বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চদশ খণ্ড)
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ
দলিলপত্র
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ
দলিলপত্রঃ পঞ্চদশ খণ্ড
সাক্ষাৎকার
সম্পাদক: হাসান হাফিজুর রহমান
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
তথ্য মন্ত্রণালয়
প্রকাশক: গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
তথ্য মন্ত্রণালয়-এর পক্ষে-
গোলাম মোস্তফা
হাক্কানী পাবলিশার্স
বাড়ি # ৭, রোড # ৪
ধানমণ্ডি, ঢাকা-১২০৫
ফোন: ৯৬৬১১৪১, ৯৬৬২২৮২
ফ্যাক্স: (৮৮০২)৯৬৬২৮৪৪
E-mail: info@paramabd.com
কপিরাইট: তথ্য মন্ত্রণালয়
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
প্রথম প্রকাশ: নভেম্বর, ১৯৮২
অগ্রহায়ণ, ১৩৮৯
পুনর্মুদ্রণ: ডিসেম্বর, ২০০৩
অগ্রহায়ণ, ১৪১০
পুনর্মুদ্রণ: জুন ২০০৯
জ্যৈষ্ঠ, ১৪১৬
প্রচ্ছদ: বকুল হায়দার
মুদ্রাকর: মোঃ আবুল হাসান
হাক্কানী প্রিণ্টিং এণ্ড প্যাকেজিং
সড়ক # ৯, লেইন # ২, বাড়ি # ১
ব্লক # এ, সেকশন # ১১, মিরপুর, ঢাকা-১২১৫
HISTORY OF BANGLADESH WAR OF INDEPENDENCE
DOCUMENTS, VOL-15
Published by: Golam Mustafa
Hakkani Publishers
House # 7, Road # 4, Dhanmondi, Dhaka-1205
Tel: 9661141, 9662282, Fax: (8802)9662844
E-mail: info@paramabd.com
On behalf of Ministry of Information
Government of the People's Republic of Bangladesh
Copyright: Ministry of Information
Government of the People's Republic of Bangladesh
Printed by: Md. Abul Hasan
Hakkani Printing & Packaging
Road # 9, Lane # 2, House # 1
Block # A, Sec # 11, Mirpur, Dhaka-1216
First Published: November, 1982
Reprint: December, 2003
Reprint: June, 2009
ISBN: 984-433-091-2 (set)
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ
দলিলপত্রঃ পঞ্চদশ খণ্ড
তথ্য মন্ত্রণালয়
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
ঢাকা, বাংলাদেশ
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয় ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস লিখন ও মুদ্রণ প্রকল্প গ্রহণ করে। পরবর্তীকালে এই প্রকল্প স্বাধীনতা যুদ্ধ সংক্রান্ত দলিল ও তথ্যসমূহ প্রকাশনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতা ও বস্তুনিষ্ঠতা রক্ষা করা ও বিকৃতির আশংকা এড়িয়ে যাবার জন্যই ইতিহাস রচনার পরিবর্তে দলিল ও তথ্য প্রকাশকেই অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়েছে। আর সে প্রকল্পের ফসলই “বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: দলিলপত্র”। প্রায় ১৫,০০০ পৃষ্ঠায় ১৫ খণ্ডে এসব দলিলপত্র প্রণয়ন করে ১৯৮২ সালে তা প্রকাশ করা হয়। এই প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত গবেষক ও সম্পাদকবৃন্দের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল এই দলিলপত্র গ্রন্থমালা।
প্রথম প্রকাশের পরপরই বস্তুনিষ্ঠতা ও নিরপেক্ষতায় “বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: দলিলপত্র” গ্রন্থমালা সর্ব মহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়।
এই গ্রন্থমালা প্রকাশের অল্প সময়ের মধ্যেই এর সমুদয় কপি বিক্রি হয়ে যায়। পরবর্তীকালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ সংক্রান্ত সকল গবেষণায় এই গ্রন্থমালা রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে।
“বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: দলিলপত্র” গ্রন্থমালার চাহিদা উত্তরোত্তর বাড়ছে। বিভিন্ন মহল থেকে তথ্য মন্ত্রণালযে গ্রন্থমালার চাহিদাপত্র আসতে থাকায় মন্ত্রণালয় “বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: দলিলপত্র” গ্রন্থমালা সীমিত সংখ্যায় পুনর্মুদ্রণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে পুনর্মুদ্রণের দায়িত্ব অর্পণ করা হয় দেশের প্রখ্যাত প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘হাক্কানী পাবলিশার্স’কে। পুনর্মুদ্রণের ক্ষেত্রে তথ্যের কোন ব্যত্যয় বা ব্যতিক্রম যাতে না হয়, সে ব্যাপারে সর্বাত্মক সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে। গত দুই দশকে প্রকাশনা প্রযুক্তিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। ফলে পুনর্মুদ্রিত দলিলপত্রের অঙ্গসৌষ্ঠব আরও সুন্দর ও দৃষ্টিনন্দন হয়েছে।
আমার দৃঢ় বিশ্বাস, “বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: দলিলপত্র” গ্রন্থমালার সংস্করণটি বরাবরের মতই পাঠক ও গবেষকদের কাছে আদৃত হবে।
ঢাকা
ডিসেম্বর ২০০৩
(নাজমুল আলম সিদ্দিকী)
ভারপ্রাপ্ত সচিব
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
তথ্য মন্ত্রণালয়
প্রেস-১ শাখা
বাংলাদেশ সচিবালয়, ঢাকা।
নং-তম/প্রেস-১/২এফ-২/৯৭/বিবিধ-১/৯৬৯ তারিখঃ ৩০ অক্টোবর ২০০৩
প্রেরক | অঞ্জলী রানী চক্রবর্তী সিনিয়র সহকারী সচিব (প্রেস-১) |
প্রাপক | জনাব গােলাম মােস্তফা স্বত্বাধিকারী মেসার্স হাক্কানী পাবলিশার্স মমতাজ প্লাজা (৪র্থ তলা) ধানমণ্ডি, ঢাকা। |
বিষয়: “বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ; দলিলপত্র (১৫ খণ্ড)” পুনর্মুদ্রণের নিমিত্তে প্রচ্ছদ ও অঙ্গসজ্জার নমুনা অনুমােদন।
সূত্র: তাঁর ০৮ অক্টোবর ২০০৩ তারিখের আবেদন।
মহােদয়, উপযুক্ত বিষয়ে সূত্রোক্ত আবেদনের সাথে প্রাপ্ত নমুনা অনুযায়ী প্রচ্ছদ, প্রিণ্টার্স লাইন ও অঙ্গসজ্জা মােতাবেক বিষয়ােক্ত গ্রন্থাবলী চূড়ান্ত মুদ্রণের অনুমােদন প্রদান করা হলাে। মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবার্চিত অনুমােদিত প্রচ্ছদ নির্দেশক্রমে এতন্সাথ ফেরত প্রদান করা হলাে।
সংযুক্তি: বর্ণনা মতােবেক।
(অঞ্জলী রানী চক্রবর্তী)
সিনিয়র সহকারী সচিব (প্রেস-১)
প্রকাশকের কথা
প্রতিটি দেশ বা জাতির জন্য তার স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস একটি অমূল্য সম্পদ। সে আলোকে বাংলাদেশের ১৯৭১ সনের স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং তৎপূর্বের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস আমাদের কাছে এক গৌরবময় সম্পদ। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস প্রণয়নের জন্য ১৯৭৭ সনে তৎকালীন সরকার বাংলাদেশের স্বাধীতা যুদ্ধের ইতিহাস লিখন ও মুদ্রণ প্রকল্প গ্রহণ করে। নিরপেক্ষতা ও যথার্থতা বজায় রাখার জন্য স্বাধীনতা সংগ্রাম ও স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলাদি সংগ্রহ ও যাচাইপূর্বক তা সংকলন করা হয়। তারই ফলশ্রুতি ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র’ গ্রন্থাবলী। বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয় ১৯৮২ সনে ১৫ খণ্ডে এই গ্রন্থাবলী প্রকাশ করে। এ উদ্দেশ্যে গঠিত কমিটির সম্মানিত সদস্যগণের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল এই গ্রন্থাবলী।
এই গ্রন্থাবলী প্রকাশ হওয়ার অল্প দিনের মধ্যে তার পুরো স্টক ফুরিয়ে যায়। এই গ্রন্থাবলী স্বাধীনতা যুদ্ধ-বিষয়ক সকল গবেষণা কর্মের গুরুত্বপূর্ণ রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং হবে। কিন্তু ষ্টক না থাকায় বাংলাদেশের বর্তমান জনগোষ্ঠীর একটি বৃহৎ অংশ আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানা থেকে দীর্ঘদিন যাবৎ বঞ্চিত রয়েছে এবং এর দুষ্প্রাপ্যতা অনেক গবেষণা কর্মে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে।
এমতাবস্থায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র গ্রন্থাবলী পুনর্মুদ্রণের সিদ্ধান্তটি অত্যন্ত সময়োপযোগী বলে আমরা মনে করি।
বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক এ রকম একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ কর্মকাণ্ডের দায়িত্ব আমাদেরকে অর্পণ করায় আমরা গৌরবান্বিত। এরই ভিত্তিতে গ্রন্থাবলীর বিষয়সূচি সম্পূর্ণ অপরিবর্তিত রেখে নতুন আঙ্গিকে নির্ভুলভাবে পুনর্মুদ্রণের আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। আশা করি, পুনর্মুদ্রিত গ্রন্থাবলী পাঠক-গবেষকদের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে।
বিশাল এই কর্মকাণ্ডে যাঁরা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন, আমরা তাঁদের আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
(গোলাম মোস্তফা)
স্বত্বাধিকারী
হাক্কানী পাবলিশার্স
প্রাক কথন
১৯৭৭-৭৮ থেকে শুরু করে সুদীর্ঘ আট বছরকাল একদল গবেষকের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল হচ্ছে প্রথম পর্যায়ে ১৫ খণ্ডে মুদ্রিত ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধঃ দলিলপত্র এই পর্যায়ে প্রকল্পটির সমাপ্তিকাল হচ্ছে ১৯৮৫ সালের ৩০শে জুন। এরপরও এই প্রকল্পের সমাপ্তিকরণ সংক্রান্ত কাজের জন্য আরও কয়েক মাস সময়ের প্রয়োজন হয়েছে। অবশেষে প্রথম পর্যায়ে ১৫ খণ্ডে মুদ্রিত স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলভিত্তিক এই বইগুলো গবেষক ও পাঠকদের সমীপে উপস্থাপনা করতে পেরে আমরা আজ গর্ব অনুভব করছি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধঃ দলিলপত্র- এই নামকরণ থেকেই আমরা একটা কথা স্পষ্টভাবে বলতে চাই যে, আমাদের এই প্রচেষ্টা ও উদ্যম কোন দিক থেকেই স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস লেখার জন্য নয়। আমরা যেটুকু করেছি, তা হচ্ছে ভবিষ্যতে গবেষক ও ইতিহাসবিদরা যাতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস প্রণয়ন করতে সক্ষম হন, সেই লক্ষ্যে যুদ্ধসংক্রান্ত সংগৃহীত দলিলপত্র এবং সংশ্লিষ্ট বহুসংখ্যক ব্যক্তির সাক্ষাৎকারগুলো সন্নিবেশিত করা। এক কথায় বলতে গেলে আমাদের সংগৃহীত দলিলপত্র এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সাক্ষাৎকার ও বিবৃতিগুলো স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস রচনার জন্য কেবলমাত্র একটা রূপরেখা হিসেবে বিবেচিত হলে আমাদের পরিশ্রম সার্থক মনে করবো।
বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বিধায় এখানে আরও একটি বিষয়ের অবতারণা করা বাঞ্ছনীয় হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশিষ্ট শিক্ষক ও ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মফিজুল্লাহ কবীরের নেতৃত্বে ৯ সদস্যবিশিষ্ট একটি প্রামাণ্যকরণ কমিটি কঠোর পরিশ্রম করে প্রতিটি দলিল, সাক্ষাৎকার ও বিবৃতি অনুমোদন করার পর আমরা সেসব এই ১৫ খণ্ডে সন্নিবেশিত করেছি। অর্থাৎ প্রামাণ্যকরণ কমিটির অনুমোদন ছাড়া কোন দলিল, সাক্ষাৎকার কিংবা বিবৃতি এর অন্তর্ভুক্ত হয়নি।
সংক্ষেপে এই প্রকল্পের কথা বলতে গেলে, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার প্রায় ছয় বছর পর সরকার এ ব্যাপারে তৎপর হলে ১৯৭৭-৭৮ সালে তথ্য মন্ত্রণালয়ের আওতায় স্বাধীনতা যুদ্ধ ইতিহাস প্রকল্পের সূচনা হয়। বাংলাদেশের বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও সাংবাদিক কবি হাসান হাফিজুর রহমানের পরিচালনায় এই প্রকল্পের গবেষক ও কর্মীরা সীমিত সুযোগ-সুবিধা সত্ত্বেও অমানুষিক পরিশ্রম করে একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রামাণ্য দলিলপত্র, আলোকচিত্র, পত্র-পত্রিকা, প্রচার-পুস্তিকা, সংবাদপত্রের কাটিং, গুরুত্বপূর্ণ চিঠিপত্র, স্মারকলিপি, সাক্ষাৎকার, বিবৃতি এবং সংশ্লিষ্ট নথিপত্র সংগ্রহে লিপ্ত হন। এরপর শুরু হয় নথিপত্রের সংরক্ষণ, বাছাই এবং গ্রন্থনার কাজ।
এখানে দুঃখভারাক্রান্ত হৃদয়ে বলতে হচ্ছে যে, প্রকল্পের কাজ সামগ্রিকভাবে সমাপ্ত হওয়ার পূর্বেই দুরারোগ্য ব্যাধিতে পরিচালক কবি হাসান হাফিজুর রহমানের মতো প্রতিভাবান ব্যক্তিত্ব ইহজগত থেকে চিরবিদায় গ্রহণ করেন। কিন্তু মৃত্যুর পূর্বে তিনি যে শুধু কয়েকটি খণ্ডের মুদ্রণ সমাপ্ত করেছেন তাই-ই নয়, প্রস্তাবিত ১৫ খণ্ডের সমস্ত পাণ্ডুলিপি তৈরী ও অনুমোদন করানো (১৫ নং খণ্ড ব্যতীত) ছাড়াও তিনি এসব মুদ্রণের প্রারম্ভিক ব্যবস্থা পর্যন্ত করে গেছেন। তাই স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্রের এই ১৫ খণ্ডই হচ্ছে কবি হাসান হাফিজুর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত এবং তিনিই হচ্ছেন এসবের মূল কৃতিত্বের দাবীদার।
এরপর একটা অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা অব্যাহত থাকায় প্রকল্পের কাজ কিছুটা স্তিমিত হয়ে পড়ে। উপরন্তু সরকারী মুদ্রণালয়ের মাধ্যমে চুক্তিবদ্ধ ছাপাখানাও মুদ্রণ ও বাঁধাই কাজে নানা অজুহাতে শৈথিল্য প্রদর্শন করে। অবশেষে সরকারের সক্রিয় সহযোগিতায় নানা ঘাত-পতিঘাতের মাঝ দিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধ ইতিহাস প্রকল্প (প্রথম পর্যায়) ১৯৮৪-৮৫ আর্থিক বছরে সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। এ সময় আরও ৭৩টি ফর্মা মুদ্রণ ছাড়াও শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ কপি বাঁধাই-এর কাজ অসম্পূর্ণ ছিলো। এ ছাড়াও ছিলো গুদামজাতকরণ এবং বিক্রয় ও বিতরণ সংক্রান্ত দুরূহ কাজ। এজন্য স্বাভাবিকভাবেই আরও কয়েক মাস সময়ের প্রয়োজন হয়েছে। এখানে বিভিন্ন খণ্ডে মুদ্রিত তারিখ সংক্রান্ত জটিলতার কথা উল্লেখ নিতান্ত অপরিহার্য বলে মনে হয়। আগেই বলা হয়েছে যে, সুদীর্ঘ ৮ বছরকাল ধরে প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজ অব্যাহত ছিল। ফলে ১ নং থেকে ৬ নং এবং ১২ নং ও ১৩ নং খণ্ডে মুদ্রণের সময়কাল নভেম্বর ১৯৮২ রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে উল্লিখিত সময়ে এসবের পাণ্ডুলিপি অনুমোদনের পর মুদ্রণের কাজ অনেকাংশে সমাপ্ত হলেও আবারও উল্লেখ করতে হচ্ছে যে, ১৫ নং খণ্ডসহ বাকি অংশ মুদ্রণ এবং শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ বাঁধাই এর কাজ অসম্পূর্ণ ছিলো। এই সমস্ত কাজই অত্র প্রকল্পের সমাপ্তিকরণ পর্যায়ে করা হয়েছে। এজন্যই সমস্ত কর্মকাণ্ড শেষ হওয়ার পর সর্বসাধারণের মধ্যে খণ্ডগুলো বিক্রয় শুরু করার তারিখ ডিসেম্বর ১৯৮৫-কেই আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশের সময়কাল হিসেবে গ্রহণ করা সমীচীন হবে।
তবুও এক কথায় বলতে গেলে স্বাধীনতা যুদ্ধ ইতিহাস প্রকল্পের গবেষক ও কর্মীরা সুদীর্ঘ আট বছরকাল (১৯৭৭-৭৮ থেকে ১৯৮৪-৮৫) একনিষ্ঠভাবে যে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন এবং নানা প্রতিষ্ঠান ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ যেভাবে সহযোগিতা করেছেন তারই ফসল হচ্ছে আজকের এই “বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধঃ দলিলপত্র”। তথ্য মন্ত্রণালয়ের তত্ত্ববধানে এজন্য সরকারের সর্বমোট ব্যয় হয়েছে ৭২ লাখ ৪৪ হাজার টাকা।
সমাপ্তিকালীন পর্যালোচনায় দেখা গেছে যে প্রকল্পের পক্ষ থেকে প্রচেষ্টা সত্ত্বেও অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তির সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া স্বাধীনতা যুদ্ধের দিনগুলিতে শত্রুকবলিত বাংলাদেশের অভ্যন্তরে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থার পূর্ণাঙ্গ বিবরণও সন্তোষজনকভাবে উপস্থাপিত করা যায়নি। এরই পাশাপাশি সে সময় দুর্বিষহ অবস্থায় পাকিস্তানে বসাবাসকারী বাঙালীদের সম্পর্কেও উল্লেখযোগ্য তথ্য এই ১৫ খণ্ডে সন্নিবেশ করা সম্ভব হয়ে উঠেনি। বলা দরকার, দলিল ও তথ্যের অভাবই এই অপূর্ণতার কারণ।
প্রসঙ্গত আরও একটা বিষয়ের উল্লেখ প্রয়োজন বলে মনে হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মাটিতে আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানের তৎকালীন হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন এলাকায় যেসব উল্লেখযোগ্য যুদ্ধে মোকাবেলা করেছেন, সেগুলির দিন, তারিখ এবং বিস্তারিত বিবরণ ও ধারাবাহিক তালিকা আরও ব্যাপকভিত্তিক হওয়া দরকার বলে বিবেচিত হয়েছে।
এই প্রেক্ষিতে স্বাধীনতা যুদ্ধ ইতিহাস প্রকল্প, দ্বিতীয় পর্যায়ে, নতুন কয়েকটি খণ্ডে এসব অন্তর্ভূক্তি লক্ষ্যে কাজে হাত দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে দ্বিতীয় পর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধের আলোকচিত্র সংবলিত বিরাটাকার ফটো এ্যালবাম প্রকাশের উদ্যোগও গ্রহণ করা হয়েছে। এই কারণে প্রথম পর্যায়ে পরিকল্পিত ষোড়শ খণ্ডটির মুদ্রণের কাজ স্থগিত রাখা হয়েছে। দুই পর্যায়ে মুদ্রিত মকল খণ্ডের নির্ঘণ্ট এবং কালপঞ্জি ও গ্রন্থপঞ্জিসহ এই খণ্ডটি প্রকাশিত হবে দ্বিতীয় পর্যায়ের সর্বশেষ খণ্ড হিসেবে। তথ্য মন্ত্রণালয়ের আওতায় দ্বিতীয় পর্যায়ের জন্য বাংলাদেশ সরকার ৪২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছে। আশা করা যায় ১৯৮৬-৮৭ সাল নাগাদ দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ সম্পূর্ণ হবে।
পরিশেষে বলতে চাই যে, আমাদের যেটুকু ত্রুটি রয়েছে তা আমরা অকপটচিত্তে স্বীকার করলেও আমাদের ক্ষুদ্র একদল গবেষক ও কর্মী সুদীর্ঘ আট বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল সফরের পর যে তিন লক্ষাধিক দলিলপত্র ও সাক্ষাৎকার সংগ্রহ করেছেন, সেটাও তো কম কথা নয়। এসবের কথা চিন্তা করে ত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে নিরীক্ষা করার অনুরোধ করতে সাহসী হচ্ছি। ভবিষ্যতে গবেষক ও ইতিহাসবিদরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস প্রণয়নকালে আলোচ্য ১৫ খণ্ডে সন্নিবেশিত দলিলপত্র ও সাক্ষাৎকারগুলোকে তথ্য নির্দেশিকা হিসেবে ব্যবহারের সক্ষম হলে পরিশ্রম সার্থক বলে বিবেচিত হবে।
বিজয় দিবস, ১৯৮৫
এম আর আখতার
পরিচালক
স্বাধীনতা যুদ্ধ ইতিহাস প্রকল্প (২য় পর্যায়)
মুখবন্ধ
বাংলাদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস প্রকল্পের নয় সদস্যবিশিষ্ট প্রামাণ্যকরণ কমিটির তরফ থেকে এই দলিল সংগ্রহের প্রকাশনা সম্পর্কে দুটি কথা নিবেদন করছি। এ প্রকল্পের উৎপত্তি ও গঠন, এর মূল উদ্দেশ্য ও কার্যপদ্ধতি সম্পর্কে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জনাব হাসান হাফিজুর রহমান বিস্তারিত বলবেন।
বিপুলায়তন ও সংগৃহীত উপাত্ত থেকে প্রকাশিতব্য দলিলসমূহ নির্বাচনে কমিটির সদস্যবৃন্দ নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন। তাঁরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে দলিলাদির পাণ্ডুলিপি ধৈর্য্য ধরে পরীক্ষা করেছেন। বিস্তারিত আলোচনা-সমালোচনার মাধ্যমে সংযোজন ও সংশোধনের জন্য মূল্যবান উপদেশ দিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নে সহায়তা করেছেন। অমাদের কোন মন্তব্য ছাড়াই দলিলগুলো সরাসরি পাঠক ও গবেষকদের কাছে উপস্থিত হচ্ছে। দলিলপত্র যথাসম্ভব মূলসূত্র থেকে উদ্ধারের চেষ্টা করা হয়েছে। প্রকাশিত দলিলগুলো প্রামাণ্যকরণ কমিটি অনুমোদন করে দিয়েছেন।
প্রায় সাড়ে তিন লাখ পৃষ্ঠাব্যাপী দলিল থেকে প্রাথমিক নির্বাচনের গুরুদ্বায়িত্ব পালন করেছেন প্রকল্পে নিয়োজিত বিভিন্ন গবেষকবৃন্দ। তারা প্রথমে জনাব হাসান হাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে এ দায়িত্ব যথাযথ নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সংগে পালন করেছেন।
প্রামাণ্যকরণ কমিটির সকল সদস্যকে এবং প্রকল্পের গবেষকবৃন্দকে তাঁদের প্রশংসনীয় ভূমিকার জন্য আমি অশেষ ধন্যবাদ জানাই। সেই সঙ্গে প্রকল্পের প্রধান বাংলাদেশের বিশিষ্ট কবি ও সাংবাদিক জনাব হাসান হাফিজুর রহমানকে নিরলস ও অকাতর কর্মপ্রচেষ্টার জন্য জানাই প্রাণঢালা অভিনন্দন।
বিভিন্ন সূত্রে সংগৃহীত ও সুবিবেচনার সাথে নির্বাচিত দলিলগুলো থেকে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের একটি সার্বিক, প্রামাণ্য ও নিরপেক্ষ চিত্র বেরিয়ে আসবে, আমরা এ আশা পোষণ করছি। সংগৃহীত সমুদয় দলিল একটি স্থায়ী আর্কাইভস্ গঠনে সহায়তা করবে। অনুদঘাটিত ও অনাবিষ্কৃত দলিলগুলো ভবিষ্যতে সংগৃহীত হলে পরিশিষ্টের মাধ্যমে সেগুলো মূল দলিলের সংগে সংযোজিত হতে পারে।
প্রকাশিত দলিলগুলো পাঠক সমাজ ও গবেষকদের কাছে সমাদৃত হলে অমাদের শ্রম সার্থক বলে মনে করব।
১৪ই সেপ্টেম্বর,
১৯৮২
মফিজুল্লাহ কবীর
চেয়ারম্যান
প্রামাণ্যকরণ কমিটি,
বাংলাদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস প্রকল্প
ভূমিকা
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়সীমা ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এই সময়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সংগে সম্পর্কিত সারা বিশ্বে যা কিছু ঘটেছে তার তথ্য ও দলিলপত্র সংগ্রহ এবং সেসবের ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস রচনা ও মুদ্রণের দায়িত্ব অর্পিত হয় মুক্তিযুদ্ধ ইতিহাস লিখন ও মুদ্রণ প্রকল্পের ওপর। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে এই প্রকল্পটি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এর কাজ শুরু হয় ১৯৭৮ সালের জানুয়ারী থেকে (পরিশিষ্ট দ্রষ্টব্য)।
ইতিহাস রচনার দায়িত্বপ্রাপ্ত হলেও এই প্রকল্প স্বাধীনতা যুদ্ধসংক্রান্ত দলিল ও তথ্যসমূহ প্রকাশনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এর কারণ, সমকালীন কোন ঘটনার বিশেষ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের মতো একটি যুগান্তকারী ঘটনার ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতা ও বস্তনিষ্ঠতা রক্ষা করা এবং বিকৃতির সম্ভাবনা এড়িয়ে যাওয়া বস্তুত অত্যন্ত দুরূহ। এ জন্যই আমরা ইতিহাস রচনার পরিবর্তে দলিল ও তথ্য প্রকাশকেই অধিক গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছি। এর ফলে দলিল ও তথ্যাদিই কথা বলবে, ঘটনার বিকাশ ও ধারাবাহিকতা রক্ষা করবে, ঘটনা পরম্পরার সংগতি রক্ষা করবে।
এই লক্ষ্য সামনে রেখেই কয়েকটি খণ্ডে সংগৃহীত দলিলসমূহ প্রকাশের সিদ্ধান্ত প্রকল্প গ্রহণ করে। এই পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পের সামনে একটি বিশেষ বিবেচ্য বিষয় দেখা দেয় এই যে, দলিলপত্র সংগ্রহের সময়সীমা স্বাধীনতা যুদ্ধকেন্দ্রিক হওয়া সত্ত্বেও এ সত্যও সমান গুরুত্বপূর্ণ যে, স্বাধীনতা যুদ্ধের পশ্চাতে বিরাট পটভূমি রয়েছে। স্বাধীনতা যুদ্ধকে এই পটভূমি থেকে বিচ্ছন্ন করে দেখা যায় না। এই পটভূমির ঘটনাবলী- যাকে মুক্তিসংগ্রাম বলে অভিহিত করা যায়- তার অনিবার্য পরিণতিই স্বাধীনতা যুদ্ধকে অবশ্যম্ভাবী করে তোলে। তাই মুক্তিসংগ্রামের স্বরূপ জানা ছাড়া স্বাধীনতা যুদ্ধকে তুলে ধরা সম্ভবই নয়। এই পরিস্থিতিতে স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিল প্রকাশের সংগে এর পটভূমি সংক্রান্ত দুখণ্ড দলিলসংগ্রহ প্রকাশের সিদ্ধান্তও প্রকল্প গ্রহণ করে। এর ফলে প্রকল্পের দলিল প্রকাশের পরিকল্পনা নিম্নরূপে দাঁড়ায়:
প্রথম খণ্ড | পটভূমি (১৯০৫-১৯৫৮) |
দ্বিতীয় খণ্ড | পটভূমি (১৯৫৮-১৯৭১) |
তৃতীয় খণ্ড | মুজিবনগর : প্রশাসন |
চতুর্থ খণ্ড | মুজিবনগর : প্রবাসী বাঙালীদের তৎপরতা |
পঞ্চম খণ্ড | মুজিবনগর : বেতারমাধ্যম |
ষষ্ঠ খণ্ড | মুজিবনগর : গণমাধ্যম |
সপ্তম খণ্ড | পাকিস্তানী দলিলপত্র : সরকারী ও বেসরকারী |
অষ্টম খণ্ড | গণহত্যা, শরণার্থী শিবির ও প্রাসংগিক ঘটনা |
নবম খণ্ড | সশস্ত্র সংগ্রাম (১) |
দশম খণ্ড | সশস্ত্র সংগ্রাম (২) |
একাদশ খণ্ড | সশস্ত্র সংগ্রাম (৩) |
দ্বাদশ খণ্ড | বিদেশী প্রতিক্রিয়া : ভারত |
ক্রয়োদশ খণ্ড | বিদেশী প্রতিক্রিয়া : জাতিসংঘ ও বিভিন্ন রাষ্ট্র |
চর্তুদশ খণ্ড | বিশ্বজনমত |
পঞ্চদশ খণ্ড | সাক্ষাৎকার |
ষোড়শ খণ্ড | কালপঞ্জী, গ্রন্থপঞ্জী ও নির্ঘণ্ট |
দলিল ও তথ্যাদি সংগ্রহের ব্যাপারে নীতিমালা আমরা ব্যাপক ও খোলামেলা রেখেছি। তবে পটভূমি সম্বন্ধে দলিল ও তথ্যাদি গ্রহণে কিছুটা সংযত দৃষ্টিভঙ্গী অবলম্বন করি। আমরা শুধু সেইসব তথ্য ও দলিলই পটভূমি খণ্ডে সন্নিবেশিত করার সিদ্ধান্ত নিই, যা বাংলাদেশের বর্তমান ভূখণ্ডের বৈশিষ্ট্য ও এখানে বসবাসকারী জনগণের আশা আকাংখার সংগে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। অর্থাৎ যেসব ঘটনা, আন্দোলন ও কার্যকারণ, এই ভূখণ্ডের জনগণকে মুক্তিসংগ্রামের দিকে উদ্বুদ্ধ ও পরিচালিত করেছে, প্রধানত সেসব সংক্রান্ত দলিল ও তথ্যই এই খণ্ডে কালানুক্রমিকভাবে সাজানো হয়েছে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা বাংলাদেশের অতীত ঘাঁটতে বহু দূর-অতীতে প্রত্যাবর্তন করিনি। ১৯০৫ সালের বংগভংগ থেকেই পটভূমি সংক্রান্ত দলিল-তথ্যাদি সন্নিবেশন শুরু করি। আমরা মনে করি, বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের ব্যাখ্যায় এই শুরুর সীমাটি বাহুল্যবর্জিত, প্রত্যক্ষ ও যুক্তিগ্রাহ্য।
১৯০৫-এর বংগভংগ এবং তা রদ-এর পর ১৯৪০ সাল পর্যন্ত মধ্যবর্তী এ দীর্ঘ সময়ের আর কোন দলিল এ খণ্ডে সন্নিবেশ করা হয়নি। কারণ ১৯১১ থেকে ১৯৪০ পর্যন্ত এই ভূখণ্ডে অনুষ্ঠিত সকল রাজনৈতিক আন্দোলন সর্বভারতীয় বৃটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্তর্ভূক্ত ছিল। ১৯৪০ সালে গৃহীত লাহোর প্রস্তাবে স্বতন্ত্র রাষ্ট্রীয় সত্তারূপে বাংলার প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা নিহিত ছিল। আর তা উত্থাপন করেছিলেন বাংলাদেশেরই সংখ্যাগুরু জনগোষ্ঠীর অবিসংবাদিত নেতা এ, কে, ফজলুল হক। ১৯৪৬ সালে নিতান্ত অবৈধভাবে দিল্লী কনভেনশনে লাহোর প্রস্তাবের যে সংশোধনী করা হয়, তাতে বাংলার স্বতন্ত্র রাষ্ট্রীয়রূপের প্রশ্নকে পরিহার করা হয়। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগ সম্পর্কে মাউণ্টব্যাটেন পরিকল্পনা ঘোষণার পর স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলা প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা হয়, কিন্তু সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয় এবং যেভাবে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয় তাতে স্বায়ত্তশাসনের বিষয়টি সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষিত হয়। এরই পরিণতিতে পরবর্তীকালে বাংলাদেশের জনগণের সম্মুখে স্বায়ত্তশাসন তথা স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করা ঐতিহাসিক প্রয়োজন হয়ে দেখা দেয়। এই ঐতিহাসিক প্রয়োজনকে মূর্ত করে তুলেছে এমন সমস্ত দলিলই এ খণ্ডে সন্নিবেশিত হয়েছে।
পটভূমি সংক্রান্ত দলিলপত্র দুটি খণ্ডে বিভক্ত। প্রথম খণ্ডটি শেষ হয়েছে ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খানের ক্ষমতা দখলের সময়সীমায়। এখানে কাল বিভাজন করা হয়েছে একান্তই খণ্ড পরিকল্পনার পৃষ্ঠাসংখ্যার সুবিধার দিকে লক্ষ্য রেখে- কোন বিশেষ ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে নয়।
পটভূমির বেলায় যে ধরনের দলিল ও তথ্যাদি আমরা গ্রহণ করেছি সেগুলি হলো গেজেট বিজ্ঞপ্তি, পার্লামেণ্টের কার্যবিবরণী, কোর্টের মামলা সম্পর্কিত রিপোর্ট ও রায়, কমিশন রিপোর্ট, রাজনৈতিক দলের কর্মসূচী ও প্রস্তাব, জনসভার প্রস্তাব, আন্দোলনের রিপোর্ট, ছাত্রদলের প্রস্তাব ও আন্দোলন, গণপ্রতিক্রিয়া, সংবাদপত্রের প্রতিবেদন, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের প্রামাণ্য সমীক্ষা ও প্রবন্ধ, রাজনৈতিক পত্র, সরকারী নির্দেশ ও পদক্ষেপ ইত্যাদি। স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিল ও তথ্যাদির বেলায় সংগ্রহের ধরন বিস্তৃততর হয়েছে স্বাভাবিকভাবেই। কারণ এই যুদ্ধের সংগে সারা বিশ্ব জড়িত হয়ে পড়েছিল। ফলে কেবল বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নয়, সারা বিশ্বের বিষয়াদি জোগাড় করা অপরিহার্য হয়ে দেখা দেয় এবং প্রকল্প সেভাবেই অগ্রসর হয়। এ ব্যাপারে ব্যক্তিগত ডায়েরী, চিঠিপত্র, সাক্ষাৎকার, স্মৃতিকথা, সরকারী নথিপত্র, রণকৌশল ও যুদ্ধসংক্রান্ত লিপিবদ্ধ তথ্যাদি, মুক্ত এলাকায় মুক্তিবাহিনী ও বাংলাদেশ সরকারের প্রশাসনিক তৎপরতা, জনসাধারণের সক্রিয় অংশগ্রহণ, কমিটি গঠন, বিবৃতি, বিশ্বজনমত, বিভিন্ন দেশের পার্লামেণ্টের কার্যবিবরণী প্রভৃতি নানা ধরনের তথ্য ও দলিল এই সংগ্রহের অন্তর্ভূক্ত করা হয়। এ ক্ষেত্রে আমরা বিশেষভাবে নজর রেখেছি যাতে সর্বসাধারণের মনোভাব প্রতিফলনে কোন ফাঁক না থাকে। এই লক্ষ্য সামনে রেখে গণসহযোগিতার প্রতিস্তরের তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করা হয়েছে। প্রতিটি খণ্ডে যতদূর সম্ভব মূল দলিল সন্নিবেশিত করার দিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখা হয়েছে। তবে যেসব দলিল ঐতিহাসিক গুরুত্ব অর্জন করেছে এবং যেগুলি বাদ দিলে ঘটনার ধারাবাহিকতা রক্ষিত হয় না সেগুলি আমরা প্রকাশিত সূত্র থেকে গ্রহণ করেছি।
এ কাজে একটিই আমাদের প্রধান বিবেচ্য ছিল, সঠিক ঘটনার সঠিক দলিল যেন সঠিক পরিমাণে বিন্যস্ত হয়। আমাদের কোন মন্তব্য নেই, অঙ্গুলি সংকেত নেই, নিজস্ব ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণও নেই। আমরা বস্তুনিষ্ঠ ও নিরপেক্ষ মনোভাব আগাগোড়া বজায় রাখার চেষ্টা করেছি। এই মূল লক্ষ্য সামনে রেখেই দলিল-তথ্যাদি বাছাই, সম্পাদনা এবং বিন্যাস করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আমরা শুধু এইটুকু সতর্কতা অটুট রেখেছি যাতে কারো প্রতিনিধিত্ব ক্ষুগ্ন না হয়। দলিলের যথার্থতাই যার যা ভূমিকা ও গুরুত্ব তা যথাযথভাবে তুলে ধরবে। বস্তুত জনসাধারণই এ ধরনের ঘটনার প্রকৃত মহানায়ক। জনসাধারণের মধ্যে অবস্থা পরিবর্তনের ইচ্ছা যখন পরিণত ও অপ্রতিরোধ হয়ে ওঠে, কেবল তখনই জনগনের মধ্য থেকে যোগ্যতম নেতৃত্বের অত্যুদয় ঘটে। বাংলাদেশের বেলাতেও তাই ঘটেছে। আর তাই এমন সব দল বা সংগঠনের দলিল অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যে দল বা সংগঠন আমাদের জাতীয় রাজনীতির ক্ষেত্রে হয়তো মুখ্য ভূমিকা বা নেতৃত্ব গ্রহণ করেনি। তবু একাত্তরের অনেক আগেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা চিন্তা একটা দেশের একটা জাতির নিদিষ্ট লক্ষ্যাভিসারী অন্তঃস্রোতকেই সামনে তুলে ধরে। আসলে মহীরুহের চারপাশে জেগে ওঠা অজস্র গাছপালা নিয়েই বনের গঠন-কাঠামো। বনকে জানতে হলে এর সবটাই জানা দরকার।
তবে ব্যাপক প্রতিনিধিত্বের প্রশ্নে সবটুকু হয়তো প্রতিফলিত নাও হয়ে থাকতে পারে। এর দুটো কারণ, প্রথমত গ্রন্থের সীমিত পরিসরে স্থান সঙ্কুলানের প্রশ্ন, দ্বিতীয়ত অনেক তথ্য ও দলিল হাতে না আসা যা বহুক্ষেত্রে যোগাযোগ করেও পাওয়া যায়নি, কিছু ক্ষেত্রে যোগাযোগেরও সুযোগ ঘটেনি। সবাইকে আমরা জায়গা দিতে চেয়েছি এবং ভূমিকা অনুযায়ী গুরুত্ব বিধানের দিকেও লক্ষ্য রেখেছি- এইটেই মূল কথা। এই নীতি পটভূমি ও অন্যান্য খণ্ডে একইভাবে অনুসৃত হয়েছে।
সাড়ে তিন লাখ পৃষ্ঠার মতো দলিল ও তথ্যাদি সংগ্রহসংখ্যার দিক থেকে বিপুল বলতে হবে। তবু আমাদের ধারণা এই যে, বহু দলিল ও তথ্য এখনো সংগ্রহের বাইরে রয়েছে। বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি লোকই কোন না কোন ভাবে স্বাধীনতা যুদ্ধের সংগে জড়িত ছিলেন। গ্রামে গ্রামে ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে বহু ঘটনার উদ্ভব হয়েছে, বহু বীরত্বগাথা, বহু ত্যাগ, বিশ্বাসঘাতকতা, অত্যাচার, নিপীড়নের কাহিনী স্তরে স্তরে গড়ে উঠেছে। এর পরিমাণ অনুধাবন করা কঠিন। তাছাড়া সারা বিশ্ব জুড়েও ছিল এ সম্পর্কে সমর্থন ও প্রতিক্রিয়া এবং প্রবাসী বাঙালীদের ব্যাপক তৎপরতা। তাই সংগ্রহের কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে তা বলা যায় না। দেশ ও বিদেশের তথ্য সংগ্রহের কাজ তাই কেবল বাড়তে পারে, শেষ সীমায় পৌঁছানোর ঘোষণা দেয়া এখনই সম্ভব নয়। এর জন্য দীর্ঘ পরিক্রমা ও সক্রিয়তার প্রয়োজন।
সীমিত সময়ের জন্য আমাদের প্রকল্পের আয়ু; তদুপরি আমাদের লোকবলও মাত্র চারজন। এই অবস্থায় এই বিশাল কাজের কতখানি বাস্তবায়ন সম্ভব তা ভাববার বিষয়। তবু আমরা অসাধ্য সাধনের লক্ষ্যে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম এবং যতদূর সফল হয়েছি তাতে স্বাধীনতা যুদ্ধসংক্রান্ত তথ্য ও দলিলের ভিত্তিভূমি রচিত হয়েছে, নির্দ্ধিধায় এ কথা বলা যায়। এখন এর বিকাশ ও উন্নয়নের অপেক্ষা রাখে মাত্র। তথ্য ও দলিল সংগ্রহ করতে গিয়ে আমাদের যে অভিজ্ঞতা হয়েছে তাতে এ কথা বলা য়ায়।
দলিলপত্র সংগ্রহের ক্ষেত্রে আমাদের প্রচেষ্টা ছিল ব্যাপক এবং খোলামেলা। ব্যক্তিগত যোগাযোগ ছাড়াও এ উদ্দেশ্যে আমরা বিভিন্ন সময়ে পত্রপত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশ করেছি এবং মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পত্রপত্রিকার দপ্তর, গ্রন্থাগার এবং ইউনিয়ন পরিষদের কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন শ্রেণীর জনগণের কাছে প্রেরণ করেছি কয়েক হাজার প্রশ্নমালা কিন্তু দুঃখজনকভাবে আশানুরূপ সাড়া মেলেনি। প্রতিটি রাজনৈতিক, ছাত্র, শ্রমিক এবং কৃষক সংগঠনের সাথেই যোগাযোগ করা হয়েছে। কিন্তু দলগতভাবে নয়, ব্যক্তিগতভাবে কেউ কেউ দিয়ে গেছেন নিজস্ব সংগ্রহের দলিলপত্র। আবেদনের জবাবে আশানুরূপ সাড়া না পাবার কারণ হিসেবে আমরা দুটি বিষয় লক্ষ্য করেছি; প্রথমত, ইতিহাসের গুরুত্ব সম্পর্কে অসচেতনতা, যার ফলে খুব কমসংখ্যক মানুষই দলিলপত্র সংগ্রহ বা সংরক্ষণ করে থাকেন এবং দ্বিতীয়ত, ভিত্তিহীন সংশয়- বিশেষ করে কারো কারো প্রতিক্রিয়ার আমাদের মনে হয়েছে যে, ইতিহাস প্রণয়নের প্রচেষ্টাটি সরকারী হওয়ায় এর সততা ও বস্তুনিষ্ঠতা সম্পর্কে তাঁরা
ছয়
যথেষ্ট সন্দিহান এবং ফলে দলিলপত্র প্রদানের মাধ্যমে পরিকল্পিত ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করার পরিবর্তে অপূর্ণাংগতার সম্ভাবনাকেই যেন তাঁরা মেনে নিয়েছেন। ব্যাপক ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যমে এই সমস্যা আমরা অনেকটা কাটিয়ে উঠেছি। সরকারী উদ্যোগের কারণে ইতিহাসের নিরপেক্ষতা সম্পর্কে যে আশঙ্কা, তা আমাদের দলিল খগুলি নিরসন করবে বলে আমরা মনে করি।
এছাড়াও আমরা লক্ষ্য করেছি, এমন অনেকের কাছেই দলিল ও তথ্যাদি রয়েছে যা তাঁরা হাতছাড়া করতে রাজী নন। অনেকেই কিছু ছেড়েছেন, কিছু হাতে রেখে দিয়েছেন। আবার কারো কারো প্রত্যাশা, দলিলাদি পুরানো হলে সেগুলি অনেক বেশী লাভের উৎস হয়ে উঠতে পারে। আমরা মূল দলিলের ফটোকপি রেখে অনেককেই তাঁর মূল কপি ফেরত দিয়েছি। এ ক্ষেত্রেও অনেকেই ফটোকপি রাখারও সুযোগ দিতে রাজী হননি—অর্থাৎ তাঁর হাতের দলিলটি তিনি বেরই করেননি ভবিষ্যতের আশায়। সরকার দলিল সংগ্রহের ব্যাপারে কোন অর্ডিন্যান্স পাস করেননি। ফলে দলিল পাওয়ার জন্য আমরা ব্যক্তিগত অনুরোধ ও প্রয়াস চালাতে পারি, আইনগত চাপ সৃষ্টি করতে পারি না। অথচ এ কথাও সত্যি যে, স্বাধীনতাসংক্রান্ত দলিল মাত্রই জাতীয় ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ, তাকে ব্যক্তিগতভাবে বা প্রতিষ্ঠানগতভাবে কুক্ষিগত করে রাখা উচিত নয়।
এই সংগে আমরা দুঃখের সংগে উল্লেখ করি যে, এই প্রকল্প শুরু হবার আগেই স্বাধীনতা যুদ্ধের বিশিষ্ট নেতাদের অনেককে আমরা হারিয়েছি। ফলে তাঁদের কাছে রক্ষিত দলিলপত্র পাওয়ার কিংবা তাঁদের সাক্ষাৎকার গ্রহণের সুযোগ থেকে আমরা বঞ্চিত হয়েছি।
এইসব বাধাবিঘ্নের মধ্যেই আমাদের এগিয়ে যেতে হয়েছে। ফলে আমাদের এতদসংক্রান্ত যে বুনিয়াদ তৈরী হয়েছে তা অতীতের রুটি সংশোধনে এবং ভবিষ্যতের সম্ভাবনার ক্ষেত্রে প্রস্তুত করতে সহায়ক হতে পারে। যে তথ্যগত ফাঁক থেকে যাচ্ছে তা পূরণ হওয়া দরকার। সম্ভব হলে অপ্রকাশিত দলিলপত্র থেকে কিংবা ভবিষ্যতে আরো দলিলপত্র সংগৃহীত হলে তা থেকে নির্বাচন করে অতিরিক্ত খণ্ড প্রকাশ করে এই ফাঁক পূরণের চেষ্টা করা যাবে। দেশে-বিদেশের দুষ্প্রাপ্য দলিল সংগ্রহের চেষ্টা অব্যাহত রাখা একান্ত জরুরী বলেই আমরা মনে করি। এ ধারা ক্ষুন্ন হলে এ কাজ দুরূহতর হবে, এমনকি এটা সম্পূর্ণ করা অসম্ভব হয়ে উঠতে পার। এ ব্যাপারে স্থায়ী কর্মসূচী সুফলদায়ক হবে সন্দেহ নেই।
দলিল এবং তথ্য প্রামাণ্যকরণের জন্য সরকার নয়-সদস্যবিশিষ্ট একটি প্রামাণ্যকরণ কমিটি গঠন করেন। (পরিশিষ্ট দ্রষ্টব্য)।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ প্রফেসর মফিজুল্লাহ কবীর এই প্রামাণ্যকরণ কমিটির চেয়ারম্যান।
কমিটির সদস্যরা হলেন:
ডঃ সালাহউদ্দীন আহমদ, প্রফেসর, ইতিহাস বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
ডঃ আনিসুজ্জামান, প্রফেসর, বাংলা বিভাগ, চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
ডঃ সফর আলী আকন্দ, পরিচালক, ইনস্টিটিউট অফ বাংলাদেশ স্টাডিজ, রাজশাহী।
ডঃ এনামুল হক, পরিচালক, ঢাকা যাদুঘর।
ডঃ কে, এম, করিম, পরিচালক, জাতীয় আর্কাইভস ও গ্রন্থাগার।
ডঃ কে, এম, মহসীন, সহযোগী প্রফেসর, ইতিহাস বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
ডঃ শামসুল হুদা হারুন, সহযোগী প্রফেসর, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
জনাব হাসান হাফিজুল রহমান, সদস্য-সচিব।
প্রকল্পের কর্মীবৃন্দ নির্দিষ্ট গ্রন্থের জন্য দলিলাদি বাছাই করে প্রামাণ্যকরণ কমিটির সামনে পেশ করেন। প্রামাণ্যকরণ কমিটি সেগুলি নির্ভুল ও গ্রহণযোগ্য কি না তা পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে যাচাই করেন। কমিটির সর্বসম্মত সিদ্ধান্তনুযায়ী যে সকল দলিল ও তথ্য প্রামাণ্য বলে গৃহীত হয়, কেবলমাত্র সেগুলিই গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। গ্রন্থের জন্য পেশকৃত দলিলাদিও কিছু কিছু কমিটি নাকচ করেন; কিছু নতুন দলিল ও তথ্য যা গ্রন্থের উৎকর্ষেও জন্য নেহাৎ জরুরী তা সংগ্রহের জন্য নির্দেশ দেন। প্রকল্পের পক্ষ থেকে তাঁদের এই নির্দেশ যথাসাধ্য পালন করা হয়েছে। তবে এ-ক্ষেত্রে অনেক সময় প্রকল্পকে বেশ দুরূহ সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। একেই লোকবল নগণ্য, তার ওপর স্বাভাবিক কাজ সেরে নিতান্ত দুষ্প্রাপ্য দলিলের সন্ধানে প্রকল্পের কর্মীদের হিমশিম খেতে হয়েছে। তবুও কর্মীরা লেগে থেকেছেন এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সফলও হয়েছেন। তবে সংগ্রহ যথাসময় হয়তো হয়নি, অনেক সময় গড়িয়ে গেছে ফলে খণ্ডবিশেষে সংযোজন অধ্যায় যোগ করতে হয়েছে। বিশেষভাবে পটভূমি খণ্ড সংকলনে এই পরিস্থিতি প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, ১৯০৫ সালের মূল গেজেট বিজ্ঞপ্তিটি পাওয়া যাচ্ছিল না। পটভূমি খণ্ডের জন্য আমরা প্রমাণ্য গ্রন্থ থেকে এই বিজ্ঞাপ্তিটি উদ্ধৃতি করি। কিন্তু প্রামাণ্যকরণ কমিটি যতদুর সম্ভব মূল দলিল সংকলনের পক্ষপাতী। তাই মূল দলিল সংগ্রহের চেষ্টা নতুনভাবে নেয়া হয়। ঢাকা গেজেটে এই বিজ্ঞপ্তি ছাপা হয়নি। কোলকাতা গেজেটেও নয়। ইতিমধ্যে পটভূমি খণ্ডটি প্রেসে চলে যায়। এই গেজেটের ফাইল লোকচক্ষুর অন্তরালে ছিল, হঠাৎ অন্য কাগজের স্তুপের ভেতর ধূলিধূসরিত অবস্থায় পাওয়া যায়। তমিজুদ্দিন খানের রীট আবেদনের মূল দলিল খুঁজতে গিয়ে অপরিসীম পরিশ্রমের পরও তা পাওয়া যায়নি। এর মূল কপি সিন্ধু হাইকোর্টে রয়েছে। অনা সম্ভব হয়নি। সুতরাং তা উদ্ধৃতির আকারেই গিয়েছে। এ থেকে প্রামাণ্যকরণ কমিটির সংকলনের কাজ নিখুঁত ও সুষ্ঠু করার জন্য অটল আগ্রহ ও আন্তরিকতাই ব্যক্ত হয়। প্রকল্পের কর্মীরাও তাঁদের এই অনুভূতির যথাসাধ্য মর্যাদা দিয়েছেন; তাঁদের নির্দেশাবলী বাস্তবায়নে কসুর করেননি, প্রায় ক্ষেত্রেই সফল হয়েছেন। পটভূমি খণ্ডে দলিলসমূহ কালানুক্রম অনুযায়ী সাজানো হয়েছে। অন্যান্য খণ্ডের দলিলের বেলাতেও কমবেশী এই নীতি অনুসৃত হয়েছে। প্রতিটি খণ্ডেই নির্ঘণ্ট ও কালপঞ্জী দেয়া হয়েছে। শেষ খণ্ডে গ্রথিত হচ্ছে সকল খণ্ডের নির্ঘণ্ট এবং কালপঞ্জী; ফলে পাঠকদের পক্ষে কোন খণ্ডে কী আছে তা একনজরে জানা সম্ভব হবে।
প্রামান্যকরণ কমিটির সিদ্ধাস্ত ছিল দলিলসমূহ মূল যে ভাষায়ে আছে তাতেই ছাপা হবে; কিন্তু কার্যক্ষেত্রে এতে বিশেষ অসুবিধে দেখা দেয়। বাংলা ও ইংরেজী ভাষায় মূল দলিলগুলি আমরা সংকলন স্থান দিয়েছি। তাছাড়া উর্দু, হিন্দী, আরবী ও রুশ ভাষার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দলিল অনুবাদসহ সংকলনের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। স্কান্দেনেভীয়, ফরাসী, জার্মান, জাপানীর ইন্দোনেশীয় প্রভৃতি ভাষায় বেশ কিছু দলিল ও তথ্য থাকা সত্ত্বেও তার অনুবাদ করা এবং গ্রন্থে সেসবের স্থান দেয়া এখনও সম্ভবপর হয়নি। এগুলি ভবিষ্যতের জণ্যে জমা রইল। প্রাসঙ্গিকতা ও পরিসরের কথা বিবেচনা করে কোন কোন দলিল সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে, তবে সে ক্ষেত্রে আমরা বিশেষভাবে লক্ষ্য রেখেছে যাতে মূলের বিকৃতি না ঘটে।
বর্তমানে আমাদের সংগ্রহে প্রায় সাড়ে তিন লাখ পৃষ্ঠার দলিল ও তথ্যাদি জমা হয়েছে। এ ভেতর ১৫ হাজার পৃষ্ঠা ছাপা হচ্ছে। বাকি দলির ও তথ্যাদি ছাপার বাইরে রয়ে যাবে। এছাড়া সংগ্রহের প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকায় আরও দলিলপত্র সংগৃহীত হবে। এগুলির গুরুত্বও কম নয়। অর্থাৎ এগুলির ওপর গবেষণা করা এবং তার ওপর ভিত্তি করে প্রকল্প-প্রকাশিত খণ্ডগুলির বাইরেও নতুন তথ্য সংবলিত মুক্তিসংগ্রাম ও স্বাধীনতা যুদ্ধ সংক্রান্ত গ্রন্থ প্রকাশের সম্ভাবনা অবারিত থেকে যাবে। এ সুযোগ সম্প্রসারিত করা দেশ ও জাতির স্বার্থেই একান্ত অপরিহার্য। কারণ এ সম্পর্কে যত বেশী বস্তুনিষ্ঠ তথ্যাদি জাতি জানতে পারবে আমাদের অগ্রযাত্রা তত বেশী নির্ভুল ও সচ্ছল হবে। তাছাড়া এ আমাদের অনন্ত অনুপ্রেরণর উৎস; তাই এ সম্পর্কিত প্রতিটি ছত্র পরম যত্ন, দায়িত্ব ও আগ্রহে সংরক্ষিত করা দেশ ও সরকারের নৈতিক কর্তব্যেও অন্তর্ভুক্ত। বস্তুত প্রায় প্রতিটি আত্মসচেতন দেশই তাদের অভু্যদয়ের সঙ্গে জড়িত ঘটনাবলী সংক্রান্ত তথ্যাদি সংগ্রহের জন্য স্থায়ী আর্কাইভস প্রতিষ্ঠা করে থাকেন এবং এ সংগ্রহের কাজ ও এর ওপর গবেষণার কর্মসূচী অব্যাহত রাখেন। বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম ও স্বাধীনতা যুদ্ধের ব্যাপারে এ সম্ভাবনার বাস্তবায়ন করার সুযোগ সৃষ্টি সমানভাবে দরকার- বিশষভাবে এ কারণে যে, এ সংগ্রামে এ দেশের সর্বস্তরের জনসাধারণ অংশগ্রহণ করেছিলেন, যত দিন যাবে তাদের সংগে যোগাযোগ তত বৃদ্ধি পাবে, নতুন নতুন তথ্য আর্কাইভস-এর সংগ্রহ সমৃদ্ধতর করতে থাকবে। এ সুযোগ বিনষ্ট করা দুর্ভাগ্যজনক ছাড়া আর কিছুই বলা যাবে না।
প্রকল্পের বিপুল পরিমাণ দলিল ও তথ্যাদি সংগ্রহের কাজে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাড়া দিয়ে যাঁরা আমাদের সহযোগিতা করেছেন তাদের সকলকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ। এ পর্যায়ে কিছু প্রতিষ্ঠান, সংগঠন, ব্যক্তি ও কর্মীর নাম বিশষভাবে উল্লেখযোগ্য। ঢাকা যাদুঘর, বাংলা একাডেমী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার, কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরী, বাংলাদেশ অবজারভার লাইব্রেরী, দৈনিক বাংলা লাইব্রেরী, জাতীয় সংসদ লাইব্রেরী এবং জাতীয় আর্কাইভস ও গ্রন্থাগার বিভিন্নভাবে আমাদেরকে সাহায্য করেছেন। বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় যাদুঘর এবং দিনাজপুর কালেকটরেট হতেও আমরা কিছু দলির ও তথ্যাদি পেয়েছি। এছাড়া তথ্য মন্ত্রণালয়, প্রতিরক্ষ মন্ত্রাণলয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সচিবালয় গ্রন্থগার এবং সামরিক গোয়েন্দা পরিদপ্তর (ডি, এম, আই)-এর সৌজন্যে বহুসংখ্যক দলিল- দস্তাবেজ আমরা সংগ্রহ করতে পেরেছি। তাঁদের সক্রিয় সহযোগিতার জন্য আমরা তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
ব্যক্তিগত উদ্যোগে ও ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে অনেকে দলিলপত্র দিয়ে প্রকল্পকে সাহায্য করেছেন। তাঁদের মধ্যে কিছু নাম এখানে উল্লেখ করা খুবই সংগত মনে করছি। প্রাক্তন বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী কিছুসংখ্যক মূল্যবান দলিল প্রকল্পকে দিয়েছেন। বিদেশে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন এবং মার্কিন কংগ্রেসের বহুসংখ্যক দলিল এ, এম, এ, মুহিতের সৌজন্যে আমরা পেয়েছি। প্রবাসে বাংলাদেশ আন্দোলনের সংগে জড়িত অনেকে তাঁদের দলিরপত্র প্রকল্পকে দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে মরহুমা রাশীদা রউফ, আজিজুল হক ভূইয়া, ডঃ এনামুল হক, আমীর আলী, সাখাওয়াত হোসেন ও জহিরউদ্দীন আহমদের নাম উল্লেখযোগ্য। বিদেশ হতে কিছু মূল্যবান দলিল পাঠিয়েছেন মাহমুদুল হক এবং খোন্দকার ইব্রাহীম মোহাম্মদ। মুজিবনগর সরকার এবং স্বাধীন বাংলা বেতারের দলিরপত্র সংগ্রহের ক্ষেত্রে যাদের সাহায্য-সহযোগিতার কথা আমরা বিস্মৃত হব না তাঁরা হলেন হাসান তৌফিক ইমাম, মওদুদ আহমেদ, মাঈদুল হাসান, আবদুস সামাদ, দেবব্রত দত্তগুপ্ত, শামসুল হুদা চৌধুরী ও আলমগীর কবীর। পটভূমি পর্যায়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দলির দিয়ে সাহায্য করেছেন বদরুদ্দীন উমর, কাজী জাফর আহমদ, অজয় রায়, ইসমাইল মোহাম্মদ, যতীন সরকার, শেখ আবদুল জলির, ডঃ সাঈদ-উর-রহমান এবং আমিনুল হক। ইসমত কাদির গামা, শামসুজ্জামান মিলন, উৎপল কান্তি ধর, স্বপন চৌধুরী ও রেজা মোস্তাক স্বাধীনতা যুদ্ধের দলির ও তথ্যাদি দিয়েছেন। উল্লিখিত সকলকে আমরা আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এছাড়া আমাদের বিপুল সংগ্রহের বিরাট কর্মকণ্ডের সংগে জড়িত রয়েছেন আরও অনেকে। এই স্বল্প পরিসরে তাঁদের প্রত্যেকের নাম উল্লেখ করা সম্ভব নয়। আমাদের আর্কাইভস-এর দলির সংরক্ষণ খাতায় তাঁদের সকলের নাম দলিলাদিও উৎস হিসেবে লিখিত রয়েছে। তাঁদেরকেও ধন্যবাদ।
দলিল ও তথ্যাদির সত্যতা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে প্রামাণ্যকরণ কমিটির অবদান কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করছি। কমিটির সদস্যগণ পরম ধৈর্য, যত্ন ও আগ্রহ সহকারে দলিলাদির প্রাসঙ্গিকতা ও মূল্য বিচার করেছেন। তাঁরা শুধু দলিলাদিও সত্যতা যাচাই করেননি, প্রকল্পের উন্নয়ন এবং বিশেষ করে খণ্ডসমূহের তথ্যসমৃদ্ধি ও সৌকর্য বৃদ্ধির জন্য মূল্যবান পরামর্শ দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে আমরা বিশেষভাবে কমিটির চেয়ারম্যান প্রফেসর মফিজুল্লাহ কবীরের কথা আন্তরিকতার সংগে স্মরণ করছি।
দলিল সংগ্রহ খণ্ডগুলির প্রকাশনার ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ জানাই। এই সংগে বাংলাদেশ সরকারের মুদ্রণ বিভাগ এবং দি প্রিণ্টার্স-এর প্রতিও আমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি।
সবশেষে আরও কয়েকজনের কথা বলতে হয়- স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলসংগ্রহ খণ্ডগুলির পেছনে রয়েছে যাঁদের অক্লান্ত শ্রম ও নিরলস সাধনা, তাঁরা এই প্রকল্পের চারজন গবেষক- সৈয়দ আল ঈমামুর রশীদ, আফসান চৌধুরী, শাহ আহমদ রেজা এবং ওয়াহিদুল হক। শুধুমাত্র চাকরি দায়িত্বে নয়- গবেষণার স্পৃহা ও প্রকল্পের কাজের সংগে একাত্মতায় তাঁরা দলিল ও তথ্যাদি সংগ্রহের কাঝ হতে শুরু করে দলিলসমূহের সংগ্রহ, বাছাই, সম্পাদনায় সহায়তা, প্রেসকপি তৈরীকরণ, মুদ্রণ তত্ত্বাবধান-সর্ববিধ কাজ সীমিত ও সংকীর্ণ সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করেন। এছাড়া সুকুমার বিশ্বাস ও রতনলাল চক্রবর্তীর শ্রম ও নিষ্ঠার কথা উল্লেখযোগ্য। প্রশাসনিক দিক থেকে আবদুল হামিদের গভীর দায়িত্ববোধ ও নিরলস তৎপরতা প্রকল্পের স্বাভাবিক কাজকর্ম অব্যাহত রাখতে সাহায্য করেছে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে যাঁরা আত্মাহুতি দিয়েছেন, যাঁরা নির্যাতিত হয়েছেন, যাঁরা ত্যাগ স্বীকার করেছেন, সর্বব্যাপী প্রতিকূল পরিবেশে যাঁরা দেশপ্রেমের দীপশিখা অমলিন রেখেছেন, যাঁরা আমাদের কর্মের পথে প্রতি মুহূর্তের প্রেরণাস্বরূপ তাঁদের সকলের উদ্দেশে গভীর শ্রদ্ধা ও আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্রের এই সংগ্রহ আমরা দেশের মানুষের হাতে তুলে দিচ্ছি।
দলিল প্রসঙ্গঃ সাক্ষাৎকার
বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের মুদ্রিত দলিলপত্র-খণ্ডসমূহের সম্পূরক হিসেবে এই খণ্ডটির পরিকল্পনা করা হয়েছে। স্বাধীনতা লাভের প্রায় একদশক পরে স্বাধীনতাযুদ্ধের ইতিহাস সংকলনের গুরুদায়িত্বে এই প্রকল্পের সামনে একটি প্রধান সমস্যা ছিল পর্যাপ্ত দলিল ও তথ্য হাতে পাওয়া। এ প্রসঙ্গে ভূমিকায় বিশদভাবে বলা হয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ সম্পর্কিত বিপুল সংখ্যক দলিলপত্র প্রকল্পে সংগৃহীত হয়েছে এবং সেগুলো থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রথম থেকে চতুর্দশ খণ্ডে মুদ্রিত হয়েছে। তা সত্ত্বেও এমন অনেক বিষয় রয়েছে এবং সেগুলোর কোন লিখিত দলিল নেই। আবার প্রাপ্ত দলিল ও তথ্যাদি কোন কোন ঘটনার ব্যাখ্যার অপর্যাপ্ত রয়ে গেছে সেসব ক্ষেত্রে ঐ সমস্ত ঘটনার সঙ্গে যাঁরা সংশ্লিষ্ট ছিলেন কিংবা যাঁরা সে সম্পর্কে ওয়াকিফহাল তাঁদের মৌখিক বিবরণই সম্যক ধারণা দিতে পারে। এছাড়া নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব- যাঁরা স্বাধীনতাসংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন তাঁদের তৎপরতার নানা কথা একমাত্র সাক্ষাৎকারের মাধ্যমেই পাওয়া সম্ভব। অতএব এই খণ্ডটি স্বাভাবিকভাবেই প্রকল্পের দলিলপত্র খণ্ডসমূহের অন্তর্ভূক্ত হয়।
প্রকল্প সংগৃহীত সাক্ষাৎকারসমূহ মোটামুটিভাবে দলিলপত্র খণ্ডসমূহের তিনটি পর্যায়ে সন্নিবেশিত হয়েছে। জনসাধারণের কাছ থেকে নেয়া গণহত্যা ও নির্যাতনের বিবরণ অষ্টম খণ্ডে; সশস্ত্র বাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের সাক্ষাৎকার ‘সশস্ত্র সংগ্রাম’ ৯ম ও ১০ম খণ্ডে এবং রাজনৈতিক নেতা, প্রাশাসনিক কর্মকর্তা, দূত ও কূটনীতিক, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, বিশিষ্ট ব্যক্তি ও জন প্রতিনিধিদের সাক্ষাৎকার নিয়ে এই খণ্ডটি প্রস্তুত করা হয়েছে।
প্রকল্পের সাক্ষাৎকার গ্রহণের তালিকায় গুরুত্বপূর্ণ সম্ভাব্য সকলেরই নাম ছিল। কিন্তু সাক্ষাৎকার গ্রহণের কাজটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া সাপেক্ষ। প্রকল্পের সীমিত সময়সীমা ও গবেষকদের স্বল্পতার দরুণ অনেকের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে, সাক্ষাৎকারদাতাগনের পক্ষ থেকে প্রকল্পের সাফল্য ও নিরপেক্ষতা সম্পর্কে সংশয় এবং একদশক আগের স্বাধীনতাযুদ্ধকালের ঘটনাবলী যথাযথভাবে বলবার বা লিখবার জন্য উপযুক্ত সময় ও প্রস্তুতির অভাবে অনেকে সাক্ষাৎকার দিতে সমর্থ হননি। আবার অনেকে প্রকল্প কর্মীদের আশ্বাস দিয়ে ও অনেকদিন ঘুরিয়ে অবশেষে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছেন। এতদসত্ত্বেও কয়েকজনের কাছ থেকে আমরা অত্যন্ত পরিশ্রমলব্ধ সুদীর্ঘ বিবরণ পেয়েছি এবং সেগুলো এখানে মুদ্রিত হয়েছে। এগুলোর অধিকাংশই অন্যান্য খণ্ডে মুদ্রিত দলিলপত্র দ্বারা সমর্থিত।
প্রকল্পের গৃহীত সময়সীমার মধ্যে সাক্ষাৎকারদাতার মূল বক্তব্য আমরা ছাপাবার প্রয়াস পেয়েছি। প্রত্যেকটি বিবরণের শেষে তারিখ ও মুদ্রিত হয়েছে। সাক্ষাৎকার গ্রহণের সময় বিবরণদাতাকে প্রকল্পের সাধারণ কিংবা বিশেষ প্রশ্নমালা দেয়া হয়েছিল। তিনি কখনো সেটি পুরোপরিভাবে অনুসরণ করেছেন কখনো আংশিকভাবে কয়েকটি বিবরণ তাঁরা নিজেরাই লিখে দিয়েছেন কোন প্রশ্নমালা ছাড়া। এই সবগুলোর মধ্যে সামঞ্জস্য রক্ষার জন্য প্রশ্নসমূহ বাদ দিয়ে শুধু বক্তব্য মুদ্রিত করা হয়েছে।
সাক্ষাৎকার সমূহের ক্রমবিন্যাস বিবরণদাতার নামের আদ্যাক্ষর অনুসারে করা হয়েছে। এসবের মধ্যে সংসদ সদস্যদের সাক্ষাৎকারসমূহ বাংলা একাডেমী কর্তৃক স্বাধীনতালাভের অনতিপরে (১৯৭৩-৭৪) গৃহীত হয়েছিল। তথ্যাদিও স্বল্পতা সত্ত্বেও স্থানীয় এলাকার প্রতিনিধিত্বশীল হিসেবে এগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এগুলি বাছাই করা হয়েছে বিবরণীতে উল্লেখিত তথ্য ও ঘটনাদির গুরুত্বের দিকে লক্ষ্য রেখে।
উল্লেখ্য যে, সাক্ষাৎকার গ্রহণ ও মুদ্রণের কাজ যুগপতভাবে করতে হয়েছে এবং এ কারণেই অপেক্ষাকৃত পরে গৃহীত একটি সাক্ষাৎকার সবশেষে সন্নিবেশিত হয়েছে আদ্যাক্ষর ক্রম ব্যতিক্রমে।
এই খণ্ডে মুদ্রিত সাক্ষাৎকারসমূহ বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশ আন্দোলনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ও তথ্য উদঘাটিত করবে বলে আমরা আশা করি।
পরিশিষ্ট
[এক]
The Bangladesh Gazette, Part II September 1. 1977, Page 503
Ministry of Information & Broadcasting.
বিজ্ঞপ্তি
ঢাকা, ২৩শে আগস্ট ১৯৭৭
নং- তথ্য/৪ই-২৫/৭৭/৪১৪৮১- স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস রচনার উদ্দেশ্যে দৈনিক বাংলার প্রাক্তন সম্পাদক জনাব হাফিজুর রহমানকে তথ্য ও বেতার মন্ত্রণালয়ে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত অফিসার পদে ১৯৭৭ সনের ১লা জুলাই হইতে জনস্বার্থে এক বৎসরের জন্য চুক্তি ভিত্তিতে নিয়োগ করা হইল।
২। চুক্তির শর্তানুযায়ী তিনি তাঁহার বেতন ও অন্যান্য সুবিধাদি পাইবেন।
আবদুস সোবহান
উপ-সচিব
পরিশিষ্ট
[দুই]
GOVERNMENT OF THE PEOPLE'S REPUBLIC OF BANGLADESH
MINISTRY OF INFORMATION & BROADCASTING
DACCA
No.51/2/78-Dev/231 Dated 18-7-1978
RESOLUTION
In connection with the Writing and Printing of the History of Bangladesh War of Liberation the Government have been pleased to constitute an Authentication Committee for the Project “Writing and Printing of a History of Bangladesh War of Liberation" with the following members:
1. Dr. Mafizullah Kabir | Pro-Vice Chancellor, Dacca University. |
2. Professor salahuddin Ahmed | Chairman, Department of History, Jahangirnagar University |
3. Dr Safar Ali Akanda | Director, Institute of Bangladesh Studies, Rajshahi. |
4. Dr. Enamul Huq | Director, Dacca Museum. |
5. Dr. K. M. Mohsin | Associate Professor, Deptt. of History, Dacca University. |
6. Dr. Shamsul Huda Harun | Associate Professor, Deptt. of Political Science. Dacca University. |
7. Dr. Ahmed Sharif | Professor and Chairman, Deptt. of Bengali. Dacca University. |
8. Dr. Anisuzzaman | Professor, Deptt. of Bengali, Chittagong University. |
9. Mr. Hasan Hafizur Rahman | O.S.D., Ilistory of Bangladesh War of Liberation Project. |
The following shall be terms of reference of the Committee:
Section Officer
পরিশিষ্ট
[তিন]
GOVERNMENT OF THE PEOPLE'S REPUBLIC OF BANGLADESH
MINISTRY OF INFORMATION & BROADCASTING
DACCA
No.51/2/78-Dev/10493/(25) Dated 13-2-1979
RESOLUTION
In partial modification of Resolution issued under No. 51/2/78-Dev/231, dated 18.7.78 Govt. have been pleased to reconstitute an Authentication Committee for the Project “Writing and Printing of a History of Bangladesh war of Liberation" with the following members:
1. | Dr. Mafizullah Kabir Pro-vice Chancellor, Dacca University. |
Chairman |
2. | Prof. Salahuddin Ahmed Chairman, Deptt. of History, Jahangirnagar University. |
Member |
3. | Dr. Anisuzzaman Prof. Deptt. of Bengali, Chittagong University. |
Member |
4. | Dr. Safar Ali Akanda Director, Institute of Bangladesh Studies, Rajshahi |
Member |
5. | Dr. Enamul Huq Director, Dacca Museum. |
Member |
6. | Dr. K. M. Mohsin Associate Professor, Deptt. of History, Dacca University. |
Member |
7. | Dr. Shamsul Huda Harun Associate Professor, Deptt. of Political Science, Dacca University. |
Member |
8. | Mr. Hasan Hafizur Rahman O.S.D., History of Bangladesh War of Liberation Project. |
Member-Secratary |
2. The following shall be the terms of reference of the Committee:
Section Officer.
সূচীপত্র | ||
ক্রমিক | নাম | পৃষ্ঠা |
১ | আজিজুর রহমান মল্লিক, অধ্যাপক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়; বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ আন্দোলনের অন্যতম নেতা |
১ |
২ | আফসার আলী আহমদ_আওয়ামী লীগ দলীয় জাতীয় পরিষদ সদস্য, রংপুর |
১৪ |
৩ | আব্দুর রাজ্জাক মুকুল আওয়ামী লীগ দলীয় জাতীয় সংসদ সদস্য (১৯৭৩) |
১৫ |
৪ | আব্দুল করিম খন্দকার পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর জ্যেষ্ঠতম বাঙ্গালী অফিসার; বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর ডেপুটি চীফ অব ষ্টাফ |
১৭ |
৫ | আব্দুল খালেক সারদা পুলিশ একাডেমির প্রিন্সিপাল; গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট সচিব ও আইজিপি |
২৫ |
৬ | আব্দুল বাসেত সিদ্দিকী আওয়ামী লীগ দলীয় প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য, টাঙ্গাইল |
৩৫ |
৭ | আব্দুল মালেক উকিল আওয়ামী লীগ দলীয় জাতীয় পরিষদ সদস্য, নোয়াখালী; অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি বিশেষ প্রতিনিধি |
৩৬ |
৮ | আবু সাঈদ চৌধুরী, বিচারপতি উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; বহির্বিশ্বে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি এবং লণ্ডনে বাংলাদেশ সরকারের আন্দোলনের নেতা |
৪২ |
৯ | আমিরুল ইসলাম, ব্যারিষ্টার আওয়ামী লীগ দলীয় নেতা; গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর অন্যতম উপদেষ্টা |
৫১ |
১০ | আসাবুল হক, মৌলভী গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা, চট্টগ্রাম |
১১০ |
১১ | এ এম এ মুহিত অর্থনৈতিক কাউন্সিলর, পাকিস্তান দূতাবাস, ওয়াশিংটন; আনুগত্য প্রকাশকারী কূটনীতিক ও যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশ আন্দোলনের অন্যতম নেতা |
১১৩ |
১২ | এম আর সিদ্দিকী আওয়ামী লীগ দলীয় জাতীয় পরিষদ সদস্য, চট্টগ্রাম; প্রসাশনিক পরিষদ প্রধান, ইষ্টার্ণ জোন; বাংলাদেশ মিশন প্রধান, যুক্তরাষ্ট ও কানাডা |
১২১ |
১৩ | এম এ হান্নান আওয়ামী লীগ নেতা, চট্টগ্রাম; লিয়াজোঁ অফিসার, পূর্বাঞ্চলীয় জোন |
১২৭ |
১৪ | ওয়াহিদুল হক সাংবাদিক |
১৩০ |
১৫ | কণিক বিশ্বাস আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্যা, ফরিদপুর (সংরক্ষিত আসন) |
১৩৩ |
১৬ | কাজী জাফর আহমদ সভাপতি, বাংলা শ্রমিক ফেডারশন (ভাসানীপন্থী ন্যাপ নেতা) |
১৩৪ |
১৭ | কামাল সিদ্দিকী, ডক্টর মহকুমা প্রশাসক, নড়াইল; ব্যক্তিগত সচিব, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, গণপ্রজাতন্ত্রী বংলাদেশ সরকার |
১৩৯ |
১৮ | কামাল হোসেন, ডক্টর আওয়ামী লীগ নেতা |
১৪৩ |
১৯ | খন্দকার আসাদুজ্জামান যুগ্মসচিব, অর্থ, পূর্ব-পাক প্রাদেশিক সরকার; অর্থ সচিব, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার |
১৯৩ |
২০ | জয় গোবিন্দ ভৌমিক জেলা ও দায়রা জজ, ঢাকা; রিলিফ কমিশনার, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার |
১৯৮ |
২১ | দেওয়ান ফরিদ গাজী আওয়ামী লীগ দলীয় জাতীয় পরিষদ সদস্য; প্রশাসনিক পরিষদ প্রধান, উত্তর-পূর্ব জোন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার |
২০৪ |
২২ | দেবব্রত দত্ত গুপ্ত অধ্যাপক, চৌমুহনী কলেজ; উপ-পরিচালক ও প্রশিক্ষণ সমন্বয়কারী ইয়ুথ ক্যাম্প ডাইরেক্টরেট, পূর্বাঞ্চলীয় জোন |
২০৫ |
২৩ | মনি সিং সভাপতি, বাংলাদেশের কমিউনিষ্ট পার্টি |
২১৩ |
২৪ | মনসুর আলী আওয়ামী লীগ দলীয় প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য, খুলনা |
২২৩ |
২৫ | মমতাজ বেগম আওয়ামী লীগ দলীয় জাতীয় পরিষদ সদস্যা (মহিলা আসন), কুমিল্লা |
২২৪ |
২৬ | মোশাররফ হোসেন আওয়ামী লীগ দলীয় প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য, চট্টগ্রাম |
২২৫ |
২৭ | মোহম্মদ আজিজুর রহমান আওয়ামী লীগ দলীয় জাতীয় পরিষদ সদস্য, দিনাজপুর |
২২৭ |
২৮ | মোহাম্মদ আজিজুর রহমান আওয়ামী লীগ দলীয় প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য, সিলেট |
২২৯ |
২৯ | মোহাম্মদ আব্দুর রব, মেজর জেনারেল (অবঃ) আওয়ামী লীগ দলীয় প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য, সিলেট বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর চীফ অব জেনারেল স্টাফ |
২৩২ |
৩০ | মোহাম্মদ ইউসুফ আলী, অধ্যাপক আওয়ামী লীগের কেন্দীয় নেতা; মুজিবনগরে মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের পাঠক |
২৩২ |
৩১ | মোহম্মদ বয়তুল্লাহ আওয়ামী লীগ দলীয় জাতীয় পরিষদ সদস্য, রাজশাহী |
২৪৪ |
৩২ | মোহাম্মদ শামসুল হক চৌধুরী আওয়ামী লীগ দলীয় প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য, রংপুর |
২৪৫ |
৩৩ | মোহাম্মদ শামসুল হক, অধ্যাপক পদার্থবিদ্যা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় |
২৪৮ |
৩৪ | মোহাম্মদ হুমায়ুন খালিদ, অধ্যক্ষ আওয়ামী লীগ দলীয় জাতীয় পরিষদ সদস্য, টাঙ্গাইল |
২৫১ |
৩৫ | মোহম্মদ রহমতউল্লাহ দৈনিক ‘জয়বাংলা’ সম্পাদক নওগাঁ থেকে প্রকাশিত (মার্চ-এপ্রিল ’৭১) |
২৫২ |
৩৬ | রেহমান সোবহান, অধ্যাপক পাকিস্তান আমলে পূর্বাঞ্চলীয় পৃথক অর্থনীতিতে অন্যতম প্রবক্তা ও বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ আন্দোলনের অন্যতম নেতা |
২৬৩ |
৩৭ | শাহ জাহাঙ্গীর কবীর আওয়ামী লীগ দলীয় জাতীয় সংসদ সদস্য (১৯৭৩) |
২৯৩ |
৩৮ | সাঈদ-উর-রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র; যুবশিবির 'পলিটিক্যাল মটিভেটর' |
২৯৪ |
৩৯ | সারওয়ার মুর্শিদ, অধ্যাপক ইংরেজী বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য |
২৯৮ |
৪০ | সিরাজুর রহমান অনুষ্ঠান কর্মকর্তা, বাংলা বিভাগ, বিবিসি, লণ্ডন |
৩০২ |
৪১ | সৈয়দ আলী আহসান, অধ্যাপক সভাপতি বাংলা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়; সভাপতি বংলাদেশ আর্কাইভস |
৩০৫ |
৪২ | অজয় রায়, ডক্টর রীডার, পদার্থবিদ্যা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সম্পাদক (জুলাই ৭১ হতে) |
৩১৩ |
৪৩ | নির্ঘণ্ট | ৩৩৭ |
এই লেখাটি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কপিরাইটের অধীন। যদিও কপিরাইট আইন, ২০০০ অনুসারে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বিশেষ কিছু প্রকাশনা বা তার পুনরুৎপাদন কপিরাইট লঙ্ঘনে অভিযুক্ত হবে না:
- ৭২ নিম্নলিখিত কার্যগুলি কপিরাইট লংঘন হইবে না, যথা:-
- (থ) নিম্নে বর্ণিত বিষয়ের পুনরুৎপাদন অথবা প্রকাশনা, যথা:-
- (অ) জাতীয় সংসদ কর্তৃক প্রণীত আইন ব্যতীত সরকারী গেজেটে প্রকাশিত হইয়াছে এমন যে কোন বিষয়;
- (আ) সরকার কর্তৃক পুনরুৎপাদন বা প্রকাশ নিষিদ্ধ করা না হইলে, সরকার নিযুক্ত কমিটি, কমিশন, কাউন্সিল, বোর্ড বা অনুরূপ অন্যান্য সংস্থার রিপোর্ট পুনরুৎপাদন বা প্রকাশ;
- (ই) ভাষ্য সহকারে পুনরুৎপাদিত বা প্রকাশিত হইয়াছে জাতীয় সংসদ কর্তৃক গৃহীত এমন কোন আইন;
- (ঈ) সংশ্লিষ্ট আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা অন্যান্য বিচার বিভাগীয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক পুনরুৎপাদন বা প্রকাশনা নিষিদ্ধ করা না হইলে, উক্ত আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা বিচার বিভাগীয় কর্তৃপক্ষের রায় বা আদেশ পুনরুৎপাদন বা প্রকাশ;
- (দ) নিম্নে বর্ণিত অবস্থায় জাতীয় সংসদ কর্তৃক প্রণীত আইন এবং তদধীনে প্রণীত কোন বিধি অথবা আদেশের যে কোন ভাষায় অনুবাদ তৈরী বা প্রকাশনা, যথা:-
- (অ) উক্ত ভাষায় অনুরূপ আইন বা বিধি বা আদেশের অনুবাদ ইতোপূর্বে সরকার কর্তৃক তৈরী বা প্রকাশিত না হওয়া; অথবা
- (আ) উক্ত ভাষায় অনুরূপ আইন বা বিধি বা আদেশের অনুবাদ ইতোপূর্বে সরকার কর্তৃক তৈরী ও প্রকাশিত হইয়া থাকিলে, অনুবাদটি জনগণের কাছে বিক্রয়ের জন্য মজুদ নাই:
- তবে শর্ত থাকে যে, অনুরূপ অনুবাদের উল্লেখযোগ্য স্থানে এই মর্মে একটি বিবৃতি থাকিতে হইবে যে, অনুবাদটি সরকার কর্তৃক প্রামাণিক মর্মে অনুমোদিত বা গৃহীত হয় নাই;
- (থ) নিম্নে বর্ণিত বিষয়ের পুনরুৎপাদন অথবা প্রকাশনা, যথা:-