বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চদশ খণ্ড)/২৮
মোহাম্মদ আজিজুর রহমান
স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পূর্ব থেকেই আমরা সিলেটে গণআন্দোলন গড়ে তুলি। মূলতঃ ১৯৭১ সালের মার্চ মাস থেকে আমরা বহুমুখী কর্মসূচী ও আন্দোলনের মাধ্যমে পাক স্বৈরাচার সরকারের বিরোধিতা করি এবং বৃহৎ সংগ্রামের প্রস্তুতি নিতে থাকি। ২রা মার্চ পথসভা ও মশাল মিছিল, ৩রা মার্চ হরতাল, ৪ঠা মার্চ মশাল মিছিল, ৫ই ও ৬ই মার্চ হরতাল, ১০ই মার্চ গণসমাবেশ ও জঙ্গী মিছিল বের করি। ১১ই মার্চ আমাকে আহবায়ক করে মৌলভীবাজার মহকুমাতে সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়। ১২ই মার্চ থেকে ২৫ শে মার্চ পর্যন্ত আন্দোলন, জনসভা, মিছিল ও কর্মীসভা আরো প্রবলভাবে চলতে থাকে। ২৫ শে মার্চ বিকেল ৩ টায় শ্রীমঙ্গল থানার ভৈরববাজার স্কুল মাঠে শ্রমিক সমাবেশে আমি ভাষণ দেই এবং স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্য প্রস্তুতি নেয়ার জন্য শ্রমিকদের আহ্বান জানাই। প্রায় দু'হাজার শ্রমিক লাঠি, তীর, ধনুকসহ উক্ত জনসভায় উপস্থিত ছিল এবং তারা সবাই লাঠি উচু করে শত্রুদের প্রতিরোধের শপথ নেয়। সভাশেষে শ্রমিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে দেশের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয় এবং যে কোন পরিস্থিতির মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত থাকার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এরপর রাত ১১টায় আমি মৌলভীবাজার নিজ বাড়িতে চলে যাই।
২৬ শে মার্চ ভোর ৪ টায় তৎকালীন অবাঙ্গালী এসডিও এবং এসডিপিও আমার বাড়িতে আসেন এবং থানায় নিয়ে যান। থানা থেকে আমাকে ব্যোমকেশ ঘোষ বাবুর বাড়ীতে নিয়ে যায় এবং তাকে সংগে করে আমাদের ট্যুরিষ্ঠ রেষ্ট হাউজে বন্দী করে রাখে। এখানে অবাঙ্গালী ও খানসেনারা আমাদের ওপর বিভিন্ন প্রকার অত্যাচার চালায়। ২৭ শে মার্চ আমাকে ছেড়ে দিলে আমি আমার বাসায় চলে আসি। ঐ দিন বিকেলে কার্ফু ভঙ্গ করে হাজার হাজার জনতা মৌলভীবাজারের দিকে আসতে থাকে। পাক বাহিনী জনতাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। কার্ফু ভঙ্গের মিছিলে রোদন মিয়া, ছওমনা ঠাকুর, তারা মিয়া ও অজ্ঞাত নামা ৫জন শ্রমিক শহীদ হন এবং বহু লোককে গ্রেফতার করা হয়। ২৭ তারিখ রাতেই জনৈক পাক ক্যাপ্টেন আবার আমাকে গ্রেফতার করে রেষ্ট বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চদশ খণ্ড হাউজে নিয়ে যায় এবং লাঠি ও রাইফেলের বাঁট দিয়ে বেদম প্রহার করে। বহু নিরীহ বাঙালীকে কার্ফু ভঙ্গের দায়ে গ্রেফতার করে খান সেনারা অমানুষিক নির্যাতন করে। রাতে পাক বাহিনীর অত্যাচারের শিকার বাঙালীদের চিৎকার শুনতে পেয়েছি। সৈন্যরা রাত এগারটায় ব্যোমকেশ বাবু, গিয়াসনগর চা বাগানের ম্যানেজার এবং আমাকে সিলেট সার্কিট হাউজে বন্দী করে রাখে।
২৮ শে মার্চ সকালে কর্নেল সরফরাজ আমাকে ইণ্টারগেশন করেন। আওয়ামী লীগের কর্মীদের কে কোথায় আছেন, স্বাধীনতা সংগ্রামে আমার সমর্থন আছে কিনা এসব প্রশ্ন করে। আমি কর্নেলের কোন প্রশ্নের উত্তর না দেয়ায় আমাকে ভিতরের এক কক্ষে নিয়ে গিয়ে ৩ জন খান সেনা একযোগে ভীষণ প্রহার করেন। তাদের প্রহারে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। জ্ঞান ফিরে আসলে আমাকে পুনরায় কর্নেলের সম্মুখে হাজির করা হয় এবং স্বাধীনতার বিরুদ্ধে বক্তব্য দেয়ার জন্য চাপ দেয়। আমি তার প্রস্তাবে রাজী না হওয়ায় আমাকে থানায় পাঠিয়ে দেয়া হয়। ২৯ শে মার্চ বেলা ১টায় আমাকে সিলেট সেণ্ট্রাল জেলে পাঠানো হয়। ৫ই এপ্রিল জেলের ভিতর থেকেই সিলেট শহরের চারদিকে গুলির শব্দ শুনতে পাই এবং দুপুরের পর কম করে হলেও তিনবার সিলেট শহরের ওপর বিমান হামলাচলে। ব্রাশের শেলের বকেক্টা টুকরা আমাদের কক্ষে এসে পড়ে। ৬ই এপ্রিল জেলের পূর্ব - উত্তর দিক থেকে মুক্তিযোদ্ধা এবং দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে পাক বাহিনীর মধ্যে তুমুল লড়াই চলে।ঐদিন প্রায় ৮বার পাক বিমান মুক্তিফোজের ওপর হামলা করে। ঐদিন জেলের সাধারণ কর্মীরা বিমান হামলার ভয়ে বাইরে রাখার দাবীতে সোচ্চার হয়ে ওঠে। কর্তৃপক্ষের সাথে কথাকাটাকাটি হলে গুলি ছোড়া হয়। আমাদের জেলের দিকে প্রায় ৫০ রাউণ্ড গুলি নিক্ষেপ করা হয়। সারারাত ধরে গোলাগুলি চলতে থাকে। আমরা সৌভাগ্যক্রমে সেদিন রক্ষা পাই।
৭ই এপ্রিল সকালে খবর পাই মুক্তিবাহিনী শহরের বেশ কিছু অংশ মুক্ত করে নিয়েছে। ২টার সময় দু’জন মুক্তিযোদ্ধা আমাদের সাথে সাক্ষাৎ করে এবং ৫ টায় সিলেটের সিরাজ সাহেব আমাদের মুক্ত করে নিয়ে আসেন। সন্ধ্যা ৬টায় মানিক চৌধুরী, এম, এন এ. কর্নেল রেজা ও মেজর দত্তের সংগে চাঁদনিঘাটে মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্প পরিদর্শন করি। ৮ থেকে ১০ই এপ্রিল ডাক্তারের পরামর্শে বিশ্রামে থাকার পর আমি মৌলভীবাজার আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে এক সভায় মিলিত হই। ১২ ই এপ্রিল নিম্নোক্ত ব্যক্তিদের নিয়ে সিলেট জেলা প্রশাসনিক কাউন্সিল গঠন করা হয়।
(1) দেওয়ান ফরিদ গাজী, এম,এন,এ জেলা প্রশাসক।
(2) মোঃ ইলিয়াস এম,এন,এ মৌলভীবাজার মহকুমা প্রশাসক।
(3) মোস্তফা আলী এম,এন,এ হবিগঞ্জ মহকুমা প্রশাসক।
(4) মাসুদ চৌধুরী এম,এন,এ সিলেট সদর মহকুমা প্রশাসক।
(5) জনাব আবদুল হক এম,এন,এ সুনামগঞ্জ মহকুমা প্রশাসক।
উল্লেখ্য যে, মুজিবনগরে অস্থায়ী সরকার গঠনে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য সিলেট থেকে কর্নেল রব ও মানিক চৌধুরীকে ভারতে প্রেরণ করা হয়।
১২ই এপ্রিল থেকে ২৬শে এপ্রিল পর্যন্ত সিলেট জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে যুদ্ধ চলতে থাকে। এইসব যুদ্ধে প্রধান ঘাঁটি স্থাপিত হয়। এই ঘাঁটির দায়িত্বে ছিলেন কর্নেল রব, কর্নেল রেজা ও মেজর সি আর দত্ত। সিলেট জেলার সংগ্রামকে ত্বরান্বিত করতে তারা এ ঘাটি থেকে সেনা পরিচালনা করতেন। শেরপুর মুক্তিবাহিনীর ঘাটির দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন বেঙ্গল রেজিমেণ্টের ক্যাপ্টেন আজিজ। ২৫ শে এপ্রিল রাতে ক্যাপ্টেন আজিজ শেরপুর যুদ্ধে আহত হলে তাকে কালীঘাট হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। ঐদিনই শেরপুর সেক্টরের পতন ঘটে। ২৬ শে এপ্রিল রাতে প্রধান সেনাপতি আতাউল গণি ওসমানী এবং ইলিয়াস সাহেবের ওপর মৌলভীবাজার সোনালী ব্যাংকের সমস্ত টাকা নিয়ে যাবার দায়িত্ব দেন। ভারতীয় ডেমোলিশন পার্টির এক্সপ্লোসিভ দিয়ে ব্যাংকের স্ট্রং রুমের দরজা খুলতে গেলে সমস্ত রুম বিধ্বস্ত হয়। ব্যাংক থেকে ২ কোটি ৫লাখ ৩ হাজার টাকা পাওয়া যায়। এখান থেকে প্রায় ২কোটি টাকা আগরতলা ৯১ নং বিএসএফ হেডকোয়ার্টারে বাংলাদেশের প্রতিনিধি এম আর সিদ্দিকী ও কর্নেল রবের মাধ্যমে মজিব নগর সরকারের কাছে জমা দেয়া হয়। এ অভিযানে ইলিয়াস সাহেব ছাড়াও মানিক চৌধুরী ও মেজর জামান অংশগ্রহণ করেন।
২৮ শে এপ্রিল মৌলভী বাজার শহর পাকবাহিনীর কবলে চলে যায়। ২৯ শে এপ্রিল আমরা শ্রীমঙ্গল হতে কয়েক হাজার ব্যারেল পেট্রল, ৩০লাখ সিগারেট, কয়েক হাজার মণ চাউল, ২৫০টি ট্রাক্টর, ৩০০টি ট্রাক, ২০০ জীপ ও মটরকার বন্ধুরাষ্ট্র ভারতে নিয়ে যেতে সক্ষম হই।
আমি ভারতের কৈলাশ্বরে অবস্থান কালে শরণার্থীদের ক্যাম্পে পৌঁছিয়ে দেয়া এবং মুক্তিফৌজে ভর্তি করার ব্যবস্থা করি। মুক্তিযোদ্ধাদের উৎসাহ যোগানোর জন্য কৈলাশ্বর মুক্তিফৌজ হতে ৩৫ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে আমি,মোজফ্ফর সাহেব ও সুবেদার চৌধুরী মাঝে মাঝে পাক বাহিনীর ক্যাম্প গুলোতে আক্রমণ করতাম। কৈলাশ্বরে ভগবানগরের যুব ক্যাম্প আমি স্থাপন করি এবং মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করি।
সেপ্টেম্বর মাসে চাতলাপুর হতে মুক্তিফৌজের ক্যাম্প টিলা বাজারে স্থাপিত হয়। তখন আমাদের ৪ নং সেক্টরের দায়িত্বে ছিলেন কর্নেল সি আর দত্ত এবং উক্ত সেক্টরের রাজনৈতিক লিয়াঁজো ছিলেন দেওয়ান ফরিদ গাজী। আমাকে কৈলাশ্বর ও ধরমনগরের রাজনৈতিক লিয়াঁজো অফিসার নিয়োগ করা হয়। ইতিমধ্যে চীফ অব স্টাফ কর্নেল রবকে চেয়াম্যান এবং ডক্টর হাসানকে প্রশাসনিক অফিসার নিয়োগ করে হবিগঞ্জ জোনাল কাউন্সিল গঠন করা হয়। সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ বিহারের চাকুলিয়া ক্যাম্পে ২২ জন যুবককে আমার নেতৃত্বে ট্রেনিং এর জন্য প্রেরণ করা হয়। তাদের ট্রেনিং শেষে কলকাতা হয়ে কৈলাশ্বরে পাঠিয়ে দেই। এ সময় আমি, মোজাফফর আহমেদ, মেজর জেনারেল কে বি কেশব রাও-এর সাথে বিভিন্ন যুদ্ধ পরিকল্পনা নিয়ে বেশ কয়েকবার আলোচনা করি। আমি প্রত্যক্ষভাবে মেরলীচড়া পাক ক্যাম্প, আলীনগর পাক ক্যাম্প, চাতলাপুর বি ও পি ইত্যাদি ক্যাম্পে বিভিন্ন সময় আক্রমণ করি।
২রা ডিসেম্বর মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী যৌথভাবে সমশেরনগর (কমলগঞ্জ থানা) আক্রমণ করে। ভীষণ যুদ্ধ হয় এবং এ যুদ্ধে মেজর গুরুমসহ বেশ কয়েকজন মিত্রসৈন্যা ও মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ৩রা ডিসেম্বর সকালে তুয়াবুর রহীম, এমপিসহ আমি চাতলাপুর বিওপি ও সমশেরনগর স্কুলে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করি। এসময় ভারতের মুক্তিছড়া থেকে মেজর আনোয়ারুজ্জামানের নেতৃত্বে ৩টি বেঙ্গল রেজিমেণ্টের কোম্পানি কমলাগঞ্জ থানা হেডকোয়ার্টারে পাঠানো হয়। তাদের আমি ২০ জন গাইড সংগ্রহ করে দেই। ৪ঠা ডিসেম্বর বিকেলে সিএনসি স্পেশাল ব্যাচ ও মুক্তিযোদ্ধাসহ আমরা কড়াইয়াহাড়ি মুক্তিযোদ্ধার প্রধান ক্যাম্পে এসে যোগ দেই। ৫ই ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে সৈয়দ মহসীন আলীর নেতৃত্বাধীন এক কোম্পানী মুক্তিবাহিনী যেগি দেয় এবং মুন্সিবাজার (কমলাগঞ্জ থানা) পাক বাহনীর অবস্থানের ওপর হানা দেয়। যুদ্ধে পাক বাহিনীর পতন ঘটে এবং পাক বাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়। ৬ই ডিসেম্বর রাজনগরের তেরকপাশা স্কুলে এক সমাবেশে আনুষ্ঠানিক ভাবে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করি।৭ ই মুক্তিফৌজের কোম্পানীকে রাজনগর থানার বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হয়। ৯ ই ডিসেম্বর মৌলভীবাজার আসি। ঐদিন মৌলভীবাজারে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলার পতাকা উঠানো হয়। তুয়াবুর রহীমকে মৌলভীবাজারের প্রশাসনিক দায়িত্ব দেয়া হয়। ২০শে ডিসেম্বর মৌলভীবাজার সরকারী বিদ্যালয়ে মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্পে এক দুঃখজনক ঘটনা ঘটে। একটি মাইন বিস্ফোরণের ফলে ক্যাম্পের কমাণ্ডার সোলায়মানসহ ২৩ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। আমি সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যাই।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে কুলাউড়া থানার শরীফপুর ইউনিয়নের দশ হাজার লোকের বসতিপূর্ণ অঞ্চল মুক্ত ছিল এবং এ অঞ্চলে বাংলাদেশের নিজস্ব প্রশাসন চালানো হয়েছিল। প্রশাসনিক দায়িত্বে ছিলেন তুয়াবুর রহীম বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চদশ খণ্ড এমপি সাহেব। মুক্তি বাহিনী সবসময় এ অঞ্চলে অবস্থান করতো এবং কোন সময় এ অঞ্চল পাক বাহিনী অধিকার করতে পারেনি।
বর্বর পাক বাহিনী যুদ্ধকালে সিলেটে অনেক নির্যাতন চালিয়েছে। শুধুমাত্র মৌলভীবাজারে স্বাধীনতা সংগ্রাম চলাকালে ৪০০ নিরীহ মানুষকে পাক বাহিনী হত্যা করে। ৪/৫ হাজার বাড়ীঘর জ্বালিয়ে দেয়। যুদ্ধ আমরা হারিয়েছি মুকিত, সহীদ, রানু, সুদর্শন নরেশ, অরুণ, মনির মিয়া, খোকা, কাজলসহ নাম না জানা আরো অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধাকে।
মোহাম্মদ আজিজুর রহমান
গণপরিষদ সদস্য, ( সাবেক এম,পি,এ) সিলেট
২২ অক্টোবর, ১৯৭৩।