বহুবিবাহ রহিত হওয়া উচিত কিনা এতদ্বিষয়ক বিচার/ষষ্ঠ আপত্তি
ষষ্ঠ আপত্তি।
কেহ কেহ আপত্তি করিতেছেন, এ দেশে বহুবিবাহ প্রথা প্রচলিত থাকাতে, অশেষবিধ অনিষ্ট ঘটিতেছে, সন্দেহ নাই; যাহাতে তাহার নিবারণ হয়, তদ্বিষয়ে সাধ্যানুসারে সকলের যথোচিত চেষ্টা করা ও যত্নবান্ হওয়া নিতান্ত উচিত ও আবশ্যক। কিন্তু, বহুবিবাহ সামাজিক দোষ; সামাজিক দোষের সংশোধন সমাজের লোকের কার্য্য; সে বিষয়ে গবর্ণমেণ্টকে হস্তক্ষেপ করিতে দেওয়া কোনও ক্রমে বিধেয় নহে।
এই আপত্তি শুনিয়া, আমি কিয়ৎক্ষণ হাস্য সংবরণ করিতে পারি নাই। সামাজিক দোষের সংশোধন সমাজের লোকের কার্য্য, এ কথা শুনিতে আপাততঃ অত্যন্ত কর্ণসুখকর। যদি এ দেশের লোক সামাজিক দোষসংশোধনে প্রবৃত্ত ও যত্নবান্ হয়, এবং অবশেষে কৃতকার্য্য হইতে পারে, তাহা অপেক্ষা সুখের, আহ্লাদের, ও সৌভাগ্যের বিষয় আর কিছুই হইতে পারে না। কিন্তু দেশস্থ লোকের প্রবৃত্তি, বুদ্ধিবৃত্তি, বিবেচনাশক্তি প্রভৃতির অশেষ প্রকারে যে পরিচয় পাওয়া গিয়াছে, এবং অদ্যাপি পাওয়া যাইতেছে, তাহাতে তাহারা সমাজের দোষ- সংশোধনে যত্ন ও চেষ্টা করিবেন, এবং সেই যত্নে ও সেই চেষ্টায় ইষ্টসিদ্ধি হইবেক, সহজে সে প্রত্যাশা করিতে পারা যায় না। ফলতঃ, কেবল আমাদের যত্ন ও চেষ্টায় সমাজের সংশোধনকার্য্য সম্পন্ন হইবেক, এখনও এ দেশের সে দিন, সে সৌভাগ্যদশা উপস্থিত হয় নাই; এবং কত কালে উপস্থিত হইবেক, দেশের বর্ত্তমান অবস্থা দেখিয়া, তাহা স্থির বলতে পারা যায় না। বোধ হয়, কখনও সে দিন ও সে সৌভাগ্যদশা উপস্থিত হইবেক না।
যাঁহারা এই আপত্তি করেন, তাঁহারা নব্য সম্প্রদায়ের লোক। নব্য সম্প্রদায়ের মধ্যে যাঁহারা অপেক্ষাকৃত বয়োবৃদ্ধ ও বহুদর্শী হইয়াছেন, তাঁহারা অর্ব্বাচীনের ন্যায়, সহসা এরূপ অসার কথা মুখ হইতে বিনির্গত করেন না। ইহা যথার্থ বটে, তাঁহারাও এক কালে অনেক বিষয়ে অনেক আস্ফালন করিতেন; সমাজের দোষসংশোধন ও সমাজের শ্রীবৃদ্ধিসাধন তাঁহাদের জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য, এ কথা সর্ব্বক্ষণ তাঁহাদের মুখে নৃত্য করিত। কিন্তু, এ সকল পঠদ্দশার ভাব। তাঁহারা পঠদ্দশা সমাপন করিয়া বৈষয়িক ব্যাপারে প্রবৃত্ত হইলেন। ক্রমে ক্রমে, পঠদ্দশার ভাবের তিরোভাব হইতে লাগিল। অবশেষে, সামাজিক দোষের সংশোধন দূরে থাকুক, স্বয়ং সেই সমস্ত দোষে সম্পূর্ণ লিপ্ত হইয়া, সচ্ছন্দ চিত্তে কালযাপন করিতেছেন। এখন তাঁহারা বহুদর্শী হইয়াছেন; সমাজের দোষসংশোধন, সমাজের শ্রীবৃদ্ধিসাধন, এ সকল কথা, ভ্রান্তিক্রমেও, আর তাঁহাদের মুখ হইতে বহির্গত হয় না; বরং, ঐ সকল কথা শুনিলে, বা কাহাকেও ঐ সকল বিষয়ে সচেষ্ট হইতে দেখিলে, তাঁহারা হাস্য ও উপহাস করিয়া থাকেন।
এই সম্প্রদায়ের অল্পবয়স্কদিগের এক্ষণে পঠদ্দশার ভাব চলিতেছে। অল্পবয়স্কদলের মধ্যে যাঁহারা অল্প বয়সে বিদ্যালয় পরিত্যাগ করেন, তাঁহাদেরই আস্ফালন বড়। তাঁহাদের ভাবভঙ্গী দেখিয়া, অনায়াসে লোকের এই বিশ্বাস জন্মিতে পারে, তাঁহারা সমাজের দোষসংশোধনে ও শ্রীবৃদ্ধিসম্পাদনে প্রাণসমৰ্পণ করিয়াছেন। কিন্তু তাঁহারা যে মুখমাত্রসার, অন্তরে সম্পূর্ণ অসার, অনায়াসে সকলে তাহা বুঝিতে পারেন না। তদৃশ ব্যক্তিরাই উন্নত ও উদ্ধত বাক্যে কহিয়া থাকেন, সমাজের দোষসংশোধন সমাজের লোকের কার্য্য, সে বিষয়ে গবর্ণমেণ্টকে হস্তক্ষেপ করইতে দেওয়া বিধেয় নহে। কিন্তু, সমাজের দোষসংশোধন কিরূপ কার্য্য, এবং কিরূপ সমাজের লোক, অন্যদীয় সাহায্য নিরপেক্ষ হইয়া, সমাজের দোষসংশোধনে সমর্থ, যাঁহাদের সে বোধ ও সে বিবেচনা আছে, তাঁহারা, এ দেশের অবস্থা দেখিয়া, কখনই সাহস করিয়া বলিতে পারেন না, আমরা কোনও কালে, কেবল আত্মযত্নে ও আত্মচেষ্টায়, সামাজিক দোষ- সংশোধনে কৃতকার্য্য হইতে পারি। আমরা অত্যন্ত কাপুরুষ, অত্যন্ত অপদার্থ; আমাদের হতভাগা সমাজ অতিকুৎসিত দোষপরম্পরায় অত্যন্ত পরিপূর্ণ। এ দিকের চন্দ্র ও দিকে গেলেও, এরূপ লোকের ক্ষমতায় এরূপ সমাজের দোসংশোধন সম্পন্ন হইবার নহে। উল্লিখিত নব্য প্রামাণিকেরা কথায় বিলক্ষণ প্রবীণ; তাঁহাদের যেরূপ বুদ্ধি, যেরূপ বিদ্যা, যেরূপ ক্ষমতা, তদপেক্ষা অনেক অধিক উচ্চ কথা কহিয়া থাকেন। কথা বলা যত সহজ, কার্য্য করা তত সহজ নহে।
আমাদের সামাজিক দোষসংশোধনে প্রবৃত্তি ও ক্ষমতা বিষয়ে দুটি উদাহরণ প্রদর্শিত হইতেছে; প্রথম, ব্রাহ্মণজাতির কন্যাবিক্রয়; দ্বিতীয়, কায়স্থজাতির পুত্রবিক্রয়। ব্রাহ্মণজাতির অধিকাংশ শ্রোত্রিয় ও অনেক বংশজ কন্যাবিক্রয় করেন; আর, সমুদায় শ্রোত্রিয় ও অধিকাংশ বংশজ কন্যাক্রয় করিয়া বিবাহ করেন। এই ক্রয়বিক্রয় শাস্ত্রানুসারে অতি গর্হিত কর্ম্ম; এবং প্রকারান্তরে বিবেচনা করিয়া দেখিলে, অতি জঘন্য ব্যবহার। অত্রি কহিয়াছেন,
ক্রয়ক্রীতা চ যা কন্যা পত্নী সা ন বিধীয়তে।
তস্যাং জাতাঃ সুতান্তেষাং পিতৃপিণ্ডং ন বিদ্যতে।[১]
ক্রয় করিয়া যে কন্যাকে বিবাহ করে, সে পত্নী নহে; তাহার গর্ভে যে সকল পুত্র জন্মে, তাহারা পিতার পিণ্ডদানে অধিকারী নয়।
ক্রয়ক্রীতা তু যা নারী ন সা পত্ন্যভিধীয়তে।
ন সা দৈবে ন সা পৈত্র্যে দাসীং তাং কবয়ো বিদুঃ।[২]
ক্রয় করিয়া যে নারীকে বিবাহ করে, তাহাকে পত্নী বলে না; সে দেবকার্য্যে ও পিতৃকার্য্যে বিবাহকর্ত্তার সহধর্ম্মচারিণী হইতে পারে না; পণ্ডিতেরা তাহাকে দাসী বলিয়া গণনা করেন।
বৈকুণ্ঠবাসী হরিশর্ম্মার প্রতি ব্রহ্মা কহিয়াছেন,
যঃ কন্যাবিক্রয়ং মূঢ়ো লোভাচ্চ কুরুতে দ্বিজ।
স গচ্ছেন্নরকং ঘোরং পুরীষহ্রদসংজ্ঞকম্।
বিক্রীতায়াশ্চ কন্যায়া যঃ পুত্রো জায়তে দ্বিজ।
স চাণ্ডাল ইতি জ্ঞেয়ঃ সর্ব্বধর্ম্মবহিষ্কৃতঃ।[৩]
হে দ্বিজ, যে মূঢ় লোভবশতঃ কন্যাবিক্রয় করে, সেপুরীষহ্রদ নামক ঘোর নরকে যায়। হে দ্বিজ, বিক্রীতা কন্যার যে পুত্র জন্মে, সে চণ্ডাল, তাহার কোনও ধর্ম্মে অধিকার নাই।
দেখ! কন্যাক্রয় করিয়া বিবাহকরা শাস্ত্রানুসারে কত দুষ্য। শাস্ত্রকারেরা তাদৃশ স্ত্রীকে পত্নী বলিয়া, ও তাদৃশ স্ত্রীর গর্ভজাত সন্তানকে পুত্র বলিয়া, অঙ্গীকার করেন না; তাঁহাদের মতে তাদৃশ স্ত্রী দাসী; তাদৃশ পুত্র সর্ব্বধর্ম্মবহিষ্কৃত চণ্ডাল। সস্ত্রীক হইয়া ধর্ম্মকার্য্যের অনুষ্ঠান করিতে হয়। কিন্তু, শাস্ত্রানুসারে তাদৃশ স্ত্রী ধর্ম্মকার্য্যে স্বামীর সহচারিণী হইতে পারে না। পিণ্ডপ্রত্যাশায় লোকে পুত্রপ্রার্থনা করে। কিন্তু, শাস্ত্রানুসারে তাদৃশ পুত্র পিতার পিণ্ডদানে অধিকারী নহে। আর, যে ব্যক্তি অর্থলোভে কন্যাবিক্রয় করে, সে চিরকালের জন্য নরকগামী হয়।
অর্থলোভে কন্যাবিক্রয় ও কন্যাক্রয় করিয়া বিবাহকরা অতি জঘন্য ব্যবহার, ইহা সকলেই স্বীকার করিয়া থাকেন; যাঁহারা কন্যা বিক্রয় করেন, এবং যাঁহারা, কন্যা ক্রয় করিয়া, বিবাহ করেন, তাঁহারাও, সময়ে সময়ে, এই ক্রয়বিক্রয় ব্যবসায়কে অতি গর্হিত বলিয়া কীর্ত্তন করিয়া থাকেন। এই ব্যবহার, যার পর নাই, অধর্ম্মকর ও অনিষ্টকর, তাহাও সকলের বিলক্ষণ হৃদয়ঙ্গম হইয়া আছে। যদি আমাদের সামাজিক দোষসংশোধনে প্রবৃত্তি ও ক্ষমতা থাকিত, তাহা হইলে, এই কুৎসিত কাণ্ড এত দিন এ প্রদেশে প্রচলিত থাকিত না।
ব্রাহ্মণজাতির কন্যাবিক্রয় ব্যবসায় অপেক্ষা, কায়স্থজাতির পুত্রবিক্রয় ব্যবসায় আরও ভয়ানক ব্যাপার। মধ্যবিধ ও হীনাবস্থ কায়স্থজাতির কন্যা হইলেই সর্ব্বনাশ। কন্যার যত বয়োবৃদ্ধি হয়, পিতার সর্ব্বশরীরের শোণিত শুষ্ক হইতে থাকে। যার কন্যা, তার সর্ব্বনাশ; যার পুত্র, তার পৌষমাস। বিবাহের সম্বন্ধ উপস্থিত হইলে, পুত্রবান্ ব্যক্তি অলঙ্কার, দানসামগ্রী প্রভৃতি উপলক্ষে পুত্রের এত মূল্য প্রার্থনা করেন, যে মধ্যবিধ ও হীনাবস্থ কায়স্থের পক্ষে কন্যাদায় হইতে উদ্ধার হওয়া দুর্ঘট হয়। এ বিষয়ে বরপক্ষ এরূপ নির্লজ্জ ও নৃশংস ব্যবহার করেন, যে তাঁহাদের উপর অত্যন্তু অশ্রদ্ধা জন্মে। কৌতুকের বিষয় এই, কন্যার বিবাহদিবার সময় যাঁহারা শশব্যস্ত ও বিপদ্গ্রস্ত হন; পুত্রের বিবাহদিবার সময়, তাঁহাদেরই আর একপ্রকার ভাবভঙ্গী হয়। এইরূপে, কায়স্থের কন্যার বিবাহের সময় মহাবিপদ, ও পুত্রের বিবাহের সময় মহোৎসব, জ্ঞান করেন। পুত্রবিক্রয় ব্যবসায় যে অতি কুৎসিত কর্ম্ম, তাহা কায়স্থমাত্রে স্বীকার করিয়া থাকেন। কিন্তু আপনার পুত্রের বিবাহের সময়, সে বোধও থাকে না, সে বিবেচনাও থাকে না। আশ্চর্য্যের বিষয় এই, যাঁহারা নিজে সুশিক্ষিত ও পুত্রকে সুশিক্ষিত করিতেছেন, এ ব্যবসায়ে তাঁহারাও নিতান্ত অল্প নির্দ্দয় নহেন। যে বালক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষায়উত্তীর্ণ হইয়াছে; তাহার মূল্য অনেক; যে তদপেক্ষা উচ্চ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়াছে, তাহার মূল্য তদপেক্ষা অনেক অধিক; যাহারা তদপেক্ষাও অধিকবিদ্য হইয়াছে, তাহাদের সহিত কন্যার বিবাহ প্রস্তাব করা অনেকের পক্ষে অসংসাহসিক ব্যাপার। আর, যদি তদুপরি ইষ্টকনির্ম্মিত বাসস্থান ও গ্রাসাচ্ছাদনের সমাবেশ থাকে, তাহা হইলে, সর্ব্বনাশের ব্যাপার। বিলক্ষণ সঙ্গতিপন্ন না হইলে, তাদৃশ স্থলে বিবাহের কথা উত্থাপনে অধিকারী হয় না। অধিক আশ্চর্য্যের বিষয় এই, পল্লীগ্রাম অপেক্ষা কলিকাতায় এই ব্যবসায়ের বিষম প্রাদুর্ভাব। সর্ব্বাপেক্ষা আশ্চর্য্যের বিষয় এই, ব্রাহ্মণজাতির কন্যার মূল্য ক্রমে অল্প হইয়া আসিতেছে, কায়স্থজাতির পুত্রের মূল্য উত্তরোত্তর অধিক হইয়া উঠিতেছে। যদি বাজার এইরূপ থাকে, অথবা আরও গরম হইয়া উঠে; তাহা হইলে, মধ্যবিধ ও হীনাবস্থ কায়স্থপরিবারের অনেক কন্যাকে, ব্রাহ্মণজাতীয় কুলীনকন্যার ন্যায়, অবিবাহিত অবস্থায় কালযাপন করিতে হইবে।
যেরূপ দেখিতে ও শুনিতে পাওয়া যায়, কায়স্থমাত্রে এ বিষয়ে বিলক্ষণ জ্বালাতন হইয়াছেন। ইহা যে অতি লজ্জাকর ও ঘৃণাকর ব্যবহার, সে বিষয়ে মতভেদ দেখিতে পাওয়া যায় না। কায়স্থজাতি, একবাক্য হইয়া, যে বিষয়ে ঘৃণা ও বিদ্বেষ প্রদর্শন করিতেছেন, তাহা অদ্যাপি প্রচলিত আছে কেন। যদি এ দেশের লোকের সামাজিক দোষসংশোধনে প্রবৃত্তি ও ক্ষমতা থাকিত, তাহা হইলে, কায়স্থজাতির পুত্রবিক্রয় ব্যবহার বহু দিন পূর্ব্বে রহিত হইয়া যাইত।
এ দেশের হিন্দুসমাজ-ঈদৃশ দোষপরম্পরায় পরিপূর্ণ। পূর্ব্বোক্ত নব্যপ্রামাণিকদিগকে জিজ্ঞাসা করি, এপর্য্যন্ত, তাঁহারা তন্মধ্যে কোন কোন দোষের সংশোধনে কত দিন কিরূপ যত্ন ও চেষ্টা করিয়াছেন; এবং তাঁহাদের যত্নে ও চেষ্টায় কোন কোন দোষের সংশোধন হইয়াছে; এক্ষণেই বা তাঁহারা কোন কোন দোষের সংশোধনে চেস্টা ও যত্ন করিতেছেন।
বহুবিবাহ প্রথা প্রচলিত থাকাতে, অশেষপ্রকারে হিন্দুসমাজের অনিষ্ট ঘটিতেছে। সহস্র সহস্র বিবাহিতা নারী, যার পর নাই, যন্ত্রণাভোগ করিতেছেন। ব্যভিচারদোষের ও ভ্রূণহত্যাপাপের স্রোত প্রবলবেগে প্রবাহিত হইতেছে। দেশের লোকের যত্নে ও চেষ্টায় ইহার প্রতিকার হওয়া কোনও মতে সম্ভাবিত নহে। সম্ভাবনা থাকিলে, তদর্থে রাজদ্বারে আবেদন করিবার কিছুমাত্র প্রয়োজন থাকিত না। এক্ষণে, বহুবিবাহ প্রথা রহিত হওয়া আবশ্যক, এই বিবেচনায়, রাজদ্বারে আবেদন করা উচিত; অথবা এরূপ বিষয়ে রাজদ্বারে আবেদন করা ভাল নয়, অতএব তাহা প্রচলিত থাকুক, এই বিবেচনায়, ক্ষান্ত থাকা উচিত। এই জঘন্য ও নৃশংস প্রথা প্রচলিত থাকাতে, সমাজে যে গরীয়সী অনিষ্টপরম্পরা ঘটিতেছে, যাহারা তাহা অহরই প্রত্যক্ষ করিতেছেন, এবং তাহা প্রত্যক্ষ করিয়া, যাহাদের অন্তঃকরণ দুঃখনলে দগ্ধ হইতেছে, তাহাদের বিবেচনায়, যে উপায়ে হউক, এই প্রথা রহিত হইলেই, সমাজের মঙ্গল। বস্তুতঃ, রাজশাসন দ্বারা এই নৃশংস প্রথার উচ্ছেদ হইলে, সমাজের মঙ্গল ভিন্ন অমঙ্গল ঘটিবেক, তাহার কোনও হেতু বা সম্ভাবনা দেখিতে পাওয়া যায় না। আর, যাহারা তদর্থেরাজদ্বারে আবেদন করিয়াছেন, তাঁহাদের যে কোনও প্রকারে অন্যায় বা অবিবেচনার কর্ম্ম করা হইয়াছে, তর্ক দ্বারা তাহা প্রতিপন্ন করাও নিভান্ত সহজ বোধ হয় না। আমাদের ক্ষমতা গবর্ণমেণ্টের হস্তে দেওয়া উচিত নয়, এ কথা বলা বালকতা প্রদর্শন মাত্র। আমাদের ক্ষমতা কোথায়। ক্ষমতা থাকিলে, ঈদৃশ বিষয়ে গবর্ণমেণ্টের নিকটে যাওয়া কদাচ উচিত ও আবশ্যক হইত না; আমরা নিজেই সমাজের সংশোধনকার্য্য সম্পন্ন করিতে পারিতাম। ইচ্ছা নাই, চেষ্টা নাই, ক্ষমতা নাই, সুতরাং সমাজের দোষসংশোধন করিতে পারিবেন না; কিন্তু তদর্থে রাজদ্বারে আবেদন করিলে অপমানবোধ বা সর্ব্বনাশজ্ঞান করিবেন, এরূপ লোকের সংখ্যা, বোধ করি, অধিক নহে; এবং অধিক না হইলেই, দেশের ও সমাজের মঙ্গল।