কালজিরা ফোড়ন দেওয়া যায়।
১৪১। চিঙড়ী মাছের মালাই ঝোল
মাঝারী গোছ মোচা-চিংড়ী অথবা বাগদা-চিঙড়ী লইয়া গোটা রাখিয়া কুটিয়া নুণ হলুদ মাখ। লাউ ডুমা ডুমা করিয়া কুটিয়া তেলে কষাইয়া রাখ। তৈলে বা ঘৃতে তেজপাত, লঙ্কা, মেথি ফোড়ন দিয়া, মাছ ছাড়। আংসাও। নারিকেল দুগ্ধ ঢালিয়া দাও (শুধু জল দিবে না)। প্রয়োজন বোধ করিলে আরও কিছু নুণ, হলুদ দিবে। ফুটিলে কষান লাউ ছাড়। সিদ্ধ হইলে একটু মিষ্ট দিতে পার। অল্প ঝোল অবশিষ্ট থাকিতে নামাও।
কাঁকড়া, ইলিশ, আইড়, সিলঙ, কই প্রতি মাছের এইরূপ মালাই ঝোল রাঁধিবে।
ইচ্ছা করিলে ইহার সহিত আলু, ঝিঙ্গা, শশা, কুমড়া অথবা ফুলকোবি, সালগম, স্কোয়াস, কলাইশুটী প্রভৃতি আনাজ মিশাইয়া রাঁধিতে পার।
১৪২। বাটী-চড়চড়ী
ইহা নামে চড়চড়ী হইলেও ইহাকে বরেন্দ্রের চড়চড়ীর বা এই গ্রন্থে লিখিত অপর কোনও ব্যঞ্জনের সহিত এক পর্য্যায় ভুক্ত করা যায় না। তবে সিদ্ধ বা ভাজির সহিত ইহার বিশেষ সাদৃশ্য আছে। অতএব মেথি পর্ব্বের অগ্রেই ইহাকে স্থান দেওয়া কর্ত্তব্য ছিল, কিন্তু আমার ভ্রমক্রমে তাহা না হওয়ায় এক্ষণে ইহাকে মেথি পর্ব্বের শেষে স্থান দিতে হইতেছে। ইহা সচরাচর বাটীতে করিয়া অল্প পরিমাণে রাঁধা হয় বলিয়া এবং দেখিতে চড়চড়ীর মত বলিয়া ইহাকে ‘বাটী-চড়চড়ী’ বলা হয়। রাণাঘাটের সুবিখ্যাত পাল-চৌধুরী বংশভুষণ শ্রীযুক্ত অমরেন্দ্রনাথ পাল-চৌধুরী মহাশয়ের স্ত্রীর নিকট আমার স্ত্রী ইহা শিখিয়াছিলেন।
বাটী-চড়চড়ী নিরামিষ ও আমিষ উভয়বিধ প্রকারেই রাঁধা যায়। সাধারণতঃ আলু, পটোল, কুমড়া এবং হালি ফুলকোবি, কলাইশুটী প্রভৃতি এক বা একাধিক অনাজ ইহাতে ব্যবহৃত হইয়া থাকে। আলু-পটোল বা আলু-ফুলকোবি প্রভৃতি অপেক্ষাকৃত ছোট ডুমা ডুমা করিয়া কুটিয়া লও। নুণ হলুদ মাখ। একটি পিত্তলী বাটীতে রাখিয়া তৎসহ কলাইশুটী, মাষকলাই বড়ী, লঙ্কা (কাঁচা বা শুক্না) চিরিয়া এবং খাঁটি সরিষার তৈল মিশাও। তৎপর আন্দাজ মত জল ঢালিয়া দিয়া বাটীটি জ্বালে বসাও। সিদ্ধ কর। জল মরিয়া গিয়া সুসিদ্ধ আনাজ জলের উপর রহিলে বা, আনাজগুলি একটু ভাজা ভাজা হইলে নামাও। গরম গরম খাও।
আমিষ—রুই, ভেটকি প্রভৃতি মোটা মাছ, ছোট চিংড়ী মাছ অথবা কোনও প্রকার ক্ষুদ্র মাছের অমনি বা তৎসহ উপরিলিখিত এক বা একাধিক আনাজযোগে উত্তম বাটী-চড়চড়ী হয়। একপ্রকারের মাছ অপেক্ষাকৃত ছোট ডুমা ডুমা করিয়া কুটিয়া লও। আলু পটোলাদিও তদ্রূপ ডুমা ডুমা করিয়া কুটিয়া লও। উপরিউক্ত বিধানে বাটীতে করিয়া বা পরিমাণে অধিক হইলে পিত্তলী হাঁড়িতে করিয়া চড়চড়ী রাঁধ। ক্ষুদ্র মাছের আমিষ চড়চড়ীতে বড়ী দেয় না; মোটা মাছে একটু লঙ্কা বাটা মিশাইতে পার।
ষ্টূ (বৈদেশিক)
ষ্টূ, পাই প্রভৃতি বৈদেশিক কতকগুলি ব্যঞ্জন এই ‘ঝোল’ অধ্যায়ে ফেলান যাইতে পারে। এই নিমিত্ত এতন্মধ্যে সচরাচর প্রচলিত দুই তিনটি ডিস এখানে লিপিবদ্ধ করিলাম।
(১) আইরিষ ষ্টূ
মেষ, ছাগ অথবা পক্ষী মাংস খণ্ড খণ্ড করিয়া কুটিয়া লও। তেজপাত ও দুটো গোটা গরম মশলা ফোড়ন দিয়া নামাইয়া কিছু ময়দা ছাড়। খুব করিয়া নাড়, যেন ময়দা গুটি পাকাইয়া অথবা লাল্চে হইয়া না যায়। পুনরায় পাত্র জ্বালে চড়াইয়া ঘৃত উত্তপ্ত হইলে মাংসখণ্ড ছাড়। আংসাও। মাংস নির্গত জল শুকাইয়া গেলে গরম জল দাও। ফুটিলে নুণ, মরিচ (সা-মরিচ হইলেই ভাল হয়) গুঁড়া, আদা চাকা, গোটা প্যাঁজ (শ্বেতবর্ণ পেঁয়াজ হইলেই ভাল হয়) এবং ফলা করিয়া বানান গোল আলু ছাড়। (গোল আলু আইরিষ ষ্টূর একটি প্রধান অনুষঙ্গ সুতরাং গোল আলু পর্য্যাপ্ত পরিমাণে দিতে হয়। অতঃপর জ্বালের উপর হইতে হাঁড়ি সরাইয়া উনানের পার্শ্বে মন্দা আঁচে দমে বসাইয়া রাখ। ইংরাজীতে বলে,—Stew boiled is stew spoiled. মন্দা আঁচে ধীরে ধীরে ফুটিয়া মাংস সিদ্ধ হইলে একটু চিনি ও দুগ্ধ মিশাইয়া স্টূর রঙ্গ শ্বেতবর্ণ কর। ঝোল ঈষৎ ঘন গোছের হইলে নামাও।
জল ও পশ্চাৎ দুগ্ধের পরিবর্ত্তে নারিকেল দুগ্ধ, বাদাম বাটা, পোস্তদানা বাটা অথবা চেলেনী জল দিয়াও আইরিষ ষ্টূ রাঁধিতে পার। চেলেনী জল দিলে ময়দা ফোড়ন দেওয়া প্রয়োজন করে না।
লাউ, কুমড়া, শশা, স্কোয়াস, ফুলকোবি, শালগম, মটর শুটী, বোরা কলাই (haricot bean) প্রভৃতি আনাজও এই ষ্টূতে মিশাইতে পার।
(২) ব্রাউন ষ্টূ
ঘৃতে তেজপাত ও দুটো গরম মশল্লা (গোটা) ফোড়ন দিয়া ময়দা ছাড়। নাড়িয়া, ময়দা লালচে কর। প্যাঁজ কুচা বা চাকা ফোড়ন দাও। উহাও নাড়িয়া লালচে কর। মাংসখণ্ড ছাড়। আংসাও। মাংস নির্গত জল মরিয়া গেলে গরম জল দাও। ফুটিলে নুণ, মরিচ গুঁড়া, আদা চাকা ও কষান ফলা আলু,বা ফুলকোবি প্রভৃতি আনাজ মিশাইতে পার। অতঃপর উনানের উপর হইতে হাঁড়ি সরাইয়া তৎপার্শ্বে মন্দা আঁচে বসাইয়া ধীরে ধীরে সিদ্ধ কর। জল শুকাইয়া ঝোল একটু থকথকে গোছ হইলে নামাইয়া আবশ্যক বোধ করিলে পুনঃ ‘কেরামেল’ বা পোড়া-চিনির রঙ্গ মিশাও।
(৩) পাই (পই-রুটী)।
পায়রার মাংস দ্বারাই ‘পাই’ রাঁধা প্রসিদ্ধ। উপরিউক্ত বিধানে পায়রামাংসখণ্ডের ব্রাউন-স্টূ রাঁধ। ইহাতে আলু প্রভৃতি সবজী না দিয়া কেবল মাত্র গোটা পেঁয়াজ সবজীরূপে দেওয়াই দস্তুর। এক্ষণে মাংস ও পেঁয়াজগুলি স্টূ হইতে উঠাইয়া লইয়া একখানা ‘পাই-ডিসে’ সাজাও। এবং গোটা কয়েক ডিম শক্ত-সিদ্ধ করিয়া দুই বা চারি খণ্ডে কাটিয়া পাই-ডিসে মাংসের সহিত সাজাইয়া দাও। (পায়রা পিছু একটি বা দুইটি হিসাবে ডিম লইবে।) তৎপর ঝোলটুকু একখানা ন্যাকড়ায় ছাঁকিয়া লইয়া তৎসহ কিছু ‘ওয়ারসেষ্টরসায়ার সস্’ মিশাইয়া পাই-ডিসে মাংসের উপর ঢালিয়া দাও।
এক্ষণে পোয়াটেক উত্তম কলের ময়দা লইয়া তাহাতে দেড় ছটাক মত মাখন ময়ান দিয়া উত্তমরূপে হাতে ডল; এবং ক্রমে জল মিশাইয়া থাসিয়া মাখিয়া একটি তাল পাকাও। ময়দার এই তাল অর্দ্ধ অঙ্গুলী পরিমিত পুরু করিয়া বেলিয়া লও। ইহাই হইল পাইয়ের কাষ্ট বা রুটী। এই রুটী দ্বারা পাই-ডিসের মুখ সম্পূর্ণরূপে আচ্ছাদন কর। ধারে অতিরিক্ত রুটী যাহা বাহির হইয়া থাকিবে ছুরি দ্বারা তাহা কাটিয়া ফেলিবে। ইচ্ছা করিলে এই অতিরিক্ত ময়দার দ্বারা বিবিধ নক্সা কাটিয়া রুটীর উপর চারি ধারে এবং মধ্যে আঁটিয়া দিবে। বড় পাই-ডিস হইলে এবং ময়দা গিলা গোছের মাখা হইলে ‘রুটী’ নুইয়া পড়িবে, সুতরাং তাহা নিবারণ করার জন্য রুটীর নিচে দুই তিনখানা পাৎলা গোছের বাঁশের চেঁচারী দ্বারা আশ্রয় দিবে। অতঃপর উত্তপ্ত তেজালে বা তুন্দরের মধ্যে পাই-ডিস রাখিয়া বেক বা পুটপাক করিয়া লও।
- ↑
“সার্ব্বভৌম পরিবেশন করেন অপেনে।
প্রভু কহে মোরে দেহ লাফরা বাঞ্জনে।”চৈতন্য চরিতামৃত। মধ্য।৬।৩৫
এবং—“লাফরা খায়েন প্রভু ভক্তগণ হাসে।”
চৈতন্যভাগবত—‘বাঙ্গালা ভাষার অভিধানে’ উদ্ধৃত