বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বাদশ খণ্ড)/৮
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
---|---|---|
সীমা ছাড়ালে গুরুতর পরিণতি হবে: পাকিস্তানকে ভারতের হুঁশিয়ারী | দৈনিক ‘আনন্দবাজার’ | ২৯ এপ্রিল, ১৯৭১ |
পাকিস্তানকে ভারতের হুঁশিয়ারী—সীমা ছাড়ালে পরিণাম গুরুতর:
নিহতদের জন্য ক্ষতিপূরণ দিন
(বিশেষ সংবাদদাতা)
নয়াদিল্লী, ২৮ এপ্রিল—গত ২৬শে এপ্রিলের পর থেকে ভারতীয় সীমান্তের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের বুকে ঢুকে পাকিস্তানী সেনারা যে আক্রমণ চালিয়েছে, ভারত আজ তার বিরুদ্ধে কড়া ভাষায় পাকিস্তানের কাছে প্রতিবাদ জানিয়েছে। আক্রমণের চারটি ঘটনায় গতকাল এবং তার আগের দিন তেত্রিশজন ভারতীয় নাগরিক পাকফৌজের হাতে প্রাণ হারিয়েছেন। অন্ততঃ আটজন আহত হয়েছে, দু’জন নিখোঁজ।
আমলাতান্ত্রিক পদ্ধতি অনুযায়ী ভারত তিনটি নোটে পাকিস্তানের কাছে আজ ক্ষতিপুরণ চেয়েছে এবং হুঁশিয়ার করে দিয়েছে যে, ভবিষ্যতে ১৯৬০ সালের ভূমি নীতি লঙ্ঘনের এরুপ ঘটনা ঘটলে গুরুতর পরিণতির সম্মুখীন হতে হবে এই সব নোট পররাষ্ট্র দফতর আজ পাকিস্তান হাইকমিশন অফিসে পাঠিয়ে দিয়েছেন।
ইতিমধ্যে জানা যায় যে, বাংলাদেশে পাকফৌজের ইউনিটগুলি পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা ও আসাম সীমান্তে পৌঁছে সীমান্তের ঘাঁটিগুলিতে ছড়িয়ে পড়তে চেষ্টা করেছে। মনে হয়, সেনাবাহিনীর নির্দেশ অনুযায়ী হত্যায় সুখী পাকফৌজ এ জন্যই সীমান্তের এপারে গুলি চালিয়ে যাচ্ছে।
১৯৬০ সালে ভারত ও পাকিস্তান উভয়ের সীমান্ত থেকে সেনাবাহিনীকে অন্ততঃ এক হাজার গজ দূরে রাখার জন্য ভূমিনীতি তৈরি করেন। পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলস এবং ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর জন্য এই নীতি তৈরি হয়। এখন পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলস বলে কিছু নেই। কাজেই ভারত যে এখনও পাকিস্তানের সঙ্গে আইনের কচকচিতে ব্যস্ত এটা খুবই মজার ব্যাপার।
সরকারী মহল বলেন, ভারতীয় সেনাবাহিনীকে সীমান্ত থেকে এখনও অন্ততঃ এক হাজার গজ দুরে রাখা হচ্ছে। সীমান্ত রক্ষী বাহিনীই সীমান্তের ভার আপাতত বইতে পারবে মনে করেই এই ব্যবস্থা।
ভারতের নোটে যে সমস্ত ঘটনার প্রতি পাকিস্তানের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে এবং প্রতিবাদ জানানো হয়েছে তা হল:
২৬ এপ্রিল: পাকিস্তানী সৈন্য জলপাইগুড়ির কাছে ভারতীয় সীমান্তের বণাপাড়া পর্যন্ত চলে আসে এবং ভারতীয় এলাকার মধ্যে গুলি চালিয়ে দু’জন ভারতীয় গ্রামবাসীকে নিহত করে।
২৭ এপ্রিল: বয়ড়া এলাকায় (বনগাঁর উত্তরে) পাকফৌজ ভারতের লাখিমপুর গ্রাম পর্যন্ত চলে আসে এবং গুলি চালিয়ে পাঁচজনকে নিহত করে। নিহতদের একজন নাবালিকা। তিনজন আহত হয়।
২৭ এপ্রিল: বনগাঁর কাছে ভারতীয় এলাকায় ঢুকে পাক সৈন্য সীমান্তরক্ষী দলের উপর গুলি চালায়।
২৭ এপ্রিল: পাক সেনা ধরলা নদী পেরিয়ে ভারতীয় ছিটমহল বাঁশ পাচিরে বেলা দুটো নাগাদ প্রবেশ করে। বেপরোয়া গুলি চালিয়ে হানাদাররা অন্ততঃ পঁচিশজনকে হতাহত করে।
২৬ এপ্রিল: কাছাড় সীমান্তে প্রহরারত সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর উপর পাক সৈন্য হামলা করে। একজন কনস্টেবল নিহত হন, পাঁচজন আহতদের মধ্যে একজন ইন্সপেক্টর, দু’জন কনস্টেবল নিখোঁজ।
পাক সৈন্যরা দুটি ওয়ালেস সেট, একটি রাইফেল এবং দুটি হালকা মেশিনগান ছিনিয়ে নেয়।