বর্ণপরিচয় (দ্বিতীয় ভাগ, ১৯৩০)/৪র্থ পাঠ

৪র্থ পাঠ।

যাদব।

যাদব নামে একটি বালক ছিল, তাহার বয়স আট বৎসর। যাদবের পিতা, প্রতিদিন তাহাকে বিদ্যালয়ে পাঠাইয়া দিতেন। লেখা পড়ায় যাদবের যত্ন। সে, এক দিনও, বিদ্যালয়ে যাইত না; প্রতিদিন পথে পথে খেলা করিয়া বেড়াইত।

 বিদ্যালয়ের ছুটী হইলে, সকল বালক যখন বাড়ী যাইত, যাদবও সেই সময়ে বাড়ী যাইত। তাহার বাপ মা মনে করিতেন, যাদব পাঠশালায় লেখা পড়া শিখিয়া আসিল। এই রূপে, প্রতি দিন সে বাপ মাকে ফাঁকি দিত।

 এক দিন যাদব দেখিল, ভুবন নামে একটি বালক পড়িতে যাইতেছে। সে তাহাকে কহিল, ভুবন, আজ তুমি পাঠশালায় যাইও না। এস, দুজনে মিলিয়া খেলা করি। পাঠশালার ছুটী হইলে, যখন সকলে বাড়ী যাইবে, আমরাও সেই সময়ে বাড়ী যাইব।

 ভুবন কহিল, না ভাই, আমি খেলা করিব না। সারাদিন খেলা করিলে, পড়া হবে না। কাল পাঠশালায় গেলে, গুরু মহাশয় ধমকাইবেন, বাবা শুনিলে রাগ করিবেন। আমি আর দেরি করিব না, পাঠশালায় যাই। এই বলিযা ভুবন চলিয়া গেল।

 আর একদিন, যাদব দেখিল, অভয় নামে একটি বালক পড়িতে যাইতেছে। সে তাহাকে বলিল, অভয় আজ পড়িতে যাইও না। এস, দুজনে খেলা করি।

 অভয় বলিল, না ভাই, তুমি বড় খারাপ ছোকরা; তুমি এক দিনও পড়িতে যাও না। তোমার সহিত খেলা করিলে আমিও তোমার মত খারাপ হইয়া যাইব। তোমার মত পথে পথে খেলিয়া বেড়াইলে লেখা পড়া কিছু হবে না। কাল গুরু মহাশয় বলিয়াছেন, ছেলেবেলায়, মন দিয়া লেখা পড়া না করিলে, চিরকাল দুঃখ পাইতে হয়।

 এই বলিয়া অভয় চলিয়া যায়। যাদব টানাটানি করিতে লাগিল। অভয় তাহার হাত ছাড়াইয়া, চলিয়া গেল। চলিয়া যাইবার সময় সে বলিল, আজ আমি তোমার সব কথা গুরু মহাশয়কে বলিয়া দিব।

 অভয়, বিদ্যালয়ে গিয়া গুরু মহাশয়কে་ যাদবের কথা বলিয়া দিল। গুরু মহাশয় যাদবের পিতার নিকট বলিয়া পাঠাইলেন, তোমার ছেলে, এক দিনও পড়িতে আইসে না। প্রত্যহ পথে পথে খেলিয়া বেড়ায়। আপনিও পড়িতে আইসে না, এবং অন্য অন্য বালককেও আসিতে দেয় না।

 যাদবের পিতা শুনিয়া অতিশয় ক্রোধ করিলেন, তাহাকে অনেক ধমকাইলেন; বই, কাগজ, কলম, যা কিছু দিয়াছিলেন, সব কাড়িয়া লইলেন। সেই অবধি, তিনি যাদবকে ভাল বাসিতেন না, কাছে আসিতে দিতেন না, সম্মুখে আসিলে, দূর দূর করিয়া তাড়াইয়া দিতেন।