বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চদশ খণ্ড)/২১

দেওয়ান ফরিদ গাজী

 ৭ই মার্চ থেকে এপ্রিলের ২৮ তারিখ পর্যন্ত আমি সিলেটের বিভিন্ন স্থানে সংগ্রাম পরিষদ গঠন, স্বেচ্ছাসেবক, আনসার, সাবেক ই, পি, আর, পুলিশ, ছাত্রকর্মীদের সহযোগে সিলেটের বিভিন্ন স্থানে প্রতিরোধ গড়ে তোলার ব্যবস্থা করি। সিলেট শহর, গোপালগঞ্জ, মৌলভীবাজার, শেরপুর প্রমুখ স্থানে প্রতিরোধ যুদ্ধ পরিচালনায় সক্রিয় অংশ নেই। মেঘালয়ের করিমগঞ্জে অবস্থানকালে আমি প্রায় ৩ হাজার মুক্তিযোদ্ধা সংগঠন করে তাদের থাকা-খাওয়া ও ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করি। আমি বাংলাদেশ সরকারের বেসরকারী উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করি। যুদ্ধ পরিচালনা এবং জনমত সৃষ্টি প্রভৃতি দায়িত্বও পালন করি। উত্তর-পূর্ব জোনের প্রশাসনিক পরিষদের প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করি। মিত্রবাহিনরি সহযোগে যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে জাকিরগঞ্জ, খামাইঘাট, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, বিয়ানীবাজার প্রভৃতি স্থানসমূহে একের পর এক দখল করে আমরা দখলকৃত বাংলাদেশে প্রবেশ করি এবং প্রতিটি জায়গায় বেসামরিক প্রশাসন গঠন করি।

 গোয়াইনঘাট এবং জৈন্তাপুর এলাকা খান সেনারা সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত করে এবং সদর থানার উত্তরাঞ্চলও বিশেষ করে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ২৬শে মার্চ খান সেনারা সিলেট শহরে ত্রিশজনেরও অধিক লোককে হত্যা করে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে কুতুবউদ্দিন, আবদুল মুসাবিবর, পঞ্চা বাবু ও পাচু সেন। নয় মাসের উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো শেরপুরের যুদ্ধে ক্যাপ্টেন আজিজের সাহসিকতা। এই যুদ্ধে ক্যাপ্টেন আজিজ মাত্র কয়েকজন সৈন্য নিয়ে খান সেনাদের একটি বিরাট বাহিনীর সংগে দীর্ঘ সাত দিন ধরে প্রাণপণে যুদ্ধ করেন।

দেওয়ান ফরিদ গাজী
গণপরিষদ সদস্য
(সাবেক এম, এস, এ, সিলেট-৮)
২৪ জুন, ১৯৭৩।