বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বাদশ খণ্ড)/১৯
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
---|---|---|
বাংলাদেশ পরিস্থতির মোকাবেলা করা হবে: কোলকাতায় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর হুঁশিয়ারী | দৈনিক ‘কালান্তর’ | ৬ জুন ১৯৭১ |
বাংলাদেশের ঘটনার গুরুতর পরিণতি হতে পারে:
প্রধানমন্ত্রীর হুঁশিয়ারী—যথাসময়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে
(স্টাফ রিপোর্টার)
কলকাতা, ৫ জুন—প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী আজ এখানে বলেন, পূর্ব বাংলা থেকে লক্ষ লক্ষ শরণার্থীর আগমনের ফলে অতি গুরুতর পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে এবং এর পরিণতি দেশের পক্ষে গুরুতর হতে পাবে। “কিন্তু আমরা যেন তাতে শঙ্কিত না হই। আমাদের সুস্থিরভাবে এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে যাতে ঠিক সময়ে ঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারি।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের শরণার্থীরা যাতে স্বদেশে ফিরে যেতে পারেন, তার জন্য প্রয়োজনীয় অবস্থার সৃষ্টি হওয়া প্রয়োজন।
আজ রাজভবনে মুখ্যমন্ত্রী ও উপ-মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলাদাভাবে এবং তার পরে সামরিক অফিসারসহ বিভিন্ন অফিসার ও রাজ্যের মন্ত্রিসভার সঙ্গে বাংলাদেশের শরণার্থী সমস্যা নিয়ে আলোচনার পর সাংবাদিকদের কাছে তিনি উপরোক্ত মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের ব্যাপারে “সমস্যার বিরাটত্ব অনুযায়ী আন্তর্জাতিক সমর্থন মেলেনি।”
তিনি জানান, পশ্চিমবঙ্গের শরণার্থী সমস্যা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশের শরণার্থীদের রাজ্যের বাইরে কেন্দ্রীয় সরকারের যে জমি আছে, সেইসব জমিতে শিবির করে নিয়ে যাবার অবস্থা হচ্ছে কিন্তু সমস্ত ব্যবস্থাই হচ্ছে অস্থায়ী ভিত্তিতে কারণ শরণার্থীদের দেশে ফিরে যেতে হবে এবং তাদের স্বদেশে ফিরে যাবার অনুকূল অবস্থার সৃষ্টি করতে হবে।
পূর্বাহ্নে প্রধানমন্ত্রীর তরফ থেকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী শ্রী কে, সি পন্থ জানান, রাজ্যের মন্ত্রিসভার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠককালে মুখ্যমন্ত্রী ও উপ-মুখ্যমন্ত্রী মন্ত্রিসভার পক্ষ থেকে লক্ষ লক্ষ শরণার্থীর অব্যাহত আগমনের ফলে রাজ্যের প্রশাসনের উপরে যে গুরুতর চাপ পড়েছে, তা বিস্তারিতভাবে জানিয়ে যেসব ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেন তার মধ্যে ছিল, (ক) ভারত সরকার কর্তৃক শরণার্থীদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাবার ব্যাবস্থা করা; (খ) শরণার্থীদের ক্যাম্পের মধ্যে রেখে যাতে তাদের রক্ষাণাবেক্ষণ করা যায় তার উপযুক্ত ব্যবস্থা করা। কারণ, শরণার্থীরা এই দেশের অধিবাসীদের সঙ্গে মিলে মিশে গেলে অসুবিধার সৃষ্টি হবে।
তারা এই দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন যে, কিছু কিছু লোক শরণার্থীদের এখানে জমি ও লোকদের বাড়ী দখল করতে প্ররোচিত করছে। এর ফলে অনাবশ্যক একটা আইন-শৃঙ্খলা সমস্যার উদ্ভব হবে এবং তা শরণার্থীদের স্বার্থানুগত হবে না।
এই বৈঠকে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি রোধ করার জন্য প্রয়োজনীয় সব রকমের ব্যবস্থা নেবার প্রয়োজনীয়তাও বিশেষভাবে আলোচিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি গান্ধী মন্ত্রিসভাকে জানান যে, ভারত পাকিস্তানের বিচ্ছিন্নতায় উৎসাহী নয়। বাংলাদেশে যে অশান্ত, তা পাকিস্তানের নিজেদেরই সৃষ্ট। কিন্তু “ঐসব ঘটনা সম্পর্কে আমরা উদাসীন থাকতে পারিনা।কারণ আমরা ভারতের শান্তি ও স্থায়িত্বে আগ্রহী। ভারতের শান্তি ও স্থায়িত্বকে বিঘ্নিত করে এমন যে কোনও ঘটনাই আমাদের স্বার্থের সঙ্গে জড়িত। বস্তুত আমরা মনে কারি, ভারতে শান্তি ও স্থায়িত্ব পাকিস্তানের উপরেও একটা নিয়ামক প্রভাব বিস্তার করবে।”
প্রধানমন্ত্রী কার্যকরীভাবে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির মোকাবেলা করার উপরেও জোর দেন।
পশ্চিমবঙ্গের সমস্যা সম্পর্কে কেন্দ্র যে সর্বদা রাজ্য সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ট যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে, তা জানিয়ে শ্রীপন্থ বলেন যে, শরণার্থীদের কতো দ্রুত ও কী পরিমাণে এই রাজ্য থেকে অপসারণ করা যায় সে বিষয়ে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করার জন্য আগামী সোমবার পশ্চিমবঙ্গের দু’জন অফিসার দিল্লী যাচ্ছেন। শরণার্থীদের শিবিরের প্রশাসন চালাবার ব্যাপারে রাজ্য সরকারকে যতোটা সম্ভব দায়িত্বমুক্ত করার জন্যও কেন্দ্র চেষ্টা করবে।
তিনি আরো জানান, ভারতের বিভিন্ন মন্ত্রী বিদেশী রাষ্ট্রগুলিকে বাংলাদেশ থেকে উদ্ভূত সমস্যা ব্যাখ্যা করতে এবং এই সমস্যা সমাধানে কতোটা তারা সাহায্য করতে পারে তা জানাবার জন্য সফরে যাচ্ছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও শিক্ষামন্ত্রী সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায় চারটি রাষ্ট্র সফর করবেন।
মন্ত্রিসভার সঙ্গে আগে প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনী ইস্টার্ন কমাণ্ড-এর জি, ও, সি, লেঃ জেঃ জগজিৎ সিং আরোরা, পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল শ্রী প্রসাদ বসু, কলকাতার পুলিশ কমিশনার শ্রী রঞ্জিত চ্যাটার্জির সঙ্গে আলোচনা করেন।
দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার দরুন প্রধানমন্ত্রীর দিল্লী প্রত্যাবর্তন আজকের মতো স্থগিত রাখছেন। আগামীকাল তিনি ফিরে যাবেন।