বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড)/১২৫
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
পূর্ব পাকিস্তান গণতন্ত্রী দলের আত্মপ্রকাশঃ পাকিস্তানে কনফেডারেশন প্রতিষ্ঠার দাবী | দৈনিক আজাদ | ১৭ ও ১৮ জানুয়ারী ১৯৫৩ |
১৭ জানুয়ারী
(স্টাফ রিপোর্টার)
গতকল্য (শুক্রবার) আরমানীটোলা ময়দানে প্রস্তাবিত পূর্ব পাকিস্তান গণতন্ত্রী দলের তিন দিনব্যাপী সম্মেলন উদ্বোধন হয়। সম্মেলনে প্রদেশের নয়টি জেলা হইতে আগত প্রতিনিধিগণ যোগদান করেন।
অভ্যর্থনা সমিতির সভাপতি জনাব দেওয়ান মাহবুব আলী সম্মেলনে বক্তৃতা প্রসংগে বলেন যে, দেশের বর্তমান সামাজিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন সাধনকল্পে অবিলম্বে একটি যুক্তরাষ্ট্র গঠনের প্রয়োজন রহিয়াছে। তিনি মম্ব করেন যে, দেশের বর্তমান গঠনতন্ত্র ইংরেজের সাম্রাজ্যবাদ ও সামন্ততন্ত্রেরই নামান্তর মাত্র। মুসলিম লীগ সরকার ধনী শ্রেণীর ধন বৃদ্ধিকেই সহায়তা করিয়াছে শুধু। সাধারণ মানুষের দুঃখদুর্দশা লাঘবের কোন চেষ্টাই করে নাই। দেশ হইতে সাম্রাজ্যবাদ ও সামন্ততন্ত্রবাদের উচ্ছেদ করিয়া পাকিস্তানের সমৃদ্ধিতে সকল নাগরিককে সমান অধিকার দানের উদ্দেশ্যই গণতন্ত্রী দল গঠিত হইয়াছে বলিয়া তিনি উল্লেখ করেন।
গনতন্ত্রী দলের আহবায়ক জনাব মাহমুদ আলী তাঁহার বক্তৃতায় গণতন্ত্রী দল গঠনের প্রয়োজনীয়তার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে আলোচনা করিয়া বলেন যে, দেশ শাসনে মুসলিম লীগ সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। গত পাঁচ বছর লীগ শাসনের ফলে দেশের বিভিন্ন দিকে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হইয়াছে এবং দেশবাসীর দুর্দশা চরম সীমায় পৌছিয়াছে।
পাকিস্তানের বৈদেশিক নীতির সমালোচনা করিয়া তিনি বলেন যে, উহা নিরপেক্ষ নীতি নয় এবং উহা প্রাশ্চাত্য সাম্রজ্যবাদী ব্লকের প্রভাবাধীন। দৃষ্টান্তস্বরূপ তিনি বৃটিশ কমনওয়েলথের সহিত পাকিস্তানের জড়িত থাকবার কথা উল্লেখ করেন।
১৯ জানুয়ারী
(স্টাফ রিপোর্টার)
গতকল্য (রবিবার) নবপ্রতিষ্ঠিত গণতন্ত্রী দলের তিন দিবসব্যাপী অধিবেশন শেষ হয়। অপরাহে বিপুল জনসমাবশে প্রকাশ্য অধিবেশন হয়। প্রকাশ্য অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন জনাব দবিরউদ্দীন আহমদ চৌধুরী। সভায় গণপরিষদের সদস্য পাঞ্জাবের জনাব সর্দার শওকত হায়াত খান, জনাব আবদুস সালাম, জনাব মাহমুদ আলী প্রমুখ ব্যক্তি বক্তৃতা করেন।
জনাব শওকত হায়াত খান তাঁহার বক্তৃতায় পাকিস্তান সরকার ও মূলনীতি কমিটির রিপোর্টের সমালাচনা করিয়া বলেন যে, উক্ত রিপোর্টে পূর্ব পাকিস্তানের বাসিন্দাদের সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করা হইয়াছে। পাকিস্তানে কনফেডারেশন প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি দাবী জানান। তিনি বলে যে পশ্চিম পাকিস্তানের গদীতে আসীন থাকিয়া পূর্ব পাকিস্তানের বাসিন্দাদের অভাব-অভিযোগের সঠিক সন্ধান রাখা এবং তাহা নিরসনের উপযুক্ত উপায় নির্ধারণ করা সম্পূর্ণ অসম্ভব কল্পনা। পূর্ব পাকিস্তানের অধিবাসীর সুবিধা-অসুবিধার প্রতি দৃষ্টি রাখা এই প্রদেশের বিবিধ উন্নতির উপয় নির্ধারণ একমাত্র পূর্ব পাকিস্তানবাসীর দ্বারই সম্ভব। এই কারণে তিনি পূর্ব পাকিস্তানবাসীকে সম্মিলিতভাবে কনফেডারেশন প্রতিষ্ঠার দাবীতে আন্দোলন শুরু করিতে উপদেশ দেন।
গণপরিষদে পূর্ব বংগের যে সকল সদস্য মূলনীতি কমিটির রিপোর্ট মানিয়া লইয়াছেন তাঁহাদের আশু পদত্যাগের দাবীতে জনমত গঠনের জন্যও তিনি পূর্ব পাকিস্তানের অধিবাসীকে উপদেশ দেন।
সর্বশেষে তিনি মন্তব্য করেন যে, মূলনীতি কমিটির রিপোর্ট জনস্বার্থের প্রতি লক্ষ্য রাখিয়া গঠন করা হয় নাই। মুসলিম লীগ সরকারের গদীর নিরাপত্তার প্রতি দৃষ্টি রাখিয়াই তাহা গঠন করা হইয়াছে।
পশ্চিম পাকিস্তানের আজাদ পাকিস্থান পার্টি এবং পূর্ব পাকিস্তানের গণতন্ত্রী দলের উদ্দেশ্যে ও কর্মপদ্ধতি ভবিষ্যতে একইরূপ হইবে বলিয়াও তিনি তাঁহার বক্তৃতায় উল্লেখ করেন।
সভায় জনাব হাজী মোহাম্মদ দানেশকে নবপ্রতিষ্ঠিত গণতন্ত্রী দলের সভাপতি, জনাব মুজিবর রহমান খান (সম্পাদক, ‘চাষী’), জনাব আব্দুল জববার (খুলনা), জনাব দবির উদ্দীন আহমদ চৌধুরী (সিলেট), জনাব মহিউদ্দীন আহ (সম্পাদক, ‘আমারদেশ’), ও অধ্যাপক রফিকুল ইসলামকে (চাঁদপুর) সহসভাপতি জনাব মাহমুদ আলীকে সাধারণ সম্পাদক এবং জনাব আতাউর রহমান (রাজশাহী) ও দেওয়ান মাহবুব আলীকে যুগ্মসম্পাদক নির্ধারণ করা হয়। ইহা ছাড়া ২১ জনকে সভ্য নির্ধারণ করা হয়।
পশ্চিম পাকিস্তানের আজাদ পাকিস্তান পার্টির সহিত একযোগে কাজ করিবার উদ্দেশ্য উভয় পাকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ নির্ধারণ এবং তাহার পরিপ্রেক্ষিতে কর্মপন্থা স্থির করিবার জন্য আজাদ পাকিস্থান পার্টির সহিত আলা-আলোচনা চালাইবার ক্ষমতাও নবগঠিত কমিটির হাতে অর্পণ করা হয়।