বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড)/৪৮

শিরোনাম সূত্র তারিখ
পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগের ঘোষণাপত্র পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগ ১৭ই মার্চ, ১৯৫১


পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগ

ঘোষণাপত্র

উদ্দেশ্য ও কার্যসূচি

[প্রচার দপ্তর কর্তৃক ৪৩/১ নম্বর যোগীনগর লেন, পোঃ ওয়ারী, ঢাকা হইকে প্রকাশিত।]

ভূমিকা

 দল-মত নির্বিশেষে পাকিস্তানের যুবশক্তি যাহাতে একটি সংগঠনে সমবেত হইয়া নিজেদের ও দেশের উন্নতির জন্য একটি প্রগতিশীল যুব আন্দোলন সৃষ্টি করিতে পারে তাহার জন্য আমরা ঢাকায় গত ২৭শে ও ২৮শে মার্চ, ১৯৫১তে পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগ নামে এক যুবসংঘ গঠন করিয়াছি। আমাদের এই সংঘ দল, মত ও ধর্ম নিরপেক্ষ। যে কোন ধর্মের যুবক-যুবতী ইহাতে যোগদান করিতে পারেন। আমাদের এই সংঘের উদ্দেশ্য ও কার্যসূচি দেশের যুবসমাজের নিকট উপস্থিত করিতেছি।

 আমরা কি চাহিয়াছিলাম এবং কি পাইয়াছি?

 আমরা পাকিস্তানের যুব-সমাজ আজ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বিষম সংকটের সম্মুখীন হইয়াছি। প্রথম যেদিন পাকিস্তান কায়েম হয় সেদিন আমরা সমস্ত যুবক-যুবতী তরুণ-তরুণী আশা করিয়াছিলাম যে বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের দুই শত বছরের লুণ্ঠন ও অত্যাচারে ধ্বংসপ্রাপ্ত আমাদের সোনার দেশ আবার শিল্পে, শিক্ষায়, ধনে, সম্পদে সমৃদ্ধ হইয়া উঠিবে। আমরা আশা করিয়াছিলাম যে আমাদের সমাজের অর্থনীতি বৃটিশ পুঁজির কলংকময় দাসত্ব হইতে মুক্ত হইবে। এবং বৃটিশ সৃষ্ট জমিদারী প্রথার অবসান হইবে, কৃষক জমি পাইবে, এবং আমাদের সমাজ জীবনে নূতন প্রাণের জোয়ার আসিবে।

 কিন্তু পাকিস্তান কায়েম হওয়ার প্রায় সুদীর্ঘ পাঁচ বছর পরেও আমরা গভীর লজ্জার সহিত লক্ষ্য করিতেছি যে, আমাদের দেশ এখনও বৃটিশ কমনওয়েলথ-এর শিকলে বাঁধা। এখনও পাকিস্তানের ধন-সম্পদ, যেমন- পাট, চা প্রভৃতি ব্যবসার উপর সেই বৃটিশ পুঁজির কর্তৃত্ব অব্যাহত। আজও মুষ্টিমেয় বিদেশী ও দেশী ধনিক আমাদের ধন-সম্পদ লুণ্ঠন করিয়া ভোগ-বিলাসে কাল কাটাইতেছেন।

 আমরা পাকিস্তানের যুবসমাজ গভীর উদ্বেগের সহিত লক্ষ্য করিতেছি যে আজও আমাদের শিল্পের বিন্দুমাত্র উন্নতি হয় নাই। আমাদের দেশের বাজার বিদেশী মালপত্রে ছাইয়া গিয়াছে; এবং মুষ্টিমের ধনিকের সহায়তায় বিদেশী বণিকগণই আমাদের দেশের বাজারের উপর কর্তৃত্ব এবং একাধিপত্য বিস্তার করিয়া রহিয়াছে।

কৃষক যুবক

 আমাদের দেশের অর্থনীতি এখনও রহিয়াছে সেই অনগ্রসর ঔপনিবেশিক অর্থনীতির পর্যায়ে। আমাদের দেশের যুবসমাজের শতকরা ৮০ ভাগ গ্রামের কৃষক। দেশের যুবশক্তির এই প্রধান অংশ আজও সামন্তবাদী জমিদারী প্রথার নিষ্পেষণে পিষ্ট। সরকার নামেমাত্র জমিদারী প্রথার উচ্ছেদ করিয়াছে। কার্যত জমিদারী হস্তান্তর হইয়াছে মাত্র; চাষী জমির স্বত্ব পায় নাই। দেশের প্রাণ এই যুবসমাজ আজও শিক্ষা হইতে বঞ্চিত, জমি হইতে বঞ্চিত। নিজেদের জীবনকে সুখী ও সুন্দর করিয়া গড়িয়া তোলার কোন পথই তাহাদের সম্মুখে নাই। এক মুঠা পেটের ভাতের জন্য সকাল হইতে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাড়ভাঙ্গা খাটুনী, চাকুরীর আশায় এদিক-ওদিক ছুটাছুটি, পরের বাড়ীর গোলামী এবং অকালে মৃত্যু, ইহাই আজ পাকিস্তানের গ্রাম্য-যুবশক্তির ভাগ্য। আমাদের অবস্থা উন্নত করার কোন চেষ্টাই বর্তমান সরকারের নাই। অর্থনৈতিক শোষণে, শিক্ষার অভাবে দেশের প্রাণ এই গ্রাম্য-যুবশক্তি দিনদিন হীনবল হইয়া পড়িতেছে। আমরা আশায় বুক বধিয়া পাকিস্তানের জন্য লড়িয়াছিলাম- জমি পাইব, শিক্ষা পাইব; কিন্তু বর্তমান মুসলিম লীগ সরকারের কল্যাণে আমাদের কৃষক যুবশক্তির সেই আশায় ছাই পড়িয়াছে।

শ্রমিক যুবক

 আমরা যুবসমাজের যে অংশ রেলে কাজ করিয়া, চট্টগ্রাম ডকে গতর খাটিয়া, সূতাকল চালাইয়া, রিকশা চালাইয়া বা অনুরূপ কঠোর পরিশ্রম করিয়া দিন-মজুর হিসাবে জীবিকা অর্জন করি- আমরা সেই যুবসমাজ আশা করিয়াছিলাম যে পাকিস্তানে আমরা জীবন-ধারণের উপযুক্ত মজুরী পাইব, পাইব চাকুরীর স্থায়িত্ব এবং শিক্ষা। কিন্তু বাস্তব জীবনে আমাদের আসল মজুরী কমিতেছে, খাটুনি বাড়িতেছে। শিক্ষার ব্যবস্থা নাই। বেকারী ও ছাঁটাইয়ের বিভীষিকা আমাদের সম্মুখে। অথচ আমাদিগকে শোষণ করিয়াই মুষ্টিমেয় ধনিক টাকার পাহাড় জমাইতেছে।

মধ্যবিত্ত যুবক

 আমরা মধ্যবিত্ত যুবসমাজ স্বপ্ন দেখিয়াছিলাম- পাকিস্তানে আমরা চাকুরী পাইব, ব্যবসা-বাণিজ্য বিকাশের সুযোগ পাইব, গৃহ পাইব, পাইব উন্নত সংস্কৃতি ও উন্নততর জীবন-ধারনের মান। কিন্তু বাস্তবতার নিষ্ঠুর আঘাতে সে স্বপ্ন আমাদের ভাঙ্গিয়া গিয়াছে অভাবের তাড়নায় আমরা জর্জরিত, শহরের বাসস্থানের অভাব আমাদের এক বিরাট সমস্যা। তদুপরি আজ আমরা ১৫ লক্ষের বেশী বেকার এক মুঠা ভাতের জন্য এখানে সেখানে ধর্ণা দিতেছি, আত্মহত্যা পর্যন্ত করিতেছি।

মোহাজের যুবক

 আমরা, মোহাজের যুবকেরা, পাকিস্তানের জন্য আমাদের সর্বস্ব হারাইয়াছি। কিন্তু আজ পাকিস্তানে আমাদের কোন ভবিষ্যৎ নাই। সরকার আমাদিগকে কেবল মৌখিক সহানুভূতি এবং খবরের কাগজের মারফৎ সাহায্য করিতেছেন। কিন্তু আমাদের পুনর্বসতি ও পুনজীবন-যাত্রার কোন উল্লেখযোগ্য ব্যবস্থাই তাহারা করেন নাই। আত্মহত্যা পর্য্যন্তও করিতে হইতেছে।

নারী যুব-সমাজ

 আমরা নারী যুব-সমাজ আশা করিয়াছিলাম যে পাকিস্তানের সরকার আইন করিয়া আমাদিগকে সামাজিক অত্যাচার হইতে মুক্তি দিবেন, শিক্ষার বিশেষ ব্যবস্থা করিবেন এবং দিবেন জীবনের প্রতিক্ষেত্রে পুরুষের সহিত সমান মর্যাদা ও অধিকার। কিন্তু আজও আমরা নিগৃহীতা এবং শিক্ষা ও সভ্যতার সামান্যতম অংশ হইতেও বঞ্চিতা। আমরা গভীর লজ্জার সহিত লক্ষ্য করিতেছি যে, পাকিস্তান হওয়ার পর আট বছর অতীত হইতে চলিল, দেশের সমগ্র যুবসমাজের অর্ধেক এই নারী-যুবশক্তির শতকরা একজনও লিখিতে-পড়িতে পারে না। তদুপরি সিলেট মেয়ে কলেজ ও কামরুন্নেসা মেয়ে কলেজ, ইডেন স্কুল, বরিশালের একমাত্র ছাত্রী নিবাস, জগন্নাথ কলেজে মেয়েদের অধ্যয়নের ব্যবস্থা তুলিয়া দিয়া নারী শিক্ষার বিরুদ্ধে সরকার এক বিরাট অভিযান চালাইতেছে। অথচ আলবেনিয়ার ন্যায় মুসলিম রাষ্ট্রের ১৯৪৫ সনে অবৈতনিক বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার প্রবর্তন হওয়ায় ১৯৪৬ সালের শেষে একমাত্র পেশার জেলায় শতকরা ৭৫ জনের নিরক্ষরতা দূর হইয়া যায়। স্কুটারী জেলায় ১৯৪৬-এর মাঝামাঝি ২৩,০০০ মেয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়িতে আসে। এই রূপে বিভিন্ন স্বাধীন দেশে আমাদের বোনেরা যখন শিক্ষাদীক্ষার উন্নত হইয়া দেশের ও সমাজের উন্নতির কাজে আত্মনিয়োগ

অর্থনৈতিক সংকট

 পূর্ববঙ্গ তথা পাকিস্তানের অর্থনীতির মেরুদণ্ড হইতেছে কৃষি। পাকিস্তানের শতকরা ৯২ জন অধিবাসীই কৃষক। যে পাট তাহারা গড়ে ৩০ টাকা দরে বিক্রয় করিতে তাহা আজ ১২ টাকায়, যে সুপারি গড়ে ৭৫ টাকা দরে বিক্রয় করিত তাহা আজ ১০ টাকা দরে বিক্রয় করিতে বাধ্য হইতেছে। তদুপরি সুপারির উপর প্রতি মণে ১০ টাকা। /০ আনা শুল্ক ধার্য হওয়ায় সুপারি বিক্রয়ই হয় না। এভাবে পাকিস্তানের অধিবাসীদের নগদ আয়ের পথ হইতেছে। বিগত কয় বছরে দ্রব্যমূল্য মানের সূচকসংখ্যা (ওহফবী হসনবৎ) হইতে এই তথ্য সহজেই জানা যায়।

 ১৯৩৯ সনে দ্রব্যের গড়পড়তা মূল্য ছিল ১০০


 ১৯৪৮ সনে দ্রব্যের গড়পড়তা মুল্য ছিল ৩৭৪ পাকিস্তান পার্লামেণ্টে প্রদত্ত

 ১৯৪৯ সদে দ্রব্যের গড়পড়তা মূল্য ছিল ২১৪ অর্থমন্ত্রীর বস্তৃতা হইতে


 আজ একদিকে পাট, সুপারি, তামাকের দাম দ্রুত কমিয়া কৃষকের আয় ভয়ানকভাবে হ্রাস পাওয়ায় ও অপরদিকে নিত্য ব্যবহার্য দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে পাকিস্তানের অধিবাসীগণ আজ তীব্র অর্থনৈতিক সংকটের সম্মুখীন।

শিক্ষা ও সংস্কৃতি

 আমরা পাকিস্তানের যুবসমাজ আশা করিয়াছিলাম যে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হলে সরকার সমস্ত দেশে বিজ্ঞানসম্মত শিক্ষার প্রচলন করিয়া বৃটিশ আমলের কুশিক্ষা ও অজ্ঞতা দূর করিবেন কিন্তু তার পরিবর্ত্তে আজও দেশে শিক্ষিতের হার শতকরা ১১ জন। প্রাইমারী স্কুল বাড়াইবার পরিবর্ত্তে সরকার শতকরা ৪০ হইতে ৫০ ভাগ স্কুল- এক মাত্র চট্টগ্রাম জেলায় ৮৪৪টি, নাটোরে ৪০০টি- উঠাইয়া দিয়া শিক্ষাব্যবস্থার সংকোচ করিতেছেন। সরকার আজ শিক্ষা খাতে ৫.৬ ভাগ ব্যয় বরাদ্দ করিয়া যুদ্ধ খাতে দেশের সম্পদের শতকরা ৭২ ভাগ ব্যয় করিতেছেন।

 তদুপরি সরকার পাকিস্তানের বিভিন্ন প্রদেশের মাতৃভাষার দাবীকে উপেক্ষা করিয়া আমাদের সাংস্কৃতিক অগ্রগতির পথ রুদ্ধ করার চেষ্টা করিতেছেন। বিশেষত অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসাবে পাকিস্তানের শতকরা ৬২ জনের মাতৃভাষা বাংলা ভাষার দাবীকে উপেক্ষা করিয়া উর্দু চাপাইতেছে এবং আরবী হরফে বাংলা শিখার উদ্ভট পরিকল্পনাকে কার্য্যে পরিণত করার জন্য অজস্র অর্থের অপচয় করিতেছেন। আমরা বিশ্বাস করি উর্দু ও বাংলা একত্রে রাষ্ট্রভাষা হইলে পাকিস্তান দুবর্বল হইবে না। এবং আমরা আরও বিশ্বাস করি যে আরবী হরফে বাংলা লিখার ব্যবস্থাকে আমাদের উপর চাপাইয়া দিলে আমরা দেশের যুবক সমাজ চিরদিনের জন্য অজ্ঞতা ও অশিক্ষার অন্ধকার ডুবিয়া যাইব; আমাদের মানসিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতি পথ রুদ্ধ হইবে।

স্বাস্থ্য

 আমরা দেখিতে পাইতেছি যে বর্ত্তমান সরকার দেশের যুবসমাজের স্বাস্থ্যোন্নতির জন্য কোন ব্যবস্থাই অবলম্বন করেন নাই, যুবসমাজের জন্য ব্যায়মাগার, ক্লাব, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার খাতে টাকা খরচ না করিয়া মিলিটারী, পুলিশ ও বিদেশ ভ্রমণে বিপুল অর্থ ব্যয় করিতেছেন। কুখাদ্য ও ভেজাল খাদ্য খাইয়া এবং কঠোর পরিশ্রমের দরুন পাকিস্তানের যুবশক্তি আজ দৈহিক দিক দিয়া হীনবল, অকালমৃত্যু আমদের ভাগ্য। আমাদের গড়পড়তা আয়ু আজও ২৬ বছর। অর্থাৎ আমরা পরিণত যৌবন লাভ করার পূবেৰ্বই মৃত্যুবরন করি।

দমননীতিতে বিভীষিকা

 আমরা যুবসমাজ আশা করিয়াছিলাম পরিপূর্ণ গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু আজ যখনই আমরা নিজেদের কোন দাবী বা সমাজের উন্নতির জন্য কোন আন্দোলন বা সংগঠনে সমবেত হই, তখনই সরকার আমাদের উপর দমন নীতি প্রয়োগ করেন। ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলন, পাকিস্তান পুলিশের ধর্মঘট, লাহোর বাটা শ্রমিকের ধর্মঘট, করাচী ডালমিয়া সিমেণ্ট ফ্যাক্টরির শ্রমিক ধর্মঘট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিন্মতম বেতনভোগী কর্মচারীদের সমর্থনে ছাত্রদের ধর্মঘট, মেডিকেল ছাত্রদের ধর্মঘট প্রভৃতি ন্যায্য গণতান্ত্রিক আন্দোলনের উপর সরকারী দমন নীতির তীব্র কশাঘাত আমরা পূর্ববাংলা তথা পাকিস্তানের যুবসমাজ আজও ভুলি নাই। মেডিকেল ছাত্রদের ও ডাক্তারদের দাবীর প্রতি সরকারের অনমনীয় মনোভাব আমরা লক্ষ্য করিয়াছি “ভুখা’ চতুর্থ শ্রেণীর কর্ম্মচারীদের বরখাস্তের ব্যাপারও গভীর ক্ষোভের সহিত আমরা লক্ষ্য করিয়াছি।

 সরকারের দমন নীতির কোপে পড়িয়া আজ পাকিস্তানের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রবাদী শত শত যুবক-যুবতী কারাগারে আবদ্ধ। সরকারী দমন নীতির দরুন স্বাধীনভাবে সভা-সমিতি করার বা সংগঠন গড়ার অধিকার আমাদের নাই। নিষ্ঠুর সরকারী দমন নীতির ফলে আমাদের ব্যক্তিস্বাধীনতা আজ বিপর্য্যস্ত। তাই আজ আমাদের পাকিস্তানের যুবসমাজের জীবনে সামাজিক অর্থনৈতিক, আধ্যাত্মিক ও দৈহিক এই চতুবিবধ সংকট নামিয়া আসিতেছে। আমাদের সমাজের অর্থনীতিতে বিদেশী পুঁজির প্রাধান্য আজও অব্যাহত। আমাদের গ্রাম্য অর্থনীতিতে জমিদারী প্রথার নাগপাশ আজও অক্ষত। আমাদের দেশের শিল্প নাই, গণতান্ত্রিক অধিকার নাই। বেকারীর দুঃসহ জালায় আমরা জর্জরিত ও আমাদের দেহ মন স্বাস্থ্য আজ হীনবল। বর্তমান সরকারের নীতিই আমাদের দেশের যুবশক্তির এই মহা সংকটের কারণ।

যুদ্ধ সংকট ও আমলা

 উপরন্তু আমরা গভীর উদ্বেগের সহিত লক্ষ্য করিতেছি যে সাম্রাজ্যবাদী সংকট এড়াইবার জন্য সাম্রাজ্যবাদী শক্তিসমূহ দুনিয়াব্যাপী আর এক মহাযুদ্ধ বাধাইতে সচেষ্ট নিষ্ঠুর যুদ্ধের আঘাতে কোরিয়া আজ বিধ্বস্ত। প্রতিক্রিয়াশীল সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলি সারা এশিয়াতে এবং দুনিয়াব্যাপী এই যুদ্ধের আগুন ছড়াইয়া দিতে চায়। তাহারা দুনিয়াকে গ্রাস করিতে চায়। আমরা গভীর আতঙ্কের সহিত লক্ষ্য করিতেছি যে, আমাদের প্রতিক্রিয়াশীল শক্তিসমূহও আমাদের দেশকে এই যুদ্ধে জড়াইতে চাহিতেছে। আমাদের যুবসমাজের বেকারীর ও দুর্দ্দশার সুযোগ লইয়া প্রতিক্রিয়াশীল শক্তিরা আমাদিগকে সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধের খোরাক হইবার জন্য সৈন্যদলে চাকুরীর লোভ দেখাইতেছে।

 আমরা পূর্ববঙ্গ তথা পাকিস্তানের যুবসমাজ নিজেদের দেশের স্বাধীনতার জন্য সর্ব্বপ্রকার ত্যাগ স্বীকার করিতে এবং যুদ্ধক্ষেত্রে স্বেচ্ছায় প্রাণ দিতে প্রস্তুত। কিন্তু আমরা দৃঢ়কণ্ঠে ঘোষণা করিতেছি যে সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধে আমরা কখনও কামানের খোরাক হইব না। আমরা জানি যুদ্ধের আনুষঙ্গিক ফল, সেই ৫০ সনের মন্বন্তরে হইতেও ভয়াবহ মন্বন্তর যে মন্বন্তরে আমরা আমাদের ৩৫ লক্ষ মা-ভাই-বোনকে হারাইয়াছি। আমরা জানি যুদ্ধের অর্থ আমাদের স্কুল-কলেজে আবার মিলিটারীর আস্তানা, আমরা জানি, যুদ্ধের অর্থ ৫০ সনের মত আমাদের শত শত নারীর ইজ্জতহানি, আমরা জানি, এবার যুদ্ধ আরম্ভ হইলে গুলি ও বোমার আঘাতে আমাদের স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দির ধ্বংস হইবে। যুদ্ধের এই বিপদ সম্পর্কে আমরা যুবক সমাজ সচেতন হইয়াছি। আমরা পাকিস্তানের যুবসমাজ চাই স্বাধীনতা; শান্তি, সুখ ও উন্নত জীবন।

সরকারী আত্মরক্ষা বর্ম

 অথচ জাতীয় জীবনের এই সমুদয় পুঞ্জীভূত সমস্যা ও সংকট সম্বন্ধে কোন প্রকার প্রশ্ন তুলিলেই সরকার আত্মরক্ষার একাধিক প্রকারের বর্ম পরিধান করিয়া থাকেন। কিছুদিন আগে পর্যন্ত ছিল শিশুরাষ্ট্রের দোহাই। কিন্তু সেই দোহাই এর স্বরূপ আজ জনসাধারণের কাছে উদঘাটিত হইয়াছে। তাই আজ “শিশু রাষ্ট্রের” কথা আমরা শুনিতে পাই না। আজ আবার নূতন ধরনের বুলি তাহারা আওড়াইতেছেন। আমরা দেশের কোন সমস্যার কথাতুলিতে গেলেই আমাদিগকে আখ্যা দেওয়া হয়- “রাষ্ট্রের শক্রবা রাষ্ট্রদ্রোহী”। কোন প্রকার সমস্যার সমাধান হইতে বিলম্ব ঘটিতেছে কেন, এইরূপ প্রশ্ন করিলেই তর জওয়াব স্বরূপ সরকার হইতে বলা হয় “ইসলামী শরিয়তের বিধান মতে ইহা করিতে হইবে সে কারণে দেরী হইতেছে”। (এইখানে একটি প্রশ্ন করিতে ইচ্ছো করিঃ ইসলামী শরিয়ত অনুযায়ী এই কি রাষ্ট্রনায়কের কর্তব্য যে ভুখা কর্ম্মচারী তাহদের ক্ষুধার কথা জানাইলে তিনি তাহাদের ক্ষুধা কমাইবার চেষ্টা না করিয়া ক্ষুধা বাড়াইবার চেষ্টা করিবেন?) পাকিস্তানের গঠনতন্ত্রের ব্যাপারে একাধিক সরকারী মুখপাত্র হইতে আমরা অনুরূপ জওয়াবই পাইয়াছি। তদুপরি রাষ্ট্রভাষা সম্পর্কে বিশ্বাসঘাতক নাজিমুদ্দিন কায়েদে আজমের দোহাই দিয়া আত্নরক্ষার চেষ্টা করিতে ছাড়েন নাই।

 ইসলামের নামে আজ আট বৎসর যাবৎ আমাদের নেতারা জনসাধারণকে, অনেক ভাওতা দিয়া চলিয়াছেন। যোগাযোগ কতটুকু তাহা দিন দিনই আমাদের দেশবাসীর নিকট পরিষ্কার হইয়া পড়িতেছে। ইসলামের প্রতি জনসাধারণের যে ভালবাসা আছে তাহা আমাদের নেতারা জানেন, তাই তাহারা ব্যক্তিগত ও দলগত স্বার্থসিদ্ধির জন্যই বারংবার ইসলামের বুলি আওড়াইতেছেন, অর্থাৎ “ইসলাম”, “রাষ্ট্রদ্রোহী”, “রাষ্ট্রের শক্র” প্রভৃতি বুলি সরকার যে কোন আন্দোলনের মুখে আত্মরক্ষার বর্মরূপে এবং গণদাবীকে চাপা দেওয়ার যন্ত্ররূপে ব্যবহার করিয়া থাকেন। আমরা পাকিস্তানের যুবসমাজ স্পষ্ট ভাষায় গোষণা করিতে চাই যে আমাদের রক্তের বিনিময়ে পাকিস্তান অর্জিত হইয়াছে, আত্মসর্বস্ব নেতাদের বাগাড়ম্বর দ্বারা নয়। পাকিস্তানের যে রঙ্গিন স্বপ্ন আমরা দেখিয়াছিলাম নেতাদের কার্যকলাপ তাহাকে ধূলিসাৎ করিয়া দিয়াছে। সে স্বপ্নকে বাস্তবে রূপায়িত করিবার দায়িত্ব আমাদের যুবসমাজকেই লইতে হইবে।

 আমরা ইতিহাসের ধারা হইতে ইহাও লক্ষ্য করিয়াছি যে দেশের যুবসমাজ তথা দেশের জনসাধারণ কোন দিন দেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় নাই। বরং মুষ্টিমের প্রতিক্রিয়াশীর সুবিধাবাদী নেতাদের এক অংশ বহিঃশত্রদের হাতে দেশকে তুলিয়া দিয়াছিল। বিগত মহাযুদ্ধে আমরা দেখিয়াছি ঐ সমুদয় লোকই দেশের স্বাধীনতাকে ফ্যাসিবাদের হাতে তুলিয়া দিয়াছে। অপরদিকে দেশের যুবসমাজ তথা দেশের জনসাধারণ দেশের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য সংগ্রাম করিয়া আজাদী প্রতিষ্ঠা করিয়াছে। মিশর, পারস্য, তিউনিসিয়ার সংগ্রামী যুবসমাজ এই কথারই প্রমাণ দিবে।

আমাদের ঘোষণা ও দাবী

আমরা তাই ঘোষণা করিতেছি যে

 ১। আমরা যুদ্ধ চাই না। দুনিয়ার যুবসমাজ আজ যুদ্ধের বিরুদ্ধে দৃঢ়প্রতিজ্ঞা ঘোষণা করিতেছে। তাহদের সঙ্গে কণ্ঠ মিলাইয়া আমরা ঘোষণা করিতেছি যে, আমরা সাম্রাজ্যবাদীদের যুদ্ধ-প্রচেষ্টা ব্যর্থ করিব। সাম্রাজ্যবাদীদের যুদ্ধের কামানের খোরাক হইব না। আমরা দাবী করিতেছি যে আমাদের সরকার যুদ্ধবাদীদের বিরুদ্ধে দাঁড়াক।

 এ কথাও আমরা ঘোষণা করিতে চাই- এটম অস্ত্র হইতেছে আক্রমণের অস্ত্র, মানুষকে ব্যাপকভাবে নিশ্চিহ্ন করার অস্ত্র। তাই আমরা দাবী করিতেছি এটম অস্ত্রকে বিনাশর্তে অবৈধ ঘোষণা করা হউক এবং এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকরী করার জন্য তারপর কঠোর আন্তর্জতিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা হোক।

 যে সরকার প্রথম কোন দেশের বিরুদ্ধে এটম অস্ত্র ব্যবহার করিবে, সেই সরকার মানবজাতির শক্রতা করিবে, আমরা তাহাকে যুদ্ধ অপরাধে অপরাধী মনে করিব।  আজ আমরা ইহাও লক্ষ্য করিতেছি যে দুনিয়ার গুটিকয়েক রাষ্ট্র এশিয়া, আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের কোটি কোটি মানুষকে দাসত্ব শৃংখলে আবদ্ধ করিয়া রাখিয়াছে এবং ঐপনিবেশিক দেশগুলির আজাদীয়র আন্দোলন ভীত সাম্রাজ্যবাদী দস্যরা মারমুখো হইয়া ঐ সব দেশে রক্তের স্রোত বহাইয়া দিতেছে। আমরা এই সাম্রাজ্যবাদী আক্রমণ ও নৃশংসতার বিরুদ্ধে দৃঢ় আওয়াজ তুলিতে চাই এবং আজাদী সংগ্রামে নিযুক্ত আমাদের কোটি কোটি ভাই-বোনদের অভিনন্দন ও অকুণ্ঠ সমর্থন জানাই।

 ২। আমরা চাই পাকিস্তান বৃটিশ কমনওয়েলথ ত্যাগ করুক এবং পাকিস্তানে স্বাধীন গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কায়েম হউক, যাহাতে প্রত্যেকটি ভাষাভাষী প্রদেশ পূর্ণ আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার ভোগ করিবে; প্রত্যেকটি উপজাতি পাইবে কৃষ্টির স্বাধীনতা ও স্থানিয় স্বায়ত্তশাসন জাতি-ধর্ম্ম নির্বিশেষে প্রত্যেকটি নাগরিক ভোগ করিবে সমান নাগরিক অধিকার এবং আরবী হরফহীন বাংলা হইবে রাষ্ট্রভাষা।

 ৩। আমরা চাই বেকারীর অবসান এবং জাতি-ধর্ম্ম নির্বিশেষে প্রত্যেক যুবক-যুবতীর চাকুরী ও সৎভাবে জীবিকার্জনের নিশ্চয়তা,বেকারদের জন্য সরকারী ভাতা।

 ৪। আমরা চাই প্রাপ্তবয়স্কদের সার্বজনীন ভোটাধিকার ও যুক্ত নির্বাচন।

 ৫। আমরা চাই দেশের নিরক্ষতা দূরীকরণ, শিক্ষার উন্নতি যুদ্ধ খাতে ব্যয় কমাইয়া শিক্ষার জন্য বৰ্দ্ধিত হারে ব্যয় বরাদ্দ, বাধ্যতামূলক অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষা, প্রয়োজন অনুসারে মেয়েদের জন্য শিক্ষার বিশেষ ব্যবস্থা ও প্রাপ্তবয়স্ক অশিক্ষিত যুবসমাজের জন্য শিক্ষার বিশেষ ব্যবস্থা, স্কুল-কলেজের উন্নতি, ছাত্র-ছাত্রীদের আবাসস্থল বৃদ্ধি ও ছাত্র-বেতন হ্রাস।

 ৬। আমরা চাই যুবসমাজের নৈতিক ও সাংস্কৃতিক উন্নতির জন্য শহরে ও গ্রামে সরকার কর্তৃক প্রচুর পরিমাণে পাঠাগার, ক্লাব ও খেলাধূলার ব্যবস্থা এবং বর্তমানে যে সমস্ত পাঠাগার ও ক্লাব আছে সেইগুলিতে সরকারী সাহায্য, মেয়েদের জন্য পাঠাগার ও ক্লাবের ব্যবস্থা।

 ৭। আমরা চাই জনসাধারণের স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য সরকার কর্তৃক প্রভূত পরিমাণে ব্যয় বরাদ- শহরে ও গ্রামে প্রচুর চিকিৎসালয় ও ব্যায়মাগার স্থাপন।

 ৮। আমরা চাই বিনা খেসারতে জমিদারী, জায়গীরদারী প্রথার উচ্ছেদ ও কৃষকের হাতে জমি।

 ৯। আমরা চাই শ্রমিকের জীবনধারণের উপযোগী মজুরী, দৈনিক ৮ ঘণ্টা হিসাবে সপ্তাহে ৪৪ ঘণ্টা কাজের সময় নির্ধারণ। শ্রমিক যুবকদের জন্য খেলাধূলা, পাঠাগার ও ক্লাবের ব্যবস্থা।

 ১০। আমরা চাই সমস্ত বিদেশী মূলধন বাজেয়াপ্তকরণ, বড় বড় শিল্পগুলির জাতীয়করণ।

 ১১। আমরা চাই যুবসমাজের জন্য সামরিক শিক্ষা ব্যবস্থা ও অস্ত্র বহন করিবার অধিকার।

 ১২। আমরা চাই সমস্ত দাসত্বমূলক আইনের প্রত্যাহার, বিনা বিচারে আটক রাখার কানুন নাকচ, সমস্ত রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি, সমাজের প্রত্যেকটি শ্রেণীর- শ্রমিকের, কৃষকের, মধ্যবিত্তের, ছাত্রদের, মেয়েদের, চাকুরেদের নিজ নিজ সংগঠন গড়ার, সভাসমিতি করার ও মত প্রকাশের পূর্ণ ও অবাধ অধিকার। প্রত্যেকটি দলের নিজ মতানুযায়ী কাজ ও মত প্রকাশ করিবার বৈধ অধিকার।  ১৩। আমরা চাই দেশের প্রত্যেকের নিজ নিজ ধর্ম পালন করার পূর্ণ অধিকার, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ধর্ম ও অন্যান্য অধিকার রক্ষার পরিপূর্ণ ব্যবস্থা।

 ১৪। আমরা চাই সকল প্রকার প্রাদেশিকতা ও সাম্প্রদায়িকতার অবসান।

 উপরোক্ত দাবী দল-মত-ধর্ম-নির্বিশেষে পাকিস্তানের প্রত্যেকটি যুবক-যুবতীর দাবী। উপরোক্ত মৌলিক দাবীগুলি কায়েম করিতে পারিলে দেশের সমস্ত যুবসমাজের সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতির নিশ্চয়তা হইবে এবং পূর্ববাংলা তথা সারা পাকিস্তান ধনে, জনে, শিল্পে, শিক্ষায় সমৃদ্ধ হইয়া উঠিবে।

ঐক্য ও প্রতিজ্ঞার দৃঢ়তা প্রয়োজন

 আমরা জানি যে, দেশের যুবসমাজের তথা সমস্ত সমাজের উন্নতির জন্য মূল প্রয়োজন- রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সরকারী ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন সাধন ও মৌলিক পুনর্গঠন। সেই মহান উদ্দেশ্য সাধনের জন্য উপরোক্ত কর্ম্মসূচীর ভিত্তিতে দল-মত-ধর্ম-নির্বিশেষে পাকিস্তানের সমগ্র যুবসমাজ যুবলীগে যোগদান করিয়া পাকিস্তানের সর্বত্র শক্তিশালী যুব আন্দোলন গড়িয়া তুলুন।

 আমরা জানি যে, আমাদের পথ সহজ নয়। বহু বাধা, কায়েমী স্বার্থের রক্ষচক্ষু ও অত্যাচার আমাদের এই জয়যাত্রার পথে বিঘ্ন সৃষ্টি করিবে কিন্তু দেশের যুবসমাজ অসাধারণ শক্তির অধিকারী। মহান আদর্শে অনুপ্রাণিত ও ঐক্যবদ্ধ যুবশক্তি অসাধ্য সাধন করিতে পারে। তার জন্য চাই যুবসমাজের ঐক্য ও প্রতিজ্ঞার দৃঢ়তা।

দুনিয়ার যুবশক্তি ও আমরা

 দুনিয়ার দেশে দেশে আজ যুবশক্তির অতুলনীয় অভু্যত্থান ঘটিয়াছে। দেহে অমিত শক্তি ও মনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞা লইয়া তাহারা আজ আগাইয়া চলিয়াছে স্বাধীনতা, শান্তি ও গণতন্ত্রের জন্য, ঔপনিবেশিকতাবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে আসুন আমরা পাকিস্তানের যুবসমাজ দল-মত-ধর্ম-নির্বিশেষে তাহদের সাতে কাঁধে কাঁধ মিলাইয়া অগ্রসর হই। আমাদের জীবনের সর্ববিধ উন্নতি ও পাকিস্তানকে স্বাধীন, সুখী ও সমৃদ্ধশালী করার জন্য আমরা চাই স্বাধীনতা, শান্তি ও গণতন্ত্র। আমরা চাই দুনিয়াব্যাপী সাম্রাজ্যবাদী শোষণের অবসান।

পাকিস্তানের যুবশক্তি জিন্দাবাদ।
পাকিস্তানের যুবশক্তি ঐক্যবদ্ধ হউন।
বিশ্বের যুব আন্দোলন দীর্ঘজীবী হউক।
পাকিস্তান জিন্দাবাদ